লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
মোবাইলে অর্থ লেনদেনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
মোবাইলে অর্থ লেনদেনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ
প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম
হালে ওয়ালেট তথা মানিব্যাগের প্রচলন প্রায় উঠে যাচ্ছে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোয়। শুধু তাই নয়, স্কেনডিনেভিয়ার একটি দেশ ইতোমধ্যে ক্যাশ তথা নগদ অর্থের লেনদেন আইন করে বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে চালু হয়েছে পুরোমাত্রায় মোবাইল পেমেন্ট। বর্তমানে বাজারে তিনটি বড় কোম্পানি মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে, যদিও পরিধানযোগ্য পণ্যের প্রস্তুতকারী গারমিন, ফিটবিট তাদের নিজস্ব পেয়েন্ট সিস্টেম চালু করেছে। ইদানিং আবার স্মার্ট ওয়াচের মাধ্যমে পেমেন্ট চালু করেছে বলে শোনা যায়। তিনটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, স্যামসাং ও গুগল ইতোমধ্যে চালু করেছে (১) অ্যাপল পে, (২) স্যামসাং পে ও (৩) গুগল পে।
এ সেবা পেতে হলে সাযুজ্যপূর্ণ ডিভাইসের বা নতুন সংস্করণের প্রয়োজন হবে। স্যামসাংয়ের ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি এস ৯, এস ৯+, নোট ৮, এস ৮, এস ৮+, এস ৭, এস ৭ এজ, এস ৬ এজ+, নোট ৫, এস ৬, এস ৬ এজ, গিয়ার এস ২ ও ৩ ইত্যাদি।
অ্যাপলের ক্ষেত্রে আইফোন এক্স, আইফোন ৮/৮+, ৭/৭+, ৬/৬+, এসই, অ্যাপল ওয়াচ, ম্যাকবুক প্রো/টাচ আইডি, আই প্যাড ৫ম/৬ষ্ঠ প্রজন্ম, আইপ্যাড এয়ার ২, আইপ্যাড প্রো, মিনি ৩ ও ৪ ইত্যাদি এবং হালের ঢজ। গুগলের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়িড ভার্সন কিটক্যাট (৪.৪) বা তদূর্ধ্ব এবং যেসব ফোনে এনএফসি ও এইচসিই সাপোর্ট রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা যাবে।
উপরোল্লিখিত পেমেন্ট সিস্টেমে অথেনটিকেশনের জন্য ব্যবহার হয় আঙুলের ছাপ, পিন কোড, আইরিস, ফেস আইডি অথবা প্যাটার্ন/পাসওয়ার্ড।
এই মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম ইন-অ্যাপ (In-App) কেনা ছাড়াও যেখানে এনএফসি (Near Field Communication), ম্যাগনেটিক স্ট্রাইপ বা এএমভি টার্মিনাল রয়েছে, সেখানে এ পদ্ধতিগুলো অনায়াসে কাজ করবে। এগুলো ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, লয়্যালটি এবং গিফট কার্ড।
উপরোক্ত কার্ডগুলো মোবাইল ওয়ালেটে যোগ করলে যেকোনো দেশে ব্যবহার করা যাবে, যদি সেসব দেশে সংযোগহীন পেমেন্টের সিস্টেম চালু থাকে। অর্থাৎ যদি ভৌত কার্ড ব্যবহারের পদ্ধতি চালু থাকে, তাহলে এ সিস্টেমও সেখানে কাজ করবে। স্যামসাং পে অবশ্য ম্যাগনেটিক কার্ড রিডার সর্বস্ব টার্মিনালেও ব্যবহারের সুবিধা রেখেছে।
প্রযুক্তি এবং প্রাপ্যতা
অ্যাপল পে এবং গুগল পে এনএফসি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ সমাধা করে। অন্যদিকে স্যামসাং পে এনএফসি ছাড়াও ম্যাগনেটিক সিকিউর ট্রানমিশন (গঝঞ) নামের প্রযুক্তি সন্নিবেশ করেছে; ফলে কোনো টার্মিনালে ফোন ধরলে এটি সঙ্কেত নির্গমন করে, যা কার্ডে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপের মতো অনুকরণ করে। ফলে এটি প্রায় সব টার্মিনালে কাজ করতে সক্ষম; শুধু গ্যাস স্টেশনের মতো যেখানে কার্ড স্লটে ঢুকাতে হয়, সেখানে এমএসটি কাজ করতে পারে না।
অফলাইন পেমেন্ট সব সিস্টেমই সমর্থন করে; ফলে সীমিত আকারের লেনদেন অনায়াসে করা যায়, যেখানে সেল বা ওয়াই-ফাই সিগনাল/সঙ্কেত নেই।
তিনটি সিস্টেমের তুলনামূলক সুবিধা
মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমে টোকেনাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে কার্ডের তথ্যগুলোকে নিরাপদ রাখা হয়। কার্ড যোগ করার প্রাক্কালে একটি ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট নাম্বার তৈরি করা হয় এবং প্রকৃত সংখ্যা মার্চেন্টকে কখনো দেয়া হয় না। পেমেন্টের উদ্দেশ্যে যখন ফোনকে ট্রাপ করা হয়, এটি তখন টোকেনাইজড কার্ড নাম্বার এবং ক্রিপটোগ্রামসহ পাঠায়, যা পাসওয়ার্ডের অনুরূপ কাজ করে। কার্ড নেটওয়ার্ক এটি যাচাই করে এবং পেমেন্ট প্রক্রিয়াকরণ করে।
অ্যাপল পে’র ক্ষেত্রে অথেনটিকেট করার জন্য টার্চ আইডি, ফেস আইডি, পিন প্রয়োজন হয়; স্যামসাংয়ের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ, পিন বা আইরিশ স্ক্যানের প্রয়োজন হয়।
গুগল পে’র ক্ষেত্রে ফোন অবমুক্ত বা আনলক করতে যে পাসওয়ার্ড, আঙুলের ছাপ, প্যাটার্ন বা পিন কোডের প্রয়োজন হয় তাই যথেষ্ট।
যদি ফোন বা ডিভাইসটি হারিয়ে যায়, তাহলে সবগুলো সিস্টেমই দূরবর্তীভাবে সব কার্ডের তথ্যগুলো মুছে ফেলার ব্যবস্থা রেখেছে।
পেমেন্টের জন্য মোবাইল ডিভাইস ছাড়াও অন্যান্য উপায়
অ্যাপল পে’র ক্ষেত্রে অ্যাপল ওয়াচ (স্টোর), আইপ্যাড ও ম্যাক (অনলাইন ক্রয়) কতিপয় অ্যান্ড্রয়িড ওয়াচে গুগল পে’র ব্যবস্থা রয়েছে। স্যামসাং পে’র ক্ষেত্রে গিয়ার স্পোর্ট, এস২/এস৩।
পিয়ার-টু-পিয়ার পেমেন্ট
অ্যাপল ও গুগল পে শুধু বন্ধুদের পে তথা অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা রেখেছে; স্যামসাং পে’র এই সুবিধা নেই।
অ্যাপল পে ক্যাশ শুধু যুক্তরাষ্ট্রে চালু রয়েছে; অ্যাপল আইডি ব্যবহার করে আই ম্যাসেজ অ্যাপের সাহায্যে এই কাজটি করা যায়।
গুগল পে’র মাধ্যমে যেকোনো ফোন নাম্বার বা ই-মেইল ঠিকানায় এটি করা যায় (পূর্বে গুগল পে সেন্ড); উভয় সিস্টেমে ব্যালান্স রাখা বা নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রত্যাহার করার সুবিধাও রয়েছে। এটিও শুধু যুক্তরাষ্ট্রে চালু রয়েছে, তবে শিগগিরই যুক্তরাজ্যে চালু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
আপনি কোনটি বেছে নেবেন
আসলে ব্যাপারটি নির্ভর করে আপনি কোন ইকোসিস্টেম বা কোন এলাকায় অবস্থান করছেন। যদি আপনার ইকো সিস্টেম অ্যাপলের জগৎ হয়, তাহলে আপনি ‘অ্যাপল পে’তে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে আপনি যদি অ্যান্ড্রয়িড জগতের বাসিন্দা হন, তাহলে আপনার জন্য দুটো অপশন রয়েছে। স্যামসাং ইকোসিস্টেম হলে আপনি ‘স্যামসাং পে’ অথবা ‘গুগল পে’ ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে ‘ডিফল্ট’ হিসেবে যেকোনো একটিকে রাখতে হবে যদি আপনি উভয়ই ব্যবহার করতে চান ক্ষেত্রবিশেষে।
যদি টার্মিনালের আলোকে বিচার করতে চান, তাহলে এক্ষেত্রে ‘স্যামসাং পে’ জয়ী হবে এর এমএসটি (MST) প্রযুক্তির কল্যাণে। তবে সমর্থিত অ্যাপস এবং ওয়েবসাইটে মসৃণভাবে ব্যববহার করতে চান, তাহলে ‘অ্যাপল পে’কে বেছে নিতে হবে। অন্যদিকে ‘গুগল পে’র রয়েছে সবচেয়ে বেশি নমনীয়তা বা ফ্লেক্সিবিলিটি যাতে আপনি বন্ধুকে অর্থ দিতে পারেন অনায়াসে।