লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
নিজস্ব প্রতিবেদক
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল সিস্টেম
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
খন্দকার হাসান শাহরিয়ার
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; প্রতিষ্ঠাতা,
অ্যাডভোকেট হাসান অ্যান্ড
অ্যাসোসিয়েটস; ভাইস চেয়ারম্যান,
কমপ্লেইন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড
লিগ্যাল ইস্যু স্ট্যান্ডিং কমিটি, ই-ক্যাব
বর্তমানে দেশে আলোচিত একটি ইস্যু হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইন। এই আইনের অধীনে করা মামলার বিচার হয় সাইবার
ট্রাইব্যুনালে। বাংলাদেশে প্রথমে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং
ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন,
বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে তথ্য ও
যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (২০০৬ সালের ৩৯ নং আইন) করা
হয়। পরবর্তীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর বেশ
কিছু ধারা বাতিল করে নতুন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮
(২০১৮ সালের ৪৬ নং আইন) করা হয়।
তিনটি মামলা নিয়ে ২০১৩ সালের
ফেব্রæয়ারি মাসে ঢাকায় জজকোর্টে
বাংলাদেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনালের
যাত্রা শুরু হয়। ২০০৬ সালের তথ্য ও
যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন অনুযায়ী
এই ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়। প্রথমে
আইসিটি আইনের অধীনে করা মামলার
বিচারের জন্য এই ট্রাইব্যুনাল হলেও পুরো
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের
মামলারও বিচার হয় এই ট্রাইব্যুনালে।
বর্তমানে এই একটি ট্রাইব্যুনালেই এ দুটি
আইনের অধীনে করা প্রায় তিন হাজার মামলা
মামলার পরিসংখ্যান
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে ২০১৩ সালে ৩টি
মামলা, ২০১৪ সালে ৩৩টি মামলা, ২০১৫ সালে ১৫২টি মামলা,
২০১৬ সালে ২৩৩টি মামলা, ২০১৭ সালে ৫৬৮টি মামলা দায়ের করা হয়।
২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার পর থেকে এ
আইনের অধীনে দিনে দিনে মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডিজিটাল
নিরাপত্তা আইনটি পাস হওয়ার পর ২০১৮ সালে ৬৭৬টি মামলায়
আসামির সংখ্যা ছিল ৪৭৪ জন, ২০১৯ সালে ৭২১টি মামলায় আসামি
করা হয় ১ হাজার ১৭৫ জনকে, ২০২০ সালে ৫৭১টি মামলায় আসামি
করা হয়েছে ২ হাজার ৩২৯ জনকে এবং মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ৪৩২টি
মামলা হয়েছে বলে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের পদ্ধতি
কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে অনুমতি
ব্যতীত ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে প্রচার করা, আক্রমণাত্মক,
মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, মানহানিকর তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ বা প্রকাশ
করা, সাইবার অপরাধ করতে সহায়তা ও প্রলুব্ধ করাজনিত বিষয়েই
সবচেয়ে বেশি সাইবার মামলা হয়ে থাকে। যদি এসব ঘটনা সংঘটিত
হয় তাহলে প্রথমে সেটির প্রিন্ট কপি এবং ভিডিও কপি ল্যাপটপ
বা পিসিতে ডাউনলোড করতে হবে। ফেসবুকের ক্ষেত্রে ফেসবুক
পোস্টকারীর আইডি বা পেজ লিংকসহ embed ক্লিক করে Embedded ওপেন করে Code Generator অংশ থেকে ফেসবুক পোস্টের
URL of post লিংকটি কপি করে রাখতে হবে এবং তারপর A4 সাইজ
কাগজে প্রিন্ট (সম্ভব হলে রঙিন প্রিন্ট) করতে হবে।
এরপর সব ডকুমেন্ট এবং নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিকটস্থ
থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। পরবর্তীতে
একজন আইনজীবীর সহযোগিতা নিয়ে জিডির কপি এবং প্রয়োজনীয়
সাক্ষ্য-প্রমাণসহ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে হবে।
সাইবার ট্রাইব্যুনাল বাদীর সাক্ষ্য নিয়ে এবং জিডি ও সাক্ষ্য-প্রমাণ
দেখে সন্তুষ্ট হলে থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ
দেবে। সিআইডি/ডিবি/পিবিআইয়ের সহায়তায় ডিজিটাল ফরেনসিক
প্রতিবেদন পাওয়ার পর চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করবেন। থানা থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার
পর বিজ্ঞ আদালত আসামি গ্রেফতারের জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে।
আসামি গ্রেফতার হওয়ার পর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকার্য
শুরু হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুসারে, সাইবার অপরাধবিষয়ক সব
মামলা সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে
১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে
কোনো মামলা নিষ্পত্তি করা না যায় তাহলে সাইবার ট্রাইব্যুনাল সেই
কারণ লিপিবদ্ধ করে উক্ত সময়সীমা সর্বোচ্চ ৯০ কার্যদিবস বৃদ্ধি করতে
পারবে। এরপরও ট্রাইব্যুনালের বিচারক কোনো মামলা নিষ্পত্তি করতে
ব্যর্থ হলে, সেই কারণ লিপিবদ্ধ করে বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে
হাইকোর্ট বিভাগকে অবহিত করে সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলার কার্যক্রম
পরিচালনা অব্যাহত রাখতে পারবেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপট
সাইবার মামলার জন্য দেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেকোনো বিচারপ্রার্থীকে
এখন ঢাকার একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনালে
আসতে হয়। তবে এই দুর্ভোগ কমাতে
সরকার প্রায় দু’বছর আগে সাতটি
বিভাগীয় শহরে আরও সাতটি সাইবার
ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের যাবতীয় কার্যক্রম
শেষ করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে
পাঁচটি বিভাগীয় শহরে স্থাপিত সাইবার
ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তবে বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে বরিশাল
ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে সাইবার
ট্রাইব্যুনালের জন্য কোনো বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়নি। নতুন পাঁচটি
সাইবার ট্রাইব্যুনাল হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ
কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে সাইবার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়লেও এখনো সাইবার
আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়নি। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
বাংলাদেশে বর্তমানে যা করণীয়
সোশ্যাল মিডিয়াতে কী কী অপরাধ হয়, কীভাবে হয় এবং
অপরাধ করলে শাস্তি কী সে ব্যাপারে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করা।
সোশ্যাল মিডিয়াতে মুক্ত মনের ভাব প্রকাশ সুনিশ্চিত করা এবং নতুন আইন প্রণয়ন করা।
অকারণে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত
করা। দ্রæত অভিযোগের তদন্ত করা।
সাইবার আপিল ট্রাইবুন্যাল অতি দ্রæত গঠন করা।
সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির অফিস বাংলাদেশে থাকার ব্যবস্থা করা।
যেসব আইনজীবী দীর্ঘদিন ধরে আইসিটি বিষয় নিয়ে
কাজ করেন, আইসিটি ও ইথিক্যাল হ্যাকিং বিষয়ে যারা
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদেরকে রাষ্ট্রের আইনজীবী এবং বিচারক
হিসেবে সাইবার ট্রাইব্যুনাল ও সাইবার আপিল ট্রাইব্যুনালে
নিয়োগ দেয়া।
পুলিশ, আইনজীবী এবং বিচারকদের ইথিক্যাল হ্যাকিং
বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া।
শুধুমাত্র একটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাইবার ইউনিট
গঠন করা। যারা ফরেনসিক তদন্তে দক্ষ হবে।
কপিরাইট আইন, ট্রেডমার্ক আইন মেনে চলতে জনগণকে
উৎসাহিত করা এবং এর সুফল প্রচার করা।
সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার
জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট কিংবা জন্মনিবন্ধন
ব্যবহার করা প্রয়োজন।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে বাবা
বা মায়ের অনুমোদন চালু করা উচিত।
একজন ব্যক্তি একটির বেশি ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
ব্যবহার করতে পারবে না, এমন নিয়ম চালু করা প্রয়োজন।
পুরুষ, নারী, শিশু ও তৃতীয় লিঙ্গ সবার জন্য একটি সাইবার
সাপোর্ট সেন্টার চালু করা।
আইন সংশোধন করে জামিন অযোগ্য ধারাগুলো
জামিনযোগ্য করা এবং শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে আনা।
২০১৮-এর ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪,
২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারার
সব অপরাধ জামিন অযোগ্য। তবে ২০,
২৫, ২৯ এবং ৪৮ ধারার সব অপরাধ
জামিনযোগ্য।
এর ফলে সাইবার ট্রাইব্যুনালের
রায় বা আদেশে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে
তাকে হাইকোর্টে আবেদন করতে হচ্ছে।
তবে এ ক্ষেত্রে রয়েছে নানা সমস্যা।
আইনে সাইবার আপিল ট্রাইব্যুনালের
তিন সদস্যের মধ্যে একজন আইটি
বিশেষজ্ঞ থাকবেন বলে বলা হয়েছে।
কিন্তু হাইকোর্টের বিচারপতিরা আইটি
বিশেষজ্ঞ নন। এ কারণে নানা সংকট দেখা যাচ্ছে। এছাড়া নতুন
পাঁচটি ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে মামলা নিষ্পত্তিতে গতি
আসবে। তখন ট্রাইব্যুনালের রায়ে সংক্ষুব্ধ বিচারপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
এ কারণে আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। তাই এখন
আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন প্রয়োজন জরুরি। যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল
হক বলেছেন, ‘সাইবার ট্রাইব্যুনাল হয়েছে, এখন আপিল ট্রাইব্যুনালও
হবে।’
নতুন পাঁচ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক
পাঁচ বিভাগীয় শহরের সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোতে জেলা ও দায়রা
জজ পদমর্যাদার পাঁচজন বিচারককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি
এসব জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থেকে
পদোন্নতি পেয়েছেন। পাঁচ ট্রাইব্যুনালে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেনÑ রংপুরের
সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ পেয়েছেন মো: আব্দুল মজিদ। তিনি
এর আগে ঠাকুরগাঁওয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। খুলনার
সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম কনিকা বিশ্বাস। এর
আগে তিনি খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। সিলেটের
সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ পেয়েছেন মো: আবুল কাশেম। এর আগে
তিনি সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। রাজশাহীর
সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ পেয়েছেন মো: জিয়াউর রহমান। এর
আগে তিনি মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। চট্টগ্রামের
সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ পেয়েছেন এস কে এম তোফায়েল হাসান।
এর আগে তিনি ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন।
কবে থেকে কার্যক্রম শুরু
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে এসব ট্রাইব্যুনাল গঠিত
হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে মামলা
স্থানান্তর করতে হলে সরকারকে একটি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করতে
হবে। কারণ, ২০০৬ সালের এই আইনের ৬৮ ধারার ৪ উপধারায়
বলা আছে, ‘সরকার কর্তৃক পরবর্তীতে গঠিত কোনো ট্রাইব্যুনালকে
সমগ্র বাংলাদেশের অথবা এক বা একাধিক দায়রা বিভাগের সমন্বয়ে
গঠিত উহার অংশবিশেষের স্থানীয় অধিক্ষেত্রে ন্যস্ত করিবার কারণে
ইতঃপূর্বে কোনো দায়রা আদালতে এই আইনের অধীন নিষ্পন্নাধীন
মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত, বা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় অধিক্ষেত্রের
ট্রাইব্যুনালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বদলি হইবে না, তবে সরকার, সরকারি
গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দায়রা আদালতে নিষ্পন্নাধীন এই আইনের
অধীন কোনো মামলা বিশেষ স্থানীয় অধিক্ষেত্রসম্পন্ন ট্রাইব্যুনালে বদলি
করিতে পারিবে।’
এই ধারা অনুযায়ী মামলা নতুন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের পর একই
ধারার ৫ উপধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে যে সাক্ষ্য গ্রহণ বা
উপস্থাপন করা হয়েছে উক্ত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কার্যকর করতে এবং
মামলা যে পর্যায়ে ছিল সেই পর্যায় হতে বিচারকার্য অব্যাহত রাখতে
পারবে। আইনের এই বিধানের কারণে বর্তমান সরকার বিগত ৪ এপ্রিল
২০২১ ইং তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল
থেকে নতুন ট্রাইব্যুনালগুলোতে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা স্থানান্তর
করার নির্দেশনা দিয়েছে।
সাইবার আপিল ট্রাইব্যুনাল হয়নি
২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে ২০১৩
সালে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও আইন অনুযায়ী এখনো
সাইবার আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়নি। সাইবার ট্রাইব্যুনালের
মামলায় সংক্ষুব্ধ হলে বিচারপ্রার্থীকে ভরসা করতে হচ্ছে হাইকোর্টের
ওপর। ২০১৭ সালে ফরিদপুরের একটি মামলায় পুলিশের দেয়া
ফাইনাল রিপোর্টে (চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন) বাদীপক্ষ সংক্ষুব্ধ হয়। তাদের
নারাজি আবেদন খারিজ হয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে। আপিল ট্রাইব্যুনাল
না থাকায় ন্যায়বিচার পেতে একমাত্র হাইকোর্টে যাওয়ার পথই তাদের
জন্য খোলা ছিল। পরে তারা হাইকোর্টে ফৌজদারি রিভিশন আবেদন
করেন। এক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থীর ব্যয় ও দুর্ভোগ দুটোই বেশি। কিন্তু
আপিল ট্রাইব্যুনাল থাকলে এই দুর্ভোগ কম হতো।
আইসিটি আইনের তৃতীয় অংশে সাইবার আপিল ট্রাইব্যুনাল
গঠনের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। আইনের ৮২ (১) উপধারায় বলা
হয়েছে, ‘সরকার প্রজ্ঞাপন দ্বারা এক বা একাধিক সাইবার আপিল
ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। দফা (২)-এ বলা হয়েছে, আপিল
ট্রাইব্যুনালে সরকার নিযুক্ত একজন চেয়ারম্যান এবং দুজন সদস্যকে
নিয়ে গঠিত হবে। (৩) দফায় বলা হয়েছে, আপিল ট্রাইব্যুনালের
চেয়ারম্যান এমন একজন ব্যক্তি হবেন যিনি সুপ্রিমকোর্টের বিচারক
ছিলেন বা বিচারক নিযুক্তের যোগ্য এবং সদস্য হবেন যিনি বিচার
বিভাগের কর্মকর্তা অথবা অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ বা অন্যজন হবেন
আইসিটি বিষয়ে নির্ধারিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ। তাদের মেয়াদ
হবে অন্যূন তিন বছর এবং অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর।
বর্তমানে দুটি আইনের অধীনে করা তিন হাজারের অধিক মামলা
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে
ট্রাইব্যুনাল হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০-৬০টি মামলায় হাইকোর্টে
আবেদন হয়েছে। এই পরিমাণ মামলার জন্য একটি আপিল ট্রাইব্যুনাল
গঠনের প্রয়োজনীয়তা ছিল। তবে এখন যেহেতু সাইবার ট্রাইব্যুনালের
সংখ্যা বেড়েছে, মামলার নিষ্পত্তি বাড়বে। ‘সাইবার ট্রাইব্যুনাল যে
আইনে কাজ করছে সে আইনেই আপিল ট্রাইব্যুনাল করার কথা
বলা রয়েছে। একটি গঠন হলেও অপরটি করা হয়নি।’ ফলে কেউ
ট্রাইব্যুনালের আদেশ বা রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে তারা যাবেন কোথায়? উচ্চ
আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে কিন্তু আইনে আপিল ট্রাইব্যুনালের
একজন সদস্য আইটি বিশেষজ্ঞ থাকবেন বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু
হাইকোর্টের বিচারপতিরা আইটি বিশেষজ্ঞ নন। ফলে আইটি বিষয়ে
বিশেষজ্ঞ না হওয়ায় বিচারের সময় নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ
কারণে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি।
সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে বিশ^ পরিস্থিতি
কানাডা : কানাডা সরকার ইতোমধ্যেই কোনো অনলাইন
প্ল্যাটফরমে ‘অবৈধ’ কিছু পোস্ট করলে পুলিশ সরাসরি তাদের
আইনের আওতায় আনতে পারবে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম তাদের
পরিচিতি পুলিশকে দিতে বাধ্য থাকবেÑ এমন একটি আইন প্রায় চ‚ড়ান্ত
করে ফেলেছে।
জার্মানি : জার্মানিতে ২০১৮ সালের শুরু থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার
ব্যাপারে নতুন আইন কার্যকর হয়। আইনে বলা আছে, সোশ্যাল
মিডিয়ার কোনো কনটেন্ট সম্পর্কে কোনো অভিযোগ আসার ২৪ ঘণ্টার
মধ্যে তা তদন্ত এবং পর্যালোচনা করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার
কোম্পানিগুলো এর ফলে বাধ্য হয়েছে সেই ব্যবস্থা করতে। কেউ যদি
সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কোনো কনটেন্ট শেয়ার করে যা আইনের
বিরোধী, সেজন্য তাকে ৫০ লাখ ইউরো
পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। অন্যদিকে
সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকে জরিমানা
করা যাবে ৫ কোটি ইউরো পর্যন্ত।
ভারত : ইউটিউব, ফেসবুক,
হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, বাইট
ড্যান্স, টিকটকের মতো অ্যাপে কোনো
পোস্ট সম্পর্কে ভারতীয় গোয়েন্দারা
তথ্য চাইলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তার
উৎস, অর্থাৎ প্রথম কে পোস্ট বা শেয়ার
করেছিল, সেটা জানাতে হবে। সোশ্যাল
মিডিয়া কোম্পানিকে অন্তত ১৮০ দিন
অর্থাৎ ৬ মাসের সব তথ্য রাখতে হবে,
যাতে তদন্তের প্রয়োজনে সেগুলো উদ্ধার
করা যায়। এর পাশাপাশি একজন
অফিসার নিয়োগ করতে হবে, যিনি
ইউজারদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে
ব্যবস্থা নেবেন এবং ভারতের তদন্তকারী
সংস্থাগুলো ও সরকারের সাথে সমন্বয়ের
কাজ করবেন