• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > জেনে নিন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের চালক কে?
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: তৌহিদুল ইসলাম
মোট লেখা:২৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
হার্ডওয়্যার
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
জেনে নিন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের চালক কে?

ভাবুন, আপনার কমপিউটার চালু করা মাত্রই মনিটরে লেখা আসলো BIOS Boot Failure/BIOS Load error এবং আপনি অপারেটিং সিস্টেমে ঢুকতে পারলেন না, তখন ব্যাপারটা কেমন লাগবে? এ জন্যই মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রসেসর নয় বায়োস হলো কমপিউটারের প্রাণ। কারণ, বায়োস ঠিকমতো কাজ না করলে কমপিউটার অচল। ছোট এই বায়োসই কমপিউটার চালুর সাথে সাথে অন্যান্য যন্ত্রাংশ যেমন- প্রসেসর, গ্রাফিক্সকার্ড, হার্ডডিস্ক, র্যা ম, মাদারবোর্ড ইত্যাদির সাথে যোগাযোগ করে সব ঠিক থাকলে অপারেটিং সিস্টেমকে রান করায়।

কিন্তু মাদারবোর্ডের বায়োস, গ্রাফিক্সকার্ড, হার্ডডিস্ক, র্যাাম, সিডি/ডিভিডি ড্রাইভসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের সাথে যোগাযোগ করে কিভাবে? আসলে মাদারবোর্ডের বায়োসের মতো অন্যান্য প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশেরও ছোট সাইজের বায়োস আছে। মাদারবোর্ডের বায়োস ওই সব যুক্ত যন্ত্রাংশের বায়োসের সাথে যোগাযোগ করে সে যন্ত্রাংশের কিছু প্রাথমিক তথ্য (যা ওই যন্ত্রাংশের সাথে যোগাযোগের জন্য অত্যাবশ্যকীয়) মাদারবোর্ডের বায়োসের মধ্যে সংরক্ষণ করে নেয়, যা পরবর্তী সময়ে কমপিউটার বুট হলে খুব অল্প সময়েই মাদারবোর্ডের বায়োস খতিয়ে দেখে সে যন্ত্রাংশটি যুক্ত আছে কি না। এভাবে ছোটদের খেলনা থেকে শুরু করে মোবাইল, ডিজিটাল ক্যামেরা, হাই ডেফিনিশন টিভি, মাইক্রোওভেন, ডিজিটাল ঘড়ি, আইপিএস ইত্যাদি সব উন্নতমানের যন্ত্রেই ইদানীং বায়োসের ব্যবহার অনেক বেড়েছে।



সময়ের সাথে সাথে কমপিউটারে এসেছে অনেক পরিবর্তন। এক সময়ের ১৬ বিট প্রসেসর ও ১ মেগাবাইট র্যাথম পরে ৩২ বিট এবং ৬৪ বিট প্রসেসরে উন্নীত হয়েছে। প্রসেসরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেড়েছে র্যা ম ও হার্ডডিস্কের চাহিদা, কিন্তু কমপিউটারে বায়োস ছিল সেই পুরনো। ফলে ইন্টেল ৬৪ বিট প্রসেসর ডিজাইন করার সময়ই ধরা পড়লো পুরনো বায়োস ৬৪ বিট প্রসেসরের সব সুবিধা ধারণ করতে পারছে না। বিশেষ করে প্লাগ অ্যান্ড প্লে ইন্টারফেসে, বেশি মেমরির ক্ষেত্রে, বড় রকমের হার্ডডিস্কের ক্ষেত্রে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলো। তাই প্রয়োজন পড়ল, নতুন ধরনের স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারফেস তৈরি করার, যা এক্সটেনডেড ফার্মওয়্যার ইন্টারফেস (EFI) নামে পরিচিত। ফার্মওয়্যার হলো খুব ছোট একটি সফটওয়্যার, যা সে যন্ত্রাংশের ফ্ল্যাশ মেমরি বা আইসিতে ঢুকানো থাকে এবং সে যন্ত্রাংশের কাজের সব নিয়ন্ত্রণ করে।

ইএফআই-এর স্ট্রাকচার নিম্নরূপ

SEC > সিকিউরিটি ফেজ
PEI > ইএফআই ইনিশিয়ালাইজেশন ফেজ
DXE > ড্রাইভার এক্সিকিউশন এনভায়রনমেন্ট ফেজ
BDS > বুট ডিভাইস সিলেকশন ফেজ
TSL > ট্রানজিয়েন্ট সিস্টেম লোড ফেজ
RT > রান টাইম ফেজ
AL > আফটার লাইফ ফেজ

ইএফআই এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন সব অপারেটিং সিস্টেম প্লাটফর্ম, সব হার্ডওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন ধারণ করতে পারে। যেখানে পূর্বের বায়োসে অ্যাসেম্বলি প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হতো। কারণ, অ্যাসেম্বলি মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়াতে প্রোগ্রামের সাইজ ছোট হতো, দ্রুত প্রোগ্রাম রান করার পাশাপাশি প্রোগ্রামটি রাখার জন্য ফ্ল্যাশ মেমরির সাইজও অনেক কম দরকার হতো সেখানে ইএফআই পাওয়ার জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ C ব্যবহার করা হয়েছে।

ইএফআইতে C প্রোগ্রামিং ব্যবহার করার জন্য বড় সুবিধা, ইএফআই কাস্টমাইজড কোড সাপোর্ট করে। আগের বায়োসে যেমন পুরো প্রোগ্রামই পরিবর্তন করে নতুন সংস্করণ তৈরি করা হতো, ইএফআইতে সেটি করার দরকার পড়ে না। ইএফআইতে যে প্রোগ্রাম থাকে তাকে শুধু নতুন যে ডিভাইস যুক্ত হচ্ছে তার জন্য কিছু কোড পুরনো প্রোগ্রামে ঢুকিয়ে দিলেই হয়। যেহেতু অ্যাসেম্বলি থেকে প্রোগ্রামিং C অনেক প্রোগ্রামারবান্ধব, তাই ইএফআইতে প্রোগ্রাম পরিবর্তন করাও অনেক সহজ। কিন্তু প্রোগ্রামিং C ব্যবহার করার জন্য প্রোগ্রামের আকার, অ্যাসেম্বলিতে করা প্রোগ্রামের থেকে বেড়ে গেলো। ফলে প্রয়োজন পড়লো ফ্ল্যাশ মেমরির আকার বাড়ানো। সেই সাথে দ্রুত প্রোগ্রাম লোড করার জন্য ক্যাশ মেমরিও অনেক বাড়াতে হয়েছে। আগের ১২৮/২৫৬ ক্যাশ মেমরির জায়গা দখল করে নিয়েছে ৫১২/১ মেগাবাইট মেমরি।

প্রথম ইএফআই প্রকাশ হয় ২০০০ সালে, যার সংস্করণ ছিল EFI 1.02, এটি ৩২ বিট প্রসেসরের জন্য তৈরি করা হয়। পরে বড় বড় সব কোম্পানি এএমডি, ইন্টেল (এএমআই), অ্যাপল, ডেল, এইচপি, আইবিএম, মাইক্রোসফট, ফোনিক্স ও আরো কিছু কোম্পানি মিলে ইএফআই-এর আরো উন্নত সংস্করণ তৈরি করে যা ইউনিফাইড ইএফআই বা ইউইএফআই নামে পরিচিত। এ সব কোম্পানি মিলে ২০০৫ সালে প্রথম টিনোকোর নামে ডেভেলপমেন্ট কিট তৈরি করে।

ইউইএফআই-এর অবস্থান


অপারেটিং সিস্টেম

এক্সটেনসিবল ফার্মওয়্যার ইন্টারফেস

ফার্মওয়্যার

হার্ডওয়্যার

যেখানে পুরনো বায়োস টেকনোলজিতে ইউএসবিতে কোনো কিবোর্ড বা মাউস যুক্ত করা হলে কমপিউটার চালুর সময়ই তা যুক্ত করতে পারতো না। ইউইএফআই তা খুব সহজেই নিয়ে নেয় এবং টাচস্ক্রিন কমপিউটারও সাপোর্ট করে অনায়াসে।

ইউইএফআই-এর সুবিধা

০১. যেসব অপারেটিং সিস্টেম বায়োস সাপোর্ট করে সেখানেও ইউইএফআই অনায়াসে কাজ করে।

০২. বড় ধরনের হার্ডডিস্ক সাপোর্ট করে।

০৩. যেকোনো হার্ডওয়্যার সরাসরি নিয়ে নেয়, সিপিইউর সাহায্যের প্রয়োজন হয় না।

০৪. বায়োস যেখানে শুধু ১৬ বিট প্রসেসর কাজ করে, সেখানে ইউইএফআই ৩২ ও ৬৪ বিট প্রসেসরেও কাজ করে।

০৫. সরাসরি ল্যান সাপোর্ট করে।

প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের সাথে সাথে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র/যন্ত্রাংশেরও উন্নয়ন হচ্ছে। তাই সবচেয়ে বড় অসুবিধা তৈরি হয়েছে এই ইউইএফআই উন্নয়নে। কারণ যে যন্ত্র/যন্ত্রাংশের ইউইএফআই উন্নত করা হচ্ছে তা পরে অন্যান্য উন্নত যন্ত্র/যন্ত্রাংশের সাথে যুক্ত করা যাচ্ছে না। এ কারণেই ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুদিন পর পর তাদের পণ্যের নতুন নতুন ফার্মওয়্যার দিচ্ছে যেন যন্ত্র/যন্ত্রাংশ ঠিকভাবে কাজ করে। আর ফার্মওয়্যারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে ফার্মওয়্যার সার্টিফিকেশন। যেকেউ এই ফার্মওয়্যার সার্টিফিকেশন করে অনলাইনেই অনেক কাজ পেতে পারেন। পরিশেষে বলা যায়, ভবিষ্যতে হয়তো ইউইএফআই-এর আকৃতি অনেক ছোট হয়ে আসবে, কিন্তু এর কার্যক্ষমতা আরো অনেকগুণ বেড়ে যাবে এবং বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক্স পণ্যতেই হয়তো ইউইএফআই বা আরো উন্নত আল্ট্রাইউইএফআই যুক্ত হবে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : minitohid@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস