লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
হার্ডওয়ার, মাউস
এএমডির বিস্ময়কর উপস্থাপন থ্রেড রিপার
এএমডির বিস্ময়কর উপস্থাপন থ্রেড রিপার প্রসেসর
প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম
কোর, কোর আর কোর! কয়টি কোর আপনার চাই। বর্তমানে সিপিইউতে কোরের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। এ ব্যাপারে ইন্টেল বা এএমডি কেউ থেমে নেই। ডেস্কটপ সিপিইউতে ২-৮টি কোর থাকা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে হালে এএমডি দানবাকৃতির একটি সিপিইউ বাজারে ছেড়েছে, যাতে রয়েছে ১৬টি কোর এবং এটি ৩২ থ্রেড (এসএমটি হাইপার থ্রেডিং) নিয়ে কাজ করতে পারে। নাম দেয়া হয়েছে রাইজেন ‘থ্রেড রিপার’ (Tread Ripper)। তবে থ্রেড রিপারের আরো দুটি সংস্করণ রয়েছে (১৯২০এক্স ও ১৯০০এক্স), যাতে রয়েছে যথাক্রমে ১২ কোর/২৪ থ্রেড এবং ৮ কোর/১৬ থ্রেড। প্রথমোক্ত থ্রেড রিপারের মডেল নাম হচ্ছে ১৯৫০এক্স, যা অভিক্ত মহলে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। উপরোল্লিখিত তিনটি সিপিইউ সর্বোচ্চ ৪.০ গিগাহার্টজ এবং সেক্ষেত্রে এএমডির বুস্ট প্রযুক্তি এক্সটেনডেড ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ (XFR) প্রয়োগ করার সক্ষমতা বিদ্যমান থাকবে। এতে ৪০ মেগাবাইটের ক্যাশ মেমরি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে প্রত্যেক কোর যথাযথভাবে চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়।
এখন প্রশ্ন হলো এত কোরের প্রয়োজন কী? কারই বা প্রয়োজন এ ধরনের সিপিইউ। হ্যাঁ, দরকার আছে তাদের, যাদের কনটেন্ট ক্রিয়েশন প্রয়োজন। ভিডিও এনকোডিং, ভৌতধর্মী রেন্ডারিং, রেট্রেসিং এবং সফটওয়্যার কম্পাইলেশন যাদের প্রয়োজন, তাদের জন্য এ সিপিইউ খুবই সহায়ক হবে। এমন কাজ যা বহু কোরে ছড়িয়ে দেয়া যায় এবং পারফরম্যান্স বেশি করে পাওয়া যায়, বিশেষ করে যারা ‘সময় হলো অর্থ’ (Time is Money) নীতিতে বিশ্বাস করে, তাদের জন্য থ্রেড রিপার হচ্ছে আশীর্বাদ।
আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে গেমিং। থ্রেড রিপার গেমারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে বিশেষ করে সেসব গেম, যেগুলো বহু কোরে ছড়িয়ে দেয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ ‘দি ডিভিশন’ ও ‘ওভারওয়াচ’-এর কথা বলা যেতে পারে। গেমিং প্রোগ্রামারেরা এমনভাবে কোডিং করছেন, যাতে বহু কোরে তাদের গেমগুলো চালানো যায় এবং কাক্সিক্ষত পারফরম্যান্স পাওয়া যায়। রাইজেন থ্রেড রিপার আরেকটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে এসেছে, আর তা হলো ‘মেগা মেমরি’ তথা বিশাল ব্যান্ডউইডথ চ্যানেলের মেমরির সক্ষমতা। চার চ্যানেলের ডিডিআর৪ এবং ইসিসি (ECC-Error Checking Correction) র্যামের সমর্থনের পাশাপাশি এটি ২ টেরাবাইট মেমরি নিয়ে কাজ করতে সক্ষম ও সিপিইউ এ ধরনের উওগগ র্যাম বহু দূরের ব্যাপার বলে অনেকেই একে ফিউচার প্রুফ বলছেন।
থ্রেড রিপার শুধু সিপিইউ-ই নয় বরং এক নতুন প্ল্যাটফর্মের জন্ম দিয়েছে, কারণ এটি সাথে এনেছে এক্স৩৯৯ চিপসেট, যাতে রয়েছে ৬-৪ পিসিআই-ই লেন, যা দুটি এক্স১৬ গ্রাফিক্স কার্ড, দুটি বাড়তি এক্স৮ গ্রাফিক্স কার্ড এবং তিনটি এক্স৪ এনভিএমই (ঘঠগব) এসএসডি ড্রাইভকে সমর্থন করবে। ফলে মাদারবোর্ড নির্মাতারা প্রচুর পোর্ট যোগ করতে পারবে। যেমন ইউএসবি ৩.১ জেন-২ পোর্ট, ১৪ ইউএসবি ৩.১ জেন-১ পোর্ট, ১৬ সাটা পোর্ট এবং ১০ গিগা ইথারনেট পিসিআই-ই একক মাদারবোর্ডে সংযোজন করতে পারবে।
প্রথমেই রাইজেন থ্রেড রিপারকে দানবাকৃতির বলা হয়েছে। এর কারণ শুধু প্রযুক্তি বা পারফরম্যান্সের উৎকর্ষতার জন্য নয় বরং এটি আকারে ও সাধারণ সিপিইউর তুলনায় দ্বিগুণ ৭৩ মিমি বাই ৫৬ মিমি। এদিকে সিপিইউ মাদারবোর্ডে বসানোর পদ্ধতি ও পরিবর্তন করা হয়েছে। পূর্বে পিজিএতে (Pin Grid Array) পিন সিপিইউ লাগানো থাকত। বর্তমানে তা পরিবর্তন করে এলজিএতে (খধহফ এৎরফ অৎৎধু) নেয়া হয়েছে। এতে পিন মাদারবোর্ড সকেটে থাকবে। এতে রয়েছে ৪০৯৪ পিন, যা একটি নতুন সকেটে যার নাম দেয়া হয়েছে টিআর৪ (ঞজ৪)-এ বসবে। ঠান্ডা বা কুলিংয়ের জন্য এএমডি একটি বিশেষ অ্যাডাপ্টার সাথে দিচ্ছে, যাতে করে প্রচলিত হিটসিঙ্কের সাথে এটি জুড়ে দেখা যায়। যেহেতু থ্রেড রিপার রাইজেন সিরিজের অন্তর্ভুক্ত, ফলে এটি ‘জেন’ স্থাপত্য ধারণ করছে এবং এ কারণে এটি ‘অগউ ঝবৎরংব ঝগও ঞবপযহড়ষড়মু’ নামক একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলে তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় রাখতে সমর্থ হচ্ছে। এ প্রযুক্তিতে সিপিইউর কোন অংশ বিদ্যুৎ চাচ্ছে এবং কোন অংশ চাচ্ছে না এটি মনিটরিং করা হয় এবং তদানুযায়ী সরবরাহ করা হয়। ফলে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়। বলাবাহুল্য, ১৪ ন্যানোমিটার ফিনফেট ট্রানজিস্টর দিয়ে এ সিপিইউ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতক্ষণ এএমডির নতুন ধারার রাইজেন সিপিইউর থ্রেড রিপার সংস্করণ নিয়ে কথা বলছিলাম। এর মধ্যেই থ্রেড রিপারের দ্বিতীয় প্রজন্ম এ বছরের আগস্ট মাসে বাজারে অবমুক্ত করা হয়েছে। ইন্টেলকে ধরাশায়ী করার লক্ষ্য নিয়ে প্রচন্ড শক্তির এ সিপিইউ বাজারে এসেছে।
থ্রেড রিপার ২০০০ সিরিজ
থ্রেড রিপার সিপিইউর দ্বিতীয় প্রজন্মকে ২০০০ সিরিজ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যাতে রয়েছে বিশালাকার ৩২ কোর, ৬৪ থ্রেড। এ ছাড়া এর নিম্নতর কয়েকটি ভার্সন ১২, ১৬ ও ২৪ কোর নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে অথবা শিগগিরই হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি ইতালির মারানেলোতে অনুষ্ঠিত প্রযুক্তিমেলায় তরল নাইট্রোজেন কুলিং ব্যবহার করে পূর্বেকার ইন্টেল আহরিত সব রেকর্ডকে চূর্ণ করে দিয়েছে। থ্রেড রিপার-২ যেখানে ইন্টেল কমপিউটেক্সে ২৮ কোর প্রসেসর দিয়ে রেকর্ড অর্জন করেছিল। গত বছর যখন থ্রেড রিপার বাজারে আসে, তখন ডেস্কটপ মার্কেট বেশ চাঙ্গা হয়েছিল। থ্রেড রিপারের বদৌলতে ইন্টেল কোরআই৭ ও ৯ এর দাম কমতে বাধ্য হয়েছিল। এত কিছুর পরও এএমডির থ্রেড রিপারের (১৯৫০এক্স) দামের কাছাকাছি তারা আসতে পারেনি।
একই মূল্যমানের ১০ কোর/২০ থ্রেড কোরআই৯ ৭৯০০এক্সের তুলনায় থ্রেড রিপার ২৯৫০এক্স ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের থ্রেড রিপার দিয়ে এএমডি গেমারদের আকৃষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ ২৯৫০এক্সের কথা বলা যায়, যদিও ২৯৫০এক্স ইন্টেলের কোরআই৯ ৭৯০০এক্সের তুলনায় ৬ শতাংশ পিছিয়ে আছে। সিনেবেঞ্চে ২৯৫০এক্স ৩০৯২ পয়েন্ট অর্জন করেছে; অন্যদিকে আইপি-৭৯০০ সংগ্রহ করেছে ২১৮৩ পয়েন্ট।
সুখের কথা হলো, ২০০০ সিরিজের সব থ্রেড রিপার এক্স৩৯৯ মাদারবোর্ড সমর্থন করে। থ্রেড রিপারের জন্য পাওয়ার ডেলিভারি একটি বড় ব্যাপার, কারণ এখানে ৩২ কোরকে তা (বিদ্যুৎ) সরবরাহ করতে হবে। এএমডির প্রথম প্রজন্মের থ্রেড রিপারে রয়েছে দুটি সচল ডাই ও দুটি ডামি ডাই। নতুন মডেলে চারটি সচল ডাই সমন্বিত থাকবে কোম্পানির নিজস্ব ‘ইনফিনিটি ফেব্রিক’-এর মাধ্যমে। এএমডি কুলিং নির্মাতা কোম্পানি ‘কুলার মাস্টার’-এর সাথে জোট বেঁধে কাজ করছে। এর ফলে ফুল কভারেজ বাতাস ও পানি সঞ্চালিত কুলার একই সাথে বাজারে ছাড়তে পেরেছে।
পূর্বেই বলা হয়েছে, প্রথম প্রজন্মের থ্রেড রিপারের প্যাকেজিংয়ে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এএমডি। এবার আরো বড় প্যাকেজিং নিয়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের থ্রেড রিপারকে বাজারে আনা হয়েছে। সিনেবেঞ্চের আধিপত্যের জন্য ইন্টেল তাইওয়ানের কম্পিউটেক্সে এদের কোরআই৯ দিয়ে ৫.০ গিগাহার্টজ ওভারক্লকিং করে ৭২৪৪ স্কোর অর্জন করেছিল।
এবার এএমডি ইতালির মারানেলোতে থ্রেড রিপার ২৯৯০ডব্লিউএক্সকে ৫.১ গিগাহার্টজে ওভারক্লকিং করে ৭৬১৮ পয়েন্ট স্কোর অর্জন করে ফেলেছে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এ প্রসেসরগুলো কতটা দানবীয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পরিসংহার
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এএমডি সহজে হেরে যাবে না, প্রচÐ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে বাঁচার অনন্ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই এএমডি যে অগ্রগতি দেখিয়েছে, তা চোখে নজর কাড়ার মতো। এএমডির ‘জেন’ স্থাপত্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বোদ্ধামহলে। ‘জেন’ স্থাপত্যের ওপর ভিত্তি করে এএমডির ভবিষ্যৎ তৈরি হতে যাচ্ছে এতে সন্দেহ নেই। ইন্টেলের স্থাপত্যের তুলনায় এটি যে উৎকর্ষতা প্রদর্শন করতে সমর্থ হয়েছে, তাতে প্রতীয়মান হয় যে, এএমডি শিগগিরই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ইন্টেল যে একচেটিয়া ব্যবসায় করে যাচ্ছে তার অবসান হবে। তুলনামূলক চিত্রে এটা পরিষ্কার প্রতীয়মান হয়েছে, পারফরম্যান্স ও দামের নিরিখে এএমডি ইন্টেলকে পেছনে ফেলতে পেরেছে।
এদিকে ইন্টেল ১০ ন্যানো ফ্যাব নির্মাণে বেশ হোঁচট খেয়েছে। ফলে ইন্টেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে এএমডি ইতোমধ্যে ৭ ন্যানোতে তাদের গ্রাফিক্স কার্ড ভেগা উৎপাদন করে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে। গ্লোবাল ফাউন্ড্রি এ ব্যাপারে তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। অচিরেই এএমডি ১২ ন্যানো ও ৭ ন্যানোতে তাদের সামগ্রী উৎপাদন করে স্বল্পমূল্যে বাজারে ছাড়বে। পারফরম্যান্সে ইতোমধ্যে ইন্টেলকে টেক্কা দিয়ে অগ্রগামী রয়েছে তা ওপরের চিত্র থেকেই বুঝা যাচ্ছে। যাই হোক, এএমডির উত্থান মানুষকে স্বস্তি দেবে সন্দেহ নেই
সূত্র : ইন্টারনেট