• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ২০১০ সালের সেরা ২০ প্রযুক্তি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
২০১০ সালের সেরা ২০ প্রযুক্তি



প্রযুক্তিক্ষেত্রে এগিয়ে থেকে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন দেশ, জাতি ও প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান সময়ের সাথে প্রযুক্তি-গবেষণার প্রতি বেশি থেকে বেশি মনোযোগী হয়ে উঠছে। গবেষণা খাতে বাড়িয়ে তুলছে তাদের বিনিয়োগ। তাদের বিনিয়োগ তাদের দূরদৃষ্টিসম্পন্নেরই পরিচয় বহন করে। তাদের এই বিনিয়োগসূত্রে এরা নাগাল পাছে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিপণ্য উদ্ভাবনের। ২০১০ সালে বিশ্বের মানুষ দেখতে পেয়েছে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের। এর মধ্য থেকে কয়েকটি সেরা প্রযুক্তিকে উপজীব্য করে তৈরি করা হয়েছে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘২০১০ সালের সেরা ২০ প্রযুক্তি’। আশা করি প্রতিবেদনটি আগ্রহী পাঠকদের ভালো লাগবে।

ইংলিশ টিচিং রোবট



এর নাম দিতে পারেন ‘জব টার্মিনেটর’। দক্ষিণ কোরিয়া ইংরেজি শেখানোর জন্য ৩০ হাজার বিদেশী ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। দেশটি এখন ভাবছে এর ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাসে ইংলিশ স্পিকিং রোবট ব্যবহারের। এরই মধ্যে গত বছর সে দেশের বেশ কিছু স্কুলের ইংরেজি ক্লাসের ছাত্ররা ইংরেজি শিখতে শুরু করেছে রোবট-টিচারের কাছ থেকে। দক্ষিণ কোরিয়ার ছাত্রদের ইংরেজিতে প্রতিযোগিতাসক্ষম করে গড়ে তোলার উদ্যোগ হিসেবেই শ্রেণীকক্ষে এ ধরনের রোবট ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে সে দেশের সরকার। এই পরিকল্পনা সে দেশের ইংরেজি শিক্ষকদের স্বাভাবিকভাবে কিছুটা উদ্বিগ্ন করেছে। উদ্বেগের কারণও আছে বৈকি! কারণ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ইংরেজি শিক্ষক রোবটগুলো একদিন রক্ত-মাংসে গড়া ইংরেজি শিক্ষকদের এক সময় চিরতরে উচ্ছেদ করে দিতে পারে। তবে সেদেশে ইংরেজি শিক্ষকের অভাবের প্রেক্ষাপটে সরকারকে এমনটি ভাবতে হয়েছে। ২০১১ সালের মধ্যে সেদেশের ৫০০ প্রিস্কুলে এবং ২০১৩ সালের মধ্যে ৮০০০ প্রিস্কুলে এই রোবট শিক্ষক কাজে লাগানো হবে।

সনি আলফা এ৫৫ ক্যামেরা



এই ক্যামেরার দীপ্তি কখনো মিটমিট করে না। প্রচলিত ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা খুবই ভালো ছবি তোলে। তবে কয়েক দশকের পুরনো কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে এগুলো চলছে জবুথবুভাবে। যখন আপনি কোনো স্ন্যাপ নিতে যান, এর কাঁচ ছবিটি আবার ফেরত পাঠাচ্ছে আপনার চোখ বরাবর। তখন ফোকাসিং সেন্সর ছবি ধারণের সময় ফট করে শব্দ করে তাৎক্ষণিকভাবে। এটা না গেলে ক্যামেরা ফোকাস করতে পারে না। আপনি যদি ভিডিও শূটিং করতে গিয়ে ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা নিয়ে বিরক্তিবোধ করে থাকেন, তবে এসব ক্যামেরা ছেড়ে হাতে নিন ‘সনি আলফা এ৫৫ ক্যামেরা’। এটি হতে পারে আপনার সেরা ভিডিও শূটার। কারণ উল্লিখিত পুরনো কারিগরি সমস্যাটির সমাধান করা হয়েছে দক্ষতার সাথে উদ্ভাবিত ট্রান্সলুসেন্ট মিরর সংযোজন করে। এর অর্থ দাঁড়ায়, আপনি প্রতি সেকেন্ডে দশটি পরিপূর্ণ ফোকাসে ছবি তুলতে পারবেন এ ক্যামেরা দিয়ে। তাছাড়া এর মাধ্যমে রেকর্ড করা যাবে হাই ডেফিনিশন ভিডিও, যাতে কখনই অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য কোনো ছাপ থাকবে না। এতে আছে কিছু বোনাস সুবিধা : মুভিং মিররের জন্য এতে কোনো ইনটেরিয়র স্পেস বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। সনি আলফা এ৫৫ ক্যামেরা দর্শনীয়ভাবে ছোট ও হালকা- সনি এসএলআর ক্যামরাগুলোর তুলনায়।

লাইফগার্ড রোবট



আপনি সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে আটকা পড়েছেন। কোনো মতে মাথাটুকু পানির ওপর ভাসিয়ে রাখতে পারছেন। এমতাবস্থায় আপনার সাহায্যে এগিয়ে এলো এক রোবট বীর। এই রোবট বীর আর কেউই নয়, চার ফুট লম্বা একটি টকিং বয়া (talking buoy)। একেই আঁকড়ে ধরুন, দেখবেন এই লাইফগার্ড রোবট নিরাপদে পৌঁছে দেবে সমুদ্র সৈকতে। এই লাইফগার্ড রোবটের নাম দেয়া হয়েছে EMILY। পুরো কথায় EMergency Integrated Lifesaving Lan Yard। চলতি বছরেই কয়েক মাস আগে এমিলি নামের এই লাইফগার্ড রোবট পেট্রোল শুরু করে মালিবু’র বিপজ্জনক জুমা সৈকতে এবং এই ডিসেম্বর মাসের আগেই এই লাইফগার্ড রোবট মোতায়েন সম্পন্ন হবে আরো ২৫টি সৈকতে। এটি ঘণ্টায় ২৮ মাইল বেগে সাঁতার কাটতে সক্ষম। লাইফগার্ডেরা এখন এই রোবট পরিচালনা করে দূর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। আগামী বছরে মডেলগুলো হবে স্বয়ংক্রিয় এবং এগুলো প্রায় মানুষের মতোই পানিতে ডুবতে যাওয়া মানুষকে মানুষের মতোই বাঁচাতে পারবে নির্ভরযোগ্যভাবেই। লাইফগার্ডের যখন এমিলিকে ঢেউয়ের ওপর ফেলবে, তখনই এটি বিপদগ্রস্ত সাঁতারুর পানির নিচের নড়াচড়া স্ক্যান করবে এর সোনার ডিভাইস বা শব্দযন্ত্রের সাহায্যে। তখন এর ইলেকট্রিক জেটস্কি ব্যবহার করে ঘণ্টায় ২৮ মাইল বেগে এটি পৌঁছে যাবে বিপদগ্রস্ত মানুষটির কাছে। এ রোবটে আছে একটি ক্যামেরা ও স্পিকার। এর মাধ্যমে তীরে থাকা লাইফগার্ড বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে শান্ত থাকতে আশ্বস্ত করবে মানুষের সাহায্যের জন্য অথবা রোবটকে আঁকড়ে ধরে থাকতে বলবে তাকে তীরে ফিরিয়ে আনার জন্য।

স্কয়ার : মোবাইল পেমেন্ট প্লাটফর্ম



স্কয়ার হচ্ছে একটি মোবাইল পেমেন্ট প্লাটফর্ম। এর মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে আপনি অর্থ গ্রহণ-প্রেরণ করতে পারবেন। এজন্য আপনার থাকা চাই শুধু একটা স্মার্টফোন। বর্তমানে ‘স্কয়ার’ কাজ করবে শুধু আইফোন, আইপ্যাড, আইপড (দ্বিতীয় কিংবা এর পরবর্তী প্রজন্মের) ও কয়েকটি এনড্রয়িড ডিভাইসে। কোন কোন ডিভাইসে তা কাজ করবে, এর একটি তালিকাও এরই মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। স্কয়ার কাজ করে খুব সহজে। শুধু স্কয়ার ডিভাইসটি একটি ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক দিয়ে আপনার ডিভাইসে প্লাগ করে দিন। এরপর স্কয়ার অ্যাপ্লিকেশন ওপেন করুন। এবার আপনি যে পরিমাণ অর্থ কোনো ব্যক্তির কার্ডে চার্জ বা সুইপ করতে চান তা এন্টার করুন। কাজটা খুবই সহজ। একবার কাউকে চার্জ অথরাইজ করলে, ওই ব্যক্তি চার্জের জন্য সাইন করতে পারবে। ঠিক যেমন একটি দোকান থেকে যেনো কিছু কিনলেন। স্কয়ার আপনার অনলাইনে যাবতীয় লেনদেনের হিসেব রাখে একটি অনলাইন কন্ট্রোল প্যানেলে। এর মাধ্যমে ই-মেইল করে প্রেরকের কাছে রসিদও পাঠানো যায়। কত টাকা লেনদেন করা যাবে এর মাধ্যমে, তার কোনো সীমা নেই।

ব্লুম বক্স



ব্লুম এনার্জি হচ্ছে সিলিকন ভেলিতে অনেকটা হঠাৎ উদয় হওয়া একটি প্রযুক্তি কোম্পানি। এ কোম্পানি উদ্ভাবন করেছে Bloom Box। এই ব্লুম বক্সকে অনেকেই বলছেন ‘বাক্সের ভেতর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র’, যা ইটের আকারের একটি বর্গাকার যন্ত্র। এটি পুরো বাড়িকে আলোকিত করে রাখতে পারে। এই ব্লুম বক্স দিয়ে আপনি আপনার বাড়ির প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে আপনার প্রয়োজন হবে কোনো তার বা যন্ত্র। ব্লুম এনার্জির চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে এই ব্লুম বক্সের মাধ্যমে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন গ্রিড থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া। ব্লুম এনার্জির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কে.আর. শ্রীধর যখন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্পেস টেকনোলজি ল্যাবরেটরি’তে একজন পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন নাসা তাকে বলে মঙ্গলে মানুষের জীবনযাপনকে টেকসই করে তোলার উপায় উদ্ভাবন করতে। এতে করে তার ল্যাবরেটরি প্রথম যে যন্ত্রটি নিয়ে আসে, তাতে সৌরবিদ্যুৎ ও মঙ্গলের পানি ব্যবহার করা হয় একটি রিয়েক্টর সেল চালানোর জন্য। ওই সেল শ্বাস নেয়ার জন্য অক্সিজেন ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রের জন্য হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে। এ প্রকল্প থেকেই তারা উদ্ভাবন করেন ব্লুম বক্স।

ডিসিটফুল রোবট

বাংলায় এর নাম দেয়া যায় ‘প্রতারক রোবট’। এ রোবট মানুষের সাথে প্রতারণা করতে সক্ষম। এই প্রতারক রোবট শত্রুসেনাদের ভুলপথে পরিচালিত করে তাদের সাথে প্রতারণা করতে পারবে। এই প্রতারণা করে এ রোবট থাকবে শত্রুসেনাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কথাটি মনে হচ্ছে ‘টার্মিনেটর’ ছবির দৃশ্যের মতো। এটি আসলে জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকেরা তৈরি করেছেন। এটি প্রতারক রোবট তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বি স্তারিত গবেষণা। এসব গবেষকেরা এরই মধ্যে এমন অ্যালগরিদম উদ্ভাবন করেছেন, যার ফলে রোবটই নির্ধারণ করতে পারবে, কোনো ব্যক্তি বা যন্ত্রের সাথে এটি প্রতারণা করবে কি করবে না।



এই রোবট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল এবং এর তাত্ত্বিক মডেল ও কগনিটিভ ইলিউশন ৩ সেপ্টেম্বর ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সোশ্যাল রোবটিকস’-এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়। এ ডিসিটফুল রোবট যেমন রোবট-রোবট মিথস্ক্রিয়া চালাবে, তেমনি চালাবে মানুষ-রোবট মিথস্ক্রিয়াও। এ গবেষণায় অর্থ যোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অফিস অব ন্যাভাল রিসার্চ’।

ভবিষ্যতে রোবট বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতারণা করতে সক্ষম হবে। এসব ক্ষেত্রের মধ্যে আছে : সামরিক, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের ক্ষেত্রও। যুদ্ধক্ষেত্রে রোবট সৃষ্টি করতে পারবেব ধূম্রজাল। নিজেদের গোপন ও নিরাপদ রেখেই প্রতারক রোবট সে কাজটি করতে পারবে। যদিও এ ধরনের রোবট সৃষ্টির মূল লক্ষ্য সামরিক ব্যক্তিদের সহায়তা করা, তবু এটি সীমাবদ্ধ থাকবে না শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই।

সারকাজম সফটওয়্যার

Sarcasm সফটওয়্যার হচ্ছে এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার। মনে হচ্ছে, এটি সেই সফটওয়্যার ঠিক যেমনটি আমরা চেয়েছিলাম। মানুষের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে কমপিউটার দিন দিন বেশি থেকে বেশি দক্ষ হয়ে উঠছে। এর জন্য অংশত ধন্যবাদ পেতে পারে অ্যালগরিদম। অ্যালগরিদম বিশ্লেষণ করতে পারে বাক্য- ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় সেন্টিমেন্টের জন্যই। এ দাবি ইসরাইলের জেরুজালেমের হিরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারি র্যা পোপোর্ট। কিন্তু ব্যঙ্গচিত্র চেনা এখনো সমস্যাই থেকে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষই ব্যঙ্গচিত্র চিনতে পারে না। কিন্তু কমপিউটার তা পারে।



র্যা পোপোর্ট ও তার সহকর্মীরা প্রণয়ন করেছেন একটি Sentiment-analysis program। এর পর এরা এই সফটওয়্যারটিকে প্রশিক্ষিত করে তুলেছেন যাতে ব্যঙ্গচিত্র (Sarcasm) চিনতে পারে। এই অ্যালগরিদম এর প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে যথার্থ নির্ভুল। পরীক্ষামূলকভাবে ৬৬ হাজার আমাজন রিভিউয়ে এটি সঠিক ছিল ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে। এ থেকে এটুকু স্পষ্ট কমপিউটার শুধু আপনার কথা চেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, আপনার মনোভাব তথা সেন্টিমেন্টও চিনতে পারবে, ব্যাখ্যা করতে পারবে।

ই-লেগ




আমরা জানি প্যারাপ্লেজিয়া রোগীর নিম্নাঙ্গ অসাড়-অবশ থাকে। ফলে এরা হাঁটতে সক্ষম হয় না। অবশ্য এমন রোগীর অনেকেই কোনোমতে দাঁড়াতে সক্ষম হন, কিন্তু পা বাড়িয়ে হাঁটতে পারেন না নিজের শক্তি ব্যবহার করে। তাদের জন্যই আসছে elegs, এটি একটি উদ্ভাবনীমূলক exoskeletion। এটি একটি কৃত্রিম রোবট পা। এতে ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যার মাধ্যমে এ পা পরিধানকারীর বাহুর ইশারা পাঠ (read) করা যায় কয়েকটি ক্র্যাচের মাধ্যমে। ফলে এর মাধ্যমে মানুষের হাঁটার শক্তিকে উজ্জীবিত করা যায়। এটি এ ধরনের প্রথম একটি যন্ত্র। সৈনিকেরা পিঠের ওপর ভারি জিনিস বহন করার বেলায় এক ধরনের মিলিটারি এক্সো স্কেলেটন ব্যবহার করে। সে ধারণা থেকে প্যারাপ্লেজিয়া রোগীদের জন্য এই ই-লেগ উদ্ভাবনের প্রেরণা পান এর উদ্ভাবকেরা। এটি প্রাথমিকভাবে কিছু পুনর্বাসন কেন্দ্রতেই পাওয়া যাবে। প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট তা ব্যবহার করবেন রোগীদের জন্য। সাধারণভাবে তা বাজারে পাওয়া যাবে ২০১৩ সালের দিকে।

সিড ক্যাথেড্রাল ও ‘ডিজিটাল স্বপ্ন’



বায়োডাইভার্সিটি তথা জীববৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে নিবেদিত একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান সাংহাইয়ের ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০১০’-এ তাদের প্যাভিলিয়নে স্থাপন করেছে ৬০ হাজার light-funneling তথা আলোপ্রবাহী ফাইবার অপটিক রড। প্রতিটি রডের ডগায় রাখা হয় এক বা একাধিক বীজ (Seed)। ব্রিটিশ ডিজাইনার টমাস হেথারউইক Kew Gardens এবং Millenium Seed Bank Project-এর সাথে কাজ করছেন একটি মিশন নিয়ে। তার মিশন হচ্ছে বিশ্বের যত গাছ আছে ২০২০ সালের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ বীজ সংগ্রহ করা। উল্লিখিত এক্সপোর থিম সেনটেন্স বা আপ্তবাক্য ‘Better City, Better Life’-এর সাথে মিল রেখে একটি জীবন্ত কাঠামো বা লিভিং স্ট্রাকচার তৈরি করা এর লক্ষ্য। তা ছাড়া তার এ মিশনের শেকড় নিহিত একটি ‘ডিজিটাল স্বপ্নে’র মাঝে, যে স্বপ্নের মাটিতে সব প্রাণের সঞ্চার ঘটবে। এ দুই মিশনের সম্মিলনে গড়ে তোলা হচ্ছে এই ‘সিড ক্যাথেড্রাল’। আর এটি হয়ে ওঠে সাংহাই এক্সপোর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্যাভেলিয়ন। চীনা দর্শকেরা এর নাম দিয়েছে pu gong ying, যার অর্থ পুষ্পতরু বা dandelion.

উন্নততর থ্রিডি গ্লাস



Avatar থ্রিডি মুভির সীমাবদ্ধতা উৎরে গেছে। কিন্তু eyewear থেকে গেছে পেছনে। থ্রিডি চশমা ছবির উজ্জ্বলতা ৫০ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয়। কাছে দেখতে যদি আপনার সমস্যা থাকে, তবে আপনাকে থ্রিডি চশমা পরতে হবে আপনার নিয়মিত পরার চশমার উপরে, অস্বস্তি এড়ানোর জন্য। এ অবস্থা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে Oakley Inc. আপনার জন্য নিয়ে এসেছে নতুন উন্নতর থ্রিডি চশমা। এ চশমা উদ্ভাবনে ওকলের সাথে অংশ নিয়েছে DramWarks Animation নামের প্রতিষ্ঠান। এ চশমাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘অপটিক্যালি কারেক্ট লেন্স’ হিসেবে। কারণ, এ চশমা পরলে ছবি আরো স্পষ্ট দেখা যাবে। থ্রিডি ছবির ভূতুড়ে ভাব দূর হবে। স্যামসাং এর থ্রিডি টিভির জন্য বাজারে ছাড়ছে ‘প্রেসক্রিপশন গ্লাস’ নামের চশমা। উভয় ক্ষেত্রে ছবি দেখা মানে বাস্তবতার ছোঁয়া মেলা।

গুগল চালকবিহীন গাড়ি



‘গুগল ড্রাইভারলেস কার’ হচ্ছে গুগলের একটি প্রকল্প। এ প্রকল্প চালকবিহীন গাড়ির প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট। প্রকল্পটির বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছেন গুগল প্রকৌশলী সেবাস্টিয়ান থ্রুন। তিনি ‘স্টানফোর্ড’ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবরেটরির পরিচালক এবং ‘গুগল স্ট্রিট ভিউ’-এর সহ-উদ্ভাবক। তার টিম স্টানফোর্ডে উদ্ভাবন করেছে রোবট যান ‘স্ট্যানলি’, যা লাভ করে ‘2005 DARPA Grand Challenge’ এবং এর ২০ লাখ ডলারের পুরস্কার। তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ। গুগল চালকবিহীন গাড়ি ব্যবস্থাটি উদ্ভাবনের জন্য যে টিমটি কাজ করছে, তাদের মধ্যে আছেন গুগলে কর্মরত ১৫ জন প্রকৌশলী। তাদের মধ্যে রয়েছেন মাইক মনটেমেরলো এবং অ্যান্থনি লেভানডস্কি। এরা দুজনেই DARPA Challenge-এর ওপর কাজ করেছেন।



এটি কী কোনো অটোমোবাইল? কোনো aut2.omobile? এর যেকোনো নামেই একে ডাকতে পারেন। গুগলের নতুন এই ব্যবস্থায় তথ্য সংগ্রহ করা হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে ‘গুগল স্ট্রিট ভিউ’-এর জন্য। আর এতে ইনপুট দেয়া হয় গাড়ির ভেতরে থাকা ভিডিও ক্যামেরা, গাড়ির একদম উপরে রাখা একটি LIDAR সেন্সর, গাড়ির সামনে রাখা রাডার সেন্সর এবং চাকায় লাগানো একটি পজিশন সেন্সর যা মানচিত্রে গাড়ির পজিশন বা অবস্থান জানতে সাহায্য করে থেকে। ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে গুগল এ ব্যবস্থাসমৃদ্ধ বেশ কয়েকটি যান পরীক্ষা করে দেখেছে। এগুলো মানুষ ছাড়াই ১০০০ মাইল/১৬০০ কিলোমিটার পথ চলেছে। আর মাঝেমধ্যে মানুষের সাহায্য নিয়ে পথ অতিক্রম করেছে ১৪০,০০০ মাইল/২৩০,০০০ কিলোমিটার। ড্রাইভারলেস টেকনোলজি যেমনি লজিক্যাল, তেমনি কার্যকর। ভবিষ্যতে তা আমাদের দেবে শঙ্কাহীনভাবে মোটরাইজড সোফায় আরামদায়ক গাড়ি চলার সুযোগ।

লুকসি



Looxcie (উচ্চারণ Look-see) হচ্ছে একটি পরিধানযোগ্য ক্যামকর্ডার। সোজা কথায় ক্যামেরা। এটি কানে পরিধান করা যায়। হাত লাগানোর প্রয়োজন নেই। এর সাথে চোখের সামনে যা দেখা যায়, তা একটানা ৫ ঘণ্টা ভিডিও করা যায়। আর একটি বোতাম টিপে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থাৎ ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এই ভিডিও ক্লিপিং ই-মেইল করা যায়। কিংবা তা পোস্টিং করা যায় ফেসবুক, ইউটিউব অথবা টুইটারে। লুকসি সবসময়ই অন থাকে। অব্যাহতভাবে এটি ভিডিও ধারণ করে চলে। এর কোনো রেকর্ড বাটন নেই। যখন আপনি কোনো কিছু শেয়ার করতে চাইবেন, তখন শুধু ইনস্ট্যান্ট ক্লিপ বাটনে ক্লিক করুন, ক্লিপ সেভ করার জন্য। বর্তমানে লুকসি নিয়ন্ত্রিত হয় একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে। এখন এটি একটি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সাপোর্ট করে সুনির্দিষ্ট কিছু অ্যানড্রয়িড ফোন। এর মাধ্যমে আপনার ফোনকে ব্যবহার করা যায় একটি ভিউ ফাইন্ডার হিসেবে। শিগগিরই তা ভবিষ্যত স্মার্টফোন প্লাটফরম সাপোর্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইপ্যাড



iPad হচ্ছে একটি ট্যাবলেট কমপিউটার। এর উদ্ভাবক অ্যাপল। এটি বিশেষ করে বাজারজাত করা হয়েছে অডিও ভিজুয়্যাল মিডিয়া তথা বই, সাময়িকী, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, গেম ও সেই সাথে ওয়েব কনটেন্টের একটি প্লাটফরম হিসেবে। এর ওজন দেড় পাউন্ড। অন্য হিসেবে ৬৪০ গ্রাম। বলা যায় এর আকার আর ওজন আজকের দিনের একটি স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের মাঝামাঝি। অ্যাপল এই আইপ্যাড বাজারে ছাড়ে ২০১০ সালের এপ্রিলে। ৮০ দিনের মধ্যে এর ৩০ লাখ ডিভাইস বিক্রি হয়। আইপ্যাডে চলে এর অপেক্ষাকৃত পুরনো সংস্করণ iPod Touch এবং iPhone-এর মতো একই অপারেটিং সিস্টেমে। এটি চলতে পারে এর নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশনে, সেই সাথে চালাতে পারে আইফোনের জন্য ডেভেলপ করা অ্যাপ্লিকেশনও। কোনো মডিফিকেশন ছাড়া এটিতে শুধু অ্যাপলের অনুমোদিত প্রোগ্রাম চালানো যাবে। এই প্রোগ্রাম পরিবেশিত হয় অ্যাপলের অনলাইন স্টোরগুলোর মাধ্যমে।



আইফোন ও আইপড টাচের মতো আইপ্যাড নিয়ন্ত্রিত হয় মাল্টিচাড ডিসপ্লে’র মাধ্যমে। এটি হচ্ছে সবচেয়ে পুরনো ট্যাবলেট কমপিউটার থেকে একটি বড় ধরনের উত্তরণ। পুরনো যে ট্যাবলেট কমপিউটারে ব্যবহার হতো তা প্রেসার-ট্রিগারড স্টাইলাস। আইপ্যাড ইন্টারনেট ব্রাউজ, মিডিয়া লোডিং ও স্ট্রিমিং এবং সফটওয়্যার ইনস্টল করার জন্য একটি ওয়াই-ফাই ডাটা কানেকশন ব্যবহার করে। কিছু কিছু মডেলে রয়েছে একটি থ্রিজি ওয়্যারলেস ডাটা কানেকশন। ব্যবসায়িক ও শিক্ষাক্ষেত্রে আইপ্যাড বেশ ব্যবহার হচ্ছে। জনৈক বিশ্লেষকের মতে, কনজ্যুমার ইলেক্ট্রনিকসের ইতিহাসে আইপ্যাড হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত বিক্রির একটি নন-ফোন যন্ত্র।


ফ্লিপবোর্ড



Flipboard হচ্ছে অ্যাপলের iPad ট্যাবলেট কমপিউটারের জন্য একটি সোশ্যাল ম্যাগাজিন অ্যাপ্লিকেশন। এটি উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের Palo Alte নগরীভিত্তিক কোম্পানি ফ্লিপবোর্ড ইঙ্ক.। আপনার বন্ধুরা ফেসবুক ও টুইটারে শেয়ার করছেন নানা সংবাদ, ছবি ও আপডেটস। এসবে ঢুকে পড়ার জন্য ফ্লিপবোর্ড হচ্ছে একটি দ্রুত ও চমৎকার উপায়। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন একটি ম্যাগাজিন লে-আউটে, যা সহজে স্ক্যান করা যাবে কিংবা আনন্দের সাথে পড়াও যাবে। এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন আর্টিকেল ও ফটো শেয়ার করতে পারবেন, মন্তব্য কিংবা পছন্দের কিছু পোস্ট করতে পারবেন। টুইটারে প্রিয়জন, তালিকা ও ব্লগে সৃষ্ট সেকশনের সাথে আপনার ফ্লিপবোর্ড কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। আপনার পছন্দের সবকিছু এক জায়গায় পেতে আপনার ফ্লিপবোর্ড সবকিছু। এটি আপনার ম্যাগাজিন। এটি আপনার ফ্লিপবোর্ড। অনেকেই বলছেন, ফ্লিপবোর্ড হচ্ছে একটি ফ্যান্টাস্টিক আইপ্যাড অ্যাপ্লিকেশন। এর ফ্লিপবোর্ড আইপ্যাড ব্যবহারকারীদের সুযোগ করে দিয়েছে আরো ভালোভাবে নিউজের জন্য ওয়েব ব্রাউজ করার। এর ম্যাগাজিন স্টাইলে লেআউট ও মজাদার ছবি এবং হোয়াইট স্পেস ডিজিটাল মিডিয়াকে আরো একধাপ এগিয়ে নেয়ার পথ করে দিয়েছে। ফ্লিপবোর্ড ফেসবোর্ড আপডেট ও টুইটসকে রূপান্তর করেছে একটি ডিজিটাল ম্যাগাজিনে। আপনার আইপ্যাডের জন্য ফ্লিপবোর্ড ডাউনলোড করেই দেখুন। নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।

এসটিএম ইনস্ট্যান্ট ইনফ্রাস্টকচার



এটি পাখি নয়। নয় কোনো বিমান। এটি বায়ুর চেয়েও হালকা একটি ফ্লাইং ভেহিকল উড়োযন্ত্র। এটি তৈরি বিপস্টপ লাইলন দিয়ে। এটি ২৭০০ মিটার উচ্চতায় তিনদিন একটানা উড়তে সক্ষম। সেখানে এটি কী করবে? যদি এতে লাগানো হয় কড়া নজরদারি যন্ত্রপাতি (Serveicillance equipment), তবে এটি নজর রাখতে সক্ষম কোনো যুদ্ধাঞ্চল বা দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলের ওপর। কিংবা এটি বহন করতে সক্ষম বিশ্ব থেকে বিচ্ছন্ন কোনো জনগোষ্ঠীর জন্য যোগাযোগ সংযোগ গড়ে তোলার কোনো কোনো যোগাযোগপ্রযুক্তিপণ্য। যেমন ধরা যাক, কোনো অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সে অঞ্চলের সব সেলফোন টাওয়ার বিধ্বস্ত করে দিল। তবে এই ইনস্ট্যান্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা অবকাঠামো তাৎক্ষণিকভাবে সেলফোন যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে সেখানে সেলফোন যোগাযোগ ফিরিয়ে আনতে পারবে। STS-111 Instant Infrastructere কাজ করে একটি ভাসমান উপগ্রহ সুবিধা হিসেবে। জরুরি দুর্যোগ মুহূর্তে এটি দুর্যোগ এলাকায় জরুরি সহায়তা দিতে পারে। এটি কাজ করে গ্যাসের আমত্মঃপরিবর্তনের মাধ্যমে। এর মাথায় থাকে সাধারণ বায়ুর মোড়কের ভেতরে হিলিয়াম। হিলিয়াম থাকে একটি থলিতে। বিদ্যুতের জন্য থলের পেছনের তিনটি ভাগে থাকে ইথেন। এটি অনেকটা বান মাছের (বাইম মাছের) আকারের। ফলে এটি অনেক কিছু এড়িয়ে চলতে সক্ষম। এটি যখন উপরে ওঠে তখন থলির চারপাশের বায়ু ঠেলে হিলিয়াম ও ইথেন গ্যাস সম্প্রসারিত হয়। এর অর্থ হচ্ছে, এই উড়োযন্ত্রটি উপরে উঠতে কিংবা নামতে পারে কোনোরকম বিস্ফোরণ ছাড়াই। এটি সেল ও স্যাটেলাইট ফোনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বহন করে নিয়ে সব সামরিক বাহিনী জাতিসংঘ ও রেডক্রস ব্যক্তিদেরকে ২০ মাইলের ব্যাসের মধ্যে ফোন ও ইন্টারনেট সুযোগ দিতে পারে। এমনি একটি উড়োযন্ত্রের দাম একেবারে কম নয়। এর আনুমানিক দাম হবে ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখ ডলার। এটি উদ্ভাবন করেছে Sanswire Corp।

থ্রিডি বায়োপ্রিন্টার



এ পর্যন্ত যত যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, কার্যত ওই সব যন্ত্রেরই খুচরো যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। অতএব কেনো মানবযন্ত্রের খুচরো যন্ত্রাংশ পাওয়া যাবে না? সানদিয়েগোভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান Invetech এবং Organovo উদ্ভাবন করেছে একটি থ্রিডি বায়োপ্রিন্টার, যা একসময় ব্যবহার করা যাবে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরির জন্য। ওই অঙ্গপ্রতঙ্গ সার্জারির মাধ্যমে মানবদেহে স্থাপন করা যাবে। এই প্রিন্টার এরই মধ্যে ধমনী বা শিরা সৃষ্টি করতে সক্ষম। এই বায়োপ্রিন্টারকে কেউ কেউ ‘হিউম্যান অরগ্যানপ্রিন্টার’ বলেও ডাকছেন। এই যন্ত্রের উদ্ভাবকেরা বলছেন, এই যন্ত্র দিয়ে প্রিন্টেড আর্টারি বা ধমনী আগামী ৫ বছরের মধ্যে হার্ট বাইপাস সার্জারিতে ব্যবহার করা যাবে। এই থ্রিডি বায়োপ্রিন্টারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা প্রায় সব ধরনের কোষ বা সেলকে ইচ্ছেমতো থ্রিডি আকার দিতে পারেন। যন্ত্রটি খুবই ছোট, একে একটি জীবাণুমুক্ত বায়োসেফটি কেবিনেটে রাখা যায়। এর রয়েছে দুটি প্রিন্টহেড : একটি জেল (gel) স্প্রে করে। দেহযন্ত্রাংশ তৈরির উপাদান হিসেবে কাজ করে ওই জেল। অপর প্রিন্টহেডটি ব্যবহার হয় হাউড্রোজেল স্থাপনের কাজে। লিভার, কিডনি, দাঁত ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এ প্রিন্টার দিয়ে তৈরি করে প্রতিস্থাপন করা যাবে। এজন্য আর কোনো ড্রেসারের অপেক্ষায় থাকতে হবে না। এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেহে সহজেই মাননসই হবে, কারণে এগুলো সরাসরি তৈরি করা হয় রোগীর কোষ থেকে। এই থ্রিডি বায়োপ্রিন্টারের রয়েছে একটি সফটওয়্যার ইনটারফেস। এর মাধ্যমে প্রকৌশলীরা টিস্যু গঠনের একটি মডেল তৈরি করতে পারেন।

মশা লেজার ও ম্যালেরিয়া রোধী মশা

মানুষের জন্য বিশ্বে সবচেয়ে বিরক্তিকর ক্ষুদ্র প্রাণী হচ্ছে মশা। মশার জ্বালায় বিশ্বের সর্বত্র মানুষ এখনো রাতের বেলা ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। শুধু এখানেই শেষ নয়। এখনো বিশ্বে প্রতিবছর ২৫ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়া রোগের শিকার হয়। মশার কামড়ে এ ম্যালেরিয়া হয়। এসব ম্যালেরিয়া রোগীর মধ্যে বছরে মারা যায় ১০ লাখ রোগী। এদিকে মাইক্রোসফটের সাবেক নির্বাহী নাথান মিহরবোল্ড এখন উদ্ভাবন করেছেন এক ধরনের লেজার, যা অন্য কোনো পোকামাকড় বা মানুষের ক্ষতি না করেই মশার ওপর হামলা চালাতে পারে। এই লেজার মশার শরীর ও পাখায় আক্রমণ চালায় এবং মশাকে লেজার বিকিরণের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়। এভাবে মশা ধ্বংস জনস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ মশা দমনপদ্ধতি ঝামেলাহীন ও নিরাপদ।



অপরদিকে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে এমন এক ধরনের মশা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা প্লাজমোডিয়াম প্যারাসাইটমুক্ত। এই প্যারাসাইট বা পরজীবীই ম্যালেরিয়ার জীবাণু বাহক। মশা মানুষের দেহে কামড় দেয়ার সময় তা মানবদেহে প্রবেশ করলে মানুষ ম্যালেরিয়া রোগের শিকার হয়। এখন এই বিজ্ঞানীদের পরবর্তী কাজ হচ্ছে নতুন ধরনের মশা তৈরি করা, যা সাধারণ মশার তুলনায় শক্তিশালী। আর এসব শক্তিশালী মশা প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হবে, যাতে এসব মশা ১০ বছরের মধ্যে বন্য মশাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এর ফলে এক সময় এসব ম্যালেরিয়া জীবাণুমুক্ত মশা প্রতিস্থাপিত হবে বন্য মশা থেকে।

বডি পাওয়ার্ড ডিভাইস



বডি পাওয়ার্ড ডিভাইস। নাম থেকে স্পট এটি হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস বা যন্ত্র, যা চলবে মানুষের শরীর উৎপাদিত বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, আমরা যখনই কোনো কিছু করি তখন শরীরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। একবার শ্বাস নিলে শরীরে সৃষ্টি হয় ১ ওয়াট বিদ্যুৎ। হাঁটার সময় ১টি স্টেপ বা পদক্ষেপ থেকে উৎপাদিত হয় ৭০ ওয়াট বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎকে যদি আমরা কাজে লাগিয়ে কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালাতে পারি, তাহলে সত্যিই মজার ব্যাপার হবে। বিশেষ করে বিদ্যুতের এই আকালের দিনে এমনটি হলে তো আনন্দের ব্যাপারই হবে। চলতি বছরে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল ম্যাকআলপাইন ও তার সহকর্মীরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন কী করে লোকোমেশন তথা মানুষের ভ্রমণশীলতাকে বিদ্যুতে রূপান্তারিত করে বিদ্যুতে রূপান্তর করা যায়। আর এ কাজটি এরা করবেন একটি ফ্লেক্সিবল বায়োকম্পাটিবল রাবারের মতো বস্ত্ততে plezoelectric erystals এমবেডিং করে। যখন এই বস্ত্ত বাঁকা হবে বা গঠন পরিবর্তন করবে তখন ওই ক্রিস্টাল বিদ্যুৎ জ্বালানি তৈরি করবে। ধরুন এই ক্রিস্টালটি জুতায় লাগিয়ে দেয়া হলো, কিংবা ওই ক্রিস্টাল সরাসরি শরীরে জুড়ে দেয়া হলো, তাহলে ব্যক্তির চলাচলের সময় ওই ক্রিস্টাল যে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হবে, তা দিয়ে আমরা পার্সোনাল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কিংবা ইন্টারনাল মেডিক্যাল ডিভাইস চালাতে পারব। তথ্যপযুক্তি জগতের নানা পণ্য চালানো যাবে শরীর থেকে পাওয়া এ বিদ্যুৎ দিয়ে। এদিকে টেলিযোগাযোগ প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান Orange সূচনা করেছে Orange Power Wellis নামের একটি প্রটোটাইপ। এটি একটি রাবারের বুট জুতা। এটি শরীরের তাপ (heat) বিদ্যুতে রূপান্তর করতে পারে। ব্রিটেনের গ্লাসটনবারি একটি ফেস্টিভালে প্রথমবারের মতো এই জুতার ডেমো প্রদর্শিত হয়। এর বর্তমান মডেলের জুতা পরে বারো ঘণ্টা হাঁটলে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, তা দিয়ে একটি সেলফোন চার্জ করা যায় এক ঘণ্টার জন্য। অবশ্য স্বল্প জায়গায় যদি প্রচুর মানুষকে জড়ো করা যায়, তবে দেহ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তাদের চলাচলের প্রয়োজনও হবে না। প্যারিসে প্রকৌশলীরা শরীরের উষ্ণতাকে ব্যবহার করে মেট্রো সাবওয়ের পাবলিক হাউজিং প্রজেক্ট উত্তপ্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১১ সালের মধ্যে Metro Heating System এই হাউজিং প্রজেক্টের হিটিং সিস্টেমের মাধ্যমে সেখানকার কার্বন উদগীরণ এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

পাওয়ার অ্যাওয়ার কর্ড



‘পাওয়ার অ্যাওয়ার কর্ড’ তথা ‘বিদ্যুৎসচেতন তার’ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমরা সবাই চাই এনার্জি এফিশিয়েন্ট হতে। সোজা কথা আমরা চাই দক্ষতার সাথে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে। কিন্তু বিদ্যুতের মিটার দেখে আমরা বলতে পারি না, মিনিটে মিনিটে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। সুইডেনের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারেকটিভ ইনস্টিটিউট’ একটি প্রযুক্তি ও ডিজাইন উদ্ভাবন করেছে এক নতুন ধারণার ওপর ভর করে। এর মাধ্যমে আপনি দেখতে পাবেন কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র আসলে কখন কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এজন্য আপনাকে ব্যবহার করতে হবে ‘পাওয়ার অ্যাওয়ার কর্ড’ বা ‘বিদ্যুৎসচেতন তার’। এই তার ক্যাবলের মধ্যে এমবেড করে দেখা হয়। এ তার তত বেশি উজ্জ্বল দেখাবে, যত বেশি বিদ্যুৎ এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কোনো যন্ত্রে ব্যবহার হলে।

আইরাইটার



আপনার মগজ সক্রিয়। কিন্তু আপনার শরীরটা সক্রিয় নয়, নিষ্ক্রিয়। এই যদি হয় আপনার অবস্থা, তাহলে আপনি অন্যদের সাথে কী করে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন? এক্ষেত্রে আপনার সহায়তার জন্য এগিয়ে আসবে EyeWriter। কম দামের Eye-Tracking glass আর ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই আইরাইটার। যেকোনো ধরনের নিউরোমাসকুলার সিনড্রোমের শিকার মানুষ এই আইরাইটার ব্যবহার করে চোখ নড়াচড়া করে লিখতে ও আঁকতে পারবে, যা পর্দায় ভাষান্তরিত হয়ে দেখা যাবে। ইবেলিং গ্রুপ, নট ইমপসিবল ফাউন্ডেশন এবং গ্র্যাফিথি রিসার্চ ল্যাব উদ্ভাবন করেছে এই আইরাইটার। এই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করা হয়েছে Tony ‘Tempt’ Quan-এর জন্য। টনি ‘টেম্পট’ কুয়ান হচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলসভিত্তিক একজন গ্র্যাফিথি আর্টিস্ট। ২০০৩ সালে তার Lou Gehrig রোগ ধরা পড়ে। আইরাইটার ব্যবহার করে তিনি প্যারালাইজড হওয়ার পর এই প্রথম যা ইচ্ছে তাই আঁকতে পারছেন। কুয়ান বললেন, এটি মনে হচ্ছে ৫ মিনিট পানির নিচে থাকার পর পানির উপরে ওঠে একটি নিশ্বাস হওয়ার মতো অবস্থা।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : golapmunir@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
০৩ জানুয়ারী ২০১১, ১:০১ AM
৩১ জানুয়ারী ২০১১, ১১:০১ PM
Thank you so much
২৭ জানুয়ারী ২০১১, ১২:০১ PM
২৯ জানুয়ারী ২০১১, ৪:০১ AM
খুব খুব ভালো লেগেছে। পুরোটা পড়তে গিয়ে কোথাও আটকে যায়নি। উপস্থাপনায় মুন্সীয়ানা রয়েছে।
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস