• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > জনগণের দোরগোড়ায় সেবা কতখানি পৌঁছাচ্ছে?
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মানিক মাহমুদ
মোট লেখা:২৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সার্ভিস সেক্টর
তথ্যসূত্র:
ফলোআপ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা কতখানি পৌঁছাচ্ছে?

‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ সত্যিকার অর্থে কতখানি পৌঁছাচ্ছে তা নিয়ে মানুষের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আদৌ কি সেবা পাওয়া সম্ভব? কতখানি সম্ভব? বিদ্যমান ব্যবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ নিশ্চিত করার জন্য যে পরিমাণ কাঠখড় পোড়াতে হবে সেজন্য কি তারা প্রস্তুত? তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারিভাবে আসলেই কি কম খরচে, দ্রুত ও সহজে সেবা দেয়া সম্ভব? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এই সেবা কি দেশের সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষ যারা সংখ্যায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে শেষ পর্যন্ত? সেবা পাওয়ার মাধ্যমে জনজীবনে এর কি প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে, আর নতুন কী সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে? কী কী চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে? এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হচ্ছে কিভাবে? প্রশ্ন করেছেন নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে প্রান্তিক সেবাগ্রহণকারী সবাই। এ লেখায় সেবা দিতে সরকারের স্থানীয় প্রশাসন কতখানি প্রস্ত্তত হয়েছে, কতখানি কাজ করছে, মুখ্যত তা খুঁজে দেখারই চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা ও দুর্বলতা দুই-ই রয়েছে। সেসব কথা অন্য পর্বে হতে পারে।

জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর প্রক্রিয়ায় সরকারের দু’টি উদ্যোগ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। একটি কুইক উইন ইনিশিয়েটিভ এবং অন্যটি ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা আয়োজন। কুইক উইন বা দ্রুত ফলদায়ক উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সত্যিকার অর্থেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রত্যেক সচিব এমন একটি করে উদ্যোগ বেছে নিয়েছেন, যাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা দ্রুত নিশ্চিত করা যায়। এটা ২০০৮ সালের গল্প। এভাবে তখন ৫৩টি দ্রুত ফলদায়ক উদ্যোগ নেয়া হয়, পরবর্তী সময়ে তা ৫৫-এ দাঁড়ায়। এর মধ্যে ১০টি উদ্যোগে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থায়ন করে এবং বাকিগুলোর অর্থ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে, তবে এখানে এটুআই প্রোগ্রামের কারিগরি সহায়তা ছিল। এক জরিপে দেখা যায়, ৫৫টি উদ্যোগের মধ্যে চলমান রয়েছে মাত্র ১৮টি। এগুলো সেবা দিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি জাতীয় পর্যায়ে মূলধারার অংশ হয়ে উঠেছে। এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ৩৩টি এবং স্থবির অবস্থায় রয়েছে ৪টি।

সরকারের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যোগ হলো ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন। মার্চ ২০১০-এ এটুআই প্রোগ্রাম এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে দেশে প্রথমবারের মতো এ মেলা ছিল সত্যিকার অর্থেই একটি নতুন ঘটনা, নতুন ইতিহাস। এতে যে শুধু লক্ষাধিক মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছে তাই নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সমন্বয় ঘটে শতাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। এ মেলার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সরকারিভাবে যেসব সেবা দেয়া হয়, সেসব সেবা প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসাধারণকে সেবা গ্রহণে আগ্রহী করে তোলা, সেবা গ্রহণ পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করা এবং মেলার মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো। এর মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে জনগণকে আকৃষ্ট করা। এ মেলা আয়োজনের আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল সেবা গ্রহণকারীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সেবার মান সম্পর্কে সেবা গ্রহীতাদের পরামর্শ নেয়া। একমাত্র সেবা গ্রহণকারী জনসাধারণই বলতে পারেন সেবার মান কেমন, তা কতখানি গুণগতসম্পন্ন হচ্ছে এবং এর মানোন্নয়নে আর কী করা দরকার। শুধু তাই নয়, সেবা দেয়ার প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ, গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে কোথায়, কী পরিবর্তন করা দরকার তা নিয়েও ভাবার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই মেলাসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও নীতি-নির্ধারকদের। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরকারের সব মন্ত্রণালয়ে যেসব ডিজিটাল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ যতখানি নিশ্চিত করা যাচ্ছে, তা সবার সামনে তুলে ধরার এবং পর্যালোচনা করার একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করে এই মেলা। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে যে কেবল প্রযুক্তির রূপকল্প নয়, এটি একটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রূপকল্প, এটা পরিষ্কার করে তুলে ধরা ছিল এ মেলা আয়োজনের একটি প্রাসঙ্গিক দিক। সে অর্থে এটি একটি প্রক্রিয়া। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হতে থাকবে- উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি, স্থিতিশীল দ্রব্যমূল্য, সবার জন্য শিক্ষা, সবার জন্য স্বাস্থ্য, মানুষের সৃজনশীলতা ও সক্ষমতার বিকাশ, সামাজিক ন্যায়বিচার, অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই সক্ষমতা কতখানি তৈরি হচ্ছে এবং এর মধ্য দিয়ে ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন ঘটানোর কোনো পর্যায়ে আমরা আছি, তা মূল্যায়ন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মেলা আয়োজনের এটি ছিল আর একটি জরুরি দিক।

ইউআইএসসি : জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম

আজকের ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র শুরু হয় কমিউনিটি ইনফরমেশন সেন্টার তথা সিইসি নামে। সিইসি পাইলট প্রকল্প আকারে শুরু হয় ২০০৮ সালে ইউএনডিপি’র অর্থায়নে দু’টি ইউনিয়নে। পাইলটের অভিজ্ঞতা থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩০টি ইউনিয়নে তা কুইক উইন উদ্যোগ হিসেবে বাস্তবায়ন করে। পরবর্তী পর্যায়ে ২০০৯ সালে আরো ৭০টি ইউনিয়নে তা বিস্তৃত হয়। বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগ সারাদেশের সব ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ পরিকল্পনার প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে ১০০০টি ইউনিয়নে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণও সম্পন্ন করেছে। অবশিষ্ট ইউনিয়নের উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ আগামী অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে চলেছে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের মাঠ পর্যায়ের সহকারী প্রোগ্রামার এবং বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত বিভিন্ন টেলিসেন্টারের অপারেটররা। এটুআই প্রোগ্রাম এই প্রশিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ আয়োজন করে তাদের প্রস্তুত হতে সহায়তা করে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সব ইউনিয়নের জন্য পরিকল্পনা করেছে বটে, কিন্তু পাইলট থেকে প্রকৃত শিক্ষা পুরোপুরি নেয়নি। পাইলটের একটি বড় শিক্ষা ছিল ইউআইএসসিকে টেকসই করতে হলে এর পরিচালনা প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানা তৈরি করা। সিইসিতে এই মালিকানা তৈরি করা হয়েছিল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে সংলাপ বা যৌথ আলোচনার মধ্য দিয়ে। মালিকানা তৈরির জন্য ইউআইএসসিভিত্তিক একটি স্থানীয় কমিটি গঠন করা জরুরি, যেখানে ইউনিয়নের সব পেশার মানুষ সম্পৃক্ত থাকবে। এই কমিটি একদিকে স্থানীয় সব শ্রেণীর মানুষের সিইসি থেকে সেবা পাবার ক্ষেত্রে যেমন ওয়াচ ডক হিসেবে কাজ করে, তেমনি সিইসিকে টেকসই করে তোলার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে।

সেবা : বড় প্রশ্ন, বড় চ্যালেঞ্জ

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তৃণমূলের মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেবার মাধ্যম তৈরি হয়েছে। মাধ্যমটি হলো ইউআইএসসি। কিন্তু সেই ইউআইএসসিতে কী সেবা আছে? উত্তর হলো পর্যাপ্ত সেবা সেখানে নেই। ইউআইএসসিগুলোতে এখন পাওয়া যায় জীবিকাভিত্তিক কিছু তথ্য, অনলাইনে কিছু ফরম ও সরকারি-বেসরকারি তথ্য এবং প্রযুক্তি থাকার সুবাদে কিছু সুলভ বাণিজ্যিক সেবা। বাণিজ্যিক সেবাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ওয়েব ক্যামেরা ব্যবহার করে বিদেশে কথা বলা, কম্পোজ, ফটো তোলা প্রভৃতি। অগ্রসর ইউআইএসসিগুলোতে আরো দু’টি সেবা পাওয়া যায়। একটি হলো স্বল্প খরচে কমপিউটারসহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ পাবার সুযোগ এবং অন্যটি হলো সরকারি-বেসরকারি মাঠকর্মীদের ফ্রি কনসালট্যান্সি। অথচ দরকার সরকারি সেবা। সরকারি সেবার চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। মানুষ এখন ওয়ান স্টপ সার্ভিস চায়। গ্রামের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদকেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার বিবেচনা করতে বেশি আগ্রহী। তারা চায় যেকোনো সেবার জন্য তারা ইউআইএসসিতে আসবে, প্রয়োজনীয় ফরম সংগ্রহ ও তা পূরণ করে ইউআইএসসিতেই জমা দেবে এবং জেনে যেতে চায় কবে এটার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে আবার ইউআইএসসিতে ফিরে আসবে। এমন অটোমেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে শোনা যায়। কিন্তু কবে শুরু হবে, তা বলা যায় না। বয়স্করা পেনশন, বয়স্ক ভাতা পাবার যাবতীয় প্রক্রিয়া ইউআইএসসিতেই সম্পন্ন করতে চায়। মানুষ চায় ইউপি মেম্বারদের মনগড়া তালিকা না হয়ে সঠিকভাবে ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ড তৈরি হোক এবং তা অনলাইনেও থাক। মানুষ জন্মনিবন্ধন করার কাজও অনলাইনে করতে চায়। কিন্তু এসব সেবার কোনোটাই এখনো পাওয়ার উপায় নেই।

ফোকাল পয়েন্ট : মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১’-এর মূল কথা জনগণের দোরগোড়ায় সেবা। সেই সেবা যাতে করে তৈরি হয়, সেবা যাতে করে মানুষ সহজে, সুলভে, দ্রুত পেতে পারে এবং সব স্তরে যাতে করে যথাযথভাবে এর তদারকি হয়, সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত প্রশাসনিক সম্পৃক্ততা দরকার। এই বিবেচনা থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মন্ত্রণালয় পর্যায়ে ই-গভ : ফোকাল পয়েন্ট তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে। এই ফোকাল পয়েন্টরা হলেন যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার। মন্ত্রণালয় ফোকাল পয়েন্টদের কাজ হলো নীতিনির্ধারণ করা, সেবা চিহ্নিত করা, এই সেবা যাতে তৈরি করে চূড়ান্তভাবে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া যায়, সে পথে যাতে করে কোনো বাধা না আসে তার ব্যবস্থা করা। একইভাবে বিভিন্ন অধিদফতর, বিভাগ, কর্পোরেশন পর্যায়ে ফোকাল পয়েন্ট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই ফোকাল পয়েন্টরা হবেন সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার। এদের কাজ হবে মন্ত্রণালয় থেকে চিহ্নিত সেবা দ্রুত তৈরি করা। আর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের (সার্বিক) করা হয়েছে জেলা ফোকাল পয়েন্ট। এদের কাজ হলো অধিদফতর থেকে তৈরি হয়ে আসা সেবা যাতে করে সত্যিকার অর্থে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে, তা নিশ্চিত করা। উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উপজেলা ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে উপজেলায় কাজ করবেন।

মাঠ প্রশাসনের কর্মকান্ড

জেলা প্রশাসকেরা ২০০৯ সাল থেকেই প্রস্ত্তত। পরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ফোকাল পয়েন্ট তৈরি হবার পর মাঠ পর্যায়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মকান্ডের। উপজেলা ফোকাল পয়েন্ট অর্থাৎ উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উপজেলা পর্যায়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মকান্ড সমন্বয় করেন। উপজেলা পর্যায়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মশালা পরিচালনা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা, চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেন এবং সেসব মোকাবেলা করেন। উপজেলা ফোকাল পয়েন্টরা এই সময়ের অন্যতম যে কাজটি করছেন তা হলো ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের জন্য সঠিক উদ্যোক্তা বাছাই প্রক্রিয়ার সমন্বয় করা। বিষয়টি জটিল। প্রাথমিকভাবে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে সঠিক উদ্যোক্তা বাছাই করার কথা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ইউআইএসসি ব্যবস্থাপনা কমিটির। পর ইউএনওর উপস্থিতিতে উদ্যোক্তার সাথে সরাসরি আলোচনার প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত হবার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ এলাকায় দেখা যাচ্ছে ইউআইএসসি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিতই হয়নি। এটি একটি মৌলিক ত্রুটি। এ কারণে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেকেই প্রশিক্ষণে এসে বলতে শুরু করে তারা এসেছে ইউআইএসসিতে চাকরি হবে এই ভেবে। এখানে বিনিয়োগ করতে হবে এটা তারা শোনেইনি। এটি ইউআইএসসিকে টেকসই করার প্রশ্নে উদ্বেগজনক এক চিত্র। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে ১০০০ ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোরই উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলো, তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই চিত্র। জানি না, স্থানীয় সরকার বিভাগ এ ভয়ানক ক্ষত থেকে বের হয়ে আসবে কিভাবে। আশার কথা হলো, এই বাস্তবতার মধ্যেই একাধিক জেলায় ইউএনওরা ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত সব স্টেকহোল্ডারের সাথে আলোচনা করে চলেছেন, তাদের সাথে আলোচনা করে সমস্যা এবং এই সমস্যা সমাধান করার পথ খুঁজে বের করছেন। স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউআইএসসি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, উদ্যোক্তা, কোথাও কোথাও উপজেলা চেয়ারম্যানও থাকেন। এভাবে সবার সাথে একত্রে বসে আলোচনার কারণে সংশ্লিষ্টদের এ কাজের প্রতি যেকোনো সময়ের তুলনায় মালিকানাবোধ বেশি তৈরি হচ্ছে। এসব অভিজ্ঞতা আবার এরা ব্লগে লিখছেন অন্যদের জানাতে এবং মন্তব্য জানতে।

ই-গভ

জেলা ফোকাল পয়েন্টরা আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার জেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম কতটুকু হচ্ছে, তা ঠিকমতো হচ্ছে কি-না, নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে কি-না, নতুন আর কী কী সম্ভাবনা তৈরি করা যায়, সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে জনগণের একটা সেতুবন্ধন তৈরি করা যাচ্ছে কি-না, ইত্যাদি সবকিছুই তাকে ভাবতে হয়। তার দায়িত্ব জেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশ-বিষয়ক পুরো প্রক্রিয়াটির সুসমন্বয় করা। জেলা ফোকাল পয়েন্ট ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের জন্য উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ সমন্বয় করেন। ইউআইএসসি যাতে করে সত্যিকারভাবে টেকসই হয়, মানুষ যাতে করে সত্যিকারভাবে এখান থেকে সেবা পেতে পারে, সে ভাবনা তাকেই করতে হয়। সেজন্য জেলা ফোকাল পয়েন্ট উপজেলা ফোকাল পয়েন্টদের দিয়ে তৃণমূলের চিত্র বোঝার চেষ্টা করেন।

উপজেলা ই-সার্ভিস ও জেলা সেবাকেন্দ্র

ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি কাজ হলো ওয়ান স্টপ সেবাকেন্দ্র। উপজেলা ওয়ান স্টপ সেবাকেন্দ্র হলো উপজেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে এক বা একাধিক কমপিউটার নিয়ে একটি ওয়ান স্টপ কাউন্টার স্থাপন। সম্ভাব্য দফতরসমূহ ওয়ান স্টপ সেবাকেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত থাকবে। সেবাবিষয়ক আবেদনসমূহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অথবা ওয়ান স্টপ সেবাকেন্দ্রে সংগ্রহ করা হবে, তবে যেখানেই গ্রহণ করা হোক না কেন সব ডকুমেন্টই এন্ট্রি হবে। সব ডকুমেন্টেরই একটি আইডি থাকবে এবং সব ডকুমেন্টের গতিবিধি ট্র্যাকিং করা যাবে। সব আবেদনের বিপরীতে আইডি নাম্বার সম্বলিত একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেয়া হবে। আবেদনসমূহ উপজেলা ওয়ান স্টপ কাউন্টার থেকে ওয়েবের মাধ্যমে, ইউআইএসসি থেকে দাখিল করা যাবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের যেকোনো সেবার জন্য উপজেলা ওয়ান স্টপ কাউন্টারে আবেদন দাখিল করা যাবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিষ্পত্তিযোগ্য আবেদনসমূহ জেলা ওয়ান স্টপ কাউন্টারে জমা নেয়া হবে। ইউআইএসসিসমূহ এক একটি উপ-সেবাকেন্দ্র হিসেবে কার্যকর থাকবে। সমগ্র কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য একটি ইন্টারেকটিভ সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। সফটওয়্যারের একটি ইন্টারফেস উপজেলা পোর্টালে লিঙ্ক করা থাকবে। উপজেলা পর্যায়ে যেকোনো নাগরিক যেকোনো সরকারি সেবা নেয়ার প্রাক্কালে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ডাটাসমূহ সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহ এন্ট্রি করবে। যেমন- যেসব নাগরিক কোনো ধরনের ভাতা পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হবে, তাদের সব তথ্য তখনই এন্ট্রি করে রাখা হবে। যখন কোনো নাগরিক কোনো লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন করবে তখন তার সাথে সম্পর্কিত তথ্যসমূহ এন্ট্রি করে রাখা হবে। যখন কোনো নাগরিককে ভিজিএফ বা ভিজিডি কার্ড দেয়া হবে তখন তার তথ্যসমূহ এন্ট্রি করে রাখা হবে। এভাবে নাগরিকদের তথ্যসমূহ এন্ট্রি হতে থাকবে। এভাবে ধীরে ধীরে ডাটাবেজটি সমৃদ্ধ হতে থাকবে। যেকোনো নাগরিকের আইডি ব্যবহার করে সে নাগরিকের সব তথ্য জানা যাবে। উপজেলার তথ্যসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেলা ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। আবার জেলার তথ্যসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। কারণ, সব জেলা ও উপজেলা ওয়ান স্টপ সেবাকেন্দ্র চালু হলে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি খুব জরুরি হয়ে পরবে।

এই উপজেলা ওয়ান স্টপ সেবাকেন্দ্রে যাতে করে সঠিক সেবাটি দ্রুত ঠিকভাবে পাওয়া যায় সেজন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেতৃত্বে ‘চাহিদা যাচাইকরণ’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এটুআই প্রোগ্রাম ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ উপজেলা পর্যায়ে ২২টি সরকারি দফতরের বিভিন্ন সেবা চিহ্নিত করতে শুরু করেছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনার মধ্য দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে, এসব সেবা বর্তমানে কিভাবে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আইসিটি ব্যবহার করে কিভাবে সহজে, সুলভে ও দ্রুত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : manikwapan@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা