নতুন একটি কমপিউটার কেনার কথা ভাবছেন? দোকানে গিয়ে দোকানির কাছ থেকে কনফিগারেশন নেয়ার সময় মনিটরের কথা আসতে নিশ্চয়ই এলসিডি মনিটর নিয়ে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন। এরপর যখন দেখবেন, আপনার সাধ্যের মধ্যে মোটামুটি ভালো একটা এলসিডি মনিটর পাওয়া যাচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দোকানিকে কনফিগারেশনে একটি এলসিডি মনিটর যোগ করার কথা বলবেন। কারণ, এলসিডি মনিটরের ডিসপ্লে ঝকঝকে, জীবন্ত। এলসিডি মনিটর সহজে বহনযোগ্য। এভাবে আরো কত কী! অন্যদিকে সিআরটি মনিটরের ডিসপ্লের মান এলসিডি মনিটরের ডিসপ্লের চেয়ে অনেক খারাপ। সিআরটি মনিটর অনেক ভারি; সহজে বহনযোগ্য নয়। এ ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক কারিগরি দিক, যেগুলোর কারণে এলসিডি মনিটর সিআরটি মনিটরের চেয়ে প্রাধান্য পায়। এ লেখায় এলসিডি মনিটরের বিভিন্ন কারিগরি দিকসহ সিআরটি মনিটর নিয়েও কিছুটা ধারণা দেয়া হয়েছে।
সিআরটি মনিটর :
সিআরটির পূর্ণ রূপ ক্যাথোড রে টিউব। একটি অ্যানালগ ক্যাবলের মাধ্যমে সিআরটি ছবি গ্রহণ করে এবং একটি ডিসপ্লে কন্ট্রোলার ওই সিগন্যালকে ডিকোড করে, যা পরে মনিটরের ভেতরের কম্পোনেন্টগুলো দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। সিআরটি মনিটর অনেকটা ফানেল আকৃতির। এ মনিটরের সবচেয়ে পেছনে থাকে একটি ইলেকট্রন গান। মনিটরের টিউবের মধ্যে স্থাপিত ভ্যাকুয়ামের মাধ্যমে এ ইলেকট্রন গান মনিটরের সম্মুখভাগের দিকে ইলেকট্রন ছোড়ে যাকে ক্যাথোডও বলা যেতে পারে। মনিটরের সম্মুখভাগের দিকে বিচ্ছুরিত ইলেকট্রনগুলোই হচ্ছে ক্যাথোড রশ্মি। এই রশ্মিগুলোই ডিসপ্লে কিংবা ভিডিও কার্ডের লাল, সবুজ এবং নীল চ্যানেল হিসেবে কাজ করে। ফানেল আকৃতির মনিটরটির ঘাড়ে থাকে অ্যানোড, যা ডিসপ্লে কন্ট্রোলারের নির্দেশানুযায়ী চুম্বকায়িত হয়। যেহেতু ইলেকট্রনগুলো এ অ্যানোডকে অতিক্রম করে, তাই সেগুলো কোন দিকে সরে যাবে তা নির্ভর করে ওই সময়ে অ্যানোডগুলোর কোনটি কত চুম্বকায়িত হয়েছে তার ওপর। এ প্রক্রিয়াটি ইলেকট্রনগুলোকে মনিটরের পর্দার দিকে নিয়ে যায়।
এরপর ওই ইলেকট্রনগুলো একটি জালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এ জাল পর্দার জন্য আলাদা আলাদা পিক্সেল ও রেজ্যুলেশন গঠন করে। জালের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ওই ইলেকট্রনগুলো গ্লাস স্ক্রিনের ভেতরে অবস্থিত ফসফরের ওপর আঘাত করে। ইলেকট্রনগুলো ফসফরকে আঘাত করার সাথে সাথে আলো জ্বলে ওঠে এবং এ আলো মনিটরের সম্মুখভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে মনিটরের পর্দায় ছবি তৈরি হয়।
এলসিডি প্রযুক্তি :
এলসিডির পূর্ণ রূপ লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে। এলসিডি প্রযুক্তি কাজ করে ব্লকিং লাইটের মাধ্যমে। একটি এলসিডি দুটি পোলারাইজড কাচ বা সাবস্ট্রেট নিয়ে গঠিত। এ সাবস্ট্রেট দুটির মাঝে থাকে একটি তরল ক্রিস্টাল। একটি ব্যাকলাইট আলো তৈরি করে, যা প্রথম সাবস্ট্রেটের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে। একই সময়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহের কারণে তরল ক্রিস্টাল অণুসমূহ দ্বিতীয় সাবস্ট্রেটের ভেতর দিয়ে আলোর প্রবাহ ঘটাতে সাহায্য করে এবং রং ও ছবি তৈরি করে যা আমাদের চোখে পড়ে।
এলসিডি মনিটরের বৈশিষ্ট্য :
সিআরটি মনিটরের তুলনায় অনেক বেশি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এলসিডি মনিটরের কিছু কিছু দিক নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
রেজ্যুলেশন :
মূলত ‘নেটিভ রেজ্যুলেশন’ নামের একটি বৈশিষ্ট্যের জন্যই এলসিডি মনিটরের ডিসপ্লে এত সুন্দর। অনুভূমিক ও উলম্ব কিছু ডটের সমন্বয়ে তৈরি একটি নির্দিষ্ট ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে ডিজিটাল ডিসপ্লের প্রতিটি পিক্সেল প্রকাশ করা হয়। যদি এ রেজ্যুলেশন সেটিং পরিবর্তন করেন, তাহলে এলসিডি ইমেজের আকারও পরিবর্তিত হবে এবং ইমেজের গুণগতমানেরও কমবেশি হয়। সাধারণত এলসিডি মনিটরের নেটিভ রেজ্যুলেশন এমন :
১৭ ইঞ্চি = ১০২৪ x ৭৬৮
১৯ ইঞ্চি = ১২৮০ x ১০২৪
২০ ইঞ্চি = ১৬০০ x ১২০০
ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল :
একটি নির্দিষ্ট কোণ থেকে সিআরটি মনিটরের দিকে তাকালে, মনিটরের ইমেজ অনেকটা অদৃশ্য মনে হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য এলসিডি মনিটরের প্রস্ত্ততকারীরা এর ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলকে প্রশস্তা করেছেন। উল্লেখ্য, প্রশস্তা মনিটর এবং প্রশস্তা ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল এক কথা নয়। সাধারণত ভিউয়িং অ্যাঙ্গেলকে ডিগ্রিতে পরিমাপ করা হয়।
উজ্জ্বলতা বা তীব্রতা :
মনিটরের উজ্জ্বলতা বা তীব্রতা হচ্ছে মনিটর থেকে উৎপন্ন আলোর পরিমাণ। একে সাধারণত নিট বা ক্যান্ডেল/বর্গ মিটার (cd/m2) এককে পরিমাপ করা হয়। এক নিট হলো এক ক্যান্ডেল/বর্গমিটারের সমান। সাধারণ কাজগুলোর জন্য মনিটরের উজ্জ্বলতার হার ২৫০ ক্যান্ডেল/বর্গমিটার থেকে ৩৫০ ক্যান্ডেল/বর্গমিটার হয়ে থাকে। সিআরটি মনিটরের তুলনায় এলসিডি মনিটরের উজ্জ্বলতা বা তীব্রতার হার অনেক বেশি। আর তাই এলসিডি মনিটরের ছবি এত ঝকঝকে ও পরিষ্কার।
কনট্রাস্ট রেশিও :
একটি মনিটর থেকে উৎপন্ন উজ্জ্বল সাদা ও তীব্র কালো রংয়ের পার্থক্য হচ্ছে কনট্রাস্ট রেশিও। সাধারণত একে একটি অনুপাতে প্রকাশ করা হয়। যেমন-৫০০:১। সাধারণত মনিটরের কনট্রাস্ট রেশিও ৪৫০:১ থেকে ৬০০:১ হয়ে থাকে এবং সর্বোচ্চ ১০০০:১ হতে পারে। ৬০০:১-এর বেশি কনট্রাস্ট রেশিও যুক্ত মনিটরের ছবি অনেক ভালো হয়ে থাকে। এলসিডি মনিটরের কনট্রাস্ট রেশিও সিআরটির কনট্রাস্ট রেশিও’র চেয়ে অনেক বেশি।
রেসপন্স রেট :
একটি মনিটরের ‘রেসপন্স রেট’ দিয়ে বোঝানো হয়, কত দ্রুত মনিটরের পিক্সেলগুলো রং পরিবর্তন করতে পারে। একটি মনিটরের রেসপন্স রেট যত বেশি হবে মনিটরটি তত বেশি ভালো বলে বিবেচিত হবে। এলসিডি মনিটরের রেসপন্স রেট অনেক বেশি। সাধারণত একে হার্টজ এককে প্রকাশ করা হয়।
অবস্থানগত পরিবর্তন :
সিআরটি মনিটরের মতো এলসিডি মনিটরের অবস্থানগত পরিবর্তন করা কঠিন নয়। সাধারণত ব্যবহারকারীর ইচ্ছেমতো এলসিডি মনিটরের স্ক্রিনের অবস্থান পরিবর্তন করা যায়। বাজারে আজকাল এমন কিছু এলসিডি মনিটর পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোকে ইচ্ছেমতো ডানে-বাঁয়ে, ওপরে-নিচে যেদিকে খুশি সেদিকে ঘোরাতে পারবেন।
শেষ কথা :
এতক্ষণের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই সিআরটি এবং এলসিডি মনিটরের প্রযুক্তিগত দিক ও সুবিধাগুলো সম্পর্কে জানলাম। এলসিডি মনিটরের দাম এখন সবার সাধ্যের মধ্যে। তাই নতুন মনিটরটি কেনার আগে সবাইকে অবশ্যই এলসিডি মনিটরের কথা ভাবা উচিত।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : rabbi1982@yahoo.com