লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ডিজিটাল বাংলাদেশ বনাম হাইব্রিড বাংলাদেশ
মানুষকে ভাবতে হয় আগামী দিনগুলো নিয়ে। আগামী দিনগুলোকে অনাবিল করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। যে ব্যক্তি বা জাতি আগামীর ভাবনায় থাকবে অগ্রসর, সে ব্যক্তি বা জাতির জন্যই অপেক্ষা করে সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ভাবনা ছাড়া সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ রচনার জন্য আমাদেরকে হতে হবে যেমনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, তেমনি হতে হবে ফিউচারিস্ট বা ভবিষ্যদ্বাদী। এই ভবিষ্যদ্বাদী চিন্তা-চেতনার পথ ধরে ঘটে যুগ পরিবর্তন। যুগ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে সমান্তরালভাবে পথ চলতে না পারলে যেকোনো জাতিকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। প্রযুক্তির বিপ্লব এরই মধ্যে মানবজাতিকে উপহার দিয়েছে চারটি যুগ : প্রস্তরযুগ, কৃষিযুগ, শিল্পযুগ, তথ্যপ্রযুক্তিযুগ। কিন্তু এসব যুগের অভিজ্ঞতার অবগাহন করে এরই মধ্যে আমরা প্রায় প্রদার্পণ করেছি প্রযুক্তির আরেক নতুন যুগে। এ যুগের নাম ‘টেকনোলজিক্যাল হাইব্রিড এইজ’ তথা ‘প্রযুক্তির সঙ্করযুগ’। এটি হচ্ছে প্রযুক্তির পঞ্চম বিপ্লবযুগ এবং এটি প্রযুক্তির সবচেয়ে ব্যাপক ও সর্বব্যাপী যুগ। এখানে মানবজাতি আর প্রযুক্তি এমনভাবে বিজড়িত হবে, যেনো একটি থেকে অন্যটিকে আলাদা করা কোনোমতেই সম্ভব হবে না। টেকনোলজির এই পর্যায়টিকে বোঝানোর মতো উপযুক্ত কোনো শব্দ এখনো বেছে নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে এর কাছাকাছি অর্থ বোঝানোর জন্য জার্মান ভাষার Technik শব্দটিকে কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন। এর অর্থ শুধু ‘টেকনোলজি’ নয়, টেকনোলজির পদ্ধতি-প্রক্রিয়া ও আকার-প্রকার সম্পর্কে বিশারদ হওয়ার মতো পর্যায়ে জ্ঞানার্জনও এর আওতাভুক্ত। প্রযুক্তির এই সঙ্করযুগের রয়েছে পাঁচটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য : এ যুগের প্রযুক্তির উপস্থিতি হবে সর্বব্যাপী; প্রযুক্তির বুদ্ধিমত্তা ক্রমেই বিকশিত হতে হতে মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রায় কাছাকাছি চলে যাবে, তবে মানব বুদ্ধিমত্তাকে তা অতিক্রম করতে পারবে না; প্রযুক্তির সামাজিক মাত্রাও সময়ের সাথে বেড়ে চলবে; নতুন ধ্যান-ধারণের সাথে যুক্ত ও সমন্বিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সক্ষমতাও বাড়বে; প্রযুক্তি সামনে নিয়ে আসবে নতুন নতুন বিনাশ বা ডিজরাপশন।
আমরা কেউ নিশ্চিত জানি না প্রযুক্তির এই অসাধারণ অগ্রগতি কোথায় নিয়ে আমাদের দাঁড় করাবে। তবে একথা নিশ্চিত বলা যায়, সঙ্করযুগের প্রযুক্তি সম্পদ, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজে আনবে এক ব্যাপক পরিবর্তন। এ পরিবর্তন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কোনো উপায় কোনো দেশ-জাতির থাকবে না। এই বাংলাদেশের মানুষের জন্যও তা সমভাবে প্রাযুক্ত। তাই এখন সময় আমাদেরকে যথাযথভাবে ফিউচারিস্ট হওয়া ও ফিউচারবাদী ধ্যান-ধারণাকে ধারণ করে এ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, এরই মধ্যে যখন প্রযুক্তির পঞ্চম বিপ্লবযুগে আমরা বসবাস ও এর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে শুরু করেছি, তখন জাতীয়ভাবে পরিকল্পনা করছি প্রযুক্তির চতুর্থ বিপ্লবযুগ তথা তথ্যযুগে নিজেদের উত্তরণের জন্য। সেখানে পৌঁছার টাইমলাইন আমাদের জন্য ২০২১ সাল। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা পরিকল্পনা করছি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার। এই হচ্ছে আমাদের পিছিয়ে থাকার এক জায়মান উদাহরণ।
মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তির এ সঙ্করযুগে আমরা ক্রমেই হয়ে উঠছি যন্ত্রের অংশ। আর যন্ত্রও হয়ে উঠছে আমাদের অংশ। অতএব এ যুগের জন্য আমাদের তৈরি হতে হবে এখন থেকেই, যথার্থ সচেতনতা নিয়ে। তাই ডিজিটাল যুগের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এসে আমাদেরকে পরিকল্পনা করতে হবে সঙ্করযুগের উপযোগী ‘হাইব্রিড বাংলাদেশ’ গড়ার। আর সে কাজে নামতে হবে একটুও দেরি না করে, এক্ষণে এই সময়ে। এ তাগিদ রইল সংশ্লিষ্ট সবার জন্য। এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে হাইব্রিড এইজ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। আশা করি তা আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখাবে।
কজ ওয়েব