• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > পিএসইউ কেনার আগে জেনে নিন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: তৌহিদুল ইসলাম
মোট লেখা:২৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
হার্ডওয়্যার
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
পিএসইউ কেনার আগে জেনে নিন

নতুন কমপিউটার কিনলেন। তিন মাস না যেতেই পাওয়ার সাপ্লাই নষ্ট। শুধু পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট (পিএসইউ) নয়, অনেক সময় কমপিউটারের অন্যান্য যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যায়। এরকম ঘটনার শিকার অনেক ব্যবহারকারী। আসলে নতুন পিসি কিনতে গেলে বা আপগ্রেড করতে গেলে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর মাথায় থাকে প্রসেসর, র্যালম, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড কিংবা গ্রাফিক্সকার্ডের কথা। বিস্ময়করভাবে পাওয়ার সাপ্লাই যেনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। আবার পুরো পিসি কিনতে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেলেও পাওয়ার সাপ্লাইয়ের কথা মনেই আসে না। অথচ এক-দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে আরও তিন-চার হাজার টাকা যোগ করলে একটি চলার মতো পিএসইউ পাওয়া সম্ভব হতো।

শতকরা নিরানববই ভাগ নতুন ক্রেতাই শুধু না জানার জন্য কমপিউটারের অন্য সব যন্ত্রপাতির মতো পিএসইউ দেখে কেনেন না। আবার বেশিরভাগ ভুক্তভোগী না বোঝার কারণে সমস্যায় পড়ার পরও বোঝেন না পিএসইউর জন্য তার কমপিউটারের এ অবস্থা। আসলে পিএসইউর সমস্যাগুলো একটু সূক্ষ্ম। তাই বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর বোঝার বাইরে থেকে যায়। উদাহরণ হিসেবে- কোনো ব্যবহারকারীর কমপিউটারটি হয়তো দীর্ঘদিন কম বিদ্যুৎশক্তিতে চলেছে। একসময় প্রসেসরটি নষ্ট হয়ে গেল। ব্যবহারকারী নতুন একটি প্রসেসর কিনে কমপিউটারে লাগিয়ে আবার ব্যবহার করা শুরু করলেন। কিন্তু তিনি বুঝতেই পারলেন না পিএসইউর জন্য তার কমপিউটারের প্রসেসরটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

আমাদের দেশে বিদ্যুতের লাইনে অফপিক ও পিক আওয়ারে ভোল্টেজের অনেক ব্যবধান থাকে। অনেক সময় পিক আওয়ারে ১৭০-১৮০ ভোল্টের বেশি পাওয়া যায় না। ফলে ২৫০ ভোল্টে যখন ৫০ হার্টজ থাকে, ১৮০ ভোল্টে তা আরও অনেক কমে যায়। এ অবস্থায় আপনার পিসির পিএসইউ হয়তো কমপিউটার চালাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আউটপুটে বিদ্যুৎ অনেক কমে যাচ্ছে। আর ব্যবহারকারী কমপিউটার ব্যবহার করলেও মূল ভোল্টেজ কত তা জানছে না। ফলে এ ধরনের কম ভোল্টেজে কমপিউটার চললে ও পিএসইউতে প্রচন্ড চাপ পড়ার কারণে পিএসইউ ইউনিটটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। আবার কম ভোল্টেজের মতো ভোল্টেজ হাই বা উঁচু হলেও এরকম সমস্যা হয়।

অনেক ব্যবহারকারী ইউপিএস অথবা ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করেই নিশ্চিন্ত থাকেন। এক্ষেত্রে একটু দেখা দরকার এগুলো কতটুকু কম বা বেশি অর্থাৎ লো ও হাই ভোল্টেজে ঠিকভাবে কাজ করতে পারে। বেশিরভাগ কমদামি ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার, ইউপিএস লো ও হাই ভোল্টেজে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। যদিও এসব কমদামি যন্ত্রপাতির ম্যানুয়ালে অপারেটিং ভোল্টেজ অনেক লো ও হাই লেখা থাকে। একই অবস্থা কমদামি পিএসইউ ইউনিটের।

পিএসইউ তৈরিকারক কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য সাধারণত তিন ধরনের পাওয়ার সাপ্লাই তৈরি করে।

০১. লো রেঞ্জ : সাধারণত ১-১০ হাজার টাকা।
০২. মিড রেঞ্জ : ১০-২৫ হাজার টাকা।
০৩. হাই রেঞ্জ : ২০-৫০ হাজার টাকা।

সাধারণত ব্যবহারকারীদের দরকার হয় লো ও মিড রেঞ্জ পিএসইউ। আর সার্ভার ব্যবহারকারীদের দরকার হয় হাই রেঞ্জ পিএসইউ। সুতরাং পিএসইউর দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

আমরা অনেকেই জানি কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রই পূর্ণ কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে না। সাধারণত শতকরা ৮৫ ভাগের বেশি কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করলে পিএসইউ ইউনিটকে স্ট্যান্ডার্ড বলা যায়। সে হিসাবে ৭০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পিএসইউর আউটপুট থেকে যদি মোট ৫৯৫ ওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় তবে তাকে স্ট্যান্ডার্ড বলা যায়। কিন্তু যদি এ ওয়াটের পরিবর্তে আপনি ৫০০ বা এর নিচের ওয়াট পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে পিএসইউ কার্যক্ষম নয়। সাধারণত কম রেঞ্জের পিএসইউগুলোতে ওয়াটের এ সমস্যা প্রকট। অনেক সময় এ ধরনের পিএসইউগুলোতে ৩০০-৩৫০ ওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।

পাওয়ার সাপ্লাই কেনার গাইডলাইন

০১. আপনার পিসি যে পরিমাণ কারেন্ট ব্যবহার করবে তার থেকে কমপক্ষে ২০০ ওয়াট বেশি পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করুন।

০২. পিএসইউর ফ্যান Top/Bottom-এ সেটি দেখুন। যদি Top-এ হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যে কেসিংয়ে ব্যবহার করবেন সেটির Top-এ বাতাস টেনে নেয়ার জায়গা আছে কি না।

০৩. কয়টি 12V রেল সকেট আছে এবং প্রতিটি সকেটে কত ওয়াট পাওয়া যাবে। 5V-এ একই বিষয় দেখতে হবে।

০৪. কেসিংয়ে ব্যবহার হওয়া ফ্যানের জন্য আলাদা কর্ড আছে কি না।

০৫. পাওয়ার সাপ্লাই ফ্যানের সাইজ কত মি.মি. এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ কী পরিমাণ বাতাস বের করে দেবে।

০৬. পাওয়ার সাপ্লাইয়ে হিট গার্ড আছে কি না। হিট গার্ডের কাজ হলো তাপ বাড়ার সাথে সাথে ফ্যানের গতি বাড়ানো ও তাপ কমার সাথে সাথে ফ্যানের গতি কমানো। আবার পিসি বন্ধ করার পরও এক-দেড় মিনিট ফ্যান চালু রেখে হিট কন্ট্রোল করা।

০৭. বিভিন্ন কানেকশনের জন্য যে তারগুলো আছে তা পর্যাপ্ত লম্বা কি না।

০৮. কয়টি PCI-I, SATA ক্যাবল কানেকশন আছে।

০৯. ফ্যান চলা অবস্থায় বা ফ্যান না চলা অবস্থায় কোনো ধরনের শব্দ পাওয়ার সাপ্লাই থেকে বের হয় কি না।

যাদের আলাদা গ্রাফিক্সকার্ড নেই অথবা থাকলেও গ্রাফিক্সকার্ডের জন্য আলাদা পাওয়ার দরকার পড়ে না তারা লো রেঞ্জের পিএসইউ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যাদের গ্রাফিক্সকার্ডের জন্য আলাদা পাওয়ারের দরকার হয় তাদের মিড রেঞ্জের পিএসইউ ব্যবহার করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে- কোর আই সেভেন ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১৩০ ওয়াট। একটি রেডিয়ন এইচডি সিরিজের গ্রাফিক্সকার্ড ব্যবহার করে প্রায় ৪০০ ওয়াট। এর সাথে আপনি কত গি.বা. র্যা ম ব্যবহার করছেন, কয়টি হার্ডডিস্ক ব্যবহার করছেন এবং ডিভিডি রম ও মাদারবোর্ডের ওয়াট যোগ করতে হবে। এভাবে যেকোনো ব্যবহারকারী তার সিস্টেমের জন্য মোট কত ওয়াট দরকার তা হিসাব করতে পারেন। হিসাব করে দেখা গেল সিস্টেমটি ৭০০-৭৫০ ওয়াট ব্যবহার করবে। কিন্তু যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দরকার তা কী পিএসইউ সাপ্লাই দিচ্ছে? এটি বোঝা একটু কষ্টসাধ্য সাধারণ ব্যবহারকারীদের। তবে একটি ছোট্ট পরীক্ষার মাধ্যমে কিছুটা বোঝা সম্ভব। এর জন্য আপনার পিসিকে ৩-৪ ঘণ্টা পূর্ণ শক্তিতে ব্যবহার করতে হবে। প্রথমে একটি বড় ধরনের ভিডিও ফাইল নিয়ে সেটিকে কোনো ভিডিও কনভার্সন সফটওয়্যার দিয়ে কনভার্ট করতে হবে। যেনো ভিডিও ফাইলটির সাইজ বড় হয়, তাহলে সেটি কনভার্ট হতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। একই সাথে আপনি ডিভিডি প্লেয়ারে ছবি দেখবেন অথবা কোনো হাইঅ্যান্ড গ্রাফিক্সসমৃদ্ধ গেম খেলবেন। পাশাপাশি আপনি হয়তো কোনো ড্রাইভ ডিফ্র্যাগমেন্ট করলেন। এভাবে অনেক কাজ পিসিতে একত্রে ঘণ্টা তিনেক চালালেন। আপনার পিসির প্রসেসর, র্যা্ম বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ কতখানি কাজ করছে তা দেখে নেবেন সিস সফটসেন্ড্রা সফটওয়্যারে। যতক্ষণ না প্রসেস পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে ততক্ষণ পর্যন্ত পিসিকে কাজ দিয়ে যান। এ জন্য বড় ধরনের ফাইল ও এক ড্রাইভ থেকে অন্য ড্রাইভে ট্রান্সফার করতে পারেন। এভাবে ৩-৪ ঘণ্টা কাজ করার পর সিপিইউর পেছনে পিএসইউ ইউনিটের ফ্যানের বাতাস পরীক্ষা করুন। যদি খুব গম বাতাস বের হয় তবে বুঝতে হবে আপনি যে পিএসইউ ব্যবহার করছেন তা আপনার পিসির জন্য যথেষ্ট নয়। আবার নেটে বিভিন্ন ধরনের ভোল্টেজ কারেন্ট মনিটর সফটওয়্যার পাবেন। সেসব ব্যবহার করেও আপনি মোটামুটি হিসাব করতে পারবেন।

কমপিউটারের সব পাওয়ার সাপ্লাই কাজ করে স্যাম্পস পদ্ধতিতে। আমরা অনেকেই জানি, কমিপউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের জন্য বিভিন্ন মানের ভোল্টেজ ও কারেন্ট দরকার হয়। ট্রান্সফরমারের সাহায্যে এত রকম ভোল্টেজ ও কারেন্ট তৈরি করা হলে পিএসইউর আকার বেড়ে যেত। আবার ট্রান্সফরমারের বৈদ্যুতিক আবেশ বেশি, তাই বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সাথে ইন্টারফেয়ারেন্স ঘটে। আরও অনেক ধরনের সমস্যা এড়াতে ইন্টারফেয়ারের ব্যবহার পিএসইউতে কম করা যায়। আবার খুব মসৃণ কারেন্ট ও কম জায়গার জন্য আইসি ও ট্রানজিস্টরনির্ভর স্যাম্পস পদ্ধতি খুবই উন্নতমানের।

সময়ের সাথে সাথে পিএসইউতে যোগ হচ্ছে মাইক্রোকন্ট্রোল চিপ। এ চিপগুলো পিএসইউ-কে করেছে আগের চেয়ে আরও সমৃদ্ধ। এ মাইক্রোকন্ট্রোলারগুলো খুবই উন্নতমানের। এ চিপগুলো একই সাথে সব আউটপুট পোর্ট, কারেন্ট মনিটর করে। কোনো পোর্ট শর্ট হলে বা যেকোনো সমস্যা হলে সে পোর্টের সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। পিএসইউ ইউনিটের তাপমাত্রা মনিটর করে এবং একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ওপর তাপমাত্রা উঠতে দেয় না। তাপমাত্রা বাড়া বা কমার সাথে সাথে পিএসইউ ফ্যানের গতি কমায় বা বাড়ায়, ইনপুট ভোল্টেজ মনিটর করে, একটি নির্দিষ্ট লো ভোল্টেজ পর্যন্ত সাপ্লাই চালু রাখে। এর নিচে নেমে গেলে কারেন্ট সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। হাই ভোল্টেজে গেলে সঙ্কেত দেয় এবং একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে গেলে সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। সফটওয়্যারের মাধ্যমে অটো ও ম্যানুয়াল ম্যানেজ করা যায়।

সর্বশেষ বলা দরকার বাসার আর্থিং ঠিক আছে কি না তা দেখে নেয়া।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : minitohid@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস