• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ব্রডব্যান্ডের দামে কোথায় আমরা?
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মিন্টু হোসেন
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইনটারনেট
তথ্যসূত্র:
ইন্টারনেট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ব্রডব্যান্ডের দামে কোথায় আমরা?
ব্রডব্যান্ডের দামে কোথায় আমরা?
মো: মিন্টু হোসেন
সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি ৫০ শতাংশ মানুষকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আনা। এ লক্ষ্যে ‘ইনফো-সরকার ৩’ নামে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইন্টারনেটের দাম কমানোর ব্যবস্থা করছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘আমি নিজেও বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহার করি। ইন্টারনেটের গতি অনেক কম। ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও গতি বাড়াতে প্রয়োজনে নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। সমস্যা কোথায়, সেটা খুঁজে বের করা হবে।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সরকার ইনফো গভর্নমেন্ট ফেস-৩-এর আওতায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সম্প্রসারণে কাজ করছে। আমি আশা করি, আগামী বছরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে এবং প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-১৭-এর দ্বিতীয় দিনে জুম সার্ভিস ও ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাটা যোগাযোগ ব্যবস্থা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা ইনফো গভর্নমেন্ট ফেস-৩-এর প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। যাতে ইউনিয়ন পর্যায়েও ইন্টারনেট ব্যবস্থা উন্নত হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে সরকারি সেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।
২০১৬ সালে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি ৫ এমবিপিএস (মেগা বিট পার সেকেন্ড) নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি ছিল ১ এমবিপিএস। ব্রডব্যান্ড হলো ইন্টারনেটের ডাটা বিনিময়ের দ্রম্নততর মাধ্যম। সরকারের এ সিদ্ধামেত্মর ফলে ৫ এমবিপিএসের তুলনায় কম গতির যেকোনো ইন্টারনেট সংযোগকে এখন থেকে ‘ন্যারোব্যান্ড’ বা ধীরগতির ইন্টারনেট হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
ইন্টারনেটের দাম কমানোর প্রক্রিয়া চলমান রাখার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। জয় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছরের সময়ের মধ্যে ইন্টারনেটের দাম ৯৯ শতাংশ কমানোর কথা বলেছিলাম। সেই কথা রাখা হয়েছে । গত টার্মের শেষেই এটা ৭০০ টাকায় নেমে এসেছিল। এখন প্রতি এমবিপিএস ৬০০ টাকায় নেমে এসেছে। ‘আপনাদের কাছে আমার ওয়াদা, আমরা কয়েক বছর পরপর এই দাম কমাতে থাকবই’। তিনি বলেন, ‘এটা আবারও বলতে হয়, আগে ১ এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ৮৮ হাজার টাকা ছিল। তখন আমি প্রথমে বললাম এটা কমাতে হবে, ৮৮ হাজার থেকে ৮০০ টাকায় নিয়ে আসতে হবে।’ ‘তখন সবাই বলেছিল- এটা সম্ভব নয়। আমি বলেছি, এটা সম্ভব করতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করতে হবে।’
এখন ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড নিয়ে যাওয়ার কথা উলেস্নখ করে তিনি জানান, ইন্টারনেট সম্প্রসারণের কাজ চলমান আছে। আগে বাংলা গভনেট, তারপর ইনফো সরকার-২ এবং এখন ইনফো সরকার-৩-এর মাধ্যমে ২৬০০ ইউনিয়ন পর্যন্ত আমরা ফাইবার অপটিক ক্যাবল নিয়ে যাচ্ছি। আগামী দেড় বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। আর লাস্ট মাইল সলিউশনে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কিছু বাদ রাখিনি। লাস্ট মাইল সলিউশন হবে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড দিয়ে।’
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ লাখ ২১ হাজার। এর আগে আগস্ট মাসের হিসাব অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্কের (পিএসটিএন) গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৫০ লাখ ৭০ হাজার। বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৩৮ লাখ। আগস্ট মাসে ছিল ৭ কোটি ১৮ লাখ।
এর আগে ২০১২ সালের চিত্র দেখলে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারে বাংলাদেশের অগ্রগতির একটি চিত্র পাওয়া যায়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপিগুলোর দেয়া হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ৯৪ লাখ। এদের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১২ লাখের কিছুটা বেশি। ওই সময়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ২ কোটি ৯৪ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ২ কোটি ৭৭ লাখ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল
ব্রডব্যান্ডের দামে আমাদের অবস্থান
চলতি বছরের ১৮ আগস্ট থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বিডিআরসি কন্টিনেন্টাল ও ক্যাবল ডটকো ডটইউকে নামে দুটি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ১৯৬টি দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ গবেষণায় ৩ হাজার ৩৫১টির বেশি ব্রডব্যান্ড প্যাকেজ বিবেচনায় নেয়া হয়। এ তালিকায় বিশ্বে ৫৬তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ২৭টি ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের নমুনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিমাসে ব্রডব্যান্ডের পেছনে খরচ ৩৮ দশমিক ৪ ইউএসডি বা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা।
ওই গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে কম দামে ব্রডব্যান্ড দেয় ইরান। ইরানে ব্রডব্যান্ডের দাম মাত্র ৫ দশমিক ৩৭ ডলার। ব্রডব্যান্ডের দাম সবচেয়ে বেশি বুরকিনা ফাসোতে। প্রতিমাসে ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের গড় দাম পড়ে ৯৫৪ দশমিক ৫৪ মার্কিন ডলার। এতে বিশ্বজুড়ে ব্রডব্যান্ডের দামে বিশাল পার্থক্য ও বৈষম্যের বিষয়টি ধরা পড়ে। বিশ্বের সবচেয়ে কম খরচে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট দেয়া শীর্ষ ১০টি দেশ হচ্ছে- ইরান (৫.৩৭ মার্কিন ডলার), ইউক্রেন (৫.৫১), রাশিয়ান ফেডারেশন (৯.৯৩), মলদোভা (১০.৮০), সিরিয়া (১২.১৫), মিসর (১২.৪২), বেলারম্নশ (১২.৭৭), রোমানিয়া (১৩.৪৭), কাজাখসত্মান (১৩.৭৭) ও জর্জিয়া (১৬.৬৮)।
আফ্রিকা অঞ্চলের ৩১টি দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম সবচেয়ে বেশি। তালিকায় ১৯৬ নম্বরে আছে বুরকিনা ফাসো। এখানে ব্রডব্যান্ডের গড় মাসিক খরচ ৯৬১ দশমিক ২২ মার্কিন ডলার। ৫৯৭ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার খরচ হয় পাপুয়া নিউগিনিতে। দেশটি আছে ১৯৫ নম্বরে।
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্য ইতালিতে ব্রডব্যান্ডের খরচ কম। এখানে মাসে গড়পড়তা প্যাকেজের দাম ২৮ দশমিক ৮৯ মার্কিন ডলার। এরপর আছে জার্মানি (৩৪.০৭), ডেনমার্ক (৩৫.৯০) ও ফ্রান্স (৩৬.৩)। ইউরোপের ২৮টি দেশের মধ্যে মাসিক ব্রডব্যান্ডের প্যাকেজের দাম ৪০ দশমিক ৫২ ধরে যুক্তরাজ্যের অবস্থান সাতে।
এশিয়ার মধ্যে ইরান সবচেয়ে কম খরচে ব্রডব্যান্ড সেবা দেয়। তালিকার শীর্ষে আছে দেশটি। এরপর আছে নেপাল। দেশটির অবস্থান ১২। দেশটিতে মাসিক ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের গড় মূল্য ১৮ দশমিক ৮৫ মার্কিন ডলার। এরপর আছে শ্রীলঙ্কা। সেখানে ব্রডব্যান্ডের মূল্য ২০ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে কম খরচে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্যাকেজের সেরা ২০-এর তালিকায় এ তিনটি দেশ আছে।
ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের গড় মূল্যের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ১১৪। সেখানে মাসিক ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের গড় দাম ৬৬ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার। ভারত বাংলাদেশের চেয়ে পাঁচ ধাপ এগিয়ে আছে। তালিকায় ভারতের অবস্থান ৫১। দেশটির ৩৭টি প্যাকেজ পরিমাপ করে ব্রডব্যান্ডের গড় দাম দেখানো হয়েছে ৩৬ দশমিক ৯ মার্কিন ডলার। মিয়ানমারের অবস্থান ১৩৩। সেখানে ব্রডব্যান্ডের দাম ৭৫ দশমিক ৯৬। পাকিসত্মান ও আফগানিসত্মানের চেয়েও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। পাকিসত্মানের অবস্থান ৬৪। আফগানিসত্মান ১১৮। অবশ্য থাইল্যান্ডের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডের অবস্থান ২৭। তাদের ব্রডব্যান্ডের মাসিক গড় খরচ ২৬ দশমিক ৫৬ মার্কিন ডলার
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - ডিসেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস