লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
৩য় মত
আইটিইউর তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা ধরনের নেতিবাচক ও বিরূপ মমত্মব্য শুনতে শুতেই বড় হয়েছি বলা যায়। তবে যুদ্ধবিধ্স্ত বাংলাদেশ সম্পর্কে সেসব মন্তব্য কতখানি যুক্তিযুক্ত ছিল, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে বা হচ্ছে। যাক সেসব পুরনো কথা। আমাদের উচিত অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃপ্তপদে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া, নিজেদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করা, যাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা নিজেদেরকে ধীরে ধীরে তুলে ধরতে সক্ষম হতে পারি। ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পরিচিতি ঘটতে থাকে গার্মেন্টস শিল্পের হাত ধরে। কেননা স্বাধীনতার সময় সোনালী আশখ্যাত পাট শিল্প সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বলা যায়।
মূলত নববই দশক থেকে গার্মেন্টস শিল্পের হাত ধরেই বহির্বিশ্বে আন্তর্জাতি বাজারে বাংলাদেশের পদচারণা পরিলক্ষিত হতে শুরু করে। নববই দশকের অনেক পরে অর্থাৎ ২০০০ সালের প্রায় মাঝামাঝি সময় থেকে এক সময়ের বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত খাত আইসিটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার পদচারণা শুরম্ন করে। মূলত আইসিটিতে বাংলাদেশের পদচারণার প্রেক্ষাপটে নববই দশকের শেষের দিকে রচিত হলেও মাঝের কিছু সময়ের জন্য তাতে আবার ভাটা পড়ে। সে সময় দেশের তরুণদের মাঝে সৃষ্টি হয় এক চরম হতাশা। অবশ্য সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে যখন বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে। এর ফলে বর্তমান সরকারের আমলে আইসিটি নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যায়। তবে যাই হোক, সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ পদবাচ্যটি তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে দাগ কাটতে সক্ষম হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য সরকার যে প্রত্যয় ঘোষণা করে, সে লক্ষ্য অর্জনে সরকারি কিছু কর্মকা- লক্ষ্য করা গেলেও তা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য যথেষ্ট নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রত্যয় ঘোষিত হওয়ার পর আমাদের দেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের মনে বিশ্বাস জন্মেছিল, বাংলাদেশ খুব শিগগির আইসিটিতে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরি কম সক্ষম হবে এবং একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। দেশে তরুণদের এক বিরাট অংশ আইসিটির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে অর্থনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবে। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষিত হওয়ার পরও গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়নের (আইটিইউ) তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিবেদনে কয়েক ধাপ পিছিয়ে পড়ে, যা ছিল আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। শুধু তাই নয়, এ পিছিয়ে পড়া ছিল আমাদের জন্য এক লজ্জাকর ব্যাপার।
তবে আইটিইউর এ বছরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে চার ধাপ। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এখনও শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের পেছনে বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইসিটি ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আইটিইউ। গত চার বছর ধরে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করছে সংগঠনটি। সর্বশেষ প্রতিবেদনে ১৫৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫তম, যা ২০১১ সালে ছিল ১৩৯তম। শ্রীলঙ্কা তাদের আগের অবস্থান (১০৭তম) ধরে রেখেছে। ভারত ও পাকিসত্মান একধাপ পিছিয়ে যথাক্রমে ১২১তম ও ১২৯তম অবস্থানে নেমে গেছে। পাশের দেশ মিয়ানমারও ১৩৪তম অবস্থান দখল করে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। সব ক্ষেত্রে অর্থাৎ চারটি ক্ষেত্রে ১০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ১ দশমিক ৭৩। আগের বছর যা ছিল ১ দশমিক ৬২। প্রতিবেদন অনুসারে চার ধাপ এগিয়ে আসার কারণে বাংলাদেশ আইটিইউর ‘মোস্ট ডায়নামিক কান্ট্রিজ’ তালিকায় যুক্ত হতে পেরেছে। সমান চার ধাপ করে এগোতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া, ওমান ও জিম্বাবুয়ে।
আইটিইউর এ রিপোর্ট নিঃসন্দেহে আইসিটি ক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে এ কথা ঠিক, আইটিইউর প্রতিবেদনে আইসিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চার ধাপ উন্নতির কথা বলা হলেও প্রকৃত অর্থে আরও বেশি উন্নয়ন আমাদের হয়েছে। কিন্তু তা বিবেচিত হয় না শুধু ইন্টারনেট তথা ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার আশানুরূপভাবে না বাড়ানোর কারণে। কেননা আমাদের দেশে ইন্টারনেট এখনও এক ব্যয়বহুল আইটেম। অথচ আধুনিক বিশ্বে সেই দেশকে তত উন্নত ও সভ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যে দেশের সাধারণ জনগণের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা ব্যাপক। কিন্তু এখনও আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যয়বহুল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ সরকার কয়েক দফা কমালেও এ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সে অনুযায়ী সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমায়নি এবং সরকারও সে ব্যাপারে তেমন মাথা ঘামাচ্ছে না। তাই আমাদের দাবি, সরকার ইন্টারনেটের ব্যবহার খরচ কমিয়ে আনার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যা প্রকারন্তরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হবে। ফলে আইটিইউর র্যা ঙ্কিংয়ে আমরা আরও ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।
রিপন
দুমকি, পটুয়াখালী
নতুন প্রযুক্তির সাথে সমন্বয় রেখে এগোতে হবে
নববইয়ের দশকে এ দেশের রাষ্ট্র পরিচালনাকারী সরকারসহ সব মহল মনে করত কমপিউটারের বিসত্মার ঘটলে দেশের মধ্যে বেকারত্বের হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা বাড়তে থাকবে। সে ধারণা শুধু ভুল হিসেবে পরিণতই হয়নি বরং কমপিউটারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন অনেক কর্ম ক্ষেত্র, যেখানে লাখ লাখ তরুণ-মেধাবী কর্মরত থেকে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
বিজ্ঞানের উন্নয়নের ফলে এক সময়ের ব্যাপক স্পেস দখলকারী কমপিউটার এখন ছোট হতে হতে হাতের মুঠোয় ঠাঁই করে নিয়েছে। এতে যে কমপিউটার প্রযুক্তির কর্মক্ষমতা কমেছে তা কিন্তু নয়, আকারে ছোট হয়েছে, ব্যবহারের ধরন বদলেছে বলা যায়। আইসিটি এখন হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসভিত্তিক হয়ে ওঠার সন্ধিক্ষণে পেরিয়ে ইন্টারনেট আর মুঠোফোন ধরনের ডিভাইস তথা নতুন ধারার যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ার পরীক্ষা উতরে গেছে। টুজি থেকে থ্রিজিতে উত্তরণ সর্বব্যাপী হয়ে উঠতে না পারলেও উপযোগী প্রযুক্তি হিসেবে সর্বত্রই মূল্যায়ন হচ্ছে।
স্মার্টফোন আর তারবিহীন ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সন্ধিক্ষণ বিষয়টি এখন ধারণা নয়, বাসত্মব। বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে যাচ্ছে। এ বাসত্মব অবস্থার চাহিদাকে সামনে রেখে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথ বাড়ানোর অর্থই ই-কমার্সের সাথে যুক্ত হওয়া।
কিন্তু আমরা কী এখন সেই অবস্থায় নিজেদেরকে নিয়ে যেতে পেরেছি? বাস্তবতা হলো আমরা এখনও সেই অবস্থানে নিজেদেরকে নিয়ে যেতে পারিনি বিভিন্ন কারণে। স্মার্টফোনের ব্যাপক বিস্তার বা ব্যবহারের সাথে সাথে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রে। আমাদেরকে এখন এসব কর্মক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে অতীতের মতো আবার পিছিয়ে পড়তে হবে। আর পিছিয়ে পড়ার অর্থ প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্ব থেকে ছিটকে পড়া। সুতরাং, এখনই নতুন সব টেকনোলজির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযোগী হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে কার্যকরভাবে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ রইল সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি।
রবিউজ্জামান শাওন
ডেমরা, ঢাকা