বর্তমানে অনলাইন কমিউনিটি ধারণাটা এত বেশি প্রচলিত যে এ সম্পর্কে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমবেশি সবাই জানেন। আর এখনকার অনলাইন কমিউনিটি পোর্টালের কথা উঠলে সবার আগে যে নামটি আসে সেটি হলো ফেসবুক। সোস্যাল কমিউনিটি ধারণাটি একদম নতুন নয়। আগের দিনের ব্যাপক জনপ্রিয় কমিউনিটি পোর্টালগুলো হলো মাইস্পেস, হাইফাইফ, গুগলের অর্কুট ইত্যাদি। কিন্তু ফেসবুকের জনপ্রিয়তার তোড়ে এগুলোর কথা ব্যবহারকারীরা প্রায় ভুলেই গেছেন।
অনলাইন সোস্যাল কমিউনিটি ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা এমন একটি মোবাইল সোস্যাল নেটওয়ার্কিং পোর্টাল হলো ওয়াদজা ডট কম যা অনলাইনে মানুষের উপস্থিতি ধারণ করে। এ পোর্টাল থেকে ফ্রি এসএমএস পাঠানো, ই-মেইল, মোবাইল ওয়েব মেসেজিং ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যায়। এটি অপারেটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি সাইট। কমপিউটার কিংবা মোবাইল যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম ও ব্রাউজার ব্যবহার করে এর সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। ওয়াদজার বেটা ভার্সন চালু হয় ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পাওয়া জরিপে ওয়াদজার রেজিস্টার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ওয়াদজার স্লোগান হলো : ওয়াক অ্যাবাউট অ্যান্ড স্টে কানেক্টেড!
ওয়াদজাতে রেজিস্ট্রেশন করলে প্রত্যেকের একটি আইডি ও ই-মেইল থাকবে। এ ই-মেইল অ্যাড্রেসের সাহায্যে ওয়াদজা কমিউনিটির কোনো সদস্যের সাথে কিংবা বাইরের কারো সাথে যোগাযোগ করা যাবে। ই-মেইল বা এসএমএস ব্যবহারকারীর যেকোনো ই-মেইল অ্যাকাউন্টে ফরোয়ার্ড করা যায়। এ কমিউনিটির অন্য সদস্যদের সাথে চ্যাট করা বা ইনস্ট্যান্ট মেসেজ পাঠানোর সুবিধা রয়েছে। এতে প্রাযুক্তিক সহায়তা দিয়েছে জনপ্রিয় ওয়েব চ্যাট পোর্টাল মীবো। মাইক্রো ব্লগিং সার্ভিসও রয়েছে। মাল্টিমিডিয়া ব্লগিংয়ের অন্য এক ধরন হলো মাইক্রো ব্লগিং। এতে ব্যবহারকারীরা খুব সংক্ষিপ্ত টেক্সট লিখতে পারে। টেক্সট সাইজ হতে পারে সর্বোচ্চ ১৪০ ক্যারেক্টার। সাথে মাইক্রোমিডিয়া অর্থাৎ ছোট্ট অডিও বা ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তা অন্য ব্যবহারকারীদের সাথে শেয়ার করার জন্য পাবলিশ করতে পারে। সাধারণ ব্লগের সাথে মাইক্রোব্লগের ধারণা বা উদ্দেশ্য এক হলেও এতে কনটেন্টগুলোর সাইজ হতে হয় ছোট। আর হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসগুলো থেকে এ পোর্টালে ব্লগারদের সহজ প্রবেশের জন্য তা এমন করা হয়।
নতুন আসা মেইলের নোটিফিকেশন, বন্ধুকে রিকোয়েস্ট মেসেজ পাঠানো, বার্থডে অ্যালার্ট ইত্যাদি সুবিধা এতে রয়েছে। ওয়াদজা টুলবার ডাউনলোড করে ইনস্টল করলে অনেক ফিচারেই সহজে ও দ্রুত অ্যাক্সেস করা যায়। মিডিয়াবক্স ফিচারের সাহায্যে মেম্বাররা এ কমিউনিটির ভেতরে কিংবা বাইরে কনটেন্ট পাঠাতে পারে যা হতে পারে ইমেজ, অডিও কিংবা ভিডিও ক্লিপ। অনলাইন ফটোএডিটর ‘পিকনিক’-এর সাহায্যে ইউজাররা ফটো এডিট কিংবা এতে আরো আকর্ষণীয় মাত্রা যোগ করতে পারেন। সম্প্রতি ওয়াদজা পিওপি৩ সার্ভিস চালু করেছে, যা একজন ইউজারকে তার অন্য কোনো সর্বোচ্চ ৫টি ই-মেইল অ্যাড্রেস থেকে ই-মেইল ওয়াদজা ইনবক্সে একত্র করার সুযোগ করে দেয়।
ওয়াদজার অনেক সুবিধা ফ্রি হলেও কিছু কিছু সার্ভিস নিতে হয় নির্দিষ্ট চার্জ প্রদান করে। ওয়াদজার ‘এসএমএস প্লাস’ সুবিধার মাধ্যমে ইউজাররা অনেক এসএমএস একত্রে পাঠাতে পারেন। এমনকি বিজ্ঞাপনদাতারা এ সার্ভিস ব্যবহার করে বিভিন্ন ভাষায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এসএমএস পাঠাতে পারেন। এ ফিচারটির জন্য একটি ডেভেলপার টুল রয়েছে এসএমএস এপিআই, যা ওয়াদজার গ্রাহকদের এ সুবিধা পেতে সাহায্য করে। ‘মেসেজ অ্যাডস’ নামে ফিচারটিও বেশ আধুনিক। এর থেকে বিজ্ঞাপনদাতারা ভালো সুবিধা পান। কোনো প্রতিষ্ঠান যে বিষয়ের ওপর অ্যাড বা বিজ্ঞাপন ওয়াদজা থেকে পাবলিশ করতে চায়, তারা ওই অ্যাডের জন্য সংশ্লিষ্ট কিছু কীওয়ার্ড তৈরি করে রাখে। কোনো ইউজার যখন ওয়াদজা থেকে এসএমএস পাঠান তখন তার মেসেজ কনটেন্টের মধ্যে ওই কীওয়ার্ড থাকলে বিজ্ঞাপনদাতার সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনটি মেসেজের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। ফিচারটি নিঃসন্দেহে বেশ আধুনিক।
ওয়াদজা এখন মাল্টিপল ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট করছে। গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে অন্য ভাষায় পাঠানো মেসেজগুলোকে অনুবাদ করে নেয়া যায়। মেম্বাররা সব কনটেন্টের জন্য আরএসএস ফিড সেট করে রাখতে পারেন। সিএসভি, আরটিএফ ও পিডিএফ ফরমেটের কোনো ফাইলও আপলোড করতে পারেন। ওয়াদজার প্রায় সব ফিচার মোবাইল প্লাটফর্ম থেকে অ্যাক্সেস করা যায় এমনকি আইফোন, ব্লাকবেরি ফোনগুলোর জন্য বিশেষভাবে এক্সএইচটিএমএল সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। অন্য মোবাইল, আইফোন বা উইন্ডোজ মোবাইল থেকে ওয়াদজাতে অ্যাক্সেস করতে হলে ইউআরএল হিট করতে হবে m.wadja.com ।
এতে ইউজারদের সিকিউরিটি বা নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। উইজাররা কোন কোন তথ্য অন্যদের দেখতে দিতে চান বা চান না তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। স্প্যাম প্রতিহত করার জন্য মেম্বারদের কন্ট্যাক্ট লিস্ট নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কোনো সাইটে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করা ঝামেলার কাজ। একটি আইডি দিয়ে যেন সব সাইটে লগইন করা যায়, এ ব্যাপারটিকে সামনে রেখে এসেছে ‘ওপেন আইডি’ ধারণাটি। ওপেন আইডি সাপোর্ট দেয়ার মতো অনেক প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। ওপেন আইডির বিষয়টি এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো না। কারো ওপেন আইডি থাকলে ওয়াদজাতে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। ওপেন আইডি, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এ সাইটে লগইন করতে পারবেন।
এ সাইটটি অনেকগুলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে, তার মধ্যে ২০০৬ সালে ‘পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে শ্রেষ্ঠ মোবাইল সোস্যাল নেটওয়ার্ক হিসেবে, ওপেন ওয়েব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ২০০৮-এ।
ফ্রি এসএমএস :
বিশ্বের চারশ’রও বেশি অপারেটরে ওয়াদজা থেকে ফ্রি এসএমএস পাঠানো যায়। বাংলাদেশের একমাত্র সিডিএএমএ অপারেটর সিটিসেল ছাড়া প্রায় সব জিএসএম অপারেটরে এসএমএস পাঠানো যায়। প্রথমে অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে। লগইন করে অ্যাকাউন্টে প্রবেশের পর বামপাশে ‘কম্পোজ’ মেনুতে ক্লিক করতে হবে। দ্রুত করার জন্য ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে www.wadja.com/mail টাইপ করে এন্টার দিতে হবে। তাহলে চিত্র : ১-এর মতো একটি স্ক্রিন আসবে। উপরের হরাইজন্টাল মেনু থেকে এসএমএস-এ ক্লিক করলে এসএমএস টাইপ করার জন্য নতুন একটি স্ক্রিন আসবে। এখানে রেসিপিয়েন্ট-এর ঘরে মোবাইল নাম্বার ইন্টারন্যাশনাল ফরমেটে লিখতে হবে। মোবাইল নাম্বারটি হবে ‘+কান্ট্রি কোড’ + ‘মোবাইল নাম্বার’। কান্ট্রি কোডের শেষ ডিজিটটি ০ এবং মোবাইল নাম্বারের প্রথম ডিজিটটি ০ হলে এক্ষেত্রে একটি ০ ব্যবহার করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের কান্ট্রি কোড ৮৮০ এবং যেকোনো একটি মোবাইল নাম্বার হলো ০১৭১৭০০০০০০। নাম্বারটি +৮৮০১৭১৭০০০০০০ ফরমেটে ওই ঘরে লিখতে হবে। এরপর খালি ঘরে এসএমএস টাইপ করে সেন্ড করতে হবে। যেকোনো নাম্বারে সর্বোচ্চ ৯০ ক্যারেক্টারের এসএমএস পাঠানো যায়।
আপনার এসএমএসটি ডেলিভারি হলো কি না তা ডেলিভারি স্ট্যাটাসে গিয়ে জানা যায়। এমনকি গুগল ম্যাপের সাহায্যে দেখানো হয় এসএমএসটি কোন জায়গায় পাঠানো হয়েছে, এধরনের আরো অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। তাই দেরি না করে ওয়াদজাতে আপনার প্রোফাইল তৈরি করে জনপ্রিয় এ মোবাইল কমিউনিটি পোর্টালের সদস্য হয়ে যান।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : princeinlink@yahoo.com