লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা শৃঙ্খলা চাই, শৃঙ্খল নয়
ঢাকার আকাশের মতো দেশের ভার্চুয়াল আকাশে এখন তপ্ত রোদ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান দমকা হাওয়ার মাঝে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার খসড়া প্রকাশের পর থেকেই ভার্চুয়াল আকাশের এই রোদ যেনো ক্রমেই তেতে ওঠে। দেশের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার এই উদ্যোগ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কৌশলে শৃঙ্খল পরানোর নীলনকশা হবে কি না, এমন শঙ্কায় শঙ্কিত এখন দেশবাসী। অবশ্য বুয়েট থেকে শিক্ষিত-দীক্ষিত হাসানুল হক ইনু তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেয়া প্রতিশ্রুতির পর শরতের রোদ শেষে হেমন্তের দেখা মিলবে বলে আশা করছেন অনেকেই। আর অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়নে জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে খসড়া নীতিমালা সংশোধনে চিন্তা-চেতনায়, মন ও মননে তরুণ নাগরিকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে নানামাত্রিকতায় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছেন। নিজেদের অভিমত জানাতে অভিনব কর্মসূচিও পালন করেন। অনলাইন গণমাধ্যম খসড়া নীতিমালা নিয়ে এমনই একটি অভিনব কর্মসূচি চোখে পড়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর। তখন বিকেল ৪টা। ঢাকার কারওয়ান বাজারের ওয়াসা কার্যালয়ের সামনের সড়কে বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করতে দেখা যায় একদল তরুণ-তরুণীকে। মুহূর্তেই আশপাশ থেকে জড়ো হয় কয়েকশ’ পথচারী এবং থেমে যায় বাদ্য আর নৃত্যের এই ঝলকানি। বলে রাখা ভালো, আকস্মিক একটি স্থানে জড়ো হয়ে প্রচলিত কোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতিবাদ জানানোর নাম ‘ফ্ল্যাশ মব’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ‘সরকারের অনলাইন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা’র প্রতিবাদে পথচারীদের সম্বিত ফিরিয়ে আনতে দেশে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় গান ‘ওপা গ্যাংনম স্টাইল’-এর তালে তালে এই ‘ফ্ল্যাশ মব’ নৃত্যে শরিক হয়েছিল বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশত তরুণ-তরুণী। দেশের তরুণ এই প্রতিনিধিদের অভিমত, সারা বিশ্বে অনলাইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে। আর তাই চাইলেই সরকার এটি রুখতে পারবে না।
গত ১২ সেপ্টেম্বর অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা (খসড়া) নীতিমালা ২০১২ ঘোষণা করার পর থেকে ভার্চুয়াল দুনিয়ার পাশাপাশি সরব হয়ে ওঠে দেশের মানুষ। অনলাইন ফেসবুক, বিভিন্ন ব্লগ ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের পাশাপাশি দেশজুড়ে শুরু হয় গোলটেবিল বৈঠক, মানববন্ধন, গণস্বাক্ষরের মতো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন।
এমন পরিস্থিতিতে খসড়া নীতিমালা প্রকাশের দুই দিনের মাথায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর ইসলাম ও মহানবী সা: নিয়ে বিকৃত ও অবমাননাকর চলচ্চিত্র তৈরির ঘটনা প্রথম প্রকাশ পায় অনলাইনে। ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামের এই ছবিটির ১৪ মিনিটের একটি ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করে এর ইহুদিবাদী নির্মাতা নাকুলা বাসিলে নাকুলা (Nakoula Basseley Nakoula)। অজ্ঞাত স্থান থেকে বাসিলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই তথ্য দেন। তথ্যটি ওই দিনই অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশের পর মুহূর্তে ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবে চলচ্চিত্রটির বেশ কয়েকটি ট্রায়াল ভার্সনও ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বিশ্ব মুসলিমের পাশাপাশি বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশও।
কাকতালীয় হলেও ঘটনাটি অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার বিষয়ে নতুন করে ভাবিয়ে তোলে।
এদিকে উপস্থাপনের দিনই প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে মতামত দিতে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানিয়েছিলেন, মতামতের ওপর ভিত্তি করে অক্টোবর মাসেই নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। অবশ্য এর আগেই অপরিপক্ব ও দায়সারা গোছের খসড়া নীতিমালা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। খসড়া নীতিমালাটিকে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা বলা হলেও সেখানে এর সংজ্ঞায়ন এবং আওতা স্পষ্ট না হওয়ায় মতামত দেয়ার পরিবর্তে এর যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দেয়। মুক্ত মতের প্লাটফর্ম হিসেবে অনলাইনে বিশ্বজুড়ে পরিব্যপ্ত ব্লগাররা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। বাংলাভাষার দেশের প্রথম ব্লগ ‘সামহোয়্যার ইন’ খসড়া নীতিমালার বিরোধিতা করে একটি ‘স্টিকি’ প্রকাশ করে। খসড়াবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচির আপডেট তথ্য প্রচার করে তাদের সংঘবদ্ধ করতে শুরু করে। সেখানে খসড়া নীতিমালাকে কালো নীতিমালা ও মূর্খতার ধারাপাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। একই সাথে এই নীতিমালা তৈরির পেছনে ‘মদদ’ দেয়ার অভিযোগ এনে তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডি নিউজের সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং একই প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বেবী মওদুদকে অনলাইন গণমাধ্যম শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ব্লগের পাশাপাশি একই বিষয়ে সরব হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুক। সেখানে অনলাইন ‘গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১২ : আপনার মত কী?’ এবং ‘অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা- আন্দোলন’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি ফ্যান পেজ খোলা হয়। এসব ফ্যান পেজে নীতিমালা নিয়ে নানা সমালোচনা, তির্যক মন্তব্য, বিশিষ্টজনের লেখার উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকাশ করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রকাশের পরই নীতিমালা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করতে নীতিমালার খসড়া কপিটি হুবহু তুলে ধরে অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪ ডটনেট। শীর্ষ অনলাইন সংবাদমাধ্যমের মধ্যে বার্তা২৪-এর স্বতন্ত্র কনটেন্ট ‘মিডিয়া’ বিভাগে এটি প্রকাশ হওয়ার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য প্রণীত খসড়া নীতি নিয়ে আলোচনায় বসেন শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদপত্রের সম্পাদকেরা। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে দেশের শতাধিক অনলাইন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি এই আলোচনা সভায় অংশ নেন। বৈঠকে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার ওপর onlineeditorbd@gmail.com-এ মতামত দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহবান জানানো হয়।
এর আগের দিন ২১ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা-২০১২ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করে প্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংগঠন প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি সূফী ফারুক ইবনে আবু সুফিয়ানের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জববার।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রাজধানী ছাড়াও ২৩ সেপ্টেম্বর জেলায় জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এবং তথ্যমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। কর্মসূচির মধ্যে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় সেমিনার- ‘অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা (খসড়া) নীতিমালা : পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন’। আরসি মজুমদার মিলনায়তনের (লেকচার থিয়েটার ভবন, ঢাবি) এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী ও সাইফুল হক। এভাবেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট তথা পিআইবি সম্মেলনকক্ষে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ২৪ডটকমের সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স সম্পাদক ও সংসদ সদস্য বেবী মওদুদ, বিএফইউজের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান এহসানুল করিম হেলাল, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, ডিএফপির মহাপরিচালক শামীম চৌধুরী, প্রাইম খবরের সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি ও বার্তা সংস্থা আবাসের প্রধান মোস্তাফা জববার, পিটিবির সম্পাদক আশীষ দে, আইএনবির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার জাকির আহমেদ প্রমুখ।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় অনলাইন গণমাধ্যম নয়, শুধু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও বার্তা সংস্থাগুলোর জন্যই একটি সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক মিডিয়া কোনোভাবেই এই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে না।
অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে কিভাবে বিজ্ঞাপন-সহায়তার আওতাভুক্ত করা যায়, সে লক্ষ্যেই এ নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, অনলাইন সংবাদমাধ্যমের অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য সহায়ক একটি নীতিমালা করতে চায় সরকার। আর এ লক্ষ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দেশের প্রথমসারির অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও বার্তা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এই কমিটিতে।
তিনি বলেন, এই নীতিমালার উদ্দেশ্য হবে দ্রুত বিকাশমান অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে বিজ্ঞাপন সহায়তার আওতাভুক্ত করা। যেসব অনলাইন গণমাধ্যম সংবাদমাধ্যম হিসেবে কাজ না করে শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে, সেগুলো এই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে না।
খসড়া নীতিমালায় কী আছে?
সংবাদমাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার খসড়া বাতিল হচ্ছে এমন ইঙ্গিতবহ খবর প্রকাশ হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা প্রতিবেদন লেখার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই পাঠকের পর্যালোচনার জন্য খসড়া নীতিমালার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে উল্লেখ করা হলো। একই সাথে নীতিমালার যেসব বিষয় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সে বিষয়েও আলোকপাত করা হলো এ লেখার শেষ দিকে।
এই নীতিমালা ‘অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা ২০১২’ নামে অভিহিত হবে। প্রয়োজনীয় তথ্যাবলীসহ (অফিস অবকাঠামো, মোট জনবল ও নির্ধারিত ব্যাংক ব্যালেন্স, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতার সনদপত্র) যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অনলাইন গণমাধ্যম স্থাপনের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক এবং কোম্পানিকে অবশ্যই বাংলাদেশী কোম্পানি হতে হবে। এই নীতিমালার অধীনে প্রদেয় লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা কিংবা পরিচালনা করতে পারবে না।
আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আবেদনের সাথে ফেরতযোগ্য আর্নেস্টমানি বাবদ সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবরে দুই লাখ টাকার ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার দিতে হবে। সরকার নির্বাচিত আবেদনকারীদের অনুকূলে লাইসেন্স দেয়ার পর বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। লাইসেন্স নেয়ার সময় আবেদনকারী এককালীন পাঁচ লাখ টাকা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কোডে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে মূল কপি মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।
প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট খাতে ৫০ হাজার টাকা ফি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। সরকার প্রয়োজনে লাইসেন্স ফি পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ৩০ দিন আগে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে এবং বিশেষ কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নবায়ন করতে ব্যর্থ হলে পাঁচ হাজার টাকা সারচার্জ জমা দিয়ে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্স নেয়ার সময় অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানের আগের দেয়া আর্নেস্টমানি বাবদ দুই লাখ টাকা পরে জামানত হিসেবে গণ্য হবে। অনলাইন পত্রিকার ক্ষেত্রে পত্রিকার প্রতিটি কপিতে প্রকাশক ও সম্পাদকের নাম-ঠিকানা অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে।
অনলাইন পত্রিকার ক্ষেত্রে পরিচালনাকারীর ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে দুই লাখ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স থাকতে হবে। সব অনলাইন গণমাধ্যম বাংলাদেশে স্থাপিত সার্ভারে হোস্টিং করতে হবে। ডিএনএসআই ডোমেইন নেম সার্ভার ইন্টারনেট প্রটোকল সম্পর্কে তথ্য মন্ত্রণালয় অবহিত থাকতে হবে। অনলাইন গণমাধ্যমের অন্য কোনো দেশী বা বিদেশী গণমাধ্যম লিঙ্ক করা যাবে না। সম্প্রচারিত বিষয়গুলোর রেকর্ড (কনটেন্ট) ৯০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। বিজ্ঞাপন প্রচার, সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানসহ প্রতিদিনের মোট প্রচার সময়ের ২০ শতাংশের বেশি হবে না।
অনলাইন গণমাধ্যম দেশী-বিদেশী ধারণ করা অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারবে। তবে সরকার অনুমোদিত সেন্সর নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে অনুসৃত হবে। কোনো অবস্থাতেই বিদেশী অনলাইন গণমাধ্যম সংবাদ, সংবাদ পর্যালোচনা, টক-শো, আলোচনা, সম্পাদকীয় এবং সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে অনুষ্ঠান ও মন্তব্য সরাসরি সম্প্রচার বা ধারণ করা বা যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণ একযোগে বিনামূল্যে সম্প্রচার করতে হবে। সরকার ঘোষিত বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ দিবসের সংবাদ অথবা অনুষ্ঠানাদি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করতে হবে। দেশের জরুরি জাতীয় প্রয়োজনে বা জনস্বার্থে প্রচারের জন্য সরকার যখন যেরকম নির্দেশ দেবে, তা যথাযথভাবে প্রচার করতে হবে। সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা প্রতিফলনসহ বিনামূল্যে সরকারি প্রেস নোট, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে ক্ষতিকর কিছু রয়েছে- এমন কোনো সংবাদ বা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা যাবে না।
বার্ষিক ফি হিসেবে লাইসেন্স প্রতিষ্ঠান অনলাইন প্রচারিত বিজ্ঞাপন বাবদ প্রাপ্ত মোট অর্থের শতকরা দুই ভাগ সরকারি কোষাগারের সংশ্লিষ্ট খাতে চালানের মাধ্যমে প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে। বর্তমানে বিদ্যমান অনলাইন গণমাধ্যমের কোনো টেলিভিশন, বেতার এবং সংবাদপত্রকে এই নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর অনধিক ১২০ দিনের মধ্যে এই নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স করতে হবে।
....................................................................................................................................................................................................................................
সাক্ষাৎকার
হাসানুল হক ইনু
তবে আশার কথা, সাধারণ্যের এই বিচলিত অবস্থায় নতুন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি তথা ডিআরইউ আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, অনলাইন নীতিমালার খসড়া তৈরি হওয়ার পর অনেক সুপারিশ আসছে, আসবে। এখনই কিছু চূড়ান্ত হচ্ছে না। অনলাইন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় বসেই তা চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, সংবাদ কোনো পণ্য নয়। অনলাইনবান্ধব ও গতিশীল নীতিমালা আলোচনার মাধ্যমেই চূড়ান্ত করা হবে। এতে চিন্তার কিছু নেই।
খসড়া নীতি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘খসড়া নীতিমালা খসড়াই। খসড়ার কোনো দাম নেই। আমরা যদি নীতিমালা করি তবে তা সহায়ক নীতিমালা হবে।’ অনলাইন নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই নীতিমালায় অনেক কিছুই ভুল আছে। তা দূর করার জন্যই আলোচনা। মহাজোট সরকার আলোচনা ছাড়া কোনো নীতিমালা করবে না। অনলাইন নীতিমালার ব্যাপারে যেকোনো মন্তব্য এলে তা না পড়া পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় তুলব না।’
....................................................................................................................................................................................................................................
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনার খসড়া নীতিমালা ২০১২-কে গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক দাবি করে নীতিমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নীতিমালার মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যম সম্বন্ধে সরকারের নীতিনির্ধারকদের একটি বিপজ্জনক ধরনের অজ্ঞতার প্রকাশ পেয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই নীতিমালা তরুণ সমাজের সৃজন স্পৃহাকে ধ্বংস করবে। নীতিমালা এতটাই ‘বোগাস’ যে বাস্তবে সবার প্রতি এটি সমানভাবে প্রয়োগ করা অসম্ভব।
তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে, তাদের থামানোর জন্য এই নীতিমালা। তাই এটি হচ্ছে একটি তলোয়ার, যা যখন-তখন যার-তার গলা কাটার জন্য ব্যবহার করা হবে। অনলাইন খসড়া নীতিমালার অসঙ্গতি তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, খসড়া নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যমকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪ডটকম অনলাইনের ব্লগও আছে। এগুলো এ নীতিমালার মধ্যে আসবে কি না?
....................................................................................................................................................................................................................................
আরেফিন সিদ্দিক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জানান, স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। অনলাইন নীতিমালা সবার সাথে আলোচনা করে করা হবে। আইন আর নীতিমালা এক জিনিস নয়। এক্ষেত্রে অনেকেই প্রিন্ট মিডিয়ার নীতিমালা অনলাইনের ক্ষেত্রে অনুসরনের কথা বলেছেন। অনলাইনের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালার দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে তার মতপ্রকাশের। তবে নাগরিকের মতপ্রকাশ যেনো কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থে ব্যবহার না করা হয়। ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। তাই তথ্য প্রকাশ করার সময় তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। অনলাইনকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের উচিত হবে না। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় স্বাধীনতা থাকবে। আর এই স্বাধীনতা অবাধ হবে না।’
....................................................................................................................................................................................................................................
আখতারুজ্জামান মঞ্জু
আইএসপিএবি সভাপতি আখতারুজ্জামান মঞ্জু বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে ইন্টারনেটসেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরো বলেন, প্রতিমাসেই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে ব্যবহারকারীদের রেকর্ড জমা দিতে হয়। এমনকি সরকারের অনুরোধে তারা ব্যবহারকারীর তথ্যাদিতে প্রবেশ করেন, যা ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ।
....................................................................................................................................................................................................................................
মোস্তাফা জববার
নীতিমালার খসড়া সম্পর্কে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জববার বলেন, একটি বিকাশমান তথ্যমাধ্যমকে গলাটিপে ধরার ইচ্ছা সরকারের কেনো হলো, সেটি সত্যি সত্যি চিন্তার বিষয়। সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা ২০১২ নামের একটি নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় তার পছন্দ করা কিছু প্রতিষ্ঠানকে তাদের ঘরে ডেকে নিয়ে সভা করেছে এবং মতামত দেয়ার জন্যও বলেছে। এ মতবিনিময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোনো সংগঠন বা এ খাতে যারা নীতিনির্ধারণী দিকনির্দেশনা দিতে পারেন তাদের কাউকে ডাকা হয়েছে বলে জানি না। বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি, বাংলাদেশ কমপিউটার সোসাইটি, বেসিস, আইএসপিএবি ইত্যাদি জাতীয় সংগঠনকে কোনোভাবেই এ নীতিমালা প্রণয়নের সাথে যুক্ত করা হয়নি।
মোস্তাফা জববারের প্রশ্ন, সাধারণ মানুষের কাছে মোটেই বোধগম্য হচ্ছে না এটি কী কারণে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি জরুরি বিষয়ে পরিণত হলো? এ মন্ত্রণালয় নিউজ সার্ভিস সংক্রান্ত নীতিমালা এখনও তৈরি করতে পারেনি, অনলাইন নিয়ে মাতামাতি করছে কেনো?
নিজস্ব যুক্তি টেনে তিনি বলেন, যদি আমরা একটু তলিয়ে দেখি তবে এটি বুঝতে হবে না যে, আসলে অনলাইন শব্দটি ব্যবহার করে কার্যত ইন্টারনেটে মতপ্রকাশের বা তথ্যপ্রকাশের পায়ে বেড়ি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এটি অবশ্যই মনে করি, ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের এমন প্রবল একটি অংশ যে একে যদি আমরা গুরুত্ব না দিই তবে সেটি মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কিন্তু নীতিমালার প্রণেতারা যে ইন্টারনেটের পরিধি অনুভব করেন না তার প্রমাণ হচ্ছে, এরা অনলাইন গণমাধ্যম নামের এমন একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন যার কোনো ব্যাখ্যা তাদের দলিলে নেই। আজকের দিনে এমন মূর্খ কোথায় পাওয়া যাবে যিনি ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
....................................................................................................................................................................................................................................
কাবেরী গায়েন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেছেন, ‘এই ধরনের অনলাইন নীতিমালা হলে দেখতে পাব যে যাদের কাছে দুই বা পাঁচ লাখ টাকা কোনো ব্যাপার না তাদের কাছে অনলাইন চলে যাবে। এটা আমরা দেখতে চাই না। অনলাইনের জন্য যে নীতিমালা করা হচ্ছে তা বাণিজ্যিক নীতিমালার মতো। এই নীতিমালায় আমাদের প্রতিবেশী ভারত সীমান্তে আমাদের দেশের মানুষ মারছে তার প্রতিবাদ করা যাবে না। তাই একটি সমন্বিত ও সহায়ক নীতিমালার প্রয়োজন।’
....................................................................................................................................................................................................................................
সরদার ফরিদ আহমদ
প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা-২০১২ সম্পর্কে অভিমত জানতে চাইলে বার্তা২৪ডট নেটের সম্পাদক সরদার ফরিদ আহমদ বলেন, যেকোনো মিডিয়ার জন্য সরকারের একটি নীতিমালা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই অনলাইন নীতিমালার জন্য নীতিমালা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তিনি বলেন, কিন্তু খসড়া নীতিমালায় এমন কিছু বিষয়ের হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, যা অনলাইনকে বন্ধ করে দেয়ার শামিল। এই যেমন হোস্টিংয়ের বিষয়টি। লোকাল হোস্টিংয়ের মাধ্যমে কোনো অনলাইন স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবে না। কারণ, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে লোকাল হোস্টিংয়ে চলা যায় না, ইতোমধ্যেই তা প্রমাণিত হয়েছে।
খসড়া নীতিপ্রণেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, বাইরে হোস্টিংয়ের মাধ্যমে এখন যে নিরাপত্তা ও সার্ভিস আছে সেটা কি লোকাল হোস্টিংয়ে পাওয়া যাবে? আমার মনে হয় না যাবে, যদি না যায় তাহলে কী হবে? সরকার তখন অনলাইন গণমাধ্যম মালিকদের কী বলবে? সরকার কি বলবে, যতটুকু সার্ভিস পাওয়া যাবে ততটুকু দিয়েই কাজ চালাতে হবে। তাহলে এটাই বলে দেয়া ভালো- অনলাইন মিডিয়া বাংলাদেশে থাকবে না।
তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালায় আরও একটি প্রবল নেতিবাচক বিষয় রয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিদেশী অনলাইন গণমাধ্যমের লিঙ্ক রাখা যাবে না। অডিও-ভিডিও ব্যবহার করা যাবে না। বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ সম্পর্কিত কোনো খবর অনলাইনে দেয়া যাবে না। সবগুলো বিষয়ই অনলাইন গণমাধ্যমের গলা চেপে ধরার শামিল। এসব আইন করা মানে একটাই- অনলাইন মিডিয়াকে চূড়ান্তভাবে বাধাগ্রস্ত করা।
....................................................................................................................................................................................................................................
আলমগীর হোসেন
খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরডটকমের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের কাছে তার মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালা নিয়ে ইতোমধ্যেই সৃষ্ট জনপ্রতিক্রিয়া দেখে সরকার আগের খসড়া নীতিমালা বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে। তাই খসড়া নীতিমালা নিয়ে এখন আমার বলার কিছু নেই।
তাহলে কি অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য নীতিমালা তৈরির ভাবনা থেকে সরকার সরে আসছে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা নয়। আসলে এক্ষেত্রে নীতিমালা শব্দটি বেশ কনফিউজিং। তাছাড়া অনলাইন গণমাধ্যমের আওতা নিয়েও জনমনে কিছুটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই অনলাইন গণমাধ্যমে শুধু নিউজ পোর্টালগুলোর কাঠামোগত দিকটি নির্ধারণ করতে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। মুক্ত মতপ্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত হয় সরকার এমন কোনো নীতিমালা তৈরি করবে না। আর নীতিমালাটি যেনো গ্রহণযোগ্য হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর একটি বৈঠকও করেছে। বৈঠকে দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালের কাঠামো বা রূপরেখা নির্ধারণের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের ৯ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি পরবর্তী বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সরকারের কাছে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।
....................................................................................................................................................................................................................................
আফসান চৌধুরী
বিডিনিউজ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক আফসান চৌধুরী প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার সমালোচনা করে বলেন, এ নীতিমালা সুশাসন ও গণতন্ত্রের আন্দোলনকে বরং কয়েক ধাপ পিছিয়ে দেবে। অন্যান্য দেশ যখন তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন ও মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার চর্চাকে নিশ্চিত করছে সেখানে বাংলাদেশেরও পিছিয়ে থাকার উপায় নেই। আইন ও নীতিমালার ওপর গুরুত্বারোপের চেয়ে তিনি ব্যক্তি ও সমাজের সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক রুচি ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন।
....................................................................................................................................................................................................................................
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল
বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তার ওপর সংবিধানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ নম্বর ধারায় সুস্পষ্টভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় লক্ষাধিক নীতিমালা, বিধি ও আইন থাকলেও এসবের প্রয়োগ খুব কমই হয়। এবং এসব আইনের সাথে সবসময় জনগণের কোনো যোগাযোগ থাকে না। প্রস্তাবিত অনলাইন নীতিমালার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই নীতিমালা নিয়ন্ত্রণমূলক, ইন্টারেনেটে মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। জাতিসংঘের বিশেষ রেপোর্টিয়ার ফ্রাঙ্ক লা রুয়ের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেট স্বাধীনতায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পাশাপাশি তিনি নাগরিক ও নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দেন যাতে ইন্টারনেট স্বাধীনতার কারণে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অযথা হয়রানির শিকার না হয়।
....................................................................................................................................................................................................................................
গোলাম মোর্তোজা
‘সাপ্তাহিক’ সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অধিকারের মতো মতপ্রকাশের অধিকার জনগণের মৌলিক অধিকার। এই অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’-এর ২০১১-১২ সালের প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, মতপ্রকাশের এই নাজুক অবস্থার মধ্যেও যদি নতুন করে বাকস্বাধীনতা রোখার নীতিমালা করা হয় তাহলে অনলাইননির্ভর সংবাদ এজেন্সি ও সাইটগুলো এই নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও বৈষম্যের শিকার হবে।
....................................................................................................................................................................................................................................
সেলিম সামাদ
সাংবাদিক সেলিম সামাদ বলেন, সম্প্রতি প্রস্তাবিত ‘অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা ২০১২’ বর্তমান প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হলে তা মতপ্রকাশের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং গুটিকয়েক মুনাফালোভী করপোরেট বাণিজ্যের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা। দেশব্যাপী যেসব তরুণ উদ্যোক্তারা বেশ কিছু নিউজ এবং ভিউজ সাইট পরিচালনা করছেন, তাদের সাইটগুলো এই নীতিমালার কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রস্তাবিত নীতিমালা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে তা মতপ্রকাশের বাধা হিসেবেই দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, এ নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যমের কোনো সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে অনলাইন গণমাধ্যম হিসেবে ধরা হবে তাও স্পষ্ট নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শুধু গণমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এই নীতিমালা খসড়া তৈরি করেছে।
....................................................................................................................................................................................................................................
মুহাম্মদ খান
বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ খান বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য অবশ্যই নীতিমালা থাকা দরকার। নীতিমালা বা রূপরেখা না থাকলে কোনো কিছুই সুষ্ঠুভাবে চলে না। বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তবে নীতিমালার কারণে যেন এর বিকাশ বন্ধ না হয়, সে বিষয়টি সবার আগে খতিয়ে দেখতে হবে। এর মধ্যে যেন এমন কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা না হয়, যা অনৈতিকভাবে ব্যবহার করা যাবে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। নীতিমালা নিয়ে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ তথা পিআইবির বৈঠকের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তীব্র সমালোচনার মুখে সরকার অনলাইন নীতিমালা নিয়ে নতুন করে ভাবছে, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করছে এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তাড়াহুড়া না করে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নীতিমালা বা কাঠামো যা-ই তৈরি করা হোক না কেনো ভবিষ্যতে সুফল বয়ে আনবে বলেই আমার বিশ্বাস।
নতুন ভাবনায় ফেসবুক, টুইটার কিংবা ব্লগ নীতিমালা বা কাঠামোর বাইরে রাখা হচ্ছে এটা কতটা যৌক্তিক প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ খান বলেন, ফেসবুক বা টুইটার আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম। চাইলেই এসব বিষয়ে বিধি-নিষেধ আরোপ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে এখানে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো স্থানীয় প্রতিনিধি না থাকায় এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেমন সহজ নয়, আবার বৈশ্বিক কারণেই এগুলো বন্ধ করে দিয়েও আমরা চলতে পারব না। তবে দেশ থেকে পরিচালিত ব্লগগুলোর বিষয়ে ভাবার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। সংবাদমাধ্যম না হলেও ব্লগের মতো গণমাধ্যমে মাঝে মাঝে কুরুচিপূর্ণ শব্দের ব্যবহার, আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহারে শ্লীলতাহানি ও মিথ্যাচারের মতো ঘটনাও দেখা যায়। এটা খুবই দুঃখজনক।
....................................................................................................................................................................................................................................
সূফী ফারুক ইবনে আবু সুফিয়ান
অনলাইন গণমাধ্যমের নীতিমালাটিকে খসড়া বলা হলেও এর চেহারাটা আইন বা প্রজ্ঞাপনের মতোই দাবি করে ‘প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ’-এর সভাপতি সূফী ফারুক ইবনে আবু সুফিয়ান বলেন, এর ফলে শুধু যে অনলাইন গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়, ব্লগারদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ঘটবে। তিনি বলেন, ২০১২ সালের এই সময়ে অনলাইন গণমাধ্যমের নীতিমালা মুক্তচিন্তার মানুষদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে। নীতিমালায় বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে, তা কোনোমতেই মানা সম্ভব নয়। খসড়া নীতিমালা মুদ্রিত পত্রিকার সাথে আয়, সার্কুলার, লাইসেন্স, জামানত, নবায়ন ইত্যাদি একেবারেই সামঞ্জস্যহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমালোচিত বিষয়
অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা নিয়ে যত বিতর্কই হোক না কেনো শৃঙ্খলা, জবাবদিহিতা ও পেশাদারিত্ব রক্ষায় এর গুরুত্ব একেবারেই উড়িয়ে দেননি সুধীজনেরা। তবে নীতিমালা করে শৃঙ্খলার নামে শৃঙ্খল পরানোর ভয়ে ত্রস্ত সুশীল সমাজ। খসড়া নীতিমালার বেশ কিছু হাস্যকর ও অবাঞ্ছিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করায় মূলত প্রকাশের পর থেকেই ধবল ধোলাই হয়েছে। দারুণভাবে সমালোচিত হয়েছে।
যেমন- অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞায়ন, এর আওতা প্রচলিত সংবাদপত্র এবং এগুলোর অনলাইন সংস্করণ ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিতর্ক ও এদের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিষয় উপেক্ষিত থেকেছে। অর্থাৎ গোড়ায় গলদ রেখেই প্রণীত হয়েছে নীতিমালার এই খসড়া। বস্তুত প্রস্তাবিত নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞা দেয়া নেই। ফলে এ শব্দটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এটি দিয়ে কি শুধু অনলাইনে প্রকাশিত নিউজ সার্ভিস বা অনলাইন পত্রিকা নামের গণমাধ্যমকে বোঝানো হয়েছে কি না, তাও স্পষ্ট নয়।
একইভাবে- খসড়া নীতিমালার ১১ (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অনলাইন পত্রিকার ক্ষেত্রে পত্রিকার প্রতিটি কপিতে প্রকাশক ও সম্পাদকের নাম-ঠিকানা অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ‘অনলাইন পত্রিকার প্রতিটি কপি’ শব্দটি ওয়েব সংশ্লিষ্ট যে কারও কাছেই হাস্য-কৌতুকের জন্ম দিয়েছে।
খসড়া নীতিমালার ৬ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট খাতে নবায়ন ফি দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু কেন দিতে হবে তার কোনো যুক্তি নেই। সরকার কি অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপন হিসেবে টেন্ডারগুলো দেবে, নাকি মাসিক ভর্তুকি দেবে? নাকি ডোমেইন-হোস্টিংয়ের মাসিক ফি বহন করবে? প্রশ্ন উঠেছে- কোনোটিই যেখানে নয়, সেখানে ঠিক কী কারণে তথ্য মন্ত্রণালয়কে এককালীন পাঁচ লাখ আর প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে? সমালোচকেরা এই নীতিকে সরকারি চাঁদাবাজির ডিজিটাল স্টাইল বলতেও কসুর করেননি।
অবকাঠামোগত সেবা নিশ্চিত না করেই দেশে ডোমেইন হোস্টিং করার নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে। ফলে শুরু থেকেই দেশের বাইরে যাদের ডোমেইন-হোস্টিং, তাদের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত না বাড়ানোয় নীতিমালাটি অনেকটা চাপিয়ে দেয়া কানুন হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। তাছাড়া কেউ যদি দেশের বাইরে থেকে একটি অনলাইন পত্রিকা চালান সেক্ষেত্রে সরকারের কিন্তু কিছুই করার নেই। কোনো অনলাইন পত্রিকা যদি লন্ডন, নিউইয়র্ক, কোপেনহেগেন কিংবা টরন্টো থেকে কথিত লাইসেন্স ছাড়াই প্রকাশিত হয় তাও সরকারের পক্ষে সামাল দেয়া সহজ নয়। মূলত এ ধরনের নীতিমালা প্রণেতাদের প্রযুক্তিসচেতনতা বা জ্ঞানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
অনলাইন গণমাধ্যমকে আবেদনের জন্য টাকা, আর্নেস্টমানি, ফি, নবায়ন ফি ইত্যাদি আরোপের কথা বলা হয়েছে। অথচ দেশে কেউ যদি একটি পত্রিকা বের করে বা যদি কোনো নিউজ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করে তবে তার জন্য কোনো একটি কড়িও ব্যয় করতে হয় না। অথচ ছোট ছোট ওয়েব পোর্টাল বা নিউজ চ্যানেলের জন্য লাখ লাখ টাকা ফি ও অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে। এটি বৈষম্যমূলক হিসেবেই দেখছেন বিজ্ঞজনেরা।
এককথায় বললে, অনলাইন হচ্ছে ইন্টারনেটকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তথ্য প্রকাশ করা। একটু ঝেড়ে কেশে বলা যায়, ইন্টারনেটে প্রকাশিত ওয়েবসাইট, পোর্টাল, ফেসবুক ও এর সাথে যুক্ত সব কার্যক্রম, গুগল প্লাস, টুইটার, ওয়েব পেজ, ব্লগ এবং পত্রিকা ও টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণ ইত্যাদি সবই গণমাধ্যম। কোনো কোনো সময় দেখা যায়, ফেসবুক বা টুইটারের একটি মন্তব্য একটি সংবাদপত্রের হেডলাইনের চেয়েও বেশি মানুষের নজরে আসে এবং তার প্রভাব পড়ে। ইন্টারনেটে এখন রেডিও বা টিভিও প্রচারিত হয়। প্রকাশ করা হয় ব্যক্তিগত ভিডিও। এমন ভিডিও শেয়ারিং ওয়েব ইউটিউব আজ একটি মহাশক্তিধর ভিডিও চ্যানেল। দুনিয়ার সব টিভি চ্যানেলের চেয়ে অনেক বেশি ভিডিও ধারণ করে এবং দুনিয়ার সব টিভি চ্যানেল যে প্রভাব বিস্তার করে তার চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে এটি। অতি সম্প্রতি ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ নামের মাত্র ১৪ মিনিটের একটি ভিডিও দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, যার উৎস হচ্ছে ইউটিউব। ফলে ইন্টারনেটবিহীন দুনিয়ায় মিডিয়া নামের যত ধরনের মাধ্যম রয়েছে, তার সাথে সামাজিক যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত মতামতও মিডিয়া হয়ে গেছে।
ফলে এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করতে গেলে নিবিড়ভাবে ভাবতে হবে। এর পরিসর এতই ব্যাপক যে সুনির্দিষ্ট ভূখন্ড বা সংস্কৃতির কথা চিন্তা করে তা প্রণয়ন করা হবে বোকামি। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনকেও আমলে আনতে হবে। এর মানে এই নয় যে আমরা লাগামহীন হব। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না- দেশের প্রচলিত মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইনে কাগজে ছাপা একটি লিফলেটও আইনের অধীন। সেই হিসেবে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বাইরে প্রকাশ্যে যতসব কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে তার সবই কাগজে ছাপা লিফলেটের মতোই গণমাধ্যম। কেউ একজন ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে যদি কোনো মন্তব্য করেন তবে সেটি একটি লিফলেটের চেয়ে কম নয়। এসব মাধ্যমে নোট লেখা বা লিঙ্কগুলো যুক্ত করা প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে বেশি পাবলিক কর্মকান্ডে। ব্লগে যেসব মন্তব্য প্রকাশ করা হয় সেটিও কোনোভাবেই প্রকাশ্য মাধ্যমের চেয়ে কম নয়। তাই এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে কেউ যদি বেআইনী কিছু করে তাকে আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো খুব কঠিন নয়। এজন্য বিদ্যমান আইনে কিছু পরিমার্জন বা পরিবর্ধন করতে হবে। একইভাবে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের নামে যেনো যথেচ্ছাচার না হয় সেদিকেও এখনই নজর দিতে হবে।
কজ