বাজারে একটি নতুন গেম এসেছে, কিন্তু আপনার কমপিউটারে তা রান করছে না। হয়তো আপনার গ্রাফিক্স কার্ডের সব অপশন সাপোর্ট করছে না। অথচ আপনার গ্রাফিক্স কার্ডটি বেশি দিনের পুরনো নয়। তখন সমাধান হলো নতুন আরেকটি গ্রাফিক্স কার্ড কেনা, যা গেমটি সাপোর্ট করে। আর পুরনোটি বাদ দেয়া। আবার হয়তো গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেন, অনেক দাম দিয়ে গ্রাফিক্স কার্ড কিনলেন, কিন্তু একটি থ্রিডি ইফেক্ট তৈরি করতে এটি অনেক সময় নিচ্ছে। আবার খুব ভালোমানের গ্রাফিক্স কার্ডের দামও অনেক, যা অনেকের পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না। অবশ্য পাঁচ-সাত বছর আগেও যে ধরনের গ্রাফিক্সের কাজ হতো, আজ সেখানে এসেছে অনেক পরিবর্তন। এখন সাধারণ ছবিতেও থ্রিডির ছোঁয়া দেখা যায়, যা আগে ছিল না। তৈরি হতো না এত বেশি গ্রাফিক্সসমৃদ্ধ গেম। হতো না কমপিউটার নিয়ন্ত্রিত বড় বড় মাল্টি ডিসপ্লে টিভি। তাই ভালো রেজ্যুলেশনের ছবি, বড় ডিসপ্লে স্ক্রিন, থ্রিডি গ্রাফিক্সের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাফিক্স কার্ড। আর সেখানে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন সুবিধা, তবুও সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে প্রসেসরের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে গ্রাফিক্স কার্ডের গ্রাফিক্স প্রসেসরের গতি, সাথে ভিডিও মেমরি। তারপরও অনেক ধরনের গ্রাফিক্সের কাজের ক্ষেত্রে এসব গ্রাফিক্স কার্ড কাঙ্ক্ষিত সুবিধা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে মাল্টি ডিসপ্লের ক্ষেত্রে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ, মাল্টি ডিসপ্লের ক্ষেত্রে দরকার হয় অনেক কম সময়ে অনেক বেশি পিক্সেল নিয়ে কাজ করতে পারে এমন গ্রাফিক্স প্রসেসর। আর এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নতুন যুক্ত হলো হাইড্রা টেকনোলজি।
গ্রিক পুরাণে হাইড্রা হলো এক ধরনের প্রাণী, যার অসংখ্য মাথা থাকে এবং এর একটি মাথা কেটে ফেললে কাটা অংশ থেকে দুটি মাথা গজায়। এই হাইড্রাই নিয়ে এসেছে মাল্টি জিপিইউ’র ক্ষেত্রে এক আমূল পরিবর্তন। আগের মাদারবোর্ডগুলোতে একই সাথে দুটো গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করা যেত না। যেমন- আপনার কমপিউটারের মাদারবোর্ডে বিল্টইন গ্রাফিক্স কার্ড আছে, আবার এক্স১৬ স্লটও আছে। এক্ষেত্রে যদি এক্স১৬ স্লটে কোনো গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করেন তবে আপনার বিল্টইন গ্রাফিক্স কার্ড অকার্যকর রাখতে হয়। আবার বিল্টইন গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করলে অন্য স্লটে লাগানো গ্রাফিক্স কার্ড অকার্যকর রাখতে হয়। কিন্তু হাইড্রা টেকনোলজি ব্যবহার করার ফলে আপনি একটি মাদারবোর্ডে অনেক গ্রাফিক্স কার্ড একত্রে ব্যবহার করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে বড় সুবিধা হবে সব গ্রাফিক্স কার্ডের প্রসেসর একত্রে কাজ করতে পারবে। যেমন- কেউ যদি তার কমপিউটারে দুটি গ্রাফিক্স কার্ড লাগায়, যার একটি তিনশ’ মেগাহার্টজ গতির প্রসেসর ও অন্যটি পাঁচশ’ মেগাহার্টজ গতির প্রসেসর, তবে দুই গ্রাফিক্স কার্ড একত্রে আটশ’ মেগাহার্টজ গতিতে গ্রাফিক্স প্রসেস করতে পারবে। একইভাবে যখন আপনি মাল্টি গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করবেন, তখন হাইড্রা ব্যবহার করার ফলে আপনার কাজের গতি বাড়ার সাথে সাথে কার্ডের আয়ুও অনেক বাড়বে।
হাইড্রা টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে লুসিডবক্স অন্যতম (www.lucidlogix.com), যারা ২০০৮ সালে মাল্টি জিপিইউ নিয়ে কাজ শুরু করে হাইড্রা টেকনোলজি উদ্ভাবন করে। ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যমতে, ইন্টেল ডেভেলপমেন্ট ফোরামে আগস্ট ২০০৮-এ হাইড্রা একশ’ সিরিজ চিপ নিয়ে প্রথম তথ্য প্রকাশ করে। পরে সেপ্টেম্বর ২০০৯-এ হাইড্রার দুইশ’ সিরিজ চিপ বাজারে ছাড়া হয়, যা মাদারবোর্ড কোম্পানিগুলোর কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
আমরা অনেকেই জানি, ভিডিও মেমরির দাম বেশি হওয়ায় গ্রাফিক্স কার্ডের দাম কমানো সম্ভব হয় না। এক গিগাহার্টজ গতির একটি গ্রাফিক্স কার্ডের দাম যেমন বেশি, তেমনি ২টি ৫০০ মেগাহার্টজ গতির গ্রাফিক্স কার্ডের দাম তার অর্ধেক দামেই আপনি কিনতে পারবেন। তাই হাইড্রা দামেও সাশ্রয়ী।
হাইড্রা ইঞ্জিন কাজ করে এএসআইসি (অ্যাপ্লিকেশন স্পেসিফিক ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) হার্ডওয়্যার হিসেবে মাদারবোর্ডের সাথে। এর জন্য একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করলেই এটি কাজ শুরু করে। হাইড্রা ইঞ্জিন কাজ করে কমপিউটারের সিপিইউর নর্থব্রিজ ও গ্রাফিক্স প্রসেসরের মাঝে (আগের সংখ্যায় নর্থব্রিজ সম্পর্কে লেখা হয়েছে)। হাইড্রা ইঞ্জিনের অবস্থান থেকেই বোঝা যায়, কোন গ্রাফিক্স প্রসেসর থেকে হাইড্রা ইঞ্জিন হয়ে জিপিইউতে যায়। সাধারণ একটি থ্রিডি গ্রাফিক্স ফ্রেমের কাজ সম্পন্ন করতে এক হাজারের অধিক টাস্ক (ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ) সম্পন্ন করতে হয়। গ্রাফিক্সের বেশিরভাগ টাস্ক একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল। ফলে দেখা যায় একটি জিপিইউ রিয়েল টাইমে যে কয়টি টাস্ক সম্পন্ন করতে পারে, দুইটি জিপিইউ একত্রে তার দ্বিগুণ টাস্ক সম্পন্ন করতে পারে। ফলে জিপিইউ সংখ্যা যত বাড়তে থাকে তত একত্রে কাজ করার ক্ষমতাও অনেক বাড়তে থাকে।
যদিও বর্তমানে কিছু ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ডে স্প্লিট ফ্রেম/টিলিং নামের অপশন থাকে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ২টি জিপিইউর সমন্বয়ে কাজ করা যায়। আর ২টি জিপিইউ একটি গ্রাফিক্সকে ভাগ করে দুই ভাগে ডিসপ্লে করে। কিন্তু সমস্যা হয় ভিডিও মেমরি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে। কারণ, দুইটি জিপিইউর কর্মরত গ্রাফিক্সের টাস্ক একই মেমরিতে থাকাতে কাজের সময় বা জিপিইউ ওভারলোডেড অবস্থায় রিয়েল টাইমের তফাৎ দেখা যায়। হাইড্রার ক্ষেত্রে এ সমস্যা হয় না, উপরন্তু ডিসপ্লেতে পিক্সেল শেডিং (ছবিতে এক ধরনের ছায়া দিয়ে ছবিকে আরো জীবন্ত করা) হাইড্রা যথেষ্ট দক্ষতার সাথে কাজ করে, যা হাইড্রা যুক্ত নয় এমন গ্রাফিক্স কার্ডে অনেক সময় সম্ভব হয় না।
হাইড্রার ইঞ্জিন আর্কিটেকচার :
হাইড্রা চিপ কাজ করে আরটিডিপি (রিয়েল টাইম ডেডিকেটেড প্রসেসিং) টেকনোলজিতে, যা কাজ করে সময় সাপেক্ষে। এটি সময় সাপেক্ষে প্রত্যেকটি গ্রাফিক্স ফ্রেমকে যাচাই করে। ফলে গ্রাফিক্সে ল্যাটেন্সি সময় কমে যায়। প্রথমেই হাইড্রা ইঞ্জিন যাচাই করে আপনার কমপিউটারে কয়টি গ্রাফিক্স প্রসেসর আছে, কী পরিমাণ ভিডিও মেমরি আছে। এ জন্য হাইড্রা চিপ প্রোপারেটরি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, যা বিভিন্ন জিপিইউ কর্মপরিধি নিয়ন্ত্রণ করে।
কোন গ্রাফিক্স প্রসেসরে এলে হাইড্রা ইঞ্জিন ডাইরেক্টএক্স বা ওপেন জিএলকে বাদ দিয়ে সরাসরি তা নিয়ে কাজ করে। কাজের ধরন অনুযায়ী এটি নির্বাচন করে কতটুকু কাজ কোন জিপিইউকে দিয়ে করাবে। হাইড্রা অপর আরেকটি অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, যা অতি দক্ষতার সাথে এ ভাগ করে দেয়ার কাজ সম্পন্ন করে। হাইড্রা প্যারালাল পলিসি মেকার নামের অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, যা প্রত্যেকটি জিপিইউর সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজ সম্পন্ন করে। যেহেতু কাজটি অনবরত চলতে থাকে তাই হাইড্রা চিপ রিয়েল টাইম পারফরমেন্স যাচাই করে এর ব্যবস্থাপনাকে সব সময় আপডেট করতে থাকে।
সর্বশেষ বাজারে আসা হাইড্রা ২০০-এর তিনটি সংস্করণ হলো- LT24102, LT22102, LT22114. এগুলো ৬৫ ন্যানোমিটার টেকনোলজিতে তৈরি এবং কাজ করে তিনশ’ মেগাহার্টজ গতির রিস্ক আর্কিটেকচারে। যার LT22114 হলো লো ইন্ড চিপ, LT22012 হলো মধ্যমমানের এবং LT24102 হলো উচ্চমানের।
এখানে ডাউন স্ট্রিম দিয়ে বোঝানো হয়েছে হাইড্রা কয়টি এক্স স্লট দিয়ে সিপিইউ অথবা পিসিআই কার্ডের সাথে কাজ করতে পারে। আর আপ স্ট্রিম দিয়ে বোঝানো হয়েছে হাইড্রা কয়টি এক্স স্লট দিয়ে জিপিইউর সাথে কাজ করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, LT24102-এ আপনি দুটি এক্স১৬ জিপিইউ গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে পারেন দুটি স্লটের মাধ্যমে। আবার ইচ্ছে করলে একটি স্লটে একটি এক্স১৬ গ্রাফিক্স কার্ড লাগিয়ে অন্য দুটি স্লটে দু’টি এক্স৮ গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে পারেন। এভাবে আপনি এ সিরিজে সর্বোচ্চ চারটি গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে পারেন। মডেলের চিপের বর্তমান বাজার মূল্য আট হাজার টাকার মতো।
সর্বশেষে বলা যায়, ইন্টেল, এএমডি, গিগাবাইটসহ আরো অনেক মাদারবোর্ড নির্মাণ কোম্পানি তাদের মাদারবোর্ডে হাইড্রা চিপ সংযোজন করছে, যার সুফল আগামী এক বছরের মধ্যেই ব্যবহারকারীরা পাবেন।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : minitohid@yahoo.com