লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ব্রন্ডব্যান্ড সম্প্রসারণ কার্যক্রম হোক স্বচ্ছতার সাথে
ব্রন্ডব্যান্ড সম্প্রসারণ কার্যক্রম হোক স্বচ্ছতার সাথে
আধুনিক সভ্যতার ধারক ও বাহক এবং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ইন্টারনেট। ইন্টারনেট এখনও আমাদের দেশে সাধারণের নাগালের বাইরে। এখনও বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেট জগতে প্রবেশের সুবিধা পায়নি। ফলে এরা ডিজিটাল লাইফ উপভোগ থেকে বঞ্চিত। এদের জীবনযাপনের ধরন-ধারণ এখনও সেকেলে। বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট বিশেষ করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করছেন, তাদেরও সন্তুষ্টি নেই আমাদের ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিয়ে। নানা অভিযোগ ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস। অথচ তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে একটি দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তথা ব্যবহারের আধিক্য ও মানসম্মত গতির ওপর ভিত্তি করে বিবেচনা করা হয় সেই দেশটি আইসিটিতে কত উন্নত ও সভ্য।
বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কাঙিক্ষত মাত্রায় বাড়ছে না। শুধু তাই নয়, সরকারের গৃহীত দেশব্যাপী ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সরকারের দেশব্যাপী ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ কার্যক্রম ইনফো-সরকার (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের অনিয়মের কথা। ‘ইনফো-সরকার (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এ ভালো উদ্যোগটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যাচ্ছে বিসিসি (বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল) ও বেসরকারি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো। একনেকের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে ৮টি পর্যায়ের দরপত্রকে দুটি ভাগে ভাগ দিয়ে দিয়েছে বিসিসি। আর যোগসাজশের মাধ্যমে সামিট কমিউনিকেশন ও ফাইবার অ্যাট হোম নামে দুটি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান এ দরপত্র হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার এখতিয়ার না থাকলেও এ দরপত্রের মাধ্যমে তারা বিধি-বহির্ভূত এ সুযোগটি পেয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প জুড়ে থাকছে অনেক অনিয়ম।
শুধু তাই নয়, দেশব্যাপী ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ কার্যক্রম যথাযথ নজরদারি ও পরিকল্পনার অভাবে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। নিয়ম-বহির্ভূতভাবে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার কার্যাদেশ আইএসপির (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) পরিবর্তে এনটিটিএনকে (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) দেয়ার প্রস্তাবেই মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে এ খাত। এ প্রস্তাব অনুমোদিত হলে একদিকে যেমন দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হবে, অন্যদিকে লঙ্ঘন করা হবে সরকারের তৈরি করা নীতিমালা। পাশাপাশি শুধু দুটি এনটিটিএন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান লাভবান হলেও ব্যবসায় গুটিয়ে ফেলতে হবে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র আইএসপি ব্যবসায়।
এদিকে প্রকল্পটির দরপত্র আহবান, দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন, কার্যাদেশ অনুমোদনের সুপারিশ এবং কার্যাদেশ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কাজের আওতা নির্ধারণে দেখা গেছে ৪টি সুনির্দিষ্ট অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।
দেশব্যাপী ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ কার্যক্রম যথাযথ নজরদারি ও পরিকল্পনার অভাবে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। পাশাপাশি যদি শুধু দুটি এনটিটিএন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়, তাহলে গুটিয়ে ফেলতে হবে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র আইএসপি ব্যবসায়। সুতরাং এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এনটিটিএনকে (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) দেয়ার পরিবর্তে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার কার্যাদেশ আইএসপি তথা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদেরকে দেয়া উচিত। এর ফলে একদিকে যেমন দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হবে না, অন্যদিকে লঙ্ঘন করা হবে না সরকারের তৈরি করা নীতিমালা। তা ছাড়া একনেক থেকে এ প্রকল্পকে ৮টি পর্যায়ে দরপত্র আহবানের জন্য যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাও লঙ্ঘিত হবে না।
তৈয়বুর রহমান
জিন্দাবাজার, সিলেট
আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়
তথ্যপ্রযুক্তির খাতের যেকোনো ইতিবাচক খবরে আমরা পুলকিত হই, হই উৎফুলিস্নত। আর সেটি যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কোনো ইতিবাচক খবর হয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। সম্প্রতি কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত এমনই এক ইতিবাচক খবর দেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদেরকে যথেষ্ট আনন্দে উদ্বেলিত করে, আর সেটি হলো বিশ্বে অনলাইনে শ্রমদাতা (আউটসোর্সিং) দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচারিত বাংলাদেশের প্রচুর নেতিবাচক খবরের মাঝে এটি নিঃসন্দেহে এক বড় ইতিবাচক সংবাদ।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও পাঠদান বিভাগ জানিয়েছে- বিশ্বে অনলাইনে শ্রমদাতা (আউটসোর্সিং) দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, ভারত অন্য সব দেশের চেয়ে এগিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র। অনলাইনে শ্রমদান বা অনলাইনে কাজের ক্ষেত্রে ভারত ২৪ শতাংশ অধিকার করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৬ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্র ১২ শতাংশ অধিকার করেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়- পাকিস্তান, ফিলিপাইন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, রাশিয়া, ইতালি ও স্পেন বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান করছে।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ক্যাটাগরিতে এই উপমহাদেশের কর্মীদের প্রাধান্য দেখা যায়, যা এই খাতের ৫৫ শতাংশ। প্রফেশনাল সার্ভিস ক্যাটাগরিতে যুক্তরাজ্যের কর্মীদের প্রাধান্য দেখা যায়, যা এই খাতের ২২ শতাংশ। সার্বিক বিবেচনায় অনলাইন লেবারে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি, ক্রিয়েটিভ, মাল্টিমিডিয়া, ক্ল্যারিক্যাল ও ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানসহ বিপণন সহায়তায় বাংলাদেশ অন্য সব দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
লক্ষণীয়, আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের এ অবস্থান অর্জন অনেকটাই সরকার বা প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই হয়েছে, যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করবে তা আমরা সবাই প্রত্যাশা করি।
আফজাল হোসেন
মিরপুর, ঢাকা