লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মুনির উদ্দিন আহমদ
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
বিশ্বকাপ ফুটবল
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮
ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ প্রতিযোগিতা ১৪ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাশিয়ায়। বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১তম আসর এটি। এ আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা অর্গানাইজ হয় ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (FIFA) মাধ্যমে। সেই থেকে প্রতি চার বছর পরপর (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় বাদে) ফুটবলের এই মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভেনুতে। এ আসরে বত্রিশটি দেশ চুড়ান্ত পর্বে অংশ নিচ্ছে।
রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮-এর অর্গানাইজার আশা করছে, ১.৫ মিলিয়ন বিদেশী ফুটবলপ্রেমী এবং ট্যুরিস্ট ফাইনাল খেলা উপভোগ করতে পারবে, যা রাশিয়ার ১১টি সিটিতে অনুষ্ঠিত হবে।
এ ধরনের একটি ইভেন্ট শুধু ব্যয়বহুল এবং এন্টারটেইনমেন্ট স্পোর্টসই নয়, বরং প্রচুর পরিমাণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয় টুর্নামেন্টের হোস্ট কান্ট্রির ওপর। এ ধরনের আয়োজনে হোস্ট কান্ট্রিকে নিশ্চিত করতে হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং অতিথি ও খেলায় অংশগ্রহণকারীদের আরাম- আয়েশে।
‘বিশ্বকাপ ২০১৮ প্ল্যানিং’-এর অর্গানাইজিং কমিটির প্রতিনিধি বারবার উল্লেখ করেন যে, আইওটি টেকনোলজি এবং স্টেডিয়ামে বাস্তবায়ন করা হবে স্মার্ট সলিউশন এবং সিটির অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সম্ভাব্য অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা প্রতিহত করতে গ্রহণ করা হয় সর্বোচ্চ লেভেলে নিরাপত্তা।
স্টেডিয়ামে ব্যবহার হওয়া প্রধান পাঁচ ডিরেকশনের স্মার্ট টেকনোলজি
ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ রাশিয়ায় বিভিন্ন স্মার্ট টেকনোলজি ব্যবহার করতে যাচ্ছে। এসব টেকনোলজির মধ্যে অন্যতম প্রধান পাঁচ টেকনোলজি রয়েছে, যেগুলো স্টেডিয়ামে ভক্তদের আরাম এবং নিরাপত্তা অ্যানহ্যান্স করে।
স্টেডিয়ামে ব্যবহার হওয়া প্রধান পাঁচ স্মার্ট টেকনোলজির ডিরেকশন নিম্নরুপ
হাই-ডেনসিটি ওয়াই-ফাই।
স্মার্ট সিকিউরিটি সিস্টেম।
ইউনিফাইড মিডিয়া সিস্টেমস।
নতুন এনার্জি সেভিং টেকনোলজি।
জিওলোকেশন সিস্টেম এবং মোবাইল সার্ভিস।
হাই-ডেনসিটি ওয়াই-ফাই
স্টেডিয়াম চত্বরে হাজার হাজার ভক্তের মাঝে যুগপৎভাবে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট আ্যক্সেস সুবিধা যেমন প্রদান করা হবে, তেমনি সার্ভিস মেইনটেন্যান্স ম্যাচেও প্রদান করা হবে। এ উদ্দেশ্যে স্টেডিয়াম সেক্টরকে আক্ষরিক অর্থে অপটিক্যাল ফাইবার এবং ওয়াই-ফাই রাউটার দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করা হয়, যাতে স্টেডিয়ামের প্রতিমিটারে একই হাই লেভেলের সিগন্যাল পাওয়া যায়।
স্মার্ট সিকিউরিটি সিস্টেম
অনেক বড় স্পোর্টস সুবিধা ম্যানেজ করার অন্যতম প্রধান অবয়ব হলো স্মার্ট সিকিউরিটি সিস্টেম। ভিড়ে ফেইস অ্যাকেশন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিকগনিশন সিস্টেম, স্মার্ট ফায়ার এক্সটিংগুইসার সিস্টেমসহ সবকিছু প্রতিহত করতে হবে এবং ইমার্জেন্সির কারণগুলো অ্যানালাইজ করার সুবিধা।
নতুন এনার্জি সেভিং টেকনোলজি
নতুন এনার্জি সেভিং টেকনোলজি আপনাকে সুযোগ দেবে স্ট্যাটিসটিক কালেক্ট করার এবং তৈরি করবে এনার্জি কনজাম্পশন চার্টস। বিকল্প এনার্জি কনজাম্পশন সোর্সও ব্যবহার করার সুবিধা দেবে। এ ধরনের টেকনোলজি বাস্তবায়নের প্রধান কাজ হলো শহরে এনার্জি রিসোর্স অপটিমাইজ করা। ইউনিফাইড মিডিয়া সিস্টেম
ফুটবল স্টেডিয়ামের জন্য দরকার ইউনিফাইড মিডিয়া সিস্টেম। এই উদ্ভাবনের মূল লক্ষ হলো স্টেডিয়ামের সব ভিডিও সার্ভিসকে একত্র করা, ফ্যান জোন এবং ভিআইপি বক্স, ফ্যানের মোবাইল ডিভাইস যেমন এরিনার স্ক্রিন, মনিটর এবং টিভি।
এই বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনকে ফুটবলপ্রেমী লাখো-কোটি মানুষের কাছে যথাযোগ্য আকর্ষণীয়ভাবে উপভোগ্য করে তুলতে প্রয়োজন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি অবকাঠামো। বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ রাশিয়াকে বিশ্ববাসীর কাছে আকর্ষণীয় ও উপোভগ্য করে করে তোলার জন্য আইসিটি অবকাঠামোর উন্নয়নে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে দেশটি।
প্রতিটি বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়। এবারের এই বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ব্যতিক্রম কিছু নয়। এ বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় প্রতিটি ক্ষেত্রে থাকছে প্রযুক্তির প্রভাব। বলা যায়, অন্যান্য বারের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল আসরে যেমনি ব্যবহার হবে অন-ফিল্ড টেকনোলজি, তেমনই ব্যবহার হবে অফ-ফিল্ড টেকনোলজি। অন-ফিল্ড টেকনোলজির মধ্যে আছে গোললাইন টেকনোলজি ও জিপিএস ট্র্যাকিং। আর অফ-ফিল্ড টেকনোলজিতে আছে ট্র্যাক চেক, ভিডিও রিপ্লে, বিগ স্ক্রিন. সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্রডকাস্টিং।
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি
ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮-এ যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার হবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ভিএআর তথা ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি। ১৯ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে ফিফা জানিয়েছে, রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮-এর প্রতিটি গেমে উপস্থাপন করা হবে চারটি ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি, যা স্টেডিয়ামের ভেতরে জায়ান্ট স্ক্রিনে রিপ্লে প্রদর্শন করবে।
চিত্র-১ : রেফারি হিসেবে বড় স্ক্রিনে সাধারণ ভিউ
ফিফার রেফারির প্রধান চরবৎষঁরমর ঈড়ষষরহধ এক প্রশিক্ষণ সেমিনারে ভিএআর রিভিউয়ের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘মস্কোর একটি সিঙ্গেল লোকেশনে সবকিছু সেন্ট্রালাইজ হবে এবং সব রেফারির বেইজ হবে মস্কো।’
পরবর্তী দুই সপ্তাহ জুড়ে দুই গূপে ৩৬ জন রেফারি এবং ৬৩
অ্যাসিস্ট্যান্টকে কভারসিয়ানোতে (ঈড়াবৎপরধহড়) প্রশিক্ষণ দেয়া হবে ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮-এর জন্য। এই ওয়ার্কশপ অর্গানাইজ করা হয় ভিএআর সিস্টেমের ওপর, যা টুর্নামেন্টে ব্যবহার হবে প্রথমবারের মতো।
ভিএআর টেকনোলজি টুর্নামেন্টের সময় যেভাবে কাজ করবে তা ব্যাখ্যা দিয়ে ইতালিয়ান সাবেক রেফারি এবং ভিএআর রেফারিং প্রজেক্ট লিডার রবার্তো রোসিত্তি (জড়নবৎঃড় জড়ংবঃঃর) বলেন, ‘ভিএআর অফিসিয়াল হিসেবে থাকবে চারজন। ভিএআর প্রিন্সিপাল প্রধান রেফারির সাথে কমিউনিকেট করবে এবং পরামর্শ দেবে যাতে সাইডলাইন ইমেজ ভেরিফাই করতে পারে।’
‘ভিএআর অ্যাসিস্ট্যান্ট নাম্বার ১ দায়িত্ব পালন করবে ম্যাচ লাইভ অনুসরণ করা, যখন রিভিউ চলতে থাকবে। ভিএআর অ্যাসিস্ট্যান্ট নাম্বার ২ বিশেষভাবে অফসাইডের দায়িত্ব পালন করবে।’
তৃতীয় ভিএআর অ্যাসিস্ট্যান্ট ভিএআর প্রিন্সিপালকে সাপোর্ট করার দায়িত্ব পালন করবে, প্রটোকল অনুযায়ী ফোকাস করে এবং সম্পূর্ণ টিমের মধ্যে ভালো কমিউনিকেশন নিশ্চিত করে।
ভিএআর অফিসিয়াল ছাড়াও চারজন টেকনিশিয়ান স্ক্রিন এবং ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের দায়িত্বে থাকেন। এছাড়া একজন ফিফা প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন জায়ান্ট স্ক্রিনে ব্যাখ্যাসহ সিদ্ধান্ত রিলে করার জন্য।
কলোনিয়া বলেন, ‘আমাদের মনে রাখা দরকার যে খুব সুস্পষ্ট অবজেক্টিভ এবং ভিএআরের সফলতাও নির্ভর করে এটি কতটুকু বোঝা যাচ্ছে তার ওপর।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়টি প্রায় এড়িয়ে যাওয়া হয় তা স্পষ্ট এবং অবশ্যই এটি এক বড় ক্রটি। এ ক্রটি টেকনোলজি ব্যবহার করে ম্যাচ রেফারিং করার কারণে নয়। প্রতিটি তুচ্ছ ঘটনায় গোল কখনো চেক করা হয় না।’
চিত্র-২ : ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিম যেভাবে কাজ করে
বক্স আইটেম
ভিএআর সম্পর্কে অপরিহার্য ফ্যাক্ট
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিম ৬৪টি ম্যাচ জুড়ে ম্যাচ অফিসিয়ালদেরকে সাপোর্ট করবে।
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিম অবস্থান করবে মস্কোর একটি সেন্ট্রালাইজড ভিডিও অপারেশন রুমে।
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিমের থাকবে সংশ্লিষ্ট সব ব্রডকাস্ট ক্যামেরা এবং দুটি ডেডিকেটেড অফসাইড ক্যামেরায় অ্যাক্সেস।
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিম কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রসেসে রেফারিকে সাপোর্ট করে এবং চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শুধু রেফারি।
রিভিউ প্রসেস সম্পর্কে প্রচার মাধ্যম, কমেন্টেটর এবং ইনফোটেইনমেন্টের মাধ্যমে ফুটবলপ্রেমীদেরকে অবহিত করা হবে।
ভিএআর টিম
এই টিম ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি এবং এর তিনটি সহকারী ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি হলো অঠঅজ১, অঠঅজ২ ধহফ অঠঅজ৩। সব ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিম সদস্য হলেন শীর্ষ ফিফা ম্যাচ অফিসিয়াল।
ফিফা রেফারি কমিটি ১৩ জন রেফারি সিলেক্ট করে, যারা সম্পূর্ণরূপে ‘২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া’য় ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি হিসেবে কাজ করবেন।
ভিএআর টিমের সিলেকশনের শর্ত প্রাথমিকভাবে হলো- তাদের নিজেদের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন এবং কনফেডারেশন প্রতিযোগিতায় ভিডিও ম্যাচ অফিসিয়ালের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর সাথে আরো থাকতে হবে কয়েকটি প্রস্তুতিমূলক সেমিনার এবং ফিফা কম্পিটেশনে সফলভাবে অংশগ্রহণ, যেখানে এ সিস্টেম ব্যবহার করে ভিএআর জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়।
১৩ জন ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি ছাড়াও কিছু রেফারি এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি সিলেক্ট করা হয়, যাদের ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়ার জন্য সিলেক্ট করা হয়। এরা ফিফা মূল কম্পিটেশনের সময় ভিডিও ম্যাচ অফিসিয়াল হিসেবে কাজ করবে। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই এই নিয়োগ দেয়া হবে।
ভিএআর
ভিএআর উপরের মনিটরের মূল ক্যামেরায় লক্ষ রাখে এবং কোয়াড-স্পিøট মনিটরে কোনো ঘটনা চেক বা রিভিউ করে। তিনিই ভিএআর টিম নেতৃত্ব দেন এবং খেলার মাঠে রেফারিদের সাথে কমিউনিকেট করেন।
এভিএআর ওয়ান
এভিএআর ওয়ান মূল ক্যামেরায় কেন্দ্রীভ‚ত থাকে এবং লাইভ প্লে সম্পর্কে ভিএআরকে অবহিত করে, যদি কোনো কিছু চেক বা রিভিউ করা হয়।
এভিএআর টু
এভিআর টু হলো একটি সহকারী রেফারি, যার অবস্থান অফসাইড স্টেশনে। তিনি ভিএআর চেক এবং রিভিউ প্রসেসকে ত্বরান্বিত করতে অ্যান্টিসিপেট এবং চেক করেন সম্ভাব্য কোনো অফসাইড অবস্থাকে।
এভিএআর থ্রি
এভিএআর থ্রি ফোকাস করে টিভি প্রোগ্রাম ফিডে, খেলার কোনো ঘটনাকে মূল্যায়ন করতে অফসাইড স্টেশন অবস্থানে ভিএআর এবং এভিএআর টু-এর মাঝে ভালো কমিউনিকেশন নিশ্চিত করতে ভিএআর-কে সহায়তা করে।
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়ায় ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি ম্যাচে ভিডিও টেকনোলজি ব্যবহার করে এক জটিল কাজ সম্পাদান করবে।
ভিডিও অপারেশন রুম
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিম রেফারিদের সাপোর্ট করে সেন্ট্রালাইজড ভিডিও অপারেশন রুম (VOR) থেকে, যার অবস্থান মস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্ট সেন্টারে (IBC)। ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভিডিও অপারেশন রুমে সংশ্লিষ্ট সব ক্যামেরা থেকে ১২টি স্টেডিয়ামে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হয়। সফেস্টিকেটেড ফাইবার-লিঙ্কড রেডিও সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিটি স্টেডিয়ামের ফিল্ডের রেফারি ভিএআর টিমের সাথে কথা বলেন।
চিত্র-৩ : ভিএআর টিম রেফ্রারিদের সাপোর্ট করে সেন্ট্রালাইজড ভিডিও অপারেশন রুম (VOR) থেকে
ক্যামেরা
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিমের রয়েছে ৩৩টি ব্রডকাস্ট ক্যামেরায় অ্যাক্সেস সুবিধা। এগুলোর মধ্যে ৮টি সুপার-স্লো মোশন, চারটি আল্ট্রা স্লো মোশন ক্যামেরা। এছাড়া দুটি অফসাইড ক্যামেরায়ও এদের অ্যাক্সেস সুবিধা রয়েছে। শুধু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি টিমে এ দুটি ক্যামেরা অ্যাভেইলেবেল। নকআউট ফেসে দুটি বাড়তি আল্ট্রা স্লো-মোশন ক্যামেরা ইনস্টল করা হবে একটি করে প্রতিটি গোল পোস্টের পেছনে, যা ভিএআর টিমে অ্যাভেইলেবেল হবে।
চিত্র-৪ : ব্রডকাস্ট ক্যামেরা
কখন একটি ভিএআর ব্যবহার হবে?
তিনটি মূল ঘটনাসহ একটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিষয় চিহ্নিত হয়েছে গেম চেঞ্জিং হিসেবে।
গোল : রেফারিদের সহায়তা করার জন্য ভিএআরে এক নিয়ম আছে যাতে নির্দিষ্ট করা যায় গোলে কোনো বিধিলঙ্ঘন হয়েছে কি না, যার কারণে গোল পুরস্কৃত করা যায় না। যদি বল লাইন ক্রশ করে, তাহলে প্লে ব্যাহত হবে, যাতে গেমে সরাসরি কোনো প্রভাব না পরে।
পেনাল্টি ডিসিশন : পেনাল্টি অ্যাওয়ার্ড অথবা নন-অ্যাওয়ার্ড পেনাল্টি কিকে সুস্পষ্ট কোনো ভুল সিদ্ধান্ত হয়নি তা নিশ্চিত করতে ভিএআরে এক নিয়ম ব্যবহার হয়।
ডাইরেক্ট রেড কার্ড ইনসিডেন্ট : খেলার বিধিলঙ্ঘনের কারণে খেলোয়াড়কে মাঠ ত্যাগের নির্দেশে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত হয়নি তা নিশ্চিত করতে ভিএআরে এক নিয়ম ব্যবহার হয়।
ভুুল আইডেন্টিফাই করা : রেফারি সতর্কীকরণ করেন অথবা ভুল প্লেয়ারকে মাঠ থেকে বের করে দেন অথবা নিশ্চিত হতে পারেন না যে কোন খেলোয়াড়কে নিগ্রহ করা উচিত।
গোল চেক করার জন্য নতুন পরিধেয় ওএস হাবলট
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়ার অফিসিয়াল স্পন্সর হলো হাবলট (FIFA)। ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়ার ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য হাবলট স্পেশাল এডিশনের স্মার্টঘড়ি ডেভেলপ করে। এই স্মার্টঘড়ি তাৎক্ষণিকভাবে ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়ায় প্রতিটি ম্যাচের খেলার চ‚ড়ান্ত সেকেন্ডকে কানেক্ট করে। এ ধরনের ঘড়ি ইতোপূর্বে অন্য কোনো ব্র্যান্ড ঘড়িতে দেখা যায়নি।
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়ায় বিগ ব্যাং রেফারি রান করে ওয়্যার ওএস (ডবধৎ ঙঝ) এবং এতে সমন্বিত আছে একই ওহঃবষ অঃড়স ত৩৪ঢঢ প্রসেসর। ‘বিগ ব্যাং রেফারি ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া’ অফার করে স্মার্টঘড়ির স্বাভাবিক সব ফিচার।
বিগ ব্যাং রেফারিতে সমন্বিত আছে ৩৫.৪ মিমি ওয়াচফেস, 400X400 AMOLED স্ক্রিন, ব্লুটু_ 4.1, 802.11এন ওয়াই-ফাই, প্রায় একদিনের ব্যাটারি আয়ু।
এ ঘড়ির বিশেষ ভার্সন রেফারি পড়ে থাকবে এ বিশ্বকাপ ফুটবলে গোললাইন টেকনোলজির সাথে ইন্টারটারফেস করার জন্য। যেসব ফুটবল ম্যাচে ইতোমধ্যে গোললাইন টেকনোলজি ব্যবহার হয়েছে, সেখানে রেফারি নোটিফাই হওয়ার জন্য ব্যবহার করেন অধিকতর বেসিক ঘড়ি। গোল রিকগনাইজ হয় অটোমেটিক সিস্টেমের মাধ্যমে। কিন্তু এখন মনে হয় বিগ ব্যাং রেফারির সব ফিচার আছে।
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া সম্পৃক্ত করে ইউএইচডি, এইচডিআর ব্রডকাস্ট পরিকল্পনা
ফিফা ঘোষণা করেছে যে, ‘২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া’ হবে প্রথম যারা ৬৪টি ম্যাচই ইউএইচডি এবং এইচডিআরে প্রডিইউস করবে।
একটি সিঙ্গেল প্রোডাকশন চেইনে মাল্টিপল ভিডিও ফরম্যাটের অপশন (যেমন, 1080i, 1080 pev UHD HDR) পাবেন যদি হাইব্রিড ইউএইচডি/এইচডিআর/১০৮০পি সেটআপ ব্যবহার করেন।
একটি বেইজলাইন প্রোডাকশন ফরম্যাট হিসেবে প্রগ্রেসিভ স্ক্যানিংয়ের ব্যবহারও থাকবে।
গেমের জন্য ৩৭টি ক্যামেরা ব্যবহার হবে। এগুলোর মধ্যে ৮টি ইউএইচডি/এইচডিআর এবং ১০৮০পি/এসডিআর ডুয়াল আউটপুট সংবলিত এবং অন্য আটটি ১০৮০পি/এইচডিআর এবং ১০৮০পি/এসডিআর ডুয়াল আউটপুট সংবলিত। এছাড়া আটটি সুপার-সেøা মোশন, দুটি আল্ট্রা-মোশন ক্যামেরা এবং একটি সিনেফ্লেক্স হেলি-ক্যাম প্রতিটি স্টেডিয়ামে থাকবে। ইউএইচডি প্রোগ্রামের যেমন থাকবে নিজস্ব ওয়াইডার-ফ্রেম ক্যামেরা, তেমনই থাকবে অভিনিবিষ্ট করা অডিও।
চিত্র-৫ : হাইব্রিড ইউএইচডি/এইচডিআর/১০৮০পি সেটআপ
ফিফা ‘২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া’য় এর ডিজিটাল পরিকল্পনা ঘোষণা দেয়, অঙ্গীভ‚ত করে ডিজিটাল প্রোডাকশন এবং সার্ভিসসমূহ অফার করে সার্বিক প্রোডাকশন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। এটি ভার্চুয়ালি সম্পৃক্ত করবে ৩৬০ ডিগ্রি ভিডিও অন ডিমান্ড লাইভ ম্যাচ অনুসরণ করার সক্ষমতা।
‘২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া’র বল জনসমক্ষে প্রদর্শন করা
অফিসিয়াল বিশ্বকাপ বলকে অ্যাডিডাস টেলস্টার ১৮ নামে অভিহিত করা হয়। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮-এর অফিসিয়াল ম্যাচ বল অবমুক্ত করে অ্যাডিডাস। এটি কাল্ট ক্ল্যাসিক বলের রি-ইমেজ করা বল, যা ব্যবহার হয়েছিল ১৯৭০ বিশ্বকাপে।
‘টেলস্টার ১৮’ স্মৃতিতে জাগিয়ে তোলে ১৯৭০ ফিফা বিশ্বকাপের অবিস্মরণীয় স্মৃতি।
চিত্র-৬ : ইউনিক মাইক্রোচিপ টেকনোলজি সংবলিত অ্যাডিডাস ‘টেলস্টার ১৮’
অ্যাডিডাসের ডিজাইনের প্রধান মাইক্রোচিপ টেকনোলজি সংবলিত নতুন বল উন্মোচন করে, যা অনুমোদন করে স্পিড এবং বলকে ট্র্যাক ও অ্যানালাইজ করার জন্য বলের ট্রেজেক্টোরি।
অরিজিনাল টেলস্টার হলো সব সময়ের জন্য অন্যতম এক আইকনিক ফুটবল, যা ফুটবল ডিজাইনকে চিরদিনের জন্য পরিবর্তন করে। সুতরাং অরিজিনাল ডিজাইনকে অক্ষত রেখে টেলস্টার ১৮-এর ডিজাইন করা সত্যিকার অর্থে এক চ্যালেঞ্জ ছিল।
স্পোর্টস কোম্পানি প্রথমবারের মতো বলে এমবেডেড করে ঘঋঈ (হবধৎ-ভরবষফ পড়সসঁহরপধঃরড়হ) চিপ। এই আইডিয়ার পেছনে কাজ করে ভক্তরা বলের সাথে ইন্টারেক্ট করতে পারবে তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এডিডাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিটি বল জেনারেট করবে এক ইউনিক আইডেন্টিফায়ার অনন্য কনটেন্ট আনলক করার জন্য।
এডিডাসের ফুটবল হার্ডওয়্যারের ক্যাটাগরি ডিরেক্টর রোল্যান্ড রমলার বলেন, ‘নতুন প্যানেল স্ট্রাকচার এবং ঘঋঈ চিপ সম্পৃক্তকরণ নতুন ফুটবল উদ্ভাবনে এবং ডিজাইনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে এবং কনজ্যুমার ও খেলোয়াড়দের অফার করে সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা।’
ভিএআর হেডসেট
ফিফা নিশ্চিত করেছে যে, রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮-এ ভিএআর টেকনোলজি ব্যবহার হবে এবং এক নতুন টেকনোলজি সেট করা হবে টেকনোলজি-সংশ্লিষ্ট স্বাভাবিক কালক্ষেপ লাঘব করার জন্য।
চিত্র-৭ : টেকনোলজিসংশ্লিষ্ট স্বাভাবিক কালক্ষেপ লাঘব করার জন্য হেডসেট
‘২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া’য় ব্যবহার হতে যাচ্ছে ভিএআর হেডসেট, যা সেট করা হবে সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করতে। এই হেডসেটের দাম ৫০০০ পাউন্ড। কয়েক দিন আগে ফিফা ডিভাইস ডিজাইনে গ্রিন সিগন্যাল দেয় বিতর্কিত ভিডিও সিদ্ধান্ত ত্বরান্বিত করতে। এরা তাৎক্ষণিকভাবে থ্রিডি-ডিজিটাল স্ক্রিনে ভিএআর ইমেজ দেখতে পারবে।
গোললাইন টেকনোলজি
বিশ্বকাপ রেগুলেশন গোললাইন টেকনোলজি ব্যবহার করতে অনুমতি দেয়। ইলেক্ট্রনিক গোললাইন টেকনোলজি ব্যবহার হবে ‘২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া’য়। ‘২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়া’ শুরু হওয়ার আগে রাশিয়ান প্রিমিয়ার লিগ টুর্নামেন্টের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার কথা আছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ান ফুটবল ইউনিয়নের ডিপার্টমেন্ট অব রেফারিং এবং ইনস্পেকশনের প্রধান অ্যালেক্সেই নিকোলেইভ। বিশ্বকাপ রেগুলেশন এ ধরনের গোললাইন টেকনোলজি অনুমোদন করে।
ইলেক্ট্রনিক গোললাইন টেকনোলজি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গোল রেজিস্টার করবে এবং ফুটবল গোললাইন অতিক্রম করেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে রেফারিকে অবহিত করে সতর্ক করবে। গোললাইন সিস্টেমে গোলরেফ (GoalRef), হক-আই (Hawk-Eye) এবং গোল কন্ট্রোল-৪ডি (GoalControl-4D) প্রভৃতি অনুমোদন করে।
গোললাইন টেকনোলজি এর ট্রায়াল শেষ করে ২০১২ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জাপানে। এরপর থেকে এই টেকনোলজি ২০১৩ কনফেডারেশন কাপ, ২০১৪ বিশ্বকাপ ব্রাজিল, ইউরো ২০১৬ এবং ২০১৬ ইউরোপিয়ান লিগ ফাইনালে ব্যবহার হয়।
চিত্র-৮ : গোললাইন টেকনোলজি