২০১৯ সালে ইন্টারনেট ব্যবহার আরো বাড়বে
মো: মিন্টু হোসেন
দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়নের ধারা বজায় থাকলে আগামী বছরেও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়বে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসের শেষে দেশে কার্যকর ইন্টারনেট সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ লাখ ৭২ হাজার। এ বছরের প্রথম দশ মাসে ১ কোটি ১১ লাখ ৮৩ হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হয়েছে। আগস্ট মাসে ইন্টারনেট সংযোগ বেড়েছিল ১৮ লাখ ১৪ হাজার। এছাড়া সংযোগ বৃদ্ধির দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য মাস মার্চ। সে মাসে বাড়ে ১৪ লাখের কিছু। অক্টোবর মাসের হিসাব অনুসারে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ৯ কোটি ২৪ লাখ ৬৬ হাজার। দেশে এখন কার্যকর সিম সংখ্যা ১৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার পেরিয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে কার্যকর ইন্টারনেট সংযোগ ৮ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার হয়েছে। এর মধ্যে আইএসপিদের সংযোগসংখ্যা ৫৩ লাখ ৪২ হাজার। ওয়াইম্যাক্সের সংযোগ ৮৮ হাজার। অক্টোবর মাসের হিসাবে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৭ কোটি ৯৭ লাখ ৮৯ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার। ফোরজির বিস্তার ও থ্রিজি সুবিধা বাড়লে এ ধারায় ইন্টারনেটের ব্যবহার আগামী বছর আরো বাড়তে পারে।
এ খাতে বড় ভ‚মিকা রাখবে ইন্টারেনেটর দাম ও সময়সীমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন। মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ ন্যূনতম সাত দিন করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিটিআরসি। বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেছেন, বর্তমানে মোবাইল অপারেটরেরা বিভিন্ন মেয়াদে ইন্টারনেট প্যাকেজ অফার করছে। এসব অফারের মেয়াদ এক ঘন্টা থেকে এক মাস পর্যন্ত থাকে। স্বল্পমেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ গ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রায়ই অভিযোগ আসে, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর অব্যবহƒত ডাটাও শেষ হয়ে যায়। এ ধরনের ভোগান্তি থেকে গ্রাহকদের মুক্তি দিতে প্যাকেজের ন্যূনতম মেয়াদ সাত দিন করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিটিআরসি। এছাড়া কলড্রপ কমাতে মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মাত্র পাঁচ বছর আগে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হিসাব করা হতো হাজারে। ২০১৭ সাল থেকে তা হিসাব করা হচ্ছে মিলিয়নের হিসেবে। বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী গত পাঁচ বছর ধরেই দ্রুত বাড়তে দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে ১০ কোটির মাইলফলক পেরিয়ে যাবে ইন্টারনেট।
বিটিআরসি যে নিয়মে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নির্ধারণ করে সেটি হলো ৯০ দিন বা তিন মাসের মধ্যে একজন ব্যক্তি একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই তিনি ‘ইন্টারনেট ব্যবহারকারী’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে আরেকটু আগের হিসাব ধরা যেতে পারে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র আট লাখ। নয় বছরে একশ গুণ বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার ৮০৪। ওই সংখ্যাটি বিটিআরসির ওয়েবসাইটে দেখানো হয় ৩১১৪০.৮০৪ হাজার। ওই সময় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৯৬ লাখ ৯৪৯৭।
২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে এসে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দাঁড়ায় ৪ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজারে। ওই সময় মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার ছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ ৩ হাজার।
২০১৬ সালের মার্চ মাসে এসে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দাঁড়ায় ৬ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজারে। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৮৩ লাখ ১৭ হাজার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ে প্রায় পৌনে ৩০ লাখ।
২০১৭ সালের শুরুতে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৭৯ হাজারে। ওই সময় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ ৭ হাজার। নভেম্বর মাসের সর্বশেষ তথ্য পাওয়ার পর দেখা যায়, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৮ কোটি পার হয়েছে। এর মধ্যে ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩৬ হাজার মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ২০১৮ সালে তা প্রায় ৯ কোটি ২৫ লাখে পৌঁছেছে।
আগামী বছরে নতুন সরকার গঠিত হবে। নতুন সরকারের লক্ষ্য থাকবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে এগিয়ে নেওয়া। ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি ও সদ্ব্যবহার সরকারের কাছে গুরুত্ব পাবে। ২০২১ সাল নাগাদ দেশব্যাপী শতভাগ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করার পরিকল্পনা থাকবে সরকারের। সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিশ্চিত করবে