• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > এ সময়ের সেরা ত্রিশ প্রযুক্তি-প্রবণতা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি ভাবনা
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ৩
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
এ সময়ের সেরা ত্রিশ প্রযুক্তি-প্রবণতা
ইনফরমেশন টেকনোলজি তথা আইটির ক্ষেত্রে একমাত্র ধ্রুবসত্য হচ্ছে, এর ‘ফ্রানটিক চেঞ্জ’-আমাদের ভাষায় ক্ষিপ্ত-প্রচন্ড-চরম পরিবর্তন প্রবণতা। যারা কমপিউটিংয়ের সাথে দূরতম সংশ্লিষ্টতা রাখেন, তারাও কমবেশি বিশ্বখ্যাত Moor’s Law-এর কথা শুনে থাকবেন। এই মুর’স ল’-এর সার কথা হচ্ছে- ‘the number of transistors that can be placed inexpensively on an integrated circuit doubles approximately every two years.’-এখানেই আইটি ক্ষেত্রের ফ্রানটিক চেঞ্জের বিষয়টি নিহিত। ইন্টেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর ১৯৬৫ সালে আইটির পরিবর্তন ধারা সংশ্লিষ্ট এ সূত্রটি আমাদের জানিয়েছিলেন। আইটি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রবণতা এখনো চলমান। ফলে দ্রুত বিদায় নিচ্ছে পুরনো প্রযুক্তি, আর সে জায়গা দখল করছে নতুন কোনো প্রযুক্তি। এই পরিবর্তনের সাম্প্রতিক প্রযুক্তি-প্রবণতা তুলে ধরার প্রয়াস পাব এ লেখায়। এ লেখায় থাকছে সুনির্দিষ্ট ৩০টি প্রযুক্তি-প্রবণতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পাঠক-সাধারণ তো বটেই, আইটি ব্যবসায়ের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদেরও এ প্রযুক্তির পরিবর্তন-প্রবণতা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অপরিহার্য। নইলে ভুল পদক্ষেপে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নেমে আসতে পারে বড় ধরনের কোনো বিপর্যয়। আর এই বিপর্যয়ে যে আর্থিক ক্ষতি ঘটে, তা কখনই পূরণ করা যায় না। সে উপলব্ধি থেকেই এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে এই প্রযুক্তি-প্রবণতাকেই।

অবসান হতে যাচ্ছে পিসি যুগের

বিগত ৩০ বছর ধরে আমরা পার্সোনাল কমপিউটারকে (পিসি) জেনে আসছি টেকানোলজির ড্রাইভার ইঞ্জিন হিসেবে। ইন্টেল থেকে শুরু করে মাইক্রোসফট, ডেল, এইচপি সবার ক্ষেত্রে এটি সত্য। কিন্তু মোবাইল কমপিউটিংয়ের উত্থানের ফলে পিসির জগৎকে সঙ্কুচিত করে আনছে এবং পিসি কিভাবে ব্যবহার হবে তার সংজ্ঞাকেও পাল্টে দিচ্ছে।

গত বছর আগস্টের দিকে এইচপি নিশ্চিত করে জানিয়ে দেয়, কোম্পানিটি এর পিসি সস্তা দামে বিক্রি করে দিয়ে এ ব্যবসায় বন্ধ করে দেবে। অথচ আমরা এইচপিকে জেনে আসছি বিশ্বের বৃহত্তম পিসি বিক্রেতা এবং সিলিকন ভেলির সবচেয়ে পুরনো কোম্পানি হিসেবে। এর গভীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে পিসি ইকোসিস্টেমের সাথে। একই সাথে এ কোম্পানিটি বেরিয়ে আসছে হার্ডওয়্যার গেম থেকেও। এইচপি এখন সুরক্ষা দিতে চাইছে এর ট্যাবলেট পিসি ও স্মার্টফোন অপারেশনগুলোকে। শুধু এইচপি-ই একমাত্র কোম্পানি নয়, যারা পিসি ব্যবসায়কে আর অনুকূল মনে করছে না। গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ডেল কোম্পানি এর আয়ের রিপোর্ট প্রকাশ করে স্বীকার করে এর পিসি ব্যবসায় যেমনটি হওয়ার কথা তেমনটি আর হচ্ছে না। অথচ এটি ছিল এ কোম্পানির প্রধান নির্ভরযোগ্য ব্যবসায় এবং আয়ের প্রধান উপাদান। বলা যায়, পিসি ব্যবসায় ছিল এর ‘ব্রেড-অ্যান্ড-বাটার’ বিজনেস। শুধু এই দুটি কোম্পানির কথা বাদ দিলেও গোটা পিসি শিল্পের কথা বিবেচনায় আনলেও দেখা যাবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিসি শিল্পখাতটিই যেনো সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। এর প্রবৃদ্ধি এক অঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। পিসি উৎপাদকদের জন্য নিশ্চিতভাবেই তা উৎসাহব্যঞ্জক নয়।

যেসব কোম্পানি উদ্ভাবনায় আগ্রহী, সেগুলো তাদের উদ্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে পিসিকে বেছে নেবে না। বরং এরা আগ্রহী হবে ল্যাপটপ উদ্ভাবনায়। ল্যাপটপগুলোতে আসবে দ্রুততর প্রসেসর, হবে আরো হালকা-পাতলা। এইচপি, ডেল ও অন্যান্য সেরা সেবা কোম্পানি (এসার, লেনোভো ও তোশিবা) একই সফটওয়্যার, চিপ ও হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে কার্যত একই ধরনের কমপিউটার তৈরি করবে। এরই মধ্যে প্রচলিত পিসির জায়গা দখল করবে ফ্যাবলেট পিসিআর স্মার্ট ফোন।

আমরা যদি ২০১১ সালের কিছু পরিসংখ্যান লক্ষ করি তবে দেখব, পিসির যুগ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসার প্রবণতা খুবই সুস্পষ্ট। ২০১১ সালে বেশি থেকে বেশি সংখ্যায় বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে অন্যান্য কমপিউটারের (নোটবুক ও পিসি একসাথে ধরে) তুলনায়। এবং বিশ্বের প্রায় সব হালনাগাদ সেলফোন দ্রুত রূপ নিচ্ছে স্মার্টফোনে। বিখ্যাত বাজার গবেষক প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে- স্মার্টফোনের বিক্রি এতটাই ভালো হবে যে ২০১৬ সালের মধ্যে ক্লাসিক পিসির তুলনায় তিনগুণ বেশি বিক্রি হবে স্মার্টফোন। ট্যাবলেট পিসির ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল মনে হচ্ছে। আগামী চার বছরে ট্যাবলেট পিসি বিক্রির সংখ্যা পিসি বিক্রির সংখ্যার সমপর্যায়ে পৌঁছে যাবে।

পূর্বাভাস : কোটি কোটি মানুষ রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা স্মার্টফোন দিয়ে ইন্টারনেটে কাজ করবে, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সম্পন্ন করা যাবে এসব স্মার্টফোনে। আমরা চাই আর না চাই, পিসি যুগের অবসান ঘটিয়ে মোবাইল যুগই টিকে থাকবে।

নতুন টাচ ডিভাইস ও হাইব্রিড নোটবুকস

উইন্ডোজের আসন্ন সংস্করণটি সহজেই অপারেট করা যাবে আপনার আঙ্গুল ব্যবহার করে। আসন্ন উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেমের বিশেষ চাহিদা থাকবে হাইব্রিড নোটবুকে। আসুস এই নতুন সেগমেন্টে এগিয়ে এসেছে এর টাইচি (Taichi) নোটবুক নিয়ে। টাইচি হচ্ছে ডুয়াল স্ক্রিন উইন্ডোজ ৮ নোটবুক। এর অর্থ হচ্ছে এর ব্যবহারকারী এর ডিসপ্লে স্ক্রিনের সামনে ও পেছন থেকে দেখতে পাবেন। অর্থাৎ এর কেসিংয়ের বাইরে রয়েছে একটি বাড়তি স্ক্রিন। এতে টাচ ফাংশন সম্ভব শুধু হাই-এন্ড নোটবুকে। অপরদিকে কমদামী নোটবুকগুলোতে আপনি পাবেন এই ফাংশনে নেভিগেট করার জন্য ট্র্যাকপ্যাড। কোনো প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে এই সুযোগ খুবই উপকারী হবে। তাইওয়ানি কোম্পানির পক্ষ থেকে ‘আসুস টাইচি’ একটি বৈপ্লবিক পণ্য। এতে সম্মিলন ঘটানো হয়েছে আল্ট্রাবুকের শক্তি এবং ট্যাবলেটের ফ্লেক্সিবিলিটি ও মোবাইলিটি। হালনাগাদ টাইচি আল্ট্রাবুকের থাকবে একটি হাই ডেফিনিশনে ডিসপ্লের টাচস্ক্রিন। এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ১৯২০ X ১০৮০। এই ডিভাইসটি ০.৩৫ ইঞ্চি পুরু। এটি ১১.৬ ইঞ্চি ও ১৩ ইঞ্চি এই দুই সংস্করণে পাওয়া যাবে।

মেমরি ট্রান্সফার ৬০ টেরাবাইট সাড়ে ৩ ইঞ্চি ড্রাইভে

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান IHS iSuppli জানিয়েছে, ক্লাসিক ম্যাগনেটিক ড্রাইভে স্টোরেজ ক্যাপাসিটির ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতি ঘটেছে। আগামী চার বছরের মধ্যে HAMR (Heat Assisted Magnetic Recording) নামের একটি নতুন প্রযুক্তি সুযোগ এনে দেবে একটি ম্যাগনেট ড্রাইভে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ১ টেরাবাইট ডাটা ডেনসিটির সুযোগ। নিশ্চিতভাবে এই ডাটা ডেনসিটি খুবই উঁচু হারের। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ড্রাইভকে উত্তপ্ত করা হবে একটি লেজারের সাহায্যে ডাটা রাইটিংয়ের জন্য, যা দুর্বল ম্যাগনেটিক ফিল্ড মোকাবেলা করে জায়গা করে দেবে আরো বেশি পরিমাণ ডাটার জন্য।

এইচএমআর হচ্ছে এমন এক প্রযুক্তি, যা চুম্বকীয়ভাবে একটি অতি স্থিতিশীল মিডিয়ায় ডাটা রেকর্ড করে লেজার ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তিতে অতি স্থিতিশীল চুম্বকীয় যৌগ (যেমন লোহা ও প্লাটিনামের সঙ্কর) ব্যবহার করা হয়। এই যৌগ একক বিট অধিকতর কম জায়গায় স্থান সঙ্কুলান করতে পারে। এইচএমআর প্রযুক্তি ২০০৬ সালে উদ্ভাবন করে ফুজিৎসু।

পূর্বাভাস :
২০১৬ সালের মধ্যে ডেস্কটপ হার্ডডিস্কের থাকবে ৩০ থেকে ৬০ টেরাবাইট ক্যাপাসিটি। নোটবুক ড্রাইভগুলোতে (২.৫ ইঞ্চি) সুযোগ থাকবে ১০ থেকে ২০ টেরাবাইট মেমরি ট্রান্সফারের।

চিপ নোটবুক

অ্যাটম প্রসেসর কখনই নোটবুকের জন্য ডিজাইন করা হয়নি। ইন্টেল সস্তা দামের নোটবুক তৈরির ক্ষেত্রে এক ধরনের পিছুটান দিয়েছে। এমনি যখন অবস্থা তখন আসুস ২০০৮ সালে এর EeePC-র একটা বড় ধরনের অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলে। আসুস প্রতিষ্ঠিত এটি একটি নেটবুক ক্যাটাগরি। তা সত্ত্বেও এরই মধ্যে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী অগ্রাধিকার দিচ্ছে সুষ্ঠু কমপিউটার ব্যবহারের জন্য আরো দ্রুতগতির সিপিইউর প্রতি। এর পরিণতিতে এখন আর তেমন কোনো নোটবুক প্রোভাইডার খুঁজে পাওয়া যায় না, যারা নেটবুক বিক্রির উদ্যোগ নেয়।

পূর্বাভাস :
শুধু ইন্টেল বিক্রি করছে করে সামান্যসংখ্যক কিছু অ্যাটম সিপিইউ। তারচেয়ে বরং বেশি বিক্রি করবে আরো বেশি দামের মোবাইল প্রসেসর। এর অর্থ সস্তা নোটবুকের ক্ষেত্রে দেখা দেবে এক ধরনের নিম্নমুখী প্রবণতা।

প্রিমিয়াম আল্ট্রা-থিন নোটবুক

বেশ কিছু বছর ধরে আল্ট্র-থিন (অতি হালকা-পাতলা) নোটবুক এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। ট্রেন্ডি এসব নোটবুক বাজারে অস্তিত্বশীল থাকলেও কিছুদিন আগেও এগুলোর দাম ছিল খুবই বেশি। কিন্তু অতি সম্প্রতি এগুলো সত্যিকারে হালকা-পাতলা রূপ ধারণ করেছে। এখন এএমডি এর নতুন সিপিইউসমৃদ্ধ যে আল্ট্র-থিন নোটবুক নিয়ে এসেছে তা ক্রেতাদের ওপর দামের চাপ কমিয়ে দেবে। এএমডি’র এক্সিলারেটেড প্রসেসিং ইউনিট তথা এপিইউসমৃদ্ধ এবং দেখতে সুন্দর। আগামী প্রজন্মের আল্ট্রা-থিন নোটবুকে আরো জোরদার পিসি অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। এগুলো হবে সুপার-স্লিম ও অল-ডে ব্যাটারিসমৃদ্ধ। এ বছর ইন্টেল চালু করতে যাচ্ছে এর আল্ট্রা-স্লিম ল্যাপটপের জন্য নতুন প্লাটফর্ম। অধিকন্তু ইন্টেল এখন প্লাস্টিক দিয়ে ল্যাপটপ তৈরি করছে। এই প্লাস্টিক অ্যালুমিনিয়ামের মতোই স্থিতিশীল ও টেকসই। এএমডি ফিউশন ট্রিনিটি ও ইন্টেল কোর আই সিরিজ আইডি ব্রিজসমৃদ্ধ ল্যাপটপ অনেক ক্ষেত্রেই হবে খুবই হালকা-পাতলা। তবে এএমডি ও ইন্টেল নেবে আলাদা উদ্যোগ, যাতে আল্ট্রা-থিন নোটবুক আরো বেশি মাত্রায় সবার ক্রয়সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা যায়।

পূর্বাভাস :
এ বছরই বাজার পাওয়া যাবে ৬০০ ইউরোর কাছাকাছি দামে।

বাজেট গ্রাফিক্স কার্ড

ইন্টেল ও এএমডি যখন থেকে তাদের সিপিইউয়ে সরাসরি গ্রাফিক ইউনিট ইন্টিগ্রেট করতে শুরু করল, তখন থেকে এসব চিপসেট উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করতে শুরু করে। ইন্টেলের আইভি ব্রিজ সিপিইউগুলো ও এএমডির নতুন ট্রিনিটি প্রসেসরের উদাহরণ টেনে বলা যায়, এগুলো এদের সংশ্লিষ্ট উত্তরসূরিদের ৫০ শতাংশ পেছনে ফেলে দেয় থ্রিডি পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে। সামরিক দাফতরিক ব্যবহারের জন্য এদের সিপিইউর গতি পর্যাপ্তের চেয়েও বেশি। আর অধিকতর নতুন নতুন ডেস্কটপ ও নোটবুক মাদারবোর্ডও সুযোগ দিচ্ছে পযার্ন্ত ভিডিও পোর্টের।

পূর্বাভাস :
ক্রেতার ক্রয়সাধ্য গ্রাফিক্সকার্ডের দাম ৭০ ইউরোর মতো, যা খুব শিগগিরই অচল হয়ে পড়বে।

কোয়াড-কোর সিপিইউ

কোয়াড-কোর সিপিইউ খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে এমনকি সস্তা স্মার্টফোনেও। ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের মল্লযুদ্ধ এখন চলছে। এখন বেশি বেশি সংখ্যায় তৈরি হচ্ছে কোয়াড-কোর সিপিইউ। খুব শিগগিরই তা শুধু হাই-এন্ড ডিভাইসেই পাওয়া যাবে না, সেই সাথে পাওয়া যাবে এন্ট্রি-লেভেল ডিভাইসেও। এনভিডিয়া কাই (Nvidia’s Kai) প্লাটফরম ট্যাবলেট টেগরা-৩ চিপসেটসমৃদ্ধ হবে। আর এর দাম হবে ২০০ ইউরো। আসুস, এসার ও গুগল খুব শিগগিরই এমন দামের অ্যান্ড্রয়িড ট্যাবলেট উৎপাদন শুরু করবে। আজকের দিনের HTC One X-এর মতো কোয়াড-কোর ফোন পাওয়া যাবে সহনীয় মূল্যে। ২০১৩ সালে ফোর কোর হবে এর স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু সফটওয়্যার যদি এগুলোর ভালো ব্যবহার করতে পারে, তবে অধিকতর কোর খুব একটা বাস্তবসম্মত হবে না।

প্রথম দিকে প্রসেসরগুলো ডেভেলপ করা হতো একটি মাত্র কোর দিয়ে। একটি ডুয়াল-কোর প্রসেসরের রয়েছে দুই কোর। যেমন এএমডি ফেনোম ২এক্স২, ইন্টেল কোর-ডুয়ো। এ কোয়াড-কোর প্রসেসরে রয়েছে চারটি কোর। যেমন এএমডি ফেনোম ২এক্স২, ইন্টেলের কোয়াড-কোর প্রসেসর। একটি হেক্স-কোর প্রসেসরে রয়েছে ছয়টি কোর এবং একটি অক্টা-কোর প্রসেসরে রয়েছে আটটি কোর। একটি মাল্টিকোর প্রসেসর একটি একক ভৌত প্যাকেজে কার্যকর করে মাল্টিপ্রসেসিং। একটি কোয়াড-কোর প্রসেসর এক সময়ে বহু ইনস্ট্রাকশন অনুসরণ করতে পারে। ফলে প্রোগ্রামের সার্বিক গতি বাড়িয়ে তুলে। এটি প্যারালাল প্রসেসিংয়ে মানানসই।

পূর্বাভাস :
২০১৩ সালের মধ্যে ফোর কোর তথা কোয়াড-কোর হবে স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শমান। কোয়াড-কোরকে বাস্তবে ভালো কাজে লাগাতে না পারলে অধিকতর কোর বাস্তবসম্মত হবে না।

ফ্যাবলেট

স্মার্টফোনগুলো এখন নিয়ে আসছে বড় থেকে আরো বড় ডিসপ্লে। বড় ডিসপ্লের স্মার্টফোন তৈরির প্রবণতায় সামনের সারিতে রয়েছে স্যামসাং। এক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে ‘স্যামসাং নোট এন৭০০০’। এরই মধ্যে এর বিক্রি ৭০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর ডিসপ্লে স্ক্রিন ৫.৩ ইঞ্চি। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘এবিআই রিসার্চ’ বলেছে ফ্যাবলেট ক্যাটাগরির স্যামসাংয়ের স্মার্টফোন এক বিস্ফোরণ সৃষ্টি করেছে।

ফ্যাবলেট বলা হয়েছে এমন টাচ স্ক্রিন ডিভাইসকে, যার ডিসপ্লে স্ক্রিন ৫ ইঞ্চির চেয়েও বড়। ফ্যাবলেট হচ্ছে সেই ডিভাইস যার মধ্যে সন্নিবেশিতে করা হয়েছে একটি স্মার্টফোন ও একটি মিনি ট্যাবলেটের সক্ষমতাকে। স্মার্টফোন বলতে আমরা বুঝি সেই মোবাইল ফোনকে, যার রয়েছে একটি ফিচার ফোনের তুলনায় অধিকতর অগ্রসরমানের কমপিউটিং ও কানেকটিভিটির ক্ষমতা। আর মিনি ফ্যাবলেট পিসি হচ্ছে পূর্ণ আকারের ফ্যাবলেট পিসির তুলনায় ছোট পিসিকে। প্রথম বাজারে আসা মিনি ফ্যাবলেট পিসি হচ্ছে স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি ট্যাব, যার স্ক্রিনের পরিমাপ ৭ ইঞ্চি। স্মার্টফোনের তুলনায় কিছুটা বড় কিছু ও প্রকৃত ফ্যাবলেটের চেয়ে ছোট ট্যাবলেটই হচ্ছে মিনি ফ্যাবলেট। ফ্যাবলেটের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে ব্যবহার হয় একটি স্টাইলাস পেন।

পূর্বাভাস :
বড় স্ক্রিনওয়াল ২০ কোটি ফ্যাবলেট বিক্রি হবে ২০১৫ সালের মধ্যে। এমনটি আশা করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।

ডিডিআর৪ র‌্যাম হবে আরো গতিসম্পন্ন ও কার্যকর

আগামী প্রজন্মের মেমরি মডিউলস এখন তৈরি। ডিডিআর৩ ডির‌্যামের পরবর্তী ডিডিআর৪ মেমরি কমপিউটার পাওয়া যাবে আগামী বছর। মাইক্রন গত মে মাসে ঘোষণা দিয়ে একথা জানিয়েছে। কোম্পানিটি বলেছে, আগামী দিনের এই মেমরি টাইপের নমুনা পণ্য এরা ইতোমধ্যেই চালান দিতে শুরু করেছে। ডিডিআর৩ টাইপ মেমরি আজকের দিনে বেশিরভাগ নতুন কমপিউটারে বিল্টইন হিসেবে পাওয়া যায়। এটি ডিডিআর৪ মেমরির তুলনায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে কম কার্যকর ও কম গতির। ডিডিআর৪ মেমরির জন্য লাগবে কম ওয়ার্কিং ভোল্টেজ : ১.০ থেকে ১.২ ভোল্ট। যেখানে এর পূর্বসূরি মেমরি ডিডিআর৩-এর জন্য লাগবে ওয়ার্কিং ভোল্টেজ ১.২ থেকে ১.৫ ভোল্ট। ডিডিআর৪-এর বাস (ক্লক) স্পিড শুরু হবে ২১৩৩ মেগাহার্টজ থেকে, যা এর বর্তমান স্পিডের তুলনায় দ্বিগুণ।

জেইডিইসি তথা ‘জয়েন্ট ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ইঞ্জিনিয়ারিং কাউন্সিল’ সংজ্ঞায়ন করে থাকে মেমরি স্ট্যান্ডার্ড। আশা করা হচ্ছে, এই কাউন্সিল আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ডিডিআর৪ স্পেসিফিকেশনের কাজ চূড়ান্ত করবে। এর পরপরই মাইক্রন কোম্পানি শুরু করবে ডিডিআর৪-এর ভলিউম প্রডাকশন। চলতি বছরের শেষ দিকে। ডিডিআর৪ প্রথম আসবে সার্ভার ও ডেস্কটপ কমপিউটারে। এরপর তা ব্যবহার হবে ল্যাপটপ কমপিউটারে। মাইক্রন এক বিবৃতিতে এ-ও জানিয়েছে- যেসব ট্যাবলেট ও পোর্টেবল ডিভাইসে বর্তমানে কম বিদ্যুৎশক্তির ডিডিআর৩ এবং ডিডিআর২ মেমরি ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোতেও একসময় ডিডিআর৪ ব্যবহার হবে।

পূর্বাভাস :
এর উত্তরসূরি মেমরি সংস্করণের মতোই ডিডিআর৪ মেমরিও সফলতা পাবে। ২০১৩ সালের মধ্যে এটি চালু হতে পারে ইন্টেলের হসওয়েল প্লাটফর্মে।

এলো অ্যাপ্লিকেশন উইন্ডোজ কমপিউটারের যুগ

কিভাবে কেউ লাখো-কোটি ব্যবহারকারীকে উদীপ্ত করবে সফটওয়্যার, মিউজিক, মুভি ও অন্যান্য ডিজিটাল কনটেন্টের পেছনে সম্ভাব্য সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ খরচ করতে? এটা করা যাবে- যথাসময়ে একটি আকর্ষণীয় অনলাইন ক্যাটালগ অফার করে, নামমাত্র দামে কিংবা বিনামূল্যে এসব পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে, একটি নমনীয় সহজ-সরল পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করে এবং ঠিক একটি মাত্র ক্লিকে এসব ডিজিটাল কনটেন্ট ডাউনলোড করার সুযোগ দিয়ে। আইটিউন ও অ্যাপ স্টোর দিয়ে অ্যাপল যা অর্জন করেছে, এবং গুগলের প্লে স্টেশনের বিদ্যমান যে আকর্ষণ এখনো চালু আছে, ঠিক তা-ই প্রয়োগ করতে হবে আরো বেশিমাত্রায় মাইক্রোসফট কমপিউটার ও স্মার্টফোনগুলোতে। তবেই না ব্যবহারকারীরা এসবের পেছনে অর্থ খরচ করতে আগ্রহী হবে। রেডমন্ডভিত্তিক বিখ্যাত সফটওয়্যার কোম্পানির ইন্টারনেট সেলস প্রটোকল এ বছরেই চালু হবে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ৮-এর সাথে। উইন্ডোজ স্টোর পুরোপুরিভাবে অপারেটিং সিস্টেম সমন্বিত, যাতে আছে দু’টি ভিন্ন সফটওয়্যার : ক্লাসিক উইন্ডোজ প্রোগ্রামস (লেগাসি উইন্ডো অ্যাপস) এবং সেই সাথে তথাকথিত মেট্রো অ্যাপস, যাতে প্রতিফলন রয়েছে উইন্ডোজ ৮ ও টাচ ফাংশনের। উইন্ডোজ স্টোর হবে ম্যাট্রো অ্যাপসের একমাত্র বৈধ উৎস।

পূর্বাভাস :
উইন্ডোজ ৮ ও উইন্ডোজ স্টোর যদি পুরোপুরি মারও খায়, অ্যাপ প্রবণতার সাথে সাথে অনলাইন স্টোরের মাধ্যমে বিক্রি ও বিতরণও উইন্ডোজ জগতে বাড়াবে।

এলটিই : মোবাইলের আরো গতির জন্য

এলটিই টেকনোলজি। পুরো কথায় ‘লং টার্ম ইভোলিউশন’ টেকনোলজি। আমরা যদি এলটিই ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলার বিষয়টি লক্ষ করি, তবে সহজেই বুঝতে পারব, এই প্রযুক্তি কত বড় মাপের সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। ধন্যবাদ জানাতে হয় এর উঁচুমাত্রার ট্রান্সমিশন রেটকে। এ হার হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইট। বাজারে আসার মাত্র দুই বছরের মধ্যে এটিই একমাত্র টেকনোলজি, যা এই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১২ সালের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী এলটিই টেকনোলজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১০ কোটি। বেশিরভাগ এলটিই ব্যবহারকারীই এলটিই নেটওয়ার্কে কাজ করবে কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে। জার্মানিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ বাড়িতে এলটিই টেকনোলজি পাওয়া যায়। ‘এইচটিসি ওয়ান এক্সএল’ অথবা সনির জেড সিরিজ নোটবুকের মতো মোবাইল ডিভাইসে এলটিই ফ্রিকোয়েন্সি মানানসই।

পূর্বাভাস :
স্মার্টফোন বিস্ফোরণ এলটিই প্রযুক্তিকেই কার্যত এগিয়ে নিচ্ছে। উল্টোদিকে এলটিই প্রযুক্তির সুবাধে এগিয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোন। এক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিযোগিতা সূত্রে শিগগিরই সেলুলার ফোন নেটওয়ার্ক ক্রয়সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে। ২০১৭ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী গ্রামে ও শহরে এলটিই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যা হবে ১০০ কোটি।

স্মার্টওয়াচ : ঘড়ির মধ্যে ওয়েব

সত্যিকার অর্থে এটি হবে একটি সহজসাধ্য কাজ। আপনি যদি আপনার হাতঘড়ি চেক করতে পারেন টুইটার/ফেসবুক আপডেট কিংবা ই-মেইলে, তবে বিষয়টি কি মজার হবে না? স্মার্টওয়াচ আপনাকে সুযোগ করে দেবে যখন-তখন দ্রুত এ কাজটি করার। এসব স্মার্টফোনের মাধ্যমে ব্লুটুথ ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোগ গড়ে তুলে আপনি নিজেকে হালনাগাদ তথ্যসমৃদ্ধ রাখতে পারবেন সবসময় খুব সহজেই। SmartWatch হচ্ছে সনির একটি অ্যান্ড্রয়িড ওয়াচ। এটি এরই মধ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানির স্মার্টওয়াচও বাজারে আসছে খুব শিগগিরই। এমনকি আইওএস ফোনেও থাকছে স্মার্টফোনের যাবতীয় সুবিধা।

সনির স্মার্টওয়াচ ব্যবহার খুবই সহজ। এর রয়েছে একটি আল্ট্রা রেসপনসিভ (অতিসংবেদনশীল) টাচ ডিসপ্লে। এই স্মার্টওয়াচ আপনাকে দেবে ফোন কল, টেক্সট মেসেজ, ই-মেইল, নোটিফিকেশন, মিউজিক, এজেন্ডা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ছবি ও আপনার প্রত্যাশিত আরো কত অ্যাপ্লিকেশনের সুযোগ।

পূর্বাভাস :
২০১৩ সালে স্মার্টওয়াচ হবে আপনার-আমার জন্য এক স্ট্যাটাস সিম্বল বা মর্যাদার প্রতীক।

আইপি টিভি

আগামী দিনের টেলিভিশন থাকবে ইন্টারনেটে। আরো সুনির্দিষ্ট করে বলা যায়, আগামী দিনের টিভি থাকবে ইউটিউবে। ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতি মিনিটে আপলোড হচ্ছে ৭২ ঘণ্টার ভিডিও। গুগল এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে যে, প্রত্যেক দর্শক খুঁজে পাবে তা, যা তিনি খুঁজছেন এবং এর মাধ্যমে কিছু অর্থ আয় করবেন। এক্ষেত্রে আমাদের জন্য রয়েছে আইপি টিভি তথা ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন।

আইপি টিভি এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ইন্টারনেটের মতো একটি প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট প্রটোকল ব্যবহার করে টেলিভিশনের সার্ভিসগুলো সরবরাহ করবে। উল্লেখ্য, প্রচলিত টেলিভিশনগুলোতে টেরিস্ট্রিয়াল, স্যাটেলাইট সিগন্যাল ও ক্যাবল টেলিভিশন ফরমেশনে টেলিভিশন সার্ভিস পরিবেশন করা হয়। আইপি টিভি সার্ভিসকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় : লাইভ টেলিভিশন, টাইম শিফটেড টেলিভিশন এবং ভিডিও অন ডিমান্ড। ২০০৯ সালে আইপি টিভির গ্রাহকসংখ্যা ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ। আশা করা হচ্ছে, ২০১৩ সালের মধ্যে এর গ্রাহকসংখ্যা ৮ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছবে।

পূর্বাভাস :
ইউটিউব অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো যন্ত্রণাকর বাণিজ্যিক ভিডিওর জন্য।

নতুন প্রটোকল আইপিভি৬

তথ্যপ্রযুক্তি জগতের এক নবযুগের সূচনা হয়েছে চলতি বছরের ৬ জুনে। এই দিনে গুগল, মাইক্রোসফট ও ইয়াহুর নেতৃত্বে তিন হাজার কনটেন্ট প্রোভাইডার নতুন ইন্টারনেট প্রটোকল IPv6-এ সংযোগ চালু করেছে। আইপিভি৬ তথা ইন্টারনেট প্রটোকল, ভার্সন ৬ হচ্ছে ইন্টারনেট প্রটোকলের সর্বশেষ ভার্সন বা রিভিশন। এটি হচ্ছে প্রাথমিক কমিউনিকেশন প্রটোকল, যার ওপর ভিত্তি করে পুরো ইন্টারনেটই গড়ে উঠেছে। আইপিভি৬ প্রতিস্থাপিত হয়েছে পুরনো আইপিভি৪-এর জায়গায়। আইপিভি৬ ডেভেলপ করেছে ‘ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্স’ তথা আইইটিএফ, যাতে করে আইপিভি৪ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় সমস্যা দূর হয়। আইপিভি৬ বাস্তবায়ন করবে একটি নতুন আইপি অ্যাড্রেস সিস্টেম, যাতে বেশি বেশি অ্যাড্রেস অ্যাসাইন করা যাবে, আইপিভি৪-এ যা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু যেহেতু এই দুটি প্রটোকল পরস্পর কম্প্যাটিবল নয়, তাই একটি থেকে আরেকটিতে স্থানান্তরের কাজটি জটিল।

আমরা জানি, কমপিউটার অথবা মোবাইল টেলিফোনের মতো যত যন্ত্র ইন্টারনেটে সংযুক্ত হবে, সেগুলোর অন্যান্য যন্ত্রের সাথে সংযোগ গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই একটি আইপি অ্যাড্রেস থাকতে হবে। নতুন নতুন ডিভাইসের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। ফলে আইপিভি৪ যতগুলো অ্যাড্রেস সঙ্কুলান করতে পারে, তারচেয়ে বেশিসংখ্যক অ্যাড্রেস সঙ্কুলান করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সে জন্যই আইপিভি৬-এর সূচনা। আইপিভি৬ ব্যবহার করে ১২৮ বিটের অ্যাড্রেস। এর ফলে এতে সঙ্কুলান হবে ২১২৮ বা প্রায় ৩.৪ ১০৩৮টি অ্যাড্রেস। এ সংখ্যা আইপিভি৪-এর অ্যাড্রেসের সংখ্যার ৭.৯  ১০২৮ গুণ। আইপিভি৪-এ ব্যবহার হয় ৩২ বিটের অ্যাড্রেস। আইপিভি৪ সঙ্কুলান করতে পারে বিশ্বব্যাপী ৪, ২৯৪, ৯৬৭, ২৯৬টি অনন্য ওয়েব অ্যাড্রেস রয়েছে।

পূর্বাভাস :
আইপিভি৬ নামের ইন্টারনেট প্রটোকল কোনো সমস্যা ছাড়াই সাফল্যের সাথে ইন্টারনেটের জগতকে সম্প্রসারিত করতে পারবে।

দ্রুতগতির সলিড স্টেটড্রাইভ ভায়া পিসিআই এক্সপ্রেস

সলিড স্টেটড্রাইভ এমন হারে দ্রুতগতির হয়ে উঠছে যে, এগুলো খুব শিগগিরই এমনকি SATA-111 পোর্টের জন্যও বেশি গতির হয়ে যাবে (সর্বোচ্চ ৬০০ এমবি/সেকেন্ড)। এর সমাধান হচ্ছে পিসিআই এক্সপ্রেস (PCIe)। সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD) সহজেই পিসিআই কার্ড আকারে উচ্চতর ব্যান্ডউইডথে প্রবেশ করতে পারে- ইন্টেলের খরচবহুল SSD910-এর মতোই, যা PCIe-xB কার্ডের মতোই বেঞ্চমার্ক গতি ২৫০০ এমবি/সেকেন্ড অর্জন করে। এটি বর্তমান SATA-111 SSD স্পিডের তুলনায় ৪ গুণ।

পূর্বাভাস :
দাম যদি কমানো হয়, তবে ২০১৫ সালের মধ্যে PCIe-SSD এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

ফাইবার অপটিক ও ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ

জার্মানি পরিকল্পনা নিয়েছে সে দেশের ১০ শতাংশ বাসাবাড়িতে দ্রুতগতির ফাইবার অপটিক সংযোগ দেবে। তা সত্ত্বেও বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশমাত্রর প্রবেশ রয়েছে ফাইবার অপটিক কানেকশনে। অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার ৬০ শতাংশের প্রবেশ রয়েছে ফাইবার অপটিক কানেকশনে। আইএসপির কৌশলগত নীতি হচ্ছে : ‘সেল ফার্স্ট, বিল্ড লেটার’। এ নীতির ফলে বিশ্বে ফাইবার অপটিক সংযোগ অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি।

পূর্বাভাস :
অনেক ব্রডব্যান্ড কাস্টমার চলে যাবে ক্যাবল কানেকশনে।

মোবাইল গেম কন্সোল

আপনি যদি একটি নতুন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ট্যাবলেট অথবা স্মার্টফোনে গেম খেলে থাকেন, তবে আপনি লক্ষ করে থাকবেন এর থ্রিডি রেন্ডারিং, স্পিড ও ডিসপ্লের মান। এগুলোর মান সনির পিএসপি অথবা নিনটেন্ডো থ্রিডিএস/ডিএসআই-এর মান প্রায়ই একই। তাছাড়া স্মার্টফোনগুলোর অ্যাক্সেস সুবিধা রয়েছে একটি অ্যাপ্লিকেশন মার্কেট থেকে একটি এক্সস্ট্রিম গেম রিপোজেটরিতে, যা প্রায়ই পাওয়া যায় বিনামূল্যে।

পূর্বাভাস :
মোবাইল গেমিং কন্সোল এখন নির্জীব হয়ে পড়েছে এবং শিগগিরই এর বিলুপ্তি ঘটবে।

আইনী ও কৃত্রিম বাধা পাইরেসি বাঁচিয়ে রাখবে

২০১১ সালের সবচেয়ে বেশি পাইরেটেড টিভি শো ছিল ফ্যান্টাসি সিরিজ ‘Game of Thrones’। সম্ভবত ২০১২ সাল শেষেও দেখা যাবে এটি এই একই অবস্থানে থেকে যাবে। প্রতিটি পর্ব গড়ে ৩৯ লাখ ফাইল শেয়ারিং ডাউনলোড হয়েছে, যা এইচবিও’র বৈধ দর্শক সংখ্যার প্রায় সমান। এ সংখ্যা ৪২ লাখ। সর্বশেষ ‘গেইম অব থ্রনস’ সিজন শুধু দেখা যাবে ইএস ক্যাবল টিভিতে। এগুলো এখনো আইপি টিভি, ডিভিডি অথবা ব্লু-রেতে দেখা যায় না। অতএব বিশ্বব্যাপী অপেক্ষমাণ গ্রাহকেরা এতে অ্যাক্সেস পাবে না।

পূর্বাভাস :
যতদিন পর্যন্ত কৃত্রিম বাধা অব্যাহত থাকবে, ততদিন এর পাইরেসিও বাড়তে থাকবে।

তার ছাড়া সেলফোন চার্জ করা

২০০৮ সালে ইন্টেল একটি বাল্ব তারবিহীনভাবে জ্বালিয়ে দেখাতে সক্ষম হয়। একটি প্রযুক্তি প্রদর্শন অনুষ্ঠানে তা দেখানো হয়। তখন তারবিহীনভাবে আবেশের (ইন্ডাকশন) মাধ্যমে তৈরি বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ করা যায়, এমন পণ্য ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বাজারে আসতে শুরু করে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩-এর জন্য একটি তারবিহীন চার্জার তৈরির কথা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। চার্জার ডকে ফোনটি রেখে দিলে তা চার্জ হয়ে যায়। ইন্টেল একই সাথে একটি নোটবুক অ্যাডাপ্টার প্রদর্শন করেছে গত জুনে। এখানে আপনার প্রয়োজন শুধু সেল ফোনকে ল্যাপটপের পাশে রেখে দেয়া, তখন ফোনটি তারবিহীনভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

পূর্বাভাস :
তিন বছরের মধ্যে বেশির ভাগ মোবাইল ডিভাইস চার্জ করা হবে তারবিহীনভাবে।

এনএফসি ফোন

নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন তথা এনএফসি নামের প্রযুক্তি এখন সংবাদমাধ্যমে বেশ আলোচিত হচ্ছে। এ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘গুগল নেক্সাস এস’ হ্যান্ডসেট ও এমনি আরো অসংখ্য ডিভাইসে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার হবে ‘আইফোন৫’-এ। ২০০৪ সালের প্রতি পাঁচটি স্মার্টফোনের একটিতে ব্যবহার হবে এনএফসি টেকনোলজি কিড প্রশ্ন হচ্ছে, এনএফসি কী? এটি কেনোইবা ভালো মনে করব?

প্রথমেই বলা দরকার, এনএফসি নতুন কোনো প্রযুক্তি নয়। এটি আরএফআইডি তথা রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন টেকনোলজির একটি বিবর্তন, যা বহু বছর ধরে ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের রেলপথের ওইস্টার কার্ডে ব্যবহার হয়ে আসছে। সেখানে আপনাকে শুধু একটি ওইস্টার কার্ডে মৃদু চাপ দিতে হবে টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে।

এনএফসি শুধু বাড়িয়ে তুলেছে আরএফআইডির কার্যক্ষমতা। এটি এখনো পুরনো টেকনোলজির সাথে মানানসই। শুধু অর্থ পরিশোধ নয়, এর বাইরেও আরো কাজ করার সুযোগ দেবে এই টেকনোলজি। এনএফসি ফোরাম এর স্পেসিফিকেশন প্রকাশ করেছে। সেই সাথে তৈরি করেছে একটি সার্টিফিকেশন স্কিম, যাতে করে বিভিন্ন এনএফসি ডিভাইস পরস্পরের সাথে কাজ করতে পারে।

এনএফসি ব্যবহারের জন্য তিনটি ক্ষেত্র রয়েছে। ডেভি আরনন্ড এগুলোকে বর্ণনা করেছেন sharing, pairing এবং transaction নামে। কারিগরি দিক থেকে দিয়ে এগুলো পরিচিত যথাক্রমে read/writer, peer-to-peer এবং card emulation নামে।

এনএফসি প্রযুক্তি সুযোগ করে দেয় ৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কম দূরত্বে কনট্রাক্টলেস ডাটা এক্সচেঞ্জের। নয়া এনএফসি কম্প্যাটিবল ফোন ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আপনি অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। এই প্রযুক্তি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এখন এনএফসি চিপ পাওয়া যায় বেশিরভাগ নতুন হাই-এন্ড ফোনে।

পূর্বাভাস :
প্রাথমিকভাবে এর সমালোচনা ছিল নিরাপত্তা প্রশ্নে। সর্ব সমালোচনা মোকাবেলা করে ২০১৩ সালের দিকে এনএফসি সফল অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হবে।

নিউ ডব্লিউএলএএন

আইইইই ৮০২.১১ এসি হচ্ছে পরবর্তী ওয়াই-ফাই স্ট্যান্ডার্ড। আশা করা হচ্ছে, তা ওয়্যারলেস ডাটা থ্রোপুট বাড়িয়ে তুলবে। নতুন স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয় সর্বোচ্চ সম্প্রসারণ পর্যায়ে আটটি অ্যান্টেনা। আশা করা হচ্ছে, তা ওয়্যারলেস ডাটা থ্রোপুটের গতি সেকেন্ডে ৬.৯ গিগাবাইট পর্যন্ত বাড়িয়ে তুলবে। প্রথম রাউটার ও ওয়াইফাই ইউএসবি স্টিক এরই মধ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তথা ডব্লিউএলএএন ওয়্যারলেস ডিস্ট্রিবিউশন মেথডে দুই বা ততোধিক ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলে। এর ফলে ইউজার লোকাল কভারেজ এরিয়ার মধ্যে থেকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়েও সংযোগ রক্ষা করে চলতে পারেন নেটওয়ার্কের সাথে। ডব্লিউএলএএন বাসাবাড়িতে বেশ জনপ্রিয়। কারণ, এটি ইনস্টলেশন করা যায় খুব সহজে। বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সেও এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের তারবিহীন সংযোগ রক্ষার সুযোগ দিতে পারে বলে। অনেক ক্ষেত্রে এ সুযোগ পাওয়া যায় বিনা খরচে। নিউইয়র্কের মতো বড় বড় শহরেও এর ব্যবহার হচ্ছে।

পূর্বাভাস :
নতুন এই ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ডের জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। তবে ৮০২.১১এসি ব্যবহার হবে ব্যাপকভাবে।

এনভিডিয়া জিফোর্স গ্রিড : ক্লাউড থেকে থ্রিডি গেমস

Nvidia শুরু করেছে থ্রিডি কমপিউটেশনের জন্য একটি ক্লাউড সার্ভিস। এই সার্ভিসের নাম Nvidia Geforce Grid। এই সার্ভিস হচ্ছে একটি কমপিউটার সেন্টার যা পরিপূর্ণ এমন সব বিশেষ গ্রাফিক্স প্রসেসর দিয়ে, যা কমপিউট করে একই সাথে হাজার হাজার গেমারের জন্য থ্রিডি গ্রাফিক্স। এই সার্ভিস ব্যবহার করে জটিল থ্রিডি গেমস খেলা যাবে, এমনকি একটি দুর্বল ডিভাইসেও। গেমগুলো দেখানো হয় ব্রাউজারের মাধ্যমে ভিডিও স্ট্রিম হিসেবে- তা হতে পারে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, পিসি অথবা ৬০ ইঞ্চি এলসিডি টিভি।

এনভিডিয়া ২০১২ সালের মে মাসের দিকে উন্মোচন করে দুটি নতুন গ্রাফিকস টেকনোলজি এর চলতি বছরের জিপিইউ টেকনোলজি সম্মেলনে। এই গ্রাফিক্স টেকনোলজি দুটি হচ্ছে : Nvidia GeForece Grid এবং Nvidia Vgx। এই প্রযুক্তি দুটি ভিডিও গেমে আনবে আমূল পরিবর্তন। আমরা হয়তো অনেকেই এই দুটি ক্লাউড কমপিউটিং টেকনোলজি সম্পর্কে পরিচিত নই। কিন্তু আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সবার কাছে সুপরিচিতি পাবে। অদূর ভবিষ্যতের কোনো একদিন হয়তো আপনি হবেন এনভিডিয়া জিফোর্স গ্রিডের অথবা এনভিডিয়া জিফোর্স গ্রাফিক্স কার্ডের গ্রাহক- হালনাগাদ হাইএন্ড গেম খেলার জন্য। মোট কথা, এই দুই প্রযুক্তি গোটা গ্রাফিক্স শিল্পকে পাল্টে দেবে।

পূর্বাভাস :
২০১৩ সালের দিকে ক্লাউডভিত্তিক গেমের প্রতিযোগিতা হবে গেম কনসোলের সাথে।

নমনীয় কাচ

আমেরিকাভিত্তিক কাচ উৎপাদকেরা সূচনা করেছে নতুন ধরনের একটি কাচ : ফ্লেক্সিবল গ্লাস (নমনীয় কাচ) নতুন এ কাচের নাম Willow, যা অতি পাতলা যে এ কাচকে আপনি বাঁকা করতে পারবেন এবং এটিকে আপনি কোনো তলে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখতে পারবেন। এর ফলে আগামী দিনের কাচের পাতগুলো অনেকটা কাগজের টুকরার মতো পাতলা হবে। এটি হবে ০.১ মিলিমিটার পুরু। আমরা সাধারণত স্মার্টফোনে যে কাচ দেখি তা ০.৫ থেকে ০.৭ মিলিমিটার পুরু। উচ্চ তাপে ও ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াম তাপমাত্রা ও উইলো গ্লাস কোনো সমস্যা ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে। স্মার্টফোন ট্যাবলেট ও নোটবুক ডিসপ্লে সজ্জিত করার কাজেও নতুন এ কাচ ব্যবহার করা যাবে। অধিকতর পাতলা ব্যাক প্লেট দিয়ে ও এলইডি এবং এলসিডি ডিসপ্লের জন্য কালার ফিল্টার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। অধিকন্তু যেহেতু এই কাচ নমনীয় এবং তা বাঁকানো যায়, ফলে ডিজাইনারে এ দিয়ে বাঁকানো স্মার্টফোনও তৈরি করতে পারবেন। স্যামসাং এবং গ্যালিক্সি নেক্সাসের ডিসপ্লে বাঁকা করে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। Corning নামে একটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে সরবরাহ করছে গরিলা গ্লাস, যা ব্যবহার হচ্ছে অ্যাপল ডিভাইসে। আশা করা হচ্ছে উইলো গ্লাস খুব শিগগরিই সংযোজিত হবে আইফোন ৫-এ।

পূর্বাভাস :
এই নতুন কাচের উদ্ভাবন নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্যের ডিজাইনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এর প্রভাবে প্রযুক্তিপণ্যের দামও কমে আসবে। যেহেতু উইলো গ্লাস রুলের মতো গুটানো যাবে, উৎপাদকেরা এটি প্রসেস করতে পারবে উঁচু ঘূর্ণন গতি নিয়ে। এর ফলে ব্যাপকভাবে এর উৎপাদন খরচ কমে যাবে।

২০১৩ সালে আসছে অ্যাপলের ইন্টেলিজেন্ট টিভি

মৃত্যুর ঠিক আগে, স্টিভ জবস তার জীবনীকার ওয়াল্টার আইজ্যাকসনকে বলেছিলেন : ‘I would really like to make an integrated television set that can be operated easily’। অর্থাৎ তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন অ্যাপল থেকে একটি ‘ইজি ইন্টারফেস হাই ডেফিনিশন অ্যাপল টিভি’ চালু করতে চান। তিনি এ-ও জানতেন কেনো তিনি এমনি একটি ইন্টেলিজেন্ট টিভি চালু করতে চান। বর্তমান ইন্টেলিজেন্ট টেলিভিশনে সমস্যা আছে এর রিঅ্যাকশন টাইম এবং রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে। তাছাড়া রয়েছে বাটনের ছড়াছড়ি : ১০০টি বাটন। অ্যাপল তাদের ঘরোয়া WWDC কনফারেন্সে কখনই টিভি নিয়ে খুব বেশি কিছু বলেনি, যা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত মধ্য জুনে। কিন্তু এটি ওপেন সিক্রেট ছিল যে, অ্যাপল ইন্টেলিজেন্ট টেলিভিশন চালুর ব্যাপারে কিছু একটা করতে যাচ্ছে। অ্যাপল সাপ্লাইয়ার Foxconn-এর প্রধান টেরি এরই মধ্যে বলেছেন, এরা এরই মধ্যে শার্পের সাথে মিলে অ্যাপল টিভি তৈরির জন্য প্রস্ত্তত। কিন্তু আসলে এই অ্যাপল টিভি কেমন হবে? সম্ভবত এরা এর নাম দেবে iPanel। প্রত্যাশা করা হয়েছে এই টেলিভিশন হবে কণ্ঠ নিয়ন্ত্রিত। এই নিয়ন্ত্রণ চলবে Siri-এর মাধ্যমে। এর মাধ্যমে কণ্ঠ ব্যবহার করে টিভি চালু করা যাবে। এটি প্রশ্নের উত্তর দেবে বুদ্ধি খাটিয়ে। যেমন এটি উত্তর দিতে পারবে এ প্রশ্নের : ‘কোন শো আগামীকাল সন্ধ্যায় চ্যানেল এক্সওয়াইজেডে প্রচার করা হবে?’ তাছাড়া প্রত্যাশা রয়েছে আইফোন, আইপ্যাড ও এটিভির মধ্যে সমন্বয় সাধনের কাজটি চলবে ‘মেমরি’ ও ‘রেজিস্টর’ থেকে শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে। অতএব আমরা হাতে রাখা ডিভাইস ব্যবহার করতে পারব রিমোট কন্ট্রোল হিসেবে। ভিডিও টেলিফোনির জন্য একটি আইসাইট ক্যামেরাও এতে সংযোজন করা হতে পারে। অ্যাপল টিভি পুরোপুরি সমন্বিত হতে পারে আইটিউনের সাথেও, যাতে একটি ৬০ ইঞ্চি পর্যন্ত মাপের বড় পর্দায় দেখার উপযোগী ছায়াছবি ও টিভি শো সরাসরি কেনা যায়।

পূর্বাভাস :
২০১৩ সালের মধ্যে এই iTv তথা ইন্টেলিজেন্ট টিভির মাধ্যমে টেলিভিশন জগতে বড় ধরনের একটি অগ্রগতি দেখা যেতে পারে।

ই-বুক : প্রতিযোগিতা আমাজন, গুগল ও অ্যাপলের মধ্যে

এখনো এটি স্পষ্ট নয়, কখন আমাজন ভারতের বাজারে চালু করবে এর Kindle Fire। কিন্ডল ফায়ার বড় ধরনের সফলতা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। কিন্ডল ফায়ার হচ্ছে আমাজানডটকমের ‘কিন্ডল ই-বুক রিডার’-এর একটি মিনি ট্যাবলেট কমপিউটার সংস্করণ। ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এর ঘোষণা আসে। এর রয়েছে ৭ ইঞ্চি মাপের একটি মাল্টিটাচ ডিসপ্লে। এই ডিভাইসটির অ্যাক্সেস সুবিধা রয়েছে আমাজান অ্যাপোস্টোর, স্ট্রিমিং মুভিজ, টিভি শো এবং কিন্ডল’স ই-বুকসে। গ্রাহকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এটি উন্মুক্ত করা হয় ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর। এর খুচরা দাম ১৯৯ ডলার। এদিকে কোনো কোনো মহল নানা ভবিষদ্বাণী করছে একটি বড় মাপের ই-রিডারের ব্যাপারে, যাতে থাকবে অন্ধকারে পড়ার জন্য গ্লোলাইট।

পূর্বাভাস :
ভারতীয়রা মনে করছেন অ্যাপল, গুগল ও আমাজন যদি শিগগিরই ভারতের ই-বুকে বাজারে অংশ না নেয়, তবে স্থানীয় কোম্পানিগুলোই ভারতের ই-বুক বাজারে দখল প্রতিষ্ঠা করবে।

সুপার ফাস্ট মেমোরিস্টর প্রযুক্তি

বেশ কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে Memoristor পদবাচ্যটি। বিভিন্ন গবেষণা প্রকাশনায় এর শব্দগত উৎপত্তির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে memory এবং resistor শব্দ দুটি একসাথে মিলিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে Memoristor শব্দটি। এটি একটি প্যাসিভ ইলেকট্রিক্যাল কমপোনেন্ট। ২০১৪/১৫ সালের পর থেকে এই কমপোনেন্টাটি মোবাইল ডিভাইসে ব্যবহার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে এইচপি। এইচপি চায় ReRAM মডিউল উৎপাদন করতে, যা NAND ফ্ল্যাশ মেমরির চেয়ে অনেক অনেক বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন। সুইচ অফ করার পরও তা ইনফরমেশন ধারণ করে রাখে।

পূর্বাভাস :
বাজারে ReRAM সফল। বুট টাইম শেষ পর্যন্ত থাকবে না।

স্মার্টগ্লাস : তথ্য সরাসরি চোখে

স্মার্টফোন যুগের পর আর কী আসছে? গুগল এখন কাজ করছে গুগল গ্নাস নিয়ে। একজোড়া গ্লাসে প্রদর্শিত হবে একটি ছোট ডিসপ্লে ফ্রেমে ওয়েব ইনফো। গুগল সম্প্রতি এ ধারণাটিই প্রদর্শন করেছে গুগল আই/ও ২০১২ ডেভেলপার কনফারেন্সে। গোটা প্রসেসটি নিয়ন্ত্রিত হয় আঙ্গুলে থাকা একটি আংটি দিয়ে। গুগল এরই মধ্যে এর প্যাটেন্টও লাভ করেছে।

পূর্বাভাস :
স্মার্ট গ্লাস একটি পণ্য হিসেবে থাকবে স্মার্টফোনের মতোই।

ভবিষ্যতের চিপ হবে ৫ ন্যানোমিটার

চিপ ট্রানজিস্টর সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। একটি সিলিকন চিপের মৌলিক প্রসেসিং ইউনিট হচ্ছে এই ট্রানজিস্টর। ৪০ বছর ধরে সিলিকন চিপের প্রসেসিং পাওয়ার বেড়েছে ১৯৬৫ সালে গর্ডন মুর’র দেয়া নিয়ম অনুসরণ করেই। মুর’স ল বলে- একই খরচে একটি চিপে যত সংখ্যক চিপ স্থাপন করা যাবে, তা প্রতি দুই বছরে দ্বিগুণে পৌঁছবে। ইন্টেল গবেষণা করছে ৭ ও ৫ ন্যানোমিটার প্রশস্ত ট্রানজিস্টর কাঠামোর জন্য। এখন চলছে এর অন্তর্বর্তীকাল। আজকের দিনের চিপসের প্রশস্ততা ২২ ন্যানোমিটার। ২০১৩ সালের পর থেকে সিপিইউ তৈরি হবে ১৪ ন্যানোমিটার চিপ দিয়ে। আর ২০১৫ সালের পর থেকে তা নেমে আসবে ১০ ন্যানোমিটারে। ফলে উৎপাদন খরচ খুবই বেড়ে যাবে। ২০১৫ সালের দিকে একটি নতুন চিপ কারখানা স্থাপন করতে খরচ হবে ১৫০০ কোটি ডলার, যা আজকের দিনের ইন্টেল, স্যামসাং ও টিএসএমএসের মতো বড় বড় কোম্পানির পক্ষেই বিনিয়োগ করা সম্ভব।

পূর্বাভাস :
চিপ হবে অধিক দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং অধিকতর কার্যকর। কিন্তু চিপ উৎপাদক কোম্পানির সংখ্যা থেকে যাবে খুবই কম।

কোয়ান্টাম কমপিউটার ২০৩০-এর পর

আইবিএম গবেষকেরা সম্প্রতি দুইটি ধাতুর ফলকে কোয়ান্টাম বিটস (Qubits) ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন ০.১ মিলিসেকেন্ড সময়ে- ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে। কোয়ান্টাম কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ। কেননা কিউবিটস একই সাথে ধারণ করতে পারে ০ ও ১ মূল্যমান এবং তাত্ত্বিকভাবে অতি উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুতগতিতে কমপিউট করতে পারে। কিউবিট হচ্ছে কোয়ান্টাম কমপিউটারের মৌল বিল্ডিং ব্লক।

কোয়ান্টাম কমপিউটার একটি কমপিউটেশন ডিভাইস, যা সরাসরি কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল ফ্যানোমেনা ব্যবহার করে ডাটা অপারেশনের বেলায়। কমপিউটেশন বলতে আমরা বুঝি যেকোনো ধরনের হিসাব-নিকাশ কিংবা ইনফরমেশন প্রসসে কমপিউটেশন টেকনোজির ব্যবহারকে। কোয়ান্টাম কমপিউটার ট্রানজিস্টরের ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল কমপিউটারের থেকে আলাদা। ডিজিটাল কমপিউটারে ডাটাকে এনকোড করতে হয় বাইনারি ডিজিট তথা বিটে। অপরদিকে কোয়ান্টাম কমপিউটেশনে ব্যবহার করা হয় ডাটা উপস্থাপন ও এসব ডাটা অপারেশনের সময়। কোয়ান্টাম কমপিউটারের একটি তাত্ত্বিক মডেলের নাম ‘কোয়ান্টাম টার্নিং মেশিন’। এটি ইউনিভার্সেল কোয়ান্টাম কমপিউটার। কোয়ান্টাম কমপিউটিংয়ের ক্ষেত্রটি ১৯৮২ সালে প্রথম সূচনা করেন রিচার্ড ফেইনম্যান। যদিও কোয়ান্টাম কমপিউটিং এখনো শৈশবাবস্থায় থাকলেও এ নিয়ে এখন নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

ব্যাপকভিত্তিক কোয়ান্টাম কমপিউটার সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যা যেকোনো ক্লাসিক্যাল কমপিউটারের চেয়ে দ্রুত সম্পন্ন করতে পারবে। সেখানে ব্যবহার করা হবে আমাদের জানা সর্বোত্তম অ্যালগরিদম।

পূর্বাভাস :
কোয়ান্টাম কমপিউটার টেকনোলজি কমপিউটার জগতে বয়ে আনতে পারে নতুন এক বিপ্লব। তবে তা ২০৩০ সালের আগে ঘটবে না বলেই সংশ্লিষ্টজনদের বিশ্বাস।

হলোগ্রাফিক ভার্সেটাইল ডিস্ক

সিডির পর এলো ডিভিডি। তারও পর এলো ব্লু-রে ডিস্ক। আর এখন পালা হলোগ্রাফিক ভার্সেটাইল ডিস্কের তথা এইচভিডির সে জায়গা দখলের। এইচডিভির উজ্জ্বল দিক হচ্ছে এর স্পেসিফিকেশন ও ক্যাপাসিটি (ক্যাপাসিটি সর্বোচ্চ ৩.৯ টিবাইট, ট্রান্সফার রেড ১ জিবিট/সেকেন্ড)। তা সত্ত্বেও ব্লু-রে ডিস্কের ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা গিয়েছিল, তেমনটি এইচডিভির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে একটি পতনমুখী প্রবণতা। বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ ব্যবহারকারী তাদের ডাটা সংরক্ষণের জন্য ইউএসবি স্টিক ও হার্ডডিস্ককেই অগ্রাধিকার দেয়।

এইচভিডি উদ্ভাবন করা হয়েছে অপটিক্যাল ডিস্ক টেকনোলজি ব্যবহার করে। এতে সংরক্ষণ করা যায় কয়েক টেরাবাইট ডাটা। এটি ১০ সেমি ব্যাসের একটি অপটিক্যাল ডিস্ক। ডিস্কের ব্যাসার্ধ কমালে এতে কম বস্ত্তর দরকার হয় এবং ব্যয়ও কমে। এতে যে কারিগরি কৌশল ব্যবহার হয়, তার নাম কোলিনিয়ার হলোগ্রাফি। যেখানে একট সবুজ ও লাল লেজার রশ্মিকে একটি একক রশ্মিতে অর্থাৎ অক্ষিরেখায় আনা হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম কলিমেট করা। এই কলিমেট করা হয় একটি কলিমেটর দিয়ে। কলিমেটর যন্ত্রটি কার্যত রশ্মিকণা বা রশ্মিতরঙ্গকে সঙ্কীর্ণ করে একই দৃষ্টিরেখায় নিয়ে আসে।

কজ
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা