• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের রফতানি আয় কত?
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মিনহাজুর রহমান খান
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৮ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমপিউটার জগৎ
তথ্যসূত্র:
সফটওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের রফতানি আয় কত?
বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের রফতানি আয় কত?
#২০১৭ সালে স্থানীয় আইটি ও আইটিইএস শিল্পের রাজস্ব উৎপাদন ০.৯-১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

#২০২৫ সালে আইটি ও আইটিইএস শিল্পের রাজস্ব উৎপাদন ৪.৬-৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে

এক দশকের বেশি সময় ধরে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ খাত থেকে রফতানিতে বেশ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। গত অর্থবছরে প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে ১৭৯.১৯ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৮ কোটি ডলার)। অথচ যদি মাত্র পাঁচ বছর আগে ফিরে দেখা যায়, তবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ছিল ১০ কোটি ডলার।
উন্নতির এ ধারা ভালো বলে মনে করছেন দেশের প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা। বিদেশিরাও বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যারে আগ্রহ দেখিয়েছে ভুটান, মালদ্বীপ ও কঙ্গো। বাংলাদেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা খুব ভালো কাজ করছেন বলে প্রশংসা করেছেন ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী দীননাথ দুঙ্গায়েল, মালদ্বীপের সশস্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপমন্ত্রী তারিক আলী লুথুফি ও কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা ডাইডোন কালোম্বো। বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দেশে কাজের সুযোগ দেয়ার আগ্রহের কথা বলেছেন। সম্প্রতি রাজধানীর দোহাটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এসে তাদের আগ্রহের কথা জানান তারা।
ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী দীননাথ দুঙ্গায়েল বলেন, ইতোমধ্যে ভুটানের ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের দোহাটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে উল্টো চিত্রও আছে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন,ধীরে ধীরে আমাদের উন্নতি হচ্ছে। তবে বর্তমান বিশ্ববাজার বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে বাংলাদেশকে বাজার তৈরি করে নিতে হচ্ছে।’
সফটওয়্যার উদ্যোক্তা লুনা সামশুদ্দোহা বলেন, ‘আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিসর তেমন বড় নয়। আবার আমাদের দেশের অনেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই নিজেরা সব কাজে অভিজ্ঞ বলেও প্রচার করে। বিদেশে এ কাজটি হয় না। তারা যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ এবং সেটিই তারা করে। এ বিষয়টি নজর দেয়ার পাশাপাশি এ খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানো উচিত। দেখা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিতে ভালো, এমন দেশের প্রধান কিংবা দেশ পরিচালনাকারীরা যখন বিদেশসফরে যান, সেখানে নিজেদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্য তুলে ধরেন। এই অনুশীলনটা আমাদের দেশে কম। এটি বাড়াতে হবে।
রফতানির সামগ্রিক অবস্থা
নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আর সমস্যা পাশ কাটিয়ে সফটওয়্যার খাত সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান প্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা। সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা রফতানির অবস্থাও যথেষ্ট ভালো বলে মনে করছেন অনেকেই। এই খাত বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় ১৫টি রফতানি খাতের একটি। গত বছরের নভেম্বর মাসে ভবিষ্যতে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা বর্ণনা করে প্রথমবারের মতো আইটি ও আইটি সক্ষম সেবা (আইটি-আইটিইএস) শিল্পের ওপর একটি স্বাধীন শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। ‘বেটিং অন দ্য ফিউচারÑ দ্য বাংলাদেশ আইটি-আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক শ্বেতপত্রটি ইউএসভিত্তিক বোস্টন কনসাল্টিং গ্রæপ (বিসিজি) প্রকাশ করে। শ্বেতপত্রে ২০১৭ সালে স্থানীয় আইটি ও আইটিইএস শিল্পের রাজস্ব উৎপাদন ০.৯-১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৫ সালে তা পাঁচ গুণ বেড়ে ৪.৬-৪.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়।
২০১২ সালেই এ খাতে গড়ে ৫০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হতে দেখা যায়। ওই সময় পূর্বাভাস দেয়া হয়, এ ধারা অব্যাহত থাকলে পাঁচ বছরের মধ্যে রফতানিআয় বেড়ে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। ওই পূর্বাভাস এখন মিলে গেছে।
গার্টনারের তথ্য অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো যেমন হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক, সবখানে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা এবং দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে পারলে আরও দ্রæত সফটওয়্যার খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমানে সফটওয়্যার খাতের যেসব পণ্য রফতানি হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল অ্যাপস, গেমস, অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টোমাইজড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি।
গত বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে বেসিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ২৮ লাখ ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সফটওয়্যার রফতানি শুরু করে। ওই বছর রফতানির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ ডলার। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এরপর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার ও ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সফটওয়্যার রফতানি আয়ের পরিমাণ বেড়ে হয় ৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে এসে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে সফটওয়্যার রফতানি দাঁড়ায় সাড়ে ৪ কোটি ডলারে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সফটওয়্যার রফতানি থেকে আয় প্রথমবারের মতো ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার অতিক্রম করে। ওই অর্থবছরে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এই আয় বেড়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ১৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাত থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কোটি ডলার রফতানি আয় হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেসিস সদস্য ১৮৫টি প্রতিষ্ঠান ৬০ কোটি ডলার আয় করে। এর সাথে ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার ডেভেলপার ও কল সেন্টারগুলোর সেবা রফতানি আয় যোগ করলে তা ৭০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তবে ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি রফতানি আয় ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সফটওয়্যার রফতানির হিসাব দেয় ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের।
সফটওয়্যার রফতানিতে কতটা পথ পাড়ি?
বাংলাদেশে শুধু সফটওয়্যার খাতে রফতানি কত, এর নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। যেটা আছে তা হচ্ছে আনুমানিক তথ্যপ্রযুক্তিখাতে মোট রফতানি আয়ের একটি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি আয়ের বিতর্কহীন হিসাব পাওয়া কষ্টকর। এ খাত থেকে চলতি বছর ১ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
সরকারের এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানি আয় প্রায় ১৮ কোটি ডলার(১৭৯ দশমিক ১ মিলিয়ন), যা (২০১৫-১৬) অর্থবছরে ছিল ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ওই সময় (বিবিএস) সফটওয়্যার রফতানির হিসাব দিয়েছিল ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
বেসিস সূত্র অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০১৬ সালে রফতানির আয় ছিল ৭০ কোটি ডলার। সাবেক বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার জানান, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাবে কম্পাইল করে তার রিপোর্ট আসে বাণিজ্যিক ব্যাংক বা শিডিউল ব্যাংক যেগুলোকে বলে তার মাধ্যমে। শিডিউল ব্যাংকগুলো যে ডাটা দেয় তা দেয়া হয় সি ফর্মের মাধ্যমে। সি ফর্ম শুধু ১০ হাজার ডলারের ওপরে হলে পূরণ করতে হয়, নইলে করতে হয় না। ফলে ১০ হাজার ডলার ওপরের রফতানির হিসাবটা সরকার পায়। এখানে ছোট ছোট ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক রফতানিগুলো হিসাবে আসে না। কিন্তু ভলিউমে এগুলোই বেশি। আরও অসঙ্গতি আছে। যে সি ফর্ম হয়, সেখানে মাত্র তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। একটি ডাটা প্রসেসিং, একটি কনসালট্যান্সি ও একটি সফটওয়্যার। এখানে আইটি এনাবল সার্ভিস, কল সেন্টারসহ তথ্যপ্রযুক্তির বেশিরভাগ ক্যাটাগরিই তো নেই।
তবে গত বছর এক সংবাদ সম্মলনে বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমাদের সফটওয়্যার রফতানি খুব বেশি নয়। সফটওয়্যার রফতানিতে এখনও সেই রকম সক্ষমতা অর্জিত হয়নি যে, ইউরোপীয় সফটওয়্যার বিট করে বাংলাদেশের সফটওয়্যার রিপ্লেস করা যাচ্ছে। আমরা ব্যাপকহারে সার্ভিস রফতানি করছি, আমাদের সস্তা হিউম্যান রিসোর্স রয়েছে। আমরা যে কারণে গার্মেন্টস রফতানি করতে পারি সে কারণে আইটি সার্ভিস রফতানিকরতে পারি। যার অর্থ হচ্ছে দেশের প্রধান রফতানি ক্যাটাগরিই তো রিপোর্টেড হয় না। তাহলে কী করে ইপিবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে নির্ভর করব।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব নিয়ে বলেন, ‘ব্যুারো যে হিসাব করে তা বাস্তবসম্মত নয়। তারা যে ডাটা দিয়েছে তা হলো কতগুলো প্রতিষ্ঠান ভিজিট করে তাদের কাছ থেকে যা পেয়েছে তা। ব্যুরোর এই কমিটির সাথে বৈঠকে আমার প্রশ্ন ছিল এই ডাটার পরিধি নিয়ে।’বড় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর বিদেশে অফিস রয়েছে, বিদেশে কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে তারা এবং টাকা সেখানেই রাখে। অথচ এই টাকা বাংলাদেশি কোম্পানির ওবাংলাদেশের শ্রমের টাকা। শুধু দেশের অফিস খরচ, অ্যাপ্লয়ীদের বেতন ছাড়া বাকি টাকা বিদেশেই রেখে দেন তারা। অনেকে ঝামেলা পোহাতে চান না। সি ফর্মে না গিয়ে আইটি ও আইটিইএস শিল্পের রাজস্ব উৎপাদন রেমিট্যান্স হিসেবে টাকা নিয়ে আসে।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ : আইটি ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত সেবা (আইটিইএস) খাতে রফতানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক উপস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০১৬ সালের রফতানি ৭০ কোটি ডলার উল্লেখ করেন। রফতানি আয়ের যে হিসাব অফিসিয়ালি বলা হচ্ছে, তা তার চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) রেফারেন্সে তাদের খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ ডলার রফতানির কথা বলা হয়। কল সেন্টার, ডাটা এন্ট্রিসহ বিভিন্ন সেবা রফতানি হয়ে থাকে। খাতটিতে আয় উল্লিখিত পরিসংখ্যানের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করেন বাক্য সংশ্লিষ্টরা।
বেসিস, বাক্যসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বেসরকারি শীর্ষ সংগঠনগুলোর হিসাবে দেশে দেড় হাজার আইটি ও আইটিইএস কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের পাঁচশ’ কোম্পানি রফতানিতে রয়েছে। শুধু বেসিসে ১০৮৬ সদস্য কোম্পানি রয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেক কোম্পানিকে সক্রিয় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
সংগঠনটির কাছে কোম্পানিগুলো ফর্ম পূরণ করে ২০১৪-১৫ সালের যে আয়ের হিসাব দিয়েছে তার মোট অঙ্ক ৫৯ কোটি ৪০ লাখ ৭৩ হাজার ডলার। এই রফতানি আয় ৩৮২টি কোম্পানির। কোম্পানিগুলো স্থানীয় বাজারেও আয় করেছে। তার পরিমাণ ২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। সংগঠনটির কাছে থাকা কোম্পানিগুলোর কাগজপত্রের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ সালের ২৭৭টি কোম্পানির রফতানি আয় ছিল ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৬৫ হাজার ডলার। ওই অর্থবছরে স্থানীয় বাজারে আয় ছিল ৮ কোটি ডলার।
এদিকে ইপিবির হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্য ছিল ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সেখানে আয় হয়েছে ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যের চেয়ে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। আর ২০১৪-১৫ সালে এই আয় ছিল ১৩ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
২০২১ সালের মধ্যে সফটওয়্যার খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ডিজিটাল সংস্কারে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সাথে দেশীয় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা উন্নয়নেও জোর দিতে হবে।এ মতামত ব্যক্ত করেছেন এ খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শিল্পপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাংলাদেশের অনেক আইটি ফার্ম বিদেশি সংস্থা থেকে মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করছে। যাই হোক, এদের অনেকেই তাদের উপার্জন বিদেশের ব্যাংকেই রাখে। যার ফলে এই কোম্পানিগুলোর রফতানি রাজস্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয় না। তারা উল্লেখ করেন, যদিও আইটি খাত ইতোমধ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে পেয়েছে।
আইটি প্রধানরা পর্যবেক্ষণ করেন, প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন নেপাল, ভুটান ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যেমন জাপান, কোরিয়া বাংলাদেশের আইটি শিল্পের জন্য সম্ভাব্য মার্কেট। নেপাল ও ভুটান বর্তমানে নিজেদের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আমাদের দেশীয় আইটি শিল্প অনেক অবদান রাখতে পারে। একই সময়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে আইওটির(ইন্টারনেট অব থিংস) জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে।
শিল্প পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ৪ হাজার ৫শ’র বেশি নিবন্ধিত সফটওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানি রয়েছে, যেগুলোতে কাজ করছে তিন লক্ষাধিক আইটি কর্মী। স্থানীয় বাজারে সফটওয়্যারের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারি তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ৭ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী আছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ও অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৩০ হাজার মিলিয়ে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবী রয়েছেন।
বেসিসের তথ্যমতে, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবী ছাড়াও দেশে ফ্রিল্যান্স-আউটসোর্সিংয়ে জড়িত আছেন সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রায় ২ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে ১০ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে সরকারের চলমান উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন ও সামনের দিনগুলোতে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই ১০ লাখ পেশাজীবী তৈরি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব।
পলক বলেন, বিগত ৯ বছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। এ খাতে নানা সাফল্যের কাহিনীও তৈরি হয়েছে। বর্তমানে সরকার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আবির্ভাব এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। বিগ ডাটা অ্যানালাইটিক, ইন্টারনেট অব থিংস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো ক্ষেত্রগুলোর জন্য প্রশিক্ষিত মানুষ তৈরি করা হচ্ছে। আইটি শিল্পে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য নানা ধরনের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আইসিটি রফতানি করা। আইসিটি রফতানি ইতোমধ্যে ৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে এবং আমরা আশাবাদী যে ২০২১-এর আগেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।
বছর রফতানি প্রবৃদ্ধি (কোটি ডলার)
২০০৬-০৭ ২.৬০৮
২০০৭-০৮ ২.৪০৯
২০০৮-০৯ ৩.২৯১
২০০৯-১০ ৩.৫৩৬
২০১০-১১ ৪.৫৩১
২০১১-১২ ৭.০৮১
২০১২-১৩ ১০.১৬৩
২০১৩-১৪ ১২.৪৭২
২০১৪-১৫ ১৩.২৫৪
২০১৫-১৬ ১৫.১৮৩
২০১৬-১৭ ১৭.৯১৯
সূত্র : রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৮ - ফেব্রুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস