এএমডি’র ৭ ন্যানো মিটারে উত্তরণ
প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম
ইদানিং চিপ নির্মাতা এএমডি’র উজ্জল পদচারণা সবার দৃষ্টি আর্কষণ করেছে। মূলত: জেন নামের নতুন স্থাপত্যের মাধ্যমে তারা দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। জেন স্থাপত্যে নির্মিত ‘রাইজেন’ চিপ তথা প্রসেসর দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকারী ইন্টেলের প্রাধান্য খর্ব করতে চলেছে। রাইজেন প্রসেসর ইন্টেলের উচ্চমার্গের প্রসেসরকে হারিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে এবং ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। আরেকটি দিকে ইন্টেলের পশ্চাদপদতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে আর তাহলো ফ্যাব প্রযুক্তি। ইন্টেল যেখানে ১০ ন্যানোতে উত্তরণ ঘটাতে পারছে না, সেখানে এএমডি ৭ ন্যানোতে তাদের তৃতীয় প্রজন্মের রাইজেন ও রেডন ৭ ভেগা জিপিইউ অচিরেই উপহার দিতে যাচ্ছে যা কয়েক বছর আগে কল্পনাই করা যায়নি। গত জানুয়ারী ২০১৯ এ এএমডি’র প্রধান নির্বাহী লিসা সু বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তি মেলায় ৭ ন্যানোর প্রথম ভোক্তা সিপিইউ এবং জিপিইউ’র মোড়ক উন্মোচন করেন এতে সু তৃতীয় প্রজন্মের ‘ম্যাটিস’ রাইজেন চিপ ও ডাটা সেন্টারের জন্য ইপিক (EPYC) রোম ছাড়াও গেমিংয়ের জন্য রেড়ন ৭ মেগা গ্রাফিক্স কার্ডের ডেমো প্রদর্শন করেন।
৭ ন্যানোর এ চিপসমূহ বিশেষজ্ঞদের বেশ আকৃষ্ট করেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আবির্ভূত এ গ্রাফিক্স কার্ড গেমিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে এ কারণে যে এটি বর্তমানে প্রচলিত সর্বোচ্চ কার্ড রেডন ভেগা ৬৪-কে ছাড়িয়ে যাবে অনেকখানি। এএমডি দাবি করেছে, নতুন এ গ্রাফিক্স কার্ড এটির তুলনায় ২৫-২৪% বেশি পারফর্মেন্স দিবে। সু তৃতীয় প্রজন্মের রাইজেন ডেস্কটপের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি ইন্টেলের সর্বোচ্চ কোর আই ৯ এর সমকক্ষ হবে যদিও এটি অনেক কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে।
এএমডি’র পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস তুলে ধরে লিসা সু বলেন এএমডি হচ্ছে সে প্রতিষ্ঠান যেটি প্রথম ১ গিগাহার্টজ চিপ, প্রথম ১ টেরা ফ্লপ জিপিইউ, প্রথম ডুয়েল কোর সিপিইউ এবং প্রথম যৌথ সিপিইউ এবং জিপিইউ’র একক প্যাকেজের উদ্ভাবক।
এএমডি’র নোটবুক
সু আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান বছরে ১৬ কোটি ল্যাপটপ/নোটবুক বিক্রি হবে এবং এতে আল্ট্রাথিন জাতীয় নোটবুক সবচেয়ে বেশ জনপ্রিয় হবে। এএমডি এসব পণ্যে ডেস্কটপ মানের পারফরমেন্স নিয়ে আসতে চায় এবং সেসঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি দিয়ে করতে চায়। তিনি সম্প্রতি ঘোষিত ‘পিকাসো রিজ’ প্রসেসরের কথা উল্লেখ করে বলেন, নোটবুকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যাপারটিকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ প্রসেসর ‘জেন প্লাস’ স্থাপত্যে নির্মিত হবে যাতে ভেগা গ্রাফিক্স স্থাপত্যকে সন্নিবেশ করা হবে। এদিকে এএমডি শুধু ‘উইন্ডোজ’ নয় বরং ক্রোমবুক মার্কেটের দিকেও নজর দিয়েছে। এরপর গেমিংয়ের প্রসঙ্গে ফিরে এসে তিনি বলেন বর্তমান এএমডি মঞ্চে চল্লিশ কোটি গ্রাহক রয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৫০% গ্রাহক বাড়বে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। মাইক্রোসফটের গেমিং প্রধান ফিল স্পেন্সারকে মঞ্চে আহ্বান করেন, যিনি এক্স বক্স ওয়ানে এএমডি’র অবদানের কথা স্বীকার করেন।
গেমিং জিপিইউ রেডন৭
এ বছরের ফেব্রুয়ারীতে রেডন৭ বাজারে ছাড়া হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়ে সু বলেন, এটি হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ৭ ন্যানো মিটারের জিপিইউ যা তিনি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একটি ডেমো সংস্করণ হাতে তুলে ধরেন।
এটি এএমডি’র এমআই ৬০ নাম রেডন ইনস্টিংট কার্ডকে প্রতিস্থাপন করবে। এটি ৬০টি কমপিউট ইউনিট এবং ভেগা ২০ স্থাপত্যকে ধারণ করে বাজারে এসেছে। এটি ভেগা ৬৪-র তুলনায় ২৫% পারফরমেন্স প্রদর্শন করবে বলে দাবি করা হয়েছে। রেডন ভেগা ৭ এনভিডিয়ার প্রিমিয়াম ২০ সিরিজের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ভেগা ৬৪ এর তুলনায় কতটুকু দক্ষ তা উল্লেখ করা হলেও এনভিডিয়ার উপরোল্লিখিত কার্ডসমূহের সঙ্গে কোন তুলনামূলক আলোচনা করা হয়নি। এদিকে গেমিং ষ্ট্রীমের জন্য গুগলের সাথে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। আর গুগলও তাদের ডাটা সেন্টারের জন্য রেডন প্রো গ্রাফিক্স কার্ডকে বেছে নিয়েছে।
ঊচণঈ পারফরমেন্স (ইন্টেল জিয়নের প্রতিদ্বন্ধী)
ডাটা সেন্টারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জেন স্থাপত্যভিত্তিক ঊচণঈ প্রসেসর বর্তমানে চালু রয়েছে। জেন-২ মাইক্রো আর্কিটেকচার ভিত্তিক ৭ ন্যানো মিটারের ঊচণঈ প্রসেসর (ঊচণঈ জঙগঊ) শিগগিরই বাজারে আসছে জানিয়ে সু বলেন এটি ৬৪ ভৌত কোর এবং ১২৮টি থ্রেড সমন্বিত করে বাজারে ছাড়া হবে। এটি হবে প্রথম প্রজন্মের ন্যাপলসের (ঘধঢ়ষবং) এর দ্বিগুণ কোর ও থ্রেডের। ঊচণঈ রোম হবে প্রথম প্রসেসর, যা পিসিআইই ৪.০-কে সমর্থন করবে যা ৩.০-এর তুলনায় দ্বিগুণ ব্যান্ডউইডথের। মঞ্চে তিনি ইন্টেলের জিয়ন ডাটা সেন্টারের ২টি চিপের সাথে ঊচণঈ ৬৪ কোরের প্রসেসরের তুলনামূলক ডেমো প্রদর্শন করেন (২৮ কোর জিয়ন ৮১৮০) একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এতে ঊচণঈ প্রসেসর ১৯% পারফরমেন্স বেশি দেখাতে সমর্থ হয়।
তৃতীয় প্রজন্মের রাইজেন
ডেস্কটপের জন্য জেন-২ মাইক্রো আর্কিটেকচারভিত্তিক রাইজেন প্রসেসর এবছর বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন লিসা সু। ৭ ন্যানোর এই প্রসেসর পিসিআইই ৪.০ সমর্থন করবে। একই সাথে ৫০০ সিরিজের চিপসেটে এর বাস্তবায়ন ঘটানো হবে। ইন্টেলের সর্বোচ্চ কোর আই৯-৯৯০০-কে প্রসেসরের সাথে উৎপাদন-পূর্ব রাইজেন ৩০০০ সিরিজের হেড টু হেড ডেমো প্রদর্শন করে দেখিয়েছেন যে, এটি তার সাথে পাল্লা দেবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। রাইজেনের নক্সাকে ক্রমান্বয়ে উন্নীত করে একে আরো শক্তিশালী করে বাজারে ছাড়বে বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন। ৮ কোর ১৬ থ্রেড রাইজেনের সাথে ৮ কোর ১৬ থ্রেড কোর আই৯-৯৯০০-কে প্রসেসরকে সিনেবৈঞ্চ মাল্টিথ্রেডেড ওয়ার্কলোড দিয়ে দেখা গেছে উভয়ের পারফরমেন্স সমান আই৯-২০৪০ এবং রাইজেন ২০৫৭; ফলে বেঞ্চমার্ক ফলাফল থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ইন্টেলের একক থ্রেডেড পারফরমেন্সের সাথে এএমডি মসৃণ ভাবে তাল মেলাতে পারছে।
এ ব্যাপারটি এএমডি’র জন্য একটি বিরাট অর্জন। কারণ, ইতোপূর্বে একক থ্রেডেড পারফরমেন্সে এএমডি ইন্টেলের সাথে পেরে উঠছিল না। এরফলে বাড়তি একটি সুবিধে পেলো এএমডি। কারণ, ৭ ন্যানো চিপ ইন্টেলে কোর আই৯ এর তুলনায় বেশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রায় ৩০% কম। এ কারণে মাদারবোর্ড পাওয়ার সাপ্লাই এবং কুলারের ব্যয় কম পড়বে বিধায় রাইজেন ভিত্তিক পূর্ণ সিস্টেম (পিসি) সস্তায় তৈরি করা সম্ভব হবে।
সু তৃতীয় প্রজন্মের রাইজেন প্রসেসরের একটি উলঙ্গ চিপ দর্শকদের দেখান যাতে দুটো ডাই রয়েছে একটি কম্পিউট এবং অন্যটি আই/ও এর জন্য। এবছরের মাঝামাঝি এ প্রসেসর বাজারে পাওয়া যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবমুক্তির প্রাক্কালে এটি বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হবে।
উপসংহার
ইন্টেল কোর আই স্থাপত্য বাজারে ছাড়ার পর এএমডি তেমনভাবে এগুতে পারছিল না এবং প্রতিদ্বন্ধীতা গড়ে তুলতে পারছিল না। সম্পূর্ণ নতুনভাবে ‘জেন’ স্থাপতের মাধ্যমে ইন্টেলের আধিপত্যের বিরুদ্ধে যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে তা বিস্ময়কর। শুধু তাই নয় ইন্টেলকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃপ্ত পদক্ষেপ নিয়েছে এএমডি; তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ ৭ ন্যানো মিটারে উত্তরণ, যা ইন্টেলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কারণ, ইন্টেল এখনও ১০ ন্যানোতে আসতে পারেনি