গোলাপ মুনীর সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে
গত ১৫-১৮ জুন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হলো ‘কমিউনিকএশিয়া-২০১০’। এতে অংশ নেয়ার জন্য ১৫ জুলাই রাত ১টা ২০-এ ঢাকা ছাড়ি মালয়েশিয়ার এয়ারলাইনসে। পৌনে চার ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় ভোর ৭-০৫ মিনিটে পৌঁছলাম কুয়ালালামপুরে। সেখানে ১ ঘণ্টা ট্রানজিট বিরতির পর মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের অন্য একটি বিমানে করে আরো ৫৫ মিনিট উড়ে সকাল ৯টায় পৌঁছলাম সিঙ্গাপুর। বিমানবন্দর থেকে একটি ট্যাক্সি করে আগে থেকে অনলাইনে বুক করা রয়েল পার্ক হোটেলে ৭২২ নম্বর কক্ষে। রিপোর্টিং, চেকিং ইমিগ্রেশন, বোর্ডিং, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছা ইত্যাদি সবকিছুই ঘড়ির কাঁটায় কাটায় ঝামেলাহীনভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ভালোই লাগছিল।
বিমানবন্দর থেকে বেশ একটু দূরেই রয়েল পার্ক হোটেলের অবস্থান। যানজটবিহীন সড়ক, সড়কের দু-পাশে সবুজের সমারোহ, সবুজ চত্বরের পাশে আকাশচুমী ভবন, সাইনবোর্ড-হোর্ডিংবিহীন সাজানো-গোছানো পরিবেশ, মাঝেমধ্যেই রাস্তার পাশে ভেসে ওঠা ইলেক্ট্রনিক ট্রাফিক সিগন্যাল, নানা ধরনের সতর্কসঙ্কেত সব মিলিয়ে এক অন্য ধরনের আবেশ। পথে যেতে যেতে ভাবছি, কী করে মাত্র ৫০ লাখ লোকের ৬৯২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে ও সেই সাথে অর্থনীতিতে এতটা উন্নতির শিখরে পৌঁছুল? এমনটি ভাবতে ভাবতেই ট্যাক্সি হোটেলে পৌঁছে গেল। ট্যাক্সির মিটারে বিল উঠেছে ১৮ ডলার ৬০ সেন্ট। ট্যাক্সি ড্রাইভারের হাতে ১০ ডলারের দুটি নোট দিয়ে বললাম ‘ইউ টেক ইট’। সে ১ ডলার ৪০ সেন্ট ও একটি রসিদ হাতে দিয়ে বললো : ‘নো নো উই ডোন্ট হ্যারাস অ্যানি ফরেনার। ইফ আই ডু দেট, মাই লাইসেন্স উড বি ক্যানসেল্ড’। ড্রাইভারের এই সততা ও মূল্যবোধসম্পন্ন আচরণ দেখে আমার মনে জাগা প্রশ্নের উত্তরটাই যেনো পেয়ে গেলাম। উপলব্ধি করলাম, এই ‘সততা ও মূল্যবোধ’ই হয়তো তাদের জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম নিয়ামক।
যা-ই হোক, হোটেলকক্ষে মালপত্র রেখে হাতমুখ ধুয়ে একটু তরতাজা হয়ে ট্যাক্সি করে সোজা সিঙ্গাপুর এক্সপোতে। সিঙ্গাপুর এক্সপো’র বেশ কয়েকটি হলেই চলছিল ‘কমিউনিকএশিয়া ২০১০’ ও এর সহযোগী প্রদর্শনীগুলো। সেখানে পৌঁছে জানলাম, ভিজিট পাস লাগবে, তবে কোনো প্রবেশমূল্য লাগবে না। একটা কাউন্টারে আমাকে পাঠানো হলো। দেখলাম সেখানে সাধারণ দর্শকদের পাস দেয়া হচ্ছে। জানালাম, আমি সাংবাদিক। বাংলাদেশ থেকে এসেছি তোমাদের এ ইভেন্ট কভারেজে। একটা প্রেস-পাস চাই। একটা জেনারেল ভিজিটর-পাস দিয়ে বলল মিডিয়া সেন্টারে যোগাযোগ করতে। সেখান থেকে প্রেস-পাস নিয়ে প্রথমেই ঢুকে পড়ি সিঙ্গাপুর এক্সপোর ৪ নম্বর হলে। সুখের কথা, ঢোকার পরপরই প্রথমেই নজর পড়ে বাংলাদেশের ‘রিভ সিস্টেমস’-এর সাইনবোর্ডে। রিভ সিস্টেমসের স্টলে পৌঁছে দেখতে পেলাম এর প্রধান নির্বাহী রেজাউল হাসান ভাই, রায়হান ভাই ও শাহেদ ভাইসহ আরো ক’জন দু-তিন ভাগে ভাগ হয়ে আলাপে ব্যস্ত কিছু দর্শনার্থীকে নিয়ে। মনে হলো গ্রুপভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। রায়হান ভাই এগিয়ে এসে সংক্ষিপ্ত কুশল বিনিময় করে একটু বসতে বললেন। স্টলে ভিড় দেখে বললাম, আমি মেলা ঘুরে আসি, পড়ে কথা হবে। প্রায় তিন ঘণ্টা একটানা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ফিরে এলাম আবার রিভ সিস্টেমের স্টলে। কথা হলো রেজাউল হাসান ভাইয়ের সাথে। পরিচয় করিয়ে দিলেন তার টিমের অন্যদের সাথে। তাদের মধ্যে আছেন ভারতীয় সনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি রিভ সিস্টেমের ডিরেক্টর গ্লোবাল মার্কেটিং।
রেজাউল ভাই বললেন, ‘বাংলাদেশের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কমিউনিকএশিয়ায় অংশ নিচ্ছে। আপনাকে সেসব স্টলে নিয়ে যাবো।’ এক সময় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি স্টলে নিয়েও গেলেন, কর্মকর্তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সবাইকে স্টলে পাওয়া গেল না। রেজা ভাই জানালেন, পরদিন দুপুরে রিভ সিস্টেমসের স্টলে পার্টি আছে। সেখানে বাংলাদেশের অনেকেই থাকবেন। তাদের সাথে দেখা ও কথা বলার সুযোগ হবে। আমি যেনো সেখানে অবশ্যই থাকি। যা-ই হোক, সেমতে পরদিন সেখানে গিয়ে রিভ সিস্টেমের স্টলে আসা যাদের সাথে পরিচয় ও কথা হলো তাদের মধ্যে আছেন- জেনুসিসের সিইও আনিস রহমান, সিনক্রোনাসের সিইও কাজী গোলাম কাদের স্বপন ও কিউএসআর-এর সিইও কাজী জামিল আহমেদ ও হেড অব ডেভেলপমেন্ট কাজী আহসান আহমেদ, ‘আমারা’র এমডি সৈয়দ ফরহাদ আহমেদ এবং সিওও শরফুল আলম, ই-সফট বিলিং-এর সিইও মোহাম্মদ এমরান, মুন নেটওয়ার্কের সিইও আজাজুর রহমান এবং সোলার সফট লিমিটেডের আন্নুর রহমান। এবারের কমিউনিকএশিয়ায় অংশ নেয়া বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর কথায় পড়ে আসছি। তার আগে জেনে নিই কমিউনিকএশিয়া-২০১০ সম্পর্কে।
কমিউনিকএশিয়া-২০১০
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কমিউনিকএশিয়া ও ব্রডকাস্টএশিয়ায় এবারে ৫৭টি দেশ ও অঞ্চল থেকে ২ হাজারের মতো প্রদর্শক বা এক্সিবিটর কোম্পানি যোগ দিয়েছে। এসব আন্তর্জাতিক কোম্পানির মধ্যে বাজারের সেরা সেরা বহুজাতিক কোম্পানি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এতে ছিল ৩৫টি গ্রুপ প্যাভিলিয়ন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নতুন আসা বাংলাদেশ, দক্ষিণ কোরিয়ার ‘গোয়াংজু ইনফো অ্যান্ড কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন এজেন্সি’ এবং ভারতের টেলিকম ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস এক্সপোর্ট প্রমোশন-এর নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ। একই সাথে অনুষ্ঠিত এবারের কমিউনিকএশিয়া, ব্রডকাস্টএশিয়া, এন্টারপ্রাইজআইটি ও ইন্টারেকটিভডিএমই-তে ছিলেন দর্শনার্থী, প্রদর্শক, সেমিনারের বক্তা, সংবাদকর্মী ও ব্যবসায়ী নেতারা। এবারের মেলায় অংশগ্রহণের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। ‘সিঙ্গাপুর এক্সপো’ নামের অত্যাধুনিক সম্মেলন ও প্রদর্শনী মিলনায়তনের কয়েকটি হলজুড়ে ৫৮ হাজার বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসে এবার সাজানো হয় এ মেলার স্টলগুলো। অন্য হিসেবে বলা যায়, ১২টি ফুটবল মাঠের সমান জায়গায় বসেছিল এ মেলা। আয়োজকদের অনুমান, এবারের এ মেলায় ৩৬০ কোটি ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
কমিউনিকএশিয়ার অভিযাত্রা শুরু ১৯৭৯ সালে। এর একুশ বছরের কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে কমিউনিকএশিয়া আজ এশিয়ার অসমান্তরাল এক ওয়ান-স্টপ আইটি ইভেন্ট প্লাটফরম। একটি আদর্শ মার্কেটপ্লেস, যেখানে হালনাগাদ প্রযুক্তি ও প্রয়োগের সম্মিলন ঘটে। কমিউনিকএশিয়া ২০১০-এ আজকের দিনের ডিজিটাল কনভার্জেন্সের প্রেক্ষাপটে প্রদর্শিত হয়েছে নবতম সব প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন ও প্রয়োগ।
একই স্থানে একই সময়ে এন্টারপ্রাইজআইটি-২০১০ ও ব্রডকাস্টএশিয়া-২০১০ আয়োজিত হওয়ার ফলে এখানে টেকনোলজির পুরোপুরি সম্মিলন বা কনভার্জেন্স ঘটেছে। এটি গতিশীল আইসিটি শিল্পসম্পর্কিত আলোচনার প্ল্যাটফরম হিসেবেও এখন বিবেচিত। শিল্প প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা জোরদার করা ও ব্যবহারকারীদের জীবনধারণ নির্ধারণে কমিউনিকএশিয়া এখন কার্যত এশিয়ার বৃহত্তম ‘আন্ডার ওয়ান-রুফ আইসিটি প্ল্যাটফরম’।
নজরকাড়া পণ্য
কমিউনিকএশিয়া-২০১০-এ বেশকিছু পণ্য দর্শকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। ফোন হারিয়ে ফেলেছেন? কোনো সমস্যা নেই। কমিউনিকএশিয়াতে WaveSecure নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন প্রদর্শিত হয়েছে। এটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের সহায়ক হবে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি চলবে অ্যানড্রয়েড, ব্ল্যাকবেরি, সিমবায়ান ও উইন্ডোজ মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে। এটি হারানো মোবাইলের গতিবিধি ধরে ডাটা পুনরুদ্ধার করতে পারে। সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান tenCube এই অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করেছে। ওয়েবসিকিউরের মাধ্যমে ব্যবহারকারী হারানো ফোনের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে।
স্মার্ট ফোন শিল্প দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। ফলে আজকে মোবাইলে স্পর্শকাতর বিষয় রাখা হচ্ছে? হতে পারে তা ভিডিও, ফটো, ই-মেইল, ব্যাংকের পাসওয়ার্ড। অতএব হারানো মোবাইল ফোন থেকে তা পুনরুদ্ধার জরুরি। এ কাজটি করে দেবে ওয়েবসিকিউর।
সফটওয়্যারের মাধ্যমে হারানো ফোনের একটা লোকেশন ম্যাপ পাওয়া যাবে। এমনকি ফোনের মালিক সিম কার্ড অ্যাকটিভিটিও দেখতে পারবে। তাছাড়া দূর থেকে ফোনটি লক করে দেয়া যাবে, ডাটা মোছা যাবে। ওয়েবসিকিউর পোর্টালে ডাটা ব্যাকআপ দিতে পারবে। আর এই পোর্টেলে ২ গিগাবাইট ডাটা জমা রাখা যাবে। আবার হারানো মোবাইলটি যদি ফিরে পাওয়া যায়, তবে সে মোবাইলে সব ডাটা আবার জমা করতে পারবেন। কিংবা তার নতুন মোবাইল ফোনে সে ডাটা রাখতে পারবেন।
আপনার বুক ব্যথা করছে? এখনই হাসপাতালে যাওয়া দরকার? কমিউনিকএশিয়াতে EPI Life নামের একটি যন্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে, যা এক্ষেত্রে আপনার চাহিদা মোটাতে পারে। ১০৬ গ্রাম ওজনের টাচস্ক্রিন ফোনটি প্রথম দেখলে মনে হবে এটি অন্যসব ফ্যান্সি স্মার্ট ফোনেরই একটি। কিন্তু এর ছোট্ট ফ্রেমে রয়েছে একটি ইসিজি তথা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম যন্ত্র। এর মাধ্যমে যে কোনো সময় ব্যবহারকারী হৃদস্পন্দন পরিমাপ করতে পারবে। ইসিজির মাধ্যমে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ধরা যায়। গোটা ইসিজি প্রক্রিয়াকে মোবাইল প্ল্যাটফরমে এনে দাঁড় করিয়েছে EPI Life, ফলে এটি হয়ে উঠেছে একটি জীবন বাঁচানোর যন্ত্র।
থ্রিডি টেকনোলজির প্রাধান্য লক্ষ করা গেছে ব্রডকাস্টএশিয়া ২০১০-এ। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শকেরা যেমন এভি৮মিডিয়া, সাইন ইকুইপমেন্ট, হ্যারিস কর্পোরেশন, প্যানাসনিক ও সনি ইলেকট্রনিকস ঘোষণা করেছে তাদের হালনাগাদ প্রফেশনাল ইকুইপমেন্ট, সলিউশন ও টেকনোলজি, যা আজকের দিনের ব্রডকাস্ট ও প্রোডাকশন কোম্পানিগুলোর জন্য খুবই প্রয়োজন।
ব্রডকাস্ট প্রো, ডায়াং, এভার্টজ, প্যানাসনিক, মায়েস্ট্রো, রস ভিডিও ও সিবেস থ্রিডিকে জীবন্ত করে তোলে লাইভ থ্রিডি শোকেসের মাধ্যমে। বিশেষ বিশেষ কনটেন্ট তৈরি করে প্রদর্শন করে আগামী প্রযুক্তির একটি ধারণা দেয়া হয় এ মেলায়। প্যানাসনিক প্রদর্শন করে এর হালনাগাদ প্রফেশনাল ইকুইপমেন্ট ও ক্যামকর্ডার। এগুলোর মধ্যে ছিল বিশ্বের প্রথম পুরোপুরি সমন্বিত প্রফেশনাল হাইডেফিনিশন থ্রিডি ক্যামকর্ডার। সনি এরিকসন মেলায় ফিরেছে কাটিং-এজ্ থ্রিডি ও হাইডেফিনিশন ব্রডকাস্ট ও প্রফেশন সলিউশন নিয়ে। এ কোম্পানি উদ্বোধন করে সিঙ্গাপুরের প্রথম এইচডি ওবি ট্রেলার, যা তৈরি হয়েছে ব্রডকাস্ট মিডিয়াকর্প-এর জন্য।
প্রজেক্ট গোল! একটি স্টলে দেখা গেল একটি পর্দায় একটি ফুটবল মাঠে গোল পোস্টে দাঁড়িয়ে একজন গোলকিপার পেনাল্টি কিক রুখে দেয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। একজন দর্শক একটু দূরে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে কিক দেয়ার ভান করলেন। দর্শক মিছেমিছি যেদিকে বল পাঠাতে চাইছেন, পর্দায় বল সেভাবে যাচ্ছে। গোলকিপার বল ফেরাতে চেষ্টা করছে। কখনো গোল হচ্ছে, কখনো গোল হচ্ছে না। এরই নাম ভার্চুয়াল ফুটবল। এর পেছনে যে প্রযুক্তিটা কাজ করে তা মোটামুটি সরল। দুটি ক্যামেরা- একটি উপরে, একটি নিচে। ক্যামেরা ধারণ করে খেলোয়াড়ের মুভমেন্ট। এর ফলে এ ব্যবস্থায় বলের ট্র্যাজেক্টরি আগে থেকেই ধরা যায়। A*Star-এর লোকজন কাজ করছেন এ প্রযুক্তিকে আরো পরিপূর্ণতা দিতে। এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইন্টারেকটিভ অ্যাডভার্টাইজমেন্ট তৈরি করে এ বাণিজ্যিকায়নের কাজ চলছে। এ প্রযুক্তির আরো ব্যবহার রয়েছে। ডিজিটাল সাইনেজ এর একটি। কমিউনিকএশিয়াতে ডিজিটাল সাইনেজের প্রয়োগ প্রদর্শন করে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান A*Star।
ফ্রান্সের ইমেজিং কোম্পানি Alioscopy কমিউনিকএশিয়া দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে এর গ্লাস-ফ্রি থ্রিডি টেলিভিশন প্রদর্শনের মাধ্যমে। সাধারণ থ্রিডি চলচ্চিত্র দেখতে দর্শকদের চোখে লাগাতে হয় বিশেষ ধরনের চশমা। কিন্তু এ্যালিয়স্কোপি যে ৪০ ইঞ্চি ডেমো প্রদর্শন করে তাতে থ্রিডি ছবি দেখতে কোনো চশমা লাগে না। যে ডেমো টিভি প্রদর্শিত হয় তার দাম ১০,৫২৬ ডলার। এতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি অপটিক্যাল-ফিল্টার-কোটেড প্যানেল ও বিশেষভাবে এনকোডেডভিত্তিক ফিল্ম। এ দুয়ে মিলে একই ছবিতে মাল্টিপল পারস্পেকটিভ যোগ করে। সে যা-ই হোক কমিউনিকএশিয়ায় এটি ছিল একটি নজরকাড়া পণ্য।
স্মার্ট ফোন
কমিউনিকএশিয়া ছিল প্রদর্শক কোম্পানিগুলোর আকর্ষণীয় ধরনের স্মার্ট ফোন উদ্বোধনের উত্তম ক্ষেত্র। অ্যালটেক কর্পোরেশন, ডিজিলিঙ্ক, এনটিটি ডোকোমো, ইনমারস্যাট, স্কাইপি ও ইয়াহো নিয়ে আসে আকর্ষণীয় সব স্মার্ট ফোন।
এনটিটি ডোকোমো প্রদর্শন করছে জাপানের বাজারের জন্য এর হালনাগাদ স্মার্টফোন, যার মধ্যে আছে এর নতুন সেপারেবল ফোন। ইয়াহু প্রদর্শন করেছে অ্যালকাটেল ওয়ান টাচ নেট মোবাইল। এটি এর প্রথম হ্যান্ডসেট, যা পুরোপুরি ইয়াহু অ্যাপ্লিকেশনের সাথে সমন্বিত। স্কাইপি এই প্রথমবার এসেছে কমিউনিকএশিয়ায়। এটি প্রদর্শন করেছে বেশ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। সেই সাথে ঘোষণা দিয়েছে, তিনটি সনি এরিকসন মোবাইল ফোনে স্কাইপি পাওয়া যাবে, যার ভিত্তি হবে সিমবায়ন প্লাটফরম। ইনমারস্যাটের IsatPhone Pro Service হচ্ছে বিশ্বের প্রথম গ্লোবাল স্যাটেলাইট মুঠোফোন। জেডটিই উন্মোচিত করেছে ZXY10T700, এটি হচ্ছে প্রথম ইন্টিগ্রেটেড হাইডেফিনিশন ভিডিও কনফারেন্সিং টার্মিনাল।
প্রতিবছর কমিউনিকএশিয়ায় বেশকিছু নতুন মোবাইল ফোন উন্মোচিত হয়। সেই সূত্রে মোবাইলপ্রেমী মানুষ তাদের পছন্দের মোবাইলটি বেছে নেয়ার সুযোগ পায় এ মেলায়। এবার আকর্ষণীয় নানা মোবাইল ফোন দর্শকদের নজর কেড়েছে। এর মধ্যে সেরা দশ মোবাইল ফোনের তালিকায় যেগুলোর নাম আসে তার মধ্যে আছে : অ্যালকাটেল ওয়ান টাচ নেট, অ্যালটেক লিও, ইপিআই লাইফ, হাওয়াই স্মাকিট এস৭, ইনমারস্যাট আইমেন্ট ফোন প্রো, নোকিয়া এন৮, এনটিটি ডোকোমো সেপারেবল ফোন, এনটিটি ডোকোমো শার্প লিনআক্স এসএইচ-১০ বি, স্যামসাং ওয়েব টু এবং সনি এরিকসন এক্সপোরিয়া ৮।
আয়োজক
বলা যায়, সিঙ্গাপুর হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম এক প্রদর্শনীর শহর। এখানে সারাবছরই আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোনো না কোনো প্রদর্শনী কিংবা সম্মেলন লেগেই থাকে, আর এসব আয়োজনে একটি সুপরিচিত নাম ‘সিঙ্গাপুর এক্সিভিশন সার্ভিস প্রা. লি.’। ১৯৭৬ সালে গড়ে তোলা এ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এশিয়ার একটি সুখ্যাত প্রদর্শনী ও সম্মেলন আয়োজক প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়িক যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফরম হিসেবে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডশো পোর্টফোলিও নিয়ে এরই মধ্যে এ প্রতিষ্ঠান সেবা যোগাচ্ছে যোগাযোগ, প্রকৌশল, যন্ত্রপাতি, জীবনধারণ শিল্পে। তাছাড়া বাজার চাহিদা মেটাতে এটি আয়োজন করছে নতুন নতুন ইভেন্ট।
এর আয়োজিত ইভেন্টগুলো ক্রমবর্ধমান হারে নজর কাড়ছে উঁচুসারির বিদেশী প্রদর্শকদের। এর শো-ফ্লোরের ৮০ শতাংশই তাকে বিদেশী প্রদর্শকদের দখলে। এ প্রতিষ্ঠানটি ‘অলওয়ার্ল্ড এক্সিভিশনস অ্যালায়েন্স’-এর সদস্য। এ অ্যালায়েন্সের বিশ্বব্যাপী ৫০টি দেশে অফিস রয়েছে। এটি একটি বিশ্ব নেটওয়ার্ক। কমিউনিকএশিয়া এরই আয়োজিত এশিয়ার বৃহত্তম ইনফোকম ও মিডিয়া বিজনেস প্লাটফরমেরই একটি অংশ।
কমিউনিকএশিয়ায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশ থেকে এবারের কমিউনিকএশিয়ায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে সাফল্যের সাথে। মনে হলো বাংলাদেশী স্টলগুলো বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ মেলায় বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশী প্রযুক্তিপণ্য ও সেবার দিগন্ত আরো সম্প্রসারিত হয়েছে বিশ্ব পরিসরে। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উঠে এসেছে নতুন উচ্চতায়। বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ইমেজেরও উত্তরণ ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা মনে করেন, বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিপণ্য ও সেবাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে আমাদের ব্র্যান্ডিং ইমেজ আরো বাড়িয়ে তোলার স্বার্থেই ব্যাপকভাবে এ ধরনের প্রদর্শনীতে যোগ দেয়া উচিত। এবারের কমিউনিকএশিয়ায় অংশ নেয়া বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে : রিভ সিস্টেমস, আমরা নেটওয়ার্কস, কিউএসআর সিস্টেমস, জিনুসিস সিস্টেমস, ই-সফট বিলিং, সিনক্রোনাস, রুটস ইনফরমেশন টেকনোলজি ও মুন নেটওয়ার্কস। বাংলাদেশের অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্টল না খুললেও তাদের প্রতিনিধিরা কমিউনিকএশিয়ায় গিয়েছিলেন বিশ্ব তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির গতি-প্রকৃতি অনুধাবনের জন্য।
বিদেশে বাংলাদেশী তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবার ব্র্যান্ডিং ইমেজ বাড়ানোর ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে রিভ সিস্টেমস। বিগত ৬ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি কমিউনিকএশিয়ায় যোগ দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোরও এ মেলার যোগ দেয়ার অন্যতম লক্ষ্য ব্র্যান্ডিং ইমেজ বাড়ানো। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে তাদের এই অভিপ্রায়ের কথাই জানা গেল। রেজাউল হাসান ভাই ও রায়হান ভাই বার বার এ বিষয়টির কথাই জোর দিয়ে উচ্চারণ করছিলেন। সেই সাথে রেজাউল হাসান ভাই এ মেলায় যোগদানের সূত্রে রিভ সিস্টেমসের ব্যবসায়িক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচনের ইঙ্গিতও দেন।
রিভ সিস্টেমসের সূচনা ২০০৩ সালে। সদর দফতর সিঙ্গাপুরে। এছাড়া এর অফিস রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও ইউকে-তে। গত ১৯ জুন সিঙ্গাপুরে উদ্বোধন করা হলো এর নতুন অফিস। এর লক্ষ্য সেরা মানের ভিওআইপি সলিউশন যোগানো। এ প্রতিষ্ঠানটি আজ সরবরাহ করছে উল্লেখযোগ্য ভিওআইপি পণ্য। ভিওআইপি ডোমেইনে কাজ করছে বিশ্বের বেশ কিছু সেরা ও উদ্ভাবনীমূলক সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে।
রিভ সিস্টেমস একটি আইএসও ৯০০১:২০০০ সার্টিফাইড টেলিকমিউনিকেশন ও সফটওয়্যার টেকনোলজি সার্ভিস প্রোভাইডার। এর বিদেশী গ্রাহক কোম্পানির তালিকা সুদীর্ঘ। এর গ্রাহক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, জার্মানি, কানাডা, লেবানন, ভারত, যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাত, মিসর, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়ায়। কোনো কোনো দেশে রয়েছে এর একাধিক গ্রাহক কোম্পানি।
এবারের কমিউনিকএশিয়ায় রিভ সিস্টেমস যেসব পণ্য প্রদর্শন করে তার মধ্যে আছে : আইটেল বাইট সেভার, আইটেল মোবাইল ডায়ালার, আইটেল মোবাইল কল ব্যাক ডায়ালার, আইটেল সুইচ প্লাস, আইটেল এমভিএনও স্মার্ট, আইটেল কোডেক কনভার্টার ও বিলিং সলিউশন। ‘আইটেল মোবাইল ডায়ালার এক্সপ্রেস’কে কর্পোরেট নিউদিল্লিতে আমেরিকান ম্যাগাজিন ‘ইন্টারনেট টেলিফোনি’ ২০০৯ সালের বর্ষসেরা পণ্য নির্বাচিত করে। আইটেল মোবাইল ডায়ালার এক্সপ্রেস ১২০০+ সুইস ৫০টিরও বেশি দেশে ব্যবহার হচ্ছে। রিভ সিস্টেমস সিমবিয়ান ফাউন্ডেশনের সদস্য এবং আইফোন/ব্ল্যাকবেরি ডেভেলপার কমিউনিটির অংশ। রিভ সিস্টেমস বাংলাদেশের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি মেলাসহ মধ্যপ্রাচ্যের জিটেক্স মেলায়ও অংশ নেয়।
ব্যাপক প্রস্ত্ততি নিয়েই রিভ সিস্টেমস এবারের কমিউনিকএশিয়ায় অংশ নেয়। মেলার কয়েক মাস আগেই এই প্রতিষ্ঠানটি এ মেলায় অংশ নেয়ার কথা জানিয়ে তাদের অংশগ্রহণকারী টিমের সদস্যদের নাম ঘোষণা করে। সে তালিকায় ছিলেন : সিইও মো: রেজাউল হাসান, ডিরেক্টর গ্লোবাল মাকেটিং সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়, ডিরেক্টর মন্নুজান নার্গিস, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ও সিওও আজমত ইকবাল, হেড অব সেলস রায়হান হোসেন, সেলস ডিরেক্টর রন পাস, সফটওয়্যার সাপোর্ট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ম্যানেজার সৈয়দ নুরুজ্জামান, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দোস্ত মোহাম্মদ, ম্যানেজার-বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মোহাম্মদ শাহেদ উল্লাহ এবং সেলস ইঞ্জিনিয়ার ফার্নানদো মর্সো।
জেনুসিসের সূচনা ২০০৩ সালে। চলমান তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনে অংশ নেয়ার লক্ষ্য নিয়েই এর সৃষ্টি। জেনুসিস তুলনামূলকভাবে একটি নবপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হলেও জেনুসিসের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট কাজে সেরা মানের যোগ্যতা রাখেন। টেক্সাসের ডালাসে ইনকর্পোরেটেড কোম্পানি জেনুসিসের লক্ষ্য আইটি ও টেলিযোগাযোগ সার্ভিস যোগানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রেও একটি মর্যাদাপূর্ণ কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ। এর সার্ভিসগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : আইপি টেলিফোনি, ভিওআইপি সফটসুইচ ও বিলিং, ইন্টারেকটিভ ভয়েস রেসপন্স, কলসেন্টার সলিউশন, আইপি-পিবিএক্স, হোলসেল ভয়েস ক্যারিয়ার। জেনুসিস চেষ্টা করছে এর গ্রাহকদের উন্নতমানের সেবা যোগাতে।
স্বল্প সময়ে এটি যুক্তরাষ্ট্রে একটি উল্লেখযোগ্য গ্রাহকভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী অনেক মাঝারি ও বড় আকারের কোম্পানির সাথে এর ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের কোম্পানির সাথে রয়েছে এর ব্যবসায়িক সম্পর্ক।
জেনুসিস এ মেলায় প্রদর্শন করেছে হোলসেল ভয়েস ক্যারিয়ার, জিপ্লেক্স হোস্টেড সুইস, জিপ্লেক্স কলসেন্টার, জিপ্লেক্স মোবাইল ডায়ালার।
‘আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড’ এদেশের একটি শীর্ষসারির আইটি কমিউনিকেশন সার্ভিস প্রোভাইডার। এটি আইপি, আইটি অবকাঠামো ও আইটি অ্যাপ্লিকেশন সার্ভিসের ক্ষেত্রে ব্যাপকধর্মী কমিউনিকেশন সলিউশন যোগায়। ব্রডব্যান্ড ও ম্যানেজড আইটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে মার্কেট লিডার হিসেবে ‘আমরা’ চিরপরিবর্তনশীল পরিবেশে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এর স্টেকহোল্ডারদের জন্য মূল্য সংযোজন করে যাচ্ছে। ‘আমরা’ বিগত দশকে থেকে অব্যাহতভাবে এর গ্রাহকদের যুগিয়ে আসছে ‘স্টেট-অব-দ্য-আর্ট’ আইটি কমিউনিকেশন সলিউশন। এর ফলে এরা নিশ্চিত করতে পেরেছে একটি ঈর্ষণীয় ব্লু-চিপ গ্রাহক তালিকা।
‘আমরা’ গুরুত্ব দেয় দ্রুত নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রতি। এর বাজেটের ৩০ শতাংশ খরচ হয় গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে। ছয় বছর ধরে এটি আইএসও ৯০০১:২০০৮ সার্টিফিকেটের ধারক। এর ভিশন হচ্ছে এমন একটি কোম্পানি হওয়া, যা গ্রাহক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেবার মালিক ও সমাজের জন্য সর্বোত্তম মূল্য সংযোজন ঘটাতে পারে। আর মিশন হচ্ছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের আইটি ও যোগাযোগ অবকাঠামো সেবার যোগানদার কোম্পানি হওয়া।
‘আমরা’ কমিউনিকএশিয়ায় যেসব পণ্য প্রদর্শন করেছে তার মধ্যে আছে : ভার্চুয়াল অফিস, হেল্পডেস্ক, রিমোট ভিডিও সার্ভিলেন্স এবং হোস্টেড অ্যান্টিস্পাম অ্যান্ড অ্যান্টিভাইরাস ফায়ারওয়াল।
আমরা নেটওয়ার্কসের সিওও শরফুল আলম বললেন : ‘মেলায় আমরা অভূতপূর্ণ সারা পেয়েছি। সম্ভবত বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য কমিউনিকএশিয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য উপস্থাপনের সর্বোত্তম প্লাটফরম। আমি নিশ্চিত আগামী বছরের কমিউনিকএশিয়ায় আমরা আরো বড় প্যাভিলিয়ন নিয়ে অংশ নেবো’।
মুন নেটওয়ার্কস কমিউনিকএশিয়ায় বেশ কয়েকটি পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে। এর প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে ছিল : মুন বিলিং ফর ভিওআইপিসুইচ, মুন বিলিং ফর ভিওএস ৩০০০ এবং মুন পিসিটু ফোন ডায়ালার ফর এসআইপি সফটসুইচ। এছাড়া এর প্রদর্শিত সেবাগুলো হচ্ছে : ডেডিকেটেড সার্ভার ও ২৪ ঘণ্টা অনলাইন সাপোর্টসহ লাইসেন্স ও ভিওআইপিসুইচ হোস্টিং, ডেডিকেটেড সার্ভার ও ১৮ ঘণ্টা ফ্রি সাপোর্টসহ লাইসেন্সও ভিওএস ৩০০০ হোস্টিং। ১৮ ঘণ্টা ফ্রি সাপোর্টসহ লিনআক্স ও উইন্ডোজের ডেডিকেটেড সার্ভার সফটসুইচসহ ওয়েব ইন্টিগ্রেশন ও এক বছরের ফ্রি সাপোর্ট এবং কাস্টোমাইজড টেলকো সফটওয়্যার ও সাপোর্ট আউটসোর্সিং।
মুন নেটওয়ার্কস দেশে-দেশে মানুষে-মানুষে ও প্রযুক্তিতে-প্রযুক্তিতে সেতুবন্ধন গড়ে তুলে আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ খাতে সবল পথ করে নিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাজের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু সার্ভিসে অর্জন করেছে অনন্য অভিজ্ঞতা। এসব অভিজ্ঞতালব্দ সেবাগুলো হচ্ছে : টেলকো সফটওয়্যার সলিউশন, আইপি টেলিফোনি সফটওয়্যার সার্ভিস, কাস্টোমাইজড রিসেলার সার্ভিসেস, সফটওয়্যার আউটসোর্সিং, ডেডিকেটেড সার্ভার রেন্ট, কো-লোকেশন স্পেস রেন্ট, ডোমেইন হোস্টিং, ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।
বাংলাদেশের ‘ই-সফট বিলিং প্রাইভেট লিমিটেড’ এবারের কমিউনিকএশিয়ায় ছিল একটি প্রদর্শক প্রতিষ্ঠান। ই-সফট এবারের মেলায় প্রদর্শন করে দুটি পণ্য : এসআইপি মোবাইল ডায়ালার এবং আইসফটসুইচ।
‘এসআইপি মোবাইল ডায়ালার’ হচ্ছে এনক্রিপশন সার্ভার, পিন সিকিউরিটি ও ব্যালেন্স সার্ভারসহ একটি ‘অল ইন ওয়ান সলিউশন’। মোবাইল ডায়ালার এমন একটি সার্ভিস, যা মোবাইল ভিওআইপির ব্র্যান্ডেড ও ফিচার্ড সংস্করণ, যা আইএস চ্যাট অ্যাপ্লিকেশনের সুযোগ দেয়। এই সার্ভিসের ডিজাইন করা হয়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের ভিওআইপি এসআইপি প্রোডাইডার অথবা অন্য বিজনেসের জন্য, যারা মোবাইল ভিওআইপি ও আইএস মার্কেটে প্রবেশ করতে চায়।
আইসফটসুইচ একটি কল কন্ট্রোল সফটওয়্যার প্যাকেজ। এ প্যাকেজ আইটিএসপিগুলোকে পিসি টু ফোন, পিসি টু পিসি, আইপি ফোন টু ফোন ও আইপি ডিভাইস টু ফোন সার্ভিসের ক্রটিমুক্ত যোগাযোগের সুযোগ দেয়। ফোন অ্যাডাপ্টার, সফটফোন ও আইপি ফোনের মতো সব ধরনের এন্ড-পয়েন্টে এই আইসফটসুইচে রেজিস্টার করা যাবে। ই-সফট বিলিং প্রাইভেট লিমিটেড আইটিএসপির একটি ক্যারিয়ার গ্রেড সফটওয়্যারের গ্লোবাল ভেন্ডর।
বাংলাদেশভিত্তিক কিউএসআর সিস্টেম ২০০৪ সালে এর কাজ শুরু করে। এটি ‘কিউএসআর সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে সিঙ্গাপুরেও নিবন্ধিত, মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত, ‘কিউএসআর সিস্টেমস (এম) এসডিএন, বিএইচডি’ নামে। কিউএসআর কাজ করছে বিজনেস সফটওয়্যার ও কমিউনিকেশন সফটওয়্যার নিয়ে। কিউএসআর ডিওআইপি প্রোভাইডার ও কলসেন্টার সলিউশন যোগায়। এ প্রতিষ্ঠানটি বড় ও ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য টোটাল সার্ভিস সলিউশনও দিয়ে থাকে।
কমিউনিকএশিয়া ২০১০-এ কিউএসআর যেসব পণ্য প্রদর্শন করে তার মধ্যে আছে : কুয়েস্ট সফটসুইচ, কুয়েস্ট কলসেন্টার সফটওয়্যার, কুয়েস্ট মোবাইল ডায়ালার, বিজনেস টকার ও মানি টকার।
সিনক্রোনাস ডেভেলপ করেছে CoolDialer। এই প্রতিষ্ঠানটি SyncSwitch-এরও ডেভেলপার। সিনকসুইচ হচ্ছে ভিওআইপি অপারেটর/সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুইচিং ও বিলিং সলিউশন। এছাড়া এর রয়েছে ভিওআইপি ও টেলিযোগাযোগের জন্য কাস্টোমাইজড সফটওয়্যার। সিনক্রোনাসের লক্ষ্য সেরামানের সফটওয়্যার তৈরি, যাতে করে গ্রাহকরা কার্যকর ব্যয়ে ভালো সফটওয়্যার পেতে পারে। কুলডায়ালার ডেভেলপ করা হয়েছে একথা মনে রেখে যে, মোবাইল ফোন থেকে ভিওআইপি কলের সময় ব্যবহারকারীরা সেরা অভিজ্ঞতার ছোঁয়া পায়।
কমিউনিকএশিয়ার সহযোগী প্রদর্শনী
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৫-১৮ জুন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আগামী দিনের প্রযুক্তি প্রদর্শনের অন্যতম আয়োজন ‘কমিউনিকএশিয়া-২০১০’। এটি এর একুশতম আয়োজন। এর বাইশতম আয়োজন ‘কমিউনিকএশিয়া-২০১১’ অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ২১-২৪ জুনে। ‘কমিউনিকএশিয়া’ হচ্ছে এশিয়ার বড় ধরনের একটি ‘ওয়ান-স্টপ ইনফোকম টেকনোলজি ইভেন্ট প্লাটফরম’। এখানে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয় তথা প্রদর্শন করা হয় বিশ্বের শীর্ষসারির আইসিটি শিল্পের কনভারজেন্ট টেকনোলজি ও এর অ্যাপ্লিকেশনগুলো, যাতে এন্টারপ্রাইজ মোবাইলিটি ও ব্যবহারকারীদের জীবনধারণ তথা লাইফস্টাইল আরো জোরদার পর্যায়ে তুলে আনা যায়। সেজন্য ‘কমিউনিকএশিয়া’ নামের এ বিশ্ব আইসিটি শিল্প প্রদর্শনী হয়ে উঠেছে এশিয়ার অন্যতম প্রধান এক ব্যবসায়িক আয়োজন। নাম থেকে মনে হতে পারে এ মেলায় শুধু এশিয়ার দেশগুলো থেকেই আইসিটি কোম্পানিগুলো অংশ নিয়েছে। বাস্তবে গোটা বিশ্বের প্রতিটি মহাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি এতে অংশ নিয়েছে। ফলে ছোট দ্বীপদেশ সিঙ্গাপুরে ‘কমিউনিকএশিয়া-২০১০’ কার্যত হয়ে ওঠে ‘ছোট দেশে বড় মাপের এক প্রযুক্তিমেলা’।
শেষ কথা
বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ইমেজ বাড়ানোর জন্য কমিউনিকএশিয়া’র মতো প্রদর্শনীতে আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর আরো বেশি করে যোগ দিতে হবে। সেই সাথে চেষ্টা চালাতে হবে এ ধরনের বড় মাপের প্রযুক্তিমেলার আয়োজন করার। নিশ্চিতভাবে তা বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ইমেজ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com