• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > তৈরি হচ্ছে বায়োনিক ম্যান
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
রোবট
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
তৈরি হচ্ছে বায়োনিক ম্যান


মার্কিন টিভি সিরিজ সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান, চলচ্চিত্র রোবোকপ, টার্মিনেটর ইত্যাদি সায়েন্স ফিকশন যারা দেখেছেন, তাদের কাছে বায়োনিক ম্যান বা অস্বাভাবিক শক্তি কিংবা বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তৈরির ধারণা নতুন কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এতদিন সেই ধারণা ছিল শুধু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতেই সীমাবদ্ধ। এখনকার খবর হচ্ছে, সেদিন আর নেই। এখন বাস্তবেই আসতে যাচ্ছে বায়োনিক ম্যান।

কমপিউটারের ভেতরে যেমন থাকে নানা ধরনের যন্ত্রাংশ এবং সেগুলো যেমন প্রয়োজনে আপগ্রেড বা পরিবর্তন করে কমপিউটারের উন্নয়ন ঘটানো যায়, তেমনি মানবদেহের নানা পার্টস বা অঙ্গ পরিবর্তন করে কিংবা বলা যায় পাল্টে ফেলে দেহকে আরো শার্প বা চৌকস করার কথা দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এখন বলছেন, সেদিন আর দূরে নয়।

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পারসেপশন, অ্যাকশন অ্যান্ড বিহেভিয়ার তথা আইপিএবির পরিচালক প্রফেসর সেথু বিজয়কুমারের এখন হাতের সংখ্যা তিনটি। তার তৃতীয় হাতটি অর্থাৎ কৃত্রিম হাতটি বাম হাতের কনুইয়ের সাথে সংযুক্ত। এটি কৃত্রিম বাহুর আধুনিক সংস্করণ। তার ডান হাতে রয়েছে একগাদা সেন্সর। বাহুর মাংসপেশী নড়াচড়া হলে যে বায়োসিগনাল তৈরি হয় ওই সেন্সরগুলো তা চিহ্নিত করে এবং প্রয়োজনীয় সাড়া দেয়। মাংসপেশীর টান এবং শিথিলতাই জানিয়ে দেয় হাত খুলতে হবে, নাকি বন্ধ করতে হবে।

২০০৭ সালে এডিনবরার প্রতিষ্ঠান টাচ বায়োনিকস কৃত্রিম মানব অঙ্গ তৈরি করে, যাতে সংযুক্ত করা হয় আঙুল। এখন সেই আঙুলের মাথায় যুক্ত করা হচ্ছে কৃত্রিম সেন্সর। গত চার বছর ধরেই এ কাজ চলছে এবং বিষয়টিতে ক্রমাগত উন্নয়ন ঘটছে। শেষ পর্যন্ত যদি চূড়ান্ত সফলতা ধরা দেয়, তাহলে কোনো দুর্ঘটনায় বা অসুস্থতাজনিত কারণে যদি কারো অঙ্গহানি ঘটে বা অঙ্গ অচল হয়ে পড়ে তাহলে তার সেই অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যাবে। কিংবা যদি কারো মনে হয় তার দুটি হাত বা দুটি পা কিংবা অন্য কোনো অঙ্গ যা আছে তা যথেষ্ট নয়, সে ক্ষেত্রেও সে অতিরিক্ত অঙ্গ যুক্ত করতে পারবে।

প্রফেসর সেথু বিজয়কুমার আই-লিম্বর হয়ে টাচ বায়োনিকসের সাথে কাজ করছেন। তার গবেষণার প্রধান ফোকাস হলো- ম্যানুয়াল কন্ট্রোলের উন্নয়ন ঘটানো এবং হাতের সেন্সরটি ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করা। তিনি খুব ভালোভাবেই লক্ষ রাখছেন, কৃত্রিম বাহু বা হাত দিয়ে গ্লাস ধরার সময় সেটি যেনো অতিরিক্ত চাপে ফেটে না যায়। কিংবা কারো সাথে করমর্দন করার সময় চাপটা যেনো এত বেশি না হয়, যা অন্য কারো কষ্টের কারণ হয়ে দেখা দেয়। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে পুরো প্রকল্পটিই সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।

বিজয়কুমার বলেন, শুধু হাত খোলা বা বন্ধ করার সিগনালই নয়, তারা পালস বা হৃদস্পন্দন সিগনালকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। কিভাবে হৃদস্পন্দনকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কোনো বস্ত্তর সংস্পর্শে এলেই যাতে পালস মোডে চলে যাওয়া যায়, সে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। এটি করা গেলে বস্ত্তর ওজন বা অবস্থা অনুযায়ী হাতের মুঠি অপেক্ষাকৃত শক্ত বা নরম করার কাজে সেটি ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই কৌশল যদি বাস্তবে রূপ পায় তাহলে মানুষের জন্য খুলে যাবে নতুন দুয়ার। তখন মানুষ দেহের অকার্যকর কিংবা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অঙ্গ পরিবর্তন করে কৃত্রিম সবল অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হবে। মানুষ হয়ে উঠবে সুপার স্মার্ট।

বিজয়কুমার বলেন, আমরা এখন আঙুলের মাথায় কৃত্রিম সেন্সর সংযুক্ত করার কাজ করছি। কোনো বস্ত্ত ধরার সাথে সাথে ওই সেন্সর বস্ত্ত সম্পর্কে তথ্য পাঠাবে এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিজের কাজ ঠিক করবে। এখন গবেষণা হচ্ছে সেই তথ্য বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে। এ জন্য কম্পমান মোটর নিয়েও আলোচনা চলছে, যা বসানো থাকবে চামড়ার সাথে। হাতের চাপ বাড়ানোর সাথে সাথে কম্পন মাত্রাও বাড়তে থাকবে।

মানবদেহের শক্তি বাড়ানোর জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ নতুন কিছু নয়। অনেক বছর ধরেই গবেষকেরা এসব কৌশল ব্যবহার করে আসছেন। নতুন কৌশল মানুষকে নিয়ে যাবে নতুন সম্ভাবনার দ্বারে। এ পর্যায়ে মানুষের আসল অঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি কাজ করবে কৃত্রিম অঙ্গ। এ কাজে ব্যবহার হচ্ছে রোবোটিক্স, সেন্সর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কেভিন ওয়ারিক নিজেই তার দেহকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে ইতোমধ্যেই কমপিউটার এবং এক্সট্রা সেন্সরি ডিভাইস ব্যবহার করেছেন। তার বাহুতে যুক্ত রয়েছে ব্রেনগেট নামে পরিচিত একটি রোবোটিক বাহু। ওই বাহু নিয়ন্ত্রিত হয় ইন্টারনেট এবং একগাদা ইলেকট্রোড দিয়ে। ওয়ারিক বলেন, আমি ছিলাম নিউইয়র্কে এবং আমার রোবোটিক হাতটি ছিল রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি আমার ব্রেন সিগনাল দিয়ে এত দূর থেকেও সেন্সর ব্যবহার করে হাতটি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছি।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ভবিষ্যৎ বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ডিএআরপিএ ইতোমধ্যেই দেহের কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে কমপিউটারকে কাজে লাগাচ্ছে।

এদিকে জাপানের বিজ্ঞানীরা টেলিসার ভি নামে একটি সংবেদনশীল রোবট উদ্ভাবন করেছেন। সম্প্রতি এটি বাজারে ছাড়া হয়। এই রোবট ব্যবহারকারীর নড়াচড়া অনুকরণ করতে পারে। এই রোবট ব্যবহারকারী রোবটের প্রতিক্রিয়া দেখতে, শুনতে ও অনুভব করতে পারবেন। এ জন্য ব্যবহারকারীকে বিশেষ কিছু সরঞ্জাম ও পোশাক পরতে হয়। কিভাবে এবং কিসের সাহায্যে রোবট মানুষকে অনুকরণ করে এবং মানুষ কিভাবে টেলিসার ভির প্রতিক্রিয়া দেখতে, শুনতে ও অনুভব করতে পারে, নিচে তা তুলে ধরা হলো।

ট্রানজিস্টর নিয়ে গবেষণায়ও সাফল্য ধরা দিয়েছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক একক অণু থেকে ট্রানজিস্টর তৈরির ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন ও পারদু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এ সফলতা পেয়েছেন। ফসফরাসের একক অণুর এ ট্রানজিস্টর মুরস ল’কে অগ্রাহ্য করতে সক্ষম হবে বলেই ধারণা করছেন গবেষকেরা। মুরস ল’ অনুসারে কমপিউটারের ক্ষমতা প্রতি দুই বছরে দ্বিগুণ হতে থাকে। গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে নেচার ন্যানো টেকনোলজি সাময়িকীতে।

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সিলিকনের ওপর ফসফরাস অণুর সাহায্যে ‘গেট’ বা বিদ্যুৎপ্রবাহের পথ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিতভাবে বিদ্যুৎপ্রবাহ চলাচল করতে পারে। তবে এর সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, একক অণুর ট্রানজিস্টরকে এমন স্থানে রাখতে হবে, যার তাপমাত্রা মাইনাস ৩৯১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। গবেষকেরা আশা করছেন, ফসফরাস অণুর এ ট্রানজিস্টর তৈরির সাফল্য ক্ষুদ্রতর ও দ্রুতগতির কোয়ান্টাম কমপিউটার তৈরিতে সাহায্য করবে।

গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের গবেষক মিশেল সিমনস। গবেষণা প্রসঙ্গে সিমনস জানিয়েছেন, ১০ বছর আগে গবেষণা শুরু করেছিলাম আমরা। ২০২০ সাল নাগাদ সফল হব এমন আশা ছিল। চেষ্টা করছিলাম, যত দ্রুত সম্ভব এক অণুর ডিভাইস তৈরি ও মুরস ল’কে ভাঙার, অবশেষে ২০১২ সালের শুরুতে আমরা সে সাফল্য পেলাম।

এসব নিত্যনতুন উদ্ভাবনা কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিবিশ্ব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনই কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে বিজ্ঞানীরা এ কথা স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন, তারা যে কাজ করে চলেছেন তার সবই মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষ যাতে ক্রমাগত অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়, সে জন্যই তারা নিরলস কাজ করে চলেছেন। এখন সময়ই বলে দেবে বিজ্ঞান আমাদের ঠিক কোথায় নিয়ে যায়।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস