লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২১ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
বাংলা ভাষার ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ
বাংলা ভাষার ডিজিটাল চ্যালেঞ্জ
মোস্তাফা জব্বার
মন্ত্রী
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
বাংলা ভাষা নিয়ে আপনি বিব্রত বোধ করেন? কোনো বিদেশির
সামনে কথা বলতে গিয়ে ইংরেজি ঠিকমতো বলতে পারেন
না বলে আপনি ছোট হয়ে যাবেন বলে মনে হয়? কেবল বাংলা নয়,
ইংরেজি ছাড়া দুনিয়ার সকল মাতৃভাষাভাষী মানুষের মাঝেই এমন
বোধ কাজ করতেই পারে। ব্রিটিশ সামাজ্যে সূর্য অস্ত না যাবার ফলে
বিশ্বব্যাপী ইংরেজির দাস তৈরি করার ক্ষেত্রে তারা কোন কৃপণতা
করেনি। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিসমূহও প্রধানত
ইংরেজি ভাষাভাষীদের হাতে উদ্ভব ও বিকশিত হবার ফলে সেই
দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসার সুযোগও পারতপক্ষে আসে নাই। তবে
সারা দুনিয়া এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলে সেই শিল্প বিপ্লবের
প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। এই প্রযুক্তিসমূহ উদ্ভব বা বিকাশে সেই রোমান
হরফের দেশগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য এখন আর বিরাজ করে না।
বরং মাতৃভাষাপ্রেমী দেশগুলো উদ্ভাবনে ব্যাপক সফলতা দেখাচ্ছে।
বস্তুত সময়টা এখন দিন বদলের। এখন সময় হয়েছে যে আপনি
বাংলায় কথা বলবেন এবং অন্য একজন তার ভাষায় তিনি সেটি
শুনবেন বা বুঝবেন। অন্যদিকে ইংরেজি হোক বা অন্য ভাষাতেই হোক
কেউ কিছু প্রকাশ করছেন সেটি আপনি বাংলাতেই জানবেন। খোদ
ইংরেজির রাজধানী বিবিসিই আশঙ্কা করছে যে, ইংরেজি ভাষাটির
একচেটিয়া আধিপত্য আর থাকছে না। সুখবর হচ্ছে যে, প্রযুক্তির জন্য
ইংরেজি নামের কথিত বিশ্ব ভাষার এই পতন এবং মাতৃভাষাসমূহের
উত্থান ঘটছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষার জন্যও আমরা সেই
প্রযুক্তি উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখছি। এরই মাঝে বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত
সক্ষমতা তৈরির কাজ বেশ কিছুটা এগিয়েছে। আগামীতে আরও সামনে
যাবার পথও তৈরি হয়েছে। তবে বলা যতো সহজ কাজে পরিণত করা
ততো সহজ নয়।
বিবিসি প্রশ্ন তুলেছে, ইংরেজি কি জনপ্রিয় ভাষা হিসেবে টিকে
থাকবে? এমন শিরোনামেই বিবিসি বাংলা ডটকম ২৪ মে ২০১৮
একটি ছোট খবর প্রকাশ করে। বিশ্বজুড়ে যারা ইংরেজি ভাষার প্রেমিক
তাদের সামনে এই খবরটি খুব ছোট করে একটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে যে,
ইংরেজি কি তার বিশ্ব ভাষার স্থানটি আগামীতে নিজের দখলে রাখতে
পারবে না? আমরা যারা বাংলা ভাষাভাষী হয়েও ইংরেজির জন্য মাতম
করি তাদের জন্যও এটি একটি বিশাল প্রশ্ন। যারা কথায় কথায় এমন
উদাহরণ দেন যে, ইংরেজি না জানলে বিশ্বে টিকে থাকা যাবে না,
তাদের জন্যও খবরটি প্রশ্নবোধক। খবরটি এরকম : “বিশ্বজুড়ে শত
কোটি মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু অনুবাদ প্রযুক্তির উন্নতি
এবং হাইব্রিড ভাষার বা ভাষার মিশ্রণের কারণে এর মর্যাদা কি এখন
হুমকিতে?” এরপরই খবরটিতে বলা হয় যে, “যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন
দেশ সবচেয়ে বেশি ইংরেজি ভাষীদের উৎসাহ যোগাচ্ছে? কিংবা কোন
দেশে মানুষ সবচেয়ে বেশি ইংরেজি ভাষা শিখছে? উত্তর হচ্ছে চীন।”
তবে বাস্তবতা হলো, আগামীতে হাজার বছর চেষ্টা করেও চীনাদের
মাতৃভাষা বদলানো যাবে না। কিছু চীনা ব্যবসায়ী ইংরেজি শিখছেÑ
তবে সেই দেশটির সাধারণ মানুষের কাছে ইংরেজির কোনো প্রভাবই
নেই। বরং এমনও হতে পারে যে, আজ যেসব চীনা এখন নতুন করে
ইংরেজি শেখার কথা ভাবছে পাঁচ বছরে তারা নিজের মায়ের ভাষার
কোলেই ফিরে আসবে। এখন তো এমন প্রযুক্তির সময় হয়েছে যখন
চীনারা ইংরেজি বুঝবে প্রযুক্তি দিয়ে আর চীনাদের ইংরেজি বুঝতে
হবে না এবং চীনা ভাষা ইংরেজিসহ বিশ্বের অন্য ভাষাতেও মানুষ
বুঝতে পারবে। ’২১ সালের খবর হচ্ছে বিদেশি কেউ যদি চীনের
বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে পড়তে চায় তবে তাদেরকে পুরো এক বছর
চীনা ভাষা শিখতে হয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষাও চীনা
ভাষায় প্রদান করা হয়।
বিবিসির খবরটিতে এরপর বলা হয়, “ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি
প্রেসের প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে প্রায় ৩৫ কোটি
(৩৫০ মিলিয়ন) মানুষের ইংরেজিতে অন্তত কিছু না কিছু জ্ঞান রয়েছে
এবং এরকম আরও কমপক্ষে ১০ কোটি (১০০ মিলিয়ন) রয়েছে ভারতে।
সম্ভবত চীনে আরও অনেক মানুষ রয়েছে যারা সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ
হিসেবে ইংরেজিতে কথা বলে। যেখানে আমেরিকানরা তাদের ফার্স্ট
ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে এটি ব্যবহার করে সেখানেও প্রতি পাঁচজনের মধ্যে
একজন আমেরিকান নিজেদের বাড়িতে ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য ভাষায়
কথা বলে। সেই ভাষাটি তাদের মাতৃভাষা।
কিন্তু ইংরেজি ভাষাটি আর কতদিন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা
হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে?
দি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে বিশ্বজুড়ে
আনুমানিক ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। কিন্তু
৪০ কোটির কম মানুষের প্রথম ভাষা এটি।”
খবরটির মাঝে থাকা তথ্যাদি অনুসারে চীনের ইংরেজি শেখার
প্রবণতা, ভারতের ইংরেজি প্রীতি বা বাংলাদেশের ইংরেজির জন্য
জীবন দেবার এই প্রবণতার সময়েও যেমনি আমেরিকার শতকরা ২০
জন নিজ ঘরে অন্য বাসায় কথা বলে তেমনি জাপান, কোরিয়া, জার্মানি,
ফ্রান্স, স্পেন বস্তুত ইংরেজি বর্জন করে কেবল নিজের ভাষাতেই সামনে
এগিয়ে এসেছে। তবে তাদেরকে এজন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক।
দোভাষী নিয়ে তাদেরকে ঘরে-বাইরে ঘুরতে হয়েছে।
খবরটিতে প্রশ্ন তোলা হয়, দোভাষী কিংবা অনুবাদকদের কি
সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যৎ আছে? এর জবাব কে কীভাবে কেমন করে দেবেন
তা আমি জানি না। কিন্তু আগামীতে মানুষকে এই দোভাষীর ভূমিকা
পালন করতে হবে না। যন্ত্র বা প্রযুক্তি দোভাষীর কাজটা করে দেবে
স্বচ্ছন্দে। আর প্রযুক্তির প্রভাবে বদলে যাবে বিশ্বের ভাষার মানচিত্রটা।
বিবিসি বাংলার খবরে আরও বলা হয়, “ইংরেজি হলো বিশ্বের
ফেভারিট লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কাÑ অর্থাৎ যখন দুই দেশের দুই ভাষার মানুষকে
এর ওপর নির্ভর করতে হয়। যেমন কোনো চীনা নাগরিক একজন
ফরাসি নাগরিকের সাথে আলাপে দুজনই তাদের প্রথম ভাষা ব্যবহার
করতে না পেরে তখন নির্ভর করেন ইংরেজি ভাষার ওপরই। বছর
পাঁচেক আগেও সম্ভবত সেটাই ঘটতো। কিন্তু এখন আর ততোটা নয়।
সেজন্য ধন্যবাদ দিতে হবে কমপিউটারে অনুবাদ এবং কণ্ঠ
শনাক্তকরণ প্রযুক্তিকে। এর ফলে এখন দুই দেশের দুজন নাগরিক
নিজ নিজ দেশের ভাষাতেই কথা বলতে পারছেন এবং একে অন্যের
সংলাপ যন্ত্রের অনুবাদের মাধ্যমে শুনতে পারছেন। সুতরাং বিশ্বের শীর্ষ
ভাষা হিসেবে ইংরেজির দিন সম্ভবত ফুরিয়ে এসেছে।
এখন অনলাইনে ইংরেজিতে লেখা যেকোনো আর্টিকেল কমপিউটার
কিংবা ট্যাবলেটে কয়েকটি মাত্র ক্লিকেই জার্মান কিংবা জাপানিজে রূপান্তর
করে পড়া সম্ভব। তাই যেখানে কমপিউটারই সব গুরুদায়িত্ব নিজের
ওপর নিয়ে নিচ্ছে সেখানে আর ইংরেজি শিখতে তোড়জোড় কেন?”
না আমি বলছি না কালকেই ইংরেজি শেখার বিদ্যমান তোড়জোড়
বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের দেশে তো এই প্রবণতা আরও বহুদিন
অব্যাহত থাকবে। বাড়তেও থাকবে। তবে প্রযুক্তি যে বিশ্বের
ভাষা ব্যবহারের আদলটাই বদলে দেবে সেটি আমরা বেশ আগেই
উপলব্ধি করেছি। তবে বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠাকারী জাতি হিসেবে আমরা এই বিষয়ে তেমন সচেতন ছিলাম
না। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলা ভাষা কমúিউটারে লেখার প্রযুক্তি উদ্ভাবন
ছাড়া এই ভাষার প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমরা তেমন কোনো বড় কাজ
অতীতে করিনি। এটি সত্য যে বাংলা ভাষা প্রযুক্তিতে ব্যবহার করার
ক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা আমাদের নেই। তবে প্রযুক্তিতে বাংলা
ভাষা ব্যবহার করতে পারাটাই বড় কথা নয়। আরও স্পষ্ট করে বলতে
গেলে শুধু ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা লিখতে পারাটাই এই ভাষার একমাত্র
সফলতা হতে পারে না। বরং বড় বিষয় হচ্ছে, আমরা বাংলাকে বিশ্বের
উন্নত দেশগুলোর ভাষার সমকক্ষ করে তুলতে পারিনি। প্রযুক্তিতে
বাংলা ভাষা ব্যবহারে কী নেই আমাদের সেটির তালিকায় কেবল
লিখতে পারার ব্যাপারটা ছাড়া বাকি সবই রয়ে গেছে। আমরা যদি
বিবিসির খবরটিকে মাথায় রাখি তবে এটি স্পষ্ট করেই অনুভব করতে
হবে যে শুধু ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা লেখা নয় আমাদেরকে বাংলা ভাষার
প্রযুক্তিগত অন্যান্য সক্ষমতাও অর্জন করতে হবে। আমাদের মনে রাখা
দরকার যে বানান বা ব্যাকরণ পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বাংলার ব্যবহারের কোনোটাই আমরা করতে পারিনি।
তবে ধারণা করি সেই দিনটির শেষ প্রান্তে আমরা। একটি নতুন
সোনালী সময় সামনে রয়েছে বাংলার। প্রায় তেত্রিশ বছরের বেশি
সময় তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলার জগতে বসবাস করে আজ যেন সুড়ঙ্গের
শেষ প্রান্তে আমি একটা বড় আলো দেখতে পাচ্ছি।
আমরা আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে জননেত্রী
শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলা ভাষার একটি সোনালী সময় আনতে
সক্ষম হতে যাচ্ছি। বাংলা সহিত্যের ইতিহাস বলে এই ভাষা সচরাচর
রাজ-রাজড়াদের পৃষ্ঠপোষকতার বাইরে ছিলো। কোনো কোনো রাজা
বাদশা বাংলা সাহিত্যকে কিছুটা পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও এর বর্ণমালা
ও প্রযুক্তিগত বিষয় কচুরিপানার মতো ভাসতে ভাসতে সামনে
এগিয়েছে। বিদ্যাসাগরের লিপি সংস্কার, ষাটের দশকে রেমিংটন বাংলা
টাইপরাইটার, পাকিস্তান আমলে বাংলা টাইপরাইটার প্রকল্প, বাংলাদেশ
আমলে টাইপরাইটারের বৈদ্যুতিকীকরণ প্রকল্প, নির্বাচন কমিশন ও
এটুআই-এর ফন্ট প্রকল্প, আরডিআরসির ব্র্যাক প্রকল্প, এটুআইএর ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের
পিপীলিকা ও অন্যান্য প্রকল্প এবং আইসিটি ডিভিশনের বঙ্গ ওসিআর
প্রকল্প বাংলার প্রযুক্তিগত সক্ষমতার জন্য পরিকল্পিত হলেও আমরা
এইসব কাজ দিয়ে তেমন কোনো সফলতা অর্জন করতে পারিনি।
বস্তুত ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা লেখার উপায় উদ্ভাবন করা ছাড়া আমাদের
যা যা করণীয় হতে পারতো তার কোনোটাই আমরা সফলভাবে করতে
সক্ষম হইনি। উল্লেখিত উদ্যোগগুলো কেন সফল হয়নি তা নিয়ে
আলোচনা না করেও আমি এটি বলতে পারি যে, বাংলা ভাষা সেই
পৃষ্ঠপোষকতা এর আগে কখনও পায়নি।
আমরা জানি প্রাকৃতজনের এই ভাষার ভিত্তিতে দুনিয়ার প্রথম রাষ্ট্রটি
জন্ম নেয় ’৭১ সালে। বাস্তবতা হচ্ছে, আজ অবধি বাংলার প্রযুক্তিগত
সক্ষমতা মানে হচ্ছে ’৭২ সালে অপটিমা মুনীর টাইপরাইটার পাওয়া,
’৮৭ সালে কমপিউটারে বাংলা পত্রিকা প্রকাশ এবং ’৮৮ সাল থেকে
বিজয় দিয়ে বাংলা লেখা ও বাংলা লেখার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতে
আরও কিছু সফটওয়্যারের উন্নয়ন। আমরা ভাগ্যবান যে ’২১ সালে
আমরা এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের সেরা সময়ে দাঁড়িয়ে আছি।
কৃতজ্ঞ জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
অবাক তাকিয়ে রয়
২০১৭ সালের স্বাধীনতার মাস মার্চের শেষ দিনে দুটি খবর
বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষীকে বিস্মিত করে থাকবে। প্রথমটি
৬ কমপিউটার জগৎ ফেব্রæয়ারি ২০২১
৭ কমপিউটার জগৎ জোনুয়ারি ২০২১ ফব্রæয়ারি ২০২১
হচ্ছে মাইক্রোসফট বাংলা-ইংরেজি-বাংলা অনুবাদক প্রকাশ করেছে।
এই অ্যাপটি দিয়ে উইন্ডোজ ফোন, আইফোন, অ্যান্ড্রয়েড ফোন
ইত্যাদিতে বাংলাকে ইংরেজিতে ও ইংরেজিকে বাংলায় অনুবাদ করা
যায়। কাজটি একেবারেই নতুন নয়। গুগলও এর আগে এমন কাজ
করার সুবিধা প্রকাশ করেছে। গুগলের ও মাইক্রোসফটের অনুবাদক
বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। গুগলের খবরটি হচ্ছে প্রযুক্তিতে বাংলাকে
আরও সমৃদ্ধ করার। তারা ২০১২ সালে নলেজ গ্রাফ নামের একটি
প্রযুক্তি প্রকাশ করে যার সহায়তায় গুগলের অনুসন্ধানকে আরও সহজ
করা হয়। এবার গুগল বাংলাকেও নলেজ গ্রাফের আওতায় এনেছে।
২৯ মার্চ ২০১৭ তারিখে প্রকাশিত গুগলের খবরটি এরকম : বাংলায়
অনুসন্ধান করা আরও সহজ শিরোনামে প্রকাশিত গুগলের বøগে বলা হয়
যে দুনিয়ার ৭ হাজার জীবিত ভাষার মাঝে ষষ্ঠ ভাষা বাংলা ২০ কোটি
লোক ব্যবহার করে থাকে। বোঝা যায় যে গুগলের বাংলা ভাষাভাষীর
তথ্যটা ভুল। বাংলাদেশের ১৬ কোটি, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমপরিমাণ,
ত্রিপুরা ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীকে গণনায় নিয়ে আমরা ৩৫ কোটি লোক যে
বাংলায় কথা বলি সেটি প্রমাণ করার কিছু নেই। গুগল এটিকে বলছে
যে, এর ফলে স্ট্রিং নয় বিষয়বস্তু খুঁজে আনা হচ্ছে।
ডযবহ ংড়সবড়হব পড়হফঁপঃং ধ ংবধৎপয, ঃযবু ধিহঃ ধহ ধহংবিৎ,
হড়ঃ ঃৎরষষরড়হং ড়ভ বিনঢ়ধমবং ঃড় ংপৎড়ষষ ঃযৎড়ঁময. ঞড় যবষঢ় ইবহমধষর
ংঢ়বধশবৎং ফরংপড়াবৎ হবি রহভড়ৎসধঃরড়হ য়ঁরপশষু, বি’ৎব হড়ি সধশরহম
ঃযব এড়ড়মষব কহড়ষিবফমব এৎধঢ়য ধাধরষধনষব রহ ইবহমধষর ষধহমঁধমব.
ঝড় হবীঃ ঃরসব যিবহ ুড়ঁ’ৎব ংবধৎপযরহম ভড়ৎ পৎরপশবঃ ষবমবহফ ঝড়ঁৎধা
এধহমঁষু রহ ইবহমধষর, বি’ষষ ংযড়ি ুড়ঁ ঃযরহমং, হড়ঃ ংঃৎরহমং – ধহফ
ুড়ঁ’ষষ রহংঃধহঃষু মবঃ রহভড়ৎসধঃরড়হ ঃযধঃ’ং ৎবষবাধহঃ ঃড় ুড়ঁৎ য়ঁবৎু
ংঁপয ধং ঝড়ঁৎধা’ং ফধঃব ড়ভ নরৎঃয, যরং হঁসনবৎ ধং ধহ ধপঃরাব পৎরপশবঃ
ঢ়ষধুবৎ, ড়ৎ ষরহশং ঃড় যরং ঢ়ৎড়ভর ষব ড়হ ংড়পরধষ সবফরধ.
ঞযব কহড়ষিবফমব এৎধঢ়য বহধনষবং ুড়ঁ ঃড় ংবধৎপয ভড়ৎ ঃযরহমং,
ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ৎ ঢ়ষধপবং ঃযধঃ এড়ড়মষব শহড়ংি ধনড়ঁঃ—ষধহফসধৎশং,
পবষবনৎরঃরবং, পরঃরবং, ংঢ়ড়ৎঃং ঃবধসং, নঁরষফরহমং, মবড়মৎধঢ়যরপধষ
ভবধঃঁৎবং, সড়ারবং, পবষবংঃরধষ ড়নলবপঃং, ড়িৎশং ড়ভ ধৎঃ ধহফ সড়ৎব. ওঃ’ং
হড়ঃ লঁংঃ ৎড়ড়ঃবফ রহ ঢ়ঁনষরপ ংড়ঁৎপবং ংঁপয ধং ঋৎববনধংব, ডরশরঢ়বফরধ
ধহফ ঃযব ঈওঅ ডড়ৎষফ ঋধপঃনড়ড়শ, রঃ’ং ধষংড় ধঁমসবহঃবফ ধঃ ধ সঁপয
ষধৎমবৎ ংপধষব—নবপধঁংব বি’ৎব ভড়পঁংবফ ড়হ পড়সঢ়ৎবযবহংরাব নৎবধফঃয
ধহফ ফবঢ়ঃয. ঞযব কহড়ষিবফমব এৎধঢ়য রং পঁৎৎবহঃষু ধাধরষধনষব রহ ৪১
ষধহমঁধমবং, সধঢ়ঢ়রহম ড়ঁঃ যড়ি সড়ৎব ঃযধহ ১ নরষষরড়হ ঃযরহমং রহ ঃযব
ৎবধষ ড়িৎষফ ধৎব পড়হহবপঃবফ, ধহফ ড়াবৎ ৭০ নরষষরড়হ ভধপঃং ধনড়ঁঃ ঃযবস.
অহফ রঃ’ং ঃঁহবফ নধংবফ ড়হ যিধঃ ঢ়বড়ঢ়ষব ংবধৎপয ভড়ৎ, ধহফ যিধঃ বি
ভর হফ ড়ঁঃ ড়হ ঃযব বিন, রসঢ়ৎড়ারহম ৎবংঁষঃং ড়াবৎ ঃরসব.
(যঃঃঢ়ং://রহফরধ.মড়ড়মষবনষড়ম.পড়স/২০১৭/০৩/সধশরহম-রঃ-বধংরবৎঃড়-ংবধৎপয-রহ-নবহমধষর.যঃসষ)
একই সাথে গুগল বাংলা টাইপিং ভুল বা বানান ভুলকেও সহায়তা করার প্রযুক্তি
উদ্ভাবন করেছে বলে জানিয়েছে। বøগে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় যে কমপিউটার
টাইপ বাংলা কিড ভুল করে লেখার পরও এই সংক্রান্ত সকল নির্দিষ্ট
বিষয়াদির পাশাপাশি কীভাবে বিজয় কীবোর্ডে বাংলা লিখবো সেটিও খুঁজে বের করা
হয়েছে। গুগলের বøগে বলা হয়েছেÑ “ঝবধৎপয রং ধ ষড়ঃ ধনড়ঁঃ ফরংপড়াবৎু–
ষবধৎহরহম ংড়সবঃযরহম হবি ধনড়ঁঃ ঃযব ড়িৎষফ, যধারহম ভঁহ, ধহফ
মবঃঃরহম রহংঢ়রৎবফ. ইঁঃ বংঢ়বপরধষষু যিবহ ুড়ঁ’ৎব ড়হ ঃযব মড় ড়ৎ রহ ধ
ৎঁংয, রঃ’ং ধষষ ঃড়ড় বধংু ঃড় সরংংঢ়বষষ ঃযধঃ ঃযরহম ুড়ঁ বিৎব ংবধৎপযরহম
ভড়ৎ. ঞড় যবষঢ় ুড়ঁ মবঃ ধহংবিৎং বাবহ যিবহ ুড়ঁ সরংংঢ়বষষবফ ধ
ড়িৎফ, বি হড়ি ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ংঢ়বষষ পড়ৎৎবপঃরড়হ ভড়ৎ ইবহমধষর য়ঁবৎরবং. ঝড়
যিবহবাবৎ ধ ঃুঢ়ড় সধফব রঃং ধিু রহঃড় ুড়ঁৎ ংবধৎপয য়ঁবৎু, বি’ষষ
নব ঃযবৎব ঃড় যবষঢ়, ংঁমমবংঃরহম ংরসরষধৎ য়ঁবৎরবং.
অনেকেই জানেন যে এর আগে গুগল কথা থেকে লেখায় ও লেখা
থেকে কথায় বাংলা প্রকাশ করার প্রযুক্তির পাশাপাশি বাংলা ওসিআর
প্রকাশ করেছে। সেই ওসিআর বেশ ভালোই কাজ করে বলে দাবি করা
হয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে, গুগল এরই মাঝে বাংলা করপাসের
একটি বিশাল ভাÐারও তৈরি করেছে।
সেই সময়েরই আরও একটি খবরের কথা উল্লেখ করতে হয়। সেটি
হচ্ছে দুনিয়ার বিখ্যাত কমপিউটারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক
সুইজ কোম্পানি লজিটেক এবার তাদের কীবোর্ডে বিজয় বাংলা
লেআউট যুক্ত করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের আর কোনো ভাষায়
তারা লজিটেক কীবোর্ড প্রস্তুত করে না। স্মরণযোগ্য যে, ১৯৯৮ সালে
বিজয় বাংলা মুদ্রিত কীবোর্ড বাজারে আসে এবং এখন দেশের সকল
কীবোর্ডের প্রায় সিংহভাগই বিজয় বাংলা লেআউটসহ আমদানি হয়ে
থাকে। বাংলার জন্য এটিও একটি বড় খবর যে বাংলাদেশ সরকার
বাংলার তিনটি মানকে প্রমিত মান হিসেবে ঘোষণা করেছে। গত ২৬
ফেব্রæয়ারি ’১৮ বাংলা হরফের দুটি এনকোডিং বিডিএস ১৫২০:২০১৮
এবং বিডিএস ১৯৩৫:২০১৮ (বিজয়ের সুতন্বী ফন্ট) এবং বিডিএস
১৭৩৮:২০১৮ (বিজয় কীবোর্ড) প্রমিত করেছে। এটি বাংলার জন্য
একটি মাইলফলক কাজ।
একই সাথে আমরা স্মরণ করতে পারি যে, বাংলাদেশ সরকার
বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ১৫৯.০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প
গ্রহণ করেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে অনুমোদিত
এই প্রকল্পটির বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানলাম যে, বাংলা
এখন আর দুঃখিনী বাংলা নেই। বাংলাদেশের অনেক মানুষ বাংলা
ভাষার প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করছেন। তবে আমরা
সেইসব খবর হয়তো রাখি না। আমরা হয়তো এখনও ভাবছি যে,
আমরা মুদ্রণ যন্ত্র পেয়েছিলাম ৩২৪ বছর পরে। আমরা এটাও হয়তো
ভাবছি যে টাইপরাইটার পেয়েছি ১৮৭০ সালের বদলে ১৯৭২ সালে
এবং কমপিউটারের কীবোর্ড পেলাম মাত্র ১৯৮৮ সালে। তাই নতুন
ভাষাপ্রযুক্তিও আমরা সময়মতো পাব না। এই ধারণা থেকেই একদল
লোক এখনও বাঙালিকে ইংরেজ বানানোর চেষ্টা করছে।
সম্ভবত এজন্য বাংলা ভাষার যে মর্যাদা সারা দুনিয়াতে আছে,
প্রযুক্তি দুনিয়া যে বাংলাকে প্রবলভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে সেটিও সম্ভবত
আমরা বাংলা ভাষাভাষীদের একাংশ বুঝতে পারছি না। নিজের ভাষার
সক্ষমতার বিষয়গুলোই যেন এর ভাষাভাষীদের মাঝে নেই। ’১৭
সালে আমি ফেসবুকে বাংলায় নাম লেখার আবেদন করেছিলাম। শত
শত বাঙালি এই আবেদনে সাড়া দিলেও কেউ কেউ আন্তর্জাতিকতার
দোহাই দিয়ে ইংরেজির প্রাধান্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন। কেউ কেউ নানা
অজুহাত তুলেছেন। কেউ কেউ প্রযুক্তিগত সমস্যার কথাও বলেছেন।
কিন্তু যারাই ভাবছেন যে দুনিয়া একেবারেই ইংরেজিমুখী তাদের
হিসাবটা বোধহয় প্রযুক্তিই বদলে দিচ্ছে। আমি আগেই বলেছি যে,
এমন দিন সামনে যেদিন মানুষ ইংরেজিতে যোগাযোগ করার জন্য
ইংরেজি শিখবে না। এজন্য মানুষ ইংরেজিতে নিজেকে প্রকাশ না
মাতৃভাষায় সে নিজেকে প্রকাশ করবে এবং ইংরেজির জন্য বা অন্য
ভাষার জন্য তারা নিজের মাতৃভাষাই ব্যবহার করবেন। এমনও দিন
আসবে যে ইংরেজি বলার জন্যও মানুষের দরকার হবে না। কেমন হবে
যদি আমরা বাংলায় লিখি আর সেটি দুনিয়ার যেকোনো ভাষায় লিখিত
বা কথ্য যেকোনো রূপে প্রকাশিত হয়? আমার নিজের মতে ইংরেজি বা
বিদেশি ভাষার দাসত্বের যুগের অবসান সম্ভবত খুব কাছেই। যন্ত্রপাতি
যখন কথা বলা শুরু করবে তখন ভাষা কার কোনটা সেটি ভাবারও
প্রয়োজন হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
মোদের গরব মোদের আশা
বাংলা ভাষা ও বর্ণমালার সহ¯্রাধিক বছরের ইতিহাসে প্রথম
ও একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কায়িক যন্ত্রে একে ব্যবহার করা। তবে
এই চ্যালেঞ্জ কেবল বাংলার একার ছিল না। যন্ত্রযুগের আগে পর্যন্ত
দুনিয়ার সব লেখন পদ্ধতির মতোই বাংলা ভাষা হাতে লিখে বিকশিত
হতে থাকে। বাংলার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ পুঁথি আকারে হাতে
লেখা। বাংলা প্রাচীন বা পুঁথি সাহিত্য তালপাতায় লেখা শুরু হয়।
কালক্রমে সেটি কাগজে হাতে লেখা আকারে বিকশিত হয়। তবে
বিশ্বের অন্য ভাষা-বিশেষত রোমান হরফের ভাষাগুলো যন্ত্রযুগে পা
দিলেও বাংলার যন্ত্রযুগ অনেক দেরিতে শুরু হয়। রোমান হরফে মুদ্রণ
যন্ত্র ও টাইপরাইটার চালু হলেও আমরা বাংলাকে এর কাছাকাছি কোন
সময়ে যন্ত্রযুগে প্রবেশ করাতে পারিনি। কিন্তু বাঙালি তার অসাধারণ
মেধাকে কাজে লাগিয়ে শত শত বছর পেছনে পরে থাকা বাংলাকে
আজকের বিশ্বে ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার প্রায় সমকক্ষভাবে যন্ত্রে
ব্যবহার করার শিখরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। দুনিয়াতে এখন এমন
কোনো ডিজিটাল যন্ত্র নেই যাতে বাংলা লেখা যায় না। অবশ্য এই কথ
াটিও সত্য যে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা প্রয়োগের চ্যালেঞ্জগুলোকেও
অস্বীকার করা যাবে না। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় বাংলা এখনও রোমান
হরফের সমকক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। অপ্রিয় সত্য হচ্ছে বাংলাকে
এমন সমকক্ষতা প্রদানের জন্য তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টাও
অতীতে ছিল না। অতি সম্প্রতি আমরা সেই দুর্নাম ঘুচানোর উদ্যোগ
নিয়েছি। বছরের পর বছর লড়াই করে অতি সম্প্রতি আমাদের সামনে
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার বিকাশের একটি সুবর্ণ সময় উপস্থিত
হয়েছে। ’১৭ সালের ৩ জানুয়ারি অনুমোদিত তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের
১৫৯.০২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা এক নতুন
যুগে প্রবেশ করেছে। ২০১০ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সালে প্রকল্প
অনুমোদিত হতে পারাটাকেও আমি একটি বড় বিজয় মনে করছি।
কারণ এর আগে ব্রিটিশ বা পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ আমলে বাংলা
ভাষার তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য তেমন কোনো সরকারি আনুক‚ল্য
পাওয়া যায়নি। অথচ আমরা এখন টের পাচ্ছি যে বিশ্ববাসী বাংলাকে
অসাধারণ মর্যাদা দিচ্ছে। আমাদের একুশে যে শুধু আন্তর্জাতিক মাতৃ
ভাষা দিবস বা সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রভাষা হয়েছে কিংবা জাতিসংঘের
অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা পাবার অপেক্ষায় আছে কিংবা আমরাই যে
ডটবাংলার অধিকারী সেটাই নয়Ñ বস্তুত বিশ্বজুড়ে ৩৫ কোটি মানুষের
ভাষা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম ভাষার কাতারে দাঁড়াতে যাচ্ছে। আসুন একটু
পেছনে তাকাই। আবার বর্তমান এবং সামনেও তাকাই।
যন্ত্রে বাংলা ভাষা \ সিসা ও ফটোটাইপসেটার
১৪৫৪ সালে জার্মানির গুটেনবার্গ মুভেবল টাইপ দিয়ে মুদ্রণের সূচনা
করার আগেও নানা ধরনের মুদ্রণ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। বাংলা মুদ্রণের
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলা হরফ তৈরির কাজটি অত্যন্ত কঠিন ও
জটিল ছিল। বাংলা মুদ্রণের জন্য এটি দুঃখজনক যে, জার্মানির মুদ্রণ
প্রযুক্তি ১৫৫৬ সালে ভারতের গোয়ায় এলেও বাংলায় আসে ১৭৭৮
সালে। মুদ্রণ যন্ত্র আসার বিলম্বের পাশাপাশি বাংলা হরফ বানানোর
চ্যালেঞ্জটাও বেশ বড় ছিল। ব্রিটিশ নাগরিক “উইলেম বোল্টসন এক ফন্ট
(কোনো ভাষার সকল বর্ণ ও চিহ্ন যা মুদ্রণে ব্যবহৃত হয় তাকে ফন্ট বলে)
বাংলা হরফ নির্মাণের কাজে লন্ডনের বিখ্যাত শিল্পীদের নিযুক্ত করেন।
কিন্তু বাংলা টাইপ তৈরির কাজ অত্যন্ত দুরূহ ও জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ
বলে বোল্টসনের বাংলা হরফ নির্মাণের কাজ বেশি দূর অগ্রসর হয়নি।”
(কমপিউটারে প্রকাশনা, দ্বিতীয় সংস্করণ, মোস্তাফা জব্বার পৃ: ৪১)
বোল্টসনের ব্যর্থতার কথা বলা হলেও তিনি ও জ্যাকসন বাংলা হরফ
তৈরির প্রাথমিক পদক্ষেপে সফল হন। তবে যার ডিজাইন করা বর্ণমালা
দিয়ে প্রথম বাংলা বই প্রথম মুদ্রিত হয় তার নাম চার্লস উইলকিনস।
এতে পঞ্চানন কর্মকার নামের এক বাঙালিরও অসাধারণ অবদান ছিল।
পঞ্চানন উইলকিন্সের ডিজাইনকে ছেনি কেটে হরফে রূপান্তর করেন।
মুদ্রণ প্রযুক্তি বিকাশের সাথে সাথে বহুজাতিক কোম্পানি লাইনোটাইপ
ও মনোটাইপ বাংলা হরফ তৈরির কাজ করেছে ফটোটাইপসেটারের যুগ
অবধি। বিশেষত এই দুটি কোম্পানির হাতে লাইনো ও মনো কাস্টিং
মেশিন তৈরি হবার ফলে বাংলা মুদ্রণের টাইপোগ্রাফিক পশ্চাৎপদতা
অনেকটা কেটে যায়। একইভাবে বিশেষত লাইনোটাইপ তাদের তৈরি
ফটোটাইপসেটারে বাংলা হরফের অসাধারণ সৌন্দর্য বিকশিত করে।
বাংলা টাইপোগ্রাফির ক্ষেত্রে ইংরেজ রমণী ফিয়োনা রস-এর কথা না
স্মরণ করলে সেটি অন্যায় হবে। ফটোটাইপসেটারের অসাধারণ বাংলা
ফন্টটি তারই তৈরি করা।
৮ কমপিউটার জগৎ ফেব্রæয়ারি ২০২১
ফিয়োনা রস
৯ কমপিউটার জগৎ ফেব্রæয়ারি ২০২১
যন্ত্রে বাংলা ভাষা \ টাইপরাইটার
অন্যদিকে রোমান হরফের জন্য ১৮৭০ সালে টাইপরাইটার
প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে বাংলা টাইপরাইটার প্রচলিত হয় ১৯৭২
সালে। ১৯৬৯ সালে শহীদ মুনীর চৌধুরী যে কীবোর্ডটি প্রণয়ন করেন
তারই আলোকে পূর্ব জার্মানির অপটিমা কোম্পানি অপটিমা মুনীর
টাইপরাইটার তৈরি করে যার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার অফিস
আদালতে বাংলা ভাষা চালু করে। রোমান কীবোর্ডের পেটেন্ট রেমিংটন
কোম্পানির থাকার সুবাদে তারা বাংলা টাইপরাইটার তৈরি করেছিল, যা
দিয়ে ৭০ দশকে লন্ডন থেকে জনমত নামের একটি সাপ্তাহিক প্রকাশের
খবর জানা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগেও একটি
রেমিংটন বাংলা টাইপরাইটার ছিল। ভারতে রেমিংটন টাইপরাইটার
প্রচলিত ছিল বলেও জানা যায়। পাকিস্তান সরকার অফিসে বাংলা
ব্যবহার করেনি বলে সেটি ভারত থেকে ব্যাপকভাবে ঢাকায় আসেনি।
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা
“প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে কমপিউটারে বাংলা ভাষা
ব্যবহারের প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
বিটস পত্রিকায় (এপ্রিল ’৮৮) প্রকাশিত বাংলাদেশ প্রকৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের
কমপিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের
বর্ণনা থেকে জানা যায়, ১৯৮২ সালে তার বিভাগে কমপিউটারে বাংলা
ভাষা ব্যবহারের জন্য গবেষণার কাজ শুরু হয়। এরপর গবেষণার
বিভিন্ন পর্যায়ের অগ্রগতির বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখেছেন, “বিভিন্ন
চওড়ার অক্ষর প্রদর্শনের জন্য ইলেকট্রনিক সার্কিট তৈরির কাজ আমরা
১৯৮৫ সালের শেষার্ধে সমাপ্ত করেছি। ... কীবোর্ড এবং কোড তৈরির
কাজ সমাপ্ত হয় ১৯৮৬ সালে। রহমানের বর্ণনা মতে, কমপিউটারে
বাংলা ব্যবহারের সব কাজই তারা শেষ করেছেন। কিন্তু, শেষ করে কী
করেছেন তা জানা যায়নি। তাদের সে কীর্তি কেউ দেখতে পায়নি।”
(সূত্র : মুহম্মদ জালাল, মাসিক সাঁকো, ডিসেম্বর ২০০৪)
তবে আমার জানা মতে, ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত শহীদলিপিই
হচ্ছে প্রথম বাংলা সফটওয়্যার, যা দিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে কমúিউটারে
বাংলা লেখালেখি করা যেতো। এটি ছিল অ্যাপল কমúিউটারের তৈরি
মেকিন্টোশ কমúিউটারের অপারেটিং সিস্টেম এবং ম্যাকরাইট নামের
অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের বাংলা অনুবাদ। শহীদ সাহেব প্রথমে ডট
মেট্রিক্স ও পরে লেজার প্রিন্টারের বাংলা ফন্টও তৈরি করেন। ১৯৮৪
সালের ২০ জানুয়ারি বাজারজাত করা মেকিন্টোশ কমúিউটারের জন্য
সাইফুদ্দাহার শহীদের তৈরি এই সফটওয়্যারটি প্রথম ১৯৮৬ সালে
ব্যবহার করে ঘওগঈঙ (জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট)। এরপর
শহীদ সাহেবের শহীদলিপি দৈনিক আজাদ, পাক্ষিক তারকালোক ও
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নামের প্রতিষ্ঠানে প্রকাশনার জন্যও ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু সফটওয়্যারটি ম্যাক ওএস পরিবর্তনের সাথে সাথে আপডেট না
হওয়ায় এবং উইন্ডোজ সংস্করণ প্রকাশিত না হওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।
তবে কমúিউটারে বাংলা প্রয়োগের আজকের যে প্রবাহমান ধারা
তার সূচনা ১৯৮৭ সালের ১৬ মে আমি যখন আমার সম্পাদনায়
সাপ্তাহিক আনন্দপত্র প্রকাশ করি, তখন থেকে। আমি ভারতের
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার রাহুল কমার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের গৌতম
সেন ও স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি বঙ্কিম ফন্ট এবং জব্বার কীবোর্ড
অনুসারে সৈয়দ মাইনুল হাসানের সম্পাদিত মাইনুল লিপি দিয়ে
আনন্দপত্র প্রকাশ করি। জনাব মাইনুল হাসান আমার অনুরোধে বঙ্কিম
ফন্টের কী-ম্যাপিং বদল করে মুনীর কীবোর্ডের প্রথম দুটি স্তর এবং
আমার তৈরি তৃতীয় ও চতুর্থ স্তর অনুযায়ী মাইনুল লিপি তৈরি করেন।
আমি সেই কীবোর্ডের নাম রেখেছিলাম জব্বার কীবোর্ড।
চার্লস উইলকিন্সের হাতে তৈরি বাংলা হরফের পর ফটোটাইপসেটারে
আনন্দবাজার গোষ্ঠীর তৈরি করা চমৎকার যে বাংলা হরফ আমরা
পেয়েছিলামÑ তারপর গৌতম-স্বাতী বা মাইনুলের বঙ্কিম/মাইনুল
লিপি ফন্ট ছিল হতাশাজনক। মাত্র ৩০০ ডিপিআই লেজার প্রিন্টার
ফন্টটির অদ্ভুত (অথবা কুৎসিত) চেহারা কোনোমতেই বাঙালির মনের
ক্ষুধা মেটাতে পারেনি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে সেই ফন্টটি ২৫৬ কোডের
কমúিউটারে ১৮৮টি কোড ব্যবহার করে বাংলা লিপিকে প্রায় অবিকৃত
করে প্রকাশ করেছিল। যদিও ডিজাইনে ত্রæটি ছিল এবং সেই হরফে
মোটেই পেশাদারিত্ব ছিল না, তবুও মুদ্রক বা প্রকাশকেরা সেই ফন্ট
দেখে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে পেরেছিলেন। সেই ঘটনার মাত্র ৪
মাসের মাথায় আমি আমার হাতে তৈরি প্রথম ফন্ট আনন্দ প্রকাশ করি।
এই ফন্টটি আশ্চর্যজনকভাবে বঙ্কিম ফন্টের ডিজাইন ত্রæটি কাটিয়ে ওঠে
এবং সাপ্তাহিক-মাসিক তো বটেই দৈনিক পত্রিকার বাহন হয়ে যায়।
দেশের অন্যতম প্রাচীন দৈনিক পত্রিকা আজাদ তাকে গ্রহণ করে এবং
একটি নতুন ইতিহাসের জন্ম হয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে, সেই
ফন্টটির ডিজাইনার ছিল ¯েœহভাজন হামিদুল ইসলাম। উল্লেখ করা
প্রয়োজন, হামিদুল ইসলামের পর বিজয়ের জন্য ফন্ট ডিজাইন করেছেন
যারা তাদের মাঝে উজ্জ্বল কুমার দত্ত ও শিব নারায়ণ দাশও আছেন।
তবে আজকের দিনের কমúিউটারে বাংলার কমúিউটারের কীবোর্ডর
জন্ম প্রকৃতার্থে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ওইদিন আমি ‘বিজয়’
কীবোর্ড এবং তন্বী সুনন্দা ফন্ট প্রকাশ করি। বিজয় কীবোর্ডের সুবাদে
আমি ১৮৮টির বদলে ২২০টি বর্ণ ব্যবহার করতে সক্ষম হই। ফলে
বাংলা ভাষা আরো চমৎকারভাবে কমúিউটারের পর্দায় উপস্থিত হয়।
কমúিউটারে বাংলা ভাষা প্রয়োগে বিজয়ের অগ্রগতির সাথে সাথে
কমúিউটারে বাংলা ভাষা প্রয়োগের প্রচেষ্টা আরো অনেক হয়েছে।
মেকিন্টোশ কমúিউটারের গ্রাফিক্স সুবিধা কাজে লাগিয়ে এতে ফন্ট
তৈরি করেন মাহমুদ হোসেন রতন ও ড: মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
অ্যাপল কমúিউটার কোম্পানির মেকিন্টোশ কমúিউটারের আগে
বাজারজাত করা অ্যাপল সিরিজের কমúিউটারের জন্য গুটেনবার্গ
নামের একটি সফটওয়্যার প্রচলিত ছিল যাতে বাংলা লেখা যেত।
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাঙালি হেমায়েত হোসেনও কমúিউটারে
বাংলা নিয়ে কাজ করেন।
অন্যদিকে পিসিতে ডসের অধীনে দোয়ান জান, আবহ, বর্ণ,
অনির্বাণ ইত্যাদি সফটওয়্যারের আত্মপ্রকাশ ঘটে। যেহেতু প্রায় সব
অফিস আদালতেই পিসি ব্যবহৃত হতো সেহেতু ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এসব
জায়গায় টাইপরাইটারের মানের এসব সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়েছে।
অন্যদিকে যেহেতু মুদ্রণ মানটি চিঠিপত্রের মানের সাথে কোনোমতেই
খাপ খায় না সেহেতু মুদ্রণ, প্রকাশনা, সাময়িকী ও সংবাদপত্রে বিজয়-
মেকিন্টোশের একচেটিয়া রাজত্ব চলতে থাকে।
কার্যত ২৬ মার্চ ১৯৯৩-তে পিসির উইন্ডোজে বিজয় কীবোর্ড
ও সফটওয়্যার প্রকাশিত হবার পূর্ব পর্যন্ত ম্যাক ও পিসির বাংলা
সুস্পষ্টভাবে বিভাজিত ছিল। মুদ্রণ ও প্রকাশনায় সচরাচর পিসি ব্যবহৃত
হতো না। কিন্তু উইন্ডোজের বিজয় বার্লিন দেয়ালের মতো ওই বিভাজন
রেখাটি ভেঙে দেয়। একই অ্যাপ্লিকেশন, একই ফন্ট, একই কীবোর্ড,
একই উপায়ে বাংলা লেখাÑ এমনকি একই এনকোডিং ম্যাক পিসির
পার্থক্য ঘুচিয়ে দেয়। ম্যাক ও উইন্ডোজে বাংলা প্রচলিত হবার পর
মুক্ত ওএস লাইনাক্সেও বাংলা প্রচলিত হয়। পরবর্তীতে নতুন শতকে
১০ কমপিউটার জগৎ ফেব্রæয়ারি ২০২১
ইউনিকোড এনকোডিং বিশেষত ইন্টারনেটে আসকিকে স্থলাভিষিক্ত
করে এবং ধীরে ধীরে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এর চতুর্থ সংস্করণ থেকে
বাংলা ভাষার ইউনিকোড এনকোডিং ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে এবং
২০০৪-এর শেষ প্রান্তে এসে আমাদের বিজয় ইউনিকোডকেও একটি
ভিন্ন এনকোডিং পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করে। ডা. মেহেদী হাসান খান
নামে এক তরুণ ২০০৩ সালে ইউনিবিজয় নামের ইউনিকোডভিত্তিক
একটি বাংলা সফটওয়্যার তৈরি করেন যা পরে অভ্র নামে পরিচিত
হয়। ইউনিবিজয় ছিল বিজয় কীবোর্ডভিত্তিক ইউনিকোডে বাংলা
লেখার বিজয়ের অনুমোদনবিহীন সফটওয়্যার, যা থেকে পরে বিজয়
কীবোর্ড প্রত্যাহার করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি
গভর্নর নাজনীন সুলতানা একটি বাংলা ওয়ার্ড প্রসেসর তৈরির চেষ্টা
করেন, যা আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি বলে নিজেই স্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে শামীম হাসনাত রিদমিক নামের একটি সফটওয়্যার তৈরি
করেছেন, যা অ্যান্ড্রয়েডে চলে। মায়াবী নামে আরও একটি সফটওয়্যার
দিয়ে স্মার্টফোনে লেখা যায়। এই সময়ের মাঝে বিজয়ের অ্যান্ড্রয়েড
ও আইওএস সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। অনেক আগেই বিজয়ের
লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমের সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে। ফলে
এখন আমাদের হাতের কাছে এমন কোনো ডিজিটাল যন্ত্র নেই যাতে
বাংলা লেখা যায় না।
এখনকার দুনিয়ায় বাংলা ভাষার জন্য বিজয়ের ঐতিহ্যগত
আসকি যেটি শুরুতে ১৯৮৮ সালে ও পরে তিনটি অক্ষরের কোডে
সংশোধন করে ২০০৪ সালে চালু করা হয় তার পাশাপাশি ইউনিকোড
এনকোডিং প্রচলিত হয়। ইউনিকোডের দশম সংস্করণ ২০১৭ সালে
প্রচলিত হয়েছে। নতুন সংস্করণটিতে আনজি নামের একটি নতুন
অক্ষর ও আরও বৈদিক অনুস্বার ও বাংলা এব্রিব্রিয়েশন নামের দুটি
চিহ্ন যুক্ত হয়েছে। বাকি সব আগের মতোই আছে। বাংলাদেশ সরকার
ইউনিকোডকে ভিত্তি করে বিডিএস ১৫২০:২০১৮ নামের একটি মানকে
প্রমিত করেছে। এরই মাঝে বিজয়ের উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনআক্স,
অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের ইউনিকোড সংস্করণ
প্রকাশিত হয়েছে। এটি বিডিএস ১৫২০:২০১৮ পূর্ণভাবে সমর্থন
করে। গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানও ইউনিকোডে
বাংলা লেখার ইনপুট মেথড ও ফন্ট প্রকাশ করেছে। বলে রাখা ভালো,
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা প্রয়োগে ভারতের প্রচেষ্টাগুলো আমরা উপস্থাপন
করতে পারিনি। ভারতে বিজয় ও অভ্রসহ বাংলাদেশি সফটওয়্যার
ব্যবহৃত হলেও সেখানে নিজস্ব কীবোর্ড ও ফন্ট জন্ম নিয়েছে যার সাথে
বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই। ভারতের শ্রীলিপি,
এসটিএম, প্রভাত ইত্যাদি সফটওয়্যারের নাম আমরা শুনেছি। তবে
বাংলাদেশে কেউ ভারতের কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করে বলে
জানি না। প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকেরা প্রধানত
বিজয় ব্যবহার করে। কেউ কেউ অভ্র এবং প্রভাত ও রিদমিক ব্যবহার
করে বলে জানা যায়।
একুশ শতকের প্রথম প্রান্তে যদিও আমরা তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা
ভাষা ও বর্ণমালা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বের বহু ভাষার সমকক্ষতা
অর্জন করেছি তথাপি বাংলার জন্য আমাদের করণীয় রয়েছে অনেক।
বিশেষ করে রোমান হরফ ও তার সাথে সম্পৃক্ত ভাষাগুলো যেসব
সক্ষমতা অর্জন করেছে সেগুলো বাংলা ভাষা ও বাংলা হরফ এখনও
অর্জন করতে পারেনি। বাংলা বানান ও ব্যাকরণ শুদ্ধ করা, কথাকে
লিখিত রূপদান ও লিখিত বিষয়কে কথায় রূপান্তর, ইন্টারনেটের স্ক্রিন
রিড করা, বাংলার করপাস তৈরি করা, অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিডার
তৈরি করাসহ অনেক তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা বাংলা ভাষা ও বর্ণমালায়
যুক্ত করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার এতদিন পরেও
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা লেখার কাজটি ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রেই আমরা
নিজেরা তেমন সফলতা অর্জন করিনি। এমনকি আমরা সম্ভবত তেমন
আন্তরিকভাবে চেষ্টাও করিনি। যেসব ছোটখাটো চেষ্টা করা হয়েছে
সেগুলোও অপ্রতুল, সমন্বয়হীন ও যথাযথ ছিল না। আমাদের জানা
যেসব প্রচেষ্টা তেমন ফলদায়ক হয়নি তার মাঝে রয়েছে প্রমিত কীবোর্ড
ও ফন্ট উন্নয়নের প্রচেষ্টা, বাংলা ওসিআর উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলা ভাষাবিষয়ক গবেষণা কর্মকাÐ। এসব প্রচেষ্টার
প্রকৃত সফলতা পেতে পারেনি বলেই প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বড়
কিছুর আয়োজন করার।
সোনালী সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে
আমাদের সৌভাগ্য যে ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি জননেত্রী শেখ
হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় ১৫৯ কোটি ২ লাখ
টাকার একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাউত্তর কাল
তো বটেই বাংলা ভাষা ও বর্ণমালার ইতিহাসে কোনো সরকার এতো
বড় প্রকল্প গ্রহণ করেনি। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পরিকল্পনা
মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে। একনেক সভায়
উপস্থিত মান্যবরদের সৌজন্যে জানা গেছে যে এই প্রকল্প অনুমোদনে
প্রধানমন্ত্রী যতোটা আনন্দিত হয়েছেন আর কোনো প্রকল্প অনুমোদনে
ততোটা হতে দেখা যায়নি। এটি প্রমাণ করে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজে
বাংলা ভাষার বিকাশে কতোটা আন্তরিক।
আমাদের একুশে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে
বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর হাতেই আরও একটি অর্জন হয়
আমাদের। তিনি নিজের হাতে ডটবাংলা ডমেইনের আবেদন করে ২০১৬
সালের ৩১ ডিসেম্বর সেটির উদ্বোধন করতে পারলেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে
বাংলা ভাষার বিকাশে এটি একটি বিরাট অর্জন ও বিরাট মাইলফলক।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত ১৫৯.০২ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাংলা
ভাষা ও বর্ণমালাকে নিয়ে যাবে এক উচ্চতর আসনে। আমরা ডিজিটাল
যুগে বাংলা ভাষা ব্যবহারের যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি তার প্রায়
সবগুলোরই সমাধান রয়েছে এই প্রকল্পে। যদি প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা
ও স্বপ্নকে আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে পারি তবে বাংলা ভাষা
বিশ্বের একটি শ্রেষ্ঠতম ভাষায় পরিণত হবে। বাংলা বর্ণমালাও হবে
বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বর্ণমালা। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়ন নামের যে
প্রকল্পটি সরকার অনুমোদন দিলো তারও একটি লম্বা ইতিহাস রয়েছে।
আমরা বছরের পর বছর ধরে বাংলা ভাষার উন্নয়নে কাজ করার জন্য
সরকারের পিছু ধর্ণা দিয়ে আসছিলাম। আমার মনে আছে ২০১০ সালের
৩০ আগস্ট কমúিউটারে বাংলা ভাষা প্রমিতকরণ কমিটির ৫ম সভায়
সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এ রকম : “তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার
ও প্রয়োগ সংক্রান্ত ৫টি গবেষণা কর্মসূচি বিসিসি গ্রহণ করবে। উক্ত
কর্মসূচিসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের নিমিত্ত বিজ্ঞান এবং তথ্য
ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে।” ২০১০ সালে
সেই সিদ্ধান্ত বছরের পর বছরের পরিশ্রমের ফলে বাস্তবে রূপ নেয়।
কমúিউটার কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আশরাফুল
ইসলাম, পরিচালক এনামুল কবির, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার গবেষক
হাসনাত শাহরিয়ার প্রান্ত, প্রফেসর মনসুর মুসা, মুনির হাসান এবং আমি
নিজে প্রচÐ পরিশ্রম করে এমন একটি প্রকল্প গ্রহণ করাতে সক্ষম হই।
এর সম্ভাব্যতা যাচাই করাটা কঠিনতম একটি কাজ ছিল। সেটি আমরা
করেছিলাম। এখন প্রকল্পটি চলমান অবস্থাতে রয়েছে।
১১ কমপিউটার জগৎ ফেব্রæয়ারি ২০২১
কাকতালীয়ভাবে আমি আমার নিজের ফেসবুকের টাইমলাইনে
কিছু স্মৃতি পেলাম। তাতে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করার প্রেক্ষিত বিষয়ক
তথ্য রয়েছে। তথ্যগুলো এ রকম : “কমúিউটারে বাংলা ভাষার
ব্যবহার সমৃদ্ধকরণের জন্য প্রকল্প গৃহীত বিজয়ের স্বীকৃতি প্রদানের
সিদ্ধান্ত সরকার কমúিউটারে বাংলা ভাষার ব্যবহার সমৃদ্ধকরণ করার
জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ
গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায়Ñ ১) ইউনিকোড ও বাংলা বর্ণমালার
কোড সেট : বিবেচনায় রেখে বাংলা সর্টিং অর্ডার নির্ধারণ, ২) বাংলা
করপাস উন্নয়ন/সমৃদ্ধকরণ, ৩) বাংলা বানান ও ব্যাকরণ পরীক্ষক
উন্নয়ন, ৪) বাংলা ভাষার টেক্সট টু স্পিচ ও স্পিচ টু টেক্সট সফটওয়্যার
উন্নয়ন, ৫) বাংলা ফন্ট কনভার্টার উন্নয়ন, ৬) তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলার
লিখিত রূপ নির্ধারণ, ৭) বাংলা মেশিন ট্রান্সলেশন, ৮) বাংলা স্ক্রিন
রিডার সফটওয়্যার, ৯) প্রতিবন্ধীদের জন্য সফটওয়্যার, ১০) বাংলা
ফন্ট এবং সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্তিকরণ, ১১) বাংলা ওসিআর উন্নয়ন
ইত্যাদিসহ মোট ১৬টি টুল উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্প গৃহীত হয়। ১১
এপ্রিল ২০১৬ বাংলাদেশ কমúিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক
আশরাফুল ইসলামের (সাবেক) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তিতে
বাংলা ভাষার ব্যবহার প্রমিতকরণ সংক্রান্ত কমিটির এক সভায় বিষয়টি
অবহিত করা হয়। সভায় কমিটির সদস্য প্রফেসর মনসুর মুসা, মোস্তাফা
জব্বার, হাসনাত শাহরিয়ার প্রান্ত, এনামুল কবির এবং বিসিএস ও
মাইক্রোসফটের প্রতিনিধিসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সভায়
এই কমিটির বিগত সভার মিনিটসও অনুমোদিত হয়। সেই মিনিটস
অনুসারে বিজয় বাংলা কীবোর্ড ও জাতীয় কীবোর্ডের বিরোধ নিষ্পত্তি
করা হয়। বিজয়ের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানেরও সিদ্ধান্ত হয়।
একই সভায় বাংলা আইপিএ ফন্ট, উপজাতীয় ভাষাসমূহ বাংলা
বর্ণানুক্রম এবং বাংলা ইশারা ভাষা প্রমিতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সুখের বিষয় এই যে এই নিবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত বাংলা ইশারা ভাষা
এবং আইপিএ’র মান স্থির করা হয়েছে। কিছু দিনের মাঝেই এই দুটির
প্রমিত মান আমরা পেয়ে যাবো এবং উপজাতীয় ভাষারও কীবোর্ডসমূহ
হয়তো প্রমিত হয়ে যাবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের বিসিসির প্রকল্পে মোট ১৬টি টুল উন্নয়ন
করার প্রস্তাবনা রয়েছে। প্রতিটি টুল বাংলাকে বিশ্বের যেকোনো
ভাষার সমকক্ষতা দেবার জন্য ডিজাইন করা। আমরা এই টুলগুলো
ও তার প্রয়োজনীয়তার সাথে পরিচিত হতে পারি। প্রকল্পটির বিস্তারিত
পরিচিতির অংশ হিসেবে সরকারের গৃহীত প্রকল্পের ভ‚মিকায় এর
উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছেÑ ক. কমúিউটিংয়ে বাংলাকে বিশ্ব দরবারে
নেতৃত্ব দানকারী ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। খ) তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা
ভাষার ব্যবহারের বিভিন্ন বিষয় প্রমিত করা। গ) বাংলা কমúিউটিংয়ের
জন্য টুলস, প্রযুক্তি ও উপাত্ত উন্নয়ন করা।
প্রায় ১৫৯.০২ কোটি টাকার গৃহীত প্রকল্প দলিলে আরও বলা হয়
যে, ১৬টি টুল উন্নয়ন করার ফলে বাংলা ব্যবহারকারীরা বিশ্ব মানে
বাংলা ব্যবহার করতে পারবে এবং বাংলা সিএলডিআর, আইপিএ,
করপাস, কীবোর্ড ও ফন্ট প্রমিত হবে। কোনো সন্দেহ নেই যে এই
প্রকল্পটি বাংলার জন্য একটি মাইলফলক ও স্বপ্নের প্রকল্প। এটির
বাস্তবায়ন যে বিশ্বের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাসম্পন্ন ভাষাগুলোর কাতারে
বাংলাকে দাঁড় করিয়ে দেবে সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
হয়তো কোটি টাকার প্রশ্নটি হবে প্রকল্পটি কতোটা কতোদিনে কীভাবে
বাস্তবায়িত করা যাবে।
১) ভাষাংশ বা করপাস : ১৬টি টুলের মাঝে রয়েছে ভাষাংশ
বা করপাস। এই ভাষাংশ যতো সমৃদ্ধ হবে তথ্যপ্রযুক্তিতে
বাংলার ব্যবহারও ততোই সমৃদ্ধ হবে। এর ফলে বাংলা
ভাষার শব্দভাÐার আরও বহুগুণ সমৃদ্ধ হবে। বানান শুদ্ধিকরণ,
ব্যাকরণ শুদ্ধিকরণ, যান্ত্রিক অনুবাদ, আবেগ বিশ্লেষণসহ
১৬টি টুলের অনেকগুলোর কাজ এর ওপরই নির্ভর করবে।
প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে এই করপাস তৈরি
করার কথা বলা হয়েছে। এটি আমাদের বোঝার দরকার যে
ভাষাংশ বা করপাস চিহ্নিত না করাটা ডিজিটাল যুগে বাংলার
অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেবে। ভাষার সমৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তির
সব সুযোগ সুবিধা গ্রহণের জন্য করপাস ভাÐার গড়ে তোলা
আবশ্যক। কার্যত ভাষাংশকে ভিত্তি করেই প্রকল্পের ১৬টি
টুলের অনেকগুলো গড়ে উঠবে। ইতোমধ্যে গুগল ভাষাংশ
নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছে যেটি স্বেচ্ছাসেবীভাবে করে
তারা তাদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। তবে তাদের
ভাষাংশটি অপ্রতুল। রোমান হরফের বিদ্যমান ৫২ কোটি
ভাষাংশের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। গুগল মাত্র কয়েক
লাখ বাংলা ভাষাংশ গড়ে তুলতে পেরেছে। আমার জানা
মতে, সেটি ১৪ লাখের বেশি নয়। সেজন্য সর্বশক্তি দিয়ে
আমাদের বাংলা ভাষাংশ গড়ে তুলতে হবে। অনুমোদিত
প্রকল্পের বৃহত্তর অংশ এটি। পুরো প্রকল্প বরাদ্দের প্রায় এক
তৃতীয়াংশ এই খাতেই বরাদ্দ করা আছে।
২) বাংলা ওসিআর : যদিও এরই মাঝে বাংলা ওসিআর নিয়ে বেশি
কিছু কাজ হয়েছে তবুও এটি বাস্তবতা যে, এই উন্নয়নগুলো
বাংলা ব্যবহারকারীদের তেমন কোনো কাজে লাগে না। এটি
অপ্রিয় সত্য যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় হয়েছে।
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত
অর্থ পাওয়া যায়নি। রাতারাতি যে এসব প্রযুক্তি কাজ করবে
তেমনও নয়। রোমান ওসিআর তৈরি হতে যুগের পর যুগ
সময় লেগেছে। বাংলায় শুধু অতি সাম্প্রতিককালে ওসিআর
তৈরির প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। প্রচেষ্টাগুলোর সবচেয়ে দুর্বল
দিকগুলো হচ্ছে যে, এগুলো সমন্বিতভাবে ধারাবাহিক
কর্মপ্রচেষ্টা হিসেবে সামনে আগায়নি। বরং ওসিআরবিষয়ক
আগের সব প্রকল্পই এখন থেমে আছে। অথচ ওসিআর কাজ
করলে বাংলা ভাষার সবচেয়ে অগ্রগতি হবে যে, প্রাচীন বা
বর্তমান কাগজে বা হাতের লেখায় সঞ্চিত রচনাকে ডিজিটাল
উপাত্তে পরিণত করা সম্ভব হবে। হাতে লেখা সরকারের
নথিপত্র থেকে শুরু করে পুঁথি বা জমির দলিলের লিখিত রূপ
পাওয়াটা আমরা সৌভাগ্যের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতে
পারব। এছাড়া পাঠাগারকে ডিজিটাল করতে এর কোনো
বিকল্পের কথা ভাবা যায় না। সরকারি অফিস আদালতের নথি
পত্র ডিজিটাল করতেও এটি একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হতে
পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে এসে অপটিক্যাল ক্যারেক্টার
রিডারকে দক্ষ করা কঠিন হওয়া উচিত নয়।
৩) কথা থেকে লেখা ও লেখা থেকে কথা : ইংরেজিতে আমরা
এই ব্যবস্থাকে টেক্সট টু স্পিচ ও স্পিচ টু টেক্সট বলে গণ্য
করি। এর মানে দাঁড়াচ্ছে যে, এই টুলটির সহায়তায় আমরা
লিখিত বাংলাকে শব্দে উচ্চারিত বাংলায় এবং মুখের কথাকে
ডিজিটাল লেখায় পরিণত করতে পারব। এসব কাজেও
১২ কমপিউটার জগৎ ফেব্রæয়ারি ২০২১
আমাদের ছোটখাটো গবেষণা রয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো
প্রযুক্তি আমাদের নেই। আমার ধারণা এই কাজটিকে সমন্বিত
করা বা গুছিয়ে নেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। গুগল এই
খাতেও বেশ কিছু কাজ করেছে। এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত
হবে যে, যেটুকু কাজ যারাই করেছেন সেটুকু কাজকে ভিত্তি
হিসেবে নিয়ে টুলটিকে আরও উন্নত করা যেতে পারে। আমার
নিজের ধারণা এই খাতে এখন আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
ব্যবহার করতে পারি।
৪) জাতীয় কীবোর্ড উন্নয়ন : বিডিএস ১৭৩৮:২০০৪ নামে
নিবন্ধিত একটি জাতীয় কীবোর্ড সরকার প্রমিত করেছিল।
বিজয়ের দুটি অক্ষর পরিবর্তন করে এই কীবোর্ডটিকে প্রমিত
করা হয়। এটি চারস্তরের কীবোর্ড যা বর্তমানে ব্যবহারের
অযোগ্য। অন্যদিকে এই কীবোর্ডটিতে বস্তুত বাংলা সব বর্ণ
লেখার বিজ্ঞানসম্মত উপায় নেই। বিশেষ করে পুরনো ও
অপ্রচলিত বর্ণ এই কীবোর্ড দিয়ে লেখা যায় না। প্রকল্পে এই
কীবোর্ডটিকে সর্বজনের ব্যবহারযোগ্য ও আরও উন্নত করার
কথা বলা হয়েছে। এটি যদি না করা হয় তবে একদিকে
রোমান হরফ দিয়ে বাংলা লেখার ব্যবস্থা আরও ব্যাপকভাবে
প্রচলিত হবে অন্যদিকে দেশটা কীবোর্ডের জঙ্গলে পরিণত
হবে। এই টুলটি হবে কার্যত বাংলা ভাষার প্রমিত কীবোর্ড
বিডিএস ১৫২০:২০১৮ এবং বিডিএস ১৯৩৫:২০১৮-এর
কোডসমূহ অনুসরণ করে বিডিএস ১৭৩৮:২০১৮ কীবোর্ড
অনুসারে ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করা। একই
সাথে অন্য টুলগুলোর সাথে এর সমন্বয়করণ।
৫) স্টাইল গাইড : প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে যে, বাংলা ভাষার
বিভিন্ন উচ্চারণ, লেখনভঙ্গি, আঞ্চলিক উচ্চারণ ইত্যাদি
নানাভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। এই অবস্থাতে যদি বাংলা স্টাইল
গাইড প্রমিত না করা হয় তবে বাংলার সংকট বাড়বে।
প্রকল্পে সেজন্য স্টাইল গাইড তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।
৬) বাংলা ফন্ট ইন্টারঅপারেবিলিটি : এটি লক্ষ্য করা গেছে
যে, কমúিউটারের বাংলা ফন্টসমূহ নানা ধরনের কোড
ব্যবহার করে থাকে এবং একটি ফন্টের ডকুমেন্ট অন্য ফন্টে
পাঠযোগ্য হয় না। এটি অনেকটা বিভ্রান্তিপ্রসূত। আমাদের
ব্যবহারকারীরা আসকি ও ইউনিকোডের পার্থক্য বোঝেন
না। আমরা জানি না যে বাংলার জন্য আসকি কোডও আছে,
ইউনিকোডও আছে। এমনকি আসকি কোডেরও প্রকারভেদ
আছে। বিজয়ের ২০০৩ সংস্করণ ও তার পরের সংস্করণের
কোড এক নয়। আবার বিজয়ের কোড ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা
আসকি কোড এক নয়। বাংলাদেশে আসকি কোডের মান
কার্যত বিজয়। কিন্তু সেটিরও দুটি ভিন্নতা মনে রাখতে হবে।
বিজয় ২০০৩ ও তার পরের বিজয়-এর কোডের পরিবর্তনটা
বুঝতে হবে। বর্তমানে কনভার্টার ব্যবহার করে এসব সমস্যার
সমাধান করা যায়। তবে প্রস্তাবিত এই টুলটির সহায়তায় সব
ফন্টকেই যাতে পাঠযোগ্য করা যায় এবং জটিলতা তৈরি না
হয় সেই আশাবাদ আমাদের রয়েছে।
৭) সিএলডিআর : ইউনিকোড কর্তৃপক্ষ বিশ্বের ভাষাসমূহের
কমন লোকাল ডাটা রিপজিটরি গড়ে তুলে থাকে। প্রতিটি
ভাষা এজন্য ইউনিকোড কর্তৃপক্ষকে সিএলডিআর তৈরি
করে জমা দিয়ে থাকে। বাংলায় এমন কিছু তৈরি করা হয়নি
বা জমা দেয়া হয়নি। প্রকল্পে সিএলডিআর তৈরি করে তা
ইউনিকোড কর্তৃপক্ষকে জমা দেবার কথা বলা হয়েছে।
ইউনিকোড কর্তৃপক্ষের সাথে শুধু সিএলডিআরই যুক্ত নয়।
ইউনিকোডের মানকে বাংলার মানে পরিণত করার জন্য
অনেক গবেষণা করারও প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে দাড়ি
ও দুই দাড়ির ব্যবহার সম্পর্কে অনেক তথ্য যোগাড় করতে
হবে। অন্যদিকে ইউনিকোডে বাংলা রেন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে
দেবনাগরীকে অনুসরণ করার প্রবণতা রোধ করার জন্য
বাংলার ব্যবহারকে গবেষণা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
৮) বাংলা ব্যাকরণ ও বানান শুদ্ধিকরণ : যারা ইংরেজ চর্চা করেন
তারা জানেন যে শব্দ ও বাক্যকে শুদ্ধ করে উপস্থাপন করার
জন্য কমúিউটার দারুণভাবে ব্যবহারকারীকে সহায়তা করে
থাকে। স্পেল বা গ্রামার চেকার এজন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত
একটি টুল। কিন্তু বাংলায় আমরা সেই সুযোগটা পাইনা।
ব্যাকরণ বা বানান শুদ্ধ করার উপযুক্ত সমাধান এখনও
আমাদের হাতে নেই। প্রকল্পে সেজন্য বাংলা বানান ও
ব্যাকরণ শুদ্ধিকরণ উন্নয়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
৯) যান্ত্রিক অনুবাদ : বাংলা ভাষায় উচ্চতর লেখাপড়া না
করার বা বাংলাকে সর্বত্র প্রচলন করার বিষয়ে সবচেয়ে বড়
সমস্যাটির নাম অনুবাদ। প্রকল্পে এমন টুলস ব উন্নয়নের
কথা বলা হয়েছে যার সহায়তায় বাংলার সাথে দুনিয়ার অন্য
ভাষাগুলোতে রূপান্তরের বহুমুখী কাজটি সম্পন্ন করা যাবে।
বর্তমানে গুগলের অনুবাদক সফটওয়্যার রয়েছে। তবে সেটি
মারাত্মকভাবে ত্রæটিপূর্ণ। প্রকল্পের আওতায় একটি ত্রæটিহীন
সফটওয়্যার উদ্ভাবন করা হলে আমরা বাংলা ভাষার এক
নতুন দিগন্তে প্রবেশ করব। যেমনি করে বাংলা সাহিত্য
দুনিয়ার অন্য ভাষায় অনুবাদ হবে তেমনি করে দুনিয়ার অন্য
ভাষাসমূহের সম্পদ আমরা বাংলায় পেতে পারবো।
১০) স্ক্রিন রিডার : আমরা সাধারণ মানুষ চোখে দেখি বলে
পড়তেও পারি। কিন্তু ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য দৃশ্যমান
মানুষকে সাউন্ডে এবং বিবরণের মাধ্যমে প্রকাশ করে দিতে
হয়। কমúিউটারের পর্দাকে পাঠ করার এই ব্যবস্থা ইংরেজিতে
রয়েছে। বাংলাতেও এই ব্যবস্থা প্রচলন করার জন্য এই
প্রকল্পে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই টুলটি বিশেষত আমাদের
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষদেরকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে।
১১) প্রতিবন্ধীদের সফটওয়্যার \ ডিজিটাল বাংলা ইশারা ভাষা :
প্রকল্পে প্রতিবন্ধীরা যাতে তথ্যপ্রযুক্তিতে আরও সহজে বাংলা
ব্যবহার করতে পারে তার জন্য আরও কিছু সফটওয়্যার
উন্নয়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে শুধু
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার নয়,
অটিস্টিক মানুষদের জন্য আরও ভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার
তৈরি করতে হবে। যদিও এই টুলগুলোকে সরাসরি চিহ্নিত
করা হয়নি তথাপি আমরা যারা কথা বলতে পারে না তাদের
জন্য ডিজিটাল ইশারা ভাষা উন্নয়ন করতে পারি। ইশারা
ভাষার প্রমিতকরণ একটি বড় কাজ হতে পারে। অন্যদিকে
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এমন সব যন্ত্র উদ্ভাবন করতে পারি যা
তাদের জীবন-যাপন বা চলার পথে বাংলা ভাষায় তথ্য-উপাত্ত
বা নির্দেশনা দিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সাদা ছড়ি
বা অন্যান্য ধরনের যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের বিষয়ে ভাবা যেতে
১৩ কমপিউটার জগৎ ফেব্রæয়ারি ২০২১
পারে। আমার জানা মতে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব
ডিজ্যাবিলিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইশারা ভাষা নিয়ে কাজ
করছে। তাদের ভিডিওর ওপর ভিত্তি করে বিজয় ডিজিটাল
বিজয় ইশারা ভাষা নামে ৬টি টুল তৈরি করেছে। ইশারা
ভাষার একটি প্রমিত মানও তৈরি করার কথা।
১২) বাংলা আবেগ বিশ্লেষণ সফটওয়্যার উন্নয়ন : এই প্রকল্পে বাংলা
ভাষার আবেগ বিশ্লেষণ করার সফটওয়্যার উন্নয়নের প্রস্তাবনা
রয়েছে। আমি নিজে অবশ্যই বুঝি না কাজটির মূল লক্ষ্য কী?
তবে এটি বুঝতে পারি যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে ভাষা
ব্যবহারকারীদের আবেগ ব্যাখ্যা করার জন্য টুল তৈরি করা এই
প্রকল্পের একটি লক্ষ্য হতে পারে। এই বিষয়ে বাংলা ভাষার
জন্য কেউ কাজ করেছে তেমনটা আমার জানা নেই।
১৩) বহুভাষিক সার্ভিস প্লাটফরম : বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং টুল
গড়ে তুলে তার সহায়তায় বহুভাষিক উপাত্ত ব্যবহারের জন্য
টুল তৈরি করা হবে এই প্রকল্পের অধীনে। বাংলা ভাষার জন্য
এরকম কোনো কাজ কেউ করেছে বলেও আমি জানি না।
১৪) সাইট অনুবাদ : সরকারের ডিজিটাল রূপান্তরের একটি
প্রবণতা হচ্ছে রোমান হরফে বা ইংরেজিতে ওয়েবসাইট
তৈরি করা। সেইসব সাইটকে বাংলায় রূপান্তর করা
দরকার। এছাড়া বাংলার জ্ঞানভাÐারকে সমৃদ্ধ করার জন্য
বহুল ব্যবহৃত ওয়েবসাইটকে বাংলায় অনুবাদ করা হবে এই
প্রকল্পের আওতায়।
১৫) উপজাতীয় কীবোর্ড : এই প্রকল্পের আওতায় উপজাতীয়
ভাষাসমূহের জন্য প্রমিত কীবোর্ড গড়ে তোলা হবে। বাংলার
জন্য প্রমিত করা কীবোর্ডের ভিত্তিতে বাংলাদেশে প্রচলিত
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাসমূহের কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং
ফন্ট তৈরি করা যেতে পারে। এই প্রকল্পে এমন টুল তৈরি
করা যেতে পারে যার সহায়তায় উপজাতীয়রা তাদের মাতৃ
ভাষার সাথে বাংলাকে সংযুক্ত করতে পারে। উপজাতীয়
ভাষা থেকে বাংলায় এবং বাংলা থেকে উপজাতীয় ভাষায়
যান্ত্রিক অনুবাদও এর আওতায় আসতে পারে। উপজাতীয়
ভাষাসমূহের জন্য ফন্ট ডিজাইন, বানান শুদ্ধিকরণসহ অন্যান্য
প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করা যেতে পারে।
১৬) ধ্বনিতাত্তি¡ক ফন্ট : বিশ্বের মান অনুসরণ করে বাংলার
ধ্বনিতাত্তি¡ক ফন্ট তৈরি করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
যদিও বাংলায় এ ধরনের ফন্টের কাজ কিছুটা হয়েছে তথাপি
এটিকে আরও উন্নত করার জন্য প্রচুর কাজ করতে হবে।
এই টুলগুলোর কথা বলা হলেও বস্তুত আরও অনেক বিষয়ের
সাথে যুক্ত হতে পারে এবং আমরা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করতে পারি।
এখন প্রযুক্তি আমাদের জন্য সুসময় নিয়ে এসেছে। আজকের
দিনে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে রোমান বা ইংরেজি ছাড়া
অন্য ভাষাসমূহকেও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দিতে পারি। আমরা চাইলেই
আমাদের নিজেদের সন্তানদের দিয়েই বাংলা ভাষার উন্নয়নে অনেক
প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরি করতে পারব। আমি প্রকল্পটি গ্রহণ করার
পর নানাভাবে নানা স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করে দেখেছি যে
তারা অনেকেই নিজেদের মতো করে অনেক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।
অনেকে এসব প্রযুক্তি প্রকাশ করতে পারেননি বা তাদের কাজ তারা
শেষ করতে পারেননি। এই প্রকল্পের একটি বড় সার্থকতা হতে পারে
যে এই স্বেচ্ছাসেবী জনগোষ্ঠীকে সমন্বিতভাবে বাংলা ভাষার উন্নয়নে
কাজে লাগাতে পারি। আমি লক্ষ করেছি যে শুধু বাংলাদেশ নয়,
ভারতের পশ্চিমবঙ্গও বাংলা ভাষার উন্নয়নে কাজ করছে। এই প্রকল্পের
কাজের সময় তাদের কাজগুলোর কথাও মাথায় রাখা যেতে পারে।
আমি একটি কাজের বিবরণ পেলাম যেট আমাদের কাজগুলোর সাথে
সমন্বিত হতে পারে। খড়গপুরের আইআইটি বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরির
জন্য দুই বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমাদের
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ও পিপীলিকা নামে একটি বাংলা সার্চ ইঞ্জিন
তৈরি করেছে। দুটিকে সমন্বিতও করা যেতে পারে।
সূত্র : যƩ ঢ়://িি.িবঢ়ধঢ়বৎ.বরংধসধু.পড়স/উবঃধরষং.
ধংঢ়ী?রফ=৩১০৯৪্নড়ীরফ=১৫৪৪৬৪১৯
এই প্রকল্পটি গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ দেবার পাশাপাশি আমি
মনে করি যে এটি বাস্তবায়ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা
দিয়েছে। এতোদিন আমাদের শঙ্কা ছিল যে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা
ভাষার উন্নয়নে অর্থের সংস্থান হবে কেমন করে। এখন সম্ভবত সেই
ভাবনাটি আমাদেরকে ভাবতে হচ্ছে যে, এই কাজগুলো সম্পন্ন হবে
কেমন করে। বাংলার ভাষা বিজ্ঞানী ও তথ্যপ্রযুক্তি বিজ্ঞানী উভয়ের
সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা এই প্রকল্পের সফলতা কামনা করি। ভাষার
জন্য রক্ত দেয়া জাতি হিসেবে আমরা কোনোভাবেই এটি সফল হবার
ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারি না। আশা করি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ প্রকল্পটিকে
অন্য দশটি প্রকল্পের মতো বিবেচনা করবেন না। আমি অপ্রিয় হলেও
এই কথাটি বলতে চাই যে অতীতে বাংলা ভাষা নিয়ে যারা কাজ
করেছেন তারা সমন্বিতভাবে সেটি করেননি। যারা কাজ করিয়েছেন
তারাও সমন্বিতভাবে কাজটি করাননি। একই কাজ বহুজনে করেছেন।
বস্তুত বারবার চাকা আবিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলা ভাষার এই টুলগুলো উন্নয়ন
করার জন্য আমাদের সক্ষমতা কী হতে পারে তার অনুসন্ধান করতে
গিয়ে দেখেছি যে বাংলা নিয়ে কাজ শুধু আমাদেরই করার বিষয় নয়।
এরই মাঝে অ্যাপল, মাইক্রোসফট, গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান
বাংলা নিয়ে কাজ করছে। তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সন্দেহাতীত
বলেই তাদের উন্নয়ন করা প্রযুক্তিগুলো যদি সরকার সংগ্রহ করতে পারে
তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রকল্পটিতে সহায়তা পাওয়া যাবে। তবে
এসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসার বিষয়টি ঠিক রেখে এবং
অন্যদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে প্রতিযোগিতার কোন স্তরে দেখবেন
তার ওপরে নির্ভর করবে যে তারা এই প্রকল্পে কতোটা সহায়তা
করবে। তবে তাদের কর্মকাÐ থেকে এই কথাটি খুব সহজেই বলা
যায় যে বাংলা ভাষাভাষী বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতি এই সব বাণিজ্যিক
প্রতিষ্ঠানগুলোরও নজর পড়েছে। তারাও চাইছে তাদের প্রযুক্তিতে যেন
বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ হয়।
আমরা এটাও জানি যে এটুআইয়ের সহায়তায় ইউনাইটেড
বিশ্ববিদ্যালয়, আইআরডিসির সহায়তায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং
সরকারের সহায়তায় টিম ইঞ্জিন ওসিআর ও অন্যান্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ
করেছে। এরই মাঝে আমি আরও অনেককে এসব প্রযুক্তি নিয়ে কাজ
করছেন বলে দাবি করতে জেনে আসছি। আমি আশা করবো তারা
সবাই মিলে বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বিষয়টি ইংরেজির
সমকক্ষ স্তরে উন্নীত করতে পারবেন।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আলোচিত প্রকল্পের আওতায় মোট ষোলটি
টুলসের কথা বলা হলেও বস্তুত এর পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। কারণ
প্রতিবন্ধী বা উপজাতীয় উভয় শ্রেণিতেই একাধিক টুল উন্নয়ন করার
১৪ কমপিউটার জগৎ ফেব্রæয়ারি ২০২১
প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আবার বাংলার জন্য উন্নয়ন করা টুলগুলোর
বেশ কটি উপজাতীয় ভাষার জন্যও করা যেতে পারে। এই টুলগুলো
কয়েকটি হয়তো প্রথাগতÑ তবে অনেকগুলোতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা
বিগ ডাটা বিশ্লেষণের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের অবস্থা
সরকারের এই প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা যা ইমি জানি তা হচ্ছে
যে ড. জিয়া উদ্দিন আহমদ নামের একজনকে এই প্রকল্পের পরিচালক
পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিছুদিনের মাঝেই তিনি বদলি হয়ে
যান এবং বিসিসির গোলাম সারোয়ার পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন
করছিলেন। এরপর জিয়া উদ্দিন সাহেব আবার প্রকল্প পরিচালক হন।
তবে এখন সম্ভবত তার বদলে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করছেন।
ইতোমধ্যেই প্রকল্পের জনবল ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
গত ৮ জুন ’১৭ সকাল ১১টায় বাংলাদেশ কমúিউটার কাউন্সিলের
সভাকক্ষে এই প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রথম সভা কমúিউটার
কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকারের সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতি এবং আমি তো উপস্থিত ছিলামই
আরও উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের
ড. জিনাত ইমতিয়াজ আলী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের
(সাবেক) প্রতিনিধি সুশান্ত কুমার সরকার, বুয়েটের প্রতিনিধি মো.
মনিরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির প্রতিনিধি অপরেশ কুমার ব্যানার্জি
ও প্রকল্প পরিচালক নিজে। প্রকল্পের তখনকার অবস্থা সম্পর্কে সভার
কার্যপত্রে বলা হয়Ñ ইতোমধ্যে প্রকল্পের নিম্নবর্ণিত কার্যক্রম সম্পন্ন
হয়েছে। ক) প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির বরাদ্দ পাওয়া
গেছে। খ) সরাসরি পদ্ধতিতে ২ জন অফিস সহকারী কাম কমúিউটার
অপারেটর এবং ১ জন হিসাবরক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। গ) ৭টি
পদে কনসালট্যান্ট নিয়োগের মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। ৭টি পদে প্রাক
চুক্তি নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ঘ) মূলধন খাতে আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।
যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। ঙ) গত ১৫ মে ২০১৭
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চ) গত ২৪ মে
২০১৭ তারিখে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় এটি জানানো হয় যে, প্রকল্পটিকে ৪ ফেব্রæয়ারি ১৭
প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৮ জুনের সভায় সফটওয়্যারের
স্পেসিফিকেশন ও মূল্যমান নিরূপণের দুটি আলোচ্যসূচি থাকলেও বস্তুত
একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে প্রকল্পের টুলগুলো সম্পর্কে আরও
বিস্তারিত জানার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১১ জুনের মাঝে কমিটির
সদস্য কারা হবেন তার নামগুলো বিশেষজ্ঞরা দেবেন বলেও সিদ্ধান্ত
হয়। তবে সভার পর কমিটির সদস্যরা মতামত প্রকাশ করেন যে, এই
বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে যাতে সংশ্লিষ্টরা
অংশ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় ড. জাফর ইকবাল, ড.
জীনাত ইমতিয়াজ আলীসহ আমরা সবাই এই প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য
সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আমরা এই প্রকল্পটির
সফলতার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তি বাংলা ভাষার এক নতুন সম্ভানাকে দেখতে
পেলাম। বিশ্বের অন্য ভাষাগুলোর তুলনায় আমাদের ভাষার প্রযুক্তিগত
সমৃদ্ধিকরণ আদৌ না হবার ফলে এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে একমাত্র সুযোগ,
যার ভিত্তিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সারা বিশ্ব জয় করবে।
২৪ জুন ১৭ আয়োজিত কর্মশালাটি বস্তুত জনসমক্ষে প্রকল্পটির
প্রথম আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টায় নিবন্ধনের
সূচনা হয়ে কর্মশালাটি বেলা ২-২৩ মিনিটে সমাপ্ত হয়। কর্মশালার
মোট তিনটি পর্ব ছিল। প্রথম পর্বটি উদ্বোধনী। এতে সভাপতিত্ব করেন
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব সুশান্ত
কুমার সাহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি কাজী রোজী এমপি। সূচনা
পর্বে প্রকল্প পরিচালক ড. জিয়া উদ্দিন আহমদ স্বাগত ভাষণ প্রদান
করেন এবং প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। কর্মশালাটি মুনীর
হাসান সমন্বয় করেন। দুটি কারিগরি অধিবেশনের প্রথমটি শাহজালাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল সঞ্চালনা করেন। দ্বিতীয়টি
সঞ্চালনা করি আমি নিজে। প্রথমটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন
চৌধুরী মফিজুর রহমান এবং সৈয়দ আশরাফ আহমদ। দ্বিতীয়টিতে মূল
প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রফেসর দানিউল হক ও সামির ইসলাম। কর্মশালায়
যেসব প্রস্তাবনা পেশ করা হয় তার মূল সুরটা ছিল শুধু বাংলাদেশ নয়
সারা দুনিয়াতে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা নিয়ে যিনি বা যারাই কাজ
করেছেন তাদের সবার কাজকে বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত করে কাজ
করা উচিত। সবাই এটি স্বীকার করেন যে এই প্রকল্পটি চ্যালেঞ্জিং।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিও প্রত্যাশা করেন সবাই।
প্রকল্পটি যে বাস্তবায়নের পথে তার আরও একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে যে, গত
৪ আগস্ট ’১৭ দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালের কণ্ঠ
ও দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় প্রকল্পের চারটি টুল ১) আইপিএ
ফন্ট-সফটওয়্যার, ২) জাতীয় কীবোর্ড-সফটওয়্যার, ৩) ব্যাকরণ ও
বানান শুদ্ধিকরণ এবং ৪) স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যার উন্নয়নের জন্য
টেন্ডার আহŸান করা হয়েছে।
অন্যদিকে ১০ আগস্ট ’১৭ সকাল ১১টায় প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ
কমিটির একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি
ছাড়াও যেসব ইওআই প্রকাশ করা হয়েছে সেই বিষয়ে আলোচনা
করা হয়। সভায় আমেরিকান কোম্পানি নোয়ান্সের পক্ষ থেকে বাংলা
কীবোর্ড ও প্রাসঙ্গিক কাজের জন্য দেয়া প্রস্তাব নাকচ করা হয়।
সভায় ইওআই প্রকাশের আগে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত নেবার
বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। সভার অন্য এক সিদ্ধান্তে প্রকাশিত ইওআইয়ের
সংশোধন করার ও ইওআই গ্রহণের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত
হয়। অন্যদিকে ১৩ আগস্ট ’১৭ আহŸান করা ইওআইয়ের প্রিবিড
সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সংশোধনী ও সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করা হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর ’১৭ প্রথম চারটি টুলের ইওআই
জমা দেবার সময় নির্ধারিত ছিল। ২০১৮ সালের মে মাসে এই প্রকল্প
একটি চলমান গতি পেয়েছে। সবকটি টুলের ইওআই প্রকাশ করা
ছাড়াও বেশ কটি টুলের আরএফপি জমা, মূল্যায়ন ও অন্যান্য কাজ
চলমান রয়েছে। তবে ’২১ সালের শুরুতেও সব টুল ডেভেলপ করার
কাজ শুরু হয়নি, কয়েকটার টেন্ডার হয়েছে ও কাজ শুরু হয়েছে। তবে
কোনোটার কাজই শেষ হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ
প্রকল্পটির কাজ সফলতার সাথে শেষ করবে ও বাংলা ভাষার ডিজিটাল
যাত্রার ঐতিহাসিক অধ্যায়টির সূচনা করবে।
চ্যালেঞ্জ
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রকল্পটি সফলতার সাথে শেষ হবে সেই
প্রত্যাশায় থেকেও আমি ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীদের
যে চ্যালেঞ্জটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি সেটি হচ্ছে যে আমরা
ডিজিটাল যন্ত্রে বাংলা লেখাটাই শিখি না। এমনকি মানসিকভাবে বাংলা
ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত নই। কাজটি শৈশব থেকেই যাতে শুরু করা
যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে