• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল সিনেমা এখন বাস্তবে এমনকি ঢাকায়
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:৯৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৭ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
টিভি
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল সিনেমা এখন বাস্তবে এমনকি ঢাকায়

গ্রীক শব্দ Kinesis থেকে জন্ম ইংরেজি Cinema শব্দটির৷ বাংলায় আমরা একে সিনেমা বা চলচ্চিত্র বলে জানি৷ মূল গ্রীক ভাষায় কিনেসিস শব্দটির অর্থ গতি৷ সেই অর্থে চলচ্চিত্রই হচ্ছে গ্রীক শব্দ কিনেসিস-এর প্রকৃত অর্থবহ বাংলা শব্দ৷ সিনেমার এই গতি বা চলমানতাই একে স্থিরচিত্র বা অন্য মাধ্যম থেকে প্রযুক্তিগতভাবে আলাদা করেছে৷ আমাদের একুশ শতকেও সিনেমা শব্দটির আলাদা আবেদন আছে৷ আমরা এখন এই শব্দটিকে মূলত কাহিনীচিত্র হিসেবেই জানি৷ আজকাল টিভি নাটক বা টেলিফিল্ম চলচ্চিত্রের কাছাকাছি বা বিকল্প মাধ্যম হবার চেষ্টা করছে৷ অন্যদিকে চলচ্চিত্র কি তার কাহিনীচিত্রের খেতাব বদলাতে যাচ্ছে? এসব বিষয়ে বিশ্বের প্রবণতা এখন কি? প্রযুক্তির পাশাপাশি আমাদের সম্ভবত এ বিষয়টিতেও নজর দিতে হবে৷ যাহোক, গোড়ার কথা হলো এটি অনেকাংশেই একটি বিনোদন বা সাংস্কৃতিক মাধ্যম৷ তবে মনে হয়, এটি যতটা না বিনোদন, তার চাইতে অনেক বেশি প্রযুক্তি৷ আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির সাথে এর সম্পর্কটাও মুখ্যত প্রযুক্তিগত৷ দীর্ঘদিন ধরেই আমি এই প্রযুক্তিগত বিবর্তনটি পর্যবেক্ষণ করে আসছি৷ এখানে আমি প্রযুক্তির পাশাপাশি সিনেমার অন্তগত পরিবর্তনের ধারাটির কথাই বলতে চাই৷ এর সাথে আমি এখানে একটি হালনাগাদ সার্বিক চিত্রটাই উপস্থাপন করতে চাই৷ ১৮৬০-এর দিকে কৃত্রিম দৃশ্যের চলমানতা সন্তোষজনক করার মতো কিছু যন্ত্র তৈরি হয়৷ বলা যায়, সিনেমার প্রযুক্তির সূচনা সেখান থেকেই৷ কিন্তু এটি কোনোভাবেই বলা যাবে না, আধুনিক সিনেমার উদ্ভব তখন থেকেই৷ প্রকৃতপক্ষে সিনেমা সন্তোষজনক হয় সেল্যুলয়েডের তথা ফিল্মের জন্মের পর৷ ১৮৮০-এর দিকে মোশন পিকচার ক্যামেরা তৈরি হয়৷ কাছাকাছি সময়েই জন্ম নেয় মোশন পিকচার প্রজেক্টর৷ এই দুটি প্রযুক্তি আসলে সিনেমার আধুনিক ভিত্তি তৈরি করে৷ শব্দ বা টক করার ক্ষমতা যোগ হবার পর এর নাম কখনো টকিজ বলেও উল্লেখ করা হতো৷ শব্দহীনতা ও নানা গতির বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আজকের দিনের চলচ্চিত্রের যে ধারণা, তার জন্ম উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের শুরুতে৷ আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে, ১৮৯৫ সালের ২২ মার্চ লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় প্রথম প্রকাশ্যে মুভি বা সিনেমা প্রদর্শন করেন৷ ওই বছরের ডিসেম্বরে আয়োজিত মুভি প্রদর্শনীতে প্রথম দর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়৷ তবে মনে করা হয়, ১৯০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় দি স্টরি অব দ্য ক্যালি গ্যাঙ্গ নারে প্রথম ফিচার ফিল্ম বা কাহিনীচিত্রটি তৈরি হয়৷ অবশ্য বিশ শতকজুড়েই আমেরিকার হলিউড হয়ে ওঠে বিশ্ব চলচ্চিত্রের রাজধানী৷ ইউরোপ বিশ্বযুদ্ধের জন্য চলচ্চিত্রের শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে বিরাজ করতে পারেনি৷ তবে ভারত এবং চৈনিকদের দেশগুলো বিশ শতকের শেষার্ধে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে৷ বিশেষত হিন্দি ও চীনা ভাষার চলচ্চিত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকেও বেশ উত্কর্ষ অর্জন করেছে৷ তবে আমাদেরকে একুশ শতকে এসে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, চলচ্চিত্র যেভাবেই থাকুক না কেন, চলমানতার সাথে শব্দ এবং সঙ্গীত মিলিয়ে যে অনুভব, সেটি পরবর্তী সময়ে আরো অনেক প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে৷ টিভি বা ভিডিওকে আমরা চলচ্চিত্র থেকেই আসা বলে সঙ্গত কারণে মনে করতে পারি৷

বাংলাদেশেও চলচ্চিত্র একটি গুরুত্বপূর্ন শিল্প হিসেবে বিরাজ করে৷ পাকিস্তান আমলে মুখ ও মুখোশ দিয়ে এ মাটিতে সিনেমার জন্ম৷ সে সিনেমা পাঁচ দশক অতিক্রম করে৷ এখন চরম সঙ্কটে আবর্তিত হচ্ছে৷ পাকিস্তন আমলে উর্দু চলচ্চিত্র ও উপযুক্ত তথা পর্যাপ্ত বাজারের অভাব এই সঙ্কটের অন্যতম কারণ ছিলো৷ তত্কালে এই দেশে পুঁজির অভাব, পাত্র-পাত্রী বা শিল্পীর সঙ্কট, এমনকি পরিচালক-কুশীলবদের অভাবের পাশাপাশি সিনেমার প্রযুক্তি ব্যবহার করে একে একটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য খুব বেশি প্রতিভাবান খুঁজে না পাবার বিষয়টিও উল্লেখ করা উচিত্৷ জহির রায়হান ও তার টিমমেটরা এবং সুভাষ দত্তসহ অনেকের মেধা অবশ্য আমাদের জন্য গর্বের ছিল৷ কিন্তু আমাদের সেই সৌভাগ্য স্থায়ী হয়নি৷ জহির রায়হানকে পাকিস্তনী ঘাতকরা হত্যা করে৷ তার টিমমেটরাও এখন নীরব৷ স্বাধীনতার পর এই শিল্প প্রযুক্তিগত সহায়তা পায় এফডিসিতে রঙিন ফিল্ম আসার মধ্য দিয়ে৷ কিন্তু এখন এই শিল্পের সঙ্কট নানাবিধ হতে থাকে৷ অশ্লীলতা ও মেধাহীনতার পাশাপাশি নানা ধরনের কেলেঙ্কারি আমাদের চলচ্চিত্রের সাথে জড়িয়ে আছে৷ এমনকি সাম্প্রতিক ইয়াবা কেলেঙ্কারির সাথে এই শিল্পের নায়িকাদের নাম শোনা যাচ্ছে৷ এখন স্যাটেলাইট টিভি এবং হিন্দি চলচ্চিত্রের দাপটে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প চাপের মাঝে আছে৷ তবুও এই শিল্পটি হারিয়ে না গিয়ে এর রূপান্তর হবে, সেটিই আমাদের বিশ্বাস৷ আমরা আজকের প্রেক্ষিত থেকে এই রূপান্তরের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করবো৷

অনেকদিন ধরেই আমি ডিজিটাল ভিডিও নিয়ে কথা বলে আসছি৷ ইদানীং আর বলতে হয় না৷ এখন সম্ভবত বিশ্বের কোনো ভিডিও ক্যামেরা নির্মাতাই এনালগ ক্যামেরা নির্মাণ করেন না৷ সম্ভবত এখন আর কেউ এনালগ পদ্ধতিতে ভিডিও সম্পাদনা করেন না৷ এমনকি এনালগ ট্যাপের ব্যবহারও প্রায় নেই৷ ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ডিজিটাল ট্যাপ এখন সর্বজনগ্রাহ্য মানে পরিণত হয়েছে৷ ডিজিটাল স্টিল ক্যামেরা নিয়েও কোনো প্রশ্ন নেই৷ তবে এখনো মানুষ কাগজে ছাপা ছবির অ্যালবাম দেখতে ভালোবাসে৷ যতদিন কমপিউটার প্রতিটি মানুষের হাতে বসবাস করা শুরু করবে না বা মোবাইলের স্মৃতিশক্তির পরিমাণ বাড়বে না, ততদিন এই অবস্থাটি হয়তো থাকবে৷ কিন্তু এক সময়ে কাগজের ছবিও আমাদের স্মৃতি হয়ে যাবে৷ আমি এখন এমন অনেককে জানি, যারা ছবি সংরক্ষণের জন্য ইয়াহু গুগলের মেইল বক্স ব্যবহার করেন৷

কিন্তু সিনেমার অবস্থাটি কতটা ডিজিটাল হবে, সেটি নিয়ে এখনো আমাদের দেশে বিপুল বিতর্ক রয়েছে৷ আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের শতকরা ৯৫ জনই সিনেমার ডিজিটাল রূপান্তরকে বিশ্বাসই করবেন না৷ এমনকি এখনো এই বিতর্কও হচ্ছে, সিনেমা হলগুলো এদেশে থাকবে কি না বা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার দর্শক থাকবে কি না৷ এরই মাঝে আমরা নাজ-গুলিস্তনের মতো অভিজাত সিনেমা হলকে শপিং সেন্টার হতে দেখেছি৷ এলিফ্যান্ট রোডের মল্লিকা সিনেমা হলটিও শপিং সেন্টার হয়ে গেছে৷ অভিজাত সিনেমা হল শ্যামলী ভাঙ্গার নোটিস ঝুলছে৷ বিউটি সিনেমা হলের পরিণতিও একই দিকে৷ কোনো একদিন আমরা অভিসার বা মধুমিতার কথাও শুনবো, এগুলো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে৷ ঢাকা শহরের এসব হল ভাঙ্গার কারণটি অনেক বেশি অর্থনৈতিক৷ কারণ, এগুলো ভেঙ্গে শপিং মল বা ব্যবসায় কেন্দ্র করা হলে তা থেকে যত আয় বা আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায় তার তুলনায় সিনেমা হল চালানো মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷ কিন্তু তার পরও ঢাকার বসুন্ধরা কমপ্লেক্সে নতুন অভিজাত সিনেমা হল তৈরি হয়েছে সম্প্রতি৷ কমপিউটারের সহায়তায় এর ব্যবস্থাপনা করা হয় বলে এর মালিক আমাকে জানিয়েছেন৷ অন্যদিকে আমেরিকার মতো জায়গায় এখনো শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে নতুন সিনেমা কমপ্লেক্স বানানো হচ্ছে৷

সম্প্রতি শিকাগোর উপকণ্ঠে রোজমেন্টে মুভিকো নামের একটি প্রতিষ্ঠান চার হাজারেরও বেশি আসনবিশিষ্ট ১৮টি পর্দার একটি সিনেমা কমপ্লেক্স নির্মাণ করে এর উদ্বোধন করেছে৷ বিষয়টি বিশ্ববাসীকে চমকে দেবার মতো৷ এর অন্যতম কারণ, এ কমপ্লেক্স হলো বিশ্বের প্রথম একটি সিনেমা কমপ্লেক্স, যাতে ৪কে ডিজিটাল প্রজেক্টর, সিনেমা প্রজেক্ট করার জন্য কমপিউটার সার্ভার এবং ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এটি হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ফিল্ম মানের ৪কে ডিএলপি প্রজেক্টরসমৃদ্ধ একটি কমপ্লেক্স, যা আগামী দিনের সিনেমা হলের একটি মাইলফলক৷ সনির ৪কে (হাইডেফিনিশন মানের চাইতে চার গুণ বেশি পিক্সেল প্রদর্শন করার ক্ষমতাসম্পন্ন) প্রজেক্টরের এই প্রথম আত্মপ্রকাশকে বলতেই হবে যে ডিজিটাল সিনেমার প্রকৃত সূত্রপাত হলো৷

এই সর্ম্পকে আরো কিছু কথা বলার আগে সবার জন্য এই কথাটি আমি বলতে চাই, সিনেমার ডিজিটাল যাত্রা আসলে দুদিক থেকেই হচ্ছে৷ সিনেমার ডিজিটাল হবার প্রথম কাজটি হচ্ছে এটি বানানোর জন্য সেল্যুলয়েড বা ফিল্ম ব্যবহারের বদলে কমপিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে৷ আরো স্পষ্ট করে বললে এটি বলতে হবে, সিনেমার শুটিং ফিল্মের ক্যামেরায় না করে ডিজিটাল ক্যামেরায় করা হচ্ছে৷ আরো বেশি স্পষ্ট করে বললে ফিল্মের ক্যামেরার বদলে ট্যাপের ক্যামেরা এবং এরপর ট্যাপ ফেলে দিয়ে কমপিউটারের হার্ডডিস্কে ফিল্ম শুটিং করা হচ্ছে৷

সিনেমার এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা নিয়ে আরো অনেক আগেই আলোচনা হয়ে থাকতে পারে৷ তবে এটি ভাবা হয়নি, সিনেমায় সাধারণ ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করা যাবে কি না৷ এই বিতর্কের আগে অবশ্য প্রফেশনাল ভিডিও বা ব্রডকাস্ট মানের ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করা যাবে কি না, সেটি নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়৷ ১৯৯৭ সালে আমি যখন টিভির জন্য প্রথম ডিভি ক্যামেরা ব্যবহারের কথা বলি, তখন লোকে আমাকেই পাগল বলেছে৷ তাদের ধারণা ছিলো, এই ক্ষুদ্র যন্ত্রটি কি করে পেশাদারি মানের কাজ করতে সহায়তা করবে৷ পরে যখন আমি বিটিভির একটি অনুষ্ঠান এই ডিভি ক্যামেরা দিয়ে তৈরি করা শুরু করি, তখনও লোকজন বার বার আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, এটি বেটা মানের হবে না৷ তখনও অনেকেই এমনকি কমপিউটারে টিভির অনুষ্ঠান সম্পাদনা করলে তার মান ভালো থাকে কি না সেসব নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুনেছি৷ তবে অবস্থা বিগত এক দশকে বদলে গেছে৷ এখন টিভির জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি শুধু গ্রহণযোগ্য নয়, চরম বাস্বতা৷ বিটিভি নিজে এখন ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করে৷ এমনকি বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা দামের কনজ্যুমার ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করে৷ এখন এসব ক্যামেরার ছবির মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হয় না৷

কিন্তু সিনেমা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়৷ কারণ, সাধারণ ডিভি ক্যামেরায় যেখানে মাত্র ৫০০-র মতো হরাইজন্টাল লাইন থাকে সেখানে সিনেমার জন্য ব্যবহার করা ফিল্মে লাইনের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার বলে মনে করা হয়৷ ফলে ডিভি ক্যামেরা দিয়ে ফিল্ম বানানোর কথা মোটেই ভাবা হয়নি৷ কেউ কেউ হয়তো দুঃসাহস করেছেন৷ কিন্তু পেশাদারি মানের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে৷ দিনে দিনে ডিজিটাল ক্যামেরার মান আরো বেড়েছে৷ টিভির মানও বেড়েছে৷ টিভির এখন পেশাদার মানের নাম হলো এইচডি-হাইডেফিনিশন৷ আগামীতে আমরা টিভি সম্প্রচারের জন্যও এই মান পাবো৷ এই মানের অনুষ্ঠান তৈরির জন্য বাজারে আসে এইচডি মানের ক্যামেরা৷ ট্রাডিশনালি এইচডি ক্যামেরার সর্বোচ্চ মান এখন ১৯২০ X ১০৮০ পিক্সেল৷ এটি টিভির জন্য অনেক ভালো হলেও সিনেমার জন্য যথেষ্ট নয়৷ তবে মন্দের ভালো হিসেবে অনেকেই ছবি তৈরি করার জন্য এইচডি বাছাই করে থাকেন৷ এক্ষেত্রে নির্মাতারা এইচডি টিভিতে শুটিং করে সম্পাদনা করেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে৷ তারপর তাদের সেই সম্পাদিত চলচ্চিত্রকে সেল্যুলয়েডে রূপান্তর করা হয়৷ এরপর সেল্যুলয়েড থেকে সিনেমা হলের প্রচলিত কার্বনভিত্তিক প্রজেক্টরে প্রদর্শন করা হয়৷

কিন্তু সনির ৪কে প্রজেক্টর বাজারে আসার পর সিনেমার ডিজিটাল প্রজেকশন ক্ষমতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়৷ এটি এখন ৪০৯৬ X ২১৬০ বা এইচডির চার গুণ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেছে৷ ফলে এখনো যা শুটিং করা হয় তার মান যা প্রজেক্ট করা হয় তার অর্ধেকের নিচে রয়ে গেছে৷ লড়াইটা এখন তাই কবে কত দ্রুত ক্যামেরার মান প্রজেক্টরের মানের সমান হবে৷ আমরা আশা করতে পারি অতি দ্রুত ক্যামেরার পিছিয়েপড়া প্রযুক্তি প্রজেক্টরের সমমানে পৌঁছাবে৷

বাংলাদেশের অবস্থাটি ভিন্ন৷ এখানে সিনেমা হলে বসুন্ধরা সিটি বা ঢাকার অন্য দুয়েকটা হল বাদে মিরপুর বা জিঞ্জিরায় তৈরি সাধারণ লোহার প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয়৷ এগুলোর মান প্রচলিত বেটা মানের ভিডিওর সমানও নয়৷ ফলে ৪কে প্রজেক্টর এখানে কোনো বিষয় নয়৷ সাধারণ ডিজিটাল ক্যামেরায় শুটিং করে, সেটি ডিজিটালি সম্পাদনা করে তাকে সেল্যুলয়েডে রূপান্তর করে আমাদের সাধারণ সিনেমা হলে তা সহজেই প্রদর্শন করা যাবে৷ এতে দর্শক প্রযুক্তির তারতম্য টের পাবেন বলে মনে হয় না৷ ফলে বাস্বতা হলো, একটি এইচডি ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে শুটিং করে বাংলাদেশের সেরা সিনেমাটিই এখন বানানো সম্ভব৷ কারিগরি দিক থেকে এর কোনো ত্রুটি থাকবে বলে মনে হয় না৷ সেই অবস্থায় বাংলাদেশে সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রেও সাধারণ ডিজিটাল প্রযুক্তির পদচারণা শুরু করা কঠিন নয়৷ সম্প্রতি সেই কাজটি শুরু হয়েছে৷ দুই তরুণ- প্রপেল নামের একজন ডিজিটাল প্রযুক্তিবিদ এবং প্রয়াত চলচ্চিত্রকার দিলীপ বিশ্বাসের পুত্র দেবাশীষ বিশ্বাস এই দুঃসাহসী কাজ শুরু করেছেন৷ শুভবিবাহ নামে একটি সিনেমা বানাচ্ছেন এরা, যাতে এইচডি ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে৷ ছবিটি এই লেখা প্রস্তুতের সময় সম্পাদনা টেবিলে ছিল৷ মেকিন্টোস কমপিউটারে ফাইনাল কাট প্রো-৬ সফটওয়্যার দিয়ে এর সম্পাদনার কাজ এরই মাঝে প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে৷ এটি সম্পাদনার পর সেল্যুলয়েডে রূপান্তর করে সিনেমা হলে দেখানো হবে৷ নির্মাতারা আশা করছেন, আগামী কোরবানির ঈদে এটি মুক্তি পাবে৷

এই সিনেমাটি বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস বদলে দেবে৷ কারণ এটি প্রমাণ করবে, প্রচলিত সেল্যুলয়েড ক্যামেরা সিনেমা বানানোর জন্য অপরিহার্য নয়৷ বরং সাধারণ ডিজিটাল ক্যামেরার মান প্রচলিত ক্যামেরার চাইতে শুধু উন্নতই নয়, এর আর্থিক মূল্য অনেক ভালো৷ প্রসঙ্গত এটিও উল্লেখ করা দরকার, এফডিসিতে এরই মাঝে টেলি সিনে এবং ডিজিটাল সম্পাদনার প্রযুক্তিও প্রচলিত হয়েছে৷ ফলে অর্ধ ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন এফডিসিতেই রয়েছে৷ যারা পুরো ডিজিটালে আস্থা রাখতে পারেন না তাদের জন্য এটিও একটি সমাধান হতে পারে৷

ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৭ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস