১ মে, ১৯৯১। মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর জন্মদিন। মাঝখানে সুদীর্ঘ উনিশটি বছর। এই উনিশটি বছরে প্রতিটি ইংরেজি মাসের শুরুতে কমপিউটার জগৎ এর অস্তিত্ব ঘোষণা করেছে এর এক-একটি নতুন সংখ্যা পাঠকদের কাছে তুলে ধরে। এই উনিশ বছরে আমরা পাঠকসাধারণের কাছে সমসাময়িক সময়ের প্রযুক্তির মানচিত্রটি যেমনি তুলে ধরেছি, তেমনি আগামী দিনের প্রযুক্তি নিয়ে ভাববার এবং সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা রচনা ও বাস্তবায়ন করতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সফলতা পেয়েছি, কতটুকু পাইনি সে বিবেচনার ভার পাঠকসাধারণের ওপরই ছেড়ে দিতে চাই। তবে সেই সাথে আমাদের এই উনিশ বছরের পথ চলা শেষে বিশে পা দেয়ার এই পূর্বক্ষণে পাঠকসাধারণের কাছে আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাসের কথাটিও সবিনয়ে জানাতে চাই। আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস, পাঠকসাধারণের বিবেচনায় আমাদের ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্যের পাল্লাটিই অধিকতর ভারি। নইলে এই উনিশটি বছরে আগাগোড়া প্রতিটি সময়ে কমপিউটার জগৎ-এর অভাবনীয় পাঠকপ্রিয়তা বরাবর ধরে রেখে অব্যাহতভাবে এদেশের সর্বাধিক প্রচারিত তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকীর গৌরব আজ পর্যন্ত বজায় রাখা যেত না। আজকের এ শুভক্ষণটিতে আমরা আমাদের সম্মানিত পাঠকবর্গকে এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই, দেশের সর্বাধিক প্রচারিত তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকী হিসেবে অর্জিত এ গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখতে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা বরাবরের মতো আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
এটা খুবই স্বাভাবিক, কমপিউটার জগৎ-এর যেমন পুরনো পাঠক আছেন, তেমনি সময়ের সাথে সাথে তাদের সাথে যোগ হচ্ছেন নতুন প্রজন্মের অনেক পাঠক। আমাদের পুরনো পাঠকবর্গ তাদের পাঠসংশ্লিষ্টতা দিয়েই কমপিউটার জগৎ-এর মিশন, ভিশন, কর্মতৎপরতা, সাফল্য, ব্যর্থতা, অর্জন, অনার্জন ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক অবহিত। কিন্তু নতুন প্রজন্মের পাঠকের অনেকেই সে ব্যাপারে অবহিত নন। ফলে আমরা মনে করি, তাদের সামনে অতীতের অজানা-অদেখা কমপিউটার জগৎ-কে এবং এর পাওয়া-না পাওয়া ও অর্জন-অনার্জনকে তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে। সে তাগিদে এ লেখায়ই আমাদের নিজের কথাই অনেকটা উঠে আসবে এমনটিই স্বাভাবিক। তবে আমরা নিশ্চিত, এ লেখায় কমপিউটার জগৎ-এর উনিশ বছরের কর্মকান্ডের যে অতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশ উঠে আসবে, তা থেকে পাঠকসাধারণ স্বীকার করতে বাধ্য হবেন সত্যিকার অর্থেই ‘কমপিউটার জগৎ একটি আন্দোলনের নাম’।
শুরুতেই কৃতজ্ঞতা
শুরুতেই বলেছি, এই উনিশটি বছর আমাদের নিয়মিত প্রকাশনায় বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি। কমপিউটার জগৎ নিয়মিত প্রকাশনার এ উৎসাহ-উদ্দীপনা আমরা পেয়েছি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাণপুরুষ অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদের ও তার একঝাঁক উদ্যমী সহকর্মীর কাছ থেকে। মরহুম আবদুল কাদেরের এ প্রকাশনা উদ্যোগকে কার্যত জিইয়ে রেখেছেন এর লেখক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, অ্যাজেন্ট, পৃষ্ঠপোষক, শুভানুধ্যায়ী ও এদেশের প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ। তাদের বৈষয়িক সহায়তা ও উৎসাহ-উদ্দীপনাময় মূল্যবান পরামর্শকে পাথেয় করেই কমপিউটার জগৎ-এর আজকের এ পর্যায়ে উঠে আসা। আমরা আজকের এ মুহূর্তে তাদের প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে এদেশের সব ধরনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক নানা সহায়তা কমপিউটার জগৎ-এর বন্ধুর পথচলায় সাহস জুগিয়েছে বরাবর। তাদের প্রতিও রইলো আমাদের কৃতজ্ঞতার ঢালি।
সর্বাধিক প্রভাবশালী পত্রিকা
উনিশ বছর পূর্তি শেষে বিশতম বছরে পা রেখে আমরা আমাদের একটি অর্জনের কথা দৃঢ়তার সাথে দাবি করতে পারি, মাসিক কমপিউটার জগৎ শুধু এদেশের সর্বাধিক প্রচারিত তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকীই নয়, বরং এক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রভাবশালী একটি পত্রিকাও। আমরা প্রকাশনার শুরু থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুচিন্তিত পরামর্শ সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে আমাদের বিভিন্ন রিপোর্ট, প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ও বিভিন্নধর্মী লেখালেখির মাধ্যমে। আমাদের অনেক নীতি-পরামর্শই সরকারি পর্যায়ে গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। কোনো কোনো নীতি-পরামর্শ বাস্তবায়িত হতে পারেনি সরকারের তহবিল-সীমাবদ্ধতার কারণে। আবার অনেক নীতি-পরামর্শ সরকারের আমলাদের নির্বুদ্ধিতায় উপেক্ষিত হয়েছে চরমভাবে। তারপরও আমরা হাল ছাড়িনি। আমরা যখন দেখছি, শুধু লেখালেখির নীতি-পরামর্শগুলো আমাদের নীতি-নির্ধারক ও সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণিত হচ্ছে না, তখন আমরা প্রচলিত সাংবাদিকতার গন্ডি পেরিয়ে চালিয়েছি ভিন্নমুখী তৎপরতা। আমরা প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করেছি, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করেছি, প্রযুক্তির অগ্রগমনে সহায়ক কর্মকান্ডের গতি আনার জন্য আমরা অন্যের সহযোগী হয়েছি, আবার অন্যদেরকেও করেছি আমাদের সহযোগী। এভাবে কার্যত আমরা একটি পত্রিকাই প্রকাশ করিনি, বরং নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছি এদেশের তথ্যপ্রযুক্তিকে এগিয়ে নেয়ার লড়াইয়ে। এক্ষেত্রে আমরা যে একটুও বাড়িয়ে বলছি না, তা তাদের পক্ষেই আন্দাজ-অনুমান সম্ভব, যারা কমপিউটার জগৎ-এর সামগ্রিক কর্মধারা সম্পর্কে কিছুটা হলেও পরিচিত আছেন।
আসলে আমরা বরাবর নির্মোহভাবে, শুধু দেশের তথ্যপ্রাযুক্তিক উন্নয়নকে মাথায় রেখে মাসিক কমপিউটার জগৎ-কে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছি। আমরা মনেপ্রাণে লালন করেছি, একটি পত্রিকাও হতে পারে একটি আন্দোলন, আন্দোলনের হাতিয়ার, আন্দোলনের নিয়ামক। সে পথে হেঁটেই মাসিক কমপিউটার জগৎ আজ দেশের সর্বাধিক প্রভাবশালী তথ্যপ্রযুক্তি মাসিক। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নীতি-নির্ধারণ ও কর্মপন্থা সূত্রায়নে কমপিউটার জগৎ-এর ভূমিকা সহজেই দৃশ্যমান ও উপলব্ধিযোগ্য।
শুরুটা যেভাবে
কমপিউটার জগৎ-এর সূচনা সুগভীর উপলব্ধি সূত্রে পাওয়া একটি অপরিহার্য দাবি নিয়ে। আজ থেকে উনিশ বছর আগে আমরা আমাদের উপলব্ধির কথাটা জানিয়েছিলাম আমাদের প্রথম সম্পাদকীয়র মাধ্যমে এভাবে : ‘বিগত ২-৩ দশকের বিবর্তনে কমপিউটার আজ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার বিস্ময়কর অবদান মানুষের জীবন ও সভ্যতার সব ক্ষেত্রকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করছে। কমপিউটার এখন ব্যবস্থাপনায়, সরকারি প্রশাসনে, শিল্পে, শিক্ষায়, গবেষণায়, চিকিৎসায়, যুদ্ধে, যোগাযোগ ব্যবস্থায়, এমনকি বিনোদনে ব্যবহার হয়ে প্রযুক্তিতে পৃথিবীকে হাজার হাজার বছর এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সূচনা হয়েছে কমপিউটার বিপ্লবের। এ বিপ্লবে যোগ দেয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে কমপিউটার শিক্ষা ও কমপিউটারায়নের ব্যাপক প্রসার। কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনা ও বিপ্লবে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার প্রত্যয়ে আমাদের বলিষ্ঠ প্রয়াস।’
এই উপলব্ধির পথ ধরে আমাদের প্রথম দাবি ছিল ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। প্রায় দুই দশক আগে তোলা আমাদের দাবি যে কতটা যৌক্তিক ছিল, তা বোধহয় কাউকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বুঝানোর দরকার নেই। তখন আমরা লক্ষ করেছিলাম, দেশে প্রচলিত রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সুযোগ ও অধিকারের মতো কমপিউটারের বিস্তারও সীমিত হয়ে পড়েছে মুষ্টিমেয় ভাগ্যবান ও শৌখিন মানুষের মধ্যে। কিন্তু মেধা, বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতায় অনন্য এদেশের সাধারণ মানুষকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে শানিত করে তোলা হলেই সম্পদ, জীবন ও বিবেক-বিনাশী বর্তমান জীবনধারা বদলে দিতে পারে। সেজন্যই আমাদের মুখ্য দাবি হয়ে ওঠে- ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। সময়ের অপরিহার্যতার পথ ধরে নানা বাধা-বিপত্তি আগলে জনগণের হাতে এখন কমপিউটার ধীরে ধীরে পৌঁছতে শুরু করেছে। কিন্তু আমরা এক্ষেত্রে যে গতিটা আশা করেছিলাম শুরু থেকেই, সে গতি আজো অনুপস্থিত। তাছাড়া জনগণের হাতে কমপিউটার পৌঁছার পুরোপুরি কাজটা এখনো সম্পাদনের অপেক্ষায়। তাই আমাদের সে দাবিটা এখনো দাবি হয়েই থাকল। সেই সাথে আশা রইলো, এ দাবি পূরণে, যে যতটুকু দায়-দায়িত্ব বহন করেন, সে দায়িত্বটুকু দ্বিধাহীনচিত্তে যথার্থই পালন করবেন। সেই সূত্রে আমাদের প্রাণের দাবিটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটবে আগামী কোনো একদিনে।
প্রয়োজনীয় তাগিদে অকৃপণ কমপিউটার জগৎ
আমরা শুরু থেকেই একটি ব্যাপারে যথার্থ অর্থেই সচেতন ছিলাম। দেশের প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে হলে যেখানে যাকে যে তাগিদটুকু দেয়া দরকার, সেটুকু অবশ্যই সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে যথাসময়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কৃপণতা প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। তাই আমরা প্রথম সংখ্যায় ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ দাবি তুলে লক্ষ করি- এক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে কমপিউটার কিংবা কমপিউটার সামগ্রীর ওপর করারোপ কিংবা করারোপের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া। তাই দ্বিতীয় সংখ্যাটিতে এসেই আমরা সরকারের কাছে যে তাগিদটা আমাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরি তাহলো- ‘বর্ধিত ট্যাক্স নয় : জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। এর পরবর্তী সময়ে যখনই আমরা দেখেছি, কমপিউটার কিংবা কমপিউটার সামগ্রীর ওপর কর বসানোর পাঁয়তারা চলেছে, তখনই এর বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার অবস্থান নিয়েছি। যার ফলে নববইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমরা কমপিউটার পণ্যকে শুল্কমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। বলা যায়, এটা আমাদের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। কারণ, শুল্কমুক্ত কমপিউটার ও কমপিউটার আমদানির সুযোগের পথ ধরেই এদেশে মধ্যবিত্ত পরিবারে কমপিউটার প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
১৯৯১ সালের জুলাইয়ে এসে প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমাদের তাগিদ ছিল- ‘কমপিউটারবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন : জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। এই তাগিদ দিয়ে আমরা বলতে চেষ্টা করি : ‘কমপিউটারের ডাটা-অ্যান্ট্রির কাজকে অবলম্বন করে বিদেশ থেকে অফুরন্ত কাজ এনে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার তরুণকে কাজে লাগানো যায়’।
এ ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনের সময়ে প্রয়োজনীয় তাগিদটা জারি করে রেখেছি এই ১৯ বছর সময়জুড়ে। ১৯৯১ সাল থেকে আমরা তাগিদ দিয়ে আসছি বাংলাদেশে ব্যাপক কমপিউটারায়নের ওপর। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে এসে আমরা তাগিদ রাখি ‘জনজীবনের ভিত্তিমূলে কমপিউটারকে নিয়ে যেতে হবে’। ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসেই আমাদের যথার্থ তাগিদ : ‘কমপিউটারে বাংলা ব্যবহারের সব স্তরে আদর্শ মান চাই’। ১৯৯২-এর মার্চে আমাদের দেয়া তাগিদ ছিল ‘সব স্তরে কমপিউটার ব্যবহার করতে হবে’। সে সময় বলি উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি নিহিত রয়েছে কমপিউটারে।
দ্বিতীয় বর্ষশুরু সংখ্যায় আমরা জোরালোভাবে তাগিদ রাখি অবিলম্বে কমপিউটারভিত্তিক অখন্ড তথ্য ব্যবস্থা দরকার। এর পরের সংখ্যায়ই আমরা ১৯৯২ সালের জুনে দাবি তুলি তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবকে আমরা হাতছাড়া করতে পারি না। সেজন্য প্রয়োজন সব স্তরে কমপিউটার শিক্ষা। সেই সাথে প্রয়োজন আলাদা তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। আগস্ট ১৯৯২ সংখ্যায় দাবি তুলি : ‘সরকারি চাকরিতে কমপিউটারবিদদের উপেক্ষা করা চলবে না। কমপিউটারবিদদের জন্য জাতীয় ক্যাডার সার্ভিস চাই’। এ সংখ্যাটিতে আমরা কমপিউটারে বাংলা ব্যবহারের তাগিদ রেখে লেখা প্রকাশ করেছি।
সেপ্টেম্বর ১৯৯২ সংখ্যায় তাগিদ ছিল : ‘ব্যবস্থাপনা উন্নততর করতে চাই তথ্যপ্রযুক্তি’। পরবর্তী সংখ্যাটিতে আমরা জানিয়ে দিই ‘কমপিউটারে দক্ষতা ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব টিকবে না’। ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে আমাদের সুস্পষ্ট তাগিদ ছিল : ‘সুপার কমপিউটার পেতে হবে আমাদেরও’। জানুয়ারি ১৯৯৩ সংখ্যার তাগিদ : ‘প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত বাংলা কীবোর্ড। বাংলা একাডেমীর হাতে বিপন্ন বাংলাকে বাঁচাতে হবে’। পরের সংখ্যায় বলি- ‘সরকারগুলোই এদেশকে ভিক্ষুক করে রেখেছে, জাতীয় ব্যর্থতা ও ভিক্ষাবৃত্তি রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’।
এভাবে প্রতিটি বছরেই সময়ের প্রয়োজন মেটাতে আমাদেরকে সংশ্লিষ্টদের কাছে নতুন নতুন দাবি নিয়ে হাজির হতে হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে ধরতে হয়েছে কমপিউটার জগৎ-এর বিভিন্ন সংখ্যায়। পাঠকবর্গের ধৈর্যচ্যুতির আশঙ্কায় এর বিস্তারিতে যাওয়া সমীচীন মনে করছি না।
উনিশ বছরে আমাদের অর্জন
মাসিক কমপিউটার জগৎ তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে কাজ করতে গিয়ে বেশকিছু অর্জনের ভাগীদার হয়েছে, যা এদেশের তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে কমপিউটার জগৎ-কে চিরভাস্বর করে রাখবে। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সাময়িকী হিসেবে মাসিক কমপিউটার জগৎ নিশ্চিতভাবে সে গৌরবের অংশীদার।
কমপিউটার জগৎ-এর পাঠকমাত্রই জানেন, কমপিউটার জগৎ-এর সূচনাসংখ্যার মাধ্যমেই এদেশে সর্বপ্রথম দাবি তোলে ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে আমরাই প্রথম এদেশে ডাটা-অ্যান্ট্রির সম্ভাবনার কথা দেশবাসীর সামনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরি। এজন্য আমরা আয়োজন করি এ বিষয়ে দেশের প্রথম সংবাদ সম্মেলন। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরাই সর্বপ্রথম কমপিউটারে বাংলাভাষা ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করি। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে কমপিউটার জগৎ এদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ মাসেই কমপিউটার জগৎ সবার আগে দাবি তোলে : ‘কমপিউটারের দাম কমাতে হবে’। ১৯৯২ সালের ২৮ ডিসেম্বর আমরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করি কমপিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনী। ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এই পত্রিকা প্রথমবারের মতো প্রযুক্তিক্ষেত্রে উৎসাহ যোগানোর লক্ষ্যে ‘বছরের সেরা ব্যক্তিত্ব’ ও ‘বছরের সেরা পণ্য’ পুরস্কারের প্রবর্তন করে। ১৯৯৩ সালের ৫ জানুয়ারি কমপিউটার জগৎ এদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমপিউটার মেধাবীদের স্বীকৃতি জানিয়ে প্রবাসী বিজ্ঞানীদের ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে উপস্থাপন করে। ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে এ পত্রিকা সর্বপ্রথম টেলিকমপ্রযুক্তি বিষয়ে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা তুলে ধরে। ১৯৯৩ সালের ১৪ জানুয়ারি এ পত্রিকার পক্ষ থেকে এদেশে প্রথমবারের মতো কমপিউটারের ক্ষেত্রে প্রতিভাবান শিশুদের কার্যক্রম একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
১৯৯৬ সালের ২৫ জানুয়ারি আমরাই এদেশে সর্বপ্রথম আয়োজন করি ‘ইন্টারনেট সপ্তাহ’, যার লক্ষ্য ছিল ইন্টারনেটের সাথে এদেশের মানুষকে অধিকতর পরিসরে পরিচিত করে তোলা। ১৯৯৬ সালের ৩০ জানুয়ারি এ পত্রিকা প্রথমবারের মতো গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালু করে কমপিউটার পরিচিতি কর্মসূচি। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সংখ্যায় আমরাই প্রথম দাবি জানাই : ‘২০০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট চাই’।
২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসে আমরাই সর্বপ্রথম এদেশে ডিজিটাল ডিভাইড সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করি একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে। সেই সাথে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করি। আমরা যথার্থ উপলব্ধি নিয়েই ধরে নিয়েছি তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে যথাসময়ে জনগণের মধ্যে যথাসচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে একটা জাতির জন্য এ ডিজিটাল ডিভাইড একসময় জাতীয় মহাসমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
আমরা বরাবর চেষ্টা করে এসেছি তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জাতির সামনে বার বার তুলে ধরতে। এবং এ ব্যাপারে যখন যাকে যে তাগিদটুকু দেয়া, তা দিয়ে দেয়া। এক্ষেত্রে ই-গভর্নেন্সের বিষয়টি ছিল আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কমপিউটার জগৎ পরিবারের মাঝে শুরু থেকেই উপলব্ধি ছিল ইন্টারনেট হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির এক বিস্ময়কর অবদান। ইন্টারনেট মানুষের কাছে কার্যত খুলে দিয়েছে এক সীমাহীন তথ্যভান্ডার। যোগাযোগের ক্ষেত্রে বয়ে এনেছে অভাবনীয় সুযোগ। ইন্টারনেটের সৃষ্টিতে সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি পেতে হলে চাই দ্রুতগতির ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের সুপার হাইওয়েতে প্রবেশে নিশ্চিত করতে হলে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ ছিল অপরিহার্য। এই সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ বাংলাদেশ পায় মাত্র কয়েক বছর আগে। কিন্তু আমরা এ সুযোগের হাতছানি দেখতে পেয়েছিলাম সেই দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৯২ সালে। ১৯৯২ সালের নভেম্বরে ‘বিশ্বজোড়া ফাইবার অপটিক ক্যাবল বাংলাদেশের কাছ দিয়ে যাচ্ছে’ শীর্ষক খবর প্রকাশ করে আমরা সরকারকে তাগিদ দিয়েছিলাম এর সাথে বাংলাদেশকে যুক্ত করার ব্যাপারে।
কমপিউটার জগৎ-এর উনিশ বছরের প্রকাশনার গোটা সময়জুড়ে সবচেয়ে বেশিমাত্রায় অব্যাহতভাবে যে বিষয়টির ওপর জোর তাগিদ ও গুরুত্ব দিয়ে এসেছে এবং এখনো দিয়ে চলেছে সেটি হচ্ছে ‘তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাভাষার ব্যবহার সর্বোচ্চমাত্রায় নিয়ে পৌঁছানোর বিষয়টি’। বলা যায়, এক্ষেত্রে আমাদের আন্দোলন ছিল বরাবরের। এই উনিশ বছরে আমরা কমপিউটার জগৎ-এ বাংলাভাষা ব্যবহারের ওপর কম করে হলেও ডজনাধিক প্রচ্ছদ কাহিনী প্রকাশ করেছি। এর বাইরে এ বিষয়ে লেখালেখিও চলেছে তেমনি হারে। আমরা ১৯৯১ সালের মে মাসে এ পত্রিকাটির প্রকাশনা শুরুর পর আমাদের সামনে প্রথমবারের মতো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির আসে ১৯৯২ সালে। ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই আমরা প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করি : ‘কমপিউটারে বাংলা, সর্বস্তরে আদর্শ মান চাই’। ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: ‘বাংলা একাডেমীর হাতে বিপন্ন বাংলা’। একই বছরের মার্চে প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: ‘প্রকাশনা শিল্পে কমপিউটার প্রযুক্তি’। আগস্টে এসে আমাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করতে হয়েছে ‘বিসিসির পোস্ট মোর্টেম : বাংলাদেশের বাংলা ভারতের নিয়ন্ত্রণে’। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় আমাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: ‘অনিশ্চয়তার পথে বাংলাদেশের বাংলা’। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: ‘বাংলাদেশে বাংলা সফটওয়্যার, সফটওয়্যার বাণিজ্য’। এর মাত্র দু’সংখ্যার পর মে সংখ্যার প্রচ্ছদ শিরোনাম হয়ে ওঠে: ‘কমপিউটার ও বাংলাভাষা’। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনী ছিল: ‘বাংলাদেশের বাংলা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আছে কি?’। ২০০১ সালের মার্চ সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনীর শিরোনাম করি: ‘বাংলাভাষার বিশাল তথ্যপ্রযুক্তি বাজার’। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনীর শিরোনাম: ‘বাংলা কমপিউটিংয়ে দুরবস্থা এবং বায়োসের উদ্যোগ’। ২০০৪ সালে ফেব্রুয়ারির প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়: ‘বাংলায় আইসিটি’। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম হয়: ‘তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলা কমপিউটিং’। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনীর শিরোনাম: ‘কমপিউটারে বাংলাভাষার প্রয়োগ, প্রয়োজন আরো জোরালো গবেষণা’। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ শিরোনাম ছিল: ‘ডিজিটাল যন্ত্রে কেমন আছে বাংলাভাষা’। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ শিরোনাম হয়েছে: ‘বাংলা কমপিউটিং ও আমরা’।
প্রসঙ্গ কমজগৎ ডটকম
২৫ এপ্রিল, ২০০৯ মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর ইতিহাসে, এমনকি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ইতিহাসে সৃষ্টি হলো একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই দিনে মাসিক কমপিউটার জগৎ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে এর নিজস্ব ওয়েবপোর্টাল www.comjagat.com-এর বেটা ভার্সন। এটি বাংলায় এবং ইংরেজিতে করা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সবচেয়ে বড় ওয়েবপোর্টাল। এতে কমপিউটার জগৎ-এর বিগত বছরগুলোর প্রকাশিত সব ম্যাগাজিন আর্কাইভ করা আছে, যেগুলো বিনে পয়সায় ডাউনলোড করা যায় অথবা অনলাইনে পড়া যায়।
এই ওয়েবপোর্টালের পাঠকরা কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত পুরনো ও নতুন সব লেখা পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন। নিজের লেখা পোস্ট করতে পারবেন। ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন। তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক খবর, নতুন পণ্য, ইভেন্ট এবং বিভিন্ন সুযোগসুবিধা, যেমন-চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং, স্কলারশিপ ইত্যাদি বিষয়ের তথ্য জানতে পারবেন। পণ্য ও লেখার রযােশঙ্কিং, রেটিং ও মন্তব্য করতে পারবেন। নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল তৈরি, অনুষ্ঠিত ও অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানের খবর প্রকাশ করতে পারবেন। আইসিটিবিষয়ক বিভিন্ন সুযোগসুবিধা ও নতুন পণ্যের বিবরণ তুলে ধরতে পারবেন। ব্লগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আগ্রহের বিভিন্ন আইসিটি বিষয়ে দলীয় আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন।
বলা প্রয়োজন
‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ নামের আড়ালে কমপিউটার জগৎ-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদের ১৯৯১ সালে যে আন্দোলনের জন্ম দিয়ে গেছেন তারই অপরনাম ‘কমপিউটার জগৎ’। কমপিউটার জগৎ পরিবার এই উনিশ বছর এর নিয়মিত প্রকাশনার মধ্য দিয়ে সে আন্দোলনকেই বহন করে চলেছে। কমপিউটার জগৎ এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের ধারক-বাহক। আমরা আমাদের এ পত্রিকায় প্রতিটা লেখার মাধ্যমে জারি রাখতে চেষ্টা করেছি তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের শব্দমিছিলকে। এ শব্দমিছিল ছিল কখনো সময়ের প্রয়োজন মেটানোর মতো কোনো দাবি কিংবা কখনো সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াসে প্রয়াসী। তবে আমরা কখনো কোনো ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো কিছুই করিনি। ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আমাদের প্রকাশনাকে প্রযুক্তিপ্রেমীদের মনের মতো করে প্রকাশ করতে সচেষ্ট রয়েছি। আমাদের বিবেক যদি আমাদের প্রতারিত না করে, তবে এ কাজটি আমরা আগামী দিনেও করে যাবো যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সাথে যথাযথভাবে। আমাদের প্রেরণাপুরুষ মরহুম আবদুল কাদের আমাদের সে শিক্ষাটাই দিয়ে গেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার অনুসৃত ইতিবাচক দিক-নির্দেশনাকে সম্বল করে আমরা কমপিউটার জগৎ প্রকাশ করে যাচ্ছি।
আসলে এই উনিশ বছরে কমপিউটার জগৎ এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেয়ার আন্দোলনের গুরুদায়িত্বটিই অব্যাবহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এই আন্দোলনকে বেগবান করে তোলার প্রয়োজনেই আমরা সাংবাদিকতার প্রচলিত গন্ডি ভেঙ্গে অসংখ্য সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করেছি, সংবাদ সম্মেলন করেছি, প্রযুক্তিবিদদের উপস্থাপন করেছি, কমপিউটার মেলার আয়োজন করেছি, প্রযুক্তিপণ্য ও সেবা ব্যবসায়ীদের আন্দোলনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছি, প্রযুক্তি শিক্ষা প্রসারের আন্দোলন করেছি। আমরা যথার্থ কারণেই যৌক্তিক দাবি তুলতে পারি, কমপিউটার জগৎ-এর এসব নানাধর্মী ও নানামাত্রিক কর্মকান্ড এদেশের মানুষকে প্রযুক্তিপ্রেমী হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে-এ কথা সর্বমহল বিতর্কাতীতভাবে স্বীকার করে। সে কারণেই অনেককেই বলতে শুনি, ‘কমপিউটার জগৎ এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি জগতে একটি আন্দোলনের নাম’। আর যেহেতু এক্ষেত্রে এক প্রচারবিমুখ নির্মোহ প্রেরণাপুরুষ হিসেবে এদেশের মানুষ পেয়েছিল অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরকে, সেহেতু তিনিও আজ সর্বমহলে আখ্যায়িত হচ্ছেন ‘এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক অভিধায়’। একথা অনস্বীকার্য, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আজকের পর্যায়ে এগিয়ে আনার ক্ষেত্রে গোটা জাতি তার কাছে ঋণী হয়ে গেছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার অবদানের প্রতি যথার্থ স্বীকৃতি জানিয়ে তার সে ঋণ পরিশোধে উদ্যোগ নিলে জাতি উপকৃত হতে পারত। তার প্রতি এ ধরনের স্বীকৃতি তথ্যপ্রযুক্তিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে জাতি তাকে পেতো এক স্থায়ী প্রেরণার উৎস হিসেবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com