• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ক্যাবল লাইনের জীবনরেখার সুরক্ষা চাই
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৭ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইটি
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি ও সমাজ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ক্যাবল লাইনের জীবনরেখার সুরক্ষা চাই

সাবধান বাংলাদেশকে বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অপটিক্যাল ফাইবার লাইন একটি জাতীয় সম্পদ৷ দেশকে বিশ্বের সাথে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে অপটিক্যাল ফাইবার চুরি করা নিছক চুরি নয় বরং নাশকতা মুলক কর্মকান্ড , যা দেশদ্রোহিতার শামিল৷ ক্যাবল চুরি বা বিচ্ছিন্ন করার এই দেশদ্রোহিতামলক কাজের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। বাংলাদেশ টিঅ্যান্ডটি বোর্ড গত ২১ নভেম্বর একটি জাতীয় পত্রিকায় এই ভাষায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাইবার অপটিক ক্যাবল কাটার বিপক্ষে সতর্ক করেছে৷ তার ঠিক দুদিন আগে ১৮ নভেম্বর রাতে ফাইবার অপটিক্স-এর ২৮তম কাটাটি সম্পন্ন হয়৷ গত ১৮ নভেম্বর রাত বারোটায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার গাছবাড়িয়া ব্রিজের কাছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথের সাবমেরিন ক্যাবল এই লেখা পর্যন্ত শেষবারের মতো বিচ্ছিন্ন হয়৷ পরের দিন ১৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে আটটায় সেই সংযোগ আবার স্থাপিত হয়৷ একে নাশকতামলক কাজ বলে বিটিটিবি চন্দনাইশ থানায় মামলা করেছে৷ এর আগে এই এলাকার পাঠানব্রিজ এলাকায় কে বা কারা সাবমেরিন ক্যাবল কেটে নেয়৷ গত ২১ মে ২০০৬ থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মাসের মাঝে ২৮ বার কাটার রেকর্ড স্থাপনকারী কাজটি এতদিনে বিটিটিবির কাছে দেশদ্রোহিতামলক মনে হলেও এখন পর্যন্ত বিটিটিবি এই অপরাধের সাথে যুক্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি৷ একেবারে চিহ্নিত কিছু জায়গায় এই কাটাকাটিগুলো হতে থাকলেও একেবারে দায়িত্বহীন থেকে বিটিটিবি সম্ভবত এখনো অপেক্ষা করছে আরো বড় ধরনের অঘটনের জন্য৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে একবারও এই সংস্থাটি ভেবে দেখেনি আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা তাদের অবহেলার জন্য কি চরম ভোগান্তির শিকার হতে পারি, অন্যদিকে কি ভয়াবহভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে জাতীয় আয়৷



ল্যাপটপে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করা আমার ব্যবসায় ও জীবনধারণের একটি বিরাট অংশ৷ বলা যায়, এটি এখন আমার লাইফলাইন৷ শুধু আমার কথাই বা কেন বলি৷ সম্ভবত বাংলাদেশের শিক্ষিত ও তরুণ জনগোষ্ঠীর সবার জীবনেই তথ্যপ্রযুক্তির মহাসরণিতে যুক্ত থাকা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই৷ সেদিন বিনা কথায় কোনো প্রকারের বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে আমাদের সেই লাইফলাইনটি স্তব্ধ হয়ে যায়৷ পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে এমন একটি ঘটনার কথা ভাবাই যায় না৷ বেসরকারি কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে এমনটি ঘটালে তার জন্য ব্যবহারকারীদেরকে কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হতো৷ সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান এমন করলে ক্ষতিপূরণের সাথে সাথে ডজন ডজনে চাকরি যেতো৷ কিন্তু এদেশে কাউকে কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না৷

বাংলাদেশের হাজার কোটি টাকার সাবমেরিন ক্যাবল নিয়েও একই কথা বলা যায়৷ বিটিটিবির অবজ্ঞার ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি জনগণের যে কি চরম ভোগান্তি হচ্ছে সেটি নিয়ে কারোর মাথাব্যথা নেই৷ আমরা কাউকে বুঝাতে পারছি না, শুধু দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ বা জ্ঞান অর্জন কিংবা তথ্য আদান-প্রদান নয়, সাবমেরিন ক্যাবল কার্যত আমাদের জীবনরেখা৷ কিন্তু এই রেখাটি যখন রুদ্ধ হয়ে যায় তখন আমার-আপনার কি করার থাকে সেটি কেউ বুঝে না? তখন অসহায়ভাবে মাথার চুল ছেঁড়া ছাড়া আর কোনো গতি আছে কি আমাদের? দায়িত্বজ্ঞানহীন আমলার হাতে জিম্মি বলে এই দুর্দশা থেকে রক্ষা পাবার কোনো উপায় আমাদের জানা নেই৷

আমরা অনেকেই হয়তো ভুলে যেতে পারি, আমাদেরকে বিশ্বের সাথে যুক্তকারী সাবমেরিন ক্যাবলটি সি-মি-উই-৪ নামে পরিচিত৷ এটি ১৪টি দেশকে যুক্ত করেছে৷ যার মাঝে আমরা ছাড়াও ফ্রান্স, আলজিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইটালি, মিসর (তিনটি সংযোগ পয়েন্ট), সৌদি আরব, ইউএই, পাকিস্তন, ভারত (২টি পয়েন্টে যুক্ত), শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর যুক্ত৷

সি-মি-উই সিরিজের প্রথম ক্যাবল লিঙ্কটি চালু হয় ১৯৮৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর৷ এটি ফাইবার অপটিক্স ক্যাবল সংযোগ ছিলো না৷ এটি তৈরি হয়েছিলো কো-এক্সিয়াল ক্যাবল দিয়ে৷ এই ক্যাবল লাইনে ভারত-পাকিস্তন যুক্ত না হলেও শ্রীলঙ্কা যুক্ত হয়েছে৷ বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনা ছিলো, এতে আমরা যুক্ত হই৷ ১৯৮৪ সালে এই ক্যাবল লাইন স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর শুরু হয়৷ এরশাদ তখন বাংলাদেশের শাসক ছিলেন৷ সেই সরকার এই ক্যাবল লাইনে যুক্ত হবার কথা ভাবেনি৷ এরপরের ক্যাবল লাইন সি-মি-উই-২-এর চুক্তি স্বাক্ষর শুরু হয় ১৯৯১ সালে৷ এতে শ্রীলঙ্কা ও ভারত যুক্ত হয়৷ ১৯৯২ সালে এই কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিনামল্যে যুক্ত হবার প্রস্তব দেয়া হয়৷ কিন্তু তখন বাংলাদেশের বেগম খালেদা জিয়ার সরকার দেশের সকল তথ্য পাচার হয়ে যাবে এই অজুহাতে এর সাথে যোগ দেয়নি৷ ১৯৯৪ সালে এই ক্যাবল লাইনটি চালু হয়৷

সি-মি-উই-২-এর ব্যাপক সাফল্যের পর সিঙ্গাপুর টেলিকম ও ফ্রান্স টেলিকম আরো একটি সাবমেরিন ক্যাবল লাইন স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতায় উপনীত হয়৷ ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ১৬টি পক্ষের মাঝে এই সমঝোতা চুক্তি সই হয়৷ বাংলাদেশ তাতে যোগ দেয়নি৷ অজুহাত একই থেকে যায়, দেশের সব তথ্য বাইরে চলে যাবে৷ এই লিঙ্কটি সি-মি-উই-৩ নামে ৩৯ হাজার কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে৷ এর কাজ শেষ হয়েছে ২০০০ সালে৷

অবশেষে নানা সঙ্কটের পর ২০০৬ সালের ২১ মে বেগম খালেদা জিয়ার হাতেই উদ্বোধন হয় আমাদের স্বপ্নের সাবমেরিন ক্যাবল৷ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বিশ্বের সাথে যুক্ত হয়েছি আমরা এই ক্যাবল লাইন দিয়ে৷ কথা ছিলো, এমন একটি ক্যাবল লাইনের ২১ (১৯৮৬), ১২ (১৯৯৪) বা ৭ (২০০০) বছর আগে চালু অবস্থায় পাবো৷ কিন্তু আমরা পাইনি৷ ২০০৬ সালে যে ক্যাবল লাইনটি আমরা পাই সেটিও চট্টগ্রামের সিলিমপুরে যুক্ত হবার কথা ছিলো৷ বিশেষ কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে সেখানকার মাটি ল্যান্ডিং স্টেশনের জন্য উপযুক্ত নয় এই ঠুনকো অজুহাতে শুধু ক্যাবল লাইনের ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারে স্থাপিত হয়৷ মনে হতে পারে, এর ফলে কক্সবাজারের বাসিন্দাদের খুশি হবার কারণ আছে৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন৷ এর কারণ হলো কক্সবাজারে ল্যান্ডিং স্টেশন হলেও এর নিয়ন্ত্রণ কক্সবাজারে নয়৷ বরং সেটি ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়৷ ফলে এমনকি কক্সবাজারে কেউ ইন্টারনেট বা টেলিকম ব্যবহার করলেও তার রাউটিং ঢাকা হয়েই হতে হয়৷ এই ক্যাবল লাইন তৈরিতে সময় লাগে যথেষ্ট৷ টেন্ডার-রিটেন্ডার হয়েছে৷ ফলে সাবমেরিন ক্যাবল লাইন উদ্বোধনে সময় লাগে যথেষ্ট৷ কিন্তু এর ফলে পুরো জাতির যে সর্বনাশটি হয়, সেটি হচ্ছে বার বার এই লাইন কেটে যাওয়ায় হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হওয়া৷ সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর রাতে সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়ে৷ এ রাত বারোটায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার গাছবাড়িয়া ব্রিজের কাছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পথের সাবমেরিন ক্যাবল এই লেখা পর্যন্ত শেষবারের মতো বিচ্ছিন্ন হয়৷ পরের দিন ১৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে আটটায় সেই সংযোগ আবার স্থাপিত হয়৷ এর আগে ১২ নভেম্বর ২০০৭ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডে ১৩০ মিটার জায়গায় তিনটি কাটা ছাড়াও রামুর কাছে আরো একটি কাটা লক্ষ্য করা যায়৷ এর মাত্র ৩ দিন আগে ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পথে ৪২ কিলোমিটার দরে দোহাজারীতে এই ক্যাবল লাইন কাটা হয়৷ সর্বশেষ এই কাটা নিয়ে মোট ক্যাবল লাইন কাটা হলো ২৮ বার৷ এর মধ্যে ১৩ বার ঢাকা-চট্টগ্রাম অংশে এবং ১৪ বার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অংশে কেটেছে৷ ১ বার কেটেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অংশে একসাথে৷ চট্টগ্রামের অংশের ১৩ বারের ৯ বার এবং কক্সবাজার অংশের ১৪ বারের ৯ বার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উভয় অংশের আরো ১ বার মোট ১৯ বার ক্যাবল লাইনটি নাশকতামলকভাবে বিচ্ছিন্ন হয় বলে বিটিটিবি জানায়৷ বাকি ৯ বার ঠিকাদারি কাজ করতে গিয়ে ক্যাবল লাইন বিচ্ছিন্ন হয়৷ সর্বশেষ কাটাটি মেরামত করতে আট ঘণ্টা সময় লাগে৷ এর আগের কাটাটি মেরামত করতে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে এবং তার আগের কাটাটি মেরামত করতে সময় লাগে নয় ঘণ্টা৷ তবে সব মিলিয়ে প্রতিবার গড়ে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে৷ ফলে আমাদের হিসেব অনুযায়ী ২৮ বারে মোট ২৮৫ ঘন্টা সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে৷ একটি দৈনিক পত্রিকার খবর অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় রাজস্বসহ সরকারের ক্ষতি হয় ৭০ হাজার ডলার৷ (দৈনিক প্রথম আলো) প্রতিবারে গড়ে ক্ষতি সাত লাখ মার্কিন ডলার৷ মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৯৫০ লাখ ডলার৷ টাকার অঙ্কে এই অর্থ ১৩৯ কোটি ৬৫ লাখ৷ এর সাথে আরো ক্ষতির হিসেব করা হয়নি৷ যেমন সফটওয়্যার রফতানিকারকরা দাবি করে প্রতি ঘণ্টায় তাদের ক্ষতির পরিমাণ ২.৫ লাখ ডলার৷ এই হিসেবে শুধু সফটওয়্যার রফতানি খাতে৷ এ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে ৪৯৮ কোটি টাকা৷ আমার বিবেচনায় এর বাইরে রয়েছে গার্মেন্টসসহ বেসরকারি অনেকগুলো ব্যবসায় ও শিল্পখাতসহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের ক্ষতি৷ গড়ে দশ ঘণ্টা করে বন্ধ থাকার ফলে বিকল্প পন্থা ব্যবহার করার জন্য ব্যয়, উত্পাদন ক্ষতি, যোগাযোগ ক্ষতি, শিক্ষায় ক্ষতি এসব বিবেচনা করলে সার্বিকভাবে আমাদের জাতীয় ক্ষতির পরিমাণ হয়তো দাঁড়াবে ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে৷

মাত্র এক হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প ঘণ্টায় সরকারকেই ৭০ হাজার ডলার রাজস্ব আয় করে৷ দৈনিক রাজস্ব আয় করি ১৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার৷ এমনকি আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখনও এই ক্যাবল লাইন আমাদেরকে রাজস্ব প্রদান করে৷ যদি এখন থেকে দুই যুগ আগে, অর্থাত্ ৭ বছর আগেও এই সংযোগ আমরা পেতাম, তবে এই খাত থেকে জাতীয় আয় কি পরিমাণ বাড়তো? অথবা এর বিনিময়ে কি পরিমাণ টাকা আমরা জাতীয় তহবিল থেকে অন্যকে দিয়ে৷ খুব সঙ্গতকারণেই আমরা এই জাতীয় ক্ষতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরকে কি অন্তত জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারি না? এতে প্রমাণিত হয় আমাদের জনগণের সচেতনতার মাত্রাটি কতো নিচু৷ এদের বিরুদ্ধে অন্য অনেক কারণে দুর্নীতি ও জাতীয় অর্থের অপচয়ের অভিযোগ করা হয়েছে৷ আমি মনে করি, এই জঘন্য অপরাধের জন্যও এদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত৷ শুধু তাই নয়, এমন একটি অবস্থায় এই সরকারের কি উচিত নয় যথাসময়ে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত না হবার ফলে প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণ ও দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া? এছাড়া এই সরকারের উচিত নয় কি, বাস্তবায়িত সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্ত করা? আমরা বিশেষ করে এই প্রকল্পে ব্যবহৃত নিন্মমানের তার, রাস্তর মাঝখানের বদলে এর পাশ দিয়ে টেনে নেয়া ক্যাবল লাইন এবং চট্টগ্রামের বদলে কক্সবাজারে এর ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি সরকারের কাছে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করছি৷

বেসিসের ১৩ নভেম্বরের সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, বিএনপি আমলে ২২ বার এই ক্যাবল লাইন কাটার জন্য মোট ৪৫ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে৷ যদি এটি সত্য হয়, তবে এটি তদন্ত করে দেখতে হবে, তার কাটার পেছনে মেরামত বাবদ যারা বিল পায় বা যারা বিল প্রদান করে তাদের কোনো হাত আছে কিনা৷ একই সাথে এই পথে অন্য যেসব কোম্পানির ক্যাবল লাইন আছে তাদের তার কাটা যায় কিনা সেটিও খোঁজ নিয়ে দেখা উচিত৷ তাছাড়া এটি জানা দরকার, বিগত ১৮ মাসে বিটিটিবি নাশকতামলক কাজের বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি? এই সময়ে বিটিটিবি কেন একটি বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারেনি সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত৷ আমরা খুশি হবো যদি সরকার এসব ব্যর্থতার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে দেশবাসীর সামনে হাজির করে৷ আমরা সবিনয়ে শুধু এই কথাটি বলতে চাই, শুধু টাকাপয়সার দুর্নীতিই অপরাধ নয়, দেশের বিপক্ষে কাজ করাটাও জঘন্য অপরাধ৷ দুর্নীতির বিচার করলে এই ধরনের দেশদ্রোহিতামলক কাজেরও বিচার করতে হবে৷

এসব কথার পাশাপাশি এই কথাটিও স্মরণ করা দরকার যে, বেগম খালেদা জিয়ার সরকার তো বটেই এমনকি নতুন সরকার পর্যন্ত হাজার কোটি টাকার এই স্থাপনাটিকে রক্ষা করতে পারছে না৷ আমাদের জন্য যমুনা সেতু যেমন গুরুত্বর্পূণ, তেমনি গুরুত্বর্পূণ হচ্ছে এই ক্যাবল লাইনটি৷

অবশেষে সরকার এই স্থাপনাটিকে গুরুত্বর্পূণ স্থাপনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ গত ২৯ নভেম্বরের দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার খবরে প্রকাশিত হয়েছে যে, সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এই স্থাপনাটিকে রক্ষা করার জন্য সর্বক্ষণিক পাহারা দেবার ব্যবস্থা করার জন্য টিঅ্যান্ডটি বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে৷ গত ২৭ নভেম্বর ২০০৭ এই চিঠিটি প্রদান করা হয়৷ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই দাবিটি আমি অনকে দিন যাবতই বিভিন্ন ফোরামে ও কলামে লিখে পেশ করে আসছিলাম৷ ধন্যবাদ সরকারকে যে, তারা শেষ পর্যন্ত এই দাবিটি বাস্তবায়ন করছে৷ তবে আমাদের পেশ করা অন্য দাবিগুলো বাস্তবায়ন না জনগণের আমাদের জীবন স্বস্তিময় হবে না৷

এরই মাঝে সরকারের একটি কমিটি তদন্ত করে নিশ্চিত করেছে, সরকার সি-মি-উই-৪ বাবদ যে বিনিয়োগ করেছে তা ২০০৭-০৮ অর্থবছরেই উঠে আসবে৷ প্রকল্পটি বিটিটিবির জন্য এতোটাই লাভজনক যে চলতি অর্থবছরেই এটি আয় করবে ২০০ কোটি টাকা৷ মোট ১৪.৭৮ জিবি ক্ষমতার মাঝে এই ক্যাবল লাইন থেকে এখনো মাত্র ৩.২৮ জিবি ব্যবহার করা হলেও ২০১১ সালে এর স্বাভাবিক চাহিদা তিনগুণ বেড়ে ১৫.৫০ জিবি হয়ে যাবে৷ চলতি বছরেই বিদ্যমান সাবমেরিন ক্যাবল থেকে বাড়তি ২ জিবি ব্যান্ডউইডথ বিনামল্যেই পাবে বিটিটিবি৷ বিটিটিবির কাছে এখন দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল লাইন হিসেবে বিবেচনা করার জন্য ১০টি প্রস্তব রয়েছে৷ বিটিটিবির নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার লে. ক. জিয়া সফদারের উদ্ধৃতি দিয়ে ২৪ নভেম্বর ২০০৭ সংখ্যার দৈনিক ডেইলি স্টার এই খবরগুলো পরিবেশন করে৷

সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বর্পূণ কথাটি হলো- আর দেরি নয়, এখনই আমরা সুরক্ষিত ক্যাবল লাইন এবং কমপক্ষে একটি বিকল্প চাই৷ এজন্য আমরা ঢাকা-কক্সবাজার পথে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ বা বাংলালিংকের ফাইবার অপটিক্স লাইনটি ভাড়া নেবার প্রস্তব করছি৷ অন্যদিক আমরা প্রস্তব করছি বাংলাদেশ যেন সি-মি-উই-৩-এর সাথে মিয়ানমারের পয়েন্টে বা কলকাতা হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে এই ক্যাবল লাইনের সাথে যুক্ত হয়৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ যেন সি-মি-উই-৫-এ বা এশিয়া-আমেরিকা গেটওয়েতে যুক্ত হয় সেটিও আমরা প্রস্তব করি৷ সি-মি-উই-৫ আমাদের বাড়ির কাছ দিয়েই যাচ্ছে৷ ফলে এতে যুক্ত হওয়াটা কঠিন কিছু হবে না৷ অন্যদিকে এএজি যাচ্ছে ভিয়েতনাম থেকে৷ ওখানে যুক্ত হওয়াটা ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে৷ আমরা মনে করি, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল লাইনটির ল্যান্ডিং স্টেশনটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বদলে খুলনা-মংলায় বসানো যেতে পারে৷ যাহোক আমরা আমাদের তারের জীবনরেখাকে সুরক্ষিত চাই-একুশ শতকের বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে দেখার জন্য৷

ফিডব্যাক mustafajabbar@gmailcom
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৭ - ডিসেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস