কমিউনিটি রেডিও হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত, তাদের দিয়ে পরিচালিত, তাদের কল্যাণে ব্যবহৃত সম্প্রচার ব্যবস্থা। কমিউনিটি রেডিওতে সবক্ষেত্রে সবস্তরের জনগণের সর্বোচ্চ অংশ নেয়াকে গুরুত্ব দেয়া হয়। তাছাড়া জনগোষ্ঠীতে বসবাসরত সদস্য এবং প্রতিষ্ঠানগুলোই এ ধরনের রেডিও প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় প্রধান চালিকাশক্তি।
কমিউনিটি রেডিও জনগোষ্ঠীকে তথ্যে প্রবেশাধিকার দেয়। কেননা, এ ধরনের রেডিও যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশনেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে। শিক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রধান চালিকাশক্তি তথ্য বিনিময় ও প্রচারকে কমিউনিটি রেডিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে। এছাড়া কমিউনিটি রেডিও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং ইস্যুগুলোর সম্প্রচার করে থাকে। পাশাপাশি জনগোষ্ঠীর সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজস্ব অভিমত নিঃসঙ্কোচে প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়। সর্বোপরি কমিউনিটি রেডিও একটি জনগোষ্ঠীর সবাইকে তাদের নিজস্ব আগ্রহ ও ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকে।
কমিউনিটি রেডিও উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনগণের অংশ নেয়াকে সম্ভব করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ কাঠামো বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে। কমিউনিটি রেডিও সরকার, বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য খাত এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটি অর্থবহ ও কার্যকর অংশীদারিত্ব উন্নয়নে জাদুকরী সাফল্য আনতে পারে।
নির্যাতিত নারীর সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন আইনী সহায়তা। নির্যাতিত নারীর আইনী সহায়তার জন্য অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কমিউনিটি রেডিও ওই নারীর কাছে এ সংবাদটি পৌঁছে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এসিড আক্রান্ত নারীদের জরুরি চিকিৎসা দিয়ে থাকে ঢাকাস্থ এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন। জরুরি ও কার্যকর চিকিৎসা ছাড়াও তারা এসিড আক্রান্ত নারীর আইনী সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে। গৃহনির্যাতনের ক্ষেত্রে কী করণীয়, এসিড আক্রান্ত হবার ক্ষেত্রে কী করণীয়, ধর্ষণ বা অন্যান্য যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে কী করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে কমিউনিটি রেডিও বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠান করতে পারে।
অনেক বছর ধরে রেডিও উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে দূরশিক্ষণ পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। রেডিও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় শিক্ষার ক্ষেত্রে কৌশলগত ভূমিকা পালন করে থাকে এর মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষা পাঠক্রমে এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে কাজ করে। কমনওয়েলথ অব লার্নিংয়ের মতো সংস্থাগুলো প্রযুক্তি ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে রেডিওকে প্রমোশন করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।
বাংলাদেশের মতো প্রেক্ষাপটে যেখানে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙ্গন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিধস ইত্যাদি ঋতুভিত্তিক ও নৈমিত্তিক দুর্যোগ কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে আগেই বিপজ্জনক আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্ক সঙ্কেত প্রচারের ব্যবস্থা জেলে, কৃষকসহ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সাবধান করে দিতে পারে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘দিন বদলের সনদ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারের ১৯ নম্বর পয়েন্টে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে জাতীয় গণমাধ্যম ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি রেডিও চালুর উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।
ইতোমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রণীত হয়েছে কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালা ২০০৮। কমিউনিটি রেডিওবিষয়ক নীতিমালা ঘোষণার পরপরই তথ্য মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ১৮ মার্চ, ২০০৮ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের জন্য আবেদনপত্র আহবান করে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। নীতিমালা মোতাবেক গঠন করা হয় জাতীয় রেগুলেটরি কমিটি, টেকনিক্যাল উপ-কমিটি ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটি।
১৫ জুলাই, ২০০৮ তথ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা সংক্রান্ত জাতীয় রেগুলেটরি কমিটির সভায় ২০০টি আবেদনপত্রের মধ্যে ১১৬টি আবেদনপত্র প্রাথমিকভাবে বাছাই করে এবং নিরাপত্তা ছাড়পত্র দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তথা বিটিআরসিতে পাঠায়।
কমিউনিটি রেডিও উদ্যোক্তাদের কমিউনিটি রেডিওবিষয়ক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কমিউনিটি রেডিও একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একাডেমির উদ্যোগে অব্যাহতভাবে প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও সেমিনার ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে কমিউনিটি রেডিও চালু করার অনুমোদন দেয়া হলে সারাদেশে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে কমপক্ষে ৫০-৬০টি কমিউনিটি রেডিও পরিচালনা করার সক্ষমতা, প্রস্ত্ততি ও মানবসম্পদ রয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নমূলক তথ্যে প্রবেশাধিকার তথা উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য উদ্যোগ আশা করছি।
সুশাসন ও উন্নয়নে কমিউনিটি রেডিও - গ্রামীণ জনগণের কণ্ঠস্বর
বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও চালু করার ব্যাপারে অপর সংগঠনগুলোকে নিয়ে সরকারের সাথে অধিপরামর্শ চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে।
তথ্য মন্ত্রণালয় কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালা-২০০৮ প্রকাশ করেছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এই দ্বিতীয়বার জনঅনুকূল নীতি প্রণীত হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সেজন্য বিএনএনআরসি ‘সুশাসন ও উন্নয়নে কমিউনিটি রেডিও’ নামে একটি হ্যান্ডবুক প্রকাশ করেছে- যা বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা, নিয়ন্ত্রণকারী, ব্যবস্থাপক, কমিউনিটি নেতা ও কমিউনিটি সম্প্রচারকারীদের মৌলিক প্রয়োজন ও চাহিদাসমূহ মেটাতে সহায়তা করবে।
ইতোমধ্যে কমিউনিটি রেডিও পরিচালনার ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়াতে বিএনএনআরসি কমিউনিটি রেডিও একাডেমি প্রতিষ্ঠা করছে। এ একাডেমির পদক্ষেপ হিসেবে একাডেমি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, গোলটেবিল আলোচনা, সেমিনার ইত্যাদি পর্যায়ক্রম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : ceo@bnnrc.net