• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সাইবার যুদ্ধে উইকিলিকসে নবদিগন্ত
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো : ফেরদৌস হোসেন
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
উইকিলিকস
তথ্যসূত্র:
নতুন দিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সাইবার যুদ্ধে উইকিলিকসে নবদিগন্ত

আধুনিক বিশ্বে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যত বাড়বে, গণতন্ত্রও তত সুসংহত হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অকল্পনীয়। আন্তর্জাতিক বিশ্বে উইকিলিকস নতুন ধারার সংবাদ পরিবেশন করে গণমাধ্যমে এক নবদিগন্ত সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে আমেরিকা ও তার দোসর বা পুঁজিবাদী বিশ্ব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ওয়াদা করে বিশ্বব্যাপী অগণতান্ত্রিক উপায়ে দেশে দেশে অন্যায়, অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে জঘন্য নজির সৃষ্টি করছে, জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জ বা উইকিলিকস তাদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক।



এক সময় পুঁজিবাদী বিশ্ব বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সমাজতন্ত্র ছিল বিরাট আতঙ্ক, সে আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই তাদেরই সৃষ্টি মুসলিম জঙ্গিবাদের বেড়াজালে নিজেরাই আটকে যায়। জঙ্গিবাদ নির্মূলের নামে ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে জীবন-মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিচারের নামে আবু গারিব, গুয়ানতানামো বে-তে ঘটাচ্ছে মানবিকতার চরম বিপর্যয়। অন্যদিকে পাপকর্মের লাখ লাখ দলিলপত্র জনগণের ধরাছোঁয়ার তথা জানার বাইরে রেখে দিয়েছে বছরের পর বছর। কিন্তু সময়ের সাহসী সৈনিক অ্যাসাঞ্জ ও একটি মাত্র ছোট্ট ভার্চুয়াল মাধ্যম প্রকৃত গণতন্ত্র ও বিশ্বায়নের পথকে আরো একধাপ এগিয়ে নেয়ার জন্য অন্যায়কে বিশ্ববাসীর সামনে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যে সংগ্রামের জন্য একজন অ্যাসাঞ্জ মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে প্রস্ত্তত। জুলিয়ানের আত্মসমর্পণের পরও থেমে নেই তার কর্মযজ্ঞ। দেশে দেশে জুলিয়ান সমর্থকদের বিক্ষোভ, গণমাধ্যমের ধারালো প্রতিবাদ-সমালোচনালিপি সত্যিই প্রমাণ করে, প্রকৃত গণতন্ত্রকামী মানবতাবাদী সৈনিকেরা লড়ে যাবেন আমৃত্যু।

বিক্ষোভ সমাবেশ ও সমর্থন

নথি প্রকাশের পর থেকেই উইকিলিকসকে বিশ্ববাসী স্বাগত জানিয়ে আসছে। অ্যাসাঞ্জ গ্রেফতারের পর থেকেই বিশ্ব গণমাধ্যম ও সচেতন মহল দেশে দেশে নিন্দা ও বিক্ষোভ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা অ্যাসাঞ্জের সমর্থনে বলেন- তার আটকাদেশ অবৈধ। মজার বিষয় হচ্ছে উইকিলিকসে রাশিয়াকে একটি মাফিয়া রাষ্ট্র বলে তারবার্তা প্রকাশিত হয়েছিল এবং আরেক তারবার্তায় রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে আলফা ডগ বলে সমালোচনা করেছে। কিন্তু পুতিন নিজেই জুলিয়ানের আটকাদেশকে অগণতান্ত্রিক বলে অভিহিত করেছেন। জুলিয়ানের নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়া প্রথমদিকে জুলিয়ানের কর্মকান্ডকে বিরোধিতা করলেও ধীরে ধীরে নমনীয়তা প্রদর্শন করছে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেভিন রাড (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেন- কোনো কূটনৈতিক তারবার্তা ফামের ঘটনায় উইকিলিকসকে কোনোভাবেই দোষারোপ করা যায় না, যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বল তথ্য-ব্যবস্থাপনাই এর জন্য দায়ী। রয়টার্সে দেয়া সাক্ষাৎকারেও তিনি তথ্য ফাঁসের ঘটনাকে প্রথম ব্যক্তির দায় বলে মনে করেছেন। বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী নোয়াম চমস্কি জুলিয়ানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চমস্কির স্বাক্ষরিত একটি খোলা চিঠিতে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে আপনি এই বলে ঘোষণা করুন, যাতে অ্যাসাঞ্জ বিষয়ে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয় এবং সব আইনী অধিকার নিশ্চিত হয়। যদিও প্রথমদিকে অ্যাসাঞ্জ বা উইকিলিকস নিয়ে তিনি বিব্রত বোধ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি অ্যাসাঞ্জের প্রতি মৌন সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। এদিকে আরেকটি মজার সমর্থন ব্যক্ত করে রাশিয়ার ক্রেমলিনের নভোস্তিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন- ক্রেমলিনের মতে, পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধান ও আন্তর্জাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের উচিত অ্যাসাঞ্জকে সর্বাত্মক সহায়তা করা। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে বিশ্বের গণতন্ত্রকে সুসংহত করা। দি বেইজিং ডেইলির সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারটি বিতর্কিত মানবাধিকার কর্মী জিয়াবাওকে না দিয়ে অ্যাসাঞ্জকে দেয়া উচিত ছিল। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সাহসিকতার জন্য অনেক বিজ্ঞজন মন্তব্য করেন, জুলিয়ান এ যুগের চে গুয়েভারা। শুধু মন্তব্য নয়, জুলিয়ানই যে বর্তমান বিশ্বে চে গুয়েভারা তা হারে হারে টের পাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। চে যেমন পুঁজিবাদী বিশ্বের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়ে গেছেন, ঠিক জুলিয়ানও অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে তথ্যযুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।



তথ্যযুদ্ধ চলবেই

তারবার্তা ফামের ঘটনাকে জুলিয়ান তথ্যযুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ চলতেই থাকবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। একাধিক ওয়েবে দেখা যায়, উইকিলিকস কর্তৃপক্ষের কাছে যে পরিমাণ নথি রয়েছ, তা যদি প্রতিদিন ২০টি করেও প্রকাশ করে, তবে ৩৫ বছর ৬ মাস সময়ে শেষ হবে। যুক্তরাষ্ট্র উইকিলিকসের সাথে পেরে উঠতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রে উইকিলিকসের হোস্টিং ডোমেইন এভরি ডিএনএস ডট নেট বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মাত্র ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে অন্য সার্ভারের মাধ্যমে তা আবার চালু হয়। জুলিয়ানের উত্তরসূরিরা তথা হ্যাকার গ্রুপ ও ভক্তরা ইউরোপ ও অন্যান্য স্থানে আরো বিশটির মতো সার্ভার জোগাড় করে রেখেছেন। কমপিউটিং হ্যাকার গ্রুপ এনোনিমাস তথ্যযুদ্ধের পক্ষে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। অপারেশন পে-ব্যাক আন্দোলনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের (যারা উইকিলিকসের বিপক্ষে কাজ করছে) ওয়েবে হামলা চালিয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি ওয়েবপেজ হ্যাকিং করার সফটওয়্যার ‘বটনেট টুল’ লাখ লাখ বার ডাউনলোড করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। বটনেট টুল দিয়েই মূলত ওয়েবপেজ হ্যাক করা হয়। কোল্ডব্লাড নামে এনোনিমাসের এক হ্যাকার বলেন, উইকিলিকস হচ্ছে একটি যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে জনসাধারণ ও সরকারের মাঝে যুদ্ধ চলছে। আমরা ইন্টারনেট মুক্ত ও স্বাধীন রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু বিভিন্ন দেশের সরকার স্বাধীনতাকে রুখতে চাচ্ছে।



বিভিন্ন ওয়েবসাইট মাধ্যমে জানা যায়, উইকিলিসকের হ্যাকার ভক্তরা একযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাইটসহ সব ওয়েবসাইটে হামলা করার বড় ধরনের পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে উইকিলিকস সমর্থকেরা শত শত মিরর ওয়েবসাইট তৈরি করছে, যা উইকিলিকসের একই তথ্য নিয়ে গড়া। বর্তমানে উইকিলিকসের তথ্যভান্ডার এত শক্তিশালী হয়েছে যে, নথি প্রকাশের অব্যাহত প্রক্রিয়া কোনোদিনই ইন্টারনেট দুনিয়া থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। কারণ, মিরর সাইটগুলো হুবহু উইকিলিকস সাইটের মতোই দেখতে। এছাড়াও আমরা আগেই জেনেছি উইকি কর্তৃপক্ষের সাথে রয়েছে বিশ্বখ্যাত পাঁচটি পত্রিকা যার মধ্যে ল্য মন্ডে, ডি মিরগেল, দ্য গার্ডিয়ান ইত্যাদি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, জুলিয়ানের ঘোষিত ‘ইনফো ওয়ার’ চলতেই থাকবে।

উইকির তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা

প্রথম থেকেই উইকিলিকসের সার্ভার নিয়ে সবার মাঝে একটি জিজ্ঞাসা ছিল। পরে ওয়েবের মাধ্যমে এর সার্ভার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। বাগদাদে অন্যায়ভাবে বোমা বর্ষণের দৃশ্যচিত্রটি প্রকাশ করা হয়েছিল আইসল্যান্ডের রিকজাবিকের অদূরে স্থাপিত একটি ছোট সার্ভার থেকে। কিন্তু ওয়েবসাইটের বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, তাদের মূল সার্ভারটি স্টকহোমে অবস্থিত। মাটির প্রায় ৩০ মিটার নিচে গ্রানাইট (পাথরের পাহাড়) পাথরে আবৃত। স্থানটি মূলত কোল্ড ওয়ারের সময় সিভিল ডিফেন্স সেন্টার হিসেবে, যা মূলত নিউক্লিয়ার বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহার হতো। তৎকালীন সময়ে মিলিটারিদের একটি সাংকেতিক নামেই পরিচিত ‘পাইয়োনান ওয়াইট মাউনটেন্ট’ নামের এই ডাটা সেন্টারটি। স্থানটির নাম হচ্ছে পাইয়োনান। এখানে উইকিলিকসের ১৫ জন প্রোগ্রামার সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। সুইডেনের ‘বেন হাফ’ নামের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি মূলত ১৯৯৪ সালে প্রথম এখানে তাদের সার্ভার স্থাপন করে। উইকিলিকসে আফগান যুদ্ধের নথি ফাঁসের পর জুলিয়ান এখানে তাদের সার্ভার স্থাপনে মনোযোগী হন। সুইডেনকে মূল সার্ভার স্থাপনে বেছে নেয়ার কারণ হলো- পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে তথ্য প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে এবং গোপন তথ্য ফাঁসের জন্য সুইডেনে কোনো আইনী ঝামেলায় পড়তে হবে না। ২০০৭-০৮ সালের দিকে পাইনেন সার্ভারটিকে রেলোভেশন করা হয়। আবার ৪ হাজার কিউবিক মিটার পাথর ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে জায়গা বের করে নেয়া হয়। উইকিলিকস এখানে বর্তমানে ১২ হাজার বর্গফুটেই সুসজ্জিত এবং পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ সার্ভার তৈরি করেছে। এখানে রয়েছে ১৬ ইঞ্চি পুরুত্বে ৪০ টন ওজনের ইস্পাতের তৈরি প্রবেশ দরজা। জার্মান সাবমেরিনের পাওয়ার ইঞ্জিন দিয়ে দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাওয়ার হাউস। বাঙ্কারটি ঠান্ডা রাখার জন্য বিশ্বখ্যাত বাল্টিমোর কোম্পানির কুলিং ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। প্রোগ্রামাররা কাজ করতে যাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেজন্য তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা, গাছপালা ও প্রায় তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সামুদ্রিক মাছের অ্যাকুরিয়াম।

ফাঁস করা আলোচিত নথি

০১. মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের দেশসহ জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিদের ওপর গোপন নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

০২. গুয়ানতানামো বে কারাগারে ক্যাম্পডেলটায় ২০০৭ সালের বন্দী নির্যাতনের নথি প্রকাশ করে, যা আধুনিক সভ্য সমাজে চরম বর্বরতম ঘটনা।

০৩. যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে তাদের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করে। তারা মনে করে অর্থনৈতিকভাবে বিপদগ্রস্ত পাকিস্তানী সরকারি কর্মকর্তারা অর্থের লোভে আল কায়েদার কাছে পরমাণু সরঞ্জাম বা নথি বিক্রি করতে পারে।

০৪. অন্য আরেকটি নথিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে হিটলারের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

০৫. সৌদি বাদশা ইরান আক্রমণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তাগিদ দেন।

০৬. বাগদাদ বিমান হামলা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। সেই বাগদাদ বিমান হামলার ভিডিও, যেখানে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকসহ প্রায় ২ ডজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। মূলত এই দৃশ্যচিত্রটি ফাঁস করার পরপরই উইকিলিকস লাইমলাইটে চলে আসে।

০৭. আফগান ওয়ার ডায়েরির প্রায় ১ লাখ নথি ফাঁস করে উইকিলিকস।

০৮. সৌদি রাজপরিবারের অসংযত জীবনযাপনের বিস্তারিত লাইফ স্টাইল তুলে ধরা।

০৯. আরেকটি তারবার্তায় জানা যায়, সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুর সময় তাকে চরম ভৎর্সনা করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

১০. আরেকটি তারবার্তায় ইয়েমেনের একটি গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক নিরীহ নারী-শিশুকে মার্কিন প্রশাসন বোমা মেরে হত্যা করে, যার দায় স্বীকার করে ইয়েমেন সরকার।



উইকিলিকসে বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক দিকটি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক বিশ্ব তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ কেনো এত গুরুত্বপূর্ণ। ফাঁস করা প্রায় ২ হাজার নথিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। কিন্তু ৭-৮টি তারবার্তায় সরাসরি বাংলাদেশ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এক তারবার্তায় দেখা যায়, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ড. ফখরুদ্দীনকে সামরিক রাজনীতির হুকুম পালনকারী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ফখরুদ্দীন-মনমোহনের আলোচনায় ভারতীয় পক্ষের কূটনৈতিক মোহন কুমার উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, মনমোহন সিংয়ের অনেক প্রশ্ন তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান এবং তার সরকারের কোনো স্পষ্টনীতি ব্যাখ্যা করতে পারেননি। মোহন কুমার আরো জানান, ভারত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়েই বেশি চিন্তিত। আরেকটি তারবার্তায় বলা হয়, হরকত-উল জিহাদকে রাজনীতিতে প্রবেশে সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা করেছিল প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই)। হরকত-উল জিহাদের উচ্চপর্যায়ের নেতারা ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। দলটির মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করা। মার্কিন দূতাবাস আইজিপির কঠোর বিরোধিতা করে। এদিকে ডিজিএফআইয়ের পক্ষ থেকে এই নথি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেহেতু তখন রাজনৈতিক সরকার ছিল না, আসলে কি হয়েছিল তা স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। অপর একটি তারবার্তায় দেখা যায় কুয়েতভিত্তিক সংস্থা ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটিজ নামের এনজিও’র কর্মকান্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের নারী সংগঠনটি বাংলাদেশের জঙ্গিবাদকে সহায়তা করছে। অন্য একটি তারবার্তায় দেখা যায়, ব্রিটিশ হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর অ্যালেক্স হল বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের সব সহযোগিতার বিষয়টি কঠোর গোপনীয়তায় রাখার কথা বলেন, যাতে জনসাধারণ নির্বাচনকে তিন দেশের ষড়যন্ত্রের ফসল মনে না করে।

বহুল আলোচিত র্যা ব বাহিনী নিয়ে এক তারবার্তা দ্য গার্ডিয়ান প্রকাশ করে। এখানে বলা হয়-বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটানো র্যােবকে যুক্তরাজ্য সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছে। দ্য গার্ডিয়ানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশী ডেথ স্কোয়াড ট্রেইনড বাই ইউকে গভর্নমেন্ট’। এখানে যুক্তরাজ্য র্যা বকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্য মানবাধিকার বিষয় ছাড়া অন্য প্রশিক্ষণ দেবে না। অন্য কোনো প্রশিক্ষণ হবে যুক্তরাজ্যের আইনবহির্ভূত কাজ। বিবিসির বরাতে আরেক বার্তায় জানা যায়, বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাসের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টিকে জানানো হয়, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে র্যা ব বাহিনী কয়েক বছরের মধ্যেই এফবিআই’র সমকক্ষ হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের তারবার্তার বরাতে জানা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলা র্যাববের উইং কমান্ডার (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) এম সোহাইলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘র্যা বের কর্মকান্ড সবসময় আইন মেনেই পরিচালনা করা হয়’।

এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিশ্ব রাজনীতির কূটনৈতিক ভাষা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কল্যাণে একটু হলেও পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়েছে। তথাকথিত গণতন্ত্রের মহানায়কদের উইকিলিকসের মাধ্যমে তুলোধুনো করে ছেড়েছেন। আজ পর্যন্ত একটি তারবার্তারও প্রতিবাদ করতে পারেনি যে এটা ভুল। বরং দেখা যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদেরও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বোঝা উচিত বিশ্বায়নের যুগে অন্যায় কখনো ধামাচাপা দেয়া যায় না আর যাবেও না। বিশ্বব্যাপী মার্কিন আগ্রাসনের যে দাঁতভাঙ্গা তথ্য অ্যাসাঞ্জ প্রকাশ করেছেন, এতে করে এখনই তাদের অনুধাবন করা উচিত- বিশ্বে মোড়লীপনার দিন শেষ হয়ে আসছে। ওদিকে অ্যাসাঞ্জকে যদি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও পার পাবে না। বিশ্বসংবাদ মাধ্যমের বিজ্ঞজনেরা মনে করেন, জুলিয়ান নতুন ধারার সংবাদ উপস্থাপন করে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা অতুলনীয়।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : ferdovsbdvaga77@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস