বাংলাদেশে ইন্টারনেটে শ্লথগতি এবং ফোরজি
আমরা বাংলাদেশের মানুষকে দ্রুতগতির ফোরজি ইন্টারনেটের স্বপ্নের কথা বলছি। কিন্তু সেই ফোরজি চালুর ব্যাপারে চলছে কচ্ছপগতি। আর বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, মোবাইল ইন্টারনেট গতির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২২টি দেশের মধ্যে ১২০তম। সম্প্রতি ‘স্পিডটেস্টডটনেট’ পরিচালিত মোবাইল ও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট স্পিডের ওপর এক সমীক্ষায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬ নম্বরে। অধিকন্তু গড় ডাউনলোড স্পিড দেশের মোবাইল ইন্টারনেট প্রোভাইডারেরা সরবরাহ করছে, তার পরিমাণ ৫.১৭ এমবিপিএস, ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে এর হার ১৫.৯১ এমবিপিএস। মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গতি নিশ্চিত করতে পেরেছে। দেশটির মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোডের হার ৫২.৫৯ এমবিপিএস। অপরদিকে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গতির দেশ, যার গড় গতির হার হচ্ছে ১৫৪.৩৮ এমপিবিএস। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফাইবার অপটিক তারের মাধ্যমে ব্যবহৃত ইন্টারনেটকে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বলা হয়।
প্রতিবেদন মতে, মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা দুটি দেশ হচ্ছে কোস্টারিকা ও ইরাক। এ দেশ দুটির মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি যথাক্রমে ৪.৩৭ ও ৩.১৭ এমবিপিএস।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭ কোটি ৩৩ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৬ কোটি ৮৬ লাখ। আর ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৬ লাখ। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ২ কোটি ২৫ লাখ।
অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। যদিও দেশে ইন্টারনেটে প্রবেশের ও ব্যবহারের মাত্রা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধাবিঘ্ন কাজ করছে। তবে ইন্টারনেটের উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণের কথা সরকারপক্ষ জোর দিয়েই বলে আসছে। ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শতভাগ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আসতে চায়। ইনফো-সরকার তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় ২০১৮ সালের মধ্যে সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ তথ্য জানানো হয়। তবে দুর্বলতা হিসেবে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়- বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ ও ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেনের অবকাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব রয়েছে। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও দক্ষ জনশক্তির অভাবের বিষয়টি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছে। কিন্তু এই অভাব দুটি পূরণে আমরা খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারিনি। তা ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ইন্টারনেটের ধীর গতি একটা বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর কথা বলা হলেও আমরা এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি। উন্নত ব্রডব্যান্ডের স্বপ্নপূরণে আমরা চলেছি কচ্ছপগতিতে। দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালুর নীতিমালায় ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে তিনি এই নীতিমালা অনুমোদন করেন। ফোরজি নীতিমালার পাশাপাশি তরঙ্গ নিলাম নীতিমালায়ও প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। বিটিআরসি সূত্রমতে, দুই-তিন মাসের মধ্যেই তরঙ্গ নিলামের আয়োজন করা হবে। সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই দেশে ফোরজি সেবা চালু হবে। তিনি বলেছেন, নভেম্বরের মধ্যে ফোরজি চালুর প্রযুক্তিগত দিকের কাজ শেষ হবে। এরপর তরঙ্গ নিলাম হবে। তিনি আশা করছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই মানুষ ফোরজি সেবা পাবে।
বাস্তবতা হচ্ছে, অপারেটরেরা পর্যাপ্ত তরঙ্গ না কেনায় থ্রিজি সেবা এখনও নিরবচ্ছিন্ন হয়নি। সেবায় এখনও কিছুটা ত্রম্নটি আছে। কিন্তু তারানা হালিম বলেছেন- ফোরজি সেবায় সে সুযোগ নেই।
আমরা মনে করি, ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফোরজি সেবা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে হলে আর বিন্দুমাত্র দেরির কোনো অবকাশ নেই।