লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের শ্লথগতি ও আমাদের পিছিয়ে পড়া
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের শ্লথগতি ও আমাদের পিছিয়ে পড়া
বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধান নির্বচনী ইশেতেহার ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, যা এ দেশের তরম্নণ সমাজকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। বলা হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ই নির্বাচনের ফলাফল নির্দিষ্ট করে দেয়। যেহেতু সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেয়, তাই স্বাভাবিকভাবে সবাই আশা করেছিল তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে দেশে বেকারত্বের হার বহুলাংশে হ্রাস পাবে। বাসত্মবে হয়েছেও তাই, তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। গত কয়েক বছরে আমাদের আশপাশের দেশগুলো তথ্যপ্রযুক্তিতে যতটুকু এগিয়ে গেছে, সে তুলনায় আমরা তথ্যপ্রযুক্তিতে তেমন এগুতে পারিনি ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে।
বর্তমান প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বে টিকে থাকতে চাইলে দরকার দ্রম্নতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগসহ নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ইমেজ। বিস্ময়কর হলো, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে্য বেশ কাজ করলেও বিশ্বের বিভিন্ন মানদ--র ইনডেক্সে বরাবর পিছিয়ে পড়ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। তথ্যপ্রযুক্তির ইনডেক্সে আমাদের পিছিয়ে পড়ার কারণ দ্রম্নতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগের অপ্রতুলতা ও ব্র্যান্ডিং ইমেজের অভাব।
আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক মহলের পক্ষ থেকে দ্রম্নতগতির ফোরজি ইন্টারনেটের স্বপ্নের কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে, কিন্তু সেই ফোরজি চালুর ব্যাপারে চলছে কচ্ছপগতি। আর বাংলাদেশের বাসত্মবতা হচ্ছে, মোবাইল ইন্টারনেট গতির দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২২টি দেশের মধ্যে ১২০তম। সম্প্রতি ‘স্পিডটেস্টডটনেট’ পরিচালিত মোবাইল ও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট স্পিডের ওপর এক সমীক্ষায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬ নম্বরে। অধিকন্তু গড় ডাউনলোড স্পিড দেশের মোবাইল ইন্টারনেট প্রোভাইডারেরা সরবরাহ করছে, তার পরিমাণ ৫.১৭ এমবিপিএস, ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে এর হার ১৫.৯১ এমবিপিএস। মোবাইল ইন্টারনেট এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গতি নিশ্চিত করতে পেরেছে। দেশটির মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোডের হার ৫২.৫৯ এমবিপিএস। অপরদিকে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গতির দেশ, যার গড় গতির হার হচ্ছে ১৫৪.৩৮ এমপিবিএস।
অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে উলেস্নখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। যদিও দেশে ইন্টারনেটে প্রবেশের ও ব্যবহারের মাত্রা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধাবিঘ্ন কাজ করছে। তবে ইন্টারনেটের উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণের কথা সরকারপক্ষ জোর দিয়েই বলে আসছে। ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শতভাগ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আসতে চায়। ইনফো-সরকার তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় ২০১৮ সালের মধ্যে সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ তথ্য জানানো হয়। তবে দুর্বলতা হিসেবে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়- বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ ও ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেনের অবকাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাব রয়েছে। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও দক্ষ জনশক্তির অভাবের বিষয়টি বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছে। কিন্তু এই অভাব দুটি পূরণে আমরা খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারিনি। তা ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ইন্টারনেটের ধীর গতি একটা বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর কথা বলা হলেও আমরা এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি। উন্নত ব্রডব্যান্ডের স্বপ্নপূরণে আমরা চলেছি কচ্ছপগতিতে। দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালুর নীতিমালায় ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফোরজি নীতিমালার পাশাপাশি তরঙ্গ নিলাম নীতিমালায়ও প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন।
জানা যায়, অপারেটরেরা পর্যাপ্ত তরঙ্গ না কেনায় থ্রিজি সেবা এখনও নিরবচ্ছিন্ন হয়নি। সেবায় এখনও কিছুটা ত্রম্নটি আছে। ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফোরজি সেবা বাসত্মবায়নে এরই মধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে হলে আর বিন্দুমাত্র দেরির কোনো অবকাশ নেই।
নাজমুল হাসান
কাফরম্নল, ঢাকা
নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত ও সহজলভ্য করা হোক
আধুনিক সভ্যতার ধারক ও বাহক হলো ইন্টারনেট। বর্তমান যুগে অফিস-আদালত, ব্যাংকিং, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা-দীক্ষা, গবেষণাসহ বিনোদন পর্যন্ত সবকিছুই ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়ায় ইন্টারনেট ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করা যায় না। যেহেতু সবকিছু ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়েছে, তাই দুষ্টু চক্র অর্থাৎ হ্যাকারদের প্রধান টার্গেট এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। আর এ কারণে সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো কী করে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে প্রধান দাবি নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করার পাশাপাশি তা সবার কাছে সহজলভ্য করাও। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি দামে ব্যবহার করে থাকেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট উচ্চমূল্যের পাশাপাশি কম নিরাপদও বটে। আর এ কারণে নানা অনাকাঙিক্ষত ঘটনার মুখোমুখি হতে আমাদের দেশের অনেক ব্যবহারকারীকে, বিশেষ করে তরম্নণীদেরকে।
বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ এবং অশস্নীল বক্তব্য ও ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ও অন্যান্য মাধ্যমকে কলুষিত করছে। টেলিকম রেগুলেটর অ্যান্ড ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এ বিষয়গুলো মোকাবেলা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করার সাথে তা সবার জন্য সহজলভ্য করার জন্য দাবি প্রযুক্তিসংশিস্নষ্ট সব মহলের। সাইবার অপরাধ ও অশস্নীল বক্তব্য ও ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ও অন্যান্য মাধ্যমকে যে বা যারা ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদেরকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কঠোর শাসিত্মর আওতায় আনতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন জঘন্য কাজ আর না করেন।
রমিজ উদ্দিন
লালবাগ, ঢাকা