• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে টেলিসেন্টারের ভূমিকানির্ধারণী পর্যায়ে টেলিসেন্টারের ভূমিকা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মানিক মাহমুদ
মোট লেখা:২৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
টেলিসেন্টার
তথ্যসূত্র:
নীতিপ্রসঙ্গ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে টেলিসেন্টারের ভূমিকানির্ধারণী পর্যায়ে টেলিসেন্টারের ভূমিকা
বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্ক (বিটিএন)-এর তথ্যমতে দেশে বর্তমানে টেলিসেন্টারের সংখ্যা প্রায় বারো শ’। এসব টেলিসেন্টারের একটি অভিন্ন লক্ষ্য হলো মানুষের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা নিশ্চিত করা। বিদ্যমান কাঠামোতে একজন মানুষকে তার প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা পেতে হলে তাকে যতটা সময়, অর্থ ও হয়রানি পোহাতে হয়- টেলিসেন্টার গড়ে ওঠার কারণে তা অনেকখানি কমতে শুরু করেছে। টেলিসেন্টারের মাধ্যমে এই হয়রানি কমার ফলে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সার্বিক জীবন-মানে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে টেলিসেন্টারের এই সুবিধা পৌঁছে দিতে হলে বিদ্যমান সংখ্যার তুলনায় আরো অনেক টেলিসেন্টার গড়ে ওঠা দরকার। কিন্তু টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়াবার ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ না নিলে তা অর্জন করা দুরূহ। এই বাস্তবতা থেকেই বিভিন্ন সময়ে যারা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করেন তাদের সংবেদনশীল করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এর সুফল আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় টেলিসেন্টারের ব্যাপারে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তারা বাংলাদেশে কমিউনিটি মডেল ‘কমিউনিটি ই-সেন্টার’-এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে সারাদেশের সব ইউনিয়নে ইউনিয়ন ইনফরশেন সেন্টার (ইউআইসি) নামে টেলিসেন্টার গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কমিউনিটি মডেল যেসব বৈশিষ্ট্যের কারণে নীতিনির্ধারণে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল তার মধ্যে অন্যতম হলো- এক. কমিউনিটি মডেলের ‘পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি চ্যানেল’ হয়ে ওঠা; দুই. সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষ বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন; তিন. পাবলিক প্রাইভেট পিপলস পার্টনারশিপ; চার. সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থায়ীত্ব অর্জন; পাঁচ. টেলিকমিউনিকেশন ডিরেগুলেশন এবং ছয়. ব্যাংকিং মাধ্যমের সম্প্রসারণ।



কমিউনিটি ই-সেন্টারের ‘পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি চ্যানেল’ হয়ে ওঠা: বর্তমানে একটি অন্যতম নাগরিক চাহিদা হলো তথ্য ও সেবা তাদের দোরগোড়ায় হাজির থাকবে এবং সরকারি সেবা প্রদানকারী মাধ্যম তা নিশ্চিত করবে- এটা এখন নাগরিক দাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, যা নাগরিক এবং সরকার উভয়ের জন্যই অর্থ-সাশ্রয়ী। তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা সহজলভ্য করে তোলার যে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা কমিউনিটি ই-সেন্টার ইতোমধ্যে অর্জন করেছে- তার ভিত্তিতে এটা এখন দৃঢ়তার সাথেই বলা যায়, কমিউনিটি ই-সেন্টার সত্যিকার অর্থেই একটি শক্তিশালী সরকারি সেবা প্রদানকারী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। গতানুগতিক মাধ্যমে মানুষ যেভাবে সেবা পায়, নতুন এ মাধ্যমে তার তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে শুধু স্থানীয় ও জাতীয় তথ্যই নয়, সারাবিশ্বের তথ্যভান্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কমিউনিটি ই-সেন্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। নীতিনির্ধারকদের জন্য এখন জরুরি একটি কাজ হলো- সারাদেশে বিশেষ করে সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের জন্য তথ্য ও সেবাকে সহজলভ্য করে তোলার লক্ষ্যে কমিউনিটি ই-সেন্টারের মতো অসংখ্য ‘পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি চ্যানেল’-এর সম্প্রসারণ ঘটানো।

স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন

সাম্প্রতিককালে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রভৃতি এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কমিউনিটি ই-সেন্টার এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। কমিউনিটি মডেলের কারণে ইউনিয়ন পরিষদে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম বেড়েছে অনেকগুণ। কমিউনিটি ই-সেন্টারকে কেন্দ্র করে তথ্য ব্যবহারকারীদের নেতৃত্বে সেখানে গড়ে উঠেছে একাধিক স্থানীয় সংগঠন এবং সমবায় সমিতি। ইউনিয়ন পরিষদের নিবিড় গণগবেষণার ফলে এসব সংগঠনের সদস্যরা ক্রমশই অধিক তথ্যসচেতন হয়ে উঠেছেন। এর ফলে তাদের তথ্য চাহিদা যেমন বেড়েছে প্রতিদিন, একই সাথে সংগঠনসমূহ তাদের সেই চাহিদা পূরণে সমবেতভাবে সোচ্চার হয়ে ওঠার উপাদান সংগ্রহ করতেও সক্ষমতা অর্জন করেছে। কমিউনিটি ই-সেন্টারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে উঠেছে কমিউনিটি ই-সেন্টার কমিটি, যেখানে ঘটেছে স্থানীয় নেতৃত্বের শতভাগ অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিফলন। এই কমিটির সক্রিয়তার কারণেই সিইসির জন্য বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ সহজ হয়ে উঠেছে এবং এরই ফলে কমিউনিটি ই-সেন্টারের পক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক অংশ হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়ন

কমিউনিটি ই-সেন্টার হয়ে উঠেছে স্থানীয় নারী জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ক্ষমতায়নের উৎস। একটি বড় অংশের নারীরা এখন ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য নিতে আসছে এবং এ সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। এই নারীদের ঘরের বাইরে আসা নিষেধ ছিল। একাধিক নারী (নারী সংগঠনের সদস্য) জানান, ‘একসাথে বসে চিন্তা করার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এবং তার সূত্র ধরে ঘরের বাইরে যাবার (সিইসিতে) ঘটনা তাদের জীবনে কমিউনিটি ই-সেন্টারেই প্রথম’। নারীর অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষমতায়িত হবার ক্ষেত্রে এ ঘটনা একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত। গ্রামীণ এই নারীরা ইউনিয়ন পরিষদে আসে নারী স্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য, জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা, কৃষিবিষয়ক প্রভৃতি তথ্য সংগ্রহ করতে- যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়।

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন

কমিউনিটি ই-সেন্টারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অডিও তথ্য সংরক্ষণ করা আছে, যা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর তথ্যসচেতনতা এবং তাদের সামর্থ্যের বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। গতানুগতিক যেসব তথ্য প্রদানকারী মাধ্যম আছে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী তাতে প্রায় পুরোটাই বঞ্চিত। কমিউনিটি ই-সেন্টারের আরেকটি অভিজ্ঞতা হলো এই একই তথ্য স্থানীয় নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর জন্যও ফলপ্রসূ।

ভয়েস ফর দি ভয়েসলেস

ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক ‘ভয়েসলেস’ বা প্রতিবন্ধী মানুষ আছে তথ্য অসচেতনতার কারণে নিজের এলাকার বাইরের কোনো খবর তাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না, নারীদের ক্ষেত্রে এ বাস্তবতা আরো প্রকট। কমিউনিটি ই-সেন্টার এই তথ্যবঞ্চিত মানুষদের জন্য এমন এক সুযোগ সৃষ্টি করেছে যার ফলে তাদের পক্ষে এখন বিশ্বের মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। কমিউনিটি ই-সেন্টার সেখানে এমন এক সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যার মাধ্যমে এই ভয়েসলেস মানুষরাও তথ্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছে, শুধু তারা তথ্য সংগ্রহ করছে না। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো- স্থানীয় লোকজ জ্ঞান। মাধাইনগর ও মুশিদহাট ইউনিয়নের একাধিক বিষয়ে লোকজ জ্ঞানকে কেন্দ্র করে তথ্য বানানো হয়েছে, যেমন- বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি, কৃষির বিভিন্ন রোগ দমনের স্থানীয় উপায় প্রভৃতি, যা শুধু নিজ এলাকাতেই নয়, দেশের অন্যান্য টেলিসেন্টারেও মূল্যবান তথ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। নিবিড় গণগবেষণার মধ্য দিয়ে এটা বেরিয়ে আসছে যে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন অনেক লোকজ জ্ঞান আছে যা সংরক্ষণ ও তুলে ধরার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ দরকার এই লোকজ জ্ঞান টেলিসেন্টার প্র্যাকটিশনারদের জন্য, তথ্য প্রণেতাদের জন্য এক বিরাট শক্তি হতে পারে। কমিউনিটি ই-সেন্টারে আর একটি নতুন বিষয় যুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে, তা হলো একটি প্লাটফরম- যা হবে কোনো ওয়েবসাইট, যেখানে জনগণ তাদের যেকোনো মতামত, প্রশ্ন বা ফিডব্যাক তুলে ধরবে বিনা দ্বিধায়, বিনা ব্যয়ে। আশা করা হচ্ছে, জনগণের এই ফিডব্যাক স্থানীয় ও সর্বোচ্চ প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসবে সহজেই।

সমন্বিত সরকারি উদ্যোগ

কমিউনিটি ই-সেন্টার হয়ে উঠতে পারে ‘ওয়ান স্টপ শপ’ যেখানে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সব সেবার সমন্বয় ঘটানো সম্ভব। অর্থাৎ এক স্থান থেকে নাগরিক সব প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আইন ও মানবাধিকার প্রভৃতি) সংগ্রহ করতে পারবে। সব তথ্য ও সেবা ডিজিটাইজড করা সম্ভব হলে তা মানুষের কাছে পৌঁছানো আরো সহজ হবে। ফলে অবশ্য কেন্দ্রিয়ভাবে ডিজিটাল তথ্যভান্ডার ও একটি পোর্টাল রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হবে। নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়।

সরকারি-বেসরকারি-জনগণ-অংশীদারিত্ব অনিবার্য

মানুষের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হলে তথ্য ও সেবা মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলতে হবে, এজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সেজন্য একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুসমন্বয় দরকার। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শুধু সমন্বয়ই যথেষ্ট নয়, দরকার সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা। যারা দেশে ও বিদেশে সফলভাবে টেলিসেন্টার, তথ্যকেন্দ্র বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা হলো- সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়ের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব অনিবার্য। এই অংশীদারিত্ব স্থানীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথেও হতে হবে। এই অংশীদারিত্ব হতে হবে মালিকানাভিত্তিক। প্রচলিত দাতানির্ভর এবং দাতা পরিচালিত টেলিসেন্টার পরিচালনায় জনগণের এই অংশীদারিত্ব দরকার পড়ে না, এই অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার অভিজ্ঞতাও নেই তাদের। নীতিনির্ধারক মহলে ইতোমধ্যেই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং এর পাশাপাশি জনগণের অংশীদারিত্বের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো, কমিউনিটি মডেলের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সরকার বিভাগ সারাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট-পিপলস-পার্টনারশিপ (পিপিপিপি) মডেলে ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টার (ইউআইসি) গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ, পিপিপিপি মডেলে ইউআইসি স্থাপিত হবে ইউনিয়ন পরিষদে, এর ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করবে একজন স্থানীয় উদ্যোক্তা, অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে থাকবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীরও অংশগ্রহণ।



দরকার অর্থনৈতিক স্থায়ী মডেল

কোনো টেলিসেন্টার শুরু করার জন্য দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার প্রয়োজন হতেই পারে। কিন্তু সেই অর্থই যদি টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়, তবে সেই টেলিসেন্টারের অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবার সম্ভাবনা খুবই কম। পৃথিবীতে অনেক উদ্যোগ হারিয়ে গেছে, যারা খুবই শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি নিয়ে শুরু করেছিল, কিন্তু দুর্বলতা ছিল ওই একটিই- অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা। কমিউনিটি ই-সেন্টারে খুবই সতর্কতার সাথে এই অভিজ্ঞতার শিক্ষা প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে, যাতে করে কোনোভাবেই যেন এই পরনির্ভরশীল মানসিকতা সেখানে গড়ে না ওঠে। কমিউনিটি মডেল ইতোমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হয়েছে, তারা ঘোষণা করেছে, পারিবারিক তথ্যসেবা কার্ডের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে যে অর্থ আসবে, তা দিয়েই তাদের টিকে থাকা সম্ভব হবে, কারো ওপর আর্থিক নির্ভরশীল হওয়ার দরকার পড়বে না। এখান থেকে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবার তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষা হলো- শুরু থেকেই এই স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করা যে, যে করেই হোক স্থানীয়ভাবেই অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব অর্জন করতে হবে। সে লক্ষ্যে শুরুতেই সিইসির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের বিনিয়োগ স্থির করা। ইউনিয়ন পরিষদ বিনিয়োগ স্থির করবে উপকরণ ক্রয়ে, স্থান ও অবকাঠামো দিয়ে। এ বিনিয়োগ আসবে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট থেকে।

সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও অনিবার্য

প্রচলিতভাবে একটি টেলিসেন্টারকে টেকসই করে তোলার প্রশ্নে অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব অর্জনই যেমন মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে, কিন্তু সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করাও ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিটি ই-সেন্টারে অনেক তথ্য আছে যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে শুধু তথ্যসচেতন নয়, তাদের মধ্যে তথ্যঅধিকার সচেতনতাও সৃষ্টি করে- এর ফলে তারা একদিকে যেমন এই অধিকার আদায়ের তাগিদ বোধ করে, অন্যদিকে এই অধিকার নিশ্চিত করতে সংগঠিত ও সোচ্চার হতেও উৎসাহিত হয়- যা তথ্যঅধিকার অধ্যাদেশ ২০০৮ বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, সাংবিধানিকভাবেই প্রতিটি নাগরিকের বৈষম্যহীনভাবে তথ্য ও সেবা পাবার অধিকার রাখে, সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের ক্ষেত্রে এটা আরো অগ্রাধিকার।

টেলিকমিউনিকেশন ডিরেগুলেশন

এটা সবার কাছেই এখন স্পষ্ট, বাংলাদেশে টেলিসেন্টার আন্দোলন যতখানি গড়ে উঠেছে, তা সহজ হয়েছে সরকারি নিয়ম শিথিল করা হয়েছে বলে। টেলিকমিউনিকেশন ডিরেগুলেশনের ফলে এমন এক সহায়ক পরিবেশ গড়ে ওঠে- যেখানে প্রতিযোগিতা উৎসাহিত হয় এবং লাইসেন্সিংয়ের প্রয়োজনীয়তাকে ছাড় দেয়া হয়। কমিউনিটি ই-সেন্টারে দেখা যায়, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনে নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করে। ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ সত্যিকার অর্থেই সেখানে তাদের জীবনে নতুন এক মাত্রা। এর ফলে সিইসিতে আয় বেড়েছে অনেক। সিইসির এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রেগুলেটরি বডি যেটা করতে পারে তা হলো তৃণমূল পর্যায়ের সব টেলিসেন্টারে কানেক্টিভিটি অনিবার্য করা এবং সম্ভব হলে এক্ষেত্রে ইউনিভার্সেল সার্ভিস অবলিগেশন ফান্ড নিশ্চিত করা। অতি দরিদ্র এলাকায় যেখানে বাণিজ্যিকভাবে কোনো টেলিসেন্টারের টিকে থাকার কোনো সম্ভাব্যতা নেই, এই ফান্ড সেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে।

ব্যাংকিং মাধ্যমের সম্প্রসারণ

মোবাইলের মাধ্যমে স্বল্প পরিমাণে টাকা পাঠানো বাংলাদেশে এবং একাধিক উন্নয়নশীল দেশে এখন বেশ পরিচিত। এর মূল কারণ সহজ প্রক্রিয়া এবং অর্থ-সাশ্রয়ী ব্যবস্থা। মোবাইল ব্যাংকিং বা এম-ব্যাংকিং ইতোমধ্যেই একাধিক দেশে আজ পরীক্ষিত। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকগণ এই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে গতানুগতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষ যাদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবা নেয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের জন্যও ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।

ফিডব্যাক : manik.mahmud@undp.org
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
২০০৯ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস