এখন মাল্টি কোরের যুগ। যারা নতুন পিসি কেনেন, তারা এখন কদাচিৎ এক কোরের প্রসেসরসম্পন্ন সিস্টেম কেনেন। ইদানীং চার কোরের সিস্টেমও অনেকেই কিনছেন যাদের প্রয়োজন এবং সামর্থ্য আছে। গত কয়েক বছরে ৬৪ বিট প্রসেসর, মাল্টি কোর প্রসেসর নিয়ে সিপিইউ দুনিয়াতে বেশ মাতামাতি ছিল। এর কারণ ছিল সিপিইউর জন্য এগুলো সব নতুন নতুন প্রযুক্তি। তবে মাল্টি কোর প্রসেসর তৈরি করার পর দুই এবং চার কোরের প্রসেসরের কথা অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু তিন কোরের প্রসেসরের কথা কেউ শুনেছেন কি? হ্যাঁ, ফেনম প্রসেসরের কথাই বলা হচ্ছে।
ফেনম প্রসেসরের সিরিজে তিন কোরসম্পন্ন প্রসেসর আছে, যাকে এক্স৩ বলা হয়। অবশ্য এএমডি আগে থেকেই তাদের কোর সংখ্যাকে এক্স নাম দিয়ে পরিচিত করেছে। অতিসম্প্রতি এ ফেনম সিরিজের উত্তরসূরি ফেনম ২ বাজারে ছাড়া হয়েছে। আগের সিরিজের মতোই এতে আছে তিন এবং চার কোরের প্রসেসর। বরাবরের মতোই অন্যান্য চার কোরের প্রসেসরের সাথে অ্যাপ্লিকেশনের বেঞ্চমার্কে এ প্রসেসর কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও দামের বিবেচনায় এ সিরিজ সেরা মাল্টি কোরের প্রসেসরের সিরিজ।
আইআইএসের ডিফল্ট ওয়েবসাইট প্রোপার্টিজ
ফেনম হচ্ছে প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এএমডির তৈরি করা হাই এন্ড সিরিজের প্রসেসর। ফেনম তৈরি করা হয়েছে তিন এবং চার কোরের ওপরে ভিত্তি করে। ফেনম হচ্ছে ডেস্কটপ পিসির জন্য তৈরি করা প্রসেসর। ফেনম প্রসেসর প্রথম ছাড়া হয় ২০০৭ সালের শেষের দিকে। আর এর সফল উত্তরসূরি ফেনম ২ প্রসেসর বাজারে ছাড়া হয়েছে এ বছরেই।
ফেনম ২ সিরিজ তৈরি করা হয়েছে ৪৫ ন্যানোমিটার মাইক্রোআর্কিটেকচার টেকনোলজি দিয়ে। যার ফলে খুব কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করবে এবং কম তাপ উৎপন্ন করবে এ সিরিজের প্রসেসর। আর এএম সকেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে এখন ডিডিআর ৩ র্যা ম ব্যবহার করা যাবে। তবে, পুরনো এএমডি ব্যবহারকারীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। পুরনো এএম২ সকেটও এ প্রসেসরে থাকছে। তাই এতে ডিডিআর ২ বা ডিডিআর ৩ দুই ধরনের র্যা মই চালানো যাবে। যদিও র্যাকমের ব্যাপারটা মাদারবোর্ডের ওপরে নির্ভর করে। তাই যাদের পুরনো এএম২ সকেটের মাদারবোর্ড আছে তারা চেষ্টা করলে এএম২-এর ফেনম ২ প্রসেসর যোগাড় করে সিস্টেম চালাতে পারবেন।
নতুন এ প্রসেসর সিরিজে দূর করা হয়েছে কোল্ড বাগ সমস্যা। কোল্ড বাগ সমস্যা অনেক সিস্টেমেরই একটি সাধারণ সমস্যা। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার নিচে সিস্টেম কাজ করতে চায় না। এ সমস্যার ফলে প্রযুক্তিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে প্রসেসরে এক্সট্রিম কুলিং ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পারেননি। এ সমস্যা দূর করার ফলে এ ধরনের কুলিং এখন সহজেই ব্যবহার করা সম্ভব। অবশ্য এ ব্যবস্থা তাদেরই দরকার, যারা খুব বেশি ওভারক্লকিং করতে চান বা যারা উঁচুমানের গবেষণা করতে চান। এ প্রসেসর সিরিজে ৬ গিগাহার্টজ পর্যন্ত ওভারক্লকিং করা গেছে। তবে কেউ যেন ঘরে বসে নিজের সিস্টেম ওভারক্লকিং না করেন। ওভারক্লকিংয়ের কাজ করতে চাইলে সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে করতে হবে। ওভারক্লক করলে ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যায়।
অনেকদিন ধরেই এএমডি তুলনামূলক কম ক্যাশ মেমরি ব্যবহার করে আসছে। যার ফলে গেমিংয়ের মতো অ্যাপ্লিকেশনে ফেনম ২ আরো সক্ষমতা দেখাতে পারবে। এ সিরিজের প্রসেসরে যেসব ফিচার আছে সেগুলো হচ্ছে MMX, Extended 3DNow!, SSE, SSE2, SSE3, SSE4a, SSE5 AMD64, CoolnQuiet, NX bit, AMD-V ইত্যাদি। সেইসাথে এএমডির বিখ্যাত হাইপার ট্রান্সপোর্ট প্রযুক্তি তো থাকছেই, যার ফলে সিস্টেমের মেমরি কন্ট্রোলার মাদারবোর্ডের চিপসেটে যুক্ত না করে সরাসরি প্রসেসরে যুক্ত করা হয়েছে।
এএমডি এটিআই কে কিনে নেবার পরে গেমিং নিয়ে এএমডির যে দুর্নাম ছিল তা আজ অনেকটাই নেই। আর এজন্য এটিআই সম্বলিত গ্রাফিক্সবিশিষ্ট চিপ দিয়ে অনেক মাদারবোর্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিস্টেম তৈরি করছে। এসব সিস্টেম যথেষ্ট কর্মদক্ষতাও দেখাচ্ছে। দামের বিবেচনায় এ প্রসেসরটি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে কতটুকু সফলভাবে এই প্রসেসর নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবে তা সময়ই বলে দেবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mortuzacsepm@yahoo.com