• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ফরেক্স ট্রেড : অনলাইনে আয়ের নতুন উৎস
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সাহেদুর রহমান হীরা
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফরেক্স ট্রেড
তথ্যসূত্র:
ঘরে বসে ‍আয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ফরেক্স ট্রেড : অনলাইনে আয়ের নতুন উৎস


অনেক দিন আগের কথা। তখন আমি নবম অথবা দশম শ্রেণীতে পড়ি। জহির রায়হানের একটি গল্প ছিল ‘সময়ের প্রয়োজনে’। গল্পের মূল প্রতিপাদ্য মুক্তিযুদ্ধ। সেই সময়ের প্রয়োজনে তখনকার দামাল ছেলেরা দেশকে শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ঠিক তেমনিভাবে ২০১০-১১ সালের দিকে আমাদের প্রযুক্তিপাগল ছেলেমেয়েরা এ সময়ের চাহিদা ও প্রয়োজনকে সামনে রেখে এবং অনলাইনে তাদের ক্যারিয়ারকে শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠা করতে ছুটেছে ফ্রিল্যান্সিং বা অনলাইন আউটসোর্সিং পেশার দিকে।



উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বিলিয়ন ডলারের হাতছানি দিচ্ছে আমাদের এই অনলাইন আউটসোর্সিং খাত। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই খাতের পাশাপাশি আরও একটি খাত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, যেখানে প্রতিদিন ট্রিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ মার্কেটে ১৯৭৭ সালে প্রতিদিন ৫ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেচাকেনা হলেও ২০১১ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন ৪ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারে। এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে কত বিশাল এই বাজারের পরিধি। স্বয়ং বিল গেটস বা ওয়ারেন বাফেটের পক্ষেও এক দিনের জন্য হলেও এই মার্কেটে সামান্যতম প্রভাব ফেলা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে হয়তো বুঝে গেছেন, আমি অন্য কোনো মার্কেট নয়, ফরেক্স মার্কেট নিয়ে কথা বলছি। আর আমি বিশ্বাস করি আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তিপাগল ছেলেমেয়েরাই সময়ের প্রয়োজনে ছুটে চলবে ফরেক্স মার্কেটের দিকে।

ফরেক্স কী?

ফরেক্স-এর পুরো অর্থ হচ্ছে Foreign Exchange। আর ফরেক্স ট্রেডকে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট বা কারেন্সি মার্কেট বলে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিল্পোন্নত দেশগুলো বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য Bretton Woods System-এর উদ্ভাবন করে, যার মাধ্যমে মুদ্রা তথা কারেন্সির অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত অবস্থাকে একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হয়। এর তিন দশক পরে ১৯৭০ সালের দিকে সরকারগুলোর কঠোর তদারকির মাধ্যমে আধুনিক ফরেক্স ট্রেডিংয়ের পথ চলা শুরু হয়। প্রথম দিকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই শুধু ফরেক্স ট্রেডিংয়ে অংশ নিত এবং এটা প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল ও আছে। পরে সেই দেশের অন্যান্য ব্যাংক ও অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এতে অংশ নিতে পারত। মাত্র এক দশক আগে এটি বিশ্বের সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এর ফলে বিশ্বের শত কোটি মানুষের জন্য ঘরে বসে আয় করার আরেকটি দুয়ার খুলে যায়।



ফরেক্স বিষয়টিকে একটু সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ধরুন, আপনি আমেরিকায় বাস করেন। কোনো একটি বিশেষ প্রয়োজনে আপনাকে সুইজারল্যান্ড যেতে হচ্ছে। স্বভাবতই আপনি নিজ দেশের মুদ্রা ইউএস ডলার নিয়ে সুইজারল্যান্ডে প্রবেশ করবেন। দেশটিতে যাওয়ার পর আপনার প্রথম কাজ হবে ডলার ভাঙিয়ে সেই দেশের স্থানীয় মুদ্রা সুইস ফ্রাঙ্কে পরিবর্তন করে নেয়া, যাতে করে আপনি সে দেশে কেনাকাটা করতে পারেন। ডলার ভাঙাতে আপনাকে অবশ্যই সেই দেশের কোনো ব্যাংক অথবা মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে হবে। ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে আপনাকে ডলার এক্সচেঞ্জ করে সুইস ফ্রাঙ্ক দেবে। এক মুদ্রা থেকে অন্য মুদ্রায় পরিবর্তনের এই যে সামগ্রিক প্রক্রিয়া এটাই হচ্ছে ফরেক্স। তাহলে এতদিন আমরা নিজের অজান্তেই ফরেক্স করতাম এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ানো অথবা পড়াশোনা করার জন্য। আর এখন আমরা সেই কাজটি করব ব্যবসায়িকভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য।

যেভাবে ফরেক্স মার্কেটে প্রবেশ করবেন

ফরেক্স মার্কেটে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই একজন ভালো ব্রোকার হাউসের শরণাপন্ন হতে হবে। অনলাইনে অসংখ্য ব্রোকার হাউস খুঁজে পাবেন, কিন্তু এর মধ্যে বেশিরভাগ ব্রোকার হাউসই ভুয়া। তাই খুব চিন্তাভাবনা করে এ বিষয়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্রোকার হাউসগুলোকে রেগুলেটেড করার জন্য বিশ্বে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। আপনি যে ব্রোকার হাউসে ট্রেড করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা যেন অবশ্যই ওই সব মনিটরিং সংস্থার মনিটর করা বা অনুমোদিত হয় তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। আমেরিকাতে ব্যাংক ও রিটেল ফরেক্স ব্রোকার হাউসগুলোকে মনিটর করার জন্য রয়েছে : কমোডিটি ফিউচারস ট্রেডিং কমিশন (সিএফটিসি), ওয়েব অ্যাড্রেস http://www.cftc.gov এবং ন্যাশনাল ফিউটারস অ্যাসোসিয়েশন (এনএফএ)। যথাক্রমে এগুলোর http://www.nfa.futures.org। অনুরূপভাবে যুক্তরাজ্যে ব্রোকার হাউসগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অথোরিটি (এফএসএ), এর ওয়েব অ্যাড্রেস http://www.fsa.gov.uk।

ভালো ব্রোকার হাউস

অনেকের মতে সবচেয়ে ভালো ব্রোকার হাউস বলতে http://www.dukascopy.com-কে বোঝায়। কারণ, এটি সরাসরি সুইজারল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। সমস্যা হচ্ছে এখানে আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে কমপক্ষে ১০০০ ডলার এবং এই টাকাটা অবশ্যই ব্যাংক টু ব্যাংক ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে হতে হবে, যা আমাদের দেশে থেকে করা বেশ কঠিন কাজ। তা ছাড়া www.fxcm.com, www.finexo.com, www.etoro.com, global.fxdd.com, www.¬fxpulp.¬com ব্রোকার হাউসের মাধ্যমেও আপনার ফরেক্স ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। যেগুলোর প্রত্যেকটি এসব রেগুলেটেড প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত।

ফরেক্স ট্রেড করতে কী প্রশিক্ষণের দরকার আছে?

অবশ্যই প্রশিক্ষণের দরকার আছে। প্রশিক্ষণ ছাড়া এ পেশায় এলে তা হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। অনেকটা জুয়া খেলার মতো। ভাগ্য যদি আপনার সাথে থাকে, তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হয়তো আপনি ১০০ থেকে ২০০ শতাংশ লাভ করে বের করে আনতে পারেন। আর কপালে খারাপ হলে পুরো টাকা খুইয়ে ট্রেড থেকে বেরিয়ে আসতে বড়জোর কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। মনে রাখতে হবে, ফরেক্সের আয় অনলাইনে হলেও এটা মূলত ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক। এটি এক ধরনের বিদ্যা, যেখানে আন্তর্জাতিক অর্থ বাজার বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সাধারণত উন্নত দেশগুলোতে ফিন্যান্স পড়ানো হয় এমন সব প্রতিষ্ঠানে, যেখানে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। উন্নত বিশ্বে অনেকেই এখন এটাকে পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে গ্রহণ নিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। এ মার্কেটে আসার আগে এরা এ সম্পর্কে ট্রেনিং নিয়ে সব কিছু বুঝে তারপর বিনিয়োগ করছে এবং নিয়মিত লাভের মুখ দেখছে। এ বিষয়ক প্রশিক্ষণ আপনি দুভাবে নিতে পারেন। প্রথমত- নিজস্ব উদ্যোগে ফরেক্সসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বইপত্র ও সম্ভব হলে ভিডিও ট্রেনিং মেটেরিয়াল সংগ্রহ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। এ বিষয়ক বেশ কিছু ভালো বইয়ের মধ্যে Grace Cheng-এর 7 Winning Strategies for Trading Forex, Jared F.Martinez-এর The 10 Essentials of Forex Trading, Raghee Horner-এর Forex on Five Hours a Week : How to Make Money Trading on Your Own Time পড়ে দেখতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যারা ফরেক্স ট্রেড বাস্তব জীবনে করছেন বা এ সম্পর্কিত ট্রেনিং দিচ্ছেন, তাদের সাহায্য নিয়ে দেখতে পারেন। তা ছাড়া বাংলাদেশে প্রথম ফরেক্স নিউজ বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়েছে। সেখান থেকে আপনি প্রতি মুহূর্তের মার্কেটের গতিধারা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবেন। সাইটটি বাংলায় হওয়ায় সবার জন্যই সুবিধা হবে। সাইটটির ঠিকানা http://forexnewsbd.com ।

যেভাবে অর্থ বিনিয়োগ করবেন

বিভিন্নভাবে এসব ব্রোকার হাউসে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। মনে রাখতে হবে, যে মাধ্যমেই অর্থ লোড দিন না কেন অর্থ উত্তোলনের সময় অবশ্যই সেই মাধ্যমের সেই অ্যাকাউন্ট নম্বরেই তুলতে হবে। যেমন- আপনি হয়তো পেওনার ডেবিড কার্ডের মাধ্যমে ফান্ড লোড দিয়েছেন যার, নম্বর -5114 2600 0209 4028, এখন টাকা তোলার জন্য যদি রিকোয়েস্ট পাঠান, তাহলে পেওনার ডেবিড কার্ডের ওই নম্বরেই এরা টাকা পাঠাবে, তাই অন্য কারও ডেবিড/ক্রেডিট কার্ড, মানিবুকার, পেপাল, লিবার্টি রিজার্ভ, ওয়েব মানির নম্বর ব্যবহার করে ফান্ড লোড দিলে পরে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

লাভের পরিমাণ কেমন হতে পারে?

লাভ নির্ভর করবে বিনিয়োগের ওপর। আপনি যত বেশি বিনিয়োগ করবেন লাভের পরিমাণও বেশি হবে সেই অনুপাতে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় বেশি ইনভেস্ট না করাই ভালো। ভালো হয় ৩০-১০০ ডলারের বেশি বিনিয়োগ না করা। আপনি যদি ১০০ ডলার বিনিয়োগ করেন এবং একজন ভালো ট্রেডারের সব গুণাবলী যদি আপনার ভেতরে থাকে, তবে মাসে আপনার পক্ষে আরও ১০০ ডলার লাভ করে নিয়ে আসা সম্ভব। তাই মার্কেটের অবস্থা বুঝে ট্রেড করলে যে কারও পক্ষেই দৈনিক ১০-৩০ অথবা বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৫০০ ডলার পর্যন্তও লাভ হতে পারে। ক্যারিয়ার হিসেবে যদি আপনি এটি বেছে নেন এবং প্রচুর পড়াশোনা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে যেকোনো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে পারেন, যার ন্যূনতম মাসিক বেতন হতে পারে ২৫০০ ডলার থেকে শুরু করে ১০০০০ ডলার।

কিছুসংখ্যক মানুষ এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা করলেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনগণের কাছে বিষয়টি এখনও অজানাই রয়ে গেছে। এত বিশাল মার্কেটের সামান্য কিছু অর্থও যদি আমরা আমাদের দেশে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের বেকার সমস্যার অনেকাংশই সমাধান হবে বলে ধারণা করা যায়। তাই সরকারের উচিৎ ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও সহজী করার মাধ্যমে প্রযুক্তিপাগল জনগণের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : srhira@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
পাঠকের মন্তব্য
১২ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১২:০৯ PM
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১০:০৯ AM
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস