মোবাইল ডিভাইস তৈরির বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান নোকিয়া। বাজারে নিজের বিপুল চাহিদা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইন্টারনেট এবং যোগাযোগ শিল্পের সম্প্রসারণ ও সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকের যাবতীয় সুবিধা অবারিত করার জন্য বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন ডিভাইস তৈরি করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাহককে মিউজিক, ম্যাপ, মিডিয়া, ম্যাসেজিং ও গেমের অনবদ্য অভিজ্ঞতা উপহার দিচ্ছে তারা। ন্যাভটেকের মাধ্যমে ডিজিটাল ম্যাপ ইনফরমেশন সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্কসের মাধ্যমে কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ইকুইপমেন্ট, সলিউশন ও সার্ভিসও দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ এখন প্রতিদিন নোকিয়ার মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করছে। পণ্যসম্ভারের সার্বিক মান বজায় রাখতে ও দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে এ প্রতিষ্ঠান সচেষ্ট। সে অনুযায়ী ভোক্তাদেরকে মোবাইল ফোন সংক্রান্ত পণ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে অধিকতর পছন্দের সুযোগ করে দিতে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে (global take-back program) নোকিয়া আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি বিশ্বজনীন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচিটির নাম ‘দ্য পাওয়ার অব উই’ বা ‘আমাদের শক্তি’।
নোকিয়া যা কিছুই করে না কেন, এর সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতেই আবর্তিত রয়েছে দীর্ঘস্থায়িত্বের ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি। অফিস ও কারখানায় প্রতিদিনকার কার্যসূচিতেই এই ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটছে। সেই আলোকে তার পরিবেশগত সব কাজকর্ম জীবনমুখী বা জীবনকেন্দ্রিক ধারণায় আবর্তিত। সব মোবাইল ডিভাইস বা পণ্যের ক্ষেত্রেই নোকিয়া প্রতিটি পর্যায়ে পরিবেশের বিষয়ে খুব যত্নশীল। পরিবেশের ওপর পণ্যের যেকোনো ক্ষতিকর প্রভাব যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার জন্যই এটা করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা পণ্যগুলোকে অধিকতর বিদ্যুৎসাশ্রয়ী করে তোলার লক্ষ্যে অনবরত কাজ করে চলেছেন। সেই সাথে ডিজাইনাররাও নিত্যনতুন সৃজনশীল সলিউশন উদ্ভাবনে সচেষ্ট রয়েছেন, যাতে ভোক্তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবেশবান্ধব উপায়ে নোকিয়ার মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রয়েছে স্ট্যান্ডবাই মোড। গত এক দশকে নোকিয়া উচ্চ মানসম্পন্ন মোবাইল ফোনের চার্জারে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নো-লোড মোড-এর হার ৯৫ শতাংশ কমিয়েছে। মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে নোকিয়াই প্রথম ২০০৭ সালের মে মাসে মোবাইল সেটে অ্যালার্ট বা চার্জ হওয়ার সঙ্কেত দেয়ার সুবিধা সংযোজন করে।
পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও নোকিয়া সতর্ক রয়েছে। মোবাইল ডিভাইস তৈরির জন্য যারা বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল ও উপাদান সরবরাহ করে থাকে তাদের সাথে নোকিয়ার সোর্সিং ম্যানেজাররা অব্যাহতভাবে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে পরিবেশের ওপর ওই সব কাঁচামাল ও উপাদানের ক্ষতিকর প্রভাবের মাত্রা কমিয়ে আনা যায়। ডিভাইস তৈরির সব কাঁচামাল ও উপাদানের ব্যাপারে নিবিড় তদারকি করা হয়, যাতে প্রতিটি পণ্যই মানুষ ও পরিবেশের জন্য নিরাপদ থাকে।
নোকিয়ার ডিজাইনারদের একটি দল আছে যাদের কাজ হলো প্যাকেজিংয়ের উপাদান বা কাঁচামালসমূহের ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে আনা। প্যাকেজিংয়ের আকার ছোট করার মাধ্যমে কাগজনির্ভর প্যাকেজিং উপাদান বা কাঁচামাল ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে এক লাখ টন এবং এভাবে মাত্র দুই বছরে খরচ বাঁচিয়েছে ৫০০ কোটি ইউরো। ২০০৮ সালের আগস্ট থেকে নোকিয়ার সব নতুন পণ্যের প্যাকেজের সাইজ বা আকার আগের তুলনায় ক্রমাগতভাবে ছোটো করা হচ্ছে।
নোকিয়ার ৯৫ শতাংশেরও বেশি প্যাকেজ তৈরি হয় কাগজ ও নবায়নযোগ্য উপাদান বা কাঁচামাল থেকে। এর মধ্যে আবার রিসাইকেল করা ব্যবহারের উপযোগী উপাদান বা কাঁচামাল দিয়েই তৈরি হয় প্রায় ৬০ শতাংশ প্যাকেজ। প্লাস্টিকের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রায় ৯০ শতাংশের মতো পুনর্ব্যবহার উপযোগী বা নবায়নযোগ্য উপাদান কাজে লাগানো হয়।
একটি টিপিক্যাল নোকিয়া মোবাইল ফোনসেটের পরিবেশগত প্রভাব একটি হাইব্রিড গাড়ি ১৭০ কিলোমিটার চালানোর সমান। সুতরাং ব্যবহারকারী যদি একটি পরিবেশবান্ধব ডিভাইস পেতে চায়, তাহলে তার গ্রিন স্টিকার বা পরিবেশবান্ধব স্টিকার দেখার দরকার নেই। কারণ, নোকিয়ার সব ডিভাইসই এখন পরিবেশবান্ধব।
২০০১ সাল থেকে নোকিয়ার সব পণ্যের জন্য সরবরাহ করেছে ‘ইকো ডিক্লারেশন’। এতে পণ্যের ব্যবহার, জ্বালানি দক্ষতা, প্যাকেজিং, ডিসঅ্যাসেম্বলি ও রিসাইক্লিং বিষয়ে মৌলিক তথ্য দেয়া আছে।
২০১০ সালের পর থেকে নোকিয়ার প্রতিটি পণ্যের ইকো প্রোফাইল সরবরাহ করছে। ঠিক আগের ইকো ডিক্লারেশনের মতোই নতুন ইকো প্রোফাইল পণ্যের পরিবেশগত মৌল তথ্য দিচ্ছে, এর বাইরে ইকো প্রোফাইল যন্ত্রের পরিবেশগত প্রভাবেরও উল্লেখ আছে।
পণ্য অথবা এক্সেসরি-বিশেষের ইকো ডিক্লারেশন অথবা ইকো প্রোফাইল পিডিএফ ফরমেটে দেখার জন্য নিচের ড্রপ ডাউন মেনু থেকে প্রোডাক্ট বা অ্যানহ্যান্সমেন্টে সিলেক্ট করুন। যদি পণ্য না পান নোকিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন http://www.nokia.com/environment/devices-and-services/devices-and-accessories/eco-profile সাইটে।
সম্প্রতি চালু করা নোকিয়া এক্স-২ ও অন্যান্য পণ্যের পরিবেশগত প্রভাব নোকিয়া ৩৩১০-এর তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। নোকিয়া ৩৩১০ চালু করা হয়েছিল এক দশক আগে। আজকের দিনে নোকিয়া পণ্যের ও প্রক্রিয়ার পরিবেশগত প্রভাব পরিমাপের জন্য ব্যবহার করছে ‘লাইফ সাইকেল অ্যাসেসমেন্ট’ তথা এলসিএ। এ পরিমাপে মোবাইল ডিভাইসের পুরো লাইফ সাইকেল, কাঁচামাল থেকে শুরু করে পণ্য তৈরির শেষ পর্যন্ত লাইফ সাইকেল অন্তর্ভুক্ত। এই লাইফ সাইকেল মেথড বাহ্যিকভাবে নিরীক্ষিত হয়।
নোকিয়া এখন বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল ফোন রিসাইক্লিং কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এজন্য দুনিয়াজুড়ে ৮৫টি দেশের পাঁচ হাজার নোকিয়া কেয়ার পয়েন্ট রয়েছে। সে অনুযায়ী ভোক্তারা প্রয়োজনীয় রিসাইক্লিংয়ের জন্য তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে পারেন।
এছাড়াও ভোক্তাদের টেকসই পছন্দকে প্রাধন্য দিয়ে ‘আমাদের শক্তি’ স্লোগান নিয়ে নোকিয়া পরিবেশবিষয়ক বেশ কিছু সেবা কর্মসূচিও চালু করেছে। এগুলো হলো :
০১. গ্রিন এক্সপ্লোরার মোবাইল ডিভাইসের দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য উইগেট।
০২. নোকিয়া বাতাসে কার্বন দূষণ রোধের জন্য কাজ করছে এবং
০৩. ইকো জোন- টিপস, লিঙ্কস ও কনটেন্ট, পরিবেশবিষয়ক ওয়ালপেপার এবং রিংটোনের জন্য।
নোকিয়া ইএ লিমিটেডের কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার মৌটুসী কবির বলেন, বাংলাদেশে নোকিয়ার কেয়ার সেন্টার রয়েছে ৩৭টি। এ কেয়ার সেন্টারগুলো সারাদেশে এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে ৮০ শতাংশ ব্যবহারকারী ১ ঘণ্টায় সেন্টারে আসতে পারে এবং প্রতিটি সেন্টারে ব্যবহৃত, নষ্ট বা পুরনো মোবাইল সংগ্রহের বক্স রাখা হয়েছে। এই বক্সের মোবাইলগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ করে নোকিয়া রিসাইকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। যাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয়।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : anu@comjagat.com