লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মুহাম্মদ মেহেদী হাসান
মোট লেখা:১৪
লেখা সম্পর্কিত
কমপিউটারের ইতিহাস
থেমে থাকা প্রযুক্তির ধর্ম নয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন, পুরনোকে নতুন করে উপস্থাপন-এভাবেই প্রযুক্তি এগিয়ে চলে। উদ্ভাবন থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত কমপিউটারের ক্ষেত্রেও এই ধারা অব্যাহত আছে। প্রথম প্রজন্মে ছিল সেই দানবাকার কমপিউটার, যার তাপ ও শব্দের কাছাকাছি থাকাটাই কষ্টকর ছিল। তৈরিতে যেমন প্রচুর খরচ হতো তেমনই ছিল তার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। মোটকথা কমপিউটার ছিল তখন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি, তা ব্যবহারের অধিকার পেতেন শুধু নির্ধারিত কিছু গবেষক। সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে একটি কমপিউটার ছিল একটি স্বপ্নের মতো। কালক্রমে সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ পেল, যখন ১৯৭১ সালে ইন্টেল তাদের প্রথম সুলভ মূল্যের মাইক্রোপ্রসেসর বাজারজাত করা শুরু করে যা পরে অ্যালটেয়ার ৮৮০০-এর মতো পার্সোনাল কমপিউটারের জন্ম দিয়েছিল। কমপিউটারের ইতিকথার এই পর্বে ষাটের দশকের শেষ এবং প্রধানত সত্তর দশকের কমপিউটার প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ সময়ের মুখ্য বিষয় ছিল ব্যক্তিগত কমপিউটারের প্রচলন ও প্রসার।
ফ্লপি ডিস্কের উদ্ভাবন
১৯৭১ সালে প্রথম ফ্লপি ডিস্কের বাণিজ্যিক প্রচলন ঘটায় আইবিএম। প্রথমে মেমরি ডিস্ক নাম দেয়া হলেও ফ্লপি নামটিই বেশি জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৬৭ সালে আইবিএম তাদের সিস্টেম/৩৭০ পরিবারের মেইনফ্রেম কমপিউটারের জন্য সুলভ ও নির্ভরযোগ্য মেমরি ডিস্ক তৈরি করার একটি উদ্যোগ নেয়। আইবিএমের ডিরেক্ট অ্যাক্সেস স্টোরেজ প্রোডাক্ট ম্যানেজার অ্যালান সুগার্ট কাজটি করার জন্য ডেভিড এল নোবলকে নিয়োগ করেন। তাদের চেষ্টার ফল হিসেবে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের মেমরি ডিস্ক তৈরি হয়। তবে এতে শুধু রিড করা যেত। ধারণক্ষমতা ছিল ৮০ কিলোবাইট। প্রথম ডিস্কগুলোতে কোনো মোড়ক না থাকায় ধুলোবালি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরপর প্লাস্টিক প্যাকেটে মুড়ে সেগুলো ১৯৭১ সালে বাজারজাত শুরু করে। ষাটের দশকের শেষ এবং সত্তর দশকের শুরুর দিকে ৮ ইঞ্চি ফ্লপি ডিস্ক দিয়ে ফ্লপির যাত্রা শুরু হলেও ধীরে ধীরে এর উন্নয়ন ঘটতে থাকে। আকার ছোট হয়ে আসে, ধারণক্ষমতা বাড়ে। পরে অ্যালান সুগার্ট আইবিএম ছেড়ে মেমরেক্সে যোগ দেন। সেখানেই ১৯৭২ সালে তার দল প্রথম রিড-রাইট ফ্লপি ডিস্ক বাজারজাত করে। নাম দেয়া হয়েছিল মেমরেক্স ৬৫০। এটির ধারণক্ষমতা ছিল ১৭৫ কিলোবাইট। পরে আইবিএম ১৯৭৬ সালে ৫০০ কিলোবাইট এবং ১৯৭৭ সালে ১ থেকে ১.২ মেগাবাইটের ফ্লপি ডিস্কের প্রচলন ঘটায়। ধারণক্ষমতা বাড়লেও আকারটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে অ্যালান সুগার্ট মেমরেক্স ছেড়ে নিজের কোম্পানি সুগার্ট অ্যাসোসিয়েটস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৬ সালে অ্যান ওয়াং এক ব্যবসায়িক আলোচনায় সুগার্ট অ্যাসোসিয়েটসের জিম অ্যাডকিনসন ও ডন ম্যাসারোকে ওয়াং ল্যাবরেটরিজের ডেস্কটপ ওয়ার্ড প্রসেসিং যন্ত্রগুলোর জন্য আকারে ছোট ফ্লপি ডিস্কের জন্য আবেদন জানালে সুগার্ট অ্যাসোসিয়েটসের পক্ষ থেকে সোয়া ৫ ইঞ্চি ফ্লপি ডিস্কের প্রস্তাব করলে অ্যান ওয়াং তা অনুমোদন করেন। পরে ১৯৭৮ সালে সনি সাড়ে ৩ ইঞ্চি ফ্লপি ডিস্কের প্রচলন ঘটায়। আকার ছোট হলেও ধারণক্ষমতা খুব একটা বাড়েনি। ফ্লপি ডিস্ক সে সময়ের কমপিউটারগুলোর জন্য আশীর্বাদ হলেও বর্তমানের কমপিউটারগুলোতে অচল হয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও বহনযোগ্য মেমরি ডিস্কের ইতিহাসে ফ্লপি ডিস্কের একটা আলাদা অবস্থান রয়েছে।
প্রথম পার্সোনাল কমপিউটার : অ্যালটেয়ার ৮৮০০
কার্টল্যান্ড বিমান ঘাঁটির অস্ত্র গবেষণাগারে কর্মরত অবস্থায় অ্যাডওয়ার্ড রবার্টস এবং ফরেস্ট এম মিমস সিদ্ধান্ত নেন এরা একটি ইলেকট্রনিক কোম্পানি চালু করবেন। এর কাজ হবে শখের মডেল রকেটের জন্য ছোট ছোট যন্ত্রাংশ তৈরি করা। অবশেষে এরা দু’জন স্ট্যান ক্যাগল ও রবার্ট জেলারকে সাথে নিয়ে ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রো ইনস্ট্রুমেন্টেশন অ্যান্ড টেলিমেট্রি সিস্টেমস বা এমআইটিএস। পরে অন্যান্য অংশীদার কোম্পানির ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেললে অ্যাডওয়ার্ড রবার্টস সবার শেয়ারের অংশ কিনে নেন এবং পরে এই এমআইটিএস ‘অ্যালটেয়ার ৮৮০০’ কমপিউটার তৈরি ও বিপণন করেন। ইন্টেল ৪০০৪-এর পরের সংস্করণ ৮০৮০ মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি ‘অ্যালটেয়ার ৮৮০০’ কমপিউটারটিকে প্রথম পার্সোনাল কমপিউটারের আখ্যা দেয়া হয়। এটি তৈরি করা হয় ১৯৭৫ সালে। পপুলার ইলেকট্রনিক ম্যাগাজিনের ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় কভার পেজে স্থান পেয়েছিল এই অ্যালটেয়ার ৮৮০০। কমপিউটারটি সম্পর্কে সেখানে লেখা ছিল-পৃথিবীর প্রথম মিনি কমপিউটার, যা অন্যান্য বাণিজ্য সফল কমপিউটারের প্রতিদ্বন্দ্বী। মজার ব্যাপার হলো, এর নির্মাতারা চেয়েছিলেন কয়েকশ’ অ্যালটেয়ার ৮৮০০ বিক্রি করতে, কিন্তু তারা অবাক হয়ে গেলেন যখন দেখা গেল প্রথম মাসেই কয়েক হাজার বিক্রি হয়ে গেছে। অ্যালটেয়ার ৮৮০০ বিক্রি করা হয় মেইল অর্ডারের মাধ্যমে। পাওয়া যেত দু’ভাবে : শখের মেকানিকদের জন্য শুধু যন্ত্রাংশ যা নিজে জুড়ে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমপিউটার তৈরি করে নিতে হতো এবং পূর্ণরূপেও পাওয়া যেত। শুধু যন্ত্রাংশ কিনতে খরচ হতো ৩৯৫ মার্কিন ডলার এবং পূর্ণ কমপিউটার কিনতে পড়ত ৬৫০ মার্কিন ডলার। এভাবে বিপণনের ফলে কমপিউটারটি রাতারাতি বাজার দখল করে নেয়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাজারে ছাড়ার পর প্রথম দু’বছরে প্রায় ১০ হাজার অ্যালটেয়ার ৮৮০০ কমপিউটার বিক্রি হয়েছিল। কমপিউটারটি প্রোগ্রাম করার জন্য একটি প্রোগ্রামিং ভাষার প্রয়োজন ছিল। বিল গেটস এবং পল অ্যালেন নামের দুই ব্যক্তি এই সুযোগ নেন। সম্মিলিতভাবে এরা অ্যালটেয়ার বেসিক প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন এবং তা এমআইটিএসের কাছে বিক্রি করেন। সে সময় কেউ ভাবতেও পারেননি এই দু’জনের প্রতিষ্ঠিত মাইক্রোসফট একদিন কমপিউটার সফটওয়্যারের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ দখল করবে।
১৯৭১ সালের ১৫ নভেম্বর। তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক পত্রিকা ইলেকট্রনিক নিউজের এক বিজ্ঞাপনে প্রচার করা হয় এমন একটি ইলেকট্রনিক চিপ, যা এনিয়াকের সমান গতিতে কাজ করতে পারে। ১৯৪৬ সালে ১৭,৪৬৮টি ভ্যাকিউম টিউব দিয়ে তৈরি ৩০ টন ওজনের এনিয়াক দখল করেছিল প্রায় ১৮০০ বর্গফুট জায়গা। অপরদিকে ইন্টেল ৪০০৪-এর আকার ছিল একটি নখের সমান, সংখ্যায় বলতে গেলে আকারটা ছিল ১০,০০০ ন্যানোমিটার, যা মানুষের গড়পড়তা চুলের এক-দশমাংশের সমান! মূলত ফেডেরিকো ফ্যাগিন চিপটির নকশা করেন। তাকে সহায়তা করেন ইন্টেলের টেড হফ ও স্ট্যানলি ম্যাজোর এবং বিজিকমের মাসাটোশি শিমা। ৪ বিট ও ১৬ পিনের ৪০০৪ মাইক্রোপ্রসেসর চিপটি ছিল ৭৪০ কিলোহার্টজ গতির, তবে মূল নকশায় ১ মেগাহার্টজ গতির কথা বলা হয়েছিল। প্রতি সেকেন্ডে ৯২,৬০০টি নির্দেশনা পালন করতে পারত, যা সে সময়ের জন্য এত ছোট চিপে সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল। পৃথিবীর প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত চিপটি কিন্তু প্রথমে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য তৈরি হয়নি। ১৯৬৯ সালে জাপানের নিপ্পন ক্যালকুলেটিং মেশিন করপোরেশন তাদের বিজিকম ১৪১-পিএফ প্রিন্টিং ক্যালকুলেটরের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের জন্য ১২টি বিভিন্ন কাজের চিপ তৈরির জন্য ইন্টেলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু ইন্টেল এতগুলো চিপ তৈরি না করে শুধু ৪টি চিপ দিয়ে সব কাজ করার নকশা প্রণয়ন করে। প্রজেক্টটির নাম দেয়া হয়েছিল এমসিএস-৪। যার মাঝে সিপিইউ হিসেবে ছিল ৪০০৪ চিপ। বাকি তিনটি ছিল সহায়ক মেমরি হিসেবে রম চিপ, তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য র্যাম চিপ এবং শিফট-রেজিস্টার চিপ, যার কাজ ছিল ইনপুট-আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করা। বিজিকমের জন্য তৈরি করায় ৪০০৪-এর স্বত্ব ছিল জাপানি কোম্পানিটির দখলে। কিন্তু ইন্টেল পরে বিজিকমের কাছ থেকে ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৪০০৪ চিপের স্বত্ব কিনে নেয়। এতে ইন্টেলের দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। এদিকে ৪০০৪ চিপ ব্যবহার করে কোনো ক্যালকুলেটর তৈরির আগেই বিজিকম দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় ৪০০৪ চিপের একমাত্র পরিচয় হয়ে ওঠে ইন্টেল। এদিকে ইন্টেল ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যায় এবং বিভিন্ন কোম্পানিকে ৪০০৪ চিপ দিয়ে গণনাযন্ত্র তৈরি করতে উৎসাহিত করে। ফলে পৃথিবীর প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মাইক্রোপ্রসেসর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ইন্টেল ৪০০৪। তৎকালীন অত্যাধুনিক সিলিকন গেট প্রযুক্তিতে তৈরি ৪০০৪-এ ছিল ২৩০০ মেটাল অক্সাইড সেমিকন্ডাক্টর ট্রানজিস্টর, যেখানে বর্তমানের ইন্টেল কোর প্রসেসরগুলোতে প্রায় ৫৬ কোটি ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়। তবে যান্ত্রিক ছোঁয়া ছাড়াই রুবিলিথের পাত কেটে তৈরি করা ৪০০৪ চিপ বর্তমান ডেস্কটপ কমপিউটারে ব্যবহার করা মাইক্রোপ্রসেসরের চেয়ে অনেক ছোট ছিল। ৪০০৪ তৈরিতে অবদান রাখার জন্য ফেডেরিকো ফ্যাগিন, টেড হফ এবং স্ট্যানলি ম্যাজোরকে ২০১০ সালের ১৫ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ন্যাশনাল মেডাল অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন পদকে ভূষিত করেন।
ইথারনেটের প্রচলন
১৯৭৩ সালে প্রথম ইথারনেটের ধারণা চালু হয়। ইথারনেট এক ধরনের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, যা একটি দালান বা কাছাকাছি অবস্থিত কমপিউটারগুলোর মধ্যে উচ্চগতির যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। সে সময়ে রবার্ট মেটক্যালফ জেরক্স করপোরেশনের পালো আলটো রিসার্চ সেন্টারে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাকে পালো আলটো রিসার্চ সেন্টারের সব কমপিউটারের মাঝে সংযোগ স্থাপন করতে বলা হলো। এছাড়া সে সময় জেরক্স করপোরেশন পৃথিবীর প্রথম লেজার প্রিন্টার তৈরি করে। সেই প্রিন্টারটির সাথে সব কমপিউটারের যোগাযোগ রক্ষা করাও সেই কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে যেমনই হোক, তৎকালীন প্রযুক্তিতে কাজটি বেশ কঠিন ছিল। কারণ জেরক্সের সেই ভবনটিতে সে সময়ই শত শত কমপিউটার ছিল। আগে কমপিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি হলেও কমপিউটার সে সময় এতই দামি ছিল যে একটি ভবনে একটি-দুটির বেশি কমপিউটার সচরাচর দেখা যেত, যাদের মাঝে নেটওয়ার্ক স্থাপন করাটাও তেমন কষ্টসাধ্য ছিল না। এদিকে জেরক্সে একে তো প্রচুর কমপিউটার, তার ওপর নেটওয়ার্কের গতি এত বেশি হতে হবে যাতে সব কমপিউটার লেজার প্রিন্টারটি ব্যবহার করতে পারে। ১৯৭৫ সালে জেরক্স ইথারনেটের জন্য প্যাটেন্টের আবেদন করে এবং ১৯৭৬ সালে তাদের কাজ শেষে মেটক্যালফ এবং ডেভিড বগ তাদের কাজ নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেন। বর্তমানে ইথারনেট আইইইই ৮০২.৩ নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার ব্যবহার করে এবং ১০ মেগাবাইট থেকে ১০০ গিগাবাইট পর্যন্ত গতিতে তথ্য দেয়া-নেয়া করতে পারে।
ইন্টারনেটভিত্তিক ই-মেইলের উদ্ভাবন
বর্তমানে ই-মেইল বলতে প্রথম যে কথাটা মাথায় আসে তা হলো ইন্টারনেট সংযোগ। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ইন্টারনেট তৈরিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ই-মেইল। ই-মেইলের ধারণা ইন্টারনেট কিংবা এআরপিএনেটের চেয়ে অনেক পুরনো। তবে ইন্টারনেটভিত্তিক ই-মেইল ১৯৭১ সালে প্রথম তৈরি করেন রে টমলিনসন। বোল্ট বেরানেক অ্যান্ড নিউম্যানে কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন টমলিনসন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ইন্টারনেট তৈরির জন্য ১৯৬৮ সালে বিবিএন-কে নিযুক্ত করলে টমলিনসন এআরপিএ’র হয়ে কাজ শুরু করেন। টমলিনসন ‘এসএনডিএমএসজি’ নামে একটি কমপিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন, যা দিয়ে একই কমপিউটারের বিভিন্ন ব্যবহারকারীর জন্য বার্তা ওই কমপিউটারেই সংরক্ষণ করে রাখা হতো। পরে তিনি সিওয়াইপিনেট নামে একটি ইন্টারনেট প্রটোকল তৈরি করেন, যা দিয়ে এআরপিএনেটর অন্তর্ভুক্ত কমপিউটারগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বার্তা বিনিময় করা হতো। প্রথম ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল পাশাপাশি অবস্থিত দুটি কমপিউটারে, যা এআরপিএনেট দিয়ে যুক্ত ছিল। প্রথম ই-মেইল বার্তা ছিল ‘QWERTYUIOP’। কোন কমপিউটারের কোন ব্যবহারকারীর জন্য ই-মেইল পাঠানো হচ্ছে, তা বোঝার জন্য ব্যবহারকারীর আইডি ও হোস্ট কমপিউটারের মাঝে ‘@’ চিহ্নটি বেছে নিয়েছিলেন টমলিনসন। আজও তা চালু রয়েছে।