২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় ই-তথ্যকোষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বাংলাভাষার এই ই-তথ্যকোষ হচ্ছে মানুষের জীবনযাপন সম্পর্কিত তথ্য ও জ্ঞানভান্ডার। এই তথ্যকোষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন ও মানবাধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অকৃষি উদ্যোগ, পর্যটন, কর্মসংস্থান, নাগরিক সেবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক তথ্য বাংলাভাষায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তথ্যকোষে একটি বাংলা সার্চ ইঞ্জিন সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে সব তথ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
ই-তথ্যকোষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ জনগণের ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ই-তথ্যকোষ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ’ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম এ করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের তথা এটুআই জাতীয় প্রকল্প পরিচালক (এনপিডি) এম নজরুল ইসলাম খান, ইউএনডিপির আঞ্চলিক পরিচালক স্টিফেন প্রেইজনার ও অ্যাকশন এইড আঞ্চলিক পরিচালক ফারাহ কবির।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে জনগণকে কৃষি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য অর্থ খরচ করে জেলা কিংবা উপজেলা শহরে যেতে হবে না। এর পরিবর্তে তারা কাছের ইউনিয়ন পর্যায়ের তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব মোবাইল কোম্পানিকে তাদের কনটেন্ট বাংলায় তৈরি করার অনুরোধ জানান, যাতে জনগণ তথ্য বুঝতে এবং তা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাতে পারেন।
এটুআই প্রকল্পের পরিচালক এম নজরুল ইসলাম খান তথ্যকেন্দ্রের বিবরণে জানান, ৫০ হাজার পৃষ্ঠার এই তথ্যকোষে ৪ ঘণ্টার অডিও এবং ২২ ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।
জাতীয় ই-তথ্যকোষের অভিযাত্রা
জাতীয় ই-তথ্যকোষ গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের তৈরি ও প্রকাশিত গবেষণাধর্মী তথ্যাদির ভিত্তিতে। ইতোমধ্যে ১৪৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ৫০টি দেশী-বিদেশী বেসরকারি সংস্থা সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের তথ্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে দান করে এই তথ্যকোষটি সমৃদ্ধ করছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন্ প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে কনটেন্ট তৈরি করে, যা অত্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে নির্মাতাদের কাছে রয়েছে এবং সাধারণ নাগরিকের নাগালের বাইরে থেকে যায়। ইতিপূর্বে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে তথ্যকোষ সম্পর্কিত ধারণা দান এবং কনটেন্ট দানে আগ্রহী করতে ১৫টি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
জাতীয় ই-তথ্যকোষ প্রণয়নে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের অংশগ্রহণ শুরু হয় ২০১০ সালের জুন মাসের দিকে। এর আগে এটুআইয়ের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য কিছু কনটেন্ট তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এসব কনটেন্ট তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন কনসালটেশন থেকে একটি মতামত প্রাধান্য পায় যে ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যে প্রচুর কনটেন্ট রয়েছে তা এক জায়গায় একত্রিত বা একই প্লাটফরমে নিয়ে আসতে পারলে একদিকে যেমন কনটেন্টের আর্কাইভিং হতে পারে, অন্যদিকে একজন ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনমতো সব তথ্য পেয়ে উপকৃত হতে পারেন।
ইতিপূর্বে একই বিষয়ের ওপর একাধিক প্রতিষ্ঠান কনটেন্ট তৈরি করার ফলে অর্থ ও সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি নতুন কনটেন্ট তৈরি হওয়ার সুযোগও কমে গিয়েছিল। তাই এমন একটি প্লাটফরমের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় যেখানে কনটেন্ট প্রস্ত্ততকারক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে নিজেরাই তাদের কনটেন্টসমূহ জমা দেবে, যা খুব সহজেই দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। এ পরিকল্পনা থেকেই ই-তথ্যকোষের যাত্রা শুরু।
পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর এবং বেসরকারি সংগঠনসমূহ তথ্যকোষের সাথে সম্পৃক্ত হতে থাকে এবং তাদের কনটেন্টসমূহ নিজেরাই তথ্যকোষে আপলোড করতে শুরু করে। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ই-তথ্যকোষ গড়ে উঠেছে এবং আগামীতে সবার অংশগ্রহণে সেটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।
ই-তথ্যকোষ কী
জাতীয় ই-তথ্যকোষ বাংলাভাষার সর্বপ্রথম জীবন-জীবিকাভিত্তিক তথ্যভান্ডার। ই-তথ্যকোষে বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন ও মানবাধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অকৃষি উদ্যোগ, পর্যটন, কর্মসংস্থান, নাগরিক সেবা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিল্প ও বাণিজ্য তথ্য বাংলাভাষায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। আর বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারকারীর কথা চিন্তা করে এসব তথ্য অডিও, ভিডিও, এনিমেশন, তথ্যচিত্র বা লিখিত আকারে পরিবেশন করা হয়েছে।
ই-তথ্যকোষে খুব সহজেই কনটেন্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য একটি সার্চ ইঞ্জিন যুক্ত করা করা হয়েছে। গুগলে তথ্য খোঁজার মতো করে এই সার্চ ইঞ্জিনের নির্দিষ্ট স্থানে কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি বাংলায় লিখে তথ্য খুঁজুন বাটনে ক্লিক করলে ফলাফল পাতায় সংশ্লিষ্ট কনটেন্টটি দেখা যাবে। ফলাফল পাতায় যেসব কনটেন্ট পাওয়া যাবে তার টাইটেলের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যাবে। উক্ত বর্ণনা থেকে কনটেন্ট ব্যবহারকারীরা সহজেই বুঝতে পারবেন ফলাফল পাতার কোন কনটেন্টটি তার কাজে আসবে। ব্যবহারকারীরা কনটেন্ট সম্পর্কে রেটিং করার পাশাপাশি তাদের মতামতও দিতে পারবেন। উল্লেখ্য, প্রতিটি কনটেন্টের নিচে আরো বেশ কয়েকটি বিষয়, যেমন- কনটেন্ট আপলোডের তারিখ, কনটেন্ট স্বত্বাধিকারীর নাম ইত্যাদি দেয়া হয়েছে যা দেখে একজন ব্যবহারকারী সহজেই কনটেন্টটি সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাবেন।
ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের জন্য জ্ঞানভান্ডার
গ্রামীণ সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নে তথ্যের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের ৪৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদে যেসব তথ্য ও সেবাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে তার একটা বড় উদ্দেশ্য হলো সে এলাকার জনসাধারণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটানো। এ উদ্দেশ্যেই জীবন জীবিকাভিত্তিক তথ্য সহজে একটি স্থান থেকে প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে জাতীয় ই-তথ্যকোষটি তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৪৫০১টি ইউনিয়নে চালু হওয়া তথ্য ও সেবাকেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই নিজেদের জীবন-মান উন্নয়নে ই-তথ্যকোষের সহায়তা নিতে পারবে।
জাতীয় ই-তথ্যকোষটি অফলাইন ও অনলাইন দুটি সংস্করণে প্রস্ত্তত করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে ইন্টারনেট স্পিড খুব ভালো না থাকায় অফলাইন সংস্করণ করা হয়েছে। অফলাইন সংস্করণটি খুব সহজে তথ্যকেন্দ্রের কমপিউটারে ইনস্টল করা যাবে। কনটেন্ট ব্যবহারের এই সুযোগটি স্থানীয় জনগণ বিনা পয়সায় পাবেন। প্রতি তিন মাস পর পর অফলাইন সংস্করণটি হালনাগাদ করে তথ্যকেন্দ্রে প্রেরণের পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যদিকে অনলাইন সংস্করণটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ কার্যক্রমের ফলে ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য অতি সহজে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করবে।
তথ্যসূত্র : www.infokosh.bangladesh.gov.bd
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : vashkar79@hotmail.com