লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সময়ের প্রয়োজন : ডিজিটাল জেনেভা কনভেনশন
সময়ের প্রয়োজন : ডিজিটাল জেনেভা কনভেনশন
ত্রিশটিরও বেশি দেশের সরকার স্বীকার করেছে, তাদের রয়েছে ‘অফেনসিভ সাইবার ক্যাপাবিলিটিজ’। এর অর্থ, এসব দেশ অন্য দেশের ওপর আগ্রাসী সাইবার হামলা চালাতে সÿম। তা সত্ত্বেও কনভেনশনাল ওয়েপন থেকে ব্যতিক্রমী সাইবার আর্সেনালগুলো গোপন ও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এগুলোর সোর্স চিহ্নিত করা মুশকিল। এ কারণেই এমন সম্ভাবনা রয়েছে এ ধরনের দেশের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, আগামী দিনে এদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অধিকন্তু, এই অস্পষ্টতার কারণে সরকারগুলো আরও বেশি আগ্রহী এসব সাইবার অস্ত্র কাজে লাগানোর ব্যাপারে। বাসত্মব হামলা চালিয়ে নিজেদের সÿমতা যাচাইয়েও এরা আগ্রহী। এরা এ ব্যাপারে কৌশল নির্ধারণ করে ক্লোজ ডোর বৈঠকে বসে। এমনটি লিখে জানিয়েছেন মাইক্রোসফটের ‘গভর্নমেন্ট সাইবার সিকিউরিটি পলিসি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজির ডিরেক্টর কাজা সিগলিক, তার Observer Research Foundation’s collection of essays, Our Common Digital Future শীর্ষক লেখায়।
স্পষ্টতই সাইবার অস্ত্র প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যেই শুরম্ন হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও সাইবার অস্ত্রের ঝুঁকি ও বিপদ যে কতটুকু তা এখনও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। এই দুটি সমস্যা, একই সাথে গোপন প্রকৃতি (ক্ল্যানডেনস্টাইন ন্যাচার) ও আগ্রাসী অনলাইন কর্মকা--র অনিশ্চয়তা (আনপ্রিডিকটিবিলিটি) যে মাত্রা ও গতিতে ভঙ্গুরতার জন্ম দিয়েছে, তা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এই ঝুঁকি রয়েছে অনলাইন ও অফলাইন উভয় ÿÿত্রে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যমান এই ঝুঁকি কী করে মোকাবেলা করতে পারি?
বিদ্যমান আমত্মর্জাতিক আইন সাইবার স্পেসে প্রয়োগ হলে, সেটা হবে অবাক বিস্ময়ের ব্যাপার। অনলাইন কর্মকা-- সংশিস্নষ্ট অস্পষ্ট বস্ত্ত, যা দীর্ঘদিন ধরে ছিল বিভিন্ন আইনি কাঠামোর বিষয়। কিন্তু সরকারগুলো দেরিতে এ বিষয়ে সিদ্ধামত্ম নেয়। জাতিসংঘ প্রায় দুই দশক আগে একটি কর্ম-কমিটি গঠন করে, তুলনামূলকভাবে আইটি ফিল্ডের নবতর এই ÿÿত্রে এবং বিশেষত সাইবার-নিরাপত্তার জটিল এই প্রশ্নে একটি সম্মত প্রসত্মাবে পৌঁছার জন্য। কিন্তু ২০১৫ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনস গ্রম্নপ অব গভর্নমেন্ট এক্সপার্টস অন ডেভেলপমেন্টস ইন দ্য ফিল্ড অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস ইন দ্য কনটেক্সট অব ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি (ইউএন জিজিই) নিশ্চিত করে যে- আমত্মর্জাতিক আইন সাইবার স্পেসে প্রযোজ্য।
এই ঐকমত্য সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া ২০টি দেশের পÿ থেকে। এসব দেশের মধ্যে অমত্মর্ভুক্ত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। এই অবস্থান পরবর্তী সময়ে সমর্থন করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারের ও জি৭-এর বিবৃতির মাধ্যমে। উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে, এই অবস্থানের প্রতিফলন রয়েছে ‘সাইবার-সুপার-পাওয়ারদের’ দ্বিপÿীয় সাইবার সিকিউরিটি চুক্তির মধ্যে। অতএব আজকের দিনে একমাত্র উপায় হচ্ছে এটুকু নিশ্চিত করা যে, সাইবারস্পেসে রাষ্ট্রগুলোর আচরণ সুনির্দিষ্ট বিধি ও নীতিমালার আওতাধীন, যেগুলো আমত্মর্জাতিক আইন দিয়ে স্বীকৃত।
চীন-রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র-চীন, সাইনো-অ্যাংলো সাইবার নিরাপত্তা চুক্তি থেকে শুরম্ন করে ২০১৭ সালে সম্পন্ন চীন-অস্ট্রেলিয়া সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি পর্যমত্ম চুক্তিগুলোতে বিভিন্নভাবে আলোকপাত রয়েছে ইউএন জিজিই ও সাইবার সিকিউরিটি নরমসগুলোর প্রতি সমর্থন দানের। আঞ্চলিক গ্রম্নপগুলোও একইভাবে স্বীকার করে নিয়েছে সাইবারস্পেসে আমত্মর্জাতিক আইনের প্রয়োগযোগ্যতাকে। এসব আঞ্চলিক গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে আসিয়ান এবং অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস। দ্বিপÿীয় ও আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোর এই পদÿÿপ গুরম্নত্বপূর্ণ। কিন্তু এগুলো পূরণ করতে পারেনি স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তা।
অতএব আজকের দিনে সাইবারস্পেসে রাষ্ট্রগুলোর আচরণ আমত্মর্জাতিক আইনের বিধিবিধান ও রীতিনীতির আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সংশিস্নষ্ট আমত্মর্জাতিক আইনের প্রতি স্বীকৃতি জানানো। ইউএন জিজিই এই অভিযাত্রার একটি স্থায়ী ও মুখ্য অংশ। অন্য ফোরামগুলো কিছুটা হলেও এ অভিযানে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এই অবস্থান থেকে এখন আমাদের গমত্মব্য কী হবে?
আমাদের এই জটিল অভিযাত্রার সুখকর অর্জন হচ্ছে ২০১৫ সালের ইউএন জিজিইর ১১টি সাইবার সিকিউরিটি নরমস এবং পাশাপাশি রয়েছে ডিজিটাল জেনেভা কনভেনশনের অংশ হিসেবে মাইক্রোসফটের তুলে ধরা আরও বেশ কিছু প্রসত্মাব, জি-৭ গ্রম্নপের প্রসত্মাব ইত্যাদি। এসবকে একটি সাইবার সিকিউরিটির আমত্মর্জাতিক অবকাঠামোভুক্ত করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজন একটি ডিজিটাল জেনেভা কনভেনশন। আর এ কাজটি করতে হবে অতি দ্রম্নত, বিভিন্ন রাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে।