ইন্টারনেটে বিচরণকারীরা মূলত তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধানে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য একটা সময় ব্যয় করেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই ওয়েব সার্ফ করে থাকেন গতানুগতিক ধারায় বা বলা যায় ব্যবহারকারীরা যে ব্রাউজারে অভ্যস্ত, সেই ব্রাউজার দিয়ে ওয়েব সার্ফ করে থাকেন বছরের পর বছর ধরে, কোনো সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় না এনেই। অথচ বর্তমানে নানা সুবিধাসম্বলিত অসংখ্য ব্রাউজার রয়েছে যেগুলো আপনার ওয়েব সার্ফিংয়ের গতি অনেক বাড়িয়ে দেবে নিঃসন্দেহে বলা যায়। ভালো ব্রাউজার হলেই হবে না, সেই সাথে জানা থাকতে হবে ওয়েব সার্ফিংয়ের সঠিক কৌশল ও রীতিনীতি। যেভাবে ওয়েব সার্ফিংয়ের গতি বাড়াতে পারবেন তা নিম্নরূপ :
ওয়েব ব্রাউজার পরিবর্তন
অনেকেই এখনো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহার করেন শুধু অভ্যাসের কারণে। তবে অন্য ওয়েব ব্রাউজারে স্থানান্তর করার মাধ্যমে পেতে পারেন ভিন্ন স্বাদ এবং পাবেন কাজের গতি বাড়ানোর অনেক উপায়।
কিছু কিছু ওয়েব ব্রাউজার যেমন গুগল ক্রোমকে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে সার্ফিংয়ের গতি বাড়ানোর জন্য। এগুলো একই গতিতে পেজ ডাউনলোড করতে পারে, তবে চমৎকারভাবে টিউন করা জাভাস্ক্রিপ্ট ইঞ্জিনসহ এটি দ্রুতগতিতে আবির্ভূত হয়।
ওয়েবসাইট বিজ্ঞাপন ডিজ্যাবল
অনেক ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন থাকে, যা ভিডিও ও অ্যানিমেশন ব্যবহার করে। এতে পেজের ফাইল ডাউনলোড করে ভিউ করলে ফাইলের সাইজ বেড়ে যায়। ফায়ারফক্স ব্যবহারকারীরা এসব ফাইল ফিল্টার করতে পারেন ফ্ল্যাশব্লক অ্যাড-অন ব্যবহার করে। এজন্য tool মেনুতে ক্লিক করে Add-ons বেছে নিয়ে Get Add-ons সিলেক্ট করতে হবে। এরপর সার্চ বক্সে Flash block টাইপ করে এন্টার চাপতে হবে। এরপর পরবর্তী স্ক্রিনে Add to Firebox-এ ক্লিক করতে হবে।
ফ্ল্যাশব্লক এনাবল্ড ফায়ারবক্স পেজে ডিসপ্লে বা ডাউনলোড করবে না ফ্ল্যাশ উপাদান। বরং Fসহ থাকবে একটি খালি জায়গা। যদি এই স্পটে কোনো বিজ্ঞাপন থাকে, তাহলে তা রেখে দিন। তবে যদি কোনো ধরনের ভিডিও থাকে, তাহলে বক্সে ক্লিক করলে এটি স্বাভাবিকভাবে লোড হবে। এভাবে অনেক পেজ দ্রুতগতিতে লোড করতে পারবেন।
ব্যবহার করুন সাইটের মোবাইল ভার্সন
ওয়েবসাইটের জাঙ্ক এড়িয়ে যাবার আরেকটি উপায় হলো মোবাইল সাইটে ভিজিট করা, যা মূলত ডিজাইন করা হয়েছে মোবাইল ফোন স্ক্রিনের জন্য এবং ডাউনলোড করার জন্য কম ফাইল রয়েছে।
কিছু সাইটে থাকে লিঙ্ক, যা মোবাইল ভার্সন হিসেবে পরিচিত। এটি কাটছাঁট করে ডিসপ্লে করে। তবে ওয়েব অ্যাড্রেস www-এর পরিবর্তে ‘m’ লেটার দিয়ে প্রকাশ করে, যেমন- m.bbc.co.uk বা http://m.guadian.co.uk এবং এখানে মোবাইল সাইট দেখতে পারবেন বা মোবাইল সাইটে কিভাবে পৌঁছতে পারবেন তার নির্দেশাবলী পাবেন। সাধারণত এই সাইটগুলো কয়েক সেকেন্ডে লোড হয়।
আরএসএস রিডার ব্যবহার
আরএসএস (RSS) তথা রিয়েলি সিম্পল সিন্ডিকেশন এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ওয়েবসাইট যখন নতুন কনটেন্ট পাবলিশ করে তখন ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে দেয়। আরএসএস কখনো কখনো শুধু শিরোনাম তথা হেডিং লিস্ট করে। অন্যান্য সাইটে এভাবে সব আর্টিকেল তুলে ধরে। ডান দিকে কমলা বর্ণের আরএসএস ইমেজ আইকন পেজে আবির্ভূত হতে পারে। তবে আধুনিক ওয়েব ব্রাউজার যেমন- ফায়ারফক্স, এটি ডিসপ্লে করে অ্যাড্রেসবারে।
ব্রডব্যান্ড সংশ্লিষ্ট
বর্তমানে বেশ কিছু প্রোগ্রাম পাওয়া যায় যেগুলো দাবি করে কমপিউটারের গতি বাড়াতে পারে। যেমন- অনস্পিড (Onspeed) প্রোগ্রাম। এই ইউটিলিটি টেক্সটকে কম্প্রেস করে এবং ইমেজের মান কমিয়ে দেয়, যাতে ডাউনলোডের গতি দ্রুততর হয়, তবে কোনো পার্থক্য বুঝতে পারবেন না যদি স্ট্রিমিং ভিডিওসম্বলিত সাইটভিউ করেন। স্পিড বুস্ট নামের প্রোগ্রাম দিয়ে কিছু গতি বাড়ানো যায়।
ব্রাউজার ক্যাশ পরিষ্কার
সব ব্রাউজারই ভিজিট করা ওয়েবপেজের আর্কাইভ রাখে এবং মাঝে মাঝে ব্রাউজার খালি করা উচিত। ফায়ারফক্সে Tools মেনু থেকে Clear বেছে নিন সাম্প্রতিক হিস্টোরি পরিষ্কার করার জন্য। এবার Details-এ ক্লিক করে নিশ্চিত হয়ে নিন Cache পরিষ্কারের ব্যাপারে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৮-এ Safely-তে ক্লিক করলে পাবেন সংশ্লিষ্ট অপশন। এরপর পাবেন Temporary Internet Files and History। এখান থেকে আপনি Temporary Interpnt Files অপসারণ করতে পারবেন।
ব্যবহার না হওয়া প্রোগ্রাম বন্ধ
বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম রানিং রেখে একই সাথে ওয়েব ব্রাউজ করলে সবকিছু ধীর হয়ে যেতে পারে এবং একইভাবে অনেক বেশি পেজ বা ব্রাউজার ট্যাব ওপেন রাখলেও গতি কমে যেতে পারে। দীর্ঘ ফাইল ডাউনলোড করলেও ব্রাউজিং স্পিডকে প্রভাবিত করে, যেহেতু ব্রডব্যান্ড সংযোগ তথ্য গ্রহণের চেয়ে তথ্য পাঠানোর গতি কম। কেননা, ফাইলের প্রতিটি অংশ যা ডাউনলোড হচ্ছে তার জন্য প্রাপ্তিস্বীকার করতে হয়। এজন্য পিসিকে অপেক্ষা করতে হয় এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রাপ্তিস্বীকার সেন্ড করার জন্য। সুতরাং ইন্টারনেট ব্রাউজিং স্পিড যদি ধীর হয়, তাহলে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম বন্ধ রেখে কাজ করুন।
ডিএএএস সার্ভার পরিবর্তন
যখনই কোনো পিসি ওয়েবসাইটে ভিজিট করে, তখনই এর ইউআরএল (URL) নিউমেরিক্যালি ইন্টারনেট অ্যাড্রেসে পরিণত হয়। এ কাজটি করার জন্য সিস্টেমে অ্যাড্রেসবারে লক্ষ করুন, যা ডিএনএস (DNS) সার্ভার হিসেবে পরিচিত। এটি ফোনবুকের মতো কাজ করে। এটি নাম বিবেচনা করে এবং বিপরীতে ইন্টারনেট অ্যাড্রেস দেয়।
পিসি ডিএনএস সার্ভার ব্যবহার করে, যা অপারেট করে আইএসপি। কখনো কখনো এগুলো ধীরগতিতে রান করতে পারে। গুগল রান করে পাবলিক ডিএনএস সার্ভার, যা সবার কাছে রয়েছে এবং এগুলো আপনার আইএসপির চেয়ে বেশি গতিসম্পন্ন OpenDNS-এ যথেষ্ট সার্ভার রয়েছে। পিসিতে ব্যবহার হওয়া ডিএনএস সার্ভার পরিবর্তন করা যায় সহজে। এজন্য উইন্ডোজ কন্ট্রোল প্যানেল থেকে নেটওয়ার্ক কানেকশন ওপেন করতে হবে। এজন্য নেটওয়ার্ক কানেশন ডান ক্লিক করে Properties বেছে নিতে হবে। এর পর ‘Internet Protocol’ হাইলাইট করে Properties বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং নির্দিষ্ট করতে হবে সার্ভার অ্যাড্রেস 8.8.8.8 এবং 8.8.4.4 ডিএনএস সার্ভার বক্স থেকে।
যদি একাধিক পিসি থাকে তাহলে ব্রডব্যান্ড রাউটার থেকে সেটিং পরিবর্তন করা সম্ভব এবং গুগল দিয়ে ডিএনএস সার্ভার প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।
ওয়াইফাই চ্যানেল পরিবর্তন
বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই ডিফল্ট সেটিং পরিবর্তন না করেই ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেটআপ করতে পারে। এর ফলে অনেক নেটওয়ার্ককে একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে কাজ করতে হয়। এ দেশে অনেক ধরনের ওয়াইফাই চ্যানেল রয়েছে। এলাকার কোনটি কম ব্যবহার হয় তা জেনে নিয়ে বেছে নিন। এতে ভালো স্পিড পাবেন। এক্ষেত্রে InSSIDer টুল দিয়ে জানতে পারবেন আপনার এলাকায় কোন চ্যানেল নেটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : swapan52002@yahoo.com