• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল ভূমিসেবায় ফিরছে স্বস্তি; বন্ধ হবে হয়রানি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মাদ আব্দুল হক
মোট লেখা:১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০২১ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল ভূমিসেবায় ফিরছে স্বস্তি; বন্ধ হবে হয়রানি
ডিজিটাল ভূমিসেবায় ফিরছে স্বস্তি; বন্ধ হবে হয়রানি

ভূমি ব্যবস্থাপনার অটোমেশন

আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গত বছর থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্প শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। প্রকল্প দুটির একটি হলো ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প’। এ প্রকল্পে বরাদ্দ ১ হাজার ১৯৭ কোটি ৩ লাখ টাকা। অপরটি ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ‚মি জরিপ করার জন্য ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে প্রত্যাশিত সেবাগ্রহীতা ভ‚মি অফিসে না গিয়ে ঘরে বসে মোবাইল বা ইন্টারনেটে সেবা পাবেন।

ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭টি বিভিন্ন ধরনের ভ‚মি সেবা প্রযুক্তিনির্ভর করা হবে। ভ‚মির সব সেবাই ‘ল্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস ফ্রেমওয়ার্ক’ সিস্টেম সফটওয়্যারের মাধ্যমে একই কাঠামোয় নিয়ে আসা হবে। পাশাপাশি একটি আন্তঃপরিচালনযোগ্য ডাটাবেজ তৈরি করে সরকারের অন্যান্য সেবার সাথে সমন্বয় করা হবে।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ‘ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পে স্যাটেলাইট ও ড্রোনের মাধ্যমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে, নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ‚মি জরিপ করবে। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া সারা দেশের ৪৭০টি উপজেলার মৌজা পর্যায়ে জিওডেটিক সার্ভের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১০টি জিও-রেফারেন্সিং পয়েন্ট নির্ধারণ ও ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৮টি মৌজা ম্যাপের ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া পটুুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় এসএ জরিপের পর আরএস জরিপ সম্পন্ন না হওয়ায় ওই দুটি জেলার ১৪টি উপজেলায় জরিপ হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এ প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত জিও-রেফারেন্সকৃত মৌজা ম্যাপ উপর্যুক্ত ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। এ প্রকল্পটি ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে।

এনআইডি ছাড়াও মিলছে ডিজিটাল ভূমিসেবা

সঠিকভাবে ডিজিটাল ভূমিসেবা প্রদানের জন্য প্রকৃত ভূমিসেবা গ্রহীতার আবেদনের সত্যতা অনলাইনে যাচাই করার ব্যবস্থা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রহীন (এনআইডিবিহীন) নাগরিককে ডিজিটাল ভ‚মিসেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

এ উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় গত ১১ আগস্ট সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাভুক্ত ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন’-এর সাথে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিনিময় সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। জাতীয় পরিচয়পত্রের উপাত্তের পাশাপাশি জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের উপাত্তও এখন থেকে ভ‚মিসেবা ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার হবে।

আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ভ‚মি সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) প্রদীপ কুমার দাস ও রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) মানিক লাল বণিক নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

ভূমিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন উপাত্তের ব্যবহার ভূমিসেবা প্রদান ব্যবস্থায় চালুর ফলে দেশের এনআইডিবিহীন নাগরিকরা ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বিভিন্ন কারণে দেশের অনেক নাগরিকের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র নাও থাকতে পারে, এজন্য আমরা এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি যোগ করেন তিনি।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী আরও জানান, শিগগিরই একইভাবে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কেবল পাসপোর্ট যাচাইয়ের মাধ্যমে ভূমিসেবা প্রদানের কার্যক্রমও গ্রহণ করা হবে। দেশের সব নাগরিককে ডিজিটাল ভূমিসেবায় অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।

ভূমি সচিব এ সময় জানান, নাগরিকদের তথ্য-উপাত্তের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ব্যাপারটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব-সহকারে নিশ্চিত করার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের prottoyon.gov.bd সিস্টেম থেকে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসের-এপিআই (দুটি ভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান পদ্ধতি)-এর মাধ্যমে একজন নাগরিকের উত্তরাধিকার ও অন্যান্য সনদ যাচাইয়ের জন্য ই-নামজারি সিস্টেমের সাথে আন্তঃসংযোগ করে যোগাযোগসূত্র স্থাপন করা হয়েছে। এতে ভূমি মন্ত্রণালয় যেকোনো ভূমিসেবার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর তথ্যের সঠিকটা যাচাই করতে পারবে।

আরো সহজ হচ্ছে ভূমি সেবাদান প্রক্রিয়া

ভূমি সেবাদান প্রক্রিয়া আরও সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। দক্ষ ও স্বচ্ছতার সাথে ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেবাদান প্রক্রিয়া অধিকতর সহজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে জনবান্ধব ভূমিসেবা প্রদানে ভূমি অফিসের জবাবদিহি আরও বাড়বে। সহজীকরণের উদ্যোগ এগিয়ে নিতে গত ২৮ আগস্ট ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিসেবা চিহ্নিতকরণ’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত সব দপ্তর/সংস্থা এবং হবিগঞ্জ, শেরপুর ও নোয়াখালী কালেক্টরেট (জেলা প্রশাসন) কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি ৭০ জন কর্মকর্তা ১০টি আলাদা দলে ভাগ হয়ে কর্মশালায় অংশ নেন।

ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের ভ‚মি ব্যবস্থাপনা (ডোমেইন) বিশেষজ্ঞ সাবেক মুখ্য সচিব মো: আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অটোমেশন প্রকল্পের প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞ সাবেক সচিব মো: ফারুক হোসেন ও ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোজাফফর আহমেদ।

ভূমিসেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে ভ‚মিসেবা অটোমেশন সিস্টেমের জন্য কার্যকরী তথ্য ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। ২০০টির বেশি বিভিন্ন ধরনের ভ‚মিসেবা পর্যালোচনা করে সদৃশ ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে আলাদা তালিকাভুক্ত সেবা বাতিল এবং প্রয়োজনীয় নতুন সেবা অন্তর্ভুক্ত করে গুচ্ছ (ক্লাস্টার) ও শ্রেণি (গ্রুপ) ভিত্তিক একটি কার্যকরী ও পূর্ণাঙ্গ ভূমিসেবা তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

অংশগ্রহণকারী ১০টি দলের কর্মকর্তাদের মুুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্য দিয়ে কর্মশালার কার্যক্রম শুরু হয়। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের বক্তব্যের পরে ভূমি সচিব, ভ‚মি ব্যবস্থাপনা (ডোমেইন) বিশেষজ্ঞ এবং প্রকিউরমেন্ট বিশেষজ্ঞ তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। এরপর কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা দলভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করেন এবং নিজ দলের কাজের উপস্থাপনা করেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সুপারিশ নিয়ে এরপর আলোচনা হয়। এসব সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে গুচ্ছ ও শ্রেণিভিত্তিক ভ‚মিসেবা তালিকা প্রস্তুত করা হবে।

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য বেগম যাহিদা খানম এবং মো: জয়নাল আবেদীন, ভূমি আপিল বোর্ডের সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: মোয়াজ্জেম হোসেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো: আব্বাছ উদ্দিন, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: মোমিনুর রশীদসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তর/সংস্থা ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

ভূমিসেবা গ্রহীতারা ঘরে বসেই পাবেন ভূমির সত্যায়িত দলিল

ভূমিসেবা গ্রহীতা নাগরিকদের বাসায় পর্চা, খতিয়ান, সার্টিফিকেট বা ম্যাপের মতো ভূমি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিলাদি (সার্টিফায়েড ডকুমেন্ট) পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভ‚মি মন্ত্রণালয়।

গত ৬ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ’র আওতাভুক্ত ডাক বিভাগের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এ সমঝোতার ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে উদ্ভাবনী বাংলাদেশের পথে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নাগরিক সেবার জগতে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমান, পিএএ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সিরাজ উদ্দিন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস ও ডাক বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম শাহাব উদ্দীন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

এই সমঝোতার আওতায় ভূমি অফিসগুলো থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নাগরিকদের ঠিকানায় ডাকযোগে পৌঁছে দেবে ডাক বিভাগ। প্রতিটি ডাকঘরের নিযুক্ত ব্যক্তি প্রতিদিন নিকটস্থ ভ‚মি অফিস থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নাগরিকদের ঠিকানা বরাবর ডাকে প্রেরণ করবেন। এ সেবার জন্য অনলাইনে আবেদনের সময়েই নাগরিকরা অনুরোধ জানাতে পারবেন এবং খাম, প্রস্তুতি ও ডাকমাশুল বাবদ অতিরিক্ত সেবামূল্য পরিশোধ করবেন।

ভূমির মালিক হিসেবে বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভূমি সংক্রান্ত সব আবেদন ও তার ভিত্তিতে ডকুমেন্ট এবং ম্যাপ সংগ্রহ করে থাকেন। এতদিন পর্যন্ত এ ধরনের প্রয়োজন নিরসনের জন্য নাগরিকদের ভূমি অফিসে একাধিকবার যাওয়ার প্রয়োজন পড়ত। ডিজিটাল ভ‚মি সেবার আওতায় নাগরিকদের জন্য অনলাইন তথা ওয়েব, অ্যাপ বা কল সেন্টারের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ সৃষ্টি করা গেলেও প্রাপ্য পর্চা, খতিয়ান, সার্টিফিকেট বা ম্যাপ সংগ্রহের জন্য ভ‚মি অফিসে যাওয়ার কোনো বিকল্প ছিল না; এখন এসব সংগ্রহের জন্য আর ভ‚মি অফিসে যাওয়া লাগবে না। নন-সার্টিফায়েড ডকুমেন্টগুলোও আরও সহজে ও দ্রুততর সময়ে নাগরিকরা বাড়িতে বসেই ডাকযোগে সংগ্রহ করতে পারবেন।

যেভাবে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা যাবে

বাংলাদেশে জমি বা জায়গা সংক্রান্ত সমস্যার জটিলতার অবসান ঘটাতে সব মালিকের তথ্য নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর ভূমি তথ্যব্যাংক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সাথে ভ‚মি কর অনলাইনে দেয়ার ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। এই তথ্যব্যাংকে সব ভূমি মালিকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ফলে জমি নিয়ে জালিয়াতি, দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। ফলে যেকোনো নাগরিক যেকোনো স্থান থেকে তার জমি সংক্রান্ত তথ্য যাচাই বা সংগ্রহ করতে পারবেন।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যেন ভূমি অফিসে না এসেও ভূমি সংক্রান্ত সব সেবা পেতে পারেন, সেজন্য সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশনের এই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষ হয়রানিমুক্ত সেবা পাবে।’

ভূমি তথ্যব্যাংক

ভূমি অফিসে হয়রানি, অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভ‚মি দলিল নিবন্ধন সেবা খাতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এসব হয়রানি কমাতে এবং দ্রæত গ্রাহকসেবা দিতে ভ‚মি তথ্যব্যাংক চালু করেছে সরকার। সেই সাথে ভূমি কর দেয়া থেকে শুরু করে ভূমি দপ্তরের বেশিরভাগ কাজ অনলাইনে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ভূমি তথ্যভান্ডারে সরকারি জমির তথ্য, খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, হাটবাজার, বালুমহাল, জলমহাল, চা বাগান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দকৃত জমি সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। সেই সাথে থাকবে বর্তমান অবস্থাসহ এসএ খতিয়ান ও আরএস খতিয়ানের বর্ণনা। ফলে বহু পুরনো দলিল-দস্তাবেজ হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলেও সরকারি রেকর্ড নিয়ে কোনো জটিলতা থাকবে না। আবার অনলাইনে সংরক্ষিত থাকায় এসব রেকর্ড কেউ জালিয়াতি করতে পারবে না।

ভূমি সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন অনলাইনে জমির সব তথ্য, ডিজিটাইজড মৌজা ম্যাপ, খতিয়ান অনলাইনে রয়েছে। ফলে যেকেউ যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় জমির রেকর্ডের তথ্য দেখতে পারছেন। এর ফলে একদিকে জমির খতিয়ানের তথ্য নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে, সেই সাথে জনসাধারণ খতিয়ান ও ম্যাপ সংরক্ষণ করতে পারছেন। ‘এতে মানুষের ভোগান্তি কমবে, মামলা-মোকদ্দমা, জাল-জালিয়াতি কমে আসবে’ বলছেন ভ‚মি সচিব।

অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর

যাদের জমি রয়েছে, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকানার অংশ হিসাবে জমি পেয়েছেন, তাদের সবার জন্য ভূমি কর দেয়া বাধ্যতামূলক। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে ভ‚মি কর জমা দিয়ে রসিদ নিতে হয়। তবে এখন থেকে এই কর অনলাইনেই দেয়া যাবে।

পরিশোধ করা যাবে যেভাবে

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। প্রথমে ভূমির মালিককে এই অ্যাপের সাথে নিজেকে নিবন্ধন করতে হবে। একবার নিবন্ধিত হলে তার পরবর্তীতে আর নিবন্ধন প্রয়োজন হবে না।

তিন ধাপে নিবন্ধন


১. ভূমি মন্ত্রণালয়ের কল সেন্টার ৩৩৩ অথবা ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, ফোন নম্বর ও জমির তথ্য প্রদান করে।

২. Land.gov.bd অথবা ldtax.gov.bd এই পোর্টালে প্রবেশ করে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম তারিখ ও মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।

৩. যেকোনো ইউনিয়ন ডিজিটাল অফিসে এনআইডি কার্ড, জন্ম তারিখ ও খতিয়ান নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে।

নিবন্ধনের পর এই পোর্টালে লগইন করে অথবা ইউনিয়ন ডিজিটাল অফিসে গিয়ে ভূমির উন্নয়ন কর দিতে পারবেন। এই সময় বিকাশ বা নগদের মতো মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করে করের টাকা পরিশোধ করা যাবে। কর দেয়ার পর ইমেইলে অটোমেটিক একটি জমার রসিদ চলে আসবে। এটিই ভূমি উন্নয়ন করের রসিদ।

অনলাইনে কর দেয়া হলে কি তা সংশ্লিষ্ট অফিসে অন্তর্ভুক্ত হবে ?

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন মনিটরিং সেলের প্রধান ও উপ-সচিব ড. মো: জাহিদ হোসেন বলেছেন, যারা অনলাইনে ভূমি কর দেবেন, সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার জমির অনুক‚লে তালিকাবদ্ধ হয়ে যাবে।

তিনি জানান, এই সংক্রান্ত সব কার্যক্রম তারা সম্পন্ন করেছেন। যারাই এখন পোর্টালে নিজেদের নিবন্ধন করবেন, তারা নিশ্চিন্তে ভূমি কর দিতে পারবেন। দেশের সব গ্রাম-তৃণমূলের ভ‚মি অফিস এই নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। ফলে মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করে ভ‚মি কর দেয়া হলে আর অফিসে যাওয়ার দরকার হবে না। এখন যেভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ, পানি বা গ্যাসের বিল দেয়া হয়, এটিও সেরকম একটি ব্যাপারÑ বলেছেন ড. মো: জাহিদ হোসেন। তবে ভবিষ্যতে কোনো কারণে কোনোরকম সমস্যা তৈরি হলে ইমেইলে যে ভূমি কর দেয়ার রসিদ আসবে, সেটাই সমাধানে কাজ করবে।

২০১৯ সাল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে জমির নামজারি, নামজারিবিষয়ক আপত্তি সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পরীক্ষামূলকভাবে ই-রেজিস্ট্রেশন ও ই-মিউটেশন চলছে। শিগগিরই দেশব্যাপী এটি চালু করার আশা করছেন কর্মকর্তারা।

ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করার মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তি ও হয়রানি কমানোর চেষ্টা করছে সরকার। সম্পূর্ণ ভূমিসেবাকে দেশের জনগণের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার মাধ্যমে ভোগান্তি লাঘবে সরকার সম্পূর্ণ ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষ যেন ভোগান্তির শিকার না হয়, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে না হয়, ভ‚মিসেবা যেন হাতের মুঠোয় পায়; সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শতভাগ জমির মিউটেশন কার্যকম যেন সম্পন্ন হয় এবং বাংলাদেশের ভ‚মি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজ হয় সেটার জন্য কাজ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০২১ - সেপ্টেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস