লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মইন উদ্দীন মাহমুদ
মোট লেখা:২৭
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
কভিড-১৯ মহামারীতে ১০ প্রযুক্তি প্রবণতা
কভিড-১৯ মহামারীতে ১০ প্রযুক্তি প্রবণতা
মইন উদ্দীন মাহমুদ
করোনাভাইরাসের কারণে আইটি পেশাজীবীরা এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী দূর থেকে কাজ করছেন বলেই নয় বরং বেশিরভাগ অবকাঠামো যেগুলোর ওপর ব্যবহারকারীরা নির্ভর করে সেগুলো হয় ক্লাউড নয়তো বা থার্ড পার্টির মাধ্যমে পরিচালিত অথবা অফিসে ফিরে আটকে পড়ছে যেখানে আপনি কখনই ভিজিট করেন না। তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে কোনো সময়ই নেটওয়ার্ক এবং আইটি রিসোর্সগুলো বেশি ডিস্ট্রিবিউট করা হয়নি এবং এ বিষয়টি আইটি পেশাদারদের জন্য বেশি কঠিন করে ফেলেছে, যারা বাসায় আটকে পড়েছেন তাদের জন্য।
আপনি কোনো এন্টারপ্রাইজ অথবা একটি ছোট থেকে মাঝারি সাইজে ব্যবসায় (এসএমবি) পরিচালনা করছেন, তাহলে আপনার ব্যবহারকারীরা থার্ড পার্টি পরিচালিত ক্লাউড সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের টুলে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। ভার্চুয়াল অবকাঠামোও ক্লাউডে অবস্থান করে, তবে আপনার মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং ছোট ছোট আইটেম এখনো অফিসেই থাকে। সবচেয়ে খারাপ, ওইসব ব্যবহারকারীর মধ্যে কেউ কেউ সম্ভবত তাদের টাস্ক সম্পন্ন করার জন্য অথবা তাদের কাজ স্টোর করার জন্য হোম নেটওয়ার্কের অবকাঠামো ব্যবহার করা শুরু করেছেন এবং এ কাজগুলো আপনি দেখতেও পারছেন না। আজকের দিনের রিমোট অ্যাক্সেসের টুলগুলো সুরক্ষিতভাবে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অনেক কিছুই এবং আপনি যদি বিজনেস হেল্প ডেস্ক রান করতে থাকেন তাহলে এটি পরিচালনা করাও এক জটিল বোঝা হবে আপনার জন্য।
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস ডিজিটাল পেমেন্ট, টেলিহেলথ এবং রোবটিকসের মতো প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে
কভিড-১৯ মহামারী ডিজিটাল পেমেন্ট, টেলিহেলথ এবং রোবটিকসসহ ১০ মূল প্রযুক্তি প্রবণতা ত্বরান্বিত করছে।
এ প্রযুক্তিগুলো করোনাভাইরাস বিস্তারকে কমাতে সহায়তা করার পাশাপাশি ব্যবসায়কে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।
মহামারী এবং অন্যান্য হুমকির মুখে প্রযুক্তিসমাজকে অধিকতর দৃঢ়তার সাথে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন প্রযুক্তি আমাদের সমাজকে লকডাউন এবং কোয়ারেন্টাইন সময়ে কার্যকর রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে আসছে। কভিড-১৯-এর বাইরেও প্রযুক্তিগুলোর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পরিলক্ষিত হতে পারে।
এ লেখায় ১০ প্রযুক্তি প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে, যা স্থিতিস্থাপক সমাজ গঠনে সহায়তা করতে পারে, পাশাপাশি আমাদের ব্যবসায় কী প্রভাব ফেলবে, আমরা কীভাবে ব্যবসায় করব, আমরা কীভাবে বাণিজ্য করব, কীভাবে কাজ করব, কীভাবে আমরা পণ্য উৎপাদন করব, কীভাবে আমরা শিখব, কীভাবে আমরা চিকিৎসাসেবা পাব, আমরা কীভাবে আমাদের বিনোদন পাব বিবেচনা করতে হবে।
১. অনলাইন শপিং এবং রোবাটের মাধ্যমে ডেলিভারি
২০০২ সালের শেষের দিকে সার্সের (SARS) প্রাদুর্ভাবে চীনে বিজনেস-টু-বিজনেস এবং বিজনেস-টু-কনজ্যুমার উভয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস প্লাটফর্মে অসাধারণ প্রবৃদ্ধি ঘটে।
একইভাবে কভিড-১৯ অনলাইন শপিংকে বিশ্বজুড়ে নাইস-টু-হ্যাভ (nice-to-have) থেকে শুরু করে মাস্ট-হ্যাভ (must-have) এ ট্রান্সফরম করেছে। বেইজিংয়ের কিছু বার অনলাইন অর্ডার এবং ডেলিভারির মাধ্যমে হ্যাপি-আওয়ার (happy hours) অফার করা শুরু করেছে।
অনলাইন শপিংয়ের জন্য দরকার একটি শক্তিশালী লজিস্টিক সিস্টেমের সমর্থন। ইন-পারসন ডেলিভারি অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে ডেলিভারি ভাইরাস প্রুফ নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অনেকগুলো ডেলিভারি কোম্পানি এবং রেস্টুরেন্ট চালু করেছে যোগাযোগবিহীন সরবরাহ পরিষেবা যেখানে ব্যক্তির হাতে পণ্য প্রদান না করে সুনির্দিষ্ট লোকেশনে ড্রপ করে যায়। চাইনিজ ই-কমার্স জায়ান্টরা তাদের রোবট ডেলিভারি ব্যবস্থাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে যাই হোক, রোবট ডেলিভারি সার্ভিসগুলো ব্যাপকভাবে প্রচলিত হওয়ার আগে ডেলিভারি কোম্পানিগুলোর দরকার ডেলিভার করা সামগ্রীর স্বাস্থ্য-বিধান রক্ষা করার জন্য পরিষ্কার প্রোটোকল প্রতিষ্ঠা করা।
রোবটগুলো মানুষের সাহায্য ছাড়াই খাদ্য এবং পণ্য সরবরাহ করার কাজ করছে
২. ডিজিটাল এবং যোগাযোগবিহীন পেমেন্ট করা
নগদ অর্থ প্রদান ভাইরাস বহন করতে পারে। তাই চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক নোটগুলো ছড়িয়ে পড়ার আগে পরিষ্কার করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বাস্তবায়ন করেছে বিভিন্ন মানদÐ। বর্তমানে কভিড-১৯ বিস্তার এড়াতে প্রস্তাবিত অর্থ প্রদান পদ্ধতি হলো যোগাযোগবিহীন ডিজিটাল পেমেন্ট হতে পারে তা কার্ড বা ই-ওয়ালেট আকারে। ডিজিটাল অর্থ প্রদান পদ্ধতি জনগণকে অনলাইনে পণ্য কেনা এবং পণ্যের দাম পরিশোধ করতে যেমন সক্ষম করে তুলেছে, তেমনই সার্ভিস এবং পেমেন্ট করার পাশাপাশি দ্রুত তহবিল সংগ্রহে সক্ষম করে তুলেছে।
যোগাযোগবিহীন ডিজিটাল অর্থ প্রদান কভিড-১৯-এর বিস্তার রোধ করতে ব্যবসায় প্রবাহ বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে
তবে যাই হোক, বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে ১.৭ বিলিয়ন মানুষ আনব্যাংকড অর্থাৎ ব্যাংক অ্যাকাউন্টবিহীন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল পেমেন্টে সহজ অ্যাক্সেস নেই। ডিজিটাল পেমেন্টের প্রাপ্যতা অবশ্য নির্ভর করে ইন্টারনেট, নগদ অর্থকে ডিজিটালাইজড ফরম্যাটে রূপান্তর করার জন্য ডিভাইস এবং নেটওয়ার্কের ওপর।
৩. রিমোট কাজ
অনেক কোম্পানি কর্মীদেরকে বাসা থেকে কাজ করতে বলছে। রিমোট ওয়ার্ক তথা দূর থেকে কাজ করা সক্ষম হয়েছে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPNs), ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (VoIPs), ভার্চুয়াল মিটিং, ক্লাউড টেকনোলজি, ওয়ার্ক কোলাবরেশন টুল এবং এমনকি ফেশিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজিসহ অনেক প্রযুক্তির মাধ্যমে। এ প্রযুক্তিগুলো একজন ব্যক্তিকে ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে উপস্থিত করতে সক্ষম হয় বাড়ির গোপনীয়তা রক্ষার জন্য। উপরন্ত ভাইরাস বিস্তার রোধে রিমোট ওয়ার্ক অর্থাৎ দূর থেকে কাজ করার সুবিধা থাকায় যেমন যাতায়াতের সময় সাশ্রয় হয়, তেমনই প্রদান করে অধিকতর নমনীয়তা।
কভিড-১৯ বাসা থেকে কাজ করাকে খুব স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত করেছে
রিমোট ওয়ার্ক নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ চাপিয়ে দিয়েছে। তথ্যের নিরাপত্তা, তথ্যের গোপনীয়তা এবং সময়মতো প্রযুক্তি সহায়তা পাওয়া হতে পারে এক বড় ইস্যু। রিমোট ওয়ার্ক এক জটিল শ্রম আইনের (labour law) ইস্যুও হতে পারে; যেমন নিরাপদ কাজের পরিবেশ প্রদান করা এবং আয়কর-সংশ্লিষ্ট সমস্যার সাথে জড়িত বিষয়। কর্মচারীরা নিঃসঙ্গতা এবং ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স অর্থাৎ কাজের স্থায়ীত্বের ভারসাম্যের অভাব অনুভব করতে পারে। যদি কভিড-১৯ মহামারীর পরে রিমোট ওয়ার্ক আরও সাধারণ হয়ে যাবে, তবে নিয়োগকর্তারা ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং সস্তা শ্রম ব্যয়সহ আঞ্চলিক লোক নিয়োগ করতে পারেন। রিমোট ওয়ার্ককে অর্থাৎ দূর থেকে কাজ করাকে বিধিসম্মত কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আইন এবং বিধিমালা আপডেট করা দরকার। তা ছাড়া মানুষের ওপর দূর থেকে কাজ করার প্রভাব বোঝার জন্য মনোসমীক্ষণগত গবেষণা পরিচালনা করা দরকার।
ঘর থেকে কাজ করার সময় শীর্ষ বাধাগুলো
সব কাজ ঘর থেকে করা যায় না, কেননা এতে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (US Bureau of Labor Statistics) পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে স্যালারি ওয়ার্কারেরা ন্যূনতম বাসা থেকে মাঝেমধ্যে কাজ করে যা বেতনের প্রায় ২৫ শতাংশ। হাই স্কুল ডিপ্লোমাধারীদের তুলনায় কলেজ ডিগ্রিধারীরা প্রায় পাঁচগুণ বেশি কাজ পায় যা তাদেরকে বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ করে দেয়। কিছু কিছু পেশা যেমন মেডিক্যাল সার্ভিস এবং ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে সব অপশন নাও থাকতে পারে। তাই সময়ের সাথে সাথে ডাটা প্রবাহ এবং করের সাথে সম্পর্কিত নীতিমালাগুলো সমন্বয় করা দরকার।
৪. দূরশিক্ষণ
এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১৯১টি দেশ স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা বা বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে ১.৫৭ বিলিয়ন শিক্ষার্থী প্রভাবিত হয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন কোর্স অফার করা শুরু করেছে। এর ফলে নিশ্চিত করা গেছে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়নি। ডিসট্যান্ট লার্নিং তথা দূরশিক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগুলো রিমোট ওয়ার্কের মতো এবং এতে সম্পৃক্ত থাকতে পারে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, থ্রিডি প্রিন্টিং এবং আর্টিফিশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স-এনাবলড রোবট টিচার।
দূরশিক্ষণের মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেনারেরা বাসা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে
দূরশিক্ষণ বিষয়ে এমন সব প্রযুক্তির সম্ভাব্যতা রয়েছে, যা ডিজিটাল রেডিন্যান্স এবং ইনকাম লেভেলের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করতে পারে আরো বিস্তৃত ব্যবধান। অবশ্য দূরশিক্ষণ ব্যবস্থা আমাদের দেশের অভিভাবকদের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ওপর যাদেরকে ঘরে থাকতে হয় তাদের সন্তানদের দেখভালের জন্য। এরাই প্রথম মুখোমুখি হন অর্থনৈতিক চাপের এবং কাজে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি।
৫. টেলিহেলথ
কভিড-১৯ বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে টেলিহলেথ হতে পারে এক কার্যকর উপায়। অত্যাবশ্যক প্রাথমিক যত্ন প্রদানের ক্ষেত্রেও টেলিহেলথ খুব কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারে। পরিধানযোগ্য ব্যক্তিগত আইওটি ডিভাইস খুব গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো ট্র্যাক করতে পারে। চ্যাটবট রোগীদের মাধ্যমে চিহ্নিত লক্ষণগুলোর ভিত্তিতে প্রাথমিক ডায়াগনাইসিস করতে পারে।
কভিড-১৯ চলাকালীন টেলিহেলথের ব্যবহার বাড়ার লেখচিত্র
তবে যাই হোক, যেসব দেশে চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি, সেসব দেশে টেলিহেলথ বীমার আওতাভুক্ত কি না তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। টেলিহেলথকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য দরকার একটি নির্দিষ্ট লেভেলের প্রযুক্তিজ্ঞানের স্বাক্ষরতার পাশাপাশি ভালো ইন্টারনেট সংযোগেরও প্রয়োজন। সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো মেডিক্যাল সার্ভিস তথা চিকিৎসা পরিষেবা। উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকায় চিকিৎসকেরা সাধারণত একই বিচার বিভাগের বসবাসকারী রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারেন। এই বিধিবিধানগুলো যখন লেখা হয়েছিল, তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি টেলিহেলথের প্রয়োজনীয়তার কথা।
৬. অনলাইন এন্টারটেইনমেন্ট
কোয়ারেন্টাইন ব্যক্তিগত মিথষ্ক্রিয়াকে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করেছে। তবে মানুষের সৃজনশীলতা পার্টিকে অনলাইনে নিয়ে এসেছে। ক্লাউড র্যাভেস এবং কনসার্টের অনলাইন স্ট্রিমিং বিশ্বজুড়ে বিনোদনপ্রেমীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। চায়নিজ চলচ্চিত্র কোম্পানিগুলো অনলাইনে চলচ্চিত্র প্রকাশ করেছিল। মিউজিয়াম এবং ইন্টারন্যাশনাল হেরিটেজ সাইটগুলো অফার করে ভার্চুয়াল ট্যুর। লক্ষণীয়, কভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথে অনলাইন গেমিং ট্র্যাফিকের উত্থানও হয়।
মহামারী চলাকালীন নাচের প্রশিক্ষকেরা তাদের পাঠ অনলাইনে নিচ্ছেন
৭. সাপ্লাই চেইন ৪.০
কভিড-১৯ গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের জন্য সৃষ্টি করেছে এক প্রচÐ হুমকি। সামাজিক দূরত্ব এবং কোয়ারেন্টাইন আদেশের কারণে কিছু কিছু ফ্যাক্টরি সম্পূর্ণরূপে শাটডাউন করা হয়েছে। কিছু কিছু দেশ খাদ্য এবং পিপিই তথা পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট প্রভৃতি আইটেম বিভিন্ন স্তরে রফতানি বাস্তবায়ন করেছে। তবে প্রচÐভাবে কাগজভিত্তিক রেকর্ডগুলোর নির্ভরশীলতা, ডাটার দৃশ্যমানতার এবং ফ্লেক্সিবিলিটির অভাব বিদ্যমান সাপ্লাই চেইনকে যেকোনো মহামারীতে ভলনিয়ারেবল করতে পারে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মূল প্রযুক্তিগুলো যেমন বিগ ডাটা, ক্লাউড কমপিউটিং, ইন্টারনেট-অব-থিংস (আইওটি) এবং বøকচেইন তথ্যের যথার্থতা যেমন বাড়িয়ে দেয় তেমনই ডাটা শেয়ার করে নেয়াকে উৎসাহিত করে। এটি ভবিষ্যতের জন্য আরো একটি স্থিতিশীল সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করতে উৎসাহিত করে।
৮. থ্রিডি প্রিন্টিং
থ্রিডি টেকনোলজি বিস্তৃত হয়েছে সাপ্লাই চেইনে থাক্কাটা প্রশমিত করার জন্য এবং রফতানি নিষিদ্ধ পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্টে। থ্রিডি প্রিন্টিং অফার করে উৎপাদনে নমনীয়তা : একই প্রিন্টার বিভিন্ন ডিজাইনের ফাইল এবং উপকরণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করতে পারে এবং সহজ অংশগুলো দ্রুত তৈরি করা যায় কোনো দীর্ঘ প্রকিউরমেন্ট প্রসেস এবং শিপমেন্টের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা ছাড়া।
স্নারকেলস রূপান্তর করা হয় শ্বাস-সংক্রান্ত থ্রিডি প্রিন্টিং টেকনোলজি
তবে থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবহার করে ব্যাপক উৎপাদন কিছু বাধার মুখোমুখি হয়। প্রথমত, পণ্যের উৎপাদনে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ইস্যু অর্থাৎ মেধাস্বত্ব আইন দিয়ে সংরক্ষিত থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, নির্দিষ্ট কিছু পণ্য যেমন সার্জিক্যাল মাস্ক আইনানুগ সম্মতির বিষয় যা পেতে দীর্ঘ সময় নিতে পারে।
৯. রোবটিকস এবং ড্রোন
কোনো কাজ মানুষের মিথষ্ক্রিয়ার ওপর কত প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল তা কভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে। লেবার ইন্টেনসিভ বিজনেস অর্থাৎ প্রচন্ডভাবে শ্রমনির্ভর ব্যবসায় যেমন খুচরা, খাদ্য, উৎপাদন এবং লজিস্টিক সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কভিড-১৯ রোবটের ব্যবহার এবং রোবটিকসের ওপর গবেষণা করার জন্য জোর চাপ দেয়। অতি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিভিন্ন অঞ্চল জীবাণুমুক্ত করার জন্য রোবট ব্যবহার হতে শুরু হয় এবং কোয়ারেন্টাইন অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ করতে ব্যবহার হয়। ড্রোন কুকুর আইটেম সরবরাহ করতে ব্যবহার হয়।
একটি রোবট কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ডাক্তারদের সহযোগিতা করে
সম্প্রতি এমন কিছু রিপোর্ট তৈরি করা হয় যেখানে ধারণা হয় ভবিষ্যতে ম্যানুফ্যাকচারিং পেশা প্রতিস্থাপিত হবে রোবট দিয়ে এবং একই সময় এ প্রসেসে নতুন পেশাও সৃষ্টি হবে। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শ্রমশক্তিকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং সমাজকল্যাণের নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
১০. ৫জি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
উপরে উল্লিখিত সব প্রযুক্তি প্রবণতা নির্ভর করে একটি স্থিতিশীল, উচ্চগতি এবং সাশ্রয়ী মূল্যের ইন্টারনেটের ওপর। ৫জি যেখানে রিমোট মনিটরিং এবং স্বাস্থ্যসেবার পরামর্শের গুরুত্ব প্রচার করেছে তখন ইউরোপে ৫জি’র ব্যবহার বিলম্বিত হয় যখন প্রযুক্তির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়। ৫জি গ্রহণের ফলে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিভাইসের দাম এবং ডাটা প্ল্যানের ব্যয় বাড়বে। ৫জি নেটওয়ার্কে এই বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করা বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হবে।
কভিড-১৯ দেখায় যে ৫জি নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি নিশ্চিত করা দরকার সর্বব্যাপী অ্যাক্সেস
ডিজিটাল রেডিন্যাসের গুরুত্ব
কভিড-১৯ ডিজিটাল রেডিন্যাসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছে যা মহামারীর সময় ব্যবসায় এবং জীবন-যাত্রা যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে দেয়। ডিজিটাইজ বিশ্বকে সাপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাথে থাকা। এটি কভিড-১৯-এর পরবর্তী সময় প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে ব্যবসায়ে টিকে থাকার জন্য দরকার।
বিবিসি উল্লেখ করেছে যে, কভিড-১৯-এর কারণে আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন লোক তাদের চাকরি হারাবে। এর ফলে আর্থিক বোঝা সমাজের সবচেয়ে ভলনিয়ারেবল জায়গায় আঘাত করবে। ডিজিটাইজেশন এবং মহামারী মানুষের কাজের ক্ষেত্রের পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। বৃহত্তর কর্মশক্তি এবং সবচেয়ে দুর্বলতার ওপর প্রভাব কীভাবে কমানো যায় তা সব ইন্ডাস্ট্রি ও দেশজুড়ে এক ইস্যু। এজন্য শুধু মনোযোগই নয়, বরং একটি সময়োচিত এবং মানবকেন্দ্রিক সমাধানের দাবি রাখে।
ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট এবং অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের অফিস খোলা বা বাড়ি থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে
করোনাভাইরাসের কারণে তথ্যপ্রযুক্তি জায়েন্ট ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট এবং অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের অফিসগুলো আবার খোলা বা বাড়ি থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে।
টেক জায়েন্ট অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট এবং অ্যামাজন বিভিন্ন স্তরে সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা করেছে। এ বছর কর্মচারীরা কীভাবে তাদের অফিসে ফিরে যেতে পারবে তার রূপরেখা প্রকাশ করেছে।
গুগল, ফেসবুক এবং মাইক্রোসফট সম্ভাব্য কিছু তারিখ নির্ধারণ করেছে যে এ গ্রীষ্মে তাদের অফিস পুনরায় চালু হতে পারে তবে এখনো বেশিরভাগ কর্মচারীকে শরৎকালে বাসা থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে।
টুইটার সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে কর্মচারীদের জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা স্থায়ীভাবে দূর থেকে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা কমানোর জন্য প্রযুক্তি জায়ান্টরা থার্মাল ক্যামেরা, বাধ্যতামূলকভাবে ফেস মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো কাজে ফিরেছেন।
কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলছে ংঃধু-ধঃ-যড়সব আদেশ। প্রযুক্তিপণ্যের কিছু বৃহৎ প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠান আবার খোলার জন্য অফিসগুলোকে শক্তিশালী করা শুরু করেছে।
অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট এবং অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী বছরে কখন কাজে ফিরতে পারে এমন প্রত্যাশা কর্মীদের বলতে শুরু করেছে।
প্রযুক্তি জায়ান্টদের মধ্যে কয়েকটি অফিস আবার চালু করার পরিকল্পনা করেছে এ গ্রীষ্মে। তবে বেশিরভাগ কর্মচারীকে বাসা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে। টুইটার কর্মীদের বলতে এতদূর এগিয়ে গেছে যে, তারা চাইলে স্থায়ীভাবে বাসা থেকে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
অফিসগুলোতে ফিরে আসা কোম্পানিগুলো কর্মীদের মধ্যে সম্ভাব্য কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অ্যামাজনের মতো কেউ কেউ উচ্চ প্রযুক্তির সমাধানগুলোর দিকে ঝুঁকছে যেমন থার্মাল ক্যামেরা যা জ্বরের জন্য কর্মীদের স্ক্রিন করা হয়। বিশেষজ্ঞেরা বলেন, অফিসগুলোতে কর্মীদের ঘনত্ব কমানোর জন্য বাস্তবায়ন করতে হবে হাঁচি গার্ড, একমুখী করিডোর এবং স্তিমিত সময়।
যেভাবে প্রযুক্তি জায়ান্টরা আগামী বছরে অফিসে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে তা নিম্নরূপ :
অ্যামাজন জানিয়েছে, যেসব কর্মচারী বাসা থেকে কাজ করতে পারবেন, তাদেরকে কমপক্ষে ২ অক্টোবর পর্যন্ত অনুমতি দেয়া হবে।
অ্যামাজন হেডকোয়ার্টার
কভিড-১৯ শাটডাউনের মধ্যে অ্যামাজন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় কোম্পানির ওয়্যারহাউস শ্রমিকদের ওপর। আমেরিকানেরা প্রয়োজনীয় পরিষেবা হিসেবে কোম্পানির ডেলিভারির দিকে ঝুকার কারণে চাহিদা বাড়ছে। গত মাসে অ্যামাজন ১,৭৫,০০০ জন নতুন ওয়্যারহাউজ শ্রমিক ভাড়া করে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৭,৯৮,০০০ জনের বেশি ওয়্যারহাউস শ্রমিক ছিল। অ্যামাজনের সাদা-চামড়ার কর্মচারীরা মার্চ মাস থেকে বাসা থেকে কাজ করছেন। তারা গত সপ্তাহে ঘোষণা দেন যে, তারা অক্টোবর পর্যন্ত এভাবে কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।
কোম্পানির অফিস আবার খোলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিন এখনো সেট করেনি। তবে রয়টার্সকে জানায়, ‘শারীরিক দূরত্ব, গভীরভাবে পরিষ্কারকরণ, তাপমাত্রা চেক, ফেস মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ ব্যবহার বাস্তবায়ন করবে।’
মাইক্রোসফট তার কর্মীদের জানিয়েছে যে, অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কাছে বাসা থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অপশন রয়েছে।
সরকারের বাধ্যতামূলক আদেশ ংঃধু-ধঃ-যড়সব মেনে মাইক্রোসফটের অফিসগুলো মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। গত সপ্তাহে এ কোম্পানির একজন মুখপাত্র বিজনেস ইনসাইডারকে জানিয়েছের যে, ‘এ আদেশগুলো প্রত্যাহার করা হলেও তাদের কাছে বাসা থেকে কাজ করার অপশন রয়েছে।’
সরকারের বাধ্যতামূলক আদেশ ংঃধু-ধঃ-যড়সব-এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ মে। এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের সাথে সাথে কর্মচারীদের অফিসে ফিরে যেতে দেয়া হবে কি না তা মাইক্রোসফট স্পষ্ট করে দেয়নি।
রেডমন্ড ওয়াশিংটনে মাইক্রোসফটের হেডকোয়ার্টার
ফেসবুক বলেছে যে, তারা এই জুলাইয়ে অফিস খুলবে, কিন্তু কর্মচারীদের জানিয়েছে যে, তারা ২০২০ সালের বাকি সময় পর্যন্ত বাসা থেকে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। ফেসবুক জুলাইয়ে আবার অফিস খুলতে শুরু করবে, তবে বেশিরভাগ কর্মচারী এখনো বছরের বাকি অংশের জন্য দূর থেকে কাজ করার জন্য অনুমতি পাবে।
চিত্র : অন্যদের সাথে মার্ক জুকারবার্গ
গুগল কর্মচারীদের বলেছিল যে, বছরের বাকি সময়ের জন্য বাসা থেকে কাজ করার জন্য পরিকল্পনা করা উচিত তাদের, তবে নির্বাচিত কিছু কর্মচারীকে অফিসে ফিরে আসতে হবে জুনের মধ্যে।
চিত্র : গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই
গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই এ সপ্তাহে এক মিটিংয়ে শ্রমিকদের বলেছিলেন, বেশিরভাগ কর্মচারী ২০২০ সালের বাকি অংশের জন্য দূর থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়া আশা করতে পারেন। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী জুনের প্রথম দিকে অফিসে ফিরে যেতে সক্ষম হবেন।
অ্যাপল কখন আবার অফিস চালু করবে তা এখনো স্পষ্ট করতে পারেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটি দূর থেকে কাজ করার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বাস্তবায়িত করেছে কিছু নতুন ম্যানেজমেন্ট পলিসি।
চিত্র : নিউইয়র্কে অ্যাপল স্টোর
অ্যাপল মার্চ মাসে চীনের বাইরে এর সব অফিস এবং স্টোর অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। এ মাসে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার অ্যাপল স্টোরগুলো আবার খোলা শুরু করেছে।
টুইটার কর্মীদের বলা হয়েছিল তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য দূর থেকে কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। টুইটারের প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি কর্মীদের জানিয়েছে যে, কোভিড-১৯ শাটডাউন প্রত্যাহার করে নেয়ার পরও, অনির্দিষ্টকালের জন্য তারা বাসা থেকে কাজ করতে পারবে। ডরসি আরো জানায়, টুইটারের অফিসগুলো সেপ্টেম্বরের খোলা হবে না। টুইটার কর্মচারীদেরকে প্রথমে মার্চ মাসে বাসা থেকে কাজ শুরু করতে বলেছিল। তবে যারা সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণের কাজের সাথে জড়িত, তাদের জন্য এ সুবিধা দেয়া হবে না।