• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কমপিউটার জগৎ-এর সতেরো বছরের চাওয়া-পাওয়া
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমপিউটার জগৎ
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কমপিউটার জগৎ-এর সতেরো বছরের চাওয়া-পাওয়া



কমপিউটার জগৎ এ সংখ্যাটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে পূরণ করলো এর সতেরো বছরের অভিযাত্রা৷ কমপিউটার জগৎ তার এ অভিযাত্রা অব্যাহত রাখবে অনন্ত সময়ের পথ বেয়ে, সে সুদৃঢ় আস্থা আমাদের মাঝে বদ্ধমূল৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষের পাঠসঙ্গী হবে এ কমপিউটার জগৎ, সে বিশ্বাসও আমাদের মধ্যে জন্মেছে৷ কারণ, সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রয়াসে কমপিউটার জগৎ আজ নিজেই একটি সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান৷ আমরা এর সূচনাপর্বে চেয়েছিলাম এটি নিছক একটি পত্রিকা হবে না, হবে একটি আন্দোলনের নাম, হবে একটি পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান৷



নিশ্চিত অর্থেই একটি চাওয়া-পাওয়ার নকশাকে সামনে রেখেই কমপিউটার জগৎ-এর একদল অভিযাত্রী নিয়ে এর অভিযাত্রা শুরু করেছিলাম আজ থেকে ১৭ বছর আগে ১৯৯১ সালে মে মাসে৷ আর এ অভিযাত্রী দলের অগ্রসেনানী ছিলেন কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা, আমাদের প্রাণপুরুষ ও এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক বলে সুখ্যাত অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদের৷ তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই সত্য, তবে তারই প্রেরণাসূত্রে আমরা কাজ করে চলেছি কমপিউটার জগৎ-এর এই অভিযাত্রাকে অনন্তের দিকে নিয়ে যেতে৷ তিনি কমপিউটার জগৎ নারে যে প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে গড়ে দিয়ে গেছেন, তা সামনে এগিয়ে যাবেই, ইনশাআল্লাহ সে খোরাক তিনিই আমাদের দিয়ে গেছেন৷

আমাদের প্রথম চাওয়া

কমপিউটার জগৎ-এর প্রাথমিক চাওয়া ছিল মূলত দুটি৷ সবার আগে আমাদের লক্ষ্য ছিল এ পত্রিকাটিকেই করতে হবে এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের শক্তিধর এক হাতিয়ার৷ আর এজন্য কমপিউটার জগত্কে করে তুলতে হবে একটি সার্থক পাঠকপ্রিয় তথ্যপ্রযুক্তি পত্রিকা৷ আজ সতেরো বছর পূর্তিলগ্নে আমরা এ ভেবে আনন্দিত যে, আমরা এ পত্রিকাটিকে পাঠকনন্দিত একটি পত্রিকায় রূপ দিতে পেরেছি৷ তাছাড়া আমাদের আরেকটি স্বস্তি হচ্ছে, কমপিউটার জগৎ এদেশের সর্বাধিক প্রচারিত তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকী৷ এই সতেরো বছরে আমরা এর প্রকাশনা নিরবচ্ছিন্নভাবে নিয়মিত রাখতে পেরেছি৷ প্রকাশনায় কোনো ধরনের ছেদ ছাড়াই যথাসময়ে এর প্রতিটি সংখ্যা আমরা পাঠকদের হাত তুলে দিতে সক্ষম হয়েছি৷ এটাও আমাদের সতেরো বছরের ইতিহাসের একটি বড় মাপের পাওয়া৷ কারণ, সীমিতসংখ্যক পাঠকের এদেশে যেখানে সাধারণ পত্রিকাগুলোই নিয়মিত প্রকাশনা চালিয়ে যেতে বার বার হোঁচট খায়, সেখানে তথ্যপ্রযুক্তির মতো কাটখোট্টা বিষয়ের একটি পত্রিকাকে সতেরো বছর ধরে একটানা নিয়মিত প্রকাশ করা তো রীতিমতো অবাক করা ব্যাপার৷ অতএব এক্ষেত্রে আমাদের পাওয়া শতভাগ সন্তোষজনক৷

দ্বিতীয়ত, আমরা কমপিউটার জগৎকে শুধু একটা পাঠকপ্রিয় পত্রিকাই বানাতে চাইনি৷ পাশাপাশি চেয়েছি, এটি হবে এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের কার্যকর এক হাতিয়ার৷ সেক্ষেত্রেও আমাদের পাওয়ার মাত্রা সন্তোষজনকই বলতে হবে৷ কারণ, এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যখন যে দাবিটি তোলা দরকার বলে কমপিউটার জগৎ মনে করেছে, সাহস নিয়ে এ পত্রিকাটি তা উচ্চারণ করেছে৷ চোখে আঙ্গুল দিয়ে সংশ্লিষ্টদের দেখিয়ে দিতে সযত্ন প্রয়াস চালিয়েছে মাসিক কমপিউটার জগৎ৷ কমপিউটার জগৎ তার এ সতেরো বছরের নিয়মিত প্রকাশনার মাধ্যমে যখন যে দাবিটি সামনে নিয়ে এসেছে, এ খাতের সংশ্লিষ্টজনেরা যৌক্তিক কারণেই তাতে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন৷ আমাদের উত্থাপিত কোনো দাবি নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক দেখা দিয়েছে, এমন ইতিহাসের মুখোমুখি আমাদের হতে হয়নি৷ আর সে কারণেই আমাদের জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনে আমরা কমপিউটার জগত্কে একটা মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি৷ এক্ষেত্রে আমাদের চাওয়া-পাওয়া সমান্তরাল, সন্তোষজনক ও সর্বোচ্চমাত্রার৷ অতএব বলতে পারি কমপিউটার জগৎ-এর প্রাথমিক চাওয়া দুটি প্রত্যাশিতমাত্রায় আমরা পেয়েছি৷

মুখ্য চাওয়া :

জনগণের হাতে কমপিউটার

আমাদের মুখ্য চাওয়া ছিল এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এমন একটি সমৃদ্ধতর পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছে দেয়া, যাতে করে এই প্রযুক্তি নামের হাতিয়ারটির ওপর ভর করে জাতি হিসেবে আমরা পৌঁছুতে পারি সমৃদ্ধির স্বর্ণ শিখরে৷ দূর করতে পারি জাতীয় দারিদ্র্য আর অর্থনৈতিক দৈন্য৷ আমাদের সম্যক উপলব্ধি ছিল বরাবর, একমাত্র তথ্যপ্রযুক্তির যথার্থ ও সামগ্রিক ব্যবহারই পারে সে বিষয়টিকে সম্ভব করে তুলতে৷ আমাদের জাতীয় মুক্তি ত্বরান্বিত করতে৷ আর তথ্যপ্রযুক্তির সামগ্রিক ও যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে দেশের গোটা জনগোষ্ঠীকেই সংশ্লিষ্ট করতে হবে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে৷ তাই আমাদের মুখ্য দাবি ছিল : জনগণের হাতে কমপিউটার চাই৷ সে উপলব্ধি থেকে আমরা প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদ শিরোনাম হিসেবে বেছে নেই এই মুখ্য দাবিটিকেই : জনগণের হাতে কমপিউটার চাই৷ কমপিউটার জগৎ-এর প্রথম সংখ্যাটি যখন ১৯৯১ সারে মে মাসে এই স্লোগানধর্মী প্রচ্ছদ শিরোনাম নিয়ে বাজারে বের হলো, তখনই এ স্লোগানটিকে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে স্বাগত জানায়৷ তথ্যপ্রযুক্তিপ্রেমী পাঠকরা মনে করলেন, এর মাধ্যমে তাদের মনের দাবিটিই যেনো ফুটে উঠেছে৷ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা এরই রেশ ধরে দ্বিতীয় সংখ্যাটির প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করি : ব্যর্থতা বা বর্ধিত ট্যাক্স নয়, জনগণের হাতে কমপিউটার চাই৷ আসলে আমরা পরবর্তী এ সতেরো বছরে কমপিউটার জগৎ প্রকাশনার এই মুখ্য দাবিটি বিভিন্ন আদলে, বিভিন্ন ভাষায় এ দাবিরই প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট ছিলাম৷ ভবিষ্যতেও সে চেষ্টা আরো বেগবান হবে, ইনশাআল্লাহ সে নিশ্চয়তা সম্মানিত পাঠকদের আজ দিতে পারি৷

প্রশ্ন আসতে পারে, কেনো সেদিন আমরা জনগণের হাতে কমপিউটার চাই\ এমন দাবিটি তুলেছিলাম৷ এর জবাব অবশ্য ছিল আমাদের প্রথম সংখ্যার সংশ্লিষ্ট প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শুরুতেই৷ সেখানে আমরা লিখেছিলাম : দেশে প্রচলিত রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সুযোগ ও অধিকারের মতোই কমপিউটারের বিস্তারও সীমিত হয়ে পড়েছে মুষ্টিমেয় ভাগ্যবান ও শৌখিন মানুষের মধ্যে৷ মেধা, বুদ্ধি ও ক্ষিপ্রতায় অনন্য এদেশের সাধারণ মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে শাণিত করে তোলা হলে এরাই সম্পদ, জীবন ও বিবেকবিনাশী বর্তমান জীবনটা বদলে দিতে পারে৷ ইরি ধানের বিস্তার, পোশাক শিল্প, হালকা প্রকৌশল শিল্পে কৃষক, সাধারণ মেয়ে, কর্মজীবী বালকেরা সৃষ্টি করেছে বিস্ময়৷ একই বিস্ময় কমপিউটার থেকে সৃষ্টি হতে পারে- যদি স্কুল বয়স থেকে কমপিউটারের আশ্চর্য জগতে এদেশের শিশু ও শিক্ষার্থীদের অবাধ প্রবেশ ও চর্চার একটা ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যায়৷

আমারে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, সাধারণ মানুষের হাতে কমপিউটার না পৌঁছাতে পারলে আর যাই হোক তথ্যপ্রযুক্তি নারে কোনো বিপ্লব কখনোই ঘটানো সম্ভব হবে না৷ আর জনগণের হাতে কমপিউটার পৌঁছাতে হলে দুটি বিষয় প্রয়োজন৷ প্রথমত, সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে সমান্তরাল ও সহযোগিতামূলক উদ্যোগ এবং দ্বিতীয়ত, জনগণের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো৷ এক্ষেত্রে মিডিয়ার যে একটা মুখ্য ভূমিকা আছে, সেটা বরাবর আমাদের উপলব্ধিতে ছিল৷ আর এক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা বরাবরই ছিল ইতিবাচক৷ এই সতেরো বছরের কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত লেখালেখি আর সম্পাদকীয়গুলো তারই প্রমাণবহ৷

জনগণের হাতে কমপিউটার চাই দাবিটির পেছনে যৌক্তিকতা তুলে ধরতে আমরা প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছিলাম : উন্নতদেশগুলোর অবস্থা দেখে উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণের ফলে বেকার তৈরি হওয়ার খোঁড়া তর্ক আজকাল কেউ করেন না৷ একটা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাতে বিনিয়োজিত মূলধন সবচেয়ে কম সময়ে ফেরত পাওয়া যায়৷ তা দিয়ে আবারো কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা যায়৷ তার চেয়ে বড় কথা এর মাধ্যমে উন্নত মেধা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি হয়- সম্পদের কোনো ধরনের স্থানান্তর ছাড়াই, আর সার্ভিস বার বার চড়া দামে বিক্রি করা যায়৷ কাজেই আমাদের দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থায় এটা বেশি গুরুত্ব পাবার দাবি রাখে৷ আমরা মনে করি, কমপিউটারায়নে অর্থনৈতিক সমস্যা বিশেষ কোনো ফ্যাক্টর নয়৷ সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই এ ব্যাপারে মুখ্য৷



প্রশ্ন আসে, জনগণের হাতে কমপিউটার আমরা কতটুকু দিতে পেরেছি? স্বীকার করতেই হবে এ পাওয়াটুকু আমাদের প্রত্যাশিত মাত্রায় ঘটেনি৷ তবে এক্ষেত্রে আমরা কিছুই পাইনি, সেটুকু কিন্তু বলা যাবে না৷ কারণ, আজ এদেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন৷ এরা এখন উপলব্ধি করতে পারছে অফিসে, আদালতে, ঘরে-বাইরে, কল-কারখানায় এমনকি খেতে-খামারেও কমপিউটার একটা প্রয়োজনের নাম৷ এটি আর কোনো বিলাসপণ্য নয়৷ মধ্যবিত্ত ঘরের বাবা-মায়েরা তার সন্তানদের জন্য কমপিউটার কিনছেন প্রয়োজনের তাগিদে৷ অফিস কর্তারা চাকরি হারাবার অনুষঙ্গ হিসেবে এখন আর কমপিউটার ভীতিতে ভোগেন না৷ এটাও তো কম পাওয়া নয়৷ হয়তো এক্ষেত্রে যথা উপলব্ধি ঘটতে আমাদের নীতিনির্ধারকদের অনেক সময়ক্ষেপণ ঘটেছে৷ নয়তো অগ্রগতির চিত্রটা হতো ভিন্ন মাপের৷ তবে আমরা আশাবাদী জনগণের হাতে কমপিউটার পুরোপুরী ও সার্বিকভাবে একদিন পৌঁছুবেই৷ সেদিন আর বেশি দূরে নয়৷ কারণ, কমপিউটার এরই মধ্যে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, এমনটি আজ সবার উলব্ধিতেই৷

শুল্কমুক্ত কমপিউটার পণ্য

জনগণের হাতে কমপিউটার পৌঁছাতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সস্তায় কমপিউটার পাওয়ার ব্যবস্থা করা৷ আর এজন্য প্রথম কাজ হচ্ছে কমপিউটার পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা৷ অর্থাৎ শুল্কমুক্ত কমপিউটার পণ্যের নীতি অবলম্বন করা৷ সে বিশ্বাসের ওপর ভর করে আমরা বরাবর শুল্কমুক্ত কমপিউটার পণ্য পাওয়ার নীতির প্রতি সুদৃঢ় অবস্থান নিই৷ যখনই সরকার পক্ষ এ নীতির বিপরীত কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে, তখনই আমরা সরকারের এ নেতিবাচক পদক্ষেপের সমালোচনায় নেমেছি৷ ১৯৯১ সালের জুন সংখ্যা তথা আমাদের দ্বিতীয় সংখ্যাটি প্রকাশের মুহূর্তেই আমরা খবর পেলাম সরকার নতুন বছরের বাজেটে কমপিউটার পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে ট্যাক্স বসাতে যাচ্ছে৷ তাই আমরা সরকারের কাছে বাজেট প্রণয়ন-পূর্ব মুহূর্তে ব্যর্থতা বা বর্ধিত ট্যাক্স নয় : জনগণের হাতে কমপিউটার চাই শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ ক লেসরকারকে এ ব্যাপারে আগাম সতর্ক করি৷ কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কান না দিয়ে বাজেটে তখন কমপিউটার ও পেরিফেরালসের ওপর শুল্ক বাড়িয়েই থেমে থাকেনি, বরং মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো ভ্যাটও আরোপ করে৷ ফলে দেখা গেলো আগে যেখানে কমপিউটার এবং এর পেরিফেরালের ওপর মোট ২৩ শতাংশ (১০ শতাংশ শুল্ক, শূন্য শতাংশ বিক্রয় কর, ৮ শতাংশ উন্নয়ন সারচার্জ, ২.৫ শতাংশ আইপি ফি, ২.৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, শূন্য শতাংশ ভ্যাট, এই মিলে ২৩ শতাংশ) দিতে হতো নতুন বাজেট প্রস্তাব মতে, নতুন অর্থবছরে সেখানে মোট আয়কর দিতে হবে ৪৩ শতাংশ (২০ শতাংশ শুল্ক, শূন্য শতাংশ বিক্রয় কর, শূন্য শতাংশ উন্নয়ন সারচার্জ, ২.৫ শতাংশ আইপি ফি, ২.৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ১৮ শতাংশ ভ্যাট ইত্যাদি সব মিলিয়ে ৪৩ শতাংশ)৷ সরকারের এই যুক্তিহীন শুল্ক ও করারোপের বিরোধিতা করে পরবর্তী আগস্ট ১৯৯১ সংখ্যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে কমপিউটার এবং পেরিফেরালসের ওপর ভ্যাট শুল্ক অনিয়ম শীর্ষক একটি লেখা ছাপি৷ এ লেআমরা এ ব্যাপারে ছয়টি মৌলিক যুক্তি তুলে ধরি৷ সেখানে আমরা বলতে চেষ্টা করি :

০১. যদি শুল্কের হার বাড়ানো হয় এবং ভ্যাট চাপিয়ে দেয়া হয়, তবে কমপিউটারায়ন বিষয়ক সরকারি নীতি ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না৷

০২. এখাত থেকে শুল্ক ও ভ্যাটের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ খুবই তুচ্ছ৷ বরং এ খাত থেকে পুরোপুরি শুল্ক প্রত্যাহার করলে যে কমপিউটারায়ন ঘটবে, তার থেকে অনেক বেশিমাত্রায় আমরা লাভবান হতে পারবো৷

০৩. এ খাতে নতুন করে ভ্যাট আরোপ প্রকৃতপক্ষে আমাদের নতুন করে ক্ষতির মুখোমুখিই করবে৷

০৪. ভ্যাট আরোপের ফলে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের চূড়ান্ত ব্যবহারকারীরা তথ্যপ্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত হবে৷

০৫. এর ফলে সফটওয়্যার রফতানির বাজারে প্রবেশের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ৷

০৬. যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা শুল্কহার কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে আমাদের শুল্ক বাড়ানো ও ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ যুক্তিহীন৷

আসলে কমপিউটার জগৎ-এর এই সতেরো বছরে আমরা বার বার কমপিউটার পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিটা তুলে ধরে আসছি৷ কমপিউটার জগৎ-এর যারা নিয়মিত পাঠক তারা নিশ্চয়ই লক্ষ করে থাকবেন, প্রায় প্রতিটি নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়ক বাজেট কামনা করে আমরা বিস্তারিত প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারকে প্রয়োজনীয় ও গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েছি৷ সরকার আমাদের কোনো কোনো পরামর্শ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, কোনো কোনোটি থেকে গেছে অপূর্ণ৷ বাজেট আলোচনায় আমরা শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দাবি করেছি৷ কিন্তু এক্ষেত্রে এখনো আমরা পুরোপুরি পাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি, যদিও শুল্কমুক্ত কমপিউটার পাওয়ার দাবিটা আমাদের পূরণ হয়েছে৷

বাংলা ভাষা নিয়ে চাওয়া-পাওয়া

সুপ্রিয় পাঠক হয়তো লক্ষ করে থাকবেন, বাংলা কমপিউটিংয়ের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, এটা বরাবর ছিল আমাদের জোর তাগিদপূর্ণ একটি চাওয়া৷ ১৯৯১ সালের মে মাসে কমপিউটার জগৎ প্রকাশনা শুরুর পর আমাদের সামনে প্রথম ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এসে হাজির হয় ১৯৯২ সালে৷ বাংলা কমপিউটিংয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে এক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা ও সাফল্য তুলে ধরে প্রকাশ করি কমপিউটারে বাংলা, সর্বস্তরে আদর্শ মান চাই শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন৷ এর শিরোনাম থেকে এর আালেজনটুকু উপলব্ধি করতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়৷ সেদিন এ প্রচ্ছদ কাহিনীর ভূমিকাংশে বাংলা কমপিউটিং বিষয়ে আমাদের আশাবাদের কথা তুলে ধরে বলেছিলাম : শুরুতে যদিও শুধু গাণিতিক প্রয়োজনে কমপিউটারের জন্ম, কিন্তু আজ ব্যবসায়-বাণিজ্যে, অফিস-আদালতে, খেলাধুলায়, কল-কারখানাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে৷ জাতীয় উন্নয়নে বিজ্ঞানের এ নতুন আবিষ্কারের অবদানকে ত্বরান্বিত করার জন্য কমপিউটারের সাথে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার ব্যবহার আবশ্যক৷ বাংলা ব্যবহারের মাধ্যমে কমপিউটারকে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার সম্ভব৷ সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহারের অনেক দিনের প্রচেষ্টাতে এর অবদান হবে যুগান্তকারী৷ তাই একই প্রচ্ছদ প্রতিবেদ লেআমাদের তাগিদ ছিল : ইংরেজিতেনির্ভুল, সহজে ও তাড়াতাড়ি লেখার যান্ত্রিক যেসব সুবিধা বিদ্যমান, বাংলা ভাষার সর্বস্তরে ব্যবহার এবং সবার কাছে গ্রহণীয় করে তোলার জন্য বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সেসব সুবিধা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে৷ সে তাগিদের পাশাপাশি উল্লিখিত প্রচ্ছদ প্রতিবেদ লেকমপিউটারে বাংলা ভাষা ব্যবহারে তত্কালে বিদ্যমান সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি এর সম্ভাব্য সমাধানও নির্দেশ করেছিলাম৷ তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিটা ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা বাংলা কমপিউটিংয়ের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে এর সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেছি৷ ফলে এই সতেরো বছরের মধ্যে ১১ বছরের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায়ই আমাদের প্রচ্ছদ কাহিনীর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার তথা বাংলা কমপিউটিং নিয়ে৷ সদ্য বিগত ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যাটির প্রচ্ছদ কাহিনী আমরা সাজিয়েছি বাংলা কমপিউটিং বিষয় নিয়েই৷ এ সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনীর শিরোনামটি হচ্ছে : বাংলা কমপিউটিং ও আমরা৷ এর বাই লেঅন্যান্য সংখ্যায়ই আমরা অসংখ্য লেখা ও প্রতিবেদন ছেপেছি বাংলা ভাষার তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রয়োগ বিষয় নিয়ে৷ এখানে সব শেষে উল্লেখ্য, বাংলা কমপিউটিং নামের একটিমাত্র বিষয় নিয়ে এই সতেরো বছরের ১১টি ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রচ্ছদ কাহিনী তৈরি করা থেকে এটুকু স্পষ্ট যে, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রয়োগ নিয়ে আমরা কতটুকু আগ্রহী৷



এক্ষেত্রে আমাদের চাওয়ার বিপরীতে আমরা কতটুকু পেয়েছি, এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো আমাদের এ সম্পর্কিত সর্বশেষ প্রকাশিত প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে৷ এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শুরুতে আমরা উল্লেখ করেছি : বাংলা সাহিত্যের রয়েছে এক সমৃদ্ধ সম্ভার৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা ভাষায় নোবেল পাওয়া এক অনন্য অর্জন৷ বাংলা ভাষা হচ্ছে এমন একটি সমৃদ্ধ ভাষা, যার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না এমন কিছুই নেই৷ বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রকাশ করার ক্ষমতা আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিকেও ছাপিয়ে গেছে৷ তবে একথা ঠিক বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক সময় আমরা হীনম্মন্যতায় ভোগি৷ এর যথার্থ চর্চা আমাদের মাঝে নেই৷ সুখের কথা, সময়ের সাথে আমাদের ভুল ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করেছে৷ তাই কমপিউটারে বাংলা ভাষার ব্যবহার সময়ের সাথে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর পর্যায়ে উঠে আসছে৷ বাংলা ভাষা যে তথ্যপ্রযুক্তিতে যথার্থভাবেই প্রয়োগযোগ্য একটি ভাষা, সে বিশ্বাসের পারদমাত্রা ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে উপরের দিকে উঠছে৷ এখন আমরা উপলব্ধি করতে পারছি, বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাকে আমরা ছড়িয়ে দিতে পারি কমপিউটার প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে৷ এখন ইউনিকোডের বদৌলতে এটি তেমন কঠিন কোনো কাজ নয়, দুঃসাধ্য কিছু নয়৷

বর্তমানে বাংলা ভাষায় কমপিউটিং নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী দল কাজ করছে৷ এদের মধ্যে অনেকগুলো গবেষণা ও প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, যার প্রয়োগ সামান্য হলেও দেখা যাচ্ছে৷ আসলে এসব গবেষণা ও প্রকল্পসূত্রে বাংলা কমপিউটিং আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে৷ বাংলা ভাষা যে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য সমৃদ্ধ ভাষা, তা নিয়ে আজ আর বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই৷ এ পাওয়াকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই৷ এ পাওনার পথ ধরেই বাংলা ভাষা রচনা করবে তার ভবিষ্যৎ সদর্প এগিয়ে চলা, যে আশাবাদ আমরা লালন করে আসছি বরাবর৷ একই ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষায় প্রযুক্তির প্রসারে আমরা প্রযুক্তি বিষয়ে ৮টি বাংলা বইও প্রকাশ করি৷

সাবমেরিন ক্যাবল

ইন্টারনেট৷ তথ্যপ্রযুক্তির এক বিস্ময়কর অবদান৷ ইন্টারনেট মানুষের কাছে কার্যত খুলে দিয়েছে এক সীমাহীন তথ্যভাণ্ডার৷ যোগাযোগের ক্ষেত্রে বয়ে এনেছে অভাবনীয় সুযোগ৷ এই নব সূচিত সুযোগ-সুবিধার পুরোপুরি সুফল বয়ে আনতে হলে চাই দ্রুতগতির ইন্টারনেট৷ যাকে অভিহিত করা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির সুপার হাইওয়ে না৷লে এই সুপার হাইওয়েতে প্রবেশ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের প্রয়োজন ছিল সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ৷ এই সুপার হাইওয়েতে আমাদের প্রবেশ নিশ্চিত হলো মাত্র নিকট অতীতে৷ কিন্তু আমরা এ সুযোগের হাতছানি দেখতে পেয়েছিলাম সেই দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৯২ সালের নভেম্বরে কমপিউটার জগৎ বিশ্বজোড়া ফাইবার অপটিক ক্যাবল বাংলাদেশের কাছ দিয়ে যাচ্ছে\ শীর্ষক একটি খবর প্রকাশ করার পর৷ এ লেবলা হয়েছিল, ফাইবার অপটিক লিঙ্ক অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব নামে বিশ্বজুড়ে যে ফাইবার অপটিক ক্যাবল বসানো হচ্ছে, তার সংক্ষিপ্ত নাম ফ্ল্যাগ (FLAG)৷ জাপান থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন পর্যন্ত স্বচ্ছ তারের এই টেলিযোগাযোগ লাইন ১৫ হাজার মাইল দীর্ঘ৷ কক্সবাজারের সামান্য দূর দিয়ে যাবে বিশ্বের ১৪টি দেশের মধ্যে সংযোগ প্রতিষ্ঠাকারী এ ক্যাবল৷ ১৯৯৬ সালের মধ্যে এ ক্যাবল চালু হলে প্রতি সেকেন্ডে পাঁচ গিগাবাইট তথ্য দেয়া-নেয়া করতে পারবে৷ এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০০ কোটি ডলার৷



এ খবর প্রকারে পর কমপিউটার জগৎ বাংলাদেশের কাছ দিয়ে যাওয়া বিশ্বজোড়া ফাইবার অপটিক ক্যাবল নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ও কয়েকটি তথ্যসমৃদ্ধ লেখা প্রকাশ করে৷ সর্বোপরি দেশে কমপিউটার জগৎ ১৯৯৩ সালের ৩ অক্টোবর হোটেল পূর্বাণীতে জনগণের হাতে কমপিউটার চাই শীর্ষক সংবাদ সমেলন ও দেশবরেণ্য তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের এক সম্মেলনের আয়োজন করে৷ এ সম্মেলনে অন্যতম দাবি হিসেবে এ ক্যাবল সংযোগে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার কথাটি তোলা হয়৷ সম্মেলনে মূল বক্তা ও কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের অদূরে সাগরতল দিয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক ফাইবার অপটিক ক্যাবল যাচ্ছে এশিয়া থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায়৷ ফ্ল্যাগ নামের এ প্রকল্পের সাথে বাংলাদেশকে যুক্ত করার জন্য দাতা দেশগুলো বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সহায়তা চাওয়া দরকার এবং আমাদের জাতীয় পরিকল্পনায় এ অবকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি৷ এরপর আ লেসি-মি-উই-৩ নারে সাবমেরিন ক্যাবলে আমাদের সংযোগ পাওয়ার সুযোগ৷ এ বিষয়ে কমপিউটার জগৎ-এ বিস্তারিত লেখালেখি করেও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ঘুম ভাঙ্গাতে সক্ষম হইনি আমরা৷ যাই হোক প্রথমে প্রায় বিনা খরচে যে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম, তা পরবর্তীতে দেড় দশক সময় পার করে অনেক মূল্য দিয়ে আমাদেরকে তা পেতে হয়েছে৷ এর পরও সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের ফলে সৃষ্ট সুযোগ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে চলেছে সীমাহীন টালবাহানা৷ অতি সম্প্রতি এ ব্যাপারে একটা গতিশীল প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ দেখা যাক, সে গতিশীলতা অব্যাহত থাকে কতদিন৷

চাই নিজস্ব স্যাটেলাইট

নতুন সহস্রাব্দ শুরুর আগেই বাংলাদেশকে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী হতে হবে৷ এবং এর মাধ্যমে দেশে টেলিকম বিপ্লব সম্ভব৷ একথা উল্লেখ করে আমরা কমপিউটার জগৎ-এর ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সংখ্যায় ২০০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট চাই শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করি৷ এ প্রতিবেদ লেআমরা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করি, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের বসবাস গ্রামে৷ তাই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে টেলিযোগাযোগের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য উন্নয়নশীল দেশ যেমন ব্রাজিল, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের মতো একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, ২০০০ সালের মধ্যে আমাদের অবশ্যই নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী হতে হবে৷ এটা সম্ভব হলে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিপ্লব ঘটানো ছাড়াও বিপুল সম্ভাবনাময় ডাটা এন্ট্রি ও সফটওয়্যার রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় ডাটা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে৷ সে প্রতিবেদনে আমরা এও উল্লেখ করেছিলাম, বাংলাদেশের পক্ষে একটি নিজস্ব উপগ্রহ এখনই সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে সার্ক দেশগুলোর সাথে যৌথ উদ্যোগে এ অঞ্চলের জন্য নিজস্ব উপগ্রহ উত্ক্ষেপণের পদক্ষেপ নিতে হবে৷ আঞ্চলিক টেলিযোগাযোগ ছাড়াও মূলত অভ্যন্তরীণ ও গ্রামীণ টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্যই নিজস্ব উপগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে৷



কিন্তু আমরা লক্ষ করি, সরকারে সংশ্লিষ্ট মহলের এ ব্যাপারে যেনো তেমন কোনো গরজ নেই৷ ফলে সরকারকে এ ব্যাপারে আরেকটা ধাক্কা দেয়ার মানসে ২০০৩ সালের অক্টোবর সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করি : বাংলাদেশেরনিজস্ব স্যাটেলাইট চাই৷ এ প্রতিবেদ লেস্যাটেলাইটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকার প্রয়োজনীয়তার পেছনে যুক্তিসমূহ উপস্থাপন করি৷ একই সাথে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়টিকে একই সংখ্যায় আমাদের সম্পাদকীয়র উপজীব্য করে তুলি৷

সেখানে সম্পাদকীয় বক্তব্যে আমরা উল্লেখ করি : মহাকাশে মানুষের পাঠানো উপগ্রহগুলো আমাদের নানা তথ্য সরবরাহ করে৷ তথ্যের ধরন অনুসরণ করে এগুলোকে নানা নামে জানি : আবহাওয়া উপগ্রহ, যোগাযোগ উপগ্রহ, সম্প্রচার উপগ্রহ, বৈজ্ঞানিক উপগ্রহ, পথনির্দেশক উপগ্রহ৷ আজকের দিনে এসব উপগ্রহ ছাড়া কোনো দেশ চলতে পারে না৷ বাংলাদেশও পারে না৷ আমরা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট ব্যবহার করছি ব্যাপকভাবে৷ তবে এগুলো অন্য দেশের স্যাটেলাইট৷ এজন্য আমাদেরকে দিতে হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা৷ সন্দেহ নেই, নিজস্ব স্যাটেলাইট আমাদের প্রয়োজন আছে৷ ইন্টারনেট ব্যবহারের কথাই ধরা যাক, বাংলাদেশে বৈধ আইএসপির সংখ্যা ৭০টি৷ এর মধ্যে সেরা দশটি আইএসপি গড়পড়তা ব্যবহার করছে এ এমপিবিএস ব্যান্ডউইডথ৷ সব মিলিয়ে বাংলাদেশের চাহিদা সর্বনিম্ন ৯০ এমপিবিএস৷ সর্বোচ্চ ১৫০ এমপিবিএস৷ এক মে.বা. একমুখী ব্যান্ডউইডথ কিনতে খরচ পড়ে ৪ হাজার মার্কিন ডলার৷ সে হিসেবে এর পেছনে আমাদের প্রতিমাসে খরচ করতে হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৬ লাখ ডলার৷ এদিকে দিন দিন বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিধি৷ ফলে এ খাতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমাদের খরচ৷ আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে টানাপোড়েন যাই থাক, এই বাড়তি খরচ যোগান ছাড়া আর কোনো উপায় নেই৷ আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলোকেও যোগাতে হয় উপগ্রহ খরচ৷ এখানে খরচ হয় হাজার হাজার কোটি ডলার৷ আর আমরা যদি নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থা কায়েম করতে পারতাম, তাহলে তথ্যবিপ্লবের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হতে পারতো কোটি কোটি টাকা৷ কেননা, দেশের চাহিদা পূরণ করে মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি দেশে বাড়তি ব্যান্ডউইডথ রফতানি করে আয় করতে পারতাম বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা৷

কিন্তু আালে আমাদের সে চাওয়ার উত্তরণ ঘেনি পাওয়ার পর্যা৷লে তবুও আমাদের তাগিদ রেখেই যাবো অব্যাহতভাবে : আমাদেরনিজস্ব স্যাটেলাইট চাই৷ কারণ, জাতীয় র্স্বাi K_v we‡ePbv †i‡LB Avgv‡`i GB PvIqv|

কমিউনিটি রেডিও প্রযুক্তি

কমিউনিটি রেডিও অনেকটা আমাদের সাধারণ ব্যবহারের রেডিওর মতো৷ কিন্তু এর ক্ষমতা খুবই কম৷ কমিউনিটি রেডিওর একটি ট্রান্সমিশন সেন্টার থাকবে, যার কাজ হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খবরাখবর ইত্যাদি প্রচার করা৷ যার ভিত্তি হবে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতি৷ স্থানীয় রেডিও হিসেবে এটি বেশ কার্যকর৷ পাশের দেশ ভারতেও এখন ব্যবহার হচ্ছে৷ এর সুবিধা হলো, এর ট্রান্সমিশন সেন্টারের খরচ অন্যান্য রেডিও ট্রান্সমিশন সেন্টারের তুলনায় অনেক কম৷ এটি ব্যাটারিতেও চালানো যায়৷ আমাদের দেশের জন্য এই রেডিও সবচেয়ে কার্যকর৷ দুর্যোগের কবলে এর ট্রান্সমিটার সেন্টার পড়লেও এর ব্যাটারি ও ট্রান্সমিটার নিয়ে অন্য স্থানে চলে যাওয়া যায়৷ এরপর নিরাপদ স্থান থেকে আবার সম্প্রচার শুরু করা যায়৷ অনেকটা মোবাইল রেডিও সেন্টারের মতো এর ট্রান্সমিশন সম্ভব৷ কমিউনিটি রেডিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উপযোগী৷ কারণ, এর খরচ কম ও বহনযোগ্য৷ কিন্তু আমরা লক্ষ করি, বিভিন্ন মহল থেকে এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও এ সম্পর্কে আমাদের কোনো জাতীয় নীতিমালা ছিল না৷ আমরা সেই নীতিমালার প্রয়োজন বোধ থেকে বিভিন্ন লেখালেখি ও সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে বিষয়টির সার্বিক দিক তুলে ধরার প্রয়াস চালাই৷ আমাদের ২০০৬ সালের অক্টোবর সংখ্যায় কমিউনিটিরেডিও ও তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলন শীর্ষক একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরার পাশাপাশি এ বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করি৷ সুখের খবর, এই তো মাত্র কদিন আ লেসরকার কমিউনিটি রেডিও বিষয়ে একটি জাতীয় নীতিমালা ঘোষণা করেছে৷ তাছাড়া চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কমিউনিটি রেডিও স্থাপনে আগ্রহীদের কাছ থেকে সরকার দরখাস্তও আহবান করছে৷ এটি এক্ষেত্রে আমাদের একটা পাওয়া বলতে পারি৷ এছাড়া ২০০৭ সালের ডিসেম্বর সংখ্যার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি শীর্ষক শিরোনাওে এই কমিউনিটি রেডিওর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছিলাম৷

ডিজিটাল ডিভাইড

ডিজিটাল ডিভাইড৷ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ গুরুত্বপূর্ণ এই বিবেচনায় যে, এ বিষয়ে যথাসময়ে যথাসচেতনতা প্রদর্শন করতে না পারলে একটা জাতির জন্য ডিজিটাল ডিভাইড নামের এক মহাসমস্যা বাসা বাঁ ধে স্থায়ীভাবে৷ আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ শেষে আর খুঁজে পাওয়া যায় না৷ ডিজিটাল ডিভাইড হচ্ছে একটি জনগোষ্ঠীকে কিংবা জাতিকে এমন দুটি ভাগে ভাগ করে ফেলা, যেখানে এক ভাগে থাকছে যাদের রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষমতা, আর অপর ভাগে থাকছে এসব সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকা জনগোষ্ঠী৷ মোট কথা, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ বিবেচনায় দটশণ্র ও দটশণ্র ভর্ম-এর মধ্যে পার্থক্য, বিভাজন ও দূরত্বই হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইড৷ আর এ বিভাজন সুস্পষ্ট৷ যাদের হাতে থাকবে তথ্যপ্রযুক্তির চাবি, তারা হবে সম্পদশালী বা ক্ষমতাধর, আর তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগবঞ্চিতরা হবে সম্পদহীন ও ক্ষমতাহীন৷ এর ফলে কোনো দেশে সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়, তা চূড়ান্ত পর্যায়ে নানামুখী রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে৷ তেমনটি যাতে না ঘটে, সে উপলব্ধি থেকে আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ জনগণের হাতে কমপিউটার তুলে দিয়ে দেশে একটা সুষম উন্নয়নের পথ পরিষ্কার করা৷ যাই হোক ডিজিটাল ডিভাইডের যে আরো নানাধর্মী ক্ষতিকর দিক রয়েছে, সেসব বিস্তারিত তুলে ধরে আমরা এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলার জন্য ডিজিটাল ডিভাইড বিষয়ে অন্তত দুটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করি৷ এসব প্রতিবেদনে আমরা যথার্থ সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি, সে দিকনির্দেশনাও তুলে ধরার প্রয়াস পাই৷ এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টা যেমনি করেছি, তেমনি সরকারের প্রতি তাগিদ রেখেছি তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশের সুযোগ বাড়িয়ে তোলার জন্য৷



এক্ষেত্রে যথাসচেতনতা প্রকাশ করতে সরকারি মহলে দুঃসহ পর্যায়ের অবহেলা আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি বরাবর৷ কিন্তু সুখের কথা, জনগণের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির অপরিহার্যতা সম্পর্কে একটা মোটামুটি সচেতনতা এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে৷ এরা প্রযুক্তির প্রয়োজন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছে৷ এরা সময়ের সাথে প্রযুক্তির জগতে প্রবেশের জন্য প্রবলভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছে৷ সুযোগ পেলেই নিজেদের সম্পৃক্ত করছে তথ্যপ্রযুক্তির সুফল পাওয়ার প্রয়াসে৷ এরা এখন বুঝতে পারছে জাতীয় ও ব্যক্তিপর্যায়ে কিংবা সামাজিক পর্যায়ের উন্নয়নে প্রধান হাতিয়ার করতে হবে তথ্যপ্রযুক্তিকেই৷ এটাকে ছোট পাওয়া হিসেবে না দেখে বড় পাওয়া হিসেবে দেখাই উচিত৷ কারণ, এই সতেনতার ওপর ভর করে একদিন এদেশে দূর হবে ডিজিটাল ডিভাইড৷ আর ডিজিটাল ডিভাইডের স্থান দখল করবে ডিজিটালব্রিজ৷ তেমনটি প্রত্যাশা অমূলক নয়৷

ই-গভর্নেন্স

আমাদের প্রবল আকাঙক্ষা ছিল এদেশে ই-গভর্নেন্স চালু হবে বহু আগেই৷ এদেশের মানুষ সরকারের সাথে যাবতীয় কাজকর্ম করবে সহজে, অনায়াসে, কম খরচে তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে৷ আর ই-গভর্নেন্স সূত্রে দেশে দুর্নীতি কমবে৷ সরকারি কাজকর্মে স্বচ্ছতা আসবে৷ বিষয়টির গুরুত্বের কথা ভেবে আমরা ২০০৫ সালের অক্টোবর সংখ্যায় এবং ২০০০ সালের ডিসেম্বর সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হিসেবে উপজীব্য করে তুলি ই-গভর্নেন্সকে৷ ২০০০ সালের ডিসেম্বর সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ই-গভর্নেন্স৷ আর ২০০৫ সালের অক্টোবর সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটির শিরোনাম করি ই-গভর্নেন্স, সুশাসন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতিয়ার৷



আমরা এসব প্রচ্ছদ প্রতিবেদনসহ মামেধ্যে অন্যান্য লেখালেখির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বড় কর্তাদের বুঝাতে চেষ্টা করেছি, ই-গভর্নেন্স আমাদের জন্য সময়ের প্রয়োজন৷ কারণ, ই-গভর্নেন্স চালু করতে পারলে সরকারি কাজে স্বচ্ছতা আসবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে, সরকারের দক্ষতা বাড়বে, জনগণের কাছে সহজে ও কম খরচে দক্ষ সেবা পৌঁছানো যাবে, সরকারের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডে গতি আসবে, বেসরকারি খাতের প্রসার ঘটবে, সাধারণ মানুষের হয়রানি কমবে, সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরো সম্প্রসারিত হবে, প্রশাসনে বিকেন্দ্রায়ন ঘটবে, বৃহত্তর সমন্বয়ের সুযোগ উন্মুক্ত হবে, স্থানীয় আইসিটি শিল্পের প্রসার ঘটবে, আইসিটিকে আরো গণসংশ্লিষ্ট করে তোলা যাবে৷ আর এসবের ফলে দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে৷ কিন্তু সংশ্লিষ্ট সরকারি মহল শুধু বলছে, করছি, করবো৷ এক্ষেত্রে ছিটেলেফাঁটা কাজ যা হয়েছে, তাকে ই-গভর্নেন্সের সংখ্যায় এখনো ফেলা যাবে না৷ তাই আমাদের এক্ষেত্রে চাওয়ার বিপরীতে পাওয়া খুব নগণ্য ও হতাশাজনক৷ তবে আমরা আমাদের তাগিদ দিয়েই যাবো যথাশিগগিরদেশে ই-গভর্নেন্স পুরোমাত্রায় চালু হোক৷
এভাবে

এভাবে আমরা বিগত সতেরো বছরে বাংলাদেশের মানুষকে যেমনি তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনার ও প্রয়োজনীয়তার কথা শুনিয়েছি, তাদেরকে সচেতন করে তোলার প্রয়াস চালিয়েছি, সরকারি মহলে যথাসময়ে যথাতাগিদটা হাজির করেছি, তেমনি আমাদের সময়ের তথ্যপ্রযুক্তি সমস্যা ও সমাধানের কথা তুলে ধরেছি৷ এই সতেরো বছরে আমাদের মাথায় ছিল তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ৷ আর সে লক্ষ্য অর্জনে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগমনে মাসিক কমপিউটার জগত্কে করে তুলেছি আন্দোলনের এক হাতিয়ার৷ আজ কমপিউটার জগৎ তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ অভিধায় অভিহিত হছে এদেশে৷ এটা আমাদের বড় পাওয়া৷

আর আমরা মাসিক কমপিউটার জগত্কে এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের হাতিয়ার করতে সচেষ্ট ছিলাম বলে এই সতেরো বছরে বিশেষ কিছু অর্জন আমাদের জন্য হয়েছে গৌরবের উপাদান, আমাদের ভবিষ্যৎ পাথেয়, প্রেরণার উত্স৷ আমরা সুদৃঢ় আশাবাদী, ইনশাআল্লাহ আগামী দিনেও আমাদের অর্জন-তালিকা আরো সুদীর্ঘ হবে৷ বাড়বে আমাদের সাফল্যের মাত্রা৷ আর এক্ষেত্রে আমরা অতীতের মতো, বরং অধিকতর ঘনিষ্ঠ পর্যায়ের সহযোগিতা পাবো আমাদের পাঠক, লেখক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী ও পৃষ্ঠপোষকবর্গের৷ আমাদের যা কিছু অর্জন তার পেছনে এদের আন্তরিক অবদান ভবিষ্যতেও হবে আমাদের এগিয়ে চলার পাথেয়৷ সে আশাবাদ যথার্থ বাস্তবতার আলোকেই৷ সবশেষে আমাদের বিশেষ কিছু অর্জনের একটা সংশ্লিষ্ট তালিকা উপস্থাপন করেই এ লেখার ইতি টানবো৷

বিশেষ কিছু অর্জন
এক :
কমপিউটার জগৎ এর সূচনাসংখ্যার মাধ্যমেই এদেশে সর্বপ্রথম দাবি তোলে : জনগণের হাতে কমপিউটার চাই৷

দুই :
১৯৯১ সারে ডিসেম্বরে আমরাই প্রথম এদেশে ডাটা এন্ট্রির সম্ভাবনার কথা বিস্তারিত তুলে ধরি৷ এছাড়া আয়োজন করি এ সম্পর্কিত প্রথম সংবাদ সম্মেলন৷

তিন :
১৯৯২ সালের জানুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরাই এদেশে সর্বপ্রথম কমপিউটারে বাংলা ভাষা ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করি৷

চার :
১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে কমপিউটার জগৎ এদেশে সর্বপ্রথম প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করে৷

পাঁচ :
১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কমপিউটার জগৎ দেশে প্রথম কমপিউটারের দাম কমানোর দাবি তোলে৷

ছয় :
১৯৯২ সালের ২৮ ডিসেম্বর কমপিউটার জগৎ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করে কমপিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনী৷

সাত :
১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে এ পত্রিকা প্রথমবারের মতো প্রযুক্তিক্ষেত্রে উত্সাহ যোগানোর লক্ষ্যে বছরেরসেরা ব্যক্তিত্ব ও বছরেসেরা পণ্য পুরস্কারে প্রবর্তন করে৷

আট :
১৯৯৩ সালের ৫ জানুয়ারি কমপিউটার জগৎ এদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমপিউটার মেধাবীদের স্বীকৃতি জানিয়ে প্রবাসী বিজ্ঞানীদের ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে উপস্থাপন করে৷

নয় :
১৯৯৩ সালের এপ্রিলে এ পত্রিকা এদেশে সর্বপ্রথম টেলিকম প্রযুক্তি বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা তুলে ধরে৷

দশ :
১৯৯৩ সালের ১৪ জানুয়ারি এই পত্রিকার পক্ষ থেকে এদেশে প্রথমবারের মতো কমপিউটারের ক্ষেত্রে প্রতিভাবান শিশুদেরকে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়৷

এগারো :
১৯৯৬ সালের ২৫ জানুয়ারি আমরাই এদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করি ইন্টারনেট সপ্তাহ৷

বারো :
১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে কমপিউটার জগৎ এদেশে সর্বপ্রথম চালু করে কমপিউটার বিবিএস বা বুলেটিন বোর্ড সার্ভিস৷

তেরো :
১৯৯২ সালের ৩০ জানুয়ারি এ পত্রিকা প্রথমবারের মতো গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রথম চালু করে কমপিউটার পরিচিতি কর্মসূচি৷ চৌদ্দ : ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সংখ্যায় ২০০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট চাই প্রতিবেদন প্রকাশ ক লেএদেশে এ দাবি আমরা সর্বপ্রথম তুলে ধরি৷ এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আমরা আরো অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করি৷

এসব পাওয়া একটি তথ্যপ্রযুক্তি পত্রিকা হিসেবে আমাদের জন্য কম পাওয়া নিশ্চয়ই নয়৷
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - এপ্রিল সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা