লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
তাসনীম মাহ্মুদ
মোট লেখা:১২৭
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
ব্যবহারকারীর পাতা
পিসি বা ম্যাক পরিচ্ছন্ন রাখার কৌশল
একদিন কাজ করার সময় হঠাৎ কীবোর্ডে পানি পড়ে গেল। ফলে কীবোর্ড এক বা একাধিক দিন কোনো কাজ করল না। কিন্তু কয়েক দিন পর আবার কাজ করতে শুরু করল কীবোর্ড। তবে আপনার মনে সংশয়, এটি হয়তো যেকোনো মুহূর্তে আবার কাজ করা বন্ধ করে দেবে।
কমপিউটারে কাজের সময় পানি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। কখনও পানি কমপিউটারের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। আবার কখনও কখনও পানি কমপিউটারের কিছু ইকুইপমেন্টকে চমৎকারভাবে পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। অবশ্য এ সবকিছুই নির্ভর করে কমপিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট ইকুইপমেন্টগুলো কতখানি পানি সংবেদনশীল এবং পানি কেমনভাবে ব্যবহার হচ্ছে তার ওপর।
কীবোর্ডকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যে দীর্ঘদিন অব্যাহতভাবে টাইপিংকে সহ্য করতে পারে। কীবোর্ড কমপিউটার সিস্টেমের সবচেয়ে বেশি অমসৃণ কম্পোনেন্ট। যেহেতু কীবোর্ড খুব দৃঢ়ভাবে তৈরি করা হয়, তাই পানির প্রভাব খুব কমই পরিলক্ষিত হয় এর ওপর।
সংক্ষেপে বলা যায়, পানি কীবোর্ডের স্বাভাবিক কাজকে থামিয়ে দেয় সাময়িকভাবে। যখনই পানি কীবোর্ডের ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট থেকে শুকিয়ে যাবে, তখনই কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করেই কীবোর্ড আবার স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে শুরু করবে। আপনি কীবোর্ড থেকে পানি শুকানোর প্রসেসকে আরও দ্রুততর করতে পারবেন আমাদের অতি পরিচিত হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে হেয়ার ড্রায়ারকে কীবোর্ড থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি ওপরে রাখতে হবে এবং হেয়ার ড্রায়ারকে ন্যূনতম ১০ মিনিট ধরে সামনে-পেছনে মুভ করাতে হবে। যখন কীবোর্ড থেকে সব পানি শুকিয়ে যাবে তখনই কীবোর্ড আবার স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে শুরু করবে।
পানির বদলে অন্য কিছু হলে
কমপিউটারের সামনে বসে আমরা মাঝেমধ্যে শুধু যে পানি পান করি, তা কিন্তু নয়। আমরা কমপিউটারের সামনে বসে অনেক সময় সোডা জাতীয় পানীয় পান করি, যা দুর্ঘটনাক্রমে কীবোর্ডে পড়তে পারে। সোডা জাতীয় পানীয়র সাথে চিনি থাকে, যা কীবোর্ডকে স্থায়ীভাবে ড্যামেজ তথা ক্ষতগ্রস্থ করতে পারে।
এ অবস্থার সমাধান পানি শুকিয়ে ফেলার মতো সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে পুরো কীবোর্ডকে ন্যূনতম ২০ মিনিট ধরে পানির ট্যাপে ধুয়ে নিতে হবে।
সাবান বা অন্য বিশেষ কিছু ব্যবহার করা উচিত হবে না। কেননা এতে সমস্যা বাড়বেই কিন্তু কমবে না। কীবোর্ডকে ভালোভাবে পানিতে ভেজানোর পর তা ঝাঁকিয়ে যতটুকু সম্ভব সব পানি বের করে ফেলুন। এরপর হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে কয়েক দিন পর ব্যবহার করা শুতু করুন নিরাপত্তার জন্য। এর ফলে কীবোর্ড আগের মতো চমৎকারভাবে কাজ করবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয়- এই প্রক্রিয়া শুধু ডেস্কটপ কীবোর্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি আপনার ল্যাপটপ দুর্ঘটনাক্রমে পানিতে ভিজে যায়, তাহলে ল্যাপটপের কীবোর্ডের নিচে জমানো পানি অন্যান্য কম্পোনেন্টে চোয়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়, এটিকে ভালোভাবে শুকাতে দেয়া। এরপর এটি টেস্ট করুন। যদি সন্দেহজনক কিছু মনে হয়, তাহলে সার্ভিস সেন্টারের শরণাপন্ন হতে হবে আপনাকে।
আটকে যাওয়া ডিভিডি বের করা
যথাযথভাবে কাজ করা যন্ত্রপাতি সম্পর্কে কিছু বলতেই হয়। যখন এসব যন্ত্রপাতি ভালোভাবে কাজ করে আনন্দের সীমা থাকে না। কমপিউটিং জীবন হয়ে ওঠে সহজতর। কিন্তু যখন এসব যন্ত্রপাতি অস্বাভাবিক আচরণ বা খারাপভাবে কাজ করতে থাকে, তখন ব্যবহারকারীরা সেই সমস্যা ফিক্স করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। সম্ভবত এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সাধারণ সমস্যা হলো ডিভিডি ডিস্ক আটকে যাওয়া।
আটকে যাওয়া ডিস্ককে ড্রাইভ থেকে বের করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে, তা যেকোনো প্লাটফরমের হতে পারে। এ লেখায় ব্যবহারকারীর উদ্দেশে উইন্ডোজ এবং ম্যাকের জন্য তিনটি উপায় তুলে ধরা হয়েছে।
উইন্ডোজ
যদি Push the drive button প্রক্রিয়া কাজ না করে তাহলে নিচে বর্ণিত কৌশলগুলো প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। লক্ষণীয়, ড্রাইভের ভেতরে ডিস্ক রেখে যদি কমপিউটার রিবুট করেন, তাহলে আপনার কমপিউটার ডিস্ক থেকে বুট করতে চেষ্টা করবে। কখনও কখনও Press any key to boot from CD মেসেজ প্রদর্শন করে প্রম্পট করতে পারে। এজন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে স্বাভাবিকভাবে বুট হতে পারে।
মাই কমপিউটার দিয়ে ডিস্ক বের করা
ডিস্ক ড্রাইভে আটকে যাওয়া ডিস্ককে বের করার সম্ভবত সবচেয়ে সহজ ও দ্রুততম চেষ্টা হলো My Computer-এর মাধ্যমে। এজন্য আপনার ডেস্কটপে My Computer আইকনে ডাবল ক্লিক করুন (অথবা Start Menu-তে ক্লিক করুন)| Explorer উইন্ডোতে এটি ওপেন হয়। এবার উঠউ আইকন খুঁজে বের করুন, যা ড্রাইভে ডিস্কের নাম দিয়ে লেবেল করা থাকতে পারে। এবার এ আইকনে ডান ক্লিক করে মেনু থেকে Eject বেছে নিন।
ডিস্ক ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ডিস্ক বের করা
মাই কমপিউটারের মাধ্যমে ডিস্ক বের করার বিকল্প অপশন হলো Disk Management অপশন। এজন্য My Computer আইকনে ডান ক্লিক করুন এবং Manage বেছে নিন। এর ফলে Computer Management ওপেন হবে। উইন্ডোজ ৭ ও ভিস্তায় Disk Management-এর অবস্থান হলো Storage সেকশনের অন্তর্গত। আপনার ডিস্ক ড্রাইভ উইন্ডোর নিচের অর্ধেকে CD-ROM হিসেবে লেবেল করা থাকবে, যা হয়তো আপনাকে স্ক্রল ডাউন করে খুঁজে বের করতে হবে। এবার CD-ROM লেবেলে ডান ক্লিক করে Eject-এ ক্লিক করুন।
ম্যানুয়াল ট্রিগার
বেশিরভাগ উইন্ডোজ ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপ ড্রাইভে ডিস্ক বের করার জন্য এক ইমার্জেন্সি রিলিজের সুবিধা রয়েছে। এটি একটি ছোট বৃত্ত, যা সোজা পেপার ক্লিপের টিপের মতো। এবার আপনার আনবেন্ড (অবক্র) পেপার ক্লিপকে সতর্কতার সাথে ছোট বৃত্তের ভেতরে ঢোকান এবং ভেতরের দিকে ঠেলতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত না ট্রে ওপেন হচ্ছে। এ কাজটি কয়েকবার চেষ্টার পর সফল হতে পারেন। তাই ধৈর্য হারাবেন না।
ম্যাক ওএস
গত কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ অ্যাপল পণ্যের সাথে একটি ইন্টিগ্রেটেড সুপার ড্রাইভ (SuperDrive) পাওয়া যাচ্ছে, যা সস্নট লোডিং ড্রাইভ হিসেবে পরিচিত। এ ড্রাইভ কমপিউটারের ক্ষেত্রে এক সৌন্দর্যবর্ধক উপাদান। তবে এ ড্রাইভ থেমে যাওয়া ডিস্ক থেকে তথ্য-উপাত্ত উদ্ধার করা জটিল, কেননা এটি হলো মেশিনে সিঙ্গেল স্লটবিশিষ্ট, যার বের হওয়ার কোনো ট্রে নেই এবং তাছাড়া আটকে যাওয়া ডিস্ক মুক্ত করার কোনো ম্যানুয়াল উপায়ও নেই। এসব ড্রাইভ থেকে ডিস্ক বের করার স্ট্যান্ডার্ড উপায় হলো কীবোর্ডের ইজেক্ট কী ব্যবহার করা, যা ওপরের ডান প্রান্তে থাকে।
ট্রাসের মাধ্যমে ইজেক্ট তথা বের করা
ম্যাক কমপিউটার থেকে আটকে যাওয়া ডিস্ক বের করার আরেকটি দ্রুত ও সাধারণ উপায় হলো ট্রাসের মাধ্যমে ডিস্ক ইজেক্ট তথা বের করা। এজন্য মূল Finder স্ক্রিনে ডিস্ক আইকনের ক্লিক করে ধরে রাখুন এবং এরপর তা ড্র্যাগ করে ট্রাসে নিয়ে আসুন।
ফাইন্ডারের মাধ্যমে বের করা
ফাইন্ডারের মাধ্যমে ডিস্ক বের করতে চাইলে Finder উইন্ডো ওপেন করম্নন এবং বাম দিকে ডিস্ক খুঁজে দেখুন। ডিস্ক নেমের পাশে ইজেক্ট আইকন খুঁজে পাবেন। এবার ডিস্ক ইজেক্ট তথা বের করার জন্য আইকনে ক্লিক করুন।
রিবুট করে ডিস্ক বের করা
কমপিউটার রিবুট করে ডিস্ক বের করা যায়। কমপিউটার বন্ধ করার পর আবার যখন চালু হতে থাকে তখন ট্র্যাকপ্যাড চেপে ধরুন অথবা মাউস বাটন চেপে ধরুন। এ প্রক্রিয়া ডিস্ককে বের করার জন্য ফোর্স করবে।
বোনাস প্রক্রিয়ায় টার্মিনালের মাধ্যমে ডিস্ক বের করা
যদি কমান্ড লাইন ইন্টারফেস ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সম্ভবত টার্মিনাল হলো সেরা পথ এ সমস্যা সমাধানে অর্থাৎ আটকে যাওয়া ডিস্ক বের করার। এজন্য Applications→Utilities-এ গিয়ে Terminal-এ ডাবল ক্লিক করম্নন। এর ফলে টার্মিনাল উইন্ডো ওপেন হবে এবং কমান্ড টাইপ করার জন্য প্রস্ত্তত হবে ৳ চিহ্নের পরে।
কমপিউটার নয়েজ সমস্যা শনাক্ত করা
হঠাৎ করে যদি আপনার কমপিউটার বাজে ধরনের শব্দ বা নয়েজ সৃষ্টি করতে থাকবে, তখন আপনি নিশ্চয় কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন হবেন, কেননা এ ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে আপনি অভ্যাস্ত নন। কমপিউটার থেকে এ ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ উদ্ভব হলে আপনাকে স্থানীয় কমপিউটার মেরামত তথা সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য হয়তো কিছু অর্থ খরচ করতে হবে। কখনও কখনও এ সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায় এবং এর জন্য কোনো সহায়তা নিতে হয় না।
সিডি ও ডিভিডি ড্রাইভ নয়েজ
সবচেয়ে আধুনিক কমপিউটারের সাথে সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ থাকে। ইদানীং অপটিক্যাল ড্রাইভ খুব দ্রুতগতিতে ভেতরে পাক খায়। এই দ্রুতগতিতে ঘুর্ণনের কারণে এক ধরনের নয়েজ সৃষ্টি হয়, যা সাধারণত ব্যবহারকারীকে তেমন বিচলিত করে না, যেহেতু এর সম্পর্কে এরা অবহিত। তবে যাই হোক, আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম যেমন উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিনআক্স মাঝেমধ্যে ড্রাইভ চেক করে সিডির জন্য ব্যবহারকারীকে কোনো ধরনের প্রম্পট না করেই। তখনও পিসি সিডি বা ডিভিডির ঘুর্ণনের শব্দ করে, যা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ করে এই ঘুর্ণন শব্দ বেড়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অনেক ব্যবহারকারী ভুল ধারণা পোষণ করেন এবং মনে করেন কমপিউটারের সমস্যার কারণেই এমনটি হচ্ছে। যদি এমন শব্দ শোনা যায়, তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার কমপিউটার অপটিক্যাল ড্রাইভের ভেতরে কোনো মিডিয়া নেই
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com