• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও গতি বাড়াতে আমাদের করণীয়
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মাদ আব্দুল হক
মোট লেখা:১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২১ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইনটারনেট
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও গতি বাড়াতে আমাদের করণীয়
ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও গতি বাড়াতে আমাদের করণীয়

ইন্টারনেটের চড়া দাম ও শম্বুকগতি নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও কাক্সিক্ষত গতিশীল ইন্টারনেট পেতে রয়েছে আইএসপিএবি’র ৭ দফা দাবি। পাশাপাশি দেশে ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও গতি বাড়াতে আছে নানা মত-অভিমত। এসব নিয়েই এবারের এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন কমপিউটার জগৎ-এর নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু

করোনা অতিমারীর এই সময়ে দেশে ভার্চুয়াল যোগাযোগ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেইসূত্রে ইন্টারনেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা অনেক বেড়ে গেছে।শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ইন্টারনেট সেবা কার্যকর ভ‚‚‚মিকা রাখছে। আইএসপিএবি’র সূত্র মতে, প্রতি ১ হাজার সংযোগের ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে প্রায় ১০ জন কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বর্তমানে সারা দেশে ৮০ লাখের বেশি বাড়িতে তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহক। বিটিআরসির দেয়া তথ্যমতে, দেশে ২০২১ সালের মে মাসে মোবাইল ফোন এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার। দুটি উপায়ে ইন্টারনেট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। একটি আইএসপিদের মাধ্যমে ফাইবার অপটিক ক্যাবল দিয়ে, অপরটি মোবাইল ফোন অপারেটরদের ডাটার মাধ্যমে। তৃতীয় আরেকটি উপায় আছে, সেটি হচ্ছে ভেরি স্মল অ্যাপারচার টার্মিনাল তথা ভিস্যাটের মাধ্যমে। তবে এটি ব্যয়বহুল।

আইএসপিএবি’র ৭ দাবি

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মাসিক কমপিউটার জগৎকে বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে গতিশীল সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সেবা ও ‘এক দেশ-এক রেট’ বাস্তবায়নে তাদের ৭টি যৌক্তিক দাবি রয়েছে।

প্রথম দাবি : বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) বা ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) যখন ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করে তখন ৫% ভ্যাট দিতে হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যখন তা বিক্রি করে, তখন ৫% ভ্যাট দিতে হয়। এরপর সারা দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ পৌঁছাতে ‘নেশনওয়াইড টেলিযোগাযোগ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক’ (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫% ভ্যাট দিতে হয়। সর্বশেষ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) বা মোবাইল ফোন অপারেটরেরা যখন গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়, তখন ভোক্তা পর্যায়ে আবার ৫% ভ্যাট দিতে হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ১ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের জন্য চার স্তরে মোট ২০% ভ্যাট দিতে হয়, এটি ইন্টারনেটের দাম কমানোর পথে একটি বড় বাধা। তা ছাড়া বিষয়টি মূসক আইনের পরিপন্থী। একই সাথে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে লাভের আগেই আইটিসি/বিএসসিসিএল ৩%, আইআইজি ১০% এবং এনটিটিএন ৫% রেভিনিউ শেয়ার করতে হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের জন্য তিন স্তরে মোট ১৮ শতাংশ লাভের আগেই রেভিনিউ শেয়ার করতে হয় বিটিআরসিকে, যার ভার প্রকারান্তরে গ্রাহক পর্যায়ে গিয়েই পড়ে। এরপর আইএসপিদের বার্ষিক ৩০% ট্যাক্স মিলিয়ে ইন্টারনেটের দর গ্রাহক পর্যায়ে গিয়ে সাশ্রয়ী থাকতে পারে না। গতিও সন্তোষজনক হতে পারে না। তাই উপরোল্লিখিত খাতগুলো থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স এবং বিটিআরসিকে লাভের আগেই রেভিনিউ শেয়ার মওকুফ করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবি : তথ্যপ্রযুক্তি ও এ সম্পর্কিত সেবা খাতকে সংক্ষেপে আইটি-আইটিইএস খাত বলা হয়। সরকার আইটি-আইটিইএস সম্পর্কিত ২২টি ব্যবসায়ের ধরনকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর মওকুফ সুবিধা দিয়েছে। ব্যবসায়গুলো হচ্ছে : সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার অথবা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রি এবং প্রসেসিং, ডিজিটাল ডাটা অ্যানালাইটিকস, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস, আইটি সাপোর্ট টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সপোর্টেশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডকুমেন্ট কনভার্শন, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিসেস এবং ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন)। উপরোল্লিখিত ২২টি খাতের জন্য শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করে থাকে। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধুমাত্র আইটি-আইটিইএস আওতায় এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে করে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। তা দূর করতে দ্রæত ইন্টারনেট খাতকে আইটিইএস খাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তৃতীয় দাবি : এনটিটিএন-এর ট্রান্সমিশন মূল্য অযৌক্তিক। এনটিটিএন ব্যবসায়-খাতটি যেহেতু করমুক্ত, তাই এরা সহজেই দাম কমাতে পারে। তাছাড়া ২০১৬ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার ছিল মাত্র ২৬১.২৪৯ জিবিপিএস। আর ২০২১ সালে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ২৩৬৭.৮৯০ জিবিপিএস। গত পাঁচ বছরে বাজার বেড়েছে প্রায় ৮০০ শতাংশ। অতএব এনটিটিএন পর্যায়ে যদি ৮০% ট্রান্সমিশন ব্যয় কমানো যায়, তবে দেশজুড়ে সাশ্রয়ী দামে সমান্তরাল গতির ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব। তাই এনটিটিএন-এর ট্রান্সমিশন মূল্য ৮০% কমাতে হবে।

চতুর্থ দাবি : জেলা-উপজেলা, গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া-মহল্লা, ইউনিয়নে-ইউনিয়নে অবৈধ আইএসপি’র ছড়াছড়ি। অবৈধ আইএসপি’র জন্য মানসম্পন্ন সেবা জোগান সম্ভব হচ্ছে না। বিটিআরসি এ ব্যাপারে কঠোর ভ‚মিকা পালন করছে না। অনতিবিলম্বে অবৈধ আইএসপিগুলোর অপারেশন বন্ধ করতে হবে।

পঞ্চম দাবি : এনটিটিএন-এর সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। ইন্টারনেট বাজার ব্যবস্থাপনায় সমতা ফিরিয়ে আনতে হলে বিভাগীয় পর্যায়ে এনটিটিএন লাইসেন্স দিতে হবে।

ষষ্ঠ দাবি : ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণের সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগের অধীনে ইনফো-সরকার-৩ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। ইনফো-সরকার প্রকল্পের আওতায় ২৬০০টি ইউনিয়নে ১৯৫০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করা হয়েছে। বাড়তি ব্রডব্যান্ড চাহিদা মেটাতে ৬৩টি জেলা এবং ৪৮৮টি উপজেলায় ডিডবিøউডিএম নেটওয়ার্ক স্থাপন বা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (উপজেলা পর্যায়ে সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইট এবং জেলা পর্যায়ে সেকেন্ডে ১০০ গিগাবাইট) নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের স্কুল, কলেজ, অফিস এবং গ্রোথ সেন্টারে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়ার জন্য। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের স্কুল, কলেজ, অফিস, গ্রোথ সেন্টার, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পাচ্ছে না। তাই অতি দ্রæত এনটিটিএন কোম্পানিগুলোকে ইনফো-সরকার-৩ প্রকল্পের আওতায় ট্রান্সমিশন মূল্য ৮০% কমাতে হবে।

সপ্তম দাবি : আইসিটি বিভাগের‘এস্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি (ইডিসি) প্রকল্প নেয়া হয়েছিল বছর কয়েক আগে। এনটিটিএন কোম্পানিগুলোর আপত্তির মুখে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া এই ইডিসি প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।

ফাইবার অ্যাট হোম কর্মকর্তা সুুমন আহমেদ সাবির

অপরদিকে গ্রাহক পর্যায়ে গতিশীল ও সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সেবা এবং এক দেশ-এক রেট বাস্তবায়ন করতে হলে নেশনওয়াইড টেলিযোগাযোগ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির মাসিক কমপিউটার জগৎকে বলেনÑ ইনফো-সরকার-৩ প্রকল্প সরকারি ও বেসরকারি যৌথ অর্থায়নে করা হয়েছে। কিন্তু এই নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কীভাবে চলবে, তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। ফলে এ প্রকল্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইনফো-সরকার প্রকল্প সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সাশ্রয়ী দামে দ্রæতগতির ইন্টারনেট দেয়া সম্ভব।

তিনি আরো বলেনÑ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর ৩জি এবং ৪জি’র পাশাপাশি ২জি নেটওয়ার্ক এখনো লক্ষ করা যায়। সেক্ষেত্রে অপারেটরগুলো ২জি নেটওয়ার্ক এখনই ছেড়ে দিতে পারছে না, দেশে অনেকেই এখনও ২জি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। গত তিন বছরে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক গতি খুব একটা বাড়েনি। কারণÑ প্রথমত, তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিটিআরসি’র সাথে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মতানৈক্য এখনো কাটেনি, যদিও নতুন তরঙ্গ নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে লক্ষণীয় পর্যায়ে বিনিয়োগ করেনি। তাই নিরবছিন্ন ৩জি বা ৪জি সেবা অনেক জায়গাতেই নেই।

তার মতে, ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও গতি বাড়াতে হলে বাণিজ্যিক ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এতগুলো স্তর থাকার দরকার নেই। যেমন : আইটিসি ও বিএসসিসিএল, আইআইজি, এনটিটিএন, আইএসপি এবং মোবাইল ফোন অপারেটর। বিষয়টি নিয়ে এখনই বিটিআরসিকে ভাবতে হবে। তারপর হচ্ছে নেশনওয়াইড ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জের (সংক্ষেপে নিক্স) মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী দামে আরো গতিশীলইন্টারনেট সেবা জোগাতে অগ্রণী ভ‚মিকা রাখতে পারে। ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ প্রযুক্তিগতভাবে ন্যাচারাল মনোপলি। তাই সাধারণত এটি অবাণিজ্যিক এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে; একটি শহরে একটি বা দুটির বেশি থাকে না। কিন্তু ঢাকায় অনেক বেশি নিক্স লাইসেন্স দেয়ায় নিক্সগুলো তাদের কার্যকারিতা হারাচ্ছে। নিক্স টু নিক্স আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে, তবে তা প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব নয় এবং বাণিজ্যিক দিক থেকেও বাস্তবসম্মত নয়। সিঙ্গাপুরে মাত্র দুটি ইন্টারনেট একচেঞ্জ। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০০০ গুণ বেশি ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করে। তাই শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রিক নিক্স লাইসেন্স না দিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে এবং ভবিষ্যতে জেলা পর্যায়ে নিক্স স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।

একান্ত সাক্ষাৎকারে এমটব মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ

অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ তথা এমটবের মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ মাসিক কমপিউটার জগৎ-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে তার মূল্যবান মতামত তুলে ধরেছেন। তার এ সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ নিচে তুলে ধরা হলো।

কমপিউটার জগৎ : ওকলা ও স্পিড টেস্টের হিসাব অনুযায়ী, মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। নতুন করে তরঙ্গ (স্পেকট্রাম) বরাদ্দ নেয়ার পরও এই দুরবস্থার কারণ কী বলে মনে করছেন?

এস এম ফরহাদ : সম্প্রতি ইন্টারনেটের গতি নিয়ে যে রিপোর্টগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান পেছনের দিকে দেখা গেলেও আমাদের ইন্টারনেটের গড় গতি কমেনি, বরং বেড়েছে। ওইসব সাইটের ইনডেক্স অনুযায়ী আমাদের ইন্টারনেটের গতি সেকেন্ডে ১২ মেগাবিটসের চেয়ে বেশি। মনে রাখা দরকার, আমাদের দেশে কম স্থানে বেশি গ্রাহক বাস করেন, আবার করোনার সময়ে ইন্টারনেটের চাহিদা হুট করে অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে অপারেটররা নতুন করে তরঙ্গ বরাদ্দ নেওয়ার পরেও চাহিদা থেকেই যাচ্ছে।

তবে সেবার মান আরও উন্নত করার অবকাশ রয়েছে। এজন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, টেলিকম ইকোসিস্টেমের উন্নতি ও কর ব্যবস্থা যৌক্তিক করা জরুরি। সরকার যখনি তরঙ্গ বরাদ্দ করতে চেয়েছে, অপারেটরগুলো ততবার তা ক্রয় করেছে যদিও তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশেই তরঙ্গের মূল্য সবচেয়ে বেশি। আমরা আশা করি, সরকার গ্রাহক স্বার্থ রক্ষার্থে এসব বিবেচনা করবে।

কমপিউটার জগৎ : ঢাকার বাইরে গেলেই ডাটার গতি কেন অর্ধেকে নেমে যাচ্ছে?

এস এম ফরহাদ : ঢাকার বাইরে গেলেই গতি অর্ধেকে নেমে যায়, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে প্রান্তিক এলাকাগুলোতে গতির হেরফের হতে পারে। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো দেশেই বড় শহরের বাইরে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি সাধারণত একটু কম হয়। যে এলাকায় যত বেশি গ্রাহক, সেখানে তত বেশি বিনিয়োগ হবে এটাই স্বাভাবিক। পুরো দেশের সব স্থানে একই মানের উন্নতর নেটওয়ার্ক স্থাপন করা সম্ভব নয়। এটা কেউ করতে পারে না। এরপরও আমাদের দেশে ঢাকার বাইওে ভ‚গর্ভস্থ ফাইবার ক্যাবল অপ্রতুল থাকায় মাইক্রোওয়েভ লিঙ্কের মাধ্যমে সংযোগ দিতে হয়। এ ছাড়া মানসম্মত মোবাইল হ্যান্ডসেটের অভাবে অনেকেই ভালো গতি উপভোগ করতে পারেন না।

কমপিউটার জগৎ : মহাসড়কে চলতি পথে মোবাইলে সংযোগ থাকলেও ভিডিও স্ট্রিমিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসছে। এ অবস্থার উত্তরণে আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?

এস এম ফরহাদ : এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক ডিজাইন করা হয়। তাই মহাসড়কে যখন দ্রুতগতিতে কোনো যান চলে, তখন এর অভিজ্ঞতা কিছুটা ভিন্ন হওয়ারই কথা। তাছাড়া একটা বিটিএস থেকে আরেক বিটিএস পার হওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রেই কিছু সমস্যা হতে পারে। বাংলাদেশে মোবাইলে যে কর কাঠামো, তরঙ্গের দাম ও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম তাতে মহাসড়কে আরও বেশি বিনিয়োগ করা কঠিন। তবে, সেবার মান সরকার নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশিই আছে।

গ্রাহক অনুপাতে অপারেটরদের কাছে যে পরিমাণ তরঙ্গ থাকার কথা তা তাদের নেই। ভালো সেবা দেয়ার জন্য একটি অপারেটরের কাছে অন্তত ১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ প্রয়োজন। কিন্তু সরকার সে পরিমাণ তরঙ্গ বরাদ্দ দিতে পারেনি। তবে যার কাছে যতটুকু তরঙ্গ আছে, তা দিয়েই সর্বোচ্চ মানের সেবা দেয়ার চেষ্টা চলছে।

কমপিউটার জগৎ : ২০-২২ বছর আগে তৈরি বিটিএসগুলো সংস্কার না করার কারণে ও নতুন ইকুইপমেন্ট না বসার কারণে গ্রাহকেরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আপনারা কী ভাবছেন?

এস এম ফরহাদ : এটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। মোবাইল যোগাযোগ সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর মাধ্যম। নতুন প্রযুক্তি এলেই অপারেটরেরা নিয়মিতভাবে নতুন নেটওয়ার্কিং ইকুইপমেন্ট বসায়। তা না হলে দেশে ফোরজির সেবা দেবে কী করে? ২০-২২ বছর আগের প্রযুক্তি আর এখনকার প্রযুক্তি এক নয়। মোবাইলে সারা দুনিয়াতেই মূলত একই প্রযুক্তির সেবা দিয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন নির্দেশনার কারণে উন্নত সেবা জোগাতে অপারেটরদেরকে বিনিয়োগ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হয়। আশা করি, সরকার এসব চিহ্নিত সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসবে।

কমপিউটার জগৎ : সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী অপারেটরগুলো কি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে?

এস এম ফরহাদ : বাংলাদেশে মোবাইল খাতের ব্যবসায়িক পরিবেশ বা ইকোসিস্টেম বেশ জটিল। এখানে মোবাইল সেবাদাতারা খুব সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রেই সেবা দেয়ার সুযোগ পান তারা পান মূলত ভয়েস ও ইন্টারনেট সেবা। এর বাইরে মোবাইল অপারেটরদেরকে ফাইবার কানেকটিভিটি, টাওয়ার, বাল্ক ইন্টারনেট, ইন্টারন্যাশনাল কল, ভ্যালু এডেড সার্ভিসসহ অন্যান্য সব সেবাই মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে নিতে হয়। এতে সেবার মানে যেমন প্রভাব পড়ে, তেমনি কস্ট অব বিজনেসও বেড়ে যায়। অথচ আমাদের পাশের দেশের মোবাইল অপারেটরেরা সাবমেরিন ক্যাবল থেকে শুরু করে ডিটিএইচ কিংবা আইএসপি ইত্যাদি সব ধরনের সেবাই সরবরাহ করতে পারে।

কমপিউটার জগৎ : যে ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে, আর এর বিনিময়ে যে অর্থ আদায় করা হচ্ছেÑ তা কতটুকু ন্যায়সঙ্গত বলে আপনি মনে করেন?

এস এম ফরহাদ : আগেই বলেছি, আমাদের সেবার মান সম্পর্কে যতটা মন্দ বলা হয় আসলে মান ততটা খারাপ নয়। মানুষের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, তাই আরো দ্রুতগতি সবাই আশা করে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে মোবাইল সেবাদাতারা সবচেয়ে কম দামে ভয়েস সেবা দিয়ে থাকে। ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রেও তাই। সারা দুনিয়ায় প্রতি জিবির দাম বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম সর্বনিম্ন। এশিয়ায় বাংলাদেশে ও শ্রীলঙ্কায় মোবাইল ইন্টারনেটের দাম সবচেয়ে কম। কিন্তু তরঙ্গের দাম তুলনামূলকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। ১ জিবি মোবাইল ডাটার দাম এখানে সর্বনিম্ন ৯.৩৫ টাকা, আর গড়ে ২৯ টাকার মতো। যেকোনো উন্নত দেশে এই দাম ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি। অর্থাৎ এখান থেকে অপারেটরদের আয়ও খুব কম। অথচ আয়ের ৫০ থেকে ৫৩ শতাংশ নানা ধরনের ট্যাক্স হিসেবে চলে যায় সরকারের ঘরে।

কমপিউটার জগৎ : ঢাকার মধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করলে ফোরজি শো করার কিছুক্ষণের মধ্যে আবার টুজি শো করেÑ কারণটা কী?

এস এম ফরহাদ : নেটওয়ার্কের মধ্যে কোথাও হুট করে অনেক বেশি মানুষ ঢুকে গেলে এমনটা হতে পারে। আবার যেসব স্থানে পকেট থাকে, সেখানেও এমনটা হতে পারে। ঢাকা শুধু বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরীই নয়, এই শহরের ভবন কোনো বিশেষ প্ল্যান নিয়ে করা হয়নি। তাই নেটওয়ার্ক প্ল্যানিং যথাযথভাবে করা যম্ভব হয় না।

কমপিউটার জগৎ : মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো যখন ইন্টারনেট ডাটা বিক্রি করে তখন সময় কেনো বেঁধে দেয়?

এস এম ফরহাদ : শুধু মোবাইল অপারেটর কেনো, যেকোনো সেবার ক্ষেত্রেই সময় বেঁধে দেয়া থাকে। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, আইএসপির ব্রডব্যান্ড, ক্যাবল বা ডিটিএইচ টিভির লাইনের চার্জ সব ক্ষেত্রেই তো সময় বেঁধে দেয়া থাকে। ইউটিলিটি সেবা এভাবেই দেয়া হয়। সেবাদাতারা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন গ্রাহকের জন্য ব্যান্ডউইডথ বরাদ্দ করে। আনলিমিটেড সেবা পেতে হলে প্রতি জিবি ডাটার খরচ অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে। মোবাইল অপারেটরেরা টেলিকম আইন বা বিটিআরসির বেঁধে দেয়া নিয়মের মধ্যেই সেবা সরবরাহ করে আসছে।

কমপিউটার জগৎ : আইএসপি প্রোভাইডারের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ থেকে মোবাইল অপারেটর ব্যন্ডউইডথের দাম বেশি কেন?

এস এম ফরহাদ : ওয়াসার লাইনের পানির দাম আর বোতলের পানির দাম কি কখনো এক হয়? গ্রাহক পর্যায়ে আইএসপির ডাটা যায় ফাইবার হয়ে, আর মোবাইলেরটা যায় মূলত তরঙ্গ হয়ে। এই দুইয়ের গতি-প্রকৃতিই আলাদা। একটা আইএসপি যে পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি বিনিয়োগ করতে হয় মোবাইল অপারেটরদের। চলতি বছরের মার্চে দেশের শীর্ষ তিন মোবাইল অপারেটর ২৭.৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়েছে সাড়ে ৭ হাজার কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে। ১৫ বছরের জন্য এককালীন ক্রয় ছাড়াও প্রতি বছর স্পেকট্রাম ব্যবহারের জন্য তাদের বাড়তি অর্থ গুনতে হয়। আবার নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্ট, সফটওয়্যার, কোর ইকুইপমেন্ট, চড়া লাইসেন্স ফি ইত্যাদি তো আছেই। সেই তুলনায় আইএসপি’র বিনিয়োগ অনেক কম। তাছাড়া মোবাইল খাতের কর দেশের আর সব খাতের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেরেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতেÑ ২০১৬ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার ছিল ২৬১.২৪৯ জিবিপিএস। আর ২০১৭ সালে সেটা ৪৬৪.১৭৮ জিবিপিএস হয়, এতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২০১৬ থেকে বেড়ে ২০১৭ সালে ৭৭.৬৮ শতাংশ। সেটা ২০১৮ সালে ৭৯৭.৯৭০ জিবিপিএস অর্থাৎ ২০১৭ সালের তুলনায় ৭১.৯১ শতাংশ বেশি এবং ২০১৯ সালে ব্যান্ডউইডথ প্রবৃদ্ধির হার এসে দাঁড়ায় ২৩.৫৩ শতাংশ। তখন ব্যান্ডউইডথ ছিল ৯৮৫.৭২০ জিবিপিএস। পরবর্তী বছরে করোনার প্রভাবে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার আরও বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে সেটা ১৮২৬.২৫৬ জিবিপিএস অর্থাৎ আগের বছরের হিসাবে ৮৫.২৭ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ২৯.৬৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ আগের বছরের চেয়ে বাড়ে ২৩৬৭.৮৯০ জিবিপিএস। অর্থাৎ ২০১৬-২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ বৃদ্ধির হার হয়েছে ৮০৬.৩৭ শতাংশ।

টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ২২০৪ কোটি টাকার প্রকল্প

রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে সরকারের পক্ষ থেকে ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) গত ১০ আগস্টে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গ্রামপর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও ৫জি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এই নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় পুরো অর্থই জোগান দেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকা এবং বাকি মাত্র ৬০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দেবে টেলিটক। চলতি বছরে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এর বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানা যায়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে লোকসান গুনতে থাকা এই টেলিকম অপারেটর টেলিটক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। নেটওয়ার্কের আধুনিকায়নের এই প্রকল্পের আওতায় নতুন তিন হাজার বিটিএস সাইট তৈরি, রুম, টাওয়ার, লক ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে। এছাড়া টেলিটকের নিজস্ব ৫০০ টাওয়ার ও ২ হাজার ৫০০ টাওয়ার শেয়ারিং সাইট প্রস্তুত করা হবে। সেবা সক্ষমতা বাড়াতে থ্রিজি ও ফোরজির বিদ্যমান দুই হাজার সাইটের যন্ত্রপাতির ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে। ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস (এফডবিøউএ) প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকার বাইরে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস-আদালতে ইন্টারনেট সেবা বাড়াতে পাঁচ হাজার এফডবিøউএ ডিভাইস স্থাপন করা হবে।

টেলিটকের এই প্রকল্পে বিদ্যমান যে অবকাঠামো রয়েছে, সেটা টুজি ও থ্রিজি উন্নয়নে কিছু কাজ করা হবে। ফাইভজির প্রস্তুতি হিসেবে কিছু ইকুইপমেন্ট বসানো হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ফাইভজি’র জগতে পা রাখবে বাংলাদেশ।

এনটিটিএন-আইআইজি সেবার দাম বেঁধে দিল বিটিআরসি

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেÑ সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের মাসিক ফি নির্ধারণের পর এবার এনটিটিএন এবং আইআইজি ট্যারিফ সেবার দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে।

১২ আগস্ট ২০২১ বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগ আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে উল্লিখিত ট্যারিফের শুভ উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মো: মোস্তাফা জব্বার।

নতুন চালু করা ট্যারিফের আওতায় এনটিটিএন অপারেটরদের সব সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৬টি প্রোডাক্টের প্রতি এমবিপিএস ডাটার ট্রান্সমিশনের জন্য ১৩ থেকে ৩০০ টাকা, জেলা থেকে জেলায় ১৫টি প্রোডাক্টের জন্য ১৩ থেকে ৩০০ টাকা এবং দূরবর্তী অঞ্চলের ১৫টি প্রোডাক্টের জন্য ২৫ থেকে ৫০০ টাকা ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় জরিমানাসহ সেবার মান এবং অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি সেবার মান নির্ধারণে ৫টি গ্রেড (এ, বি, সি, ডি, ই) চালু করা হয়েছে।

বিটিআরসি’র লাইসেন্সধারী সব বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানের মোট ১১টি প্রোডাক্টের জন্য সারাদেশে ট্রান্সমিশন ব্যয়সহ ৩৩০ থেকে ৩৯৯ টাকা ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় জরিমানাসহ সেবার মান ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি সেবার মানদÐ নির্ধারণে ৩টি গ্রেড (এ, বি, সি) চালু করা হয়েছে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মো: মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইতোমধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহকদের জন্য ‘এক দেশ-এক রেট’ চালু করা হয়েছে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা পৌঁছাতে আইএসপির পাশাপাশি আইআইজি এবং এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাই তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই ট্যারিফ নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে জানিয়ে তিনি মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেয়ার জন্য বিটিআরসির প্রতি আহŸান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে মানুষ আজ ডিজিটাল সেবার সুযোগ পাচ্ছে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। পরবর্তী সময়ে বিটিআরসি’র সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ আইএসপি, আইআইজি ও এনটিটিএন ট্যারিফের তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে উপস্থাপনা প্রদান করেন।

সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: রফিকুল মতিন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবং প্রান্তিক জনগণকে স্বল্প¬মূল্যে সেবা দিতে ট্যারিফ নির্ধারণ জরুরি ছিল। দেশে সরকারি-বেসরকারি এনটিটিএন মিলে প্রায় এক লাখ কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে উল্লেখ করে সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আরিফ আল ইসলাম সরকারি এনটিটিএন অপারেটরগুলোকে এক দেশ-এক রেটে আসার আহŸান জানান। মোবাইল অপারেটরদের জন্য ট্যারিফ নির্ধারণের অনুরোধ জানান তিনি।

এনটিটিএন ও আইআইজির ওপর ট্যারিফ নির্ধারণকে স্বাগত জানিয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, আগামী দিনে প্রতিটি জেলায় পয়েন্ট অব প্রেজেন্স (পপ) স্থাপন হলে গ্রাহকেরা মানসম্মত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাবে। তাছাড়া তিনি আগামী ২৬ মার্চ ২০২২ তারিখ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ এমবিপিএসের খরচে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছানোর ঘোষণা দেন।

দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট সেবা নিতে খরচ বেড়ে গেলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নে ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: আফজাল হোসেন বলেন, ট্যারিফ নির্ধারণের ফলে মেট্রোপলিটন এলাকার পাশাপাশি জেলার গ্রাহকরাও কাক্সিক্ষত সেবা পাবেন।

টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সাথে নিয়ে কাজ করার কথা উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ যেমন : এক দেশ-এক রেট, এনইআইআর, অর্ধেক খরচে বাংলায় এসএমএস সুবিধা, টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম ক্রয়সহ গ্রাহক সেবারমান ও অভিজ্ঞতার মান নিশ্চিতে কাজ কওে যাচ্ছেন। আজকের এই পদক্ষেপের সুফল যেন গ্রাহক পর্যায়ে নিশ্চিত হয় এ বিষয়ে তার দিকে যথাযথ নজরদারি থাকবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন। অবৈধ আইএসপি বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

‘এক দেশ এক রেট’ কার্যক্রমের উদ্বোধন ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ব্রডব্যান্ট ইন্টারনেটের দাম একই হবে। গ্রাহক পর্যায়ে ৫ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ মূল্য হবে ৫০০ টাকা, ১০ এমবিপিএসের মূল্য ৮০০ টাকা এবং ২০ এমবিপিএসের মূল্য ১২০০ টাকা।

এ সময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো: মুহিউদ্দিন আহমেদ, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিল জার হুসেইন, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার একেএম শহীদুজ্জামান, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো: দেলোয়ার হোসাইন, স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: শহীদুল আলম, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: এহসানুল কবির, লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্স বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুÐু, অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: মেসবাহুজ্জামানসহ পিজিসিবি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, এনটিটিএন ও আইআইজিএবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

শেষকথা

ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও কাক্সিক্ষত গতিশীল ইন্টারনেট পেতে এবং ‘এক দেশ-এক রেট’ বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্প্রতি নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরপরও এ নিয়ে আছে নানা মত-অভিমত। সাম্প্রতিক নানা উদ্যোগ লক্ষ করে জন-প্রত্যাশার সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে যারা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তারা যেনো সে স্বপ্ন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার পর যেনো এগুলো নতুন কোনো রোগে আক্রান্ত না হয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা সেটাই।

‘করোনাকালীন গত ১৭ মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন ২০২০ সালে ৪৭৫টি এবং ২০২০ সাল থেকে ১৩ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত ১৫৫৮টি। এর ফলে প্রশাসনিক কর্মকান্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইতিমধ্যে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

সূত্র : ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

ফিডব্যাক : mahaqueanu@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০২১ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস