• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-কৃষি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: শাইখ সিরাজ
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-কৃষি
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-কৃষি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকা
বাংলাদেশে ই-কৃষি, ইলেক্ট্রনিক ও মুদ্রণ মাধ্যমের ভূমিকা, বেসরকারি খাতের ভূমিকা, সরকারি খাতের ভূমিকা, ই-কৃষি ও কৃষক, ই-কৃষির সমস্যা ও সম্ভাবনা।



ই-কৃষি। যথাযথ ও সময়োপযোগী একটি পদবাচ্য। কৃষির সাথে ই-যুক্ত করাটি যেন যুগেরই চাহিদা মেটানো। কারণ, তথ্যকে যদি ধরা হয় উন্নয়নের প্রধান বাহন, তাহলে ই বা ইলেক্ট্রনিক প্রবাহকে ধরতে হবে তথ্যপ্রবাহের মূল শক্তি। আজকের পৃথিবীতে খুবই প্রাসঙ্গিকভাবে সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই ই-প্রবাহকে যতটা কার্যকর ও যুৎসইভাবে বা টেকসইভাবে কাজে লাগানো যাবে, ততটা দ্রুত পূরণ করা যাবে অভীষ্ট লক্ষ্য।

আলোচনার গভীরে প্রবেশের আগে একটু প্রেক্ষাপট বর্ণনা প্রয়োজন। ই-কৃষি পদবাচ্যটি নতুন হলেও এর শক্তিশালী প্রবাহ কিন্তু অনেক পুরনো। অনেক আগে থেকেই আমরা এর সুফল পাচ্ছি। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের কৃষি উন্নয়নেও রয়েছে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষের ছিল তথ্যের চাহিদা। আজকের সভ্য ও ব্যাপক বিকশিত সময়ে তথ্যকে আমরা বেশি শক্তিশালী হিসেবে চিহ্নিত করি। যার কাছে যত বেশি তথ্য আছে, সে তত সবল। আর সে দুর্বল, যার কাছে তথ্য নেই।

মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে আমরা যে বিষয়গুলোকে প্রধানত চিহ্নিত করি তা হচ্ছে : অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা। কৃষিকাজ অথবা অন্যের কৃষি জমিতে শ্রম দেয়ার সুবাদে তৃণমূলের গরিব পরিবারে কোনোমতে খাদ্যের যোগান হলেও অন্যান্য চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে তাদের হিমশিম খেতে হয়। ই-কৃষি বা ইলেক্ট্রনিক কৃষি তথ্যপ্রবাহের মূল কেন্দ্রবিন্দু শিক্ষা ও বিদ্যুৎ সুবিধা। কারণ, শিক্ষা হচ্ছে তথ্যপ্রবাহের মধ্যে সম্পৃক্ত হওয়ার মূল শক্তি, আর বিদ্যুৎ হচ্ছে তথ্যপ্রবাহের অন্যতম নিয়ামক শক্তি। মনে রাখতে হবে, দেশে সার্বিক সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ। সারাদেশে বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছে ৩২ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ২০ শতাংশ মানুষও এই সুবিধার আওতায় নেই। সরকারি-বেসরকারি ও আমত্মর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের দেশের এই বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, পরিকল্পনা গ্রহণ, মঞ্জুরি বরাদ্দ ইত্যাদি হলেও তৃণমূল পর্যায়ে তার ছিটেফোঁটা পৌঁছে না। আপাতদৃষ্টিতে এই না পৌঁছানোর বিষয়টিকে সহজে ও একবারে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নের যে গতি তা অত্যমত্ম ধীরে প্রবহমান। এর নেপথ্যের কারণ হলো, তথ্য না জানা। তথ্যের অধিকার সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ সচেতন নয়। আবার একইভাবে তথ্য পাওয়ার অনুকূল ব্যবস্থাগুলোও তাদের কাছে ততটা সহজলভ্য নয়। এর জন্য আমরা গ্রামে বসবাসকারী জনগণকে দায়ী করতে পারি না বরং বলতে পারি তথ্য পাওয়ার অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করার প্রশ্নে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। ঠিক এই সময়ে এসে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে প্রধান বাহন হিসেবেও ই-কৃষিকে চিহ্নিত করতে পারি। নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়গুলোকে একটু খুলে বলা প্রয়োজন।



ই-কৃষির জন্য বেশ কয়েকটি উপকরণকে আমরা বিবেচনায় আনতে পারি : ০১. টেলিভিশন, ০২. বেতার, ০৩. কমপিউটার, ০৪. ইন্টারনেট, ০৫. মোবাইল, ০৬. ভিসিডি/ডিভিডি এবং ০৭. চলচ্চিত্র।

মোদ্দা কথা, ইলেক্ট্রনিক প্রবাহের মধ্য দিয়ে কৃষিতথ্য সরবরাহের প্রক্রিয়াকেই একবাক্যে ই-কৃষির আওতায় আনা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের বাইরে রয়েছে ১০টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এবং বিবিসিসহ ৫টি এফএম রেডিও। এরপরই আসে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন। দেশে এখন মোবাইল কোম্পানি রয়েছে ৬টি। এগুলো হচ্ছে : গ্রামীণফোন, সিটিসেল, বাংলালিংক, একটেল, টেলিটক ও ওয়ারিদ। এগুলোর মোট গ্রাহকসংখ্যা ৫ কোটির ওপরে। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলাই টেলিকমিউনিকেশনের আওতার মধ্যে এসেছে। উল্লেখ্য, মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের মধ্যে ১০ লাখ ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় এসেছে। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে বিশেষ করে সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পর্যমত্ম এর প্রভাব পৌঁছেছে। বলাবাহুল্য, ই-কৃষির বৈপ্লবিক অগ্রযাত্রার প্রধান বাহন হিসেবে মোবাইল ফোন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এখন একজন সামান্য লেখাপড়া জানা সাধারণ কৃষকও তার হাতের মোবাইল ফোনটি অনায়াসে চালাতে পারে এবং নাম ও ফোন নম্বর চিনে সে তার কাঙ্ক্ষিত নম্বরে ফোন করে খোঁজখবর জানতে পারে।

এবার আমরা নজর দিতে চাই ই-কৃষির গোড়ার দিকে। ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের সুফল আমরা পাচ্ছি অনেক আগে থেকে। অর্থাৎ আমরা ই-কৃষির মধ্যে ঢুকেছি প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। ষাটের দশক থেকেই এদেশে পাকিস্থান বেতার তথ্য ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আওতায় কৃষি উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম প্রচার করত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাভের পর কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীকে শ্রোতা হিসেবে পাওয়া এবং তাদেরকে কৃষির নানা বিষয় সম্পর্কে অবহিত করার লক্ষ্যে জোরেশোরে বিভিন্ন কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এসব অনুষ্ঠানের পরিধি দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। গ্রামবাংলার জনগণের মধ্যে বেতারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশ বেতারের সব আঞ্চলিক কেন্দ্র শতকরা ৬০ ভাগ বিনোদনমূলক ও ৪০ ভাগ শিক্ষা ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বেতার প্রতিদিন জাতীয় অনুষ্ঠানসহ ছয়টি কেন্দ্রের আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সর্বমোট ৭ ঘণ্টা কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে।

একই সাথে শোনা ও দেখার গণমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের শক্তি, কার্যকারিতা সন্দেহাতীতভাবেই অনেক বেশি। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর পরপরই অল্পবিস্তার কৃষি ও পল্লী উন্নয়নবিষয়ক অনুষ্ঠান থাকলেও সেগুলোর কার্যকারিতা ও দর্শকপ্রিয়তা ছিল না বললেই চলে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে কৃষি ও জনকল্যাণমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থেকে ওই অনুষ্ঠানগুলো করা হতো। কিন্তু একটি কৃষি ও পল্লী-উন্নয়নবিষয়ক অনুষ্ঠানকে গণমুখী করে তোলা কিংবা বিনোদনপিয়াসী শহর-গ্রামের সাধারণ দর্শকের দৃষ্টি কাড়ার জন্য নেপথ্যে যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন, সে সময় তা ছিল না। ছিল না দর্শকদের সাথে কৃষকদের সেতুবন্ধন গড়ে তোলার মতো কোনো কার্যকর উদ্যোগ। এর আগে নিরক্ষর কৃষকদের কাছে তথ্যের বাহন হিসেবে রেডিওই ছিল একমাত্র ভরসা।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে এই প্রতিবেদক মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান উপস্থাপন শুরু করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই একটি নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ছিল : কৃষিতথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে টেলিভিশন সবচেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দেশে কৃষি ব্যবস্থার মধ্যে এমন কতগুলো অভাবিত পরিবর্তন এসেছে, যেগুলোর পেছনে গণমাধ্যমের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ষাটের দশকের সূচনায় এদেশে যে সবুজ-বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তার পেছনে রেডিওর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

এর আগেও বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমার দেশ, কাজের কথা নামে কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান হতো। সে সময় যে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উপলব্ধিতে আসে, তা হালো এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান বেশি গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও গভীর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।

একথা অনস্বীকার্য, মাটি ও মানুষ-ই এদেশের প্রথম অনুষ্ঠান, যেটি অত্যন্ত কার্যকরভাবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে বাণিজ্যিক কৃষিতে। ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো গ্রামীণ জনপদের সমস্যা-সম্ভাবনা ও সফলতার চিত্র লাগসইভাবে তুলে ধরা হয়। গ্রামের বেকার যুবক থেকে শুরু করে শহরের একজন গৃহিণীকেও আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়। কোনো সমাজের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থাভেদে সে সমাজের গণমাধ্যমের ব্যবহার নিশ্চিত হয়। আবার সমাজে গণমাধ্যমের ব্যবহারের ধরনের ওপর এবং গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণের মাত্রার ওপর ওই সমাজের উন্নয়ন ও গতিধারা নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতির ভিত্তি কৃষির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কাজেই দেশের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম ও সে সময়ের একমাত্র টেলিভিশনে কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হওয়ার বিষয়টি ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই ঐতিহাসিক ও বৈপ্লবিক অগ্রগতির মূল রূপকার বস্ত্তত ই-কৃষি। আজ সময়ই বলছে এর মধ্য দিয়েই পরিপূর্ণ ও ব্যবহারিক ধারণা এসেছে ই-কৃষির।

এখানে অত্যমত্ম প্রাসঙ্গিক কারণে এই প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত কিছু প্রসঙ্গ উল্লেখের দাবি রাখে। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যমত্ম ১৪ বছর এই প্রতিবেদক বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে গণমাধ্যমের কল্যাণে কৃষি জাগরণের অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখার সুযোগ পান। এর মধ্য দিয়ে শুধু যে গণমাধ্যমের শক্তি আবিষ্কার ঘটে তা নয়, আবিষ্কার ঘটে প্রযুক্তির শক্তি। পরে যখন একজন সম্প্রচারক এবং বেসরকারি টেলিভিশনের অংশীদার হিসেবে গণমাধ্যমকে কৃষি উন্নয়নে কাজে লাগানোর প্রয়াস নেন এই প্রতিবেদক, তখন একে একে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে কৃষিকে এগিয়ে নেয়ার অসংখ্য জানালা যেন উন্মোচিত হতে থাকল। স্বভাবতই ২০০৪ সালে চ্যানেল আইতে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ শুরু করার পেছনের স্বপ্ন, লক্ষ্য কিংবা কর্মসূচি যা-ই বলি না কেনো, সবকিছুই ছিল একেবারে নতুন। সেখানে ছিল কতটা কার্যকরভাবে টেলিভিশনের শক্তিকে ব্যবহার করা যায় এমন বিষয়। বিশেষ করে কৃষিপণ্য বাজারজাত করা, কৃষি উপকরণ প্রাপ্তিতে কৃষকের সমস্যার জায়গাটি চিহ্নিত করা, কৃষিকে শিল্পে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া, পরিবর্তিত পরিবেশ জলবায়ু এবং জনসম্পদের সার্বিক সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে কৃষিকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ, কৃষকের অধিকারের প্রশ্নে সচেতন করে তোলা, রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ইস্যুতে কৃষকের অংশ নেয়া নিশ্চিত করা, বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার ধারণার সাথে কৃষি ও কৃষকের সেতুবন্ধন তৈরি করা এবং সর্বোপরি কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ, কৃষকের সাংগঠনিক সচেতনতা এবং তথ্য বিনিময়ের সক্ষমতায় উদ্বুদ্ধ করার দিকে জোর দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি। এর মধ্য দিয়েই এসেছে কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট কার্যক্রমের ধারণা, যেটি এ যাবত গণমাধ্যমে সবচেয়ে কার্যকর একটি কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম বলা যেতে পারে। কারণ, কৃষকের পাওয়া-না পাওয়া, রাষ্ট্রীয় বরাদ্দে কৃষকের ন্যায্যতার অংশ নির্ধারণ, কণ্ঠস্বরকে উচ্চকিত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দারুণ জাগরণ সৃষ্টি করে। পর পর চার বছর এই কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানটিকে জাতীয় বাজেট এবং কৃষকের অধিকার সম্পর্কে গ্রামাঞ্চলের কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীকে দারুণ উজ্জীবিত করতে দেখা গেছে। চ্যানেল আই-এর পক্ষ থেকে এই কার্যক্রমকে শুধু একটি টেলিভিশন কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। এই কার্যক্রমকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তরে। কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেটের ফল বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ২৬ জুন ২০০৭ এবং অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে ২৫ জুন ২০০৭ পৃথক পৃথকভাবে পৌঁছে দেয় সুপারিশমালা হিসেবে, যার মূল ভিত্তি ছিল টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও প্রামাণ্যচিত্র। যেগুলো সরেজমিন ও যথার্থই প্রামাণ্য হওয়ায় সরকারপক্ষ খুব সহজেই ওই কার্যক্রমের কার্যকারিতা বুঝতে সক্ষম হয় এবং কৃষি বাজেটের একটি দিকনির্দেশনা পাওয়ার সুযোগ পায়। দেখা গেছে, বিগত দুটি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আমাদের কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট কার্যক্রমের সুপারিশমালা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। এগুলোই ই-কৃষির সফলতা। এ সফলতার ভেতরেই আসে দেশ-বিদেশের কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণের ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ। বলাবাহুল্য, একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান হিসেবে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনেক দিন ধরেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেরা কৃষি অনুশীলনগুলো তুলে ধরার কাজটি করছে। এক্ষেত্রে সমকালীন তিনটি প্রযুক্তির কথা বলা যেতে পারে, যেগুলো সম্প্রসারণে একবাক্যে টেলিভিশনের বড় ভূমিকার দৃষ্টামত্ম তৈরি হয়েছে, যার নেপথ্যে বড় ভূমিকা হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের। প্রযুক্তি তিনটি হচ্ছে ড্রাম সিডার, গুটি ইউরিয়া ও লিফ কালার চার্ট। এসব টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকের আগ্রহ তৈরির কাজটি করতে পারে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম।

বলা প্রয়োজন, ই-কৃষিতে একটি কম্পোনেন্ট বা উপকরণ আরেকটি উপকরণকে প্রভাবিত করে। যেমন- গত মৌসুমে আলু তোলার দিন-পনেরো আগে খুব শিলাবৃষ্টি হলো। কৃষকরা তাদের সমূহ ক্ষতির কথা তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে চ্যানেল আইকে জানালো। চ্যানেল আই-এর হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরদিন কৃষকের মাঠে গিয়ে সরেজমিন ক্ষতির চিত্র দেখা হয়। সেই সাথে দেখা গেল, কৃষকরা তাদের মোবাইলে শিলাবৃষ্টির ছবি তুলে রেখেছে। সেগুলো তারা আমাদের সরবরাহ পর্যমত্ম করে। কৃষকের মাঠে দাঁড়িয়ে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই ক্ষতির বিষয়াদি নিয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয় কৃষি উপদেষ্টার সাথে। কৃষি উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে মোবাইলে কথা বলেন। তথ্যের ওই ত্রিমুখী সংযোগকে বহুমুখী করে তুলছে ইলেক্ট্রনিক উপকরণ। এটিই প্রকৃতপক্ষে ই-কৃষি। এমন অসংখ্য উদাহরণ ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ই-কৃষির আরেকটি দৃষ্টামত্ম উপস্থাপন করা প্রয়োজন। যেমন- চ্যানেল আইতে উল্লিখিত অনুষ্ঠান প্রচারের সময় আমরা দর্শক মতামতের জন্য কয়েকটি মোবাইল নম্বর স্ক্রল আকারে প্রচার করি। ওই নম্বরগুলোতে অনুষ্ঠান চলার সময় অসংখ্য দর্শক যোগাযোগ করেন, যারা মতামতের পাশাপাশি কৃষির সাফল্য, সম্ভাবনা ও সমস্যার তথ্যাদি দিয়ে থাকেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মপদ্ধতি নিরূপণ, বিষয় নির্বাচন করে। সব মিলিয়ে এখানে গণযোগাযোগের যে বলয় গড়ে উঠেছে, তা মূলত ই-কৃষিকেই নির্দেশ করছে।

আরেকটি বিষয়। দেখা গেছে, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সংবাদ অত্যধিক জনপ্রিয়। যখন কৃষিক্ষেত্রের কোনো বিষয় খবর আকারে তুলে ধরা হয়, তা খুব দ্রুত দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে যাওয়ার ফলে, সাড়া পাওয়া যায়, প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। চলতি বছরের শুরুতে অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি ২০০৮ চ্যানেল আইতে জাতীয় সংবাদের সাথে বিশেষায়িত সংবাদের অংশ হিসেবে কৃষি সংবাদ যুক্ত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে খুব দ্রুত দর্শকদের ব্যাপক সাড়া যেমন মিলে, একইভাবে প্রমাণিত হয়ে যায় এটি সময়েরই চাহিদা। দর্শকরা এমনটিই চাইছেন। ঠিক এক মাস পর সরকারিভাবে চিঠি দিয়ে সব গণমাধ্যমে কৃষি সংবাদ প্রচারের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়। তারপর সত্যিই কৃষি গণমাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হতে শুরু করেছে। কৃষকসহ সাধারণ জনগণও কৃষিক্ষেত্রে তাদের সুবিধা-অসুবিধা ও সমস্যা-সম্ভাবনার প্রশ্নে গণমাধ্যমকে অবগত করার চর্চার মধ্যে এসেছে। এটি অনেক বড় একটি প্রক্রিয়া।

লক্ষণীয়, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি সংবাদপত্রও এখন ই-জার্নালিজমের মধ্যে প্রবেশ করেছে, যা পক্ষামত্মরে ই-কৃষিতে প্রভাব রাখছে। যেমন- বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সংবাদ কার্যক্রম, সংবাদপত্রের মোবাইল সংবাদ আপডেট কার্যক্রম এবং ওয়েব নিউজ মিডিয়ার সংবাদ আপডেট কার্যক্রম। একইভাবে সংবাদপত্রের সংবাদ নিয়ে টেলিভিশনে পর্যালোচনামূলক ও গণপ্রতিক্রিয়াধর্মী অনুষ্ঠানগুলো মুদ্রণ মাধ্যমের, ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের পরিপূরক হয়ে ওঠার প্রয়াস হিসেবেই বর্ণনা করা যায়। কারণ, শুধু কৃষির নিরিখে বিচার করলেও আজকে যদি সংবাদপত্রে সার সঙ্কট কিংবা কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দের কোনো খবর প্রকাশিত হয় তা জনসমক্ষে ব্যাপকভাবে তুলে ধরে টেলিভিশন গণমাধ্যমের ভূমিকাকে আরো জোরদার ও শক্তিশালী করে দেয়।

এখন দেশের ৬৪ জেলার গ্রামে গ্রামে টেলিভিশন সেট ও ভিসিডি পৌঁছে গেছে- যার মাধ্যমে কৃষিজীবী জনগোষ্ঠী যেকোনো ভিসিডি ও ডিভিডি দেখতে পারে। দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রত্যমত্ম অঞ্চলের প্রত্যেকটি চায়ের দোকানে, যেখানে বিদ্যুৎ সুবিধা পর্যমত্ম নেই, সেখানেও এখন ভিড় জমিয়ে ডিভিডি-ভিসিডি দেখানো হয়। এটি সম্প্রসারিত হয়েছে গত এক দশকে। আমরা দেখছি, বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য গ্রামাঞ্চলে বিনামূল্যে ডিভিডি ও ভিসিডি সরবরাহ করছে। এরা তথ্যপ্রবাহের এই ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমের সুবিধাটি কাজে লাগাচ্ছে। এই কার্যক্রমটিকে একটি অনুশীলন বা প্র্যাকটিস হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। দেশের বেসরকারি খাত সচেতনভাবেই এই প্র্যাকটিস চালু রেখেছে। বলাবাহুল্য, দেশের প্রত্যমত্ম অঞ্চলে ডিভিডি-ভিসিডি পৌঁছে যাওয়ার বদৌলতে বিদেশী অপসংস্কৃতিও আমাদের দেশে প্রবেশ করছে। কারণ, আমরা দেশীয় কৃষি শিক্ষা উপকরণ দ্রুততার সাথে পৌঁছাতে পারছি না গ্রামের ওই চা স্টলগুলোতে। এদিকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হলে এই পদ্ধতিতে কৃষি শিক্ষা ও সচেতনতার একটি দিক উন্মোচিত হতে পারে।

এক সময় ই-কৃষি বলতেই রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন কিংবা রেডিওর প্রভাব মুখ্য থাকলেও এখন ই-কৃষি বলতেই বেসরকারি খাতের ভূমিকাই সবচেয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে। কারণ, ই-কৃষির প্রধানতম উপকরণ মোবাইল ফোনের ৬টি কোম্পানিই বেসরকারি বা প্রাইভেট। এর বাইরেও রয়েছে বেসরকারি পর্যায়ে দেশব্যাপী ও আঞ্চলিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক। এরা মূলত যোগাযোগপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগমত্ম উন্মোচন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় এই উন্নয়নের সাথেই ই-কৃষি এখন সময়ের চাহিদা হিসেবে সামনে চলে এসেছে। কারণ, এখন কলসেন্টার, সেলবাজার, কৃষিসংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ইত্যাদির খোঁজ জানতে সংযোগের প্রধান উপকরণ হিসেবে সামনে এসেছে টেলিযোগাযোগ। অবশ্য অপটিক্যাল ফাইবার, স্যাটেলাইট কিংবা ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহরে তথ্য সরবরাহের যে জাল বিস্তৃত হয়েছে, সেখানে এখন সহজেই দেশ-বিদেশের কৃষক একাত্ম হতে পারছে। তবে বর্তমান সময়ে এখনো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ই-কৃষি সম্পর্কে কয়জন জানেন? সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে।

ই-কৃষি বাসস্তবায়নে বেসরকারি খাত যা করতে পারে

মনে হয়, উপরের আলোচনার মধ্য দিয়ে ই-কৃষির কার্যক্রমটি স্পষ্ট করা গেছে। বিশেষ করে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সংবাদ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দেশের কৃষি উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছে, তা নিশ্চয়ই ই-কৃষির কার্যকারিতার একটি মোক্ষম উদাহরণ হতে পারে। কারণ, দেশের সাড়ে বারো হাজার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীর মাধ্যমে একটি প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে পৌঁছতে যেখানে ৫ থেকে ১০ বছরেও সম্ভব হয়ে ওঠে না, সেখানে টেলিভিশনের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যে একটি প্রযুক্তি দেশব্যাপী সাড়া জাগাতে পারে। প্রশ্ন আসতে পারে, দেশব্যাপী স্যাটেলাইট কাভারেজ না থাকলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ তো সেই টেলিভিশনের সুফল পাবে না। সময় পাল্টেছে, যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কিংবা ইন্টারনেট সংযোগ আছে, সেখানেই স্যাটেলাইট সংযোগ পৌঁছে গেছে। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের যুগে খুব বেশিদিন আর আমাদের ক্যাবল সংযোগের ওপর নির্ভর করতে হবে না। সবাই যার যার বাড়িতে ডিটিএইচ সংযোগের মাধ্যমে বিশ্বের স্যাটেলাইট টিভি দেখার সুযোগ নিতে পারবে। উন্নত বিশ্বে এমনকি এশিয়ার দেশে দেশেও এটি চালু হয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল কৃষিনির্ভর দেশ হিসেবে ই-কৃষির প্রধানতম মাধ্যম হিসেবে বিশেষায়িত একাধিক কৃষি টেলিভিশন বা কৃষি চ্যানেল চালু করা বাঞ্ছনীয়। সেটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও হতে পারে, হতে পারে বেসরকারি খাতেও।

যেসব দিকে দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে

শুধু ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই টেলিভিশনসহ অনেক গণমাধ্যমের সুফল পাওয়া সম্ভব। যেমন- জাম্পটিভির মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে একই সময়ে চ্যানেল আই দেখার সুযোগ রয়েছে, বিবিসি কিংবা ভয়েস অব আমেরিকার মতো বিশ্বের অনেক রেডিও ও টেলিভিশন একইভাবে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে পাওয়া সম্ভব। এর সম্প্রসারণ ও বিকাশের কাজটি বেসরকারি খাত করতে পারে।

কৃষিবাজার ও কলসার্ভিস

মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশের সব স্থানের কৃষিপণ্যের বাজারমূল্যের সমতা নিশ্চিত করা যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে কৃষক যেমন মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য থেকে রেহাই পেতে পারে, একইভাবে ভোক্তাও পণ্যের সঠিক মূল্যটি জানতে পারে। এই প্রযুক্তি নিয়েও ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। রয়েছে শুধু পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। বেসরকারি খাত এ ব্যাপারে এগিয়ে আসলে এই কার্যক্রম শুরু হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ২০০৭ সালের মার্চ মাসে ভারতের কেরালা রাজ্যে রাষ্ট্র তথ্যপ্রযুক্তি মিশন টোলমুক্ত কৃষি-বাণিজ্যভিত্তিক কলসেন্টার এবং ওয়েবসাইট চালু করে। এরপর থেকেই কেরালার কৃষক জনগোষ্ঠীর মাঝে কাজ করছে বিপুল উৎসাহ এবং একতা। বৈশ্বিক উন্নয়নের সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকার কারণে সে অঞ্চলের কৃষিকাজ তেমন একটা এগুতে পারছিল না। ই-কৃষির মাধ্যমে সেই এলাকাটিতে এখন বইছে উন্নয়নের জোয়ার। তথ্য নিয়ে সেখানকার কৃষককে আর বিপাকে পড়তে হচ্ছে না।

নেপালের ই-হাটবাজার হলো ই-কৃষির আরও একটি নিদর্শন। সেখানে কৃষিপণ্যের সঠিক দাম ভিডিও ফুটেজসহ দেখতে পারছে নেপালি কৃষকরা। কৃষকের জন্য তথ্যসেবার বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এই তথ্যসেবা সহজ করার জন্য এখন প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিশ্ব। বাংলাদেশে কৃষি এবং কৃষকের প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে মনে হয় যে, তথ্যসেবা সহজ করার বিষয়টির প্রতি জোর দেয়া উচিত। একইভাবে কৃষকের সমস্যা সমাধানে কলসার্ভিস দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যে এর সফলতা দেখা গেছে কৃষকের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে চ্যানেল আইর হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এবং জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালের কৃষকের স্বাস্থ্যসেবার জন্য হটলাইন ৬০১০০ নম্বর চালুর মধ্য দিয়ে।

একইভাবে বেসরকারি খাত থেকেই কৃষকের সব ধরনের সহায়তায় টোল ফ্রি একটি হটলাইনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে কৃষক বিনামূল্যে সেবা নিতে পারবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, পশ্চিমবঙ্গের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অন্নদাতা নামের কৃষি অনুষ্ঠানের জন্য সরকার একটি টেলিফোন নম্বরকে নিখরচায় ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে, যে নম্বরে ফোন করে কৃষকরা কৃষিসেবা পেয়ে থাকে।

কমিউনিটি রেডিও

ই-কৃষির একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো কমিউনিটি রেডিও। কৃষিপণ্যের বাজারমূল্য থেকে শুরু করে যেকোনো কৃষিতথ্যই কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে কমিউনিটি রেডিও দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। অবশ্য দেশে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, বেসরকারি খাতে এই কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের মধ্য দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।

ই-কৃষি ক্লিনিক

ইতোমধ্যে ফসলের রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে কমপিউটার প্রযুক্তি দারুণ সাফল্য এনে দিয়েছে। এখন রোগাক্রামত্ম গাছের পাতা স্ক্যানিং করে নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে রোগের নাম ও প্রতিষেধকের নাম জানা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে কৃষি সাইবার ক্যাফে স্থাপনের মাধ্যমে ফসলের রোগ ও প্রতিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে, যেখানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও ফসলের রোগ নির্ণয়সহ কৃষকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

ই-কৃষি এন্টারটেইনমেন্ট

আমাদের সংস্কৃতির শেকড় প্রোথিত কৃষিতে। আমাদের সংস্কৃতির মূল সুর গ্রামীণ জীবন কাঠামোর ভেতর। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আনন্দ-বিনোদনের মধ্য দিয়েই বিকশিত হয়েছে আমাদের কৃষিনির্ভর জীবন ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে গ্রামীণ কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর আনন্দ উপকরণ যোগান দেয়ার মধ্য দিয়ে কৃষি উন্নয়নের আরেক দুয়ার উন্মোচন করা সম্ভব। যেমন- প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের বড় একটি অংশের মানুষ দারুণ মুষড়ে পড়েন। অনেকে জীবনের সব উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তাদেরকে আবার জাগিয়ে তুলতে বিনোদন আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে। একইভাবে জাতীয় সংস্কৃতির সাথে গ্রামীণ জীবনের বিনোদন আয়োজনকে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রয়োজন গণমাধ্যম। এখানে বিনোদনের মধ্য দিয়ে যেমন কৃষির বিভিন্ন বার্তা কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব, একইভাবে সম্ভব দেশীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়া। জাতীয় জীবনে এমন আয়োজনের প্রভাব উপলব্ধি করে চ্যানেল আই একাধিকবার কৃষকের ঈদ আনন্দ ও বৈশাখী আনন্দ আয়োজন করে, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

ই-কৃষিতে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে

নানা কারণেই আমাদের জীবন ব্যবস্থা নগরকেন্দ্রিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সবই দিনের পর দিন নগরমুখী হয়ে উঠছে। গ্রামীণ কৃষিখাত থেকে উপার্জিত অর্থ ব্যয় হচ্ছে নগরের মানুষের বিলাসিতায়। কৃষিমুখী বিনিয়োগ এখনো হতাশাব্যঞ্জক। এখন সরাসরি কৃষিতে বিনিয়োগ যত জরুরি তার চেয়ে জরুরি কৃষিসংশ্লিষ্ট অবকাঠামোতে বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে ই-কৃষি হতে পারে নতুন বিনিয়োগের সবচেয়ে উৎকৃষ্টতম দিক।
..............................................................................

কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ তৃণমূল পর্যায়ে নিতে হবে
নজরুল ইসলাম
পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, কৃষি মন্ত্রণালয়



দেশের কলসেন্টারগুলোর কৃষিবিষয়ক তথ্যগুলো আপটুডেট নয়। অনেক কীটনাশক আছে যেগুলো বহির্বিশ্বে ব্যবহার করা হয় না, যা বাতিলের খাতায় সেগুলো এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার তাদের কাছে এমন তথ্য আছে যেগুলো অনেক পুরনো। এরা নিজেরা আপটুডেট হতে পারেনি। কলসেন্টারগুলো বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা থেকেই তৈরি করা হয়েছে। এটা কিন্তু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি প্রধান পার্থক্য। এদের বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনার কারণে এরা নিজেদের আপটুডেট করছে না। গ্রামীণের কয়েকটি কলসেন্টারে গিয়ে দেখেছি, সেখানে কৃষকরা যায় না। কারণ, সেখানকার পরিবেশ কৃষকদের উপযোগী নয়। সেগুলো বাজারকেন্দ্রিক। শুধু তথ্য দেয়াই নয়, কৃষকদের কাছ থেকে তথ্য নেয়াও জরুরি। সেই সাথে অঞ্চলভেদে কৃষিতথ্য বিনিময় জরুরি যা এখনও হচ্ছে না। কলসেন্টারে যিনি থাকবেন তাকেও এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ হতে হবে। যাতে কৃষক উপকৃত হয় এবং ফলন বেশি হয় তা ঠিক করে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে ই-কৃষি। কৃষকদের সাথে গবেষকদের যোগাযোগসহ কৃষকদের কথা সাধারণ মানুষের মাঝে জানাতে ই-কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষিবিষয়ক অনেক তথ্য কৃষকদের দেয়া হয়, যা তারা কাজে লাগাতে পারে না।

সরকারিভাবে আমরা কৃষিতথ্য যোগাযোগ কেন্দ্রের মাধ্যমে ইউএনডিপির সহায়তায় কয়েকটি অঞ্চলে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। আমরা কিছু মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে যাচ্ছি যাতে তারা কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক যন্ত্রপাতি দেয়া হবে তারা যাতে কৃষকদের মাঝে সেই জ্ঞান এবং কৃষিবিষয়ক তথ্য বিনিময় করতে পারে।

বেসরকারি খাতের শুরুটা ভালো। কিন্তু তাদের কনটেন্ট উন্নত করতে হবে। এক্ষেত্রে মিডিয়াগুলোকে আরো যত্নবান হতে হবে ।
......................................................................

সাক্ষাৎকার-

ই-কৃষির অপর নাম কৃষকের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
নাঈমুজ্জামান মুক্তা
পিউপল পারস্পেকটিভ স্পেশালিস্ট, এটুআই, ইউএনডিপি



সম্প্রতি ই বহুল চর্চিত একটি শব্দ। আমরা বিভিন্ন খাতের সাথে ই যুক্ত করে নতুন ইমেজ তৈরির চেষ্টা করছি, যেমন- ই-স্বাস্থ্য, ই-শিক্ষা, ই-কৃষি ইত্যাদি।

আসলে ই-কৃষি বলতে বোঝানো হচ্ছে কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ নির্ভরযোগ্যভাবে কৃষক, কৃষিজাত পণ্যের ব্যবসায়ী, সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিজ্ঞানী, পরিকল্পনাবিদ, ভোক্তা ইত্যাদি গোষ্ঠীর কাছে দ্রুততার সাথে পৌঁছে দিতে ইলেকট্রনিক মাধ্যমের (ইন্টারনেট, ইন্ট্রানেট, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি) ব্যবহার।

আমাদের এই কৃষিভিত্তিক সমাজের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য, আমাদের দেশের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের সাথে খাপ খাইয়ে কৃষিরও বিচিত্র রূপ সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ী আদিবাসীদের চাষ পদ্ধতি, হাওড়ের চাষাবাদ এবং সমতলের চাষ পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। এই হাজার বছরের বৈচিত্র্যময় কৃষি ঐতিহ্য সময়ের চাহিদার কাছে আজ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপ নিচ্ছে। কৃষক এখন শুধু পরিবারের জন্যই শস্য আবাদ করে না, সে আজ উৎপাদিত শস্য বাজারে বিক্রি করে নগদ অর্থ আয়ে বেশি আগ্রহী। তাই কৃষিতে ফলন বাড়ানো সময়ের দাবি, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার সাথে সম্পৃক্ত। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই মেলাতে পারি।

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কোন সময়ে কি চাষ করা দরকার, বীজের গুণাগুণ, মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সারের সঠিক মাত্রা, বালাই প্রতিকারের উপায়, উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য বাজারদর ইত্যাদি কৃষকদের দৈনন্দিন তথ্যের চাহিদা দ্রুততার সাথে পূরণ করা যায়। এর বাইরে গবেষকদের মাঠের বাস্তবতা জানা, পরিকল্পনাবিদের মজুদ ও চাহিদা সম্পর্কে জানা- এসব বিষয়ে অনায়াসে ই মাধ্যমগুলো দ্রুত সহায়তা করতে পারে।

আমাদের এসব স্বপ্ন পূরণে কিছু অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, সহজবোধ্য বাংলা তথ্যভান্ডার ও এর নিয়মিত হালনাগাদকরণ ইত্যাদি। আমরা আশা করি, এই সব সমস্যা কাটিয়ে উঠে আমাদের স্বপ্ন পূরণের বাস্তব পদক্ষেপ নেবে নবনির্বাচিত সরকার।
...............................................................................

ই-কৃষক হচ্ছে কৃষি, কৃষক এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়
মো: শহীদ উদ্দিন আকবর
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআইআইডি



বাংলাদেশের কৃষকের নানা সমস্যা। এর মধ্যে কৃষকের প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ পাওয়ার সমস্যাটি অন্যতম। কৃষকরা সময়মতো সঠিক তথ্য ও পরামর্শ পায় না। নানা রোগবালাই তাদের ক্ষতি করে। আবার পণ্যের সঠিক দাম পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হয়। তাই কৃষকদের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য কৃষকদের মাঝে কমপিউটারভিত্তিক তথ্য পরামর্শসেবা যোগানোর একটি উদ্যোগের নাম ই-কৃষক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (বিআইআইডি) সম্প্রতি এ উদ্যোগের আওতায় গ্রামীণফোন কমিউনিটি ইনফরমেশন সেন্টার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন এলাকায় ই-কৃষক কর্মসূচী নিয়ে কাজ শুরু করেছে। দেশের সব কৃষক যাতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে কৃষিকাজে উন্নত উৎপাদন- কৌশল, প্রযুক্তি ও উপকরণের সময়োপযোগী সমন্বয় ঘটাতে পারে- এটাই ই-কৃষক প্রকল্পের লক্ষ্য। কৃষকদের নিজস্ব ধ্যানধারণা, মতামতের সমন্বয় এবং সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া কৃষকবান্ধব তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা সংগঠন অসম্ভব। তাই ই-কৃষক প্রকল্পের মূল কৌশল হচ্ছে- তথ্যপ্রযুক্তির সাথে কৃষক সমাজের মেলবন্ধন ঘটানো।

ই-কৃষক প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী বিস্তৃত সিআইসি নেটওয়ার্ক থেকে চিহ্নিত বেশ কিছু এলাকায় কৃষকদের সংগঠিত করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্ট। ই-কৃষক সংগঠনে স্থানীয় সিআইসি উদ্যোক্তা এবং একজন মাঠকর্মী কাজ করছে বিআইআইডি টিমের সাথে।

কৃষকদের জন্য কি কি তথ্যসেবা জরুরি এবং কখন?

তথ্য-পরামর্শ দেয়া হলে একজন কৃষক তা সহজে প্রয়োগ করতে পারবে? তথ্য প্রদানে কিভাবে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো সম্ভব? তথ্য-পরামর্শ প্রয়োগে আর কি ধরনের সহায়ক সেবা বা সম্পূরক সেবা প্রয়োজন? সেবা ব্যবহার করে একজন কৃষক উপকৃত হচ্ছে কি না, হলে কতটুকু উপকৃত হচ্ছে, তা কিভাবে নির্ণয় করা হবে?

এসব তথ্য জানার জন্য কৃষকদের নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা ব্যাবহার এবং পরামর্শক এনে তাদের আলোচনাকে সহায়তা করছে এ ইনস্টিটিউট। এলাকার কৃষি কর্মকর্তা, বীজ-সার-কীটনাশক সরবরাহকারী, প্রবীণ কৃষক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যোগ দিচ্ছেন কৃষকদের জ্ঞান-তথ্য বিনিময় সভায়।

শেষ কথা

পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে জলবায়ু। কৃষি এখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে প্রতি বছরই নানা বিপর্যয়ে ফসলহানি ঘটছে, কৃষক মুখোমুখি হচ্ছে নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতার। এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও রয়েছে। এই সময়ে ই-কৃষির ওপর গুরুত্ব দেয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। এখন তথ্যঅধিকার বাস্তবায়নই যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্ত্ততি নেয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র সহায়ক হতে পারে। ই-কৃষিই হতে পারে এক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা। কজ ওয়েব

লেখক পরিচিতি : অশোকা ফেলো, কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই।


ফিডব্যাক : rmom@bdcom.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - ডিসেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস