• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বোতল যখন বুদ্ধিমান
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বোতল যখন বুদ্ধিমান

মানুষ যখন বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয় এবং বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করে, তখন অনেক সময় দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ঘামলে বা ডায়রিয়ার ফলে মূলত শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি বেরিয়ে যায়। এই পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন পূরণ তার জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। নইলে শারীরিক বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে তরল পানীয় কিছু পান করা। এটা হতে পারে পানি বা অন্য কোনো তরল কিছু। কিন্তু কিছু মানুষ তার ব্যস্ত জীবনে নিয়ম করে ও সঠিক পরিমাণ পানি বা তরল পান করার সময় করে উঠতে পারেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখন ভাবছেন এসব লোকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে।

তারা ইতোমধ্যেই উদ্ভাবন করেছেন হাইড্রাকোচ নামের বুদ্ধিমান পানির বোতল। এই বুদ্ধিমান বোতল আপনাকে বলে দেবে দেহে ঠিক কী পরিমাণ পানির প্রয়োজন রয়েছে। পানি পানের সময় ঠিক ততটুকুই বোতল থেকে বের হবে। তার বেশি বা কম নয়। ফলে এই বোতল ব্যবহারকারীরা কখনোই পানিশূন্যতায় ভুগবেন না। দেহের ওজনও ঠিক থাকবে। তাই পানিশূন্যতায় সৃষ্ট যেকোনো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন অনায়াসে।

এমনিতে কথা প্রচলিত আছে, দিনে কম পক্ষে ৮ গ্লাস পানি পানই শরীরের জন্য যথেষ্ট, কিন্তু একে পুরোপুরি সঠিক বলে মানতে আপত্তি আছে বহু বিজ্ঞানীর। এরা মনে করেন, ব্যক্তির ওজনের ওপর ভিত্তি করেই মূলত নির্ধারিত হয়, তাকে ঠিক কী পরিমাণ পানি পান করতে হবে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন জনের পানি পানের মাত্রায় অবশ্যই ভিন্নতা থাকবে। এছাড়া ব্যক্তি যে এলাকায় বাস করেন সেখানের জলবায়ুগত পরিস্থিতি এবং ব্যক্তির জীবনযাপন পদ্ধতিও তার দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ নির্ধারণে ভূমিকা রেখে থাকে।

এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণারত গবেষকেরা বলছেন, যারা উষ্ণ আবহাওয়ায় কিংবা অফিস বা ঘরের বাইরে কাজ করেন, তাদের যে পরিমাণ পানি পানের প্রয়োজন হয়, যারা শীতল পরিবেশে অফিস বা ঘরে বসে কাজ করেন তাদের পানি পানের পরিমাণ এক হতে পারে না। তারা বলছেন, ব্যক্তির পানি পানের চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেবে হাইড্রাকোচ পানির বোতল। কতটুকু পানি পান করতে হবে, এই বুদ্ধিমান বোতলই তা ঠিক করে দেবে। কারণ, দেহের সার্বিক অবস্থা মনিটর করার জন্য এতে রয়েছে বিশেষ সেন্সর।

হাইড্রাকোচ ভারতে কিনতে পাওয়া যায় ৩ হাজার রুপিতে। এক বছরের রিপেয়ার/রিপপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি রয়েছে। বিস্তারিত জানা যাবে hydracoach.co.in ওয়েবসাইটে। একজন ব্যক্তির কী পরিমাণ পানি পান যথেষ্ট, তা নির্ণয় করবে হাইড্রাকোচ। এই বোতলে একটি মাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে। ফলে গ্রহীতা খুব সহজেই সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পারেন। বোতলের সামনে থাকা ডিসপ্লে/ক্যালকুলেটর দেখে ব্যক্তি তার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। প্রথমে ব্যক্তিকে তার দেহের ওজন ক্যালকুলেটরে সেট করতে হবে। এর পর বোতলই নির্ধারণ করে দেবে দেহে কতটুকু পানির প্রয়োজন হবে। সারাদিন ব্যক্তি কতটুকু পানি পান করলো তারও রেকর্ড থাকবে বোতলে। ফলে একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়ে যাওয়ায় পানিশূন্যতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এই বুদ্ধিমান বোতল তৈরিতে। এ জন্য করতে হয়েছে নিবিড় গবেষণা।

এদিকে আঙ্গুল, হাত, বাহু, কব্জি, বাহুর উপরিভাগসহ আশপাশের মাংসপেশী সুদৃঢ় করতে তৈরি করা হয়েছে এনএসডি পাওয়ারবল নামের একটি যন্ত্র। এই যন্ত্রের ৯টি ধরন রয়েছে। ব্যবহারকারীরা প্রয়োজনের ভিত্তিতে নিজেদের পছন্দেরটি বেছে নিতে পারেন। বাহুর মাসল বা মাংসপেশী যারা সুদৃঢ় করতে চান এটা কেবল তাদের জন্যই। তবে এগুলো ব্যবহার করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে। নতুনদের জন্য এই যন্ত্র দিয়ে প্রতি হাতে সর্বোচ্চ ২/৩ মিনিট অনুশীলনই যথেষ্ট। ধীরে ধীরে এই সময় বাড়ানো যেতে পারে। এই যন্ত্র থেকে ভালো ফল পেতে হলে দিনে ৭ মিনিট অনুশীলন করতে হবে। ১৫ বছর কম বয়সীদের এই যন্ত্র ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সীরা এসব ব্যবহার করতে চাইলে বিশেষ তত্ত্বাবধানে কাজটি করতে হবে। দেহের ফিটনেস ধরে রাখার পাশাপাশি পাওয়ারবল গলফ, টেনিস, বাস্কেটবল, বেসবল, সাইক্লিং, পর্বতারোহণসহ এ ধরনের খেলোয়াড়দের কাজে লাগবে। তাছাড়া বাত রোগ, হাত ভাঙ্গাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে এই পাওয়ারবল। এসব যন্ত্র ব্যবহারের বিভিন্ন কৌশল রয়েছে, যা আগে থেকেই রপ্ত করতে হবে।

এখন যে সমস্যাটি আপনাকে মোকাবেলা করতে হবে, সেটি হচ্ছে শরীরে ঘামের কারণে সৃষ্ট দুর্গন্ধ। এ জন্য অনেকেই বডি স্প্রে বা লোশন ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু গবেষকেরা এ সমস্যা মোকাবেলায় ধরেছেন অন্য পদ্ধতি। তারা উদ্ভাবন করেছেন বিশেষ ধরনের আঁশে তৈরি কাপড়। এ কাপড়ের তৈরী পোশাক পরে শরীরিক পরিশ্রম বা অনুশীলন করলে শরীর থেকে বেরিয়ে আসা ঘাম বিশেষ প্রক্রিয়ায় ওই কাপড় শুষে নেবে। ফলে ঘামের গন্ধ হবে না। রিবক উদ্ভাবিত সিলভার ফাইবারের কাপড়কে প্যাটেন্ট করা হয়েছে এক্স-স্ট্যাটিক নামে। জীবাণুনাশ এবং সংক্রমণ রোধের জন্য এই কাপড়ে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল। এটা যে শুধু জীবাণুনাশ করে তা নয়, ঘামের দুর্গন্ধও দূর করে। এই প্রযুক্তির পোশাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করছে। এই ধরনের পোশাক তাদের শারীরিক জখম থেকে সুরক্ষা দেয়। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে এ পোশাক দেয় শীতল অনুভূতি, আর শীতকালে দেয় উষ্ণতা। আজকাল খাবার ও অন্যান্য জিনিস প্যাকেটজাত করার কাজে এ ধরনের আঁশের তৈরী কাপড় ব্যবহার হচ্ছে।

এদিকে পরিশ্রান্ত শরীরকে একটু স্বস্তি দিতে কোমল পানীয় শীতল রাখতে উদ্ভাবিত হয়েছে বহনযোগ্য রেফ্রিজারেটর। এই রেফ্রিজারেটরে ৮ ঘণ্টা যেকোনো পানীয় শীতল রাখা যায়। এগুলো পরিষ্কার করা সহজ এবং সুটকেস বা ব্যাগের মতো হওয়ায় ভাঁজ করে রাখা সম্ভব। তাই ব্যায়ামাগারে গেলে সাথে থাকতে পারে এমন একটি বহনযোগ্য ফ্রিজ, যেখানে থাকবে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কোমল পানীয়। পিকনিক বা উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সাথে থাকতে পারে এমনি একটি ফ্রিজ।

এ সবকিছুই আসলে মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষ এগুলো ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সুফল পাবে এটাই গবেষকদের কাম্য। এই কল্যাণের লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই তারা করে যাচ্ছেন একের পর এক উদ্ভাবনা এবং তা পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের দোরগোড়ায়। ভবিষ্যতে হয়তো এমনি আরো বহু প্রযুক্তিপণ্য আমাদের ছুঁয়ে যাবে। আমরা সে দিনেরই প্রত্যাশায়।

মোদ্দা কথা, এসব প্রযুক্তিপণ্য উদ্ভাবন করাই হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষ এসব ব্যবহার করে নিজেদের দেহের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এটাই উদ্ভাবকদের প্রত্যাশা। এরই পথ ধরে আগামীতে হয়তো আমাদের সামনে হাজির হবে আরো বহু প্রযুক্তিপণ্য, যা ব্যবহারে আমাদের করবে।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস