• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-কমার্সে কেনা-কাটায় আইনগত প্রতিকার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: নিজস্ব প্রতিবেদক
মোট লেখা:১৪৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২১ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ব্যাবসা
তথ্যসূত্র:
ই-কমার্স
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-কমার্সে কেনা-কাটায় আইনগত প্রতিকার
ই-কমার্সে কেনা-কাটায় আইনগত প্রতিকার

খন্দকার হাসান শাহরিয়ার

অগ্রযাত্রায় দেশ ই-কমার্সে বাংলাদেশ’Ñ এই চেতনায় এগিয়ে 
চলেছে বাংলাদেশের ই-কমার্স। বর্তমান সময়ে প্রতিদিনের 
মুদি সামগ্রী থেকে শুরু করে কাপড়, ইলেকট্রনিকস, রান্নাঘরের 
সরঞ্জামাদি, কাপড়, প্রসাধনী, আসবাবপণ্য, বই, ইলেকট্রনিক 
পণ্য, গয়না এমনকি মোটরগাড়িও এখন অনলাইনে কেনা যাচ্ছে। 
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে জনগণ অনেক বেশি ই-কমার্স 
কেনাকাটায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কারণ অনলাইনে কেনাকাটায়
ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। তাই মানুষের সাথে 
মেলামেশা করা বা ভিড় এড়িয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে, এতে করে করোনায় 
আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে না। 
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব 
বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর মাধ্যমে কোরবানির গরুর হাট, আমমেলা 
সফলভাবে অনলাইনে আয়োজনের পাশাপাশি বাজারে দ্রব্যমূল্য 
স্থিতিশীল রাখতে টিসিবির পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, ডাল, ছোলা, চিনি 
বিক্রির কার্যক্রমও হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বিশেষ 
অবদান রাখছে বর্তমানে ই-কমার্স। 
ই-কমার্স যতই জনপ্রিয় হচ্ছে কিছু অসাধু প্রতারকের প্রতারণাও 
তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা অনেকেই হয়ত জানি না আমরা যদি অনলাইনে 
কেনাকাটা করে বা অনলাইন ছাড়াও কেনাকাটা করে প্রতারণার শিকার 
হই, তবে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে পারি। আমাদের সকলের 
আইন সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন 
অনুযায়ী যেসব বিষয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবেÑ (১) পণ্যের গায়ে 
সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য যদি না লেখা থাকে। (২) পণ্যের গায়ে উৎপাদন 
ও মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ না থাকাও অপরাধ। (৩) ভেজাল 
পণ্য ও ওষুধ বিক্রি করা। (৪) ফরমালিনসহ ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে 
খাদ্যপণ্য বিক্রি করা। (৫) ওজনে কম দেওয়া। (৬) রেস্তোরাঁয় বাসিপচা খাবার পরিবেশন করা অপরাধ। (৭) মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে 
প্রতারণা করা। (৮) ক্রেতাদের পণ্যের গুণগত মান, একটি বলে 
অন্যটি দেয়া, দামি ব্র্যান্ডের কথা বলে নকল দেওয়া। (৯) ধারণার 
আরেকটি চটকদার মাধ্যম হলো পণ্যের অভিহিত মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে 
সেই পণ্যে মূল্যছাড়ের ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা করা।
এছাড়া পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, 
জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নির্মাণ, আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও 
স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো 
কাজ করাও অপরাধ।
উপরোক্ত অপরাধ যদি কেউ করে থাকে তবে আইনানুগ ব্যবস্থা 
গ্রহণ করা যাবে। পণ্য কিনে আমরা প্রতারিত হলে (১) দেওয়ানি 
আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা যাবে। (২) প্রতারণার 
অভিযোগে ফৌজদারি আদালতে মামলা করা যাবে। (৩) এছাড়া 
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যাবে। (৪) ১৮৭২ 
সালের কন্ট্রাক্ট আইনে প্রতিকার পাওয়া যাবে। (৫) এছাড়া দ্য সেল 
অব গুডস অ্যাক্টেও প্রতিকার পাওয়া যাবে।
দেওয়ানি আদালতে কী ধরনের প্রতিকার পাওয়া যাবে
অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণার শিকার হলে সংশ্লিষ্ট সাইট 
এবং কী ধরনের প্রতারণার শিকার হলেন তা সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-
প্রমাণ সংগ্রহ করে সেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও 
দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যায়। আদালত অভিযোগ 
যাচাই-বাছাই করবে এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দেবে। যদি 
আদালতে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে আদালত অর্থদР
বা কারাদÐ দিতে পারে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে।
ফৌজদারি আদালতে কী ধরনের প্রতিকার পাওয়া যাবে
কেউ কারও সাথে প্রতারণা বা ঈযবধƟ হম করলে সেই ব্যক্তি 
প্রতারণাকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে ৪২০ ধারায় মামলা 
দায়ের করতে পারবেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনা পণ্য হাতে পাওয়ার 
পর সেটার রসিদ বা ক্যাশমেমো দিয়ে জেলা জজ আদালতে অথবা মুখ্য 
বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করতে হবে। আদালত অভিযোগ 
যাচাই-বাছাই করবে এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দেবে। যদি 
আদালতে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে আদালত অর্থদР
বা কারাদÐ দিতে পারে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে।
ই-ক্যাবেও করা যাবে অভিযোগ
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব 
বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর ওয়েবসাইট যঃঃঢ়://পড়সঢ়ষধরহঃ.বপধন.হবঃ লিংকেও অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হলে বা কোনো 
সমস্যার মুখোমুখি হলে অভিযোগ জানানো যাবে। তবে সেক্ষেত্রে 
অভিযোগকারীকে তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, 
ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে), জাতীয় পরিচয়পত্র 
নম্বর, পেশা উল্লেখ করার পাশাপাশি পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রসিদ এবং 
অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করার প্রমাণাদি সংযুক্ত করে দিতে হবে। 
অভিযোগ পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে বিকল্প বিরোধ 
নিষ্পত্তি পদ্ধতিতে দুই পক্ষের শুনানি শুনে ই-ক্যাবের কমপ্লেইন্ট 
ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লিগ্যাল ইস্যু স্ট্যান্ডিং কমিটি দ্রæততম সময়ে 
অভিযোগ নিষ্পত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ 
করবেন যেভাবে
অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ 
অধিদপ্তরে অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে 
সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ অবশ্যই লিখিত 
হতে হবে। লিখিত অভিযোগটি জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কার্যালয়ে 
২৫ কমপিউটার জগৎ মে ২০২১
ই-কমার্সে কেনা-কাটায় 
আইনগত প্রতিকার
খন্দকার হাসান শাহরিয়ার
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; প্রতিষ্ঠাতা, 
অ্যাডভোকেট হাসান অ্যান্ড 
অ্যাসোসিয়েটস; ভাইস চেয়ারম্যান, 
কমপ্লেইন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড 
লিগ্যাল ইস্যু স্ট্যান্ডিং কমিটি, ই-ক্যাব
আইন-আদালতফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইট ইত্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে করা 
যায়। অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রসিদ সংযুক্ত করে 
দিতে হবে। অভিযোগকারীকে তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, 
ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা 
উল্লেখ করতে হবে।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও 
রংপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের 
বরাবরে অভিযোগ করা যাবে। এছাড়া দেশের সব জেলায় নির্বাহী 
ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অভিযোগ করা যাবে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুইপক্ষের শুনানি শুনে জাতীয় ভোক্তা 
সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে 
জরিমানা প্রদানের আদেশ দেবে। এই আদেশের ফলে জরিমানা 
হিসেবে যেই টাকা আদায় করা হবে তার ২৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত 
ভোক্তাকে দেওয়া হবে।
অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণার আরেকটি প্রলোভনমূলক মাধ্যম 
হলো পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সেই পণ্যে মূল্যছাড়ের ব্যাপকভিত্তিক 
প্রচারণা করা হয়। যার ফলে ক্রেতারা অধিক হারে সেদিকে ঝুঁকে 
৫০ শতাংশ ছাড়ে পণ্য কিনে নিজেকে মনে করে যে আমি জিতেছি, 
কিন্তু আসলে বিষয় এমন নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পণ্যের 
যেই দাম আছে তার চাইতে অনেক বেশি দাম লেখা থাকে। এগুলো 
মূলত ক্রেতাকে ঠকানোর একটি চটকদার কৌশল। ভোক্তা অধিকার 
সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘কোনো ব্যক্তি 
কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা 
ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদР
বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদÐ বা উভয় দÐে দÐিত হইবেন।’ এ 
ছাড়া আইন লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ তিন বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা 
জরিমানাসহ অবৈধ পণ্য ও অবৈধ পণ্য উৎপাদনের উপকরণ বাজেয়াপ্ত 
করার বিধান রয়েছে।
চুক্তি আইনেও আছে প্রতিকার
কন্ট্রাক্ট অ্যাক্ট ১৮৭২ অনুযায়ী চুক্তি হতে হয় দুজনের মধ্যে আর 
যখন কোনো পণ্য ক্রেতা কিনতে চায় এবং বিক্রেতা তা বিক্রি করতে 
চায় তখন দুজনের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়ে যায়। পণ্য নির্দিষ্ট সময় 
পরে বা কোনো শর্ত সাপেক্ষে পণ্যের মালিকানা হস্তান্তর করার চুক্তিকে 
পণ্য বিক্রয় চুক্তি বলা হয়। চুক্তি আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে চুক্তি ভঙ্গ করার 
পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য ক্ষতি বা লোকসান ও 
চুক্তিবলে সৃষ্ট বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনে ব্যর্থতার জন্য ক্ষতিপূরণ এবং 
ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির অধিকার আছে। দায়িত্ব ভঙ্গ করলে দেওয়ানি অন্যায় 
সংঘটিত হয়। চুক্তি ভঙ্গ দেওয়ানি প্রকৃতির অন্যায়, ফৌজদারি অপরাধ 
নয়। এর প্রতিকার শাস্তি নয়, আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা চুক্তি পালন।
তবে ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটায় আইন যতই থাকুক না কেন 
নিজের সচেতনতাই পারে নিজেকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে। 
চুক্তি আইনে ‘ক্যাভিয়াট এম্পটর’ নামে একটি মতবাদ আছে। অর্থাৎ 
ক্রেতা সাবধান নীতি। ক্রেতা যাতে প্রতারিত না হয়, সেদিকে তাকে 
নিজেই লক্ষ রাখতে হবে। চটকদার বিজ্ঞাপন, অধিক ছাড়, ক্যাশব্যাক 
অফার, সাইক্লোন অফার, ধামাকা অফার, একটা কিনলে একটা ফ্রি 
এমন কিছুতে আকৃষ্ট হওয়া যাবে না। অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার 
সময় শর্তাবলি ভালো করে পড়ে বুঝে তারপর অর্ডার করবেন। 
যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের পণ্য দেরিতে পাওয়াসহ নানা 
অভিযোগ আছে তাদের বর্জন করুন। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব 
বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর ১৫০০ সদস্যের কাছ থেকে পণ্য কেনাকাটা 
বা সেবা গ্রহণ করলে প্রতারিত হওযার সুযোগ থাকবে না। ই-ক্যাবের 
সদস্যদের তালিকা ই-ক্যাবের ওয়েবসাইট যঃঃঢ়://ব-পধন.হবঃ থেকে 
যাচাই করে নেবেন। অতএব নিজে সাবধান হোন। দেখে, জেনে, 
বুঝে পণ্য কিনুন। তাহলেই ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটা বা সেবা 
গ্রহণে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবেন
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০২১ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস