লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সম্পাদকীয়
তথ্যপ্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য কিছু সুখবর
তথ্যপ্রযুক্তি৷ এ যুগের মহারাজা৷ তথ্যপ্রযুক্তির দাপট আজ সর্বত্র৷ এর সদর্প পদচারণায় এর কাছে যেনো সব কিছুই ম্লান হয়ে গেছে৷ তাই বিশ্বের সব দেশ আর জাতি ছুটছে আজ তথ্যপ্রযুক্তির পেছনে৷ চাইছে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে পৌঁছে দিতে সমৃদ্ধির স্বর্ণ শিখরে৷ তৃতীয় বিশ্বের গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলো আজ দারিদ্র্যকে জয় করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিকেই প্রধানতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করছে এবং জাতীয় নীতি-পদক্ষেপে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি দিচ্ছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার৷ আমরাও বিতর্কাতীতভাবে স্বীকার করি, আমাদের জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে তথ্যপ্রযুক্তিকেই আমাদের বাহন করে নিতে হবে৷ কিন্তু সে অনুযায়ী আমাদের উদ্যোগ-আয়োজনের বড়ই অভাব৷ ফলে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি৷ আর সে কারণে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে তেমন কোনো সুখবরও খুব একটা আমাদের থাকে না৷ তবে সম্প্রতি একথা স্বীকার করতে হবে, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কিছুটা হলেও গতি এসেছে৷ যদিও সে গতি এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছুতে পারেনি৷ যা-ই হোক, সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট গতিশীলতা সূত্রে আমরা প্রযুক্তিপ্রেমীরা কিছু সুখবরের কথা শুনতে পাচ্ছি, যেগুলো আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলেই মনে হয়৷
প্রথম সুখবরটি হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমরা পাবো আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট৷ এ সময়ের মধ্যে মহাকাশে ভেসে বেড়াবে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট৷ এমন আশাবাদের কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম.এ. মালেক৷ তিনি জানিয়েছেন, এজন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ পাশের দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করেছে, যাতে করে যৌথভাবে কোনো দেশের সহযোগিতায় মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো যায়৷ বলার অপেক্ষা রাখে না, তা করা গেলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে খরচ যেমনি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসবে, তেমনি কারো কাছ থেকে সাটেলাইট ভাড়া নিয়ে কাজ চালানোর ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করতে না পারার ঝুঁকিও কেটে যাবে৷ যৌথভাবে মহাকাশে একটা স্যাটেলাইট পাঠানো সম্ভব হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তখন আর ভাড়ায় স্যাটেলাইট নিতে হবে না৷
সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই৷ কমপিউটার জগৎ শুধু স্যাটেলাইট নয়, তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাসময়ে যথাতাগিদটি সরকারের কাছে গুরুত্বের সাথে পৌঁছে দেয়ার জন্য সব সময় সচেষ্ট থেকেছে৷ এ ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা কমপিউটার জগৎ-এর ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছিলাম, নতুন সহস্রাব্দ শুরুর আগেই বাংলাদেশকে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী হতে হবে এবং এর মাধ্যমে দেশে টেলিযোগাযোগ-বিপ্লব ঘটানো সম্ভব৷ কিন্তু কে শুনে কার কথা৷ এক্ষেত্রে সরকার পক্ষের অবহেলা লক্ষ করে আমরা ২০০৩ সালের অক্টোবর সংখ্যায় এ তাগিদটা আরো জোরালো করে তোলার জন্য বাংলাদেশেরনিজস্ব স্যাটেলাইট চাই শীর্ষক স্লোগানধর্মী প্রচ্ছদ প্রতিবেদমে এর যৌক্তিক দিকগুলো তুলে ধরি৷ পাশাপাশি এ তাগিদটিকে সম্পাদকীয়র উপজীব্য করে তুলি৷
দ্বিতীয় আরেকটি শুভ সংবাদ হচ্ছে, সরকার দেশের উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটানো এবং আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা-ক্ষমতা বাড়ানো এবং সবার জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ইন্টারনেট চার্জ আরো ৩০-৩৭ শতাংশে কমিয়ে আনতে যাচ্ছে৷ দেশের একমাত্র ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ প্রোভাইডার বিটিটিবি এরই মধ্যে এই শুল্ক কমিয়ে আনার প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে৷ উল্লেখ্য, বিটিটিবি গত ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারনেট ট্যারিফ ২০-৪০ শতাংশ কমিয়ে দিলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন তা পর্যাপ্ত ছিল না৷ এরা মনে করছেন, এখনো ইন্টারনেট অ্যাক্সেস আমাদের জন্য পাশের দেশগুলোর তুলনায় ব্যয়বহুল৷ তাদের দাবি যথার্থ৷ বাংলাদেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য আরো তিনটি সুখবর সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি৷ এক : ঢাকার মহাখালীতে ৪৭ একর জমির ওপর স্থাপিত হতে যাচ্ছে একটি আইটি পার্ক৷ দুই : খুলনায় ৮১ একর জমির ওপর হবে একটি আইটি ভিলেজ এবং তিন : কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কের কাজ এখন এগিয়ে চলছে৷ আমরা আশা করবো, এ কাজগুলো দ্রুত সম্পাদনের ব্যবস্থা করতে এই সরকার ও পরবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের গাফিলতি হবে না৷
আমরা বরাবর আমাদের সম্মানিত পাঠক ও এদেশের সব স্তরের মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের যাবতীয় সম্ভাবনার খবরটি পৌঁছাতে চেষ্টা করে আসছি৷ তারই অংশ হিসেবে আমরা চলতি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে অনলাইন ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে বিপুল অঙ্কের বিদেশী মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনার নানা দিক তুলে ধরেছি৷ সাধারণ প্রযুক্তিজ্ঞান ও সাগ্রহ মন নিয়ে এদেশের যেকেউ কিভাবে মাত্র একটি কমপিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেই সম্ভাবনাটুকুকে কাজে লাগাতে পারে, এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবদনে রয়েছে তারই প্রতিফলন৷