আজকের এই দুর্মূল্যের বাজারে একটি জিনিসের দামই প্রতিনিয়ত কমছে। সেটি হলো বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য। আজ থেকে দশ বছর আগে মানুষ যে দামে কমপিউটার কিনতো, সেই তুলনায় এখনকার কমপিউটারের দাম বেশ কম। শুধু কমপিউটার কেনো, মোবাইল ফোনসহ যেকোনো প্রযুক্তিপণ্যের জন্যই কথাটি সত্যি। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে করেছে সহজ এবং ছন্দময়। যে কমপিউটার ছিল দুষ্প্রাপ্য, তা আজ অনেকটাই সহজলভ্য। কমপিউটার আজ এতটাই সহজলভ্য যে, প্রয়োজনের তাগিদে অনেক পরিবারেই একাধিক কমপিউটার আছে। আমরা একটু চেষ্টা করলেই এই কমপিউটারগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। এমনকি মোবাইল ফোনের সাথেও পিসি বা সিস্টেমের নেটওয়ার্ক করা সম্ভব। শুধু নেটওয়ার্কই নয়, এর সাথে অন্যান্য যাবতীয় সুবিধা, যা একটি নেটওয়ার্কে থাকে তার সবই পাওয়া সম্ভব।
মোবাইল ফোনের সাথে সিস্টেমের নেটওয়ার্কের বিশেষ কয়েকটি ধরন আছে। তবে এগুলোর মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া সবই ওয়্যারলেস। এর মধ্যে জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলো হচ্ছে- আইআর (ইনফ্রারেড), ব্লুটুথ এবং সর্বাধুনিক ডব্লিউল্যান বা ওয়্যারলেস ল্যান। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আইআর হচ্ছে সবচেয়ে পুরনো। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আইআর পদ্ধতি অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি যেমন- টিভি, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদির রিমোট কন্ট্রোলিংয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্লুটুথ এবং ডব্লিউল্যান আইআর পদ্ধতি থেকে তুলনামূলকভাবে নতুন প্রযুক্তি। তাই এতে ডাটা ট্রান্সফার স্পিডও ভালো পাওয়া যায়।
এখনকার বেশিরভাগ মোবাইল ফোনেই ব্লুটুথ সুবিধা থাকে। অনেক আধুনিক মোবাইল ফোনে ডব্লিউল্যান থাকে। আর এখনকার বেশিরভাগ সিস্টেমেই ডব্লিউল্যান থাকে, তা পিসি হোক বা ল্যাপটপ (নোটবুক, নেটবুক, পামটপ)। অনেক সিস্টেমে ব্লুটুথও থাকে। অবশ্য যাদের সিস্টেমে এ সুবিধা আছে, তারাও নেটওয়ার্ক চালাতে পারবেন। আজকাল বাজারে ইউএসবি ব্লুটুথ ডিভাইস এবং ইউএসবি ওয়্যারলেস ডিভাইস পাওয়া যায়। আর যাদের মোবাইল ফোন এবং সিস্টেমে এই পদ্ধিতিগুলোর যেকোনো একটি আছে, তাদের মোবাইল ফোনের সাথে কমপিউটারের মধ্যে ডাটা কমিউনিকেশনের জন্য তেমন কোনো খরচ করতে হবে না। এ ধরনের নেটওয়ার্কের নাম হচ্ছে পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক। জেনে নেয়া যাক কিভাবে মোবাইল ফোনের সাথে কমপিউটারের ওয়্যারলেস পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক কনফিগার করা যায়।
পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্কের অর্থ হলো মধ্যবর্তী কোনো ডিভাইস যেমন- সুইচ, রাউটার বা হাব ছাড়াই তারের মাধ্যমে বা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দু’টি কমপিউটারকে যুক্ত করা এবং ফাইল ট্রান্সফার, শেয়ারিং থেকে শুরু করে দু’টি কমপিউটারের মধ্যে যাবতীয় কমপিউটিং করা। তবে দু’টি কমপিউটারই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সিস্টেমের সাথে মোবাইল ফোনও হতে পারে। একথা ঠিক, মোবাইল ফোন হোক আর পিসিতে হোক কোনো ক্ষেত্রেই ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিংয়ের অনেক সুবিধা থাকলেও তা তারের মাধ্যমে সেটআপ করা নেটওয়ার্কের মতো গতিতে কাজ করবে না। তবে আশা করা যায় ভবিষ্যতে প্রযুক্তির কল্যাণে হয়ত আরো শক্তিশালী এবং দ্রুতগতির ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক পাওয়া সম্ভব।
নেটওয়ার্ক সিস্টেমে তিন ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করা হয়, যেমন স্ট্রেইট ক্যাবল, ক্রস ক্যাবল এবং রোল ওভার ক্যাবল বা কন্সোল ক্যাবল। দুই প্রান্তের সিস্টেম বা ডিভাইসগুলো যদি একই ধরনের হয়, তাহলে মধ্যবর্তী সংযোগ হিসেবে ক্রস ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। আর দুই প্রান্তের সিস্টেম বা ডিভাইসগুলো যদি ভিন্ন ধরনের হয়, তাহলে মধ্যবর্তী সংযোগ হিসেবে স্ট্রেইট ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। আবার রাউটার কনফিগার করার জন্য রাউটারের প্যারালাল পোর্টে যে সিস্টেম যুক্ত করা হয়, সেটি রোল ওভার ক্যাবল বা কন্সোল ক্যাবল দিয়ে করা হয়। যেকোনো ধরনের কমপিউটার, রাউটার প্রভৃতিকে এক ধরনের এবং হাব, সুইচ প্রভৃতি ডিভাইসকে এক ধরনের ডিভাইস হিসেবে নেটওয়ার্ক সিস্টেমে গণ্য করা হয়। যেমন- দুটি হাব বা একটি হাব ও একটি সুইচকে বা দু’টি সুইচকে পরস্পরের সাথে যুক্ত করতে চাইলে ক্রস ক্যাবল দিয়ে যুক্ত করতে হবে। আবার দু’টি কমপিউটার বা দু’টি রাউটার বা একটি কমপিউটারের সাথে একটি রাউটারের সংযোগ দেয়া যায় একটি ক্রস ক্যাবল দিয়ে। আবার হাব বা সুইচের সাথে কমপিউটার বা রাউটারের সাথে সংযোগ দিতে চাইলে তা দিতে হবে স্ট্রেইট ক্যাবলের মাধ্যমে। শুধু রাউটারের কনফিগারেশনের জন্য রোল ওভার বা কন্সোল ক্যাবল ব্যবহার করা হয়। তবে এখানে ওয়্যারলেস পিয়ার টু পিয়ার কানেকশন সেটআপ করতে চাই বলে তারের ঝামেলা নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই।
ডব্লিউল্যান ওয়্যারলেস পিয়ার টু পিয়ার কানেকশনের জন্য আইপি অ্যাড্রেস অ্যালোকেট করে দিতে হয়। ঠিক যেভাবে তার যুক্ত কানেকশনের ক্ষেত্রে আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে নেটওয়ার্ক সেটআপ করতে হয়। ওয়্যারলেস পিয়ার টু পিয়ার কানেকশনের জন্যও একইভাবে নেটওয়ার্ক সেটআপ করতে হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাইভেট আইপি দিয়ে ওয়্যারলেস পিয়ার টু পিয়ার কানেকশনের জন্য নেটওয়ার্ক সেটআপ করতে হবে। প্রাইভেট আইপি হতে হবে 10.0.0.0 থেকে 10.255.255.255, 172.16.0.0 থেকে 172.31.255.255 এবং 192.168.0.0 থেকে 192.168.255.255 আইপির মধ্যে। এই তিনটি শ্রেণীর আইপির মধ্যে যথাক্রমে ১৬,৭৭৭,২১৬; ১,০৪৮,৫৭৬ এবং ৬৫,৫৩৬টি আইপি অ্যাড্রেস বা সিস্টেম আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে নেটওয়ার্ক কনফিগার করা যাবে।
ধরা যাক, আমরা মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে আইপি অ্যাড্রেস দেবো ১৯২.১৬৮.০.১ এবং সিস্টেমের জন্য নির্ধারিত নিক বা ল্যানকার্ডে আইপি দেব ১৯২.১৬৮.০.২। তাহলে একই নেটওয়ার্কের ভেতরে পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক কানেকশন স্থাপিত হবে, যার নেটওয়ার্ক অ্যাড্রেস হবে ১৯২.১৬৮.০.০। নেটওয়ার্ক সেটআপ করা হলে তা নিজে থেকেই ফাইল বা অন্য যেকোনো কিছু শেয়ার করা যাবে।
যেসব মোবাইল ডব্লিউল্যান সাপোর্ট করে
সনি এরিকসন : Satio (Idou), Aino, XPERIA X2, W995, XPERIA X1, XPERIA X10, W705, G900, W715
নকিয়া : 5800 XpressMusic, N97, N900, N97 mini, N97, N95, X6, E71, E72, E63, 6710 Navigator
মটোরোলা : DROID, DEXT MB220
এলজি : KM900 Arena, BL40 New Chocolate
আর ব্লুটুথ দিয়ে মোবাইল ফোনের সাথে পিসির কানেকশন তৈরি করার জন্য প্রথমেই দেখতে হবে পিসিতে ব্লুটুথ সাপোর্ট আছে কি না। সাপোর্ট থাকলে আলাদাভাবে কোনো ব্লুটুথ ডিভাইস কেনার দরকার নেই। আর যদি ব্লুটুথ না থাকে, তাহলে ইউএসবি ব্লুটুথ ডিভাইস কিনে নিতে হবে। এখন বাজারে নানা ব্র্যান্ডের ইউএসবি ব্লুটুথ ডিভাইস কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো দামেও বেশ সস্তা। দু’টি ব্লুটুথ ডিভাইস থেকে ব্লুটুথ অ্যানাবল করে ডিভাইসের জন্য সার্চ দিতে হবে। সার্চ করে পেলে তখন আপনাআপনি নিজস্ব সিস্টেমেই কানেকশন এবং নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের আইপি অ্যাড্রেস দিতে হবে না। তবে অথেনটিফিকেশনের জন্য দু’টি ডিভাইসেই একই পাসওয়ার্ড দেবার দরকার হতে পারে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : javedcse1982@yahoo.com