• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > চার মোবাইল অপারেটরের সিমট্যাক্স ফাঁকি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:১৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মোবাইল
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
চার মোবাইল অপারেটরের সিমট্যাক্স ফাঁকি
দেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটরের কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা ৩ হাজার ১শ’ কোটি টাকা আদায় নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপারেটরদের দাবি, এনবিআর কোনো টাকাই পায় না। অন্যদিকে এনবিআর বলেছে, অপারেটরেরা ৩ লাখ সিম রিপ্লেসমেন্ট কর পরিশোধ করেনি। এনবিআরের সবচেয়ে বড় করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) হিসাব মতে, কর বাবদ গ্রামীণফোনের কাছে ১ হাজার ৫৮০, বাংলালিংকের কাছে ৭৭৪, রবির কাছে ৬৬৫ ও এয়ারটেলের কাছে ৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে এনবিআর।
এনবিআরের দাবি, সিম পরিবর্তনের নামে নতুন সিম বিক্রি করলেও নির্ধারিত শুল্ক দেয়নি চার অপারেটর। এনবিআরের হিসাবে ২০০৭ সালের জুন থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপারেটরগুলো ৩ লাখের বেশি রিপ্লেসমেন্ট সিম ইস্যু করে। এসব সিমের বিপরীতে ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) যথাসময়ে পরিশোধ করেনি অপারেটরেরা। এ কারণে রাজস্ব ফাঁকির বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটের ওপর আরও ২ শতাংশ অতিরিক্ত কর ধরে ৩ হাজার ১শ’ কোটি টাকা দাবি করছে এনবিআর। মোবাইল অপারেটরেরা এ ব্যাপারে বলেছে, ২০০৫ সালের ১৩ জুনে করা আইন অনুযায়ী সিম বদলের জন্য কোনো কর দিতে বাধ্য নয় এরা। কিন্তু অপারেটরদের এ দাবি মানতে নারাজ এনবিআর।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো কারণে সিম হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে সংযোগ অপরিবর্তিত রেখে সিম বদলে নিতে পারবেন গ্রাহক। এ জন্য কোনো রাজস্ব দিতে হয় না। যিনি সিম কিনবেন, তিনিই শুধু এ সুযোগটি পাবেন। কিন্তু অপারেটরগুলো হারানো সিম প্রথম গ্রাহকের নামে ইস্যু না করে নতুন গ্রাহককে একই নম্বরের সিম দিয়েছে। এভাবে নতুন গ্রাহক তৈরি হলেও এর জন্য অপারেটরগুলোকে কোনো রাজস্ব দিতে হয়নি। এ ধরনের অসংখ্য ঘটনার একাধিক তথ্য-প্রমাণ থাকায় এনবিআর বকেয়া আদায়ের দাবিতে বরাবরই অনড়।
এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে মামলাও হয়। ৬ জুনে দেয়া মামলার রায়ে ১২০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাওনা টাকার বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য এনবিআরকে নির্দেশ দেন আদালত। জানা গেছে, এ সময়ে চার অপারেটর কর্তৃপক্ষ এনবিআরের সাথে একাধিক বৈঠক করেছে। কিন্তু ওইসব বৈঠকে পাওনা পরিশোধের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এনবিআরের দাবি সত্য যে কারণে
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা মোবাইল ফোনের সিম নতুন মোড়কে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর তা জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন ঘটনা। বিক্রেতাদের কাছ থেকে ওই সিম কিনে ক্রেতা চালু করতে গেলেই বাধছে বিপত্তি। সিমের মালিকানা দাবি করে বসছে আরেকজন, যিনি সিমটি আগে কিনেছিলেন। এ অসাধু কারসাজির কারণে ক্রেতা নিজের অজামেত্মই সিম বিষয়ক জটিলতার ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে একজনের সিম অন্যজন মালিক সেজে কাস্টমার কেয়ার থেকে তুলে নিচ্ছে প্রতারকেরা। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। মোবাইল ফোন অপারেটরেরা বলেছেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। কেনো এবং কীভাবে ঘটছে তা অপারেটরেরা খতিয়ে দেখতে শুরম্ন করেছে।
মোবাইল অপারেটরদের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ, এরা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিম আবার বিক্রি করছে। নম্বর থাকছে আগেরটিই। ফলে আগের ব্যবহারকারী মোবাইলে টাকা রিচার্জ করলে তার নম্বরটিও (প্রকৃতপক্ষে একই নম্বর) সচল হয়ে যাচ্ছে।
কোনো কারণে কাস্টমার কেয়ার থেকে সিম তুলতে গেলে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু কাগজ ও তথ্যের শতভাগ নয়, ৭০ ভাগ মিললেই (কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ) সিম দাবিদারের কাছ থেকে আন্ডারটেকেন নিয়ে দেয়া হচ্ছে রিপেস্নস সিম। পরে সিমের মূল দাবিদার প্রয়োজনীয় কাগজ ও তথ্য জমা দিলেই ঘটছে বিপত্তি। এ ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ তথ্য ও আন্ডারটেকেন দিয়ে সিম নেয়া ব্যক্তির সিম বন্ধ করে দেয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে এ খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশিস্নষ্টরা।
যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রকৃত ব্যক্তিকে ছাড়া অন্য কাউকে সিম না দিতে একটি নির্দেশনা জারি করেছে। সম্প্রতি মোবাইলে অর্থ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের এজেন্ট সিম রিপেস্নস হয়ে টাকা খোয়া যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি এ নির্দেশনা জারি করে। নির্দেশনাটি এখনও সম্পূর্ণভাবে মানা হচ্ছে না বলে জানালেন দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটরের দুই পদস্থ কর্মকর্তা।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিম নতুন মোড়কে বাজারে বিক্রি ঘোরতর অন্যায় বলে মনে করেন বিটিআরসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক। তিনি বলেন, যিনি একটি সিম কেনেন তিনিই আজীবনের জন্য সিমের মালিক হয়ে যান। কারণ, সিমট্যাক্স দিয়েই ক্রেতাকে সিমটি কিনতে হয়। বর্তমানে সিমট্যাক্স ২০০ টাকা। সিমের দাম বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা সংশ্লিষ্ট অপারেটর পরিশোধ করে। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর যদি কোনো অপারেটর ওই সিমের বিপরীতে বাজারে নতুন সিম ছাড়ে, সেটা অবৈধ কাজ হবে বলে ওই পরিচালক মনে করেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে অনেক গ্রাহক বিটিআরসিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। বন্ধ থাকা সিম বিক্রি বা মালিক সেজে অন্য কেউ রিপ্লেস সিম তোলার বিরম্নদ্ধে বিটিআরসি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বিটিআরসি পরিচালক বলেন, এভাবে যদি কোনো অপরাধী বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার হওয়া সিম সাধারণ মানুষের হাতে চলে যায়, তাহলে তার জন্য কী ধরনের ভয়ঙ্কর অবস্থা অপেক্ষা করছে তা বলাইবাহুল্য।
জানা যায়, কোনো সিম একটানা ৯০ দিন বন্ধ থাকলেই সিমটি বন্ধ ধরে নেয়া হয়। তখনই সিমটি মোট বন্ধ থাকা সিমের তালিকায় চলে যায়। রিচার্জ করা মাত্রই আবার সিমটি চালু হয়ে যায়।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। এক বছর কোনো সিম বন্ধ থাকলে সে সিমের নম্বরটি আমরা পুনরায় বাজারে বিক্রি করতে পারি, যদিও আমরা তা করি না। তিনি জানান, বর্তমানে অপারেটরটির প্রায় ৫০ লাখ সিম বন্ধ রয়েছে।

রবির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, একবার বিক্রীত সিম পুনরায় বিক্রি করার কোনো নিয়ম নেই। এটি গ্রাহকের আজীবনের জন্য। তবে মূল মালিক ছাড়া অন্য কেউ সিম রিপ্লেস করছে কি না, সে বিষয়টির প্রতি তারা ভবিষ্যতে আরও কৌশলী হবেন বলে জানান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, একবার বিক্রির পর যদি কোনো সিমের মালিকানা বদল হয়, তাহলে অপারেটরদের সিমট্যাক্স দিতে হবে। এ নিয়মের ফলে বন্ধ থাকা সিম পুনরায় বিক্রি কমে আসতে পারে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
ওপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলো ‘একাধিক বিশেষ সূত্র’ তুলে দেয় এনবিআরের কানে। আর তখনই এনবিআর বিষয়গুলো অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায়। আর বাজারে নতুন মোড়কে পুরনো সিম পাওয়া যাওয়ায় গ্রাহক মনেও সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে

ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস