যারা নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলকে ব্যবহার করেন না। যেকোনো সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে বা যেকোনো তথ্য জানতে আজকাল গুগল সহায়ক সাহায্যকারী বন্ধু। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, সমস্যার সমাধান বা তথ্য খোঁজার জন্য প্রয়োজনীয় কী-ওয়ার্ড বা সার্চ আইটেমের নাম সঠিকভাবে দেয়া যায় না। ফলে বেশিরভাগ সময়ই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না বা এমন কিছু তথ্য চলে আসে, যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। এ লেখায় সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলকে ব্যবহার করার সহজ কিছু কৌশল ও দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সার্চ বিষয়টি খুবই সাধারণ। আপনার মনে যা কিছুই আসুক না কেনো তা www.google.com-এর সার্চ বক্সে টাইপ করে Enter দিন অথবা গুগল সার্চ বাটনে ক্লিক করুন। দেখবেন আপনার আইটেমের সাথে সম্পর্কিত কিছু ওয়েব পেজের লিঙ্ক চলে এসেছে। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে, যে আইটেমটি বা যে বিষয়টির তথ্য জানতে চান সেই আইটেম বা বিষয়টির নাম সার্চ বক্সে দেয়ার প্রয়োজনীয় কিছু কৌশল আছে। মূলত সে কৌশলগুলো নিয়েই এ লেখা। এ লেখায় ব্যবহার করা সব [ ] বন্ধনীই একটি একক আইটেমের জন্য। যেমন- [black and white] হচ্ছে, আইটেম। আবার [black] এবং [white] দুটি পৃথক আইটেম।
০১.
সার্চিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি শব্দই বাস্তবিক। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। ব্যতিক্রমগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে। সার্চ সব সময়ই ‘Case-Insensitive’, অর্থাৎ সার্চিং আইটেমের বিষয় বড় হাতের বর্ণের কিংবা ছোট হাতের বর্ণের কিংবা উভয়ের সংমিশ্রণে লিখলেও কোনো সমস্যা নেই। যেমন- [new york times] আর [New York Times]-এর সার্চের ফল একই হবে।
০২.
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া যতি চিহ্নগুলো সবসময়ই সার্চিংয়ের জন্য অগ্রাহ্য করা হয়। অর্থাৎ @, #, $, %, ^, &, *, (), =, +, [ ], \ এবং আরো কিছু বিশেষ চিহ্ন দিয়ে আপনি সার্চ করতে পারবেন না।
০৩.
সার্চিং আইটেমগুলো সাধারণ রাখার চেষ্টা করুন। ধরুন, আপনি একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির তথ্য খুঁজছেন। যদি কোম্পানিটির পুরো নাম আপনার মনে থাকে, তবে পুরো নামটিই সার্চ বক্সে লিখুন। আর যদি পুরো নাম মনে না আসে, তবে যতটা মনে পড়ে ততটাই লিখুন। যদি আপনি কোনো নির্দিষ্ট কনসেপ্ট, স্থান বা পণ্য খুঁজতে চান, তবে এর নামটি দিয়ে লেখা শুরু করুন। যদি পিৎজা রেস্টুরেন্ট খুঁজতে চান, তবে পিৎজার নামটি লিখুন এবং সাথে আপনার শহরের নাম বা জিপ কোডটি লিখুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই advanced অপারেটর বা বিরল যতি চিহ্নগুলোর দরকার হয় না।
০৪.
আপনাকে চিন্তা করতে হবে, সার্চিংয়ের বিষয়টি ওয়েব পেজগুলোতে কিভাবে থাকতে পারে। একটি সার্চ ইঞ্জিন মানুষ নয়। এটি একটি প্রোগ্রাম, যা সার্চ বক্সে দেয়া আপনার শব্দগুলোর সাথে ওয়েবে বিভিন্ন পেজের মিল খোঁজে। সার্চিংয়ের ক্ষেত্রে সেসব শব্দই ব্যবহার করুন, যা সাধারণত ওয়েব পেজগুলোতে থাকতে পারে। যেমন- [my head hurts]-এর পরিবর্তে ব্যবহার করুন [headache]। কারণ, মেডিক্যাল পেজগুলোতে [headache] শব্দটিই ব্যবহার হয়। আবার [in what country are bats considered an omen of good luck?] -এই বাক্যটি একজন মানুষের কাছে খুবই স্পষ্ট। কিন্তু যে ডকুমেন্টটি এই প্রশ্নের জবাব দেবে, সেই ডকুমেন্টে ওই শব্দগুলো নাও থাকতে পারে। কাজেই উক্ত শব্দগুলোর পরিবর্তে যদি আপনি [bats are considered good luck in] অথবা [bats good luck] ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার কাঙ্ক্ষিত পেজগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
০৫.
আপনার প্রয়োজনীয় আইটেমটি যথাসম্ভব কম শব্দ ব্যবহার করে লিখুন। সার্চ ইঞ্জিন একটি আইটেমের প্রতিটি শব্দকেই ফোকাস করে। যেহেতু সব শব্দই ব্যবহার হয়, সেহেতু প্রতিটি অতিরিক্ত শব্দই আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলকে সীমত করে দেবে এবং এই সীমাটি যদি খুব বেশি হয় তাহলে আপনি যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য হারাবেন। অল্প পরিমাণ কী-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করার প্রধান সুবিধা হলো, ওই কী-ওয়ার্ডগুলো দিয়ে সার্চ করার ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল না পেলেও প্রাপ্ত ফলগুলো থেকে বুঝতে পারবেন নতুন করে ওই আইটেমের বিষয়বস্ত্ত খোঁজার জন্য আপনাকে আরো কী কী শব্দ যোগ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ- কানকুনের আবহাওয়ার অবস্থা জানতে [weather cancun] হচ্ছে [weather report for cancun mexico]-এর চেয়ে ভালো সার্চিং আইটেম।
০৬.
তুলনামূলক বর্ণনামূলক শব্দ ব্যবহার করুন। সার্চিং আইটেম যতটা একক হবে, আপনার প্রাপ্ত ফলগুলো ততই ফলপ্রসূ হবে। যেসব শব্দ খুব বর্ণনামূলক নয় (যেমন- ‘document’, ‘website’, ‘company’ অথবা ‘info’) তা সাধারণত প্রয়োজন হয় না। মনে রাখবেন আপনার শব্দটির সঠিক অর্থ থাকা সত্ত্বেও যদি তা বেশিরভাগ লোক ব্যবহার না করে থাকে, তবে আপনি প্রয়োজনীয় পেজটি খুঁজে পাবেন না। উদাহরণস্বরূপ- [celebrity ringtones], [celebrity sounds]-এর চেয়ে বেশি বর্ণনামূলক ও সুনির্দিষ্ট।
০৭.
আপনার আইটেমটি ডবল কোটেশন (‘‘ ’’) দিয়ে আটকে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে শুধু কোটেশনের মধ্যকার শব্দগুলোর সাথে মিল পাওয়া পেজগুলোই আপনি পাবেন। তবে এক্ষেত্রে দুর্ঘটনাক্রমে অনেক জরুরি তথ্য হারাতে পারেন। যেমন- [“Alexader Bell”] দিয়ে কোনো তথ্য খুঁজতে গেলে আপনি [Alexader G. Bell]-এর সাথে মিল পাওয়া কোনো পেজ পাবেন না।
০৮.
গুগল সার্চিংয়ের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের ভেতরেও তথ্য খুঁজতে পারেন। যেমন- [iraq site : nytimes.com]-এর মাধ্যমে ইরাক সম্বন্ধীয় পেজগুলো খুঁজে পাবেন। কিন্তু শুধু nytimes.com সাইটে ইরাক সম্বন্ধীয় যে তথ্যগুলো আছে তা আপনি কোনো সাইটের সম্পূর্ণ শ্রেণীকেও নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। যেমন- [iraq site : .gov] ইরাকের .gov ডোমেইনের সাইটসমূহের ফলগুলো দেবে। আবার [iraq site : .iq] শুধু ইরাকী সাইটগুলোর ফল দেবে।
০৯.
সার্চিংয়ের মধ্যে যেসব শব্দ সম্পর্কিত তথ্য না পেতে চাইলে সেসব শব্দ (-) চিহ্ন দিয়ে বাদ দিতে পারেন। অর্থাৎ শব্দটির আগে (-) চিহ্ন বসিয়ে দিন এবং তার আগে একটা স্পেস বসাতে হবে। যেমন- [anti-virus software] আইটেমটিতে (-) একটা হাইফেন হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে (-) দিয়ে ‘virus’ শব্দটিকে বাদ দেয়া বুঝায় না। কিন্তু [anti-virus – software] আইটেমে ‘anti-virus’ শব্দ দিয়ে ফল খুঁজবে কিন্তু তা থেকে software-এর রেফারেন্স বাদ দিয়ে। কারণ, এখানে ‘- software’-এর আগে একটা স্পেস আছে।
১০.
গুগল সাধারণত একটি সার্চিং আইটেমের সব শব্দকেই গণনায় ধরে। তবে যদি কয়েকটি শব্দের যে কোনোটি সম্পর্কিত তথ্য পেতে চান, সেক্ষেত্রে ‘OR’ অপারেটর ব্যবহার করতে হবে। উল্লেখ্য, এখানে ‘OR’ বড় হাতের বর্ণ দিয়ে লিখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ [San fransisco Giants 2004 or 2005] আইটেমটির মাধ্যমে হয়-২০০৪ সালের অথবা ২০০৫ সালের তথ্যগুলো পাবেন। কিন্তু OR অপারেটর ছাড়া উভয় সালের তথ্যই একই পেজে পাবেন।
ব্যতিক্রম : আগেই বলা হয়েছে, গুগল বেশিরভাগ বিরাম চিহ্ন অগ্রাহ্য করলেও কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন-
ক.
কিছু কিছু জনপ্রিয় শব্দ, যেমন C++, C# ইত্যাদির নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। এখানে শব্দ দুটির দুটিই প্রোগ্রামিং ভাষার নাম। এসব ক্ষেত্রে চিহ্নগুলো অগ্রাহ্য হবে না।
খ.
ডলার চিহ্নের ($) ব্যবহার হয় দাম বুঝাতে। যেমন- [nikon 400] এবং [nikon $400] -এর ভিন্ন ভিন্ন ফল আসবে।
গ.
আন্ডারস্কোর (_) চিহ্নটি যখন দুটি শব্দকে যোগ করতে ব্যবহার হয়, তখন এটি অগ্রাহ্য হয় না।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : rabbi1982@yahoo.com